প্রোলোগ
You Don't Need a Weatherman to Know Which Way the Wind Blows
ইদানিং আমেরিকার রাজনীতি সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে আমেরিকার ন্যাশনাল পার্কগুলির আকাশ-ভরা তারাদের নীচে শুয়ে এই কথাটিই মনে হয় বারবার।
কেন- তা বলব আবারও। একেবারে শেষ বরাবর।
আপাতত ২০২০
ডিজিটাল যুগে দিনে দিনে ভারতে মার্কিন নির্বাচন আইপিএল-এর মত জনপ্রিয় হয়েছে। ভারতের গভীর, প্রতি-অন্ত, সুদূর গ্রামে থাকা লোকের মুখে মুখে ইলেক্টোরাল কলেজ, পপুলার ভোট, সুইং স্টেট এসব শব্দ অন্ত্যাক্ষরীর মত সুরে সুরে ঘুরছে।
আমেরিকাতেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারের সংখ্যার ঘনত্ব এবং নির্বাচনে ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বেড়েই চলেছে।
তাতে জাত আমেরিকানরাও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দু'শ বছরের নির্বাচনের ইতিহাসে ভারত বংশের কালো মেয়েকে ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট পর্যন্ত দেখে নিল এবার আমেরিকা। ওবামার জয়ের পর আমেরিকা শেষমেশ সেইদিকে ধীরে চলতে থেকেছে। সেই দোলন দ্বি-পার্টি রাজকেও কোথাও দুলিয়ে দিচ্ছে কিনা সে খতিয়ান নেওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কলমচি এ যাবৎ চারটি মার্কিন নির্বাচন প্রত্যক্ষ দেখেছে। তার মধ্যে তিনটির প্রচারে প্রত্যক্ষ অংশ নিয়েছে।
এই ২০২০ মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একথা বললেই শুরুতে যা এসে যাবে তা হল-
যদি এই নির্বাচন আমেরিকার আত্মা বা ট্রাম্পের হাস্যকর ও টক্সিক গ্রহণকালের মত শাসনকালে হারিয়ে যাওয়া মান সম্মানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত হয় তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো বা তাকে পদত্যাগ করানোই যথেষ্ট নয়। ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হয়ে যা যা করেছেন তাতে মার্কিন দেশের ভাবমূর্তি সম্পর্কিত আশঙ্কায় তিনি, এমনকি অনেক কট্টর রিপাবলিকেরও তীব্র না-পসন্দ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সারা বিশ্বে হাস্যকর হয়ে ওঠা এই ট্রাম্পের প্রতি জনভোটের এক ঘন অংশের অবিচ্ছিন্ন সমর্থন প্রমাণ করে যে আমেরিকার আত্মাকে আমরা যে আয়নায় ধরে রেখেছি তা এই অসংখ্য নাগরিকেরই চোরাগোপ্তা মনের, বিশ্বাসের প্রতিফলন। এমন অর্বাচীন, বর্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দায় ট্রাম্পের একার নয়।
কারণ এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন-নির্মাণ হঠাৎ এক দিনে হয়না। নিউইয়র্ক টাইমস যথার্থই লিখেছে- Trump isn’t the cause; he is a reflection of past policymakers, values, and practices. দীর্ঘদিনের দুই-পার্টির পলিসিগত বোলচাল, নীতি ন্যায়ের ছলাকলা, পুঁজির অহং, রেসিজম, নারীবিদ্বেষ ও শ্বেত-আধিপত্যের অন্তঃসলিলা ফেনা, অন্য দেশে বোমা ফেলে এসে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের মিথ রচনা- এসবের সমর্থনে ভোটার তৈরি হয়েছে আমেরিকার বিভিন্ন কোণে। যারা সুযোগ পেলেই ডোনাল্ড ট্রাম্পদের ভোট দেবেন। তাদের জনপ্রিয় নাম - ট্রাম্প ভোটার। ভুলে গেলে চলবে না এবছরও এই পপুলার ভোটের প্রায় সিংহভাগ ট্রাম্প একাই পেয়েছেন।
২০২০ সালের নির্বাচনের একটি আকর্ষণীয় সংখ্যাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হ'ল রেকর্ড ২৩.২ মিলিয়ন ভোটার, যাঁরা স্বাভাবিক ধারায় নাগরিক অর্থাৎ আমেরিকান হয়ে যাওয়া বিদেশি-অভিবাসী। এঁরা মোট ভোটার সংখ্যার ১০%। যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়রা সবচেয়ে বড় বর্ধমান জনসংখ্যার মধ্যে একটি। ৫.৪ মিলিয়ন। এর মধ্যে ৪.৪ মিলিয়ন ভারত বংশীয় আমেরিকান। এই সংখ্যাতত্ত্ব ইঙ্গিত দেয় যে অভিবাসী আমেরিকানদের মধ্যে ভারতীয় আমেরিকানরা সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অভিবাসী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে তিন নম্বরে, মেক্সিকান এবং চীনা অভিবাসীদের পরেই।
অপরদিকে আমেরিকায় আনরেজিস্টার্ড অভিবাসী আন্তর্জাতিক ছাত্রের উপস্থিতি আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে। নির্বাচনের প্রচারণা সমাবেশ এবং প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন ভারতীয় ছাত্ররা, সে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট হোক বা হালের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার।
এঁদের মধ্যে আমিও পড়ি। ছয়ের দশকে ভারতীয় ছাত্রদের ভূমিকার কথা মনে রেখেই এ কথা বলছি। বাঙালীর 'ভেরি ওন' নবনীতা-অমর্ত্য তখন বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তুমুল সে সময়। ক্যলিফর্নিয়ায় সে সময়ে একদিকে ‘সামার অফ লাভ’ অতিক্রান্ত হাইট অ্যাশবেরি, অন্যদিকে ভিয়েতনামের জন্য যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে আছড়ে পড়ছে বিরাট বিরাট উত্তাল ঢেউ। বাঘা বাঘা ভারতীয় ছাত্ররাও উপস্থিত। যেমন নবনীতা স্বয়ং জানিয়েছিলেন তিনিও সে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট কমলা হ্যারিস দিদির মা ডক্টর শ্যামলা গোপালন- ও।
কিন্তু অনুমান করাই যায় যে, সে সময়ে এতো বেশি ভারতীয় মার্কিন দেশে থাকতেন না। সিলিকন উপত্যকা তৈরি হয়নি। তার ফলে ভারতীয় ছাত্র বা চাকুরিরত ভারতীয় বা আমার পুত্রের মত দ্বিতীয় প্রজন্ম, যাঁরা মার্কিন মাটিতে বেড়ে উঠেছেন, তাঁদের উপস্থিতি এত বেশি মাত্রায় ছিল না।
এবার প্রশ্ন- এই বেশি উপস্থিতি কি কোনও পার্থক্য তৈরি করল?
উত্তর হচ্ছে, একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না।
স্পষ্ট উত্তরের জন্যে আরও খড়কুটো জড়ো করলে হিজবিজি খসড়া বেরেয়ে যাবে এবং তখন হাতে থাকবে গোলাপি টুপি আর তাতে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো আপেল পাইয়ের মত নরম আমেরিকান বিপ্লব। আর টুকরো টুকরো মুকুর-চিহ্ন।
এসবই বলবো বলে কলম ধরেছি।
যেহেতু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও জানতে চাওয়া হয়েছে, ফলে উল্লেখ করা থাক এই কলমচি চাকরি খুইয়েছেন বেশ কয়েকবার। পাথুরে প্রমাণ, প্রামাণ্য কাগজপত্রের ছবি দেওয়ায় অপারগ। তবে সে-সব অবশ্যই আছে। কিন্তু যদি ওরাল হিস্ট্রি আবহতে, জীবনকথায় আস্থা রাখা সম্ভব হয়, তাহলে দু’কথা পড়ে দেখতে পারেন।
ফিরে যেতে হবে ২০১৬ তে, যখন থেকে বার্নি দাদার প্রচারে আমি যুক্ত হলাম। বাস তখন ফ্লোরিডায়। অ্যাক্টিভিজম, ক্যাপিটালিজমের সমীকরণ এসব দোহাই তুলে গাল দেবেন না। বড় এক কর্পোরেট আপিসে কাম-কাজ করে ছেলে মানুষ করি। তখন বার্নি-দাদা'র হয়ে ক্যানভাসিং করতুম। সেই জেরে আমার ইভানজেলিস্ট বস আমার প্রতি হেব্বি খচে যায়। খচা-খচি চলতেই থাকে। একসময়ে চাকরিটা যায়।
খাতায় কলমে কী লেখা ছিল- সে কথা অন্য। বস আমার বিশেষ প্রশংসা জানিয়ে বিদায় দেন।
আমার বন্ধুমহলের বিশ্বাস কেবল ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রচারে যুক্ত থাকলে এমন ঘটত-না। ঘটেছে নাকি শুধুই বার্নি-দাদার জন্য। মানে হিলারির হয়ে প্রচার করলে এই পৃষ্ঠদেশে ছুরিকাঘাত থেকে বেঁচে মোটা মাইনে নিয়ে আরামে থেকে যাওয়া যেত। সর্বস্বান্ত হয়ে ফের চাকরি খুঁজতে হত না।
তারপরই তবে মোক্ষম প্রশ্নটি ওঠে- যাতে ধরা আছে মার্কিন দ্বি-দলীয় রাজনীতির সারাৎসার-
হিলারি, ওবামা সম্প্রদায় কি গোঁড়া দক্ষিণপন্থী? তবে কি দুই দলই ডান ও নন-লিবেরাল প্রাচীনপন্থী? আর তার সঙ্গে লেজুড়ের মত প্রশ্ন- বার্নি কি আদতে নবীন? বাম না কি বামের কাঁঠালি কলা?
বার্নিদাদা যদিও সমাজতন্ত্রের খিলি পান ডেমোক্র্যাটিক সমাজবাদে সেজেছেন।প্রগতিশীল তকমা মারা ডেমোক্র্যাট বা রক্ষণশীল রিপাব্লিক, সবাই অন্তত এই এক ব্যাপারে তারা একমত, সমাজবাদের মত বিষাক্ত ছোঁয়াচে জিনিশ দেশে চাষ করা যাবে না মোটে, ফলে বার্নি-দাদাকে হঠাও।
এই হল আমেরিকার রাজনীতিতে নির্বাচনের গোড়ার ও শেষ কথা।
দিনকাল বেশ দ্রুত পাল্টাচ্ছে। খোদ আমেরিকার বুকেই সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রার্থীকে বার্নি-দাদা সরাসরি এনডোর্স করেছেন এরকম ঘটনাও ঘটেছে। উল্লেখ করে রাখা দরকার- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই যে কোনও সময়ের চেয়ে আমেরিকানরা সর্বাপেক্ষা বেশি সমাজতন্ত্রের কথা বলেছে। আজ সমাজবাদ, সমাজতন্ত্র আমেরিকায় একটি নিষিদ্ধ শব্দ। রক্ষণশীলরা একে ভয় পান। উদারপন্থীরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনেক প্রগতিশীল এবং র্যাডিক্যালরা এটিকে দ্বিধা ও ঝুঁকিসহ গ্রহণ করে। যেভাবে 'নারীবাদী' শুনলে, এখনও ভারতের তথাকথিত শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিচারে সকলেই ধড়কাইয়া যায়, তেমনই কম্যুনিস্ট ও তাহার গুষ্টি-নামে সারা আমেরিকা'র পিলে হইতে পিছন, জাঙ্গিয়া হতে গামছা সবই চমকাইয়া যায়- (প্রাচীন ইন্দো-আমেরিকান প্রবাদ)। এসবের মধ্যেই কী করে যেন বার্নি-দাদা সাম্প্রতিক মার্কিন রাজনীতিতে এক খাপছাড়া, আশা জাগানিয়া জন উদ্বেল। একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী, সিনেটর, বার্নি স্যান্ডার্স রাষ্ট্রপতির জন্য ডেমোক্র্যাটিক মনোনয়নের প্রচারে তের লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এর রেশ ধরেই সম্ভব হল- দুই বছর পরে, নিউইয়র্কের গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এবং ডেট্রয়েটের রাশিদা টালিবএর কংগ্রেসে নির্বাচনে জয়। এছাড়াও সিটি কাউন্সিল, রাজ্য আইনসভা, স্কুল বোর্ড এবং সারা দেশের অন্যান্য আসনে, সমাজবাদীরা জয়ী হয়েছেন।
আমেরিকার বুকে বার্নির জনপ্রিয়তা এবং সমাজবাদীদের নির্বাচন জয়ের আড়ালে আবার কি তবে সমাজবাদ, সমতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির যুক্তরাষ্ট্রে পুনরুত্থান ইঙ্গিত করছে? এবং এর অর্থ কি এই যে আমেরিকান দিগন্তে সমাজতন্ত্র আসলে ছয়ের দশক পার করে শিক্ষিত মানুষের গোচরে চোরাগোপ্তা ভাবে থেকেই গেছে?
আমি বেশ কিছু বাম রাজনীতির অ্যাক্টিভিজমে যুক্ত বহুকাল। আমেরিকার রাস্তায় নানা সময়ে পথে নেমে হল্লা করে থাকি - জর্জ ফ্লয়েডের খুনের পর কোভিড অগ্রাহ্য করে আমরা, বি এল এম এর (ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার) সদস্যরা রাস্তায় রাস্তায় স্লোগান তুলে ফিরেছি।
সত্যি বলতে এসব প্রতিবাদে আমার এখনকার তুলনামূলক ছোট শহরে কোন ভারতীয় কখনো আসেননি। এমনকি ২০১৪-১৫-১৬ র সময়ে ফ্লোরিডাতেও নয়। নিউইয়র্কে জামাইকা থেকে ব্রুকলিন মিছিলে হেঁটেছি, তবে সেখানেও ভারতীয় বংশোদ্ভূতের সংখ্যা হাতে গোনাই।
তবে গত দু'তিন বছরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কলেজপড়ুয়াদের দেখেছি অন্য রাজ্যে- পূর্ব উপকূল, বা পশ্চিমে ক্যলিফোর্নিয়ায়, বা এখনকার ফ্লোরিডায়- এসব জায়গায় প্রতিবাদ মিছিলে আমার অনেক বন্ধুদের ছেলে-মেয়েদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
তবে এঁদের প্রায় সকলেই আমাদের মত বামপন্থী বাবা-মার সন্তান। এঁরা অনেকেই বার্নিকে চান। বার্নির প্রচারের দায়িত্বে থাকা মার্কিন বাঙালি সৈকতের কাছে এদের বেশ ভালো ডেটা আছে বলে জেনেছি।
প্রাইমারির সময় বার্নিকে নিয়ে ভারতীয় ভাষায় যেসব প্রচার হচ্ছিল তা এই বাঙালি আমেরিকান তরুণের মাথা থেকেই উদ্ভূত। যেমন 'বার্নি ভাই জিতেছে'। এটি ছিল বাংলায় লেখা প্রাইমারির সময়ে এক জনপ্রিয় পোস্ট।
এর আদলে বাইডেনকে নিয়েও ভারতীয়রা মাতলেন, যখন- নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দক্ষিণ এশিয়দের তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী এবং প্রাক্তন সহ-রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে ৩ নভেম্বরে নির্বাচনে ভোটপ্রদান ও সমর্থনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ১৪টি ভারতীয় ভাষায় ডিজিটাল গ্রাফিক্স প্রকাশ করল।
‘চলো চলো বাইডেন কো ভোট দো’ (আসুন বাইডেনকে ভোট দিন), এই মিউজিকাল ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল কয়েকমাস আগে। গ্রাফিক্সের এই নতুন সিরিজ 'জাগো আমেরিকা, জাগো, ভুল না যানা, বাইডেন-হ্যারিস কো ভোট দেনা' (জাগো আমেরিকা, বাইডেন-হ্যারিসকে ভোট দিতে ভুলোনা), 'আমেরিকা কা নেতা কাইসা হো, জো বাইডেন জাইসা হো ’(জো বাইডেনের মতো আমেরিকার নেতা হওয়া উচিত)', এসবও দেখা যেতে থাকছিল।
আমি নিজে ছাত্র থাকাকালীন ডেমক্র্যাটদের প্রচারে (আমি কোনওকালেই ডেমোক্র্যাট সদস্য বা সমর্থক না, কিন্তু বার্নি দাদার জন্য এবং রিপাব্লিক-দের হারাতে যে দলের প্রচারের কাজ একমাত্র নেওয়া সম্ভব- তা- ডেমোক্র্যাট), যেসব কাজ করেছি তা হল- ক্যানভাসিং, ফোন-কল করে ভোট চাওয়া, মেইল লিখে ভোটারের কাছে পৌঁছনো, টেক্সট করা এবং অবশ্যই র্যালিতে অংশ নেওয়া।
এবছর ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে তরুণ ভারতীয়রা ওপিনিয়ন পিস লিখেছেন, টেলি কলিংয়ের মাধ্যমে প্রচারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছেন এবং তথ্যপ্রযুক্তিগত কাজে সহায়তা করেছেন।
অন্যদিকে রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রচারে যেসব ভারতীয়রা ছিলেন তাঁরা ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তাঁর চিরভক্ত। ধরে নেওয়াই হয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভক্ত ভারতীয়রা আগেরবারের রিপাবলিকান প্রার্থীদের চেয়ে ২০২০ সালে আরও বেশি করে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাতে পারেন।
ভারতীয় আমেরিকানদের মধ্যে ট্রাম্প সমর্থকদের এই উদীয়মান দলটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে পুষ্ট করে ট্রাম্পের যেসব সিদ্ধান্তকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তার কয়েকটা নমুনা: প্রথমত, ট্রাম্প-মোদী জোটের গা-জোয়ারি প্রচার, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে শক্তিশালী হিসাবে দেখানো হয়; দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান; তৃতীয়ত, ভারতীয় আমেরিকানদের সাথে যোগাযোগের জন্য মোদীর অভূতপূর্ব প্রবাসী প্রচার ও সেই মঞ্চে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ। বিস্তৃত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে এমন এক রাষ্ট্রপতি হিসাবে দেখা গেল যা একজন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর তুলনায় ভারতের ''বিরোধী' পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে বলে ভালোরকম আশ্বাস তৈরি করল।
ট্রাম্পের টুইটগুলি লক্ষ্য করলেই এ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট গতিপথের ধারণা পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালে তাঁর রাষ্ট্রপতি জমানার শুরুর দিকে বেশ কিছু ছিল পাকিস্তান, মুসলমান সম্প্রদায়, চিন ও পাকিস্তানকে আক্রমণ করে। মোদির হয়ে প্রচার করা, কুখ্যাত মুসলিম ভিসা নিষেধাজ্ঞা, ভারতীয় আমেরিকানদের বৃহত্তর এক পৃথক কম্যুনিটি হিসাবে চিহ্নিত করে "হিন্দু আমেরিকান" দের প্রতি সরাসরি আবেদন- এসবই ভারতীয় মুসলমান বিরোধী নব্য-দেশভক্তদের চুলায় অক্সিজেন দিল প্রাণভরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন জানাতে হিউস্টন পৌঁছে 'হাওডি মোদী' কর্মকাণ্ডের পালে হাওয়া দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের এহেন আচরণ আমেরিকানদের অবাক করে দিল। এবং তার ক্রমবর্ধমানতার জেরে মার্কিন দেশে ভারতীয় নব্য দেশমাতা ও শ্রীরামভক্ত বা ডাকনামে “ভক্তগণ” উঠে পড়ে ট্রাম্পের প্রচারে লেগে গেলেন।
এঁরা মূলত আইটি-চাড্ডি। এঁরা বাংলাদেশের বাঙালিকে বাঙালি হিসেবে ভাবতে অসমর্থ বলে বিশেষ প্রবচনে শুধুই বাংলাদেশি বলেন এবং 'নবী' সংক্রান্ত হাসাহাসির পোস্ট করে হোয়াটসঅ্যাপে সস্তা সার সমৃদ্ধ ঘৃণার চাষ করা মুখ্য অবসরের কাজ বলে মনে করেন। এঁরা সোশাল মিডিয়ায় 'আর এস এস'-এর পোস্ট শেয়ার করেন, ও নিজেদের 'আগে হিন্দু পরে বাঙালি' বলেন। অবাক না হলেও মজার বিষয় নিশ্চই যে অনেক শিক্ষিত বামপন্থীরাও এই আমোদ নিতে এঁদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
এখন বার্নি-দাদা, ভক্তসমূহ, হিলারি আর ওবামা মার্কা না-ছুঁই পানি ডেমোক্র্যাটদের মাঝে এক বিরাট সংখ্যায় বসে আছেন এঁরাই। এঁদের ছেলেমেয়েরা মিছিলে হাঁটেন না। সারাদিন ড্যাডি-বাবার বেছে দেওয়া জায়গায় কেবল ইন্টার্নশিপ খোঁজেন। মার্কিন রাজনীতিতে এই ড্যাডি কিন্তু এক আশ্চর্য প্রতীক বলে আমার বরাবর প্রত্যয় হয়েছে।
২০১৬ সাল। ট্রাম্প জিতে সবে ক্ষমতায় এসেছেন। সারা আমেরিকা জুড়ে আমরা নারীরা প্রতিবাদে মার্চ করে এসেছি। ডিসি-তে গিয়ে, হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছি। আর রাতারাতি বিশ্ব জুড়ে তা ঐতিহাসিক হয়ে গিয়েছে। মানুষজন ফোন করে আমাদের অভিনন্দন জানাছেন। পত্তন করা হয়ে গেছে আমাদের সংগঠন- “উইমেন্স মার্চ”।
আমি ডায়েরি গুরুচণ্ডালীতে লিখি, অর্থাৎ সাধু ও চলিতভাষার মিশ্রণে।
জানুয়ারি- ২০১৭
"আজ সেই উইমেন্স-মার্চ, আমার পোষ সারমেয় ব্রাউন-ব্যাগ আর আমার পুত্র সকাল থেকেই কবিতা পড়িতে শুরু করিয়াছে। তাহারা আমাদের সহিত মিছিলে যাইয়া প্রচুর কবিতা ও গান গাহিয়াছে। সেই জেরে তাহারা গান-টান লিখিতেছে ও জোরে- অজোরে শুনিতেছে। আমরা স্বপ্নমথিত হইয়া ভাবিতেছি যেন- ষাটের দশকের মত আমাদের কাফেগুলি আবারো ধূমায়িত হইতেছে।...
তো গান হইতেছে। গান হইতেছে। আর কলরব হইতেছে। মানে একই সঙ্গে গান হইতেছে ও কলরব হইতেছে। মোট কথা, তাহার হারমনিক্স কানে আসিতেছে।
এমন সময়ে পোস্টার চোখে এলো- “Autocracy and oligarchy foster the beliefs that power is gained magically and retained by sacrifice, and that powerful people are genuinely superior to the powerless.”
এর পাশাপাশি অবজেক্টিভ কো-রিলেটিভের মত- একখানি পোস্টার। মূল পোস্টারটি রিপাবলিকানদের। তাহাতে লিখা ছিল- “ট্রাম্প আওয়ার সুপার-ড্যাডি”। তা, সেই পোস্টার কেটে আমাদের মত কোন ‘বনে পাঠানো, বাপে খেদানো’ দুষ্টু নারী বুঝি লিখে দিয়েছে- “ ট্রাম্প ইয়োর সুগার-ড্যাডি”।
ট্রাম্প সুগার ড্যাডি?
হে হে। আমার ছেলে প্রশ্ন করিল -
--সেই পুরাতন স্টিরিওটাইপ। বাবাকে সর্বশক্তিমান ভাবিতে চাওয়া, মা অপেক্ষা। বাবা পারিবেন… মা নহে।
--মানে বলিতেছ, ড্যাডি ইস্যু ?
--অনেকটাই। নহেই বা কেন ?
ট্রাম্প একপ্রকার ফ্যালিক মেল ইমেজ। যখন এইরূপ পুরুষরা মেয়েদের ওপর প্রভুত্ব খাটাইবার কথা জোর গলায় যাহাকে বলে 'ব্র্যাগ' করিয়া থাকেন, তখন, এক শ্রেণির নারীর অবচেতনে এই পুরুষদের রক্ষাকর্তা- ইমেজটি স্থায়ীভাবে মাথায় গেঁড়ে বসে। এর মধ্যে কলেজ শিক্ষিতা, সেমি-আলোক-প্রাপ্তারা রহিতেই পারেন। অনেকই, জীবনধারণের জন্যে অর্থ ও সম্পত্তিব্যাপারে পুরুষ সঙ্গীর ওপর নির্ভর করিয়া থাকেন। নিজেদের রোজগারে জীবনধারণের বদলে রক্ষাকর্তার অর্থ ইহাদিগকে অধিক নিশ্চিন্ততা দিয়া থাকে।
ট্রাম্প সেই 'ফ্যালিক', 'রক্ষাকর্তা' পুরুষ হইয়া সামনে আসিয়াছেন, আমেরিকার নারী-পুরুষের অবচেতনে।
“দ্য পোস্ট”-এর এক্সিট পোল তথ্য অনুসারে, কলেজ ডিগ্রিবিহীন নারীদের ২ শতাংশ শাদা মহিলা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন, এবং কলেজ ডিগ্রিধারীদের ৪৫ শতাংশ শাদা মহিলা।"
সেফটিপিন-বিপ্লব সূত্র
২০১৭-র ডায়েরির অংশ
“ছাতায় ছাতা মহানগর, রাজধানী শহর ডিসি। পয়েন্টেড গোলাপি পুসি হ্যাটে মোড়া লক্ষ লক্ষ মানবীর মাথা। গান চলিতেছে। স্লোগান চলিতেছে। চলিতেছে বরফ পাত আর পোস্টারে পোস্টারে স্লোগান। চলিতেছে কবিতা।
হেঁটে ক্লান্ত হইয়া কখন আমি আর লোরিনা বসিয়া পড়েছি। স্লোগান কানে আসছে।
ওয়াশিংটন স্কোয়ারে দূরে কন্সার্ট চাতালে তাকিয়ে ঝাপ্সা এই বরফ, এই বৃষ্টিতে আমার কানে আসিল। ফ্ল্যাঞ্জার এফেক্টের মত। ২০০৯ এর দিন। বারাক ওবামার অভিষেকের দিন। দেশ ভাসিয়া যাইতেছে আনন্দে। প্রথম কালো প্রেসিডেন্টকে অভিবাদন জানাইতে পিট, পিট সীগার তাঁহার নাতি তাও আর ব্রুস স্প্রিংস্টন কে দুই পাশে লইয়া অশক্ত শরীরে মঞ্চে আসিয়া দাঁড়িয়েছেন। তাঁর ভাঙা গলায় উঠিয়া আসিতেছে কালজয়ী পংক্তি- This Land is your land, this land is my land, this land was made for you and me.
উডি গাথরি এ গান লেখেন চল্লিশের দশকে। তার দুটি পংক্তি দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ ছিল।
পিট সেই নিষিদ্ধ পংক্তি ফিরিয়ে আনেন। শিশুর মত সরল মানুষটি অসম্ভব সব সাহস দেখিয়ে গেছেন। পিট গাইছেন-
আজ সারা আমেরিকায় আগুন জ্বলিতেছে, আমরা ক্লাসরুমে মুসলিম নিষিদ্ধ লইয়া আলোচনা করিতে ইতস্তত করিতেছি। আমাকে আমার বাদামি ত্বকের কথা মনে করিয়া দেওয়া হইতেছে। আমার শাদা চামড়ার ছাত্রী খবরের হেডলাইন লইয়া কিছু বলিলে আমার সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় বন্ধ করিয়া ক্লাস ছাড়িয়া চলিয়া যাইতেছে। আমার কালো-ত্বক ধারী ছাত্র আমার সিরিয়ান উদ্বাস্তু ছাত্রীকে অসূয়া দেখাইয়াছে।
সেই নিষিদ্ধ পংক্তি ক্লাসরুমে ছাত্রদের সাথে গাহিয়া উঠিতে আমার মত এই নির্বোধ শিক্ষকের আজ বড় লোভ হইতেছে।”
নানান বামঘেঁষা সংগঠন আবার সক্রিয় হচ্ছে। একজন মিসোজিনিস্ট, রেসিস্ট ও পরধর্ম অসহিষ্ণুকে প্রেসিডন্ট হিসেবে দেখতে চাননি এমনকি রিপাবলিকদেরও কেউ কেউ। এই ক্ষোভ রাগ যদি বইয়ে দেওয়া যায়, অচিরেই ট্রাম্পকে পদচ্যুত করা যাবে এই তাদের বিশ্বাস। সে বিশ্বাস, ক্ষোভ, বামধারার মিইয়ে থাকা লোকজন, ষাটের, সত্তরের নস্ট্যালজিয়া সব একত্রে আমেরিকান পাই হয়ে বিপ্লবের সেফটিপিন এর সাথে ভাঙা মুকুরের মত টুকরো টুকরো হয়ে সেঁটে আছে। আমেরিকা ঈষৎ দুলিতেছে।"
২০২০, ডায়েরির না লেখা অংশ
২০২০। আমি আরও একটি আমেরিকার নির্বাচন দেখে ফেলেছি। প্রচারে সক্রিয় অংশ নিয়েছি। প্রথমে বার্নির জন্য আপ্রাণ লড়ে গেছি। পরবর্তীকালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেনের জন্যে প্রচারে থেকেছি।
ট্রাম্প হেরে গেছেন। কিন্তু- মার্কিন প্রগতিশীলতা জিতেছে কি?
ট্রাম্প সমর্থকরা এখনও বলে চলেছেন- মানুষ ভুল করেন, হেরে যান। কেহই পারফেক্ট নয়।
এই কেহই পারফেক্ট নহে, আসলে আর একটি কুতর্ক। সুগার ড্যাডিরা এইসব তত্ত্ব শিখিয়ে থাকেন। ইহা বলিতে চায় যে কাউকে সমালোচনা করিলে আসলে তুমি পারফেকশন প্রত্যাশা করছ। আর যেহেতু মানুষ পারফেক্ট নয়, অতএব চুপ থাকো। এই প্রকার ট্রাম্পিয় রাজনীতি বলে না যে ট্রাম্প ইম্পারফেক্ট। এ-ই ট্রাম্প জাতীয় পুরুষবাদ প্রোমোটিত মিসোজিনি ও নিখাদ রেসিজম।
আর এই সেই তাস, যা ট্রাম্পকে পপুলার বানিয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় না আসিলে জানাই প্রায় যাইত না-- সারা আমেরিকা এই হেট স্পিচের জন্যে ওইরূপ আকুল হইয়া থাকিয়াছে এত কাল।
এই মুকুর ট্রাম্প আমেরিকার দিকে ঘুরিয়ে দিল। হোক না সে টুকরো টুকরো।
একজন কেউ বলছিল মুকুর-ধাপ পেরচ্ছে আমেরিকা। শীঘ্রই নাকি সে সাবালক হবে।
শেষমেশ নির্বাচন জিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হলেন। কালো মেয়ে এবং প্রথম জেনারেশন অভিবাসীর সন্তান। প্রথম না-শাদা, নারী। দক্ষিণ এশিয়। একই সঙ্গে ব্ল্যাকদের ও এশিয়দের। ও নিখাদ আমেরিকান। গত চার বছরের ট্রাম্প প্রণোদিত যাবতীয় হেট-স্পিচের মুখে প্রগতিশীলতার আ্যনাস্থেশিয়া।
আমেরিকা সাবালক/ সাবালিকা হচ্ছে। ভেবে কেউ কেউ দূরাগত স্বপ্নোচ্চারণের মত প্রশ্ন করেই ফেলেছেন — অতএব তবে সমাজবাদী দলেরা দূরে থাকবেন কি?
আমেরিকায় সমাজবাদ কি কখনও আসবে সু প র ণা….. ইয়ে-ম্যাডোনারা?
সমাজবাদ আসুক বা তা একেবারেই না-মুমকিন হোক, দ্বি-পার্টির মনোপলি ঘুচে সমাজবাদী দলের সদস্যদের সেনেটে যাওয়ার ছায়া ক্রমেই লম্বা হচ্ছে।
হাওয়া সেদিকে ক্রমে বইছে, মন্দগতি হলেও।
ট্রাম্পকে বাইপাসে পাঠিয়ে সটান সমাজবাদী দূরে যাক, এমনকি একটু বেশি লিবেরাল দলও না হয় আসবেনা, কিন্তু বার্নিরা এবার থেকে চারপাশে থাকবেন। অন্তত আনাচে, কার্নিশে, কানাচে, এবং ইতি ও উতি ।
এপিলোগ
তাই বলছিলাম- You Don't Need a Weatherman to Know Which Way the Wind Blows। হাওয়া কোনদিকে বইছে যায় তা বুঝতে সবসময় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞকে লাগে কি?
আমেরিকার রাজনীতি সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে আমেরিকার ন্যাশনাল পার্কগুলির আকাশ-ভরা তারাদের নীচে শুয়ে এই কথাটিই মনে হয়েছে বারবার।
দেশ বিদেশ থেকে লোক এসে যদি ভারত কে একটু সমাজবাদী করতে পারে। ভারতের মানুষের নিজেরা মনে হয় পারবে না। বহুত কনজারভেটিভ আমরা। বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
"আমেরিকা সাবালক/ সাবালিকা হচ্ছে। ভেবে কেউ কেউ দূরাগত স্বপ্নোচ্চারণের মত প্রশ্ন করেই ফেলেছেন — অতএব তবে সমাজবাদী দলেরা দূরে থাকবেন কি?"
-'হচ্ছে। ভেবে' - এ কি কোন বিশেষ যতিরীতি ?
'পুরুষবাদ' আগে তেমন শুনি নাই ,যদি একটু আলোকপাত করেন ?
"ট্রাম্প সমর্থকরা এখনও বলে চলেছেন- মানুষ ভুল করেন, হেরে যান। কেহই পারফেক্ট নয় ,এই কেহই পারফেক্ট নহে, আসলে আর একটি কুতর্ক। "
- ট্রাম্প পারফেক্ট নহে ,জো-কমলা পারফেক্ট কিনা কহিলেন না ?
"কেহই পারফেক্ট নয়।
এই কেহই পারফেক্ট নহে, আসলে আর একটি কুতর্ক। সুগার ড্যাডিরা এইসব তত্ত্ব শিখিয়ে থাকেন। ইহা বলিতে চায় যে কাউকে সমালোচনা করিলে আসলে তুমি পারফেকশন প্রত্যাশা করছ। আর যেহেতু মানুষ পারফেক্ট নয়, অতএব চুপ থাকো। এই প্রকার ট্রাম্পিয় রাজনীতি বলে না যে ট্রাম্প ইম্পারফেক্ট।"
- ট্রাম্প সমর্থকরা বলেন কেহই পারফেক্ট নয় আবার এই প্রকার ট্রাম্পিয় রাজনীতি বলে না যে ট্রাম্প ইম্পারফেক্ট - এই দুই একাধারে কীকরে হইতে পারে ?
তবে যা বোঝা যাইল অনেক কিছুরই উত্তর হচ্ছে, 'একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না।' মানে, সেসব অনেক কিছুই তেমন ভাল বোঝা যাইল না ।
লেখাটা নিয়ে বক্তব্য নেই। সুগার ড্যাডি কথাটার মানেটা কি ঠিকমতন ব্যবহৃত হয়েছে? শিরোনামেও আছে, ঠিকমতন বুঝি নি হয়ত।
বয়সে অনেক বড় পুরুষ, যখন সেক্সুয়াল ফেভারের জন্য কম বয়সী মেয়েকে গিফট বা পয়সা দেয় এবং মেয়েটি এই সম্পর্ক রাখে। তখন ঐ বুড়োকে মেয়েটির সুগার ড্যাডি বলে। এমনই সুগার মামাও, সুগার বেবি ইত্যাদি। ওপরে মেয়েটি হল সুগার বেবি।