খোলা বইয়ের পরীক্ষা এবং কিছু প্রশ্ন…
পথ চলিয়েদের কথালাপ
দুপুরের আয়েসি সময়টুকু কাটিয়ে খিড়কির দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই একদল স্কুল ফেরতা পড়ুয়ার মুখোমুখি হয়ে যাই। ছুটির পর দলবেঁধে বাড়ি ফিরছে। না , ওদের হাতে ফোন নেই! হয়তো সেই কারণেই মুখে কথার ফুলঝুড়ি ফুটছে মনের আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে! বিধিসম্মত নয় জেনেও আঁড়ি পাতি আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে।
– জানিস! এখন থেকে বই খুলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে !
– ধ্যুস্ ,এমনটা আবার হয় নাকি?
– আরে বাবা হয়। সেদিন খবরের কাগজে দেখলাম। এবার থেকে সেন্ট্রাল বোর্ডের ক্লাস নাইনের পড়ুয়ারা বই খুলে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখবে।
– বাহ্ ! এতো খাসা বন্দোবস্ত। আমাদেরও কি এভাবে পরীক্ষা দিতে হবে? হলে মন্দ হয়না, আর একটু বিস্তারিত জানতে হবে ব্যাপারটা।
– কালকে তুই খবরের কাগজটা সঙ্গে করে নিয়ে আসিস তো।
একটু পড়ে দেখবো। কতো রকম পরীক্ষা নিরীক্ষাই যে চলবে আমাদের নিয়ে, কে জানে?
– দাঁড়া, আগে কালকের পরীক্ষাটা মিটিয়ে নিই ।
কথা বলতে বলতে ওরা আমার নজর আর শ্রবণ সীমার বাইরে চলে যায়। আমার জন্য ফেলে রেখে যায় কিছু নতুন ভাবনার বিষয়।
এক একান্ত অভিজ্ঞতা
কোনো বিশেষ কাজের তাড়া না থাকলে মাঝে মাঝেই পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে বেশ খানিকটা সময় কাটাই। সেদিনও তেমনটাই করছিলাম। খুচরো কাগজে ঠাসা একটা জীর্ণ ফাইল বার করে সামান্য নাড়াচাড়া করতেই একটা খাম হাতে উঠে এলো। নির্ঘাত আমার কর্মজীবনের স্মারক।
ভেতরে কী আছে দেখবো বলে তা খুলতেই দেখি কিছু জেরক্স করা প্রশ্ন পত্র। দশম শ্রেণির জন্য। ওপরে লেখা ‘ ওপেন বুক এক্সাম’ বা খোলা বইয়ের পরীক্ষা। তারিখ - ……. ২০১১।
পুরনো নথিপত্র অনেক অনেক স্মৃতি বুকে ধরে রাখে। এগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। ওটা ছিল একটা পরীক্ষামূলক প্রয়াস। মোট পাঁচটি সেটের প্রশ্ন। প্রশ্নগুলো এমনভাবে করা হয়েছিল যে সরাসরি বই থেকে টুকে দিলে হবেনা। ভাবতে হবে। পরীক্ষার হলে বসে ভাবতে শুরু করলে অচিরেই সময় কাবার। সেদিন হলোও তাই। প্রশ্ন দেখে অনেকেই অবাক। বইয়ের কোথায় উত্তর লুকিয়ে আছে তা না জানলে বই হাতড়াতে হবে বসে বসে। সেদিন এমন পরীক্ষা নিতে গিয়ে বেশ মজাই লেগেছিল। ভেবেছিলাম, এমনটা হলে মন্দ কি! পড়ুয়াদের একাংশেরও খুব মনপসন্দ্ হয়েছিল ব্যাপারটা স্রেফ অভিনবত্বের কারণে।
নতুন প্রস্তাবনা প্রসঙ্গ
অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘোষণা করে জানানো হয়েছে যে আগামী ২০২৬ - ২০২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বোর্ডের অধীনে থাকা বিদ্যালয়গুলোতে পাঠরত নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘খোলা বইয়ের পরীক্ষা বা ওপেন বুক এক্সাম' দিতে হবে। বিষয়টি যে অভিনবত্বের দাবি রাখে তা বোধহয় বলে বোঝাতে হবে না। শিক্ষা আধিকারিকদের মনে হচ্ছে যে এতোদিনের চেনা পরীক্ষা পদ্ধতি চলতি সময়ের উপযোগী নয়। গতানুগতিক পদ্ধতিতে বইয়ের কথাগুলোকে মগজস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দেবার সনাতনী পদ্ধতি এই সময়ের বিশ্বজোড়া মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়, অচল। দুনিয়া দাবি করে, যে একালের ছেলেপিলেরা এখন মুখস্থ বিদ্যা কেন্দ্রিক পঠনপাঠনের ঘেরাটোপ ছেড়ে প্রয়োগকারী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে, কী বাচক প্রশ্ন ছেড়ে কেন, কীভাবে জাতীয় প্রশ্নের তীব্রতাকে সামলাতে পারবে সহজেই। জ্ঞানমূলক প্রশ্নের হাত ছেড়ে তারা আরও আরও বেশি বেশি করে বোধ, প্রয়োগ আর দক্ষতামূলক প্রশ্নের হাত ধরে শিক্ষাপথের চড়াই- উৎরাই পাড়ি দিতে শিখবে সহজেই। শিক্ষার্থীদের বুঝতে, ভাবতে, বিশ্লেষণ করতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে নতুন করে।
কেন্দ্রীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এইটি একান্তই একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলতে হয় যাতে করে যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে আমাদের সম্ভাবনাময় নবীন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা আধিকারিকরা মনে করছেন গোদা স্মৃতি নির্ভর শিক্ষা কখনোই একজন শিক্ষার্থীর অন্তর্লীন সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে না। নব প্রবর্তিত জাতীয় শিক্ষানীতির উচ্চতর শিক্ষা দর্শনের সদর্থক রূপায়ণের লক্ষ্যে আমাদের প্রচলিত পঠনপাঠন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা মোটেই উপযোগী নয়। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন পরিবর্ধন ও পরিমার্জন জরুরি।
এই প্রস্তাবিত পরিবর্তন প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে শেঠ এম. আর. জয়পুরিয়া স্কুলসের গ্রুপ ডিরেক্টর কনক গুপ্তা বলেছেন – “আমাদের জীবন হলো একটা খোলা বই । এই দুনিয়ায় কেবলমাত্র মুখস্থ করে মনে রাখা মানুষদের জন্য কোনো আসন নেই। যাঁরা সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বাতলেছেন তাঁদেরই মনে রেখেছে সবাই।” শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই পরিবর্তনের হাত ধরে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একবিংশ শতকের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। এই ব্যবস্থা আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও বিশ্লেষণী এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন করে তুলবে।
খোলা বইয়ের পরীক্ষা
নাম থেকেই পরিস্কার যে এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা বই খুলে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। তবে শুধু মাত্র নির্দ্ধারিত পাঠ্যপুস্তক নয় , পরীক্ষার সময় তাঁরা ক্লাস নোটস্ এবং অন্যান্য অনুমোদিত শিক্ষা উপকরণকেও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে। আইনের শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ পেলেও অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের এই অনুমতি ছিলোনা
তাঁরা সকলে সাবেকি ধাঁচের পরীক্ষাতেই নিজেদের মূল্যায়নের সুযোগ পেয়েছেন। স্কুল স্তরের পঠনপাঠনের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পরিকল্পনা অবশ্য এই প্রথম।
ওপেন বুক এক্সামের আবার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমতঃ নিয়ন্ত্রিত খোলা বইয়ের পরীক্ষা। এই ব্যবস্থায় পরীক্ষার্থীরা কিছু সুনির্দিষ্ট ছাপাই উপকরণ যেমন লগ্ টেবিল, অভিধান কিংবা রচনা সংকলনের সাহায্য নিতে পারে। হাতে লেখা কোনো উপকরণের ব্যবহার এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত খোলা বইয়ের পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট উপকরণের ওপর বিধিনিষেধের বালাই নেই। শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর দিতে যে কোনো রকম অনুমোদিত উপকরণের ব্যবহার করতে পারে। শিক্ষাবিদ হফম্যানের মতে, প্রচলিত বই ছাড়া পরীক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার দিকে প্রণোদিত করে। অথচ এই খোলা বইয়ের পরীক্ষা তাঁদের মধ্যে প্রয়োজনীয় যুক্তি ও বিচার বোধের বিকাশে সহায়তা করে। তাঁদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। পরীক্ষার কথা শুনলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের চাপ তৈরি হয়। খোলা বইয়ের পরীক্ষা এমন ভাবনা চিন্তা থেকে ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখে। পশ্চিমা শিক্ষাবিদরা অনেকেই এই মুক্ত ব্যবস্থার ঢালাও প্রশংসা করেছেন।
পড়ানোর পদ্ধতিতে আনতে হবে বদল
পরীক্ষা পদ্ধতিতে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হলে বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন পঠনপাঠনের কাজেও বদল আনতে হবে। এই বদলের অগ্রদূত হবেন আমাদের গুরু মশাইরা। প্রস্তাবিত এই পদ্ধতিতে শিক্ষকদের শিক্ষণের কাজটি যে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং দায়িত্বের হয়ে উঠতে চলেছে তা মেনে নিয়েছেন সকলেই।
এতোদিন ধরে যে নিয়মে পড়াশোনার কাজ পরিচালিত হতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, সেই রীতি পদ্ধতিতে বদল আনতে হবে। “ শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সনাতনী লেকচার পদ্ধতির থেকে সরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে করে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে পাঠ্য বিষয়ের পুনঃনির্মাণের কাজ তাঁরা নিজেরাই করে নিতে পারে নিজেদের মতো করে। এই ব্যবস্থায় পাঠ নির্মাণের কাজটি হবে যৌথ সাধনার বিষয় এবং এই কাজে জ্ঞান বা বোধের বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রাধান্য পাবে,শিক্ষক শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে একতরফা সঞ্চালন নয়। আমি বলবো, তোমরা শুনবে নয় বরং তোমরা বলবে আমি শুনবো এই হবে স্বীকৃত পদ্ধতি।”-- এমনটাই মনে করছেন মর্ডান পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল ডঃ অলকা কাপুর মহোদয়া।
তবে কাজটা যে খুব সহজেই করে ওঠা সম্ভব হবে না তা মেনে নিয়েছেন জেনেসিস গ্লোবাল স্কুলের ডিরেক্টর সনমদীপ চাড্ডা। আসলে একই ক্লাস ঘরের মধ্যে অগণিত শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ঘটে যাঁরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের থেকে অনন্য এবং স্বতন্ত্র। বৌদ্ধিক বিকাশের স্তরেও রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। তাঁদের সকলকে এক মন্ত্রে ,এক সুরে বেঁধে একটা সিম্ফনি তৈরি করা মোটেও সহজ কাজ নয়। এজন্য আমাদের চাই ক্যারিশম্যাটিক কম্পোজার।
শিক্ষার্থীদের একটি বড়ো অংশ এবং তাঁদের অভিভাবকরা এখনও মনে করেন যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কিছু পড়া মানে সময়ের অপচয়। এঁরা বইয়ের ছাপানো শব্দবন্ধের মধ্যেই ছেলেমেয়েদের মজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। এমন শিক্ষার্থীদের বাঁধা পথের বাইরে বের করে আনাটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ। গুরুমশাইদের এজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে অনেক বেশি সংবেদনশীল মানসিকতা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা যেন তাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারে, এবার থেকে তা শেখাতে হবে শিক্ষার্থীদের। মোদ্দাকথা হলো এই যে, শিক্ষার্থীরা এখন থেকে প্রয়োগমুখী বিদ্যার চর্চা করতে শিখবে। আর এই কাজে শিক্ষক- শিক্ষিকারাই হবেন মূল কাণ্ডারী, তাঁদের যথার্থ friend, philosopher and guide. হয়ে উঠতে হবে।খোলা বইয়ের পরীক্ষা হবে একাজের সেতুবন্ধ।
খোলা বইয়ৈর পরীক্ষা কেন ?
এতোদিনের চেনা পরীক্ষাপথ ছেড়ে একেবারে নতুন পথে হাঁটার চেষ্টা চলছে কেন? শুরুতেই বলেছি শিক্ষা কোনো স্থাণু, অচর বিষয় নয়। সময়ের সাথে তালমিলিয়ে তাকে চলতে হয়।আর তাই প্রয়োজন হয় চলতি ব্যবস্থার পরিমার্জনের। রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন শিক্ষানীতির ঘোষণা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা এক ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে প্রশাসকদের মধ্যে। এমন ঘোষণা সেই পরিবর্তনের সহযোগী হয়ে উঠতে চাইছে। বলতে দ্বিধা নেই যে , এমন সব স্বপ্ন কল্প পরিকল্পনার পেছনে যতটা আবেগ রয়েছে, দেশের বাস্তব শিক্ষা পরিস্থিতির ভাবনা ততটা সম্পৃক্ত রয়েছে বলে মনে হয়না। মাথায় রাখতে হবে, সমাজের তথাকথিত এলিট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে এমন পরিকল্পনা করা হলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।
ছোটবেলার একটা অভিজ্ঞতার কথা এই অবসরে ভাগ করে নিই। বাড়িতে নতুন কেউ আসবে শুনলেই মা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন আটপৌরে ঘরের দৃশ্যপট যথাসম্ভব সাফসুতরো করে রাখতে, যাতে প্রতিদিনের ফাঁক ফোকরগুলো অতিথিদের নজরে না পড়ে। এও তেমন ব্যবস্থা নয় তো! এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেখলাম পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এমন পরীক্ষা ব্যবস্থা বহু আগে থেকেই লাগু রয়েছে ; তবে তা উচ্চতর স্তরের পড়ুয়াদের জন্য। এমন চট জলদি সবার সমকক্ষ হয়ে ওঠার ভাবনা যদি এখানেও কাজ করে থাকে, তাহলে চিন্তা হয় বৈকি!
একথা মানতেই হবে যে ইদানিং পরীক্ষার পর্বটিকে রীতিমতো যুদ্ধ যাত্রার মতো করে তোলা হয়েছে। যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বটিতে যেমন সেনা ছাউনিতে সাজো সাজো রব উঠে যায়, এখন ঘরে ঘরে ঠিক তেমনই অবস্থা। লড়াই অবশ্য নিজের সঙ্গে নিজেরই। আর তার জন্য অভিভাবকরা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষমেষ ধরে আনেন সব কৃতী গৃহশিক্ষকদের, পাশাপাশি থাকে নোটস্ ,মেড ইজি , টিউটোরিয়াল,সাজেশন, প্রস্তুতির জন্য হাজারো ফন্দি ফিকিরের সুলুক সন্ধান,শরীর চাঙ্গা রাখতে নামীদামী কোম্পানির হেল্থ ড্রিঙ্কস …. আরও কত না আয়োজন। এতো সব বিচিত্র চাপ সামলাতে গিয়ে পরীক্ষার আগেই বাবু সোনার রীতিমতো কাহিল অবস্থা। তার পরেও যদি বাবুসোনার নার্ভাস টেনশন হয়, সে যদি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তাহলে বলতে হয় যে আমাদের চলতি পরীক্ষার সিস্টেমটাই বিলকুল ত্রুটিপূর্ণ। নতুন মূল্যায়ন ব্যবস্থা যদি এসবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের ভাবী প্রজন্মের বিকাশের পথকে সত্যিই সুগম করে তুলতে পারে, তাহলে তাকে দ্বিধাহীনভাবে স্বাগত জানাই। সর্বমোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৫০০ পাওয়া শিক্ষার্থী নয়, আমাদের চাই বেগবান কিছু তুরগ যাঁরা নিজেদের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশ ও দশের ভবিষ্যৎ কে । তবে আক্ষেপ থাকবে এটুকুই যে আমার মতো অকর্মণ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এই যুদ্ধের ময়দান থেকে বাধ্য হয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন। অবশ্য এমন ব্যবস্থায় প্রাচীন পন্থীদের ঠাঁই নেই। এটাই সার সত্য।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।