এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • ভাঙা দিনের ঢেলা- ৫

    বিমোচন ভট্টাচার্য
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩২৭৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৯ (৭ জন)
  • আমি বানিয়ে কিছু লিখতে পারি না। তাই গল্প লেখা আমার কম্মো নয় ধরেই নিয়েছি। লিখি, যা আমার চারপাশে ঘটে চলেছে নিত্যদিন, তাই নিয়েই। তাই আমার লেখায় স্কুলের "ফার্স্ট বয়" সহদেব আসে। পাড়ার মাতাল নিতাইদা আসে। প্রথম ভাল লাগা সেই কিশোরী মেয়েটি ঢুকে পড়ে কত লেখায়!!একজনের কথা লিখতে গেলেই আরো দু চারজনের কথা মনে পড়ে যায়। লিখে ফেলি তাদের কথা। আপনারা খুঁজে খুঁজে পড়েন সেই সব "হাবিজাবি" লেখা। এই আমার অনেক পাওয়া। আজ এক অশান্ত সময়ের আর একটি ছেলের কথা শোনাই আপনাদের।

    অনেকবার লিখেছি আমাদের পাড়া ছিল নক্সালপন্থীদের দখলে। বাইরে টা সি পি এম। "পেটো"র শব্দ শোনা প্রায় অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিল আমাদের। কি ভয়ংকর ছিল সেই শব্দ যারা শোনেন নি তাদের বোঝানো অসম্ভব। বাহাত্তরে " নক্সালমুক্ত" হল আমাদের পাড়া। শুরু হল কংগ্রেস এর যুগ। তবে গণ্ডগোল প্রায় থেমে গিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করলো আমাদের পাড়া। কেউ কেউ কখনো সখনো বেঁচে যাওয়া "পেটো" ফাটাতো। আমাদের মনে পড়তো কি ভয়ংকর সময় পার হয়ে এসেছি আমরা। কিন্তু সত্যি সত্যি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছিল আমাদের পাড়া।

    পঁচাত্তরে চাকরী পেলাম আমি। বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে শেষে। উনআশি তে বিয়ে করলাম শম্পাকে। আশীর মাঝামাঝি মনে হয়। তখন আমাদের ফ্লাটেই আড্ডা মারতাম সবাই। এক রবিবার সকালে হঠাৎ ঘনঘন "পেটো"র শব্দ। একেবারে আমাদের ফ্লাটের সামনে। রাস্তার ধারের ঘরে বাবা থাকতেন। স্পিন্টার ঢুকে এল ঘরে। বাইরে থেকে চিৎকার করে কে বললো - জানলা বন্ধ করে দিন। আমাদের ফ্লাটে তখন বন্ধুরা সবাই। বেশ কিছুক্ষন পর অবস্থা শান্ত হলে বেরিয়ে শোনা গেল মিল্কডেয়ারীর ভাঙা বোতল আর স্ক্রাপ কে পাবে তাই নিয়ে দু দল কংগ্রেসী দের মধ্যে ঝামেলা। তখন বোতলে দুধ দেওয়া হত। বড় বড় দুধের গাড়ি বেরতো ভোরের আলো ফোটার আগেই। প্রচুর শব্দ হত। গাড়ির জার্কিং এ প্রচুর দুধের বোতল ভাঙ্গা পড়তো। সেই টেন্ডার কে পাবে তাই নিয়ে ঝামেলা। প্রায় শুরু থেকে একজনই পেত সেই বরাত। নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী এসেছে।
    প্রায় মাসদুয়েক চলার পর আগের জন রণে ভঙ্গ দিয়ে পালালেন এলাকা ছেড়ে।
    সেই সময় সেন্ট্রাল ডেয়ারী কোয়াটার্সে একটি ছেলে থাকতো। বাচ্চা ছেলে। তখন বয়েস খুব বেশী হলে পনেরো। ধরা যাক তার নাম অরুণ। ভদ্রলোকের ছেলে। সে হঠাৎ ভীড়ে গেল এই নতুন দলটির সাথে। ওদের ফাইফরমাশ খাটতো। পরের বছর মাধ্যমিক পাস করলো। পাড়ার উঠতি মস্তান তখন অরুন। আমাদের কে কিন্তু সম্মান করতো। পেটানো চেহারা।

    আস্তে আস্তে বড় হল সেই ছেলে। সেন্ট্রাল ডেয়ারী কোয়াটার্সেরই উঁচু ক্লাসে পড়া একটি মেয়ের সংগে গভীর প্রেম করতে দেখা গেল অরুণকে। দুজনের বাবাই আমাদের পরিচিত ছিলেন। ঘণিষ্ট ছিলেন না। দুজনেই প্রচুর চেষ্টা করলেন যাতে এই সম্পর্ক না টেকে। একদিন সেই মেয়েটিকে তার বাবা মা পাঠিয়ে দিলেন দুরে কোথাও। বেশ মনমরা দেখতাম সেই ডাকাবুকো অরুণকে। এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন।

    একদিন অফিস থেকে ফিরে আড্ডা মারতে বেরিয়ে শুনি অরুণ সেই মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়েছে। মেয়েটি তখন সাবালিকা। পুলিশে খবর দিলেন মেয়েটির বাবা মা। পুলিশ অরুনের কিছু বন্ধুদের জেরা করে জানতে পারলো যে ওরা কালিঘাটে বিয়ে করেছে। রেজিস্ট্রিও। মেয়েটি সাবালিকা বলে পুলিশ হাত গুটিয়ে নিল। কিছুদিন পর মেয়েটির বাবা ট্রান্সফার নিয়ে বাঁচলেন।
    প্রথমে আমরা আশ্চর্য হয়েছিলাম কি দেখে অরুনকে পছন্দ করেছিল সেই মেয়ে? সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে ছিল সে। তারপর কত দিন / বছর কেটে গেছে। ভুলেই গিয়েছিলাম ওদের কথা।

    সেদিন গিয়েছিলাম সেন্ট্রাল ডেয়ারী কতগুলি আউটলেট করেছে কলকাতায় তার একটায়। বেশ বড় সেই আউটলেটটি। বেশ কিছু জিনিষ কিনছিলাম সেখান থেকে। যে দুজন বসে সেখানে তাদের বদলে অন্য একজনকে দেখলাম। মুখ দেখিনি তার। বলছিলাম - এটা দিন, ওটা দিন। হঠাৎ সেই ভদ্রলোক আমায় বললেন- আমাকে আপনি বলছো কেন বাসুদা? তাকিয়ে দেখি আমাদের অরুণ!! ঝকঝকে চেহারা। আমি বললাম তুই? বললো - এই আউটলেটটার ম্যানেজার আমি। জীবনে অনেকবার প্রকৃত আশ্চর্য হয়েছি আমি। এটা সেইরকম আর একবার। বললো - ভেতরে এসো তুমি আগে। গেলাম ভেতরে। বললো - মধ্যমগ্রাম স্টেশনের পাশেই বাড়ি করেছি বাসুদা। বললাম- ট্রেনে,যাতায়াত করিস? বললো - না বাসুদা, বাইকে আসি। পঁয়তিরিশ মিনিট লাগে। ছেলেটা জুলিয়ান ডে তে পড়ে।ক্লাস টেনে ওকে নামিয়ে দিয়ে আসি। বললাম - ( মেয়েটি) কেমন আছে? বললো - ভাল আছে গো। মধ্যমগ্রামের একটা স্কুলে পড়ায়। বাবা আছেন, মা নেই। ওর বাবা মাও মেনে নিয়েছে আমাদের এখন। তবে, তোমরা তো জানো ও (মেয়েটি) না থাকলে আমার কি হত?

    রুপকথা নয় পাঠক, একশো শতাংশ সত্যি কথা।

    চলে আসার সময় ভাবছিলাম না "সব গুটিপোকা প্রজাপতি হয় না" সত্যিকথা, কিন্তু কোন কোন গুটিপোকা সত্যি সত্যি প্রজাপতির মত সুন্দর হয়।

    অরুণ আর ওর স্ত্রী তেমনই দুই সুন্দর প্রজাপতি।

    ভাল থাক ওরা........।



    আলোকচিত্র, গ্রাফিক্সঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক, সায়ন কর ভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩২৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১৭ অক্টোবর ২০২০ ১৩:১৪98570
  • আহা! মনটা ভাল হয়ে গেল। 

  • Saoni Mandal | ১৭ অক্টোবর ২০২০ ১৮:২৫98582
  • খুব ই ভালো লাগে আপনার এই ধারাবাহিক লেখা .

  • Dipali roy | 2604:2000:6059:5d00:3812:c66a:380:***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫৫98590
  • Khub bhalo laglo sab holo. 

  • Mitali Bera | ১৮ অক্টোবর ২০২০ ১৭:২৬98609
  • আপনার লেখা বিশেষ ভাবে উপভোগ করি। এটাও খুব ভালো লাগল। আর এই গুরুচণ্ডালীর সাথেও পরিচিত হলাম। ধন‍্যবাদ।

  • reeta bandyopadhyay | ২৫ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৪99005
  • এমন সাবলীল লেখা পড়তে ভালো লাগে।

  • একলহমা | ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৪১99053
  • মনকাড়া লেখা, সব কটি পর্বই।

  • বিমোচন ভট্টাচার্য | 2409:4060:291:6fac:d7d:6f7a:eb04:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:২৯100984
  • সব্বাইকে আন্তরিক ধপ্ন্যবাদ। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন