এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • বিশ্বজোড়া ফাঁদ

    মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
    আলোচনা | সমাজ | ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১০৮২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  • ছবি: রমিত


    বারো বছরের লালানি উইলসন- ক্লার্ক্সভিল, টেনেসি, আমেরিকা, দশ বছরের আন্তোনেলা পালমা- ইতালি, নয় বছরের আরিয়ানি মিলওয়াকি- উইসকনসিন, আমেরিকা- এরা সবাই সামাজিক মাধ্যম টিকটকের একটা খুব জনপ্রিয় খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। খেলাটির নাম 'ব্ল্যাক আউট'। কি সেই খেলা? দড়ি জাতীয় কোনো জিনিস গলায় বেঁধে চেতনার সীমা অতিক্রম করে গিয়ে আবার ফিরে আসা। একটা চ্যালেঞ্জ। সারা পৃথিবীতে বহু বাচ্চা এই প্রবল উত্তেজনাময় খেলায় অংশগ্রহন করে, কিন্তু এই তিনটি বাচ্চা আর ফিরতে পারে নি চেতনায়। তাদেরকে নিয়ে সারা পৃথিবীতে কুুুড়িটি বাচ্চা প্রাণ হারায় 'ব্ল্যাক আউট চালেঞ্জ' গেমে। এরকম আরো গেম চলে সোশ্যাল মিডিয়াতে- মাত্রাতিরিক্ত এলার্জির ওষুধ খাবার চ্যালেঞ্জ, স্কাল ব্রেকের চ্যালেঞ্জ, এরকম আরো অনেক। এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের কারণে প্রাণ হারিয়েছে অথবা গুরুতর অসুস্থ হয়েছে, এরকম কয়েকজন বাচ্চার সেলফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা দেখেন, যে কিভাবে এই সামাজিক মাধ্যমগুলির অ্যালগরিদম এদেরকে এই বিপজ্জনক খেলাগুলোর দিকে ঠেলে দেয়।

    আর শুধু কি বিপজ্জনক খেলা?

    মুখোমুখি হেনস্থা করার থেকে সামাজিক মাধ্যমের আড়াল থেকে হেনস্থা করা সহজ, এটা একটি জানা বিষয়, কিন্তু বয়ঃসন্ধিতে সেটা সহ্য করা খুব কঠিন । মেয়েদের সৌন্দর্যের একটা ভিত্তিহীন মাপকাঠি তৈরী করে তাদেরকে ওজন কমানোর একটা বিপজ্জনক সীমায় নিয়ে যাওয়া, যৌন হেনস্থা, ব্ল্যাকমেলিং,যৌন শোষণ এই সমস্ত কিছুকে হাতিয়ার করে মানসিক অবসাদ এবং আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া -বিষের মতো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। একটা সাধারণ কৌতুহলী সার্চ থেকে ধীরে ধীরে অ্যালগরিদম করে, অপরিণত মস্তিষ্কের চারপাশে বুনে দেওয়া হয় মোহময় জাল…যার থেকে বেরোনো অত্যন্ত একটা শক্ত কাজ। যেটার বিরুদ্ধে পরিণত বয়সেই লড়তে পারিনা আমরা, সেটা ছোটরা করবে কিভাবে?

    আমেরিকার সার্জেন জেনারেল ডক্টর বিবেক মূর্তি, ২০২৩ সালের মে মাসে একটি অত্যন্ত সতর্কতামূলক বক্তব্য রাখেন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে। সামাজিক মাধ্যম ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যে কিছু ভালো প্রভাব রাখলেও, এর ক্ষতিকর দিক মারাত্মক। সার্জন জেনারেলের মতে, প্রত্যেক দিন এতটা পরিমাণ সময় সামাজিক মাধ্যমে থাকলে অপরিণত মস্তিষ্ক যেটা কম পায়, সেটা মহামূল্যবান, তা হলো ঘুম। যেটা কম হয়, সেটা পাশে থাকা প্রিয়জনের সাথে মানসিক যোগাযোগ। যেখানে তারা থাকে, বাঁচে, বড় হয়, তার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা- এই সবই এই বয়সের ছেলে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব উদ্বেগের কারণ। এই কথাগুলো আমাদের কাছে নতুন নয়, আমরা সবাই জানি, প্রত্যেকদিন এ বিষয়ে শুনি, আলোচনা করি, পড়ি - বলতে গেলে ক্লিশে হয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, যখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের ডাটা থেকে দেখা যায়, তেরো থেকে সতেরোর মধ্যে প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ ছেলে মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে আছে, আর তাদের এক তৃতীয়াংশ প্রায় আছে সবসময়- তখন সেটা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন শুনি আমেরিকায় ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েচে ৬২%। দক্ষিন কোরিয়াতে ২০২৩ এর প্রথমার্ধেই ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়স্ক ছেলে মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় আঠেরো শতাংশ। জাপান, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের সাথে বয়ঃসন্ধিকালে আত্মহত্যার সংখ্যা পৃথিবীর বহুদেশেই উর্দ্ধগামী। সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা আমাদের জীবনে উত্তরোত্তর বাড়ার সাথে সাথে এই আত্মহত্যা সংখ্যা বাড়ার একটা পরিষ্কার সম্পর্ক আছে, এরকমটাই মনে করেন অনেক সমাজবিদ এবং মনোবিদরা।

    এটা সত্যি, এই সমস্ত দেশের সাংস্কৃতিক, পারিবারিক পরিকাঠামো হয়তো খানিকটা আলাদা। জীবনযাত্রাতেও পার্থক্য আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে পরিমাণ সময় এই বয়সের ছেলেমেয়েরা তাদের ফোন, বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে কাটায়, পৃথিবীর বহু দেশে তার কিন্তু তেমন কোনো তারতম্য নেই। জাপানে ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে ৯৩% সামাজিক মাধ্যমে আছে এবং তারা দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ইন্টারনেটে কাটায়। ব্রাজিল আর মেক্সিকোর ছেলে মেয়েদের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই সোশ্যাল মিডিয়াতে আছে। ব্রাজিলে ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী বাচ্চারা চার থেকে পাঁচটি সামাজিক মাধ্যমে আছে। সেটা আইনী বয়সের অনেক নীচে। মেক্সিকোতে সেই সংখ্যা তিন থেকে চার। ব্রিটেনে ৯১% ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা সামাজিক মাধ্যমে আছে; ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের সামাজিক মাধ্যমে উপস্থিতি আছে। ভারতবর্ষে করা একটি জাতীয় সার্ভেতে দেখা গেছে প্রায় ৬০% টিনেজার তিনঘন্টা সময় কাটায় সামাজিক মাধ্যমে। দক্ষিণ কোরিয়াতে ওই একই বয়সের ছেলে মেয়েদের ওপর করা একটি রিসার্চে, তাদের সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্ট বা ব্লগ থেকে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুব্যবহৃত শব্দ পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো স্কুল, ডিপ্রেশন, কাউন্সেলিং, ডায়েট, সুইসাইড আর ওবেসিটি।

    সার্জেন জেনেরাল বিবেক মূর্তি এটার ওপর জোর দেন যে এই গভীর সমস্যার সাথে লড়াই করতে গেলে এই বয়সী ছেলেমেয়েদের, তাদের পরিবার, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি, সরকার সবাইকে এক সাথে লড়তে হবে।

    যখন কোনো একটি বাচ্চাকে হারিয়ে ফেলে একটি পরিবার, কোনো বিপজ্জনক খেলার চেষ্টায় অথবা আত্মহত্যায়, সেই পরিবারের মানুষগুলোর যন্ত্রণা, তাদের আত্মগ্লানির কোনো শেষ থাকে না। অবধারিতভাবে তাদের ওপর দোষারোপও করা হয়। কোন বয়সে বাচ্চারা হাতে সেলফোনে পাচ্ছে, কোন বয়স থেকে তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগ দিচ্ছে, কি দেখছে, কি শিখছে সে বিষয়ে,অবশ্যই অভিভাবকের দায়িত্ব থাকে। কিন্তু একটু গভীরে গিয়ে ভাবি যদি, গোটা পৃথিবীতে বিশাল অংশের অভিভাবকরা অর্থ উপার্জনে, পরিবারের রোজকার জীবনের চাহিদা সামলাতে এতো ব্যস্ত থাকেন, তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না এইভাবে খেয়াল রাখা, প্রত্যেক মূহুর্তে বাচ্চারা কি করছে। দৈনন্দিন জীবন যাদের কাছে সংগ্রাম, তাদের পক্ষে হয়তো এক জায়গায় বসে বাচ্চা একটি জিনিস একাগ্র হয়ে দেখলে, তারা নিশ্চিন্ত থাকেন কোনো বিপদ বা দুর্ঘটনা হবে না। অভিভাবকদেরকে একই মাপকাকাঠিতে বিচার করা যায় না। কিন্তু যে অভিভাবকদের কাছে সেই সময়টা থাকে, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ছোটরা কিভাবে সময় কাটাবে; তারা যদি সচেতন ভাবে ঠিক করেন, একসাথে খেলে, কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করে, একটা নিয়ম বানিয়ে ফোনে ব্যয়িত সময় নির্দিষ্ট করে দিতে- তাহলে সামাজিক মাধ্যমের কুপ্রভাব খানিকটা কমতে পারে। কিন্তু অনেক সময়েই আমরা বড়োরাই এই জগতের বাইরে নই, আমাদের বহুজনের জীবন আবর্তিত হয় ওই ভার্চুয়াল জগতে। আমরা নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, ছোটরা কি অনুসরণ করবে?

    সামাজিক মাধ্যম জগতে প্রথম সমস্যা হলো, সামাজিক মাধ্যমে যোগ দেবার জন্য ন্যূনতম বয়স তেরো। কিন্তু তেরো কি সত্যিই তেরো?

    সাত থেকে বারো বছরের বহু শিশু বেআইনী ভাবে সামাজিক মাধ্যমের সদস্য হয়, সদস্য হতে গেলে একটা স্বঘোষনাই যথেষ্ট, যে তাদের বয়স তেরো বছর। সেটা যাচাই করার জন্য কোনো ধরণের প্রমাণপত্র লাগে না। অভিভাবকের অনুমতি লাগে না। লেখার শুরুতে মৃত বাচ্চাগুলোর বয়স তেরোর কম- যা প্রমাণ করে কিছুভাবেই সামাজিক মাধ্যমে বয়স যাচাই করা হয় না।

    এরপরের সমস্যা ছোটরা কি দেখে? ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ১৬ বছর বয়সী লং আইল্যান্ড, নিউয়র্কের চেজ নাসাকা, আত্মহত্যা করে। সে মানসিক অবসাদে ভুগছিলো। তার মৃত্যুর পর তার মা তার টিকটক অ্যাকাউন্টে খুঁজে পান অজস্র ভিডিও- আশাহীনতার, সময় ফুরিয়ে যাওয়ার, বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে না পাবার, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ভিডিও- যার সংখ্যা এক হাজারের ওপর। কিভাবে হতে পারে এটা? চেজের মা মিশেল কিছুতেই কোনো উত্তর খুঁজে পাননি। তিনি জানতেন টিকটকে মজার ভিডিও পোস্ট করা হয়- তিনি কিভাবে জানবেন একই ঘরে অবস্থানকারী পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা ভিডিও আসে? কিছুতেই বুঝতে পারেন না কিভাবে একটি বাচ্চা যে মানসিক অবসাদে ভুগছে তার কাছে অজস্র ভিডিও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আসতে থাকে, আস্তে আস্তে যা আত্মহত্যায় পথে ঠেলে দেয়? একটা ক্লিক, একটা সার্চের থেকেই তৈরী হতে থাকে এই অ্যালগরিদিমের জাল। আর ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে অপরিণত মস্তিস্ক। কিছুক্ষণ একটা বিষয় দেখলে বা সার্চ করলে আকৃষ্ট করার উপাদান দিয়ে সময় বাড়ানো- আর বিজ্ঞাপন থেকে আরো আরো রেভিনিউ।

    যদিও টিকটক সেটা স্বীকার করেনা, কিন্তু ২০২১ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের করা একটি তদন্তে, টিকটকে একশোটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খুলে একটি দুটি নেগেটিভ বা অবসাদের মেসেজ টাইপ করার ৩৬ মিনিট পর থেকে ফিড গুলি ভরে যায় ৯৩% অত্যন্ত বিষাদ ভরা নেগেটিভ কন্টেন্টে।

    একইভাবে মেটা তাদের ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সাইটে যে বারো বছরের নীচে অসংখ্য সদস্য আছে সেটা ভালোভাবে জানে। ২০১৯ সালের প্রথম থেকে মেটার কাছে রিপোর্ট ছিলো যে তাদের প্ল্যাটফর্মে ১.১ মিলিয়ন বারো অনূর্ধ্ব সদস্য আছে। কিন্তু জানা সত্ত্বেও তার মধ্যে খুবই সামান্য পরিমান সদস্যদের একাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। এখন বারো বছর অনুর্ধ্ব সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ থেকে ২.৫ মিলিয়ন। তাহলে মেটা এই বিশাল সংখ্যক বাচ্চাদের সমস্ত ডাটা সংগ্রহ করেছে তাদের অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া, এবং সেই ডাটা তারা ব্যবহার করছে। এছাড়া মেটার নিজস্ব রিসার্চ অনুযায়ী, ইনস্টাগ্রামের সদস্যদের মধ্যে ১৩.৫% টিনেজার মেয়েরা বলেছে ইনস্টাগ্রাম তাদের আত্মহত্যা করার ইচ্ছে বাড়িয়ে দিচ্ছে আর ১৭% বলেছে তাদের ইটিং ডিসঅর্ডার আরো খারাপ জায়গায় যাচ্ছে। এই সমস্ত তথ্যগুলিকে মেটা প্রধান জাকারবার্গ এবং সিনিয়র এক্জিকিউটিভরা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেন; ২০১৮ সালে মেটা থেকে তাদের প্রোডাক্ট ডিভিশনকে পাঠানো একটি ইমেইল লিক হয় যেটাতে বলা হয়- প্রোডাক্ট ডিজাইন করার সময় এটা মনে রাখতে হবে যে ‘তেরো বছর বয়স্ক একটি বাচ্চার সারা জীবনের দাম ২৭০ ডলার’- যে কথাটি মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড অভিঘাত সৃষ্টি করে।

    এছাড়া স্ন্যাপচ্যাট, যে মাধ্যম মূলত অল্পবয়সয়ীরা ব্যবহার করে এবং যেখান মেসেজ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মুছে যায়, সেই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে নেশা করার ব্যথানিরোধক ট্যাবলেটের জায়গায় বিক্রি হয়েছে চরম ক্ষতিকর ফেন্টান্যাল ড্রাগ, যাতে চলে গেছে ২০০র ওপর অল্পবয়সী প্রাণ, তার মধ্যে নয়জন শিশু।

    আমেরিকাতে বেশ কয়েক বছর মেটা , টিকটক, স্ন্যাপ, এই সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কংগ্রেস পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করেছে, বিশেষতঃ বাচ্চাদের যৌন হেনস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য। যেখানে ছোট থেকে বয়ঃসন্ধির বাচ্চারা ক্রমাগত শিকার হচ্ছে যৌন হেনস্থার, মানসিক অত্যাচারের, তৈরী করে দেওয়া হচ্ছে জগৎ যার মধ্যে ঢুকে বাস্তব পৃথিবীর সাথে তাদের যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে- অবসাদে তলিয়ে যাচ্ছে। এই পৃথিবীটা তাদের চারপাশে তৈরী করে, এর দায়ভার এই সামাজিক মাধ্যম কোম্পানী অস্বীকার করতে পারে না। বেশ কয়েকটি এরকম সেশন হয়েছে যেখানে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির প্রধানরা কংগ্রেসে এসেছেন টেস্টিফাই করতে। ২০২৪ সালে একতিরিশে জানুয়ারী মেটার মার্ক জাকারবার্গ, টিকিটকের সাউ জি চেউ, স্ন্যাপের ইভান স্পিগেল, ডিসকর্ডের জেসন সিট্রন, এক্সের লিন্ডা ইয়াকরিনো এসেছিলেন সেনেট জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে তাদের বয়ান দেবার জন্য। এইবার, সেখানে তারা শুধু কংগ্রেসম্যানদের কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হননি, সেখানে উপস্থিত ছিলেন সন্তান হারানো বা অত্যন্ত ক্ষতি হয়ে যাওয়া সন্তানদের মা বাবারা, তাদের বাচ্চাদের ছবি হাতে নিয়ে, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। তাদের উপস্থিতি সেদিন অনেক কথার থেকেও হাজারগুণ জোরালো আর ভারী প্রতিবাদ নিয়ে এসেছিলো। কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা এই কোম্পানী প্রধানদের তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সাথে এটাও বলেছেন সন্তানের বাবা মা হিসাবে এই অভিভাবকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে। এই অভিভাবকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাকারবার্গ, স্পিগেল ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

    মেটার প্রধানের বা স্ন্যাপের প্রধানের এই ক্ষমা প্রার্থনা বা প্রতিজ্ঞা, যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে কি তথ্য ভবিষ্যতে পৌঁছবে, সেই বিষয়ে কোম্পানি অনেক বেশি অনেক বেশি সচেতন হবে এবং বিধিনিষেধ কার্যকরী করবে- এই সমস্ত কিছুই ভালো পদক্ষেপ, কিন্তু সেটা না করলে আমেরিকান গভর্নমেন্ট বা সাধারণ মানুষ কি করতে পারবেন?

    করা খুব কঠিন- কারণ আইন। আঠাশ বছরের পুরোনো একটি কেন্দ্রীয় আইন, সেকশন ২৩০ অনুসারে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলিতে যে কনটেন্ট প্রকাশিত হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানীদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। আর এই কোম্পানীদের বিরুদ্ধে মামলা না করা গেলে, এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি কোনো ন্যয় বিচার পাবে না। তাই রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নির্বিশেষে প্রথমে এই সেকশন ২৩০-কে নিষিদ্ধ করার জন্য কংগ্রেসে বিল আনতে হবে। তারপরে দীর্ঘ পথ।

    তবে এখন খানিকটা আশার আলো দেখা গেছে। ২০২১ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো একত্রিত হয়ে রিপোর্ট করার পর ৪২টি রাজ্যের এটর্নি জেনারেলরা মেটার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারা এই মর্মে মামলা করেছেন যে মেটার প্রোডাক্ট এমনভাবে বানানো হয়েছে যা অপ্রাপ্তবয়স্ক মনের জন্য ক্ষতিকর, তাদের আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বছর জানুয়ারী মাসে ক্যালিফর্নিয়া সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এই মর্মে রায় দিয়েছেন যে অভিভাবকরা স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন ।

    তবে পৃথিবীর অন্যান্য কয়েকটি দেশে আইন সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে। জার্মানিতে নেট জিডিজি আইন আছে যা তাদের দেশে রেজিস্টারড সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলির কাছে কোনো পোস্ট সম্পর্কিত কোনো ক্ষতিকর অভিযোগ এলে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। পোস্ট বেআইনি প্রমাণিত হলে এবং পোস্ট না সরালে ২ থেকে ২০ মিলিয়ন ইউরো ফাইন হতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে এই কনটেন্ট একঘন্টার মধ্যে সরানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে ‘অ্যাভোরেন্ট ভায়োলেন্ট মেটিরিয়াল এক্ট ২০১৯’, সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল পেনাল্টি, এমনকি টেক এক্সেকিউটিভদেরকে তিন বছরের অব্দি জেলে পাঠানোর এবং কোম্পানির গ্লোবাল টার্নভারের ১০% অব্দি পেনাল্টির আইন করা হয়েছে।

    ভারতবর্ষে সামাজিক মাধ্যম সংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট আইনাবলী নেই কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন আইন আছে। ‘ডিজিটাল পার্সোনাল ডাটা প্রটেকশন এক্ট ২০২৩’ অনুযায়ী যেটা অনূর্ধ্ব আঠেরোর কেউ সামাজিক মাধ্যমে একাউন্ট খুলতে গেলে অভিভাবকের অনুমতি লাগবে এবং সেটা বৈধ কিনা যাচাই করা হবে। এই আইনটি এখনো চালু হয়নি। এছাড়া গেমিং ইন্টারমিডিয়ারি রেগুলেশন আছে যা ডিজিটাল গেম এবং সামাজিক মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অনুপযুক্ত কোনো বিষয় দেখা না যায়, সেই বিষয়টি খেয়াল রাখে। এডভার্টাইসিং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এই মর্মে বিধান দিয়েছে গেমিং এবং সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত বিজ্ঞাপনগুলি অপ্রাপ্তবয়স্করা দেখছে সেগুলি তাদের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে বা কোনো বিপদের পথে না নিয়ে যায়, সেই বিষয়টি দেখতে হবে। এই সমস্ত রেগুলেশনগুলো একত্রিত হয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে ছোটদের জন্য মানসিক ভাবে ক্ষতিকর বিষয়বস্তু বা বিজ্ঞাপন আসতে দেয় না, কোনোভাবে এলে বাধ্যতামূলক ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়।

    আইন আপাতদৃষ্টিতে ভালো আছে কিন্তু, অন্যদিকে গত বছর টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে বেরোনো একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে ২০২৩ সালে, কর্ণাটক হাই কোর্টের জাজ নারিন্দার একটি বিবৃতি দিয়েছেন - আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েরা এতো সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়চে যে কত বয়সে তারা সামাজিক মাধ্যমে থাকবে এটা বিবেচনা করা দরকার। তিনি বলেন তার নিজের টিনেজার ছেলে প্রচুর পরিমান সময় ডিসকর্ডে কাটায় বা তার গোপন একাউন্ট ইনস্টাগ্রামে আছে, হয়তো আরো গোপন কার্যকলাপ করে ইন্টারনেটে যা তিনি জানেন না। ভারতবর্ষে, গড়ে মানুষ যাদের কাছে সামাজিক মাধ্যমে আছে, তারা ২.৪ ঘন্টা সামাজিক মাধ্যমে কাটায়। ভারতে ২৯০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে, তাই এই রোজকার হিসেবটা বেশ উঁচু।বয়ঃসন্ধিতে থাকা, ১৩-১৯ বছর বয়স্করা ৩১% সমস্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে। ২০২২ এর ডাটা অনুযায়ী ফেসবুকে আছে ৩২৯ মিলিয়ন জন সদস্য, সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি।

    ২০২২শে করা জাতীয় স্তরের সার্ভেতে, শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রে ১৭ % অভিভাবকরা জানিয়েছেন তাদের বাচ্চারা ছয়ঘন্টার ওপর সময় ইন্টারনেটে কাটায়। সারা ভারতবর্ষে এই সংখ্যা ২২%এর ওপর। ছয়ঘন্টা ইন্টারনেটে কাটানোর জন্য অত্যন্ত লম্বা সময়। তাছাড়া পৃথিবীর আর সব দেশের মতো ভারবর্ষের বাচ্চারাও শারিরীক ভাবে সক্রিয়তা হারাচ্ছে, হারাচ্ছে ঘুম আর চারপাশের মানুষ আর পৃথিবীর সাথে সংযোগ। এছাড়া আছে সাইবার বুলিং, সারাক্ষন অন্যদের সাথে নিজেদের তুলনা ডিপ্রেশন ইত্যাদি। এগুলো প্রমান করে যে বাচ্চাদের আর বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের ওপর সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব ভালোর চেয়ে খারাপ।ডক্টর জোয়া আলী রিজভী, ডেপুটি কমিশনার অফ আডলসেন্ট হেলথ এর মতে- বয়োসন্ধির ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ফান্ডিং বাড়ানো খুব জরুরী আর এই খারাপ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে প্রয়োজন বিভিন্ন সরকারি সংগঠন আর মন্ত্রালয়ের একটা সংগবদ্ধ লড়াই। তার মতে, এখন যদি আমরা না লড়ি, তাহলে আমরা হয়তো একটা গোটা প্রজন্মকে হারিয়ে ফেলবো।

    এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হয় সরকারের কঠিন হস্তক্ষেপই কি তবে সঠিক পথ ?

    চীনে গনতন্ত্র নেই, চীনের অর্থনীতির প্রত্যেক ক্ষেত্রে, যার মধ্যে সামাজিক মাধ্যমও পড়ে, সরকারের প্রচুর বিধিনিষেধ আছে। সেই বিধিনিষেধ শুধু তাদের দেশের সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর ওপর নয়, চীনের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও। সাইবারস্পেস এডমিনিস্ট্রেশন অফ চায়না ২০২১ সাল থেকে সপ্তাহান্ত বা অন্য ছুটির দিন ছাড়া ছোটদের সারাদিনে শুধুমাত্র একঘন্টা অনলাইন গেম খেলার স্বাধীনতা দেয়। চায়নাতে টিক টক নেই, আছে তার সিস্টার প্ল্যাটফর্ম ডৌইন, যারা প্রায় একই সোর্স কোড ব্যবহার করে। চীনের ছেলে মেয়েদের ফিডে শুধুমাত্র, বিজ্ঞানের পরীক্ষা নিরীক্ষা, শিক্ষামূলক ভিডিও, মিউজিয়াম এক্সিবিট এসব ধরণের ভিডিও দেখা যায়, তাও আবার, অনুর্দ্ধ চোদ্দ বছর বয়সীরা শুধুমাত্র দিনে ৪০ মিনিট এই প্ল্যাটফর্ম দেখতে পারবে। ২০২৩ সালে সরকার প্রস্তাব আনছে যে অপ্রাপ্তবয়স্করা রাত্রি দশটা থেকে সকাল ছটার মধ্যে ফোনে কোনো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না। আট বছরের নীচে ছোটরা সারাদিনে চল্লিশ মিনিটের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়া ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে একটা সম্পূর্ণ ইয়ুথ মোড তৈরী করা হয়েছে যেখানে শুধু তাদের বয়সের উপযুক্ত বিষয়বস্তু প্রকাশিত হয়। আর সেটা করার পর থেকে সাইবারস্পেস এডমিনিস্ট্রেশনের মতে, অল্প বয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্যে যথেষ্ট সুফল দেখা যেতে শুরু হয়েছে।

    এটাই কি তবে ঠিক পথ?

    প্রদীপ থেকে বেরোনো দৈত্যকে কি ভাবে আয়ত্তে রাখা যাবে সেটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১০৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৫৬529974
  • লেখাটা খুবই ভাল। 
     
    পনেরো কুড়ি বছর আগে প্রথম যখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং আসে , তখন জিনিসটা ছিল বাস্তবের একটা এক্সটেনশন। এমনি স্কুল কলেজে অফিসে যাকে ইতিমধ্যেই চিনি বা অচেনা কারুর লেখা বই পড়ে ভাল লাগলে তাকে ফেসবুকে খুঁজে বন্ধু হিসেবে যোগ করা। 
     
    সাত আট বছর আগে জিনিসটা উল্টে যায়। নিউমিডিয়া আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জুড়ে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্ম। যেটা আদতে একটা ভার্চুয়াল বাজার ছাড়া অন্য কিছু না , সবাই হয় ক্রেতা বা বিক্রেতা। যে কেউ যে কোনো কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে অনুসরণ করতে পারে। টার্গেটেড মার্কেটিংর চোখে সেজন্য অনুর্দ্ধ আঠেরোরাও ক্রেতা ছাড়া কিছুই নয়, যাদের নিজস্ব আয় নেই কিন্তু বাবা মায়ের ক্রেডিট কার্ডের একসেস আছে।
     
    অনুর্দ্ধ আঠেরোদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া যদি আদৌ রাখতেই হয় তাহলে শুধুমাত্র তাদের পরিচিত বৃত্তে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত যেখানে তারা শুধু তাদের স্কুলের বা অন্য আগে থেকে চেনা বন্ধুদের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারবে।
  • Mahua | 2600:1000:b10c:8d92:68b8:79ef:8b4e:***:*** | ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৯530115
  • আপনার  সাথে একমত ।
  • kk | 2607:fb90:ea06:926e:6d06:5542:f486:***:*** | ০১ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৫530117
  • লেখাটা খুবই ভালো লাগলো। জরুরী লেখা।
  • দীপঙ্কর দাশগুপ্ত | 2405:201:8008:c017:2053:8ea:a272:***:*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৪২530253
  • খুবই জরুরি লেখা। এ বিষয়ে কোন সংশয় নেই যে সামাজিক মাধ্যম প্রতিনিয়ত আমাদের মনঃসংযোগ কেড়ে নিচ্ছে। চারপাশের মানুষজন ও পরিবেশ, পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। বাস্তব নেটওয়ার্কিং কমছে আর ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কিং বাড়ছে -- এ কেমন কথা! প্রযুক্তি, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো আধুনিক দানব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মারাত্মক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। প্রায় শতবর্ষ আগে লেখা অলডাস হাক্সলির 'ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড' আজ যেন আমাদের সামনে প্রকট হয়ে উঠছে। কিন্তু এই নাগপাশ থেকে পরিত্রাণ কিভাবে? মানুষ কি চায় এই জাল কেটে বেরোতে? সুখ এখনও টিকে রয়েছে সেই প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে যেখানে মানুষ এখনও প্রযুক্তির দাস হয়ে যায়নি।   
  • দীপ্তসুন্দর | 2409:40e1:cd:df82:514b:4a49:d603:***:*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৫৭530260
  • একটা জিনিস দেখছি এখানে যে, যেভাবে সবদিক থেকে গলায় ফাঁস বসছে, সাধারণ মানুষ প্রায় সবরকম আশা প্রতিবাদ প্রতিরোধ ভুলে গেছে। যেন বাড়িতে আগুন লাগলেও কিছু করার নেই। এই মানসিকতা অবশ্যই সমাজমাধ্যম থেকে অনেকটা এসেছে। সমস্যার সমাধান হবে না বা আমি করতে পারব না সেটা এক জিনিস। কিন্তু শিক্ষিতরাও সমস্যাটাই বুঝতে অক্ষম। এই দিকটা আপনার পরের লেখাতে হাইলাইট করতে পারেন।
     
    একটা উল্টো দিক আছে যেটা সাউথ আফ্রিকাতে কোথাও হয়েছে। সেটা হল, মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ বর্জন। আবার টেবিল ফোনে ফিরে যাওয়া। এরকম একটা অড সলিউশন কিছু লিখতে পারেন। নয়ত মনে হয়, কেউ কিছু ঠেকাতে পারবে না।
     
    আর একটা দিক মানুষ ভাবে যে এই টিকটক জাতীয় অ্যাপ আত্মহত্যায় ঠেলে দিয়ে কী লাভ করে? এটা অনেকে বুঝতে পারে না বলে বিশ্বাস করে না। আপনি যেমন লিখেছেন, বাচ্চাদের তথ্য জোগাড় করে ওরা। সেটা ঠিক কিভাবে কাজে লাগায়? অ্যালগরিদমের কথা লিখেছেন ঠিকই। কিন্তু একেবারে সহজভাবে কানেকশনটা অনেকে ধরতে পারে না। তাই রোজ সোশাল মিডিয়ার এআই নির্মিত ফাঁদে পা দেয়।
  • Arindam Basu | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৫৩530280
  • সামাজিক মাধ্যম মানেই যদি সেটা অপকারী হয় বা তাকে তাই বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সত্যি কিছু বলার নেই। 
    কেউ লেখে না, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টা, টিকটক, এসব করার কি প্রয়োজন? 
    এদের কি বিকল্প নেই? 
    অবশ্যই আছে। 
    এদের থেকে ঢের ভাল আর একেবারেই অযাডিকটিভ নয়, কোন অ্যালগরিদম নেই, এই ধরণের সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ ব্যবহার করুন না, কে বারণ করেছে? আরো ভাল হয় নিজের মাধ্যম নিজে তৈরী করে রোল করুন। 
    ম্যাসটোডনের নাম শুনেছেন?
    ব্লুস্কাই? 
    স্কাটলবাট প্রোটোকল?
    ফেডিভারসে অজস্র মানুষ নিয়মিত নিজেদের মধ্যে জগৎ জুড়ে অজস্র বিষয় নিয়ে নিত্য আলাপ আলোচনা করে চলেছেন, এই এ্যাপ গুলো নিয়ে কাউকে কখনো নালিশ করতে শুনেছেন? শোনেন নি তো?
    সমস্যা অ্যাপের নয়, সমস্যা যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা অ্যাপ ব্যবহার করে তাদেরও নয়, সমস্যা একটা সুস্থ আবিষ্কারকে মানুষের আলাপচারিতার কাজে না লাগিয়ে একদল ব্যবসায়ী তাকে লোভের অস্ত্র করে রেখেছে, আর ইচ্ছাকৃতভাবে সেই ফাঁদে মানুষ পা দিয়ে নিজেদের দোষারোপ করছে। 
    সামাজিক মাধ্যম, ইলেকট্রনিক মিডিয়াম ভাব প্রকাশের চমতকার মাধ্যম, কিভাবে একে ব্যবহার করতে হয় স্কুল কলেজে শেখানো উচিত। ভাল মন্দ বোধ নিজেরা স্থির করুন, মানে আপনিই তো বাজারের নিয়ন্ত্রক।
     
    ফেসবুক, টুইটার জাতীয় বাজারী মাধ্যমগুলোর সমস্যা কোথায় জানেন? এগুলো কেন্দ্রীভূত মাধ্যম, আপনি চাইলেও এদের হাত থেকে বেরোতে পারবেন না, যদি না একান্ত নিরালম্ব হন। আর তা আপনি নন। 
     
    এরা প্রথম প্রথম শুরু করে মানুষকে টেনে আনে, তারপর তার সূত্রে বিপণন, তারপর একসঙ্গে বিপণন এবং সাধারণ মানুষ, উভয়কে একসঙ্গে শুষতে থাকে। কোরি ডকটরভ এর নাম দিয়েছেন enshittification ।
     
     
    এবার আপনি স্থির করুন কি করবেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন