১.
ফার্গুসন সাহেব স্থির করেছেন যে একুশ ও বাইশ ডিগ্রী অক্ষরেখার মধ্যে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডটি অবস্থিত। তীর থেকে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে। চারদিকে পঞ্চাশ থেকে ষাট ফুট গভীরতার মাঝখানে হঠাত গভীরতা গাঢ় হয়েছে, প্রায় সতেরোশো কি আঠারোশো ফুট। এরকম বৈশিষ্ট্য বঙ্গোপসাগরের আর কোথাও আছে কিনা তা জানা যায় নি। ফার্গুসন লিখছেন যে, পূর্ব পশ্চিম দিক থেকে বিপরীতমুখী স্রোতের সংঘাতে ঐ স্থানে ঘূর্ণীর সৃষ্টি হয়ে থাকে। মাটি সরে যাওয়ার ফলে গহ্বর তৈরি হয়। অতলতল। মাঝে মাঝে এর উত্থান পতন ঘটে। জলতল উপরে উঠে আসে, আশে পাশের গ্রাম জলমগ্ন হয়। আবার জল নেমে যায়। রাত বাড়ে। দাওয়ায় জ্বলতে থাকে কুপি বা হ্যারিকেন। বোড়ের পাশে গজ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে।
—‘খেলে না যে বড়! ও শ্যামরতন, শেষে বয়সকাল বুঝি ছাপ ফেলল!’
—‘উঁহু, ও তো তোমার চাল। খুব ধরিচি! বুদ্ধি পাকছে হে। বয়স হচ্ছে, বুদ্ধি পাকছে। গজের প্রতি মায়া কম। মন্ত্রীই আসল। কাল আসরে কী দেখলে!’
—‘...’
—‘তবে এবার ততটা জমে নি। বায়না কম পড়েছিল। শেষে বাগেরহাটের কেষ্টবিষ্টুরা সব...এই আমাদের নলিন, এরাই তো শেষে হাল ধরেচে। নইলে... জ্যারকেন টা একটু উস্কে দাও দেখি।’
—‘তোমার নাতি ফিরচে কবে?’
—‘কারিগর ছাড়তে চাইলে তবে তো। হাতের কাজ ভাল। ছাড়বে কেন। এই তো নিয়ম। সামলাও সামলাও নৌকো সামলাও।’
—‘...’
—‘...’
—‘শ্যামরতন’
—‘উঁ’
—‘বল দিকি, চরমমতাজের ঘটনা কি সত্যি!’
—‘তাই মনে হয়। সনাতনের জ্বর তো আজকেও নামেনি।’
—‘সত্যি দেকেচে তাহলে?’
—‘আরে, ও তো আমিও দেকিচি কতকবার। নন্দ’র বাপ সেজে ডাকতে আসত, দেকিচি তো। মোকামের শেষে, জালে সেবার এত এত মাছ পড়েছে, বুঝলে। বড় খোকা, তপন সব সেখানে। ঘরদোর কবাট সব বন্ধ। এদিকে আমার জানলার কাছে এসে ডাকতাছে, খোল রে খোল। এই নন্দর বাপ এলুম। সে কি আর আমি খুলি! আবার বেশী রাতের দিকে ডাকত, শ্যামরতন এলুম রে, দোর খোল রে, দোর খোল। একবার তো বুড়া বাপ দোর খোলে আর কী! আমি বল্লুম খবরদার! তপনের দাদুও তো দেখছেখনে। সনাতনের অল্প বয়স কিনা, ভয় পেয়েছে। ওই তো, সবসময় লোহার শেকল রাখতে হয়।’
—‘...’
—‘...’
—‘শব্দ হইছিল নাকি!’
—‘শব্দ? হইছিল তো! ঐ যেমন হয়। গুম গুম গুম গুম! জল বাড়লেই হয়। নুতন কথা না। বাগেরহাটের দিকে জরিপের সাহেবরা এয়েচে শুনলাম। ওরা ছাই জানে। ঐ শব্দ হলেই বুঝতে হয়—আমি কতবার দেকিচি। শব্দ হলে আমি বড়খোকাকে বেরোতেই দিই না ’
— ‘ক্ষতি হয় না!’
— ‘সে মহাজনরে বলা আচে। কী করব!’
—‘…’
—‘…’
—‘রইসানন্দরে খবর দিইছ!’
—‘বলেচি খনে। এখন সনাতন যা বোঝে। গেরামের পক্ষে ভালো না। জ্বালান ছাড়ান করা দরকার। তা না হয় দুটো বেশীই খচ্চা হ’ল। ’
—‘শীত বাড়ল যে শ্যামরতন। যাবার সময় জ্যারকেন নিয়ে যেও খন। বুধুয়ারে সঙ্গে নিয়ে যাও খনে। রাত ভালো না। এবারে জমি কেমন, চাষ কেমন বুঝছ—’
ক্রমশঃ ধূ ধূ রাত বাড়ে। গরান গাছ, ঝিঁঝিঁ পোকা, আশশ্যাওড়া বেয়ে মৃদু চলাফেরা বাড়ে। রুপোলী আঁশ মাখা জাল নিয়ে ভেসে ওঠে চরমমতাজ। হোগলা কুটীর ছাওয়া ঘর দোর উঠোন আদুল গায়ে মাখে রাত। হাজার হাজার অশরীরী ছুটে চলে জলাভূমি, নদীঘাট, তপোবন, নিশিকান্তর পালা পেরিয়ে ভূতপতরীর মাঠ। মাঠ শেষে এ গ্রাম ও গ্রাম সে গ্রাম। এ নদী ও নদী সে নদী…
২
সুন্দরবনে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে দক্ষিণ পূর্ব কোণ থেকে কামানের আওয়াজের মতো গুরুগম্ভীর শব্দ শোনা যায়। ইংরেজরা এর নাম দিয়েছে বরিশাল কামান। বৈজ্ঞানিক মত অনুযায়ী এই শব্দ বঙ্গোপসাগরের গভীর হতে উত্থিত হয়। অতলতলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা বলা শক্ত। বাগেরহাটের এসডিও জানাচ্ছেন যে, যতই সমুদ্রের দক্ষিণে যাওয়া যায় শব্দ তত জোরালো হয়। তবে এটি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত নয়। পটুয়াখালীর প্রবীণ লোকেরা এই শব্দ অনেকবার শুনেছেন। বন্দুকের আওয়াজের সাথে এর বেশ মিল পাওয়া যায়। সংস্কার বশতঃ ঐ সময় পুজো আচ্চা হয়। জোয়ানরা সাগরে যায় না। গ্রামগুলি জুড়ে হা ক্লান্ত দুপুরে সংসার গড়ে ওঠে।
—‘মুড়ি খাবা একটু।’
—‘মাথা ভার, ধরে আচে। থাক বরম।’
—‘...’
—‘...’
—‘হ্যাঁ গো, সত্যি দেকেচ।’
—‘গায়েরী আবাজও শুনসি জানিস!’
—‘শুনস! কই তখন বললে না তো!’
—‘হুঁ রে, বড্ড শীত কচ্চিল। চোখ বুজে এসেছিল খনে। হাল ফসকাব বটে। তখনই শুনসি। গুউম গুউম গুউম গুউম। তখনই তো হুঁশ ফিরল। সে কি জলের তোড়। তুফান কাটছে যেন। ভাগ্যিস মহাল ছিল। ডাক ভাসান ছিল। আগে বন্দী বসুমতী, পরে বন্দী ইষ্টকালী। আগে বন্দী বসুমতী, পরে বন্দী ইষ্টকালী। আগে বন্দি বসুমতী…
—‘…’
—‘ছইয়ের কাছে ভাবলুম চাদরখানা আচে। গায়ে জড়াই। তখনই—’
—‘ওর মতো! তুমি ঠিক দেখসিলা!’
—‘হ্যা রে, তাই দেখলুম বটে। রোগাটে গড়ন। পাঁশুটে মুখ। সেই রমই একদম…’
—‘...’
—‘...’
—‘গুণিনরে ডাকতে হবে তো!’
—‘ট্যাহা কই, থাক বরম।’
—‘ও মা, ও কী কথা। যদি এখানে এসে পড়ে! বন্ধন করতি হবে না!’
—‘...আজ কারা গেল যেন, ভটভটি নিয়েছে। মাছ পেতে হ’লে আরো ভিত্রে যেতে হবে খনে। গায়েরী আবাজ। জানিস বৌ, গায়ে কাঁটাখান দিল যেন। আমায় চাদর দে তো একখান, শীত করে, লম্ফ নিবুনিবু কেন? তেল নাই?’
বিয়েতে পাওয়া নক্সী চাদর গায়ে ফেলে সনাতন ঝিম মেরে পড়ে থাকে। আধখোলা চোখ। বুকের ওপর আলসে থাকে সুলতার হাত। জড়িয়ে পড়ে থাকে বহুক্ষণ। বৌ ভয় পেয়েছে বড়। সনাতন ভয় পায় নি।
৩.
ইঁদুরে মাটি নিয়ে শুদ্ধাচারে ধান দূর্বা গঙ্গাজল। তুলসী পাতা। সরিষা লোহা তামা। মন্ত্র পূতঃ কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাত্রি। পিতলের কলসীতে ভাঁটির জল। গোবরের পোঁচ দেওয়া। আড়াআড়ি পুব মুখো বসানো কাস্তে। নির্জন তিনরাস্তার ধারে উৎসুক একচালা ঘর। রইসানন্দ গড়বন্ধ করছে।
—‘আমার সাথে সাথে বলবি সনাতন। এই আমি বলে দিইচি।’
—‘আজ্ঞা।’
শিব শিব শিব দোহাই তোমার বড় বড় বীর না শয়তান ধ্বন্বন্তরী জাযারক, শ্মশানে মশানে নাদে গৌরী আনমনি দেখে কালী কৈবল দাহিনী মশানে তিনি, করেন ধ্বনি শ্মশানে মশানে তুমি তুমি যে ব্রাক্ষ্মনী ভূত, যে ব্রাক্ষ্মনী ভূত প্রেত দানব দত্তা শাখিনী।
—‘কই রে, বল সনাতন’
এক নিমেষে বলা মন্তরপাতি সমূহ ধীরে ধীরে বলতে থাকে সনাতন। যতটুকু গ্রাহ্যের মধ্যে আসে। ভর হয়েছে রইসানন্দর। অনুনয় বিনয় করে কেঁদে কেঁদে উঠছে। প্রদক্ষিণ করছে ঘর। হঠাৎ হঠাত লাফিয়ে উঠছে। শির ফোলাচ্ছে। মাটি ছুঁড়ছে এদিক সেদিক। চন্দ্রালোক পরিপূর্ণ করে বিশ্বাস সহকারে মন্ত্র নামছে রাত জুড়ে।
সনাতনের ঘোর লাগে। হাঁটু ভাঙে। প্রদীপ জাগতে দেখে সারাক্ষণ। তিন মুঠো সরষে ফুরিয়ে আসে। তর্জন গর্জন ছাপিয়ে ভেসে ওঠে জল। নৌকোয় সেই অপ্রাকৃতিক ঘটনা।
—‘বল রে সনাতন বল, বল বল বল—’
হেএএই ঘরবন্ধম দোর বন্ধম আর বন্ধম আকাশ। চার কোন পৃথিবী বন্ধম গিরি কৈলাশ। হেএএই ছয়ছাটিকে বন্ধম যউলার জুতি ছয়মাসের পথ।
সনাতনের চোখে স্নেহ জাগে। সে আঁজলা ভরে জল নিয়ে আদেশ পালন করতে থাকে ফিসফিসিয়ে। দুইমাসের পথ। চারমাসের পথ। ছয়মাসের পথ। অনেকদিনের পথ। রইসানন্দ তিন পাক ঘুরেছে। হাঁফিয়ে গিয়ে সে তাকায় একচালা ঘরের দিকে। আরো পাক ঘুরতে হবে। মরমী নির্দেশ। পালন করতে হবে। ডাক ওঠে, একের পর এক ডাক। রইসানন্দ হাঁক পাড়ে—
—‘অমুকার লোহার আগোড় পাথরের কাই, গিরি গন্ধর্ব আমার কিছু নাই, আমি কাজ করি লোহা শনির পায়, বল রে সনাতন, বল বল বল—’
ঢেউ ওঠে। সনাতন আওড়াতে থাকে আগোড়ে পাথর কাই। লোহা শনি পুরি বন্দম ভানুর বাম কর। রইসানন্দ ঝাঁঝিয়ে ওঠে, ‘বল, তুই লেপ্টা মুই লেপ্টা লেপ্টা নিরঞ্জন, চন্দ্রসূর্য লেপ্টা লেপটা শ্রী মধুসুদন ’।
সনাতনে গাঢ় ঢেউ ওঠে। গায়েরী আওয়াজ। লেপ্টা নিরঞ্জন, লেপ্টা শ্রী মধুসুদন।
—‘আকাশের ত্তারা বন্দম পাতালের বালী, আমার শত্রুর চোখ বন্দম দোহাই মা কালী’।
আঁও বাঁও নদী দীঘি সাত সমুন্দুর। ছট ফট করে শত্রু পালায় বহু দূর। ছটফট করে সনাতন। আওয়াজ শোনে গুম গুম গুম গুম। বাঁধিস নে মা, বাঁধিস নে।
ফুলকাঠে কাপড় জড়িয়েছে। ধুনো গোগ্গুল সরষের তেল। জ্বলছে মশাল। সনাতন প্রাণপনে ধরে রাখছে নৌকাছই। শীত বস্ত্র আকুতি। রইসানন্দ কাঁপছে।
ঘর থেকে বেরুনু আমি ভুমে দিয়ে পা।
ঘর থেকে বেরুনু আমি ভুমে দিয়ে পা।
হাত পা গরুর পা গরুড় সহদর
সহদর আমার বান্ধম হাত দিয়ে পা।
ঘর থেকে বেরুনু আমি ভুমে দিয়ে পা।
পাকের পরে পাক পড়ছে। গাঢ় হচ্ছে বন্ধ। নিশ্চিত হচ্ছে একচালা ঘর। অশান্ত হচ্ছে ঢেউ। চলাফেরা শুরু হচ্ছে। গরান গাছ, ঝিঁঝিঁ পোকা, আশশ্যাওড়া বেয়ে। রুপোলী আঁশ মাখা জাল নিয়ে ভেসে উঠছে চরমমতাজ। হোগলা কুটীর ছাওয়া ঘর দোর উঠোন আদুল গায়ে মাখছে রাত। হাজার হাজার অশরীরী ছুটে চলছে জলাভূমি, নদীঘাট, তপোবন, নিশিকান্তর পালা পেরিয়ে ভূতপতরীর মাঠ। মাঠ শেষে এ গ্রাম ও গ্রাম সে গ্রাম। এ নদী ও নদী সে নদী…
৪.
নিদান ছিল তিনদিন ঘর থেকে না বেরোনোর। তারপর মন্ত্রপুতঃ জলে স্নান করতে হবে। বিছানা পত্তর সব ফেলে দিতে হবে। জানা গেছে যে কখন কোথায় কবে ভর হয়েছে। কখন জল ভস্ম হয়েছে। বাতাসে টান পড়ল কখন। তিনদিন পর ফের নদীর ঘাটে যেতে হবে। ফের মহাল হবে। ফের বন্ধন হবে। নৌকো বাঁধতে হবে। নতুন দড়ি কাছি লাগবে। নগদ টাকা।
সনাতনের ঘোর কাটেনি। সে ক্রমাগত শুনতে পাচ্ছে গুম গুম গুম গুম। জলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নৌকোয় জোরালো টান। হাল ধরে থাকা বড় শক্ত। অন্ধকার চৌখুপিতে ভেসে ওঠে নৌকোছই। নিঃশব্দ জলরাশির মাঝখানে ভৌতিক রাত। লোভ বাড়ে খুব।
বুকের ওপর পড়ে থাকা সুলতার হাত সরিয়ে উঠে পড়ে সনাতন। নিশি পাওয়া মানুষের মত। ঘুমন্ত সুলতা পড়ে থাকে গড়বন্ধ ঘরে। তিনদিনের আগড়। সময় এখনো আসেনি। তবু পরিচ্ছন্ন রাতে তীরের গরানবনে রুপোলী চাদর। হাঁটুজল পেরিয়ে সনাতন নৌকো ঠ্যালে আরো গভীর জলের দিকে। ধীরে সুস্থে। এক পা, দুই পা, এক পা। ছইয়ে রয়েছে জাল, আঁশবটি ও আরো নানা কিছু। সনাতন ধীরে সুস্থে যাত্রা করে শব্দের দিকে।
হিন্দুরা বলেন লঙ্কা দ্বীপে রাবণের তোরণদ্বার খোলার সময় ঐ শব্দ হয়। মুসলমানেরা বলেন ইমাম মেহেদীর আগমন জনিত কারণেই ঐ শব্দ। হিস্ট্রী অব বাকেরগঞ্জের লেখক বেভারীজ সাহেব সিদ্ধান্তে এসেছেন যে জৈষ্ঠ্য আষাঢ় মাসে ঝড়ের সময় এই শব্দ চারবার শোনা যায়। উনি স্থির করেছেন এর পেছনে বায়ুমন্ডলের কোনো বৈদ্যুতিক ঘটনার যোগ রয়েছে। তবে প্রবল তরঙ্গাভিঘাতের জন্যও এই শব্দ হতে পারে। এ বিষয়ে আরো বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।
ক্রমশঃ আরো রাত ঘনায়। মোকাম আবাদী জুড়ে চলাফেরা বাড়ে। রুপোলী আঁশ মাখা জাল নিয়ে জেগে ওঠে চরমমতাজ। হোগলা কুটীর ছাওয়া ঘর দোর উঠোন আদুল গায়ে মাখে রাত। হাজার হাজার অশরীরী ছুটে চলে জলাভূমি, নদীঘাট, বর্ষা বাদল পেরিয়ে ভাটার সাগর। তারপর এ দ্বীপ ও দ্বীপ সে দ্বীপ…
কত রাত হবে তখন! সনাতন কোলাসে বসে জল দেখে। জল ছোঁয়। জ্বালান ছাড়ান সব দূরে সরিয়ে রাখে। চাঁদ ভাঙা জল ঠেলে ভিতর বাহির স্রোত। মোহানা ছাড়িয়ে ডিঙি তখন অনেক দূরে, এলোমেলো। সনাতন ঢেউ গোনে।
ঠিক এসময়, হাজার হাজার ফুট নীচে আরাকান প্লেট ধাক্কা মারে ইন্ডিয়ান প্লেটকে। সাবডাকশন। ক্রিটেশিয়াস যুগ থেকে তৈরী হওয়া অভ্যাস ব্জনিত কারণে নিমেষে উন্মুক্ত হয় জ্বালামুখ। সমুদ্রগর্ভে অতলে তৈরী হয় আগ্নেয়গিরি। শূন্যতা পুরণের জন্য যেখানে প্রক্ষিপ্ত হয় সাগরের জল। ওশিয়েনিক ক্রাস্ট ভেঙে লক্ষ টেরা জুল এনার্জ্জী নিয়ে বিস্ফারিত হয় অতল সমাজ। ঘুর্ণাবর্ত জেগে ওঠে মুহূর্তে। গুম গুম গুম গুম। একরোখা বেপরোয়া শব্দ।
সনাতন সজাগ হয়ে ওঠে। বিশ্বচরাচর জুড়ে হিম। স্রোতের হু হু টান নৌকো জুড়ে। গায়েরী আবাজ। এইবার সময় হয়েছে। পিছন দিকে হালের কাছেই আসবে সে। সেদিনও এমনই ছিল তো! আয় আয় আয় আয়।
গুম গুম গুম গুম!
সমুদ্র খেপে উঠেছে। সময় কম। অতলতল নেমে যাচ্ছে হু হু করে। অকস্মাৎ পিছন ফেরে সনাতন।
—‘শিবেশ্বর! শিবেশ্বর! ব্যাটা আমার।’
গর্জে ওঠে বরিশাল কামান। একুশ থেকে বাইশ ডিগ্রী অক্ষরেখার মধ্যে হঠাত জেগে ওঠে চরমমতাজ। উথাল পাথাল সমুদ্র অগ্রাহ্য করে সনাতন এগিয়ে যায় হালের দিকে। টলমল পায়ে। চার কোম পৃথিবী বান্ধম গিরি কৈলাশ পেরিয়ে হাজার হাজার অশরীরী ভিড় করে আসে ঘূর্ণাবর্তে। তারপর এ ঢেউ ও ঢেউ সে ঢেউ। এ জল ও জল সে জল। এ দিক ও দিক সে দিক…
তিতাসের অন্য গল্প খুঁজতে গিয়ে ( সেটা পাইনি) এটা পেলাম, তুলে দি, অনেকেই পড়েননি হয়তো।
হামভি ভাবছিলাম।