এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা এবং কিছু প্রশ্ন...

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২১ বার পঠিত
  • খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা এবং কিছু প্রশ্ন…
     
     
    পথ চলিয়েদের কথালাপ 
     
    দুপুরের আয়েসি সময়টুকু কাটিয়ে খিড়কির দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই একদল স্কুল ফেরতা পড়ুয়ার মুখোমুখি হয়ে যাই। ছুটির পর দলবেঁধে বাড়ি ফিরছে। না , ওদের হাতে ফোন নেই! হয়তো সেই কারণেই মুখে কথার ফুলঝুড়ি ফুটছে মনের আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে! বিধিসম্মত নয় জেনেও আঁড়ি পাতি আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে। 
     
    – জানিস! এখন থেকে ব‌ই খুলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে !
     
    – ধ্যুস্ ,এমনটা আবার হয় নাকি? 
     
    – আরে বাবা হয়। সেদিন খবরের কাগজে দেখলাম। এবার থেকে সেন্ট্রাল বোর্ডের ক্লাস নাইনের পড়ুয়ারা ব‌ই খুলে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখবে।
     
    – বাহ্ ! এতো খাসা বন্দোবস্ত। আমাদেরও কি এভাবে পরীক্ষা দিতে হবে? হলে মন্দ হয়না, আর একটু বিস্তারিত জানতে হবে ব্যাপারটা।
     
    – কালকে তুই খবরের কাগজটা সঙ্গে করে নিয়ে আসিস তো।
    একটু পড়ে দেখবো। কতো রকম পরীক্ষা নিরীক্ষাই যে চলবে আমাদের নিয়ে, কে জানে?
     
    – দাঁড়া, আগে কালকের পরীক্ষাটা মিটিয়ে নিই ।
     
    কথা বলতে বলতে ওরা আমার নজর আর শ্রবণ সীমার বাইরে চলে যায়। আমার জন্য ফেলে রেখে যায় কিছু নতুন ভাবনার বিষয়।  
     
    এক একান্ত অভিজ্ঞতা 
     
    কোনো বিশেষ কাজের তাড়া না থাকলে মাঝে মাঝেই পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে বেশ খানিকটা সময় কাটাই। সেদিনও তেমনটাই করছিলাম। খুচরো কাগজে ঠাসা একটা জীর্ণ ফাইল বার করে সামান্য নাড়াচাড়া করতেই একটা খাম হাতে উঠে এলো। নির্ঘাত আমার কর্মজীবনের স্মারক।
    ভেতরে কী আছে দেখবো বলে তা খুলতেই দেখি কিছু জেরক্স করা প্রশ্ন পত্র। দশম শ্রেণির জন্য। ওপরে লেখা ‘ ওপেন বুক এক্সাম’ বা খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা। তারিখ - ……. ২০১১।
    পুরনো নথিপত্র অনেক অনেক স্মৃতি বুকে ধরে রাখে। এগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। ওটা ছিল একটা পরীক্ষামূলক প্রয়াস। মোট পাঁচটি সেটের প্রশ্ন। প্রশ্নগুলো এমনভাবে করা হয়েছিল যে সরাসরি ব‌ই থেকে টুকে দিলে হবেনা। ভাবতে হবে। পরীক্ষার হলে বসে ভাবতে শুরু করলে অচিরেই সময় কাবার। সেদিন হলোও তাই। প্রশ্ন দেখে অনেকেই অবাক। ব‌ইয়ের কোথায় উত্তর লুকিয়ে আছে তা না জানলে ব‌ই হাতড়াতে হবে বসে বসে। সেদিন এমন পরীক্ষা নিতে গিয়ে বেশ মজাই লেগেছিল। ভেবেছিলাম, এমনটা হলে মন্দ কি! পড়ুয়াদের একাংশের‌ও খুব মনপসন্দ্ হয়েছিল ব্যাপারটা স্রেফ অভিনবত্বের কারণে।
     
    নতুন প্রস্তাবনা প্রসঙ্গ 
     
    অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘোষণা করে জানানো হয়েছে যে আগামী ২০২৬ - ২০২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বোর্ডের অধীনে থাকা বিদ্যালয়গুলোতে পাঠরত নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা বা ওপেন বুক এক্সাম' দিতে হবে। বিষয়টি যে অভিনবত্বের দাবি রাখে তা বোধহয় বলে বোঝাতে হবে না। শিক্ষা আধিকারিকদের মনে হচ্ছে যে এতোদিনের চেনা পরীক্ষা পদ্ধতি চলতি সময়ের উপযোগী নয়। গতানুগতিক পদ্ধতিতে ব‌ইয়ের কথাগুলোকে মগজস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দেবার সনাতনী পদ্ধতি এই সময়ের বিশ্বজোড়া মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়, অচল। দুনিয়া দাবি করে, যে একালের ছেলেপিলেরা এখন মুখস্থ বিদ্যা কেন্দ্রিক পঠনপাঠনের ঘেরাটোপ ছেড়ে প্রয়োগকারী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে, কী বাচক প্রশ্ন ছেড়ে কেন, কীভাবে জাতীয় প্রশ্নের তীব্রতাকে সামলাতে পারবে সহজেই। জ্ঞানমূলক প্রশ্নের হাত ছেড়ে তারা আরও আরও বেশি বেশি করে বোধ, প্রয়োগ আর দক্ষতামূলক প্রশ্নের হাত ধরে শিক্ষাপথের চড়াই- উৎরাই পাড়ি দিতে শিখবে সহজেই। শিক্ষার্থীদের বুঝতে, ভাবতে, বিশ্লেষণ করতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে নতুন করে।
     
    কেন্দ্রীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এইটি একান্তই একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলতে হয় যাতে করে যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে আমাদের সম্ভাবনাময় নবীন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা আধিকারিকরা মনে করছেন গোদা স্মৃতি নির্ভর শিক্ষা কখনোই একজন শিক্ষার্থীর অন্তর্লীন সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে না। নব প্রবর্তিত জাতীয় শিক্ষানীতির উচ্চতর শিক্ষা দর্শনের সদর্থক রূপায়ণের লক্ষ্যে আমাদের প্রচলিত পঠনপাঠন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা মোটেই উপযোগী নয়। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন পরিবর্ধন ও পরিমার্জন জরুরি। 
     
    এই প্রস্তাবিত পরিবর্তন প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে শেঠ এম. আর. জয়পুরিয়া স্কুলসের গ্রুপ ডিরেক্টর কনক গুপ্তা বলেছেন – “আমাদের জীবন হলো একটা খোলা ব‌ই । এই দুনিয়ায় কেবলমাত্র মুখস্থ করে মনে রাখা মানুষদের জন্য কোনো আসন নেই। যাঁরা সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বাতলেছেন তাঁদের‌ই মনে রেখেছে সবাই।” শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই পরিবর্তনের হাত ধরে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একবিংশ শতকের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। এই ব্যবস্থা আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও বিশ্লেষণী এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন করে তুলবে। 
     
    খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা 
     
    নাম থেকেই পরিস্কার যে এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা ব‌ই খুলে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। তবে শুধু মাত্র নির্দ্ধারিত পাঠ্যপুস্তক নয় , পরীক্ষার সময় তাঁরা ক্লাস নোটস্ এবং অন্যান্য অনুমোদিত শিক্ষা উপকরণকেও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে। আইনের শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ পেলেও অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের এই অনুমতি ছিলোনা 
    তাঁরা সকলে সাবেকি ধাঁচের পরীক্ষাতেই নিজেদের মূল্যায়নের সুযোগ পেয়েছেন। স্কুল স্তরের পঠনপাঠনের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পরিকল্পনা অবশ্য এই প্রথম।
     
    ওপেন বুক এক্সামের আবার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমতঃ নিয়ন্ত্রিত খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা। এই ব্যবস্থায় পরীক্ষার্থীরা কিছু সুনির্দিষ্ট ছাপাই উপকরণ যেমন লগ্ টেবিল, অভিধান কিংবা রচনা সংকলনের সাহায্য নিতে পারে। হাতে লেখা কোনো উপকরণের ব্যবহার এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। 
    অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট উপকরণের ওপর বিধিনিষেধের বালাই নেই। শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর দিতে যে কোনো রকম অনুমোদিত উপকরণের ব্যবহার করতে পারে। শিক্ষাবিদ হফম্যানের মতে, প্রচলিত ব‌ই ছাড়া পরীক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার দিকে প্রণোদিত করে। অথচ এই খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা তাঁদের মধ্যে প্রয়োজনীয় যুক্তি ও বিচার বোধের বিকাশে সহায়তা করে। তাঁদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। পরীক্ষার কথা শুনলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের চাপ তৈরি হয়। খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা এমন ভাবনা চিন্তা থেকে ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখে। পশ্চিমা শিক্ষাবিদরা অনেকেই এই মুক্ত ব্যবস্থার ঢালাও প্রশংসা করেছেন। 
     
     
    পড়ানোর পদ্ধতিতে আনতে হবে বদল 
     
    পরীক্ষা পদ্ধতিতে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হলে বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন পঠনপাঠনের কাজেও বদল আনতে হবে। এই বদলের অগ্রদূত হবেন আমাদের গুরু মশাইরা। প্রস্তাবিত এই পদ্ধতিতে শিক্ষকদের শিক্ষণের কাজটি যে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং দায়িত্বের হয়ে উঠতে চলেছে তা মেনে নিয়েছেন সকলেই।
    এতোদিন ধরে যে নিয়মে পড়াশোনার কাজ পরিচালিত হতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, সেই রীতি পদ্ধতিতে বদল আনতে হবে। “ শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সনাতনী লেকচার পদ্ধতির থেকে সরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে করে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে পাঠ্য বিষয়ের পুনঃনির্মাণের কাজ তাঁরা নিজেরাই করে নিতে পারে নিজেদের মতো করে। এই ব্যবস্থায় পাঠ নির্মাণের কাজটি হবে যৌথ সাধনার বিষয় এবং এই কাজে জ্ঞান বা বোধের বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রাধান্য পাবে,শিক্ষক শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে একতরফা সঞ্চালন নয়। আমি বলবো, তোমরা শুনবে নয় বরং তোমরা বলবে আমি শুনবো এই হবে স্বীকৃত পদ্ধতি।”-- এমনটাই মনে করছেন মর্ডান পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল ডঃ অলকা কাপুর মহোদয়া।
     
    তবে কাজটা যে খুব সহজেই করে ওঠা সম্ভব হবে না তা মেনে নিয়েছেন জেনেসিস গ্লোবাল স্কুলের ডিরেক্টর সনমদীপ চাড্ডা। আসলে এক‌ই ক্লাস ঘরের মধ্যে অগণিত শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ঘটে যাঁরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের থেকে অনন্য এবং স্বতন্ত্র। বৌদ্ধিক বিকাশের স্তরেও রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। তাঁদের সকলকে এক মন্ত্রে ,এক সুরে বেঁধে একটা সিম্ফনি তৈরি করা মোটেও সহজ কাজ নয়। এজন্য আমাদের চাই ক্যারিশম্যাটিক কম্পোজার। 
     
    শিক্ষার্থীদের একটি বড়ো অংশ এবং তাঁদের অভিভাবকরা এখনও মনে করেন যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কিছু পড়া মানে সময়ের অপচয়। এঁরা ব‌ইয়ের ছাপানো শব্দবন্ধের মধ্যেই ছেলেমেয়েদের মজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। এমন শিক্ষার্থীদের বাঁধা পথের বাইরে বের করে আনাটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ। গুরুমশাইদের এজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে অনেক বেশি সংবেদনশীল মানসিকতা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা যেন তাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারে, এবার থেকে তা শেখাতে হবে শিক্ষার্থীদের। মোদ্দাকথা হলো এই যে, শিক্ষার্থীরা এখন থেকে প্রয়োগমুখী বিদ্যার চর্চা করতে শিখবে। আর এই কাজে শিক্ষক- শিক্ষিকারাই হবেন মূল কাণ্ডারী, তাঁদের যথার্থ friend, philosopher and guide. হয়ে উঠতে হবে।খোলা ব‌ইয়ের পরীক্ষা হবে একাজের সেতুবন্ধ।
     
    খোলা ব‌ইয়ৈর পরীক্ষা কেন ? 
     
    এতোদিনের চেনা পরীক্ষাপথ ছেড়ে একেবারে নতুন পথে হাঁটার চেষ্টা চলছে কেন? শুরুতেই বলেছি শিক্ষা কোনো স্থাণু, অচর বিষয় নয়। সময়ের সাথে তালমিলিয়ে তাকে চলতে হয়।আর তাই প্রয়োজন হয় চলতি ব্যবস্থার পরিমার্জনের। রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন শিক্ষানীতির ঘোষণা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা এক ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে প্রশাসকদের মধ্যে। এমন ঘোষণা সেই পরিবর্তনের সহযোগী হয়ে উঠতে চাইছে। বলতে দ্বিধা নেই যে , এমন সব স্বপ্ন কল্প পরিকল্পনার পেছনে যতটা আবেগ রয়েছে, দেশের বাস্তব শিক্ষা পরিস্থিতির ভাবনা ততটা সম্পৃক্ত রয়েছে বলে মনে হয়না। মাথায় রাখতে হবে, সমাজের তথাকথিত এলিট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে এমন পরিকল্পনা করা হলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।
     
    ছোটবেলার একটা অভিজ্ঞতার কথা এই অবসরে ভাগ করে নিই। বাড়িতে নতুন কেউ আসবে শুনলেই মা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন আটপৌরে ঘরের দৃশ্যপট যথাসম্ভব সাফসুতরো করে রাখতে, যাতে প্রতিদিনের ফাঁক ফোকরগুলো অতিথিদের নজরে না পড়ে। এও তেমন ব্যবস্থা নয় তো! এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেখলাম পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এমন পরীক্ষা ব্যবস্থা বহু আগে থেকেই লাগু রয়েছে ; তবে তা উচ্চতর স্তরের পড়ুয়াদের জন্য। এমন চট জলদি সবার সমকক্ষ হয়ে ওঠার ভাবনা যদি এখানেও কাজ করে থাকে, তাহলে চিন্তা হয় বৈকি!
     
    একথা মানতেই হবে যে ইদানিং পরীক্ষার পর্বটিকে রীতিমতো যুদ্ধ যাত্রার মতো করে তোলা হয়েছে। যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বটিতে যেমন সেনা ছাউনিতে সাজো সাজো রব উঠে যায়, এখন ঘরে ঘরে ঠিক তেমন‌ই অবস্থা। লড়াই অবশ্য নিজের সঙ্গে নিজের‌ই। আর তার জন্য অভিভাবকরা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষমেষ ধরে আনেন সব কৃতী গৃহশিক্ষকদের, পাশাপাশি থাকে নোটস্ ,মেড ইজি , টিউটোরিয়াল,সাজেশন, প্রস্তুতির জন্য হাজারো ফন্দি ফিকিরের সুলুক সন্ধান,শরীর চাঙ্গা রাখতে নামীদামী কোম্পানির হেল্থ ড্রিঙ্কস …. আরও কত না আয়োজন। এতো সব বিচিত্র চাপ সামলাতে গিয়ে পরীক্ষার আগেই বাবু সোনার রীতিমতো কাহিল অবস্থা। তার পরেও যদি বাবুসোনার নার্ভাস টেনশন হয়, সে যদি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তাহলে বলতে হয় যে আমাদের চলতি পরীক্ষার সিস্টেমটাই বিলকুল ত্রুটিপূর্ণ। নতুন মূল্যায়ন ব্যবস্থা যদি এসবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের ভাবী প্রজন্মের বিকাশের পথকে সত্যিই সুগম করে তুলতে পারে, তাহলে তাকে দ্বিধাহীনভাবে স্বাগত জানাই। সর্বমোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৫০০ পাওয়া শিক্ষার্থী নয়, আমাদের চাই বেগবান কিছু তুরগ যাঁরা নিজেদের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশ ও দশের ভবিষ্যৎ কে । তবে আক্ষেপ থাকবে এটুকুই যে আমার মতো অকর্মণ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এই যুদ্ধের ময়দান থেকে বাধ্য হয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন। অবশ্য এমন ব্যবস্থায় প্রাচীন পন্থীদের ঠাঁই নেই। এটাই সার সত্য।
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
      
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রতন রায়চৌধুরী | 103.18.***.*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৫১733892
  • শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা জগতের কর্তা ব্যক্তিরা চিরকালই নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। ভবিষ্যতে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ আরো চলবে। খোলা বইয়ে পরীক্ষা এমনি এক উদ্যোগ। এই উদ্যোগ কতটা কার্যকরী হল তা ভবিষ্যতে সাফল্যের নিরিখে বিবেচনা করা হবে। তবে কোন পরীক্ষা ব্যবস্থাই সম্ভবত সব ছাত্রছাত্রীর মেধা নির্ণয়ে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবে, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। এই প্রবন্ধের প্রবন্ধকার সঠিকভাবেই পরীক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন দিক, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের এই পরীক্ষা ব্যবস্থা অংশগ্রহণে কার কি ভূমিকা হবে, তা আলোচনা করেছেন।
     
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:1100:ca38:8000::***:*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:২২733895
  • আদর্শগত ভাবে খুবই ভালো।বাস্তবে নিচু স্তরে প্রয়োগ করা অসম্ভব।উঁচু স্তরে করা যায়। জোর করে করতে চাইলে বছর দুয়েকের মধ্যে ওটি দেখে লেখা পরীক্ষায় পর্যবসিত হবে। পড়ানো ও প্রশ্ন আগের মতই থাকবে।লুকিয়ে করা কাজ অফিসিয়াল হবে।
  • প্রবীর বিস্বাস | 2401:4900:314a:2443:ef91:a546:611c:***:*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৫২733896
  • নতুন স্বাদ পেলাম লেখায়। চিন্তার বহু কিছু আছে। কত কিছু নিয়েই তো পরীক্ষা চলছে, হোক না এরকম কিছু।
  • বর্নালী | 115.187.***.*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫733897
  • খোলা বই পরীক্ষা পদ্ধতি অনেক কঠিন হবে। সব অধ্যায় ঠিক মত না পড়লে পরীক্ষা র সীমিত সময়ের মধ্যে কোন উওর খুজে পাবে না পরীক্ষার্থীরা। নতুন এই পদ্ধতি তে যেমন অনেক সুবিধা আছে তেমনি অনেক অসুবিধা। সিলেক্টটিভ কিছু পড়লে চলবে না। অনেক বেশি করে খুটিনাটি জেনে পড়তে হবে। তবে ই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবে। 
  • প্রসূন | 103.***.*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৬733898
  • ওপেন বুক এগজাম কনসেপ্ট এদেশ দেখেছিল রবীন্দ্রনাথের সূত্রে। যে বিষয়টা নিয়ে কথা খুব কমই হয় বা বলা ভালো হয়ই না। সরকারি ফরমানের সুবাদে কোনো কোনো নিবন্ধকার হয়তো বা সাবেক কালের ইতিহাসে উঁকি দিয়ে দেখা শুরু করেছেন। টিউটরের নোটস ভিত্তিক পড়াশুনোর কালে অভ্যস্ত পড়ুয়ারা, যাদের সঙ্গে টেক্সটবুকের সম্পর্ক প্রায় নেই তারা এই ব্যবস্থায় কী করবে শেষমেশ? এমন বহু পড়ুয়া ও টিউটরের কথা জানি, যেখানে পড়ুয়া কেবল হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেয় গৃহশিক্ষককে। সাক্ষাতে পড়তেও আসে না। অতি সামান্য সব ঘটনায় পড়ুয়ারা এমনকি অভিভাবকরাও কেউ কেউ যে সময়ে শিক্ষককে প্রাণে মারার হুমকি দেয়, সে সময়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে ফ্রেন্ড-ফিলোজফার ইত্যাদি প্রভৃতি অনেকাংশে গালভরা বাক্যবুলি বলে মনে হয়! শিক্ষা বিষয়টা নিয়ে সাধারণ মানুষের, সাধারণ অভিভাবকদের আর বোধহয় বিশেষ কোনো ভাবনা নেই তেমন; ছেলেমেয়েকে যেনতেন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার করিয়ে উচ্চাশীদের বাদ দিলে! 
  • প্রসূন | 103.***.*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:০৯733899
  • টুকলি তো চিরকালই একপ্রকার ওপেন বুক এগজাম কিন্তু সে-ও তো সবাই বুক ফুলিয়ে করে উঠতে পারে না, জানালা দিয়ে চোতা সাপ্লাই হলেও! 
  • অভ্রদীপ | 240a:61:62e1:167d:1f37:9b71:e668:***:*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৩২733903
  • সত্যি বলতে আমার বেশ মনঃপূত হয়েছে এই পরীক্ষা ব্যবস্থাটা। তবে দুটো বড়ো সমস্যার জায়গা থেকেই গেল। একটা উল্লেখ করেছেন বিশদে, যে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার পরিকাঠামো এই পরীক্ষা ব্যবস্থার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রচলনের আগে এই ব্যবস্থা স্নাতক স্তরে প্রয়োগ করে দেখলে হয়তো বেশি ভালো হতো।
    এই রীতিতে শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ আরও কঠিন হবে। স্কুলভিত্তিক পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে গেলে অধিকাংশ জায়গাতেই সাবেকি "কী" বাচক প্রশ্নপত্র তৈরি করে বই টুকে পরীক্ষা দেওয়া দেওয়া হবে। তাই প্রথমে পর্ষদের তৈরি যথাযথ মানের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া জরুরি।
     
    দ্বিতীয়ত, মুখস্থ করাকে গুরুত্বহীন ভাবাটাও উচিৎ কাজ নয়। রোগীর উপসর্গ শুনে চিকিৎসক যদি বই খুলে ওষুধ খুঁজতে বসেন তাহলে তো বিপদ! মুখস্থ করাটাও মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। তাই, পরীক্ষা ব্যবস্থাতেও একটা ভারসাম্য আনা উচিৎ। এখন তো এমনিতেই এক গণ্ডা পরীক্ষা হয় বছরে। তার মধ্যে অর্ধেক পরীক্ষা সাবেকি ধাঁচে, আর বাকি অর্ধেক সংখ্যক বরং "খোলা বই" পরীক্ষা হোক।
  • সৌম্যদীপ সাহা রায় | 2405:201:8012:30e7:9904:2f2e:d91a:***:*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৪৭733906
  • আবার এক নতুন ধরনের বিষয়ে লেখা। ভালো লাগলো। ছোটবেলায় শুনতাম আইনের পরীক্ষায় নাকি বই নিয়ে বসা যায়। মনে মনে ভাবতাম ওদের কি মজা, আমাদেরকেও যদি এমন সুযোগ দিত! সবাইকে বই দিয়ে দিলে আর প্রশ্নপত্র বুদ্ধির আর ভাবনার হলে খারাপ কি? হোক না পরখ করে দেখা দু এক বার। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন