চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল নিউমোনিয়াতে অনেক মানুষের অসুস্থ হওয়া এবং সেই অসুস্থতা তীব্রবেগে ছড়িয়ে পরার পর থেকে এতদিনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সবাই কম বেশী জেনে গেছেন। জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের ভাইরাস নামক বস্তুকণা সম্পর্কে যদি স্কুল পাঠ্যের স্মৃতি মুছে গিয়ে থাকে, এখান (https://bigyan.org.in/2020/03/20/corona-virus-facts) থেকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য বহুল লেখাটি ঝালিয়ে নিতে পারেন। করোনা ভাইরাস কি? কিভাবে এটি একদেহ থেকে আর এক দেহে সংক্রমিত হয় এবং সংক্রমণ রোধ করতে কি ধরনের ব্যক্তিগত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, সব প্রশ্নের উত্তর উপরের লিঙ্কের প্রবন্ধে পেয়ে যাবেন। যে কোন ভাইরাসের মধ্যে মূল তিনটি বস্তু থাকে: (i) জেনেটিক উপাদান, অর্থাৎ ডিএনএ বা আরএনএর দীর্ঘ অণু যা প্রোটিন স্ট্রাকচার এনকোড করে; (ii) একটি প্রোটিনের আবরন, ক্যাপসিড, যা জিনগত উপাদানকে ঘিরে সুরক্ষিত রাখে; এবং কিছু ক্ষেত্রে (iii) লিপিডের একটি বাহ্যিক খোলস। Coronavirus প্রজাতির যতগুলি ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তার মধ্যে SARS-CoV-2 হইল সপ্তম। এই সাত রকম coronavirus এর মধ্যে SARS-CoV, MERS-CoV এবং SARS-CoV-2 মানুষকে গুরুতর রকমের অসুস্থ করে দিতে পারে। বাকি HKU1, NL63, OC43 এবং 229E মৃদু উপসর্গ হিসাবে দেখা দেয়। এই শেষ চারটি সারা বছর সাধারণ হাঁচি-কাশি সর্দির উপসর্গ সৃষ্টি করে। বর্তমান করোনা ভাইরাসটির প্রভাবে এই প্রতিবেদনটি লেখার দিন ২৯ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত ১৯৯ টি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬৫৯৮৫ এবং মৃতের সংখ্যা ৩০৯৩৫। দেশে দেশে যত এই মহামারী ছড়াচ্ছে ততই এই ভাইরাসটি নিয়ে মানুষের চর্চার বিষয় হয়েছেঃ এটি কি ন্যাচারাল ভাইরাস নাকি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে মারণাস্ত্র হিসাবে তৈরি। সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে ভাইরাসটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরি নয়। এটি ন্যাচারাল পদ্ধতিতে মিউটেশনের ফল। এই প্রবন্ধে আমরা সেই গবেষণাগুলি নিয়ে আলোচনা করবো। ভাইরাসটি জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড নাকি ন্যাচারাল সেটা বোঝার এক এবং একমাত্র পদ্ধতি জেনেটিক সিকুয়েন্স, জিনোমের স্টাডি। কোন দেশ ভাইরাসের সংক্রমণের নিয়ন্ত্রন কিভাবে করলো বা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কোন দেশে কিরকম অর্থনীতির উথাল পাতাল সৃষ্টি করলো তাই দেখে ভাইরাসের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা যায় না। সেগুলি নেহাত সেই সব দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সিস্টেম এর উপর নির্ভর করে। কোন দেশের রাজনৈতিক সামাজিক চরিত্র বিশ্লেষণ এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। ভাইরাসের সঙ্গে সমাজ অর্থনীতি জুড়ে কল্পবিজ্ঞান বা কন্সপিরেসি থিওরি রচনা করা যেতে পারে ভাইরাস বিজ্ঞান নির্মাণ সম্ভব নয়। জেনেটিক্যালি বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসটির ন্যাচারাল উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন সেই বিষয়ে যাওয়ার আগে অতীতের কিছু প্যানডেমিক, এপিডেমিক ও জৈব রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করে নেব।
ইতিহাসে প্যানডেমিক ও এপিডেমিকঃ
বিভিন্ন সময়ে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এপিডেমিক বা প্যানডেমিক একদমই নতুন বিষয় নয়। আদিম যুগ থেকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে গ্রাম-জনপদ শহর তছনছ হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। অতীতের সেই সব এপিডেমিকের থেকে বর্তমানের মূল প্রভেদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে গোটা পৃথিবী প্রায় একটা জনপদের আকার ধারণ করেছে। ইতিপূর্বে এই ধরনের অজানা ভাইরাসের আবির্ভাব হলে এক একটি জনপদ মুছে যেত এখন মানুষ নিমেষে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে ফলে এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে আসতে পারছে। আবার চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ফেললেও দ্রুত তথ্যের আদান প্রদান করে ভাইরাস প্রতিরোধ করতেও অভাবনীয় সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে।
সব থেকে প্রাচীন এপিডেমিকের ঐতিহাসিক তথ্য যা জানা আছে সেটিও চীনেই। উত্তর চীনের হামিম মাঙ্ঘা ও উত্তর পূর্ব চীনের মিয়াওজিগউ তে প্রায় ৫০০০ বছরের পুরানো যে ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষন করা আছে তা প্রমাণ করে সম্পূর্ণ জনবসতি এই এপিডেমিকের ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। তীব্র সংক্রামক কোন রোগের ফলে এপিডেমিকে এই জনবসতি মুছে যায় বলে ধারণা করা হয়। এথেন্স শহরে এথেন্স ও স্পার্টাদের যুদ্ধের পর ৪৩০ খ্রীঃ পূঃ প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্লেগে বহু মানুষের মৃত্যুর নিদর্শন পাওয়া যায়, কিছু অনুমান অনুযায়ী প্রায় এক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। রোমান সম্রাজ্যে ১৬৫ থেকে ১৮৫ সালের মধ্যে স্মলপক্স থেকে ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হয়। ৫২৭ থেকে ৫৬৫ সালের বাইজান্টাইন সম্রাজ্যের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্লেগ। বাইজান্টাইন সম্রাট নিজে সেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে গেলেও তাঁর সম্রাজ্য রক্ষা করতে পারেন নি। ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ পর্যন্ত “ব্ল্যাক ডেথ” নামে এক প্লেগে ইউরোপের অর্ধেক জনসংখ্যা মুছে যায়। ধারণা করা যায় এশিয়া থেকে ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপে প্রবেশ করে। ব্ল্যাক ডেথের ফলে ইউরোপের ভুমিদাসত্ব উঠে যায় এবং ইউরোপের ইতিহাসই বদলে যায়। বেঁচে থাকা শ্রমিকরা তুলনামূলক ভালো পরিশ্রমিক পেতে থাকে, কারন শ্রমিকের তীব্র আকাল পরে যায়। শ্রমিকের আকাল প্রযুক্তির ইনভেশনের দিকে ঠেলে দিয়ে ইউরোপের ইতিহাস বদলে দেয়। কিছু মতভেদ থাকলেও ধারণা করা যায় Yersinia pestis নামে এক ব্যাকটেরিয়ার ফলে এই মহামারী হয়। ব্ল্যাক ডেথ শেষবার ইউরোপে আঘাত করে ১৬৬৫-৬৬ সাল নাগাদ লন্ডনে, যা লন্ডন প্লেগ নামে পরিচিত। লন্ডন শহরে এই প্লেগে ১ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে লন্ডনের ১৫% জনসংখ্যা মুছে যায় এবং এই সময়ের লন্ডনবাসীর দুর্ভোগ এখানেই শেষ হয়নি, এরপর মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত ১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর “দ্য গ্রেট ফায়ার অফ লন্ডন” হয়েছিল যা চারদিন ধরে শহরের বিশাল অংশ পুড়িয়ে ফেলেছিল। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন এই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব এখন আর নেই, তবে এর কাছাকাছি বুবনিক প্লেগ যা ব্ল্যাক ডেথের সময় ছিল সেই সংক্রমণ এখনও মাঝে মাঝে কয়েক বছর অন্তর দক্ষিন আমেরকায় প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে, ২০০৯ সালে সেখান থেকে চীনে এই প্লেগ এসে যাওয়ায় ২০০৯ সালে কিংহাই প্রদেশের পুরো শহরটিকে লকডাউন করে কোয়ারান্টাইন করে দেওয়া হয়। ১৫৪৫ থেকে ১৫৪৮ সালের মধ্যে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার মধ্যে ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটে কোকোলিজলি (Cocoliztli epidemic) নামক একটি এপিডেমিক। একটি হেমোরজিক ভাইরাল জ্বর খরা বিধ্বস্ত এই অঞ্চলকে সম্পূর্ণ রূপে পর্যুদস্ত করে এই অঞ্চলের জনঘনত্বের দ্রুত পতন ঘটায়। ষোড়শ শতকে ইউরোপ থেকে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় রোগ আমেরিকায় গিয়ে ৯০% আমেরিকার আদিবাসীদের মৃত্যুর কারণ ঘটায়। ১৫১৯ সালে স্প্যানিশ যোদ্ধা হার্নান কর্টেস এর টেনোষিলান এর রাজধানী এজটেক এবং ফ্রানশিস্কো পিযারোর ১৫৩২ সালের ইনকাস দখলে এই প্লেগের ভূমিকা ছিল। স্মলপক্স ও অন্যান্য রোগ ইউরোপ থেকে আসার পর আদিবাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় আদিবাসিন্দারা ইউরোপের বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। ভূমধ্য সাগর থেকে আসা গ্র্যান্ড সেইন্ট এন্টনি নামে একটি জাহাজ ফ্রান্সের মার্শেলে শহরে এসে একটি প্লেগ ছড়ায় ১৭২০ থেকে ১৭২৩ সাল পর্যন্ত। জাহাজটিকে যদিও রুদ্ধ করে দেওয়া হয় কিন্তু প্লেগ সংক্রামিত বীবর থেকে মাছি হয়ে এই প্লেগ মার্শেলে শহরে ছড়িয়ে পরে তিনবছরে এক লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটিয়ে এই শহরের ৩০% জনবসতি কমিয়ে দেয়। অষ্টাদশ শতকেই প্লেগে রাশিয়াতে এক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। রাশিয়ায় প্লেগ থেকে বাঁচতে মস্কৌ শহরকে কোয়ারান্টাইন্ড করার চেষ্টা করা হয়। কোয়ারান্টাইন্ড শহরে জনতারা হিংস্র হয়ে সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়ে যায়। এই সময় আর্চ বিশপ এম্ব্রসিয়াস জনতাকে প্রার্থনা করার জন্য ভিড় করতে নিষেধ করার জন্য খিপ্ত জনতার হাতে খুন হয়ে যান। শিল্পায়নের যুগে পৃথিবী জুড়ে রেলপথ পত্তনের পর ১৮৮৯-৯০ সালে পৃথিবীজুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। মাত্র ৫ সপ্তাহ লাগে গোটা পৃথিবীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়িয়ে পরতে। ধারণা করা হয় রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়ায় সেখান থেকে ইউরোপ হয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। মনে রাখতে হবে তখনো আকাশ পথে ভ্রমন শুরু হয় নি। স্প্যানিশ ফ্লুতে দক্ষিন প্যাসিফিক মহাসাগর থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত ১৯১৮ থেকে ২০ সালের মধ্যে মাত্র দুই বছরে ৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং তার এক পঞ্চমাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। বলা হয়ে থাকে বেশ কিছু আদিম জনগোষ্ঠী এই স্প্যানিশ ফ্লুর ফলে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে যায়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পরিনতিতে অপুষ্টি ও ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই ফ্লুর ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে। ১৯৫৭-৫৮ সালের এশিয়ান ফ্লু সিঙ্গাপুর, হংকং এবং আমেরিকার সমুদ্র বন্দর থেকে ছড়াতে শুরু করে গোটা পৃথিবীতে ১০ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটায়। ১৯৮১ এর পর এক ধরনের শিম্পাঞ্জি থেকে এইডস নামক একটি রোগ মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে এবং এখনও পর্যন্ত ৩৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটেছে। এই রোগ রক্ত ও যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ানোয় প্রায় ৪০ বছর ধরে এত মানুষের মৃত্যুর কারণ হলেও সেইভাবে এপিডেমিক হয়ে দাঁড়ায়নি। ১৯৯০ এর পর কিছু কিছু ওষুধও বেড়িয়েছে, আশাব্যাঞ্জক হল ২০২০ সালের প্রথম দিকে দুইজনের এইডস রোগ সম্পূর্ণ সেরে গেছে। ২০০৯ সালে শীতের পর মেক্সিকো থেকে উদ্ভূত হওয়া সোয়াইন ফ্লু গোটা পৃথিবীতে ১ কোটির বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে বলে ধারণা করা হয়। H1N1 নামক একটি ভাইরাস স্ট্রেইনকে এই ফ্লুর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা গেছে। এই ভাইরাসের ফলে ধারণা করা হয় পৃথিবীর দেড় থেকে ৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে [1]। এই ফ্লুটি প্রাথমিকভাবে শিশু ও তরুণদের মধ্যে বেশি সংক্রমণ ঘটিয়েছে ও ঘাতক হিসাবে দেখা দিয়েছে। ২০১৪ থেকে ১৬ সালের মধ্যে ঘাতক ভাইরাস ইবোলা আফ্রিকায় ২৮৬০০ জনকে সংক্রামিত করে ১১৩২৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে [2]। এখনও পর্যন্ত এবোলার কোন চিকিৎসা বা প্রতিষেধক বার হয়নি। প্রথম এবোলার সংক্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায় ১৯৭৬ সালে সুদান ও কঙ্গোতে এবং ধারণা করা হয় এক ধরনের বাদুড় থেকে এসেছিল। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া জিকা ভাইরাস সাধারনত একটি মশাবাহিত রোগ তবে মশা ছাড়াও যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগ শিশু ও পরিণত মানুষের জন্য সাধারনত কম ক্ষতিকর হলেও নবজাতক ও ভ্রুনের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যেখানে মেক্সিকো থেকে উদ্ভূত H1N1 ভাইরাস মূলত শিশু ও তরুণদের উপর ঘাতক প্রভাব ফেলেছে সেখানে মধ্য আমেরিকা থেকে উদ্ভূত জিকা ভাইরাস মূলত ভ্রূণ ও নবজাতকদের উপর প্রভাব ফেলেছে। অন্য দিকে করোনা ভাইরাস SARS-CoV-2 বা COVID-19 মুলত বয়স্কদের জন্য তীব্র ঘাতক। এই হল ইতিহাসে কিছু মহামারী।
ইতিহাসে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র ও যুদ্ধ
সভ্যতার আদিম যুগ থেকে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত শত্রুকে হত্যা করতে বিষ প্রয়োগের নজির আছে। রবার্ট কচ ও লুই পাস্তুরের মাইক্রোবাইলজির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের সাথে সাথে জৈব অস্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে তোলে এবং ভয়ঙ্কর পরিনতি সম্পর্কে মানুষ শঙ্কিত হতে শুরু করেন। এই শঙ্কা থেকে ১৮৭৪ সালে ব্রাসেলস ও ১৮৯৯ সালে হেগ শহরে দুটি আন্তর্জাতিক ঘোষণার মাধ্যমে জৈব রসায়ন অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপরেও ১৯২৫ ও ১৯৭২ সালে দুটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হলেও তা বহুলাংশে ব্যর্থ হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপরেও অনেক চুক্তি হলেও জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ন্ত্রন করার কোন পদ্ধতি এখনও আবিষ্কার হয়নি। ব্যাপক হারে ধ্বংস সাধন করতে পারে এরকম জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্রের প্রথম ব্যবহার জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় করেছিল। যদিও খুব কম এলাকা জুড়ে এন্থ্রাক্স ও গ্লান্ডারস (anthrax and glanders ) জীবাণু ব্যবহার করে শত্রু দেশের ঘোড়া ও কিছু প্রানীদের মেরে ফেলতে তাঁরা এই চেষ্টা করেছিল কিন্তু খুব বেশি সাফল্য পায়নি [3]। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর কিছু গোয়েন্দা রিপোর্ট ও কিছু ক্ষেত্রে মিথ্যা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি দেশই নিজেদের দেশে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র বানানোর প্রোগ্রামে হাত দেয় [4]। আমেরিকায় সরকারি প্রচেষ্টায় না হলেও ইন্সুলিন আবিষ্কার করে নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী Sir Frederick Banting প্রথম বেসরকারি ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জৈব অস্ত্র গবেষণা শুরু করেন। তাঁর ইনসুলিনের পেটেন্ট থেকে প্রাপ্ত বিপুল অর্থে প্রথম বেসরকারি জৈব অস্ত্র গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালে [5]। সেই সময় জার্মানি জৈব অস্ত্র বানাচ্ছে এই ভয়ে আমেরিকার সহযোগী দেশ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স আমেরিকাকে জৈব অস্ত্র গবেষণা শুরু করতে চাপ দেয় [6]। যদিও জার্মানি তখনো পর্যন্ত জৈব অস্ত্র নিয়ে খুব সিরিয়াস কিছু করে উঠতে না পারলেও জাপান ততদিন বড়সড় জৈব অস্ত্রের প্রোগ্রাম শুরু করে দেয় [7,8]। গত ১০০ বছরে সংক্রামক রোগে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এর মধ্যে পঞ্চাশ হাজারের কাছে মৃত্যু ইচ্ছাকৃতভাবে জীবাণু বা বিষ ছড়িয়ে হয়েছে বলে রাসায়নিক বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এই মৃত্যুর বেশিরভাগই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান কর্তৃক চীনে আক্রমনের ফল [9]। জাপানের জৈব অস্ত্র গবেষণা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলছে তখন এক সময় ৫০০০ কর্মী জৈব অস্ত্র তৈরির কাজে নিযুক্ত ছিল। প্রায় ২৬ টি গবেষণা কেন্দ্রের একটি থেকে বছরে প্রায় ৬০০ জেল বন্দীর উপর জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় [9]। যুদ্ধের সময় প্রায় ২৫ রকম রোগ সৃষ্টিকারী জৈব পদার্থের ব্যবহার জাপানিরা করেছিল। কিছু জৈব অস্ত্র প্রায় ১৯৪৭ পর্যন্ত এফেক্টিভ থেকে ৩০০০০ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। যুদ্ধের সময় জাপানিরা কলেরা ও টাইফয়েস মহামারী পরীক্ষা করার জন্য চিনের প্রায় ১০০০ জল কূপে বিষ প্রয়োগ করেন। যুদ্ধের পর সোভিয়েত আর্মি যেসব জৈব অস্ত্র গবেষককে গ্রেফতার করে তাঁদের যুদ্ধপরাধী হিসাবে বিচার করে। আমেরিকা যাদের গ্রেফতার করে তাঁদের সবাইকে মানুষের উপর জৈব অস্ত্র প্রয়োগের গবেষণার ফলাফল শেয়ার করার শর্তে মুক্তি দিয়ে তাঁদের সম্মানীয় নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করে। এদের কেউ কেউ পরে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি খোলেন। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা জাপানি গবেষণা খুবই কার্যকর হবে বলে ধারনা করলেও পরে ধরে নেওয়া হয় যে সেগুলি খুব বেশি কাজে লাগেনি। এর পরও বহু গবেষণা চলেছে। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে এক দুর্ঘটনায় মেট্রো সিস্টেম কন্টামিনেটেড হয়ে যায় ক্ষতিকর নয় এরকম একটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে যেখানে এন্থ্রাক্স কিভাবে ছড়ায় সেটা সিমুলেট করে দেখার চেষ্টা হচ্ছিল। পরবর্তীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধে ঘরে বাইরে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখিন হয়ে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন আক্রমণাত্মক জৈব অস্ত্র গবেষণা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেন ও Biological and Toxin Weapons Convention (BTWC) স্বাক্ষর করেন। BTWC তে স্বাক্ষর করলেও সেই সময় সোভিয়েতের জৈব অস্ত্র গবেষণা কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ কর্মী নিযুক্ত ছিলেন। সোভিয়েতের পতন পর্যন্ত কিছু কিছু ভয়ঙ্কর জৈব অস্ত্র ব্যালিস্টিক উৎক্ষেপণ এর মধ্যে আন্তরমহাদেশে আক্রমন করার ক্ষমতা থাকলেও জৈব অস্ত্র দিয়ে কিছু দুর্ঘটনা জনিত কারণে মৃত্যু ব্যতীত বড় স্কেলে কিছু ঘটেনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জৈব অস্ত্র গবেষণা বন্ধ করার ঘোষণা করলেও সেটি কতটা সত্য এটা বোঝার জন্য সোভিয়েত একটি খুব সাধারন কৌশল ব্যবহার করেছিল। এই ট্রিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও কাজে লেগেছিল। আমেরিকায় অবস্থিত পরমানু বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল নিয়মিত প্রকাশ করছে কিনা। যদি বিখ্যাত পরমানু গবেষকদের গবেষণার ফলাফল নিয়মিত প্রকাশ না হয় তাহলে বুঝতে হবে তাঁরা যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে ব্যস্ত আছেন। সেই সময় প্রথিতযশা বিজ্ঞানীরা গবেষণা পত্র লিখছিলেন না, এই সিম্পল কৌশল কাজে লেগেছিল এবং তাঁরা নিজেদের অস্ত্র তৈরির প্রজেক্টে আরও গতি এনেছিল। সোভিয়েতের পতনের পর তাদের সব অস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে মার্কিন গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন [10]। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বহুদিন থেকে রিপোর্ট দিয়ে আসছে দক্ষিন আফ্রিকা, ইজরায়েল্, ইরাক এবং আরও কিছু দেশ জৈব অস্ত্র করেছে বা করে চলেছে [11,12। এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ করলেও ইরাকের কোন জৈব অস্ত্রের গবেষণা কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্র পরিচালিত জৈব অস্ত্র ছাড়াও ব্যক্তিগত [13] বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের মাধ্যমে জৈব অস্ত্র ব্যবহারের উদাহরণ আছে [14]। ২০০১ সালে এন্থ্রাস সংক্রমিত চিঠি পাঠিয়ে ৫ জনকে হত্যা করায় জড়িত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায় নি কিন্তু এই সময়ে আন্টিবায়টিক বেশ কিছু মানুষের মধ্যে ড্রাগ রেজিস্টান্স করে দেয় [15]। এই ঘটনা জনমানসে এক ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই এন্থ্রাক্সে ব্যবহৃত স্ট্রেইনটি আমেরিকার আর্মির একটি ল্যাব থেকে পাওয়া যায় [16]। ধারণা করা হয় সেখানকার কোন টেকনিশিয়ান টেররাইজ করতে এই কাজটি করে।
জৈবযুদ্ধ ও অস্ত্রের প্রয়োগ নিয়ে চর্চায় সব থেকে আকর্ষণীয় বস্তুটি হল বিভিন্ন পক্ষের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ, যার বেশির ভাগ কোন একশনের অজুহাত অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া একশনের জাস্টিফিকেশন। এর বেশিরভাগ অভিযোগ পরে মিথ্যা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। এগুলি হয় প্রোপাগান্ডা অথবা যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। এটার সব থেকে বড় প্রমাণ ইরাক। কোনটি সত্যি আর কোনটি শুধুই প্রোপাগান্ডা সেটা আলাদা করার কার্যকরী পদ্ধতি জৈব অস্ত্রের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন। বিশেষ করে যদি এই তথ্যের উপর রাজনৈতিক নেতারা যুদ্ধের ডাক দেয় বা হুঙ্কার ছাড়ে অথবা হাজার হাজার কোটি টাকা কোন নির্দিষ্ট প্রোজেক্টের জন্য ব্যয় করেন। উদাহরণ হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের দেওয়া জার্মানদের জৈব অস্ত্র তৈরির অভিযোগ। কোরিয়ান যুদ্ধের সময় চীন, উত্তর কোরিয়া ও সোভিয়েত আমেরিকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে জৈব অস্ত্র মজুত করার অভিযোগ এনেছিল। পরবর্তীতে এগুলি সব প্রোপাগান্ডা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকা ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে জৈব অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে। পরবর্তীতে দেখা গেছে হলুদ বৃষ্টির মত ভিয়েতনাম যেটা ব্যবহার করেছিল সেটি ছিল মৌমাছির পায়খানার মত এক সাধারন বস্তু। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্পূর্ণ আলাদা ইতিহাস আছে আমরা আপাতত সেই আলোচনায় যাব না। রাসায়নিক অস্ত্র মূলত ফসল ধ্বংস করতে বেশি ব্যবহার হয়েছে। তবে এই প্রোপাগান্ডা মূলক অভিযোগের সব থেকে বড় সমস্যা হল সেগুলি তার নিজস্য একটি জীবন খুঁজে নেয়, যতই তা অবিশ্বাস্য হোক না কেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় কিছু মানুষের ধারণা যে HIV একটি জৈব অস্ত্র। এদের মধ্যে কাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করছে KGB নাকি CIA বিজ্ঞানীরা, আমেরিকা নাকি কিউবাকে আক্রমণ করতে এইচআইভি ভাইরাসের আবিষ্কার করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রথম দেশ হিসাবে কিউবা BTWC আর্টিকেল ৫ এ আমেরিকার বিরুদ্ধে প্যাথজেন ব্যবহারের অভিযোগ আনে [15]। অন্যদিকে এই অভিযোগ প্রমাণ না হলেও আমেরিকা যে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো এবং কঙ্গোর ফ্রেডরিখ লুবুম্বাকে জৈব পদার্থ ব্যবহার করে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল সেটা প্রমাণিত [13]। সুতরাং জৈব অস্ত্রের ভয়ঙ্করতা নিয়ে কোনোরকম দ্বিধা না রেখে কল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে সীমারাখা টানার একটি কার্যকরী উপায় থাকতেই হবে। ইরাকের ঘটনার পর থেকে ফিকশন ও বাস্তবের পার্থক্য করার প্রয়োজনীয়তা আন্তর্জাতিকভাবেই অনুভব করা হয়েছে। সোভিয়েতর ইতিহাস থেকে প্রমাণ হয়েছে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি দিয়ে জৈব অস্ত্রের প্রসার আটকানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে ইতিহাস বলছে ভয়াবহ জৈব অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম কোন দেশই এই অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের সরিয়ে নেয় নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে জ্ঞান ও দক্ষতা সাধারনভাবে জীবনদায়ী ওষুধ ও প্রতিষেধক নির্মাণ করতে কাজে লাগে তাই দিয়েই জৈব অস্ত্র নির্মাণ করা সম্ভব। তাই এই জৈব অস্ত্র আটকানোর প্রতিরক্ষামূলক কোন পদ্ধতি জানা নেই। তবে কোন ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল মারক হলে সেটি প্রাকৃতিক নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি সেটি জানার একমাত্র পদ্ধতি তার জেনেটিক সিকুয়েন্স ও জিনোম স্টাডি করা [17]। পৃথিবীজুড়ে বেশকিছু গবেষণাগার জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড জৈব অস্ত্র ডিটেক্ট করার জন্য এক সাথে কাজ করে চলেছে। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের নতুন নতুন খোঁজের কোন শেষ বিন্দু নেই এই আলোকেই বিজ্ঞানীরা যেভাবে ২০১৯ সালের করোনা ভাইরাস SARS-CoV-2 বা HCoV-19 কে ন্যাচারাল ভাইরাস হিসাবে চিহ্নিত করেছেন সেটি আলোচনা করবো।
করোনা ভাইরাসের উৎস
করোনা ভাইরাসের উৎস জানতে মার্কিনদেশের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপ রিসার্চ সেন্টারের জেনেটিক বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান এন্ডারসন ও তাঁর সহকর্মী বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের বাইরের লিপিডের স্পাইক বা কাঁটার মত বস্তুটির উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। এই কাঁটার মত স্পাইকটির সাহায্যে প্রানী কোষের দেওয়ালে আটকে গিয়ে নিজেকে বাইন্ড করে ও তার বংশবিস্তার করতে শুরু করে। এই স্পাইকটি হল একধরনের রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন (RBD) যা হোস্ট কোষের সেলকে ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে [18]। বলা হচ্ছে মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের এই স্পাইকটি যে বাইন্ডারটি কাজে লাগাচ্ছে সেটি হল, ACE-2 নামক একটি এনজাইম [19]। এই এনজাইমটি মানুষের ফুসফুস, ধমনী, হার্ট, কিডনি এবং ইন্টেস্টাইন এর বাইরের সার্ফেসে থাকে। SARS-CoV-2 ভাইরাসের স্পাইক লিপিড ও ACE-2 রিসেপ্টর ইন্টার্যাকশন লক্ষ করে উৎসের খোঁজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ACE-2 এর সঙ্গে SARS-CoV-2 ভাইরাসের স্পাইক লিপিড এর এফেক্টিভ বাইন্ডিং দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন এই ভাইরাসটি একটি ন্যাচারাল সিলেকশন এর প্রোডাক্ট, কোনোরকম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফল নয়। কৃত্রিম ভাবে তৈরি হলে ভাইরাসের আরবিডি-এর সঙ্গে ACE-2-এর সঙ্গে বন্ধন এত ভাল হত না। এই সিদ্ধান্তকে আরও ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা SARS-CoV-2 এর ব্যাকবোন ও সার্বিক মলিকিউলার স্ট্রাকচারও পরীক্ষা করেছেন। তাঁদের মতে বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং করে কেউ যদি ক্ষতিকর করোনা ভাইরাস তৈরি করতে চায় তাহলে তাকে আগে থেকে জানা ক্ষতিকর কোন করোনা ভাইরাস-এর ব্যাকবোন ব্যবহার করে শুরু করতে হবে। কিন্তু করোনা SARS-CoV-2 ভাইরাসের ব্যাকবোন অন্য যে কোন ক্ষতিকর করোনা ভাইরাসের থেকে সিগ্নিফিকেন্টলি আলাদা বরং বাদুড়ের মধ্যে পাওয়া বেশ কিছু সাধারন ভাইরাসের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। SARS-CoV-2 এর মিউটেশনের দুইটি সম্ভাব্য পথের কথা এন্ডারসনরা বলেছেনঃ
১) ভাইরাসটি অ-মানবীয় কোন এক হোস্টের মধ্যে ন্যাচারেলি বিবর্তিত হয়ে বর্তমান ক্ষতিকর অবস্থায় পৌঁছেছে এবং কোন মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে – আগের সবকটি করোনা ভাইরাসেরও এটাই ইতিহাস। যেভাবে একপ্রকার গন্ধগোকুল থেকে বাদুড় হয়ে SARS রোগটি মানুষের শরীরে এসে পৌছায় এবং উট থেকে মানুষের শরীরে আসে MERS ভাইরাস। এই প্রক্রিয়াতে SARS-CoV-2 ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন - RBD পর্শোন যেটা কোষের সঙ্গে বাইন্ড করে এবং ভাইরাসের যে ক্লিভেজ (খাঁজ) দিয়ে ভাইরাসটি বেড়িয়ে আসে দুটোই মানুষের শরীরে প্রবেশ করার আগে বিবর্তিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভাইরাসটি যখনই মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে তখন থেকেই সংক্রমণ শুরু করার কথা।
২) দ্বিতীয় সম্ভাবনা হিসাবে ভাইরাসটি অক্ষতিকর অবস্থায় অন্য কোন প্রানী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। এবং মানুষের শরীরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান ক্ষতিকর ভাইরাসে রুপান্তরিত হয়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকার প্যাঙ্গোলিন, আর্মাডিলোর মত কিছু গিরগিটির ভাইরাসের RBD স্ট্রাকচারের সঙ্গে SARS-CoV-2 এর মিল পাওয়া যায়। সেরকমই কোন প্রানী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর SARS-CoV-2 এর অন্য বৈশিষ্ট্য গুলি, বিশেষত যে খাঁজ থেকে মানুষের কোষে প্রবেশ করে, সেটি বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে এবং এপিডেমিক শুরু হওয়ার আগে কিছু সীমিত মানুষের মানুষের মধ্যে আনডিটেকটেড অবস্থায় ছিল এবং এই ক্লিভেজ সাইটটি আরও বিবর্তিত হয়ে এপিডেমিকের সৃষ্টি করেছে।
যদি অসম্ভব নাও হয়, এই মুহূর্তে এই দুটি উপায়ের মধ্যে ঠিক কোন পদ্ধতিতে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে সেটি বলা কঠিন। তবে প্রথম উপায়ে অন্য কোন প্রানী থেকে ক্ষতিকর অবস্থায় বিবর্তিত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে, এটা আশঙ্কা করাই যায় যে ভবিষ্যতেও আবার এই ধরনের প্যান্ডেমিকের মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, কারণ সেক্ষেত্রে ক্ষতিকর ভাইরাসটি অন্য কোন প্রানী জগতে বিরাজ করছে এবং যেকোনো সময়ে আরও একরকম মিউটেশন করে মানুষের শরীরে জাম্প করতে পারে। কিন্তু উপরের দ্বিতীয় প্রকারে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সেই সম্ভাবনা অনেক কম।
স্পাইক প্রোটিনের RBD অংশের মিউটেশন এবং এর সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাকবোন নিশ্চিত ভাবে ল্যাবরেটরি উৎসকে সন্দেহাতীতভাবে নাকচ করে। লন্ডনের এপিডেমিক বিশেষজ্ঞ Josie Golding বলেন এন্ডারসন গ্রুপের এই আবিষ্কার করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে যে ভিত্তিহীন গুজব ছড়াচ্ছে তার বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ প্রামান্য মত তৈরিতে সাহায্য করবে। ন্যাচারাল সিলেকশন এর মাধ্যমে ভাইরাসের মিউটেশনের এই তথ্য ইচ্ছাকৃত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুজবকে শেষ করবে।
করোনা ভাইরাস ইনফরমেশন শেয়ার
হুবেই প্রদেশের উহান শহরে পর পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় ২০১৯ এর নভেম্বর মাসে, তখনো নিউমোনিয়ার কারণ জানা ছিল না। নিউমোনিয়ার কারণ যে অজানা এক ভাইরাস সেটি প্রথম বোঝা যায় ৮ ডিসেম্বর এবং জানুয়ারী ১০ তারিখে ভাইরাসটির অস্তিত্ব জানার এক মাসের মধ্যে চীন ভাইরাসটির জিনোম এর সিকুয়েন্স বার করে পাবলিক ভাবে জানিয়ে দেয় [20]। যত রকম গুজব বাজারে চলছে তার মধ্যে অন্যতম হল ইনফরমেশন শেয়ার করতে দেরি করা। এন্ডারসন বলেন ভাইরাসের জেনেটিক বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ হলেই বোঝা যায় নির্দিষ্ট ভাইরাসের অন্য কোন প্রানী থেকে মানুষের শরীরে ট্রান্সফার হওয়ার নির্দিষ্ট সময়টি এবং জেনেটিক্সই বলতে পারে কিভাবে এক দেহ থেকে আর এক দেহে সংক্রমিত হচ্ছে। ডিসেম্বর ৮ তারিখে ভাইরাসটি পাওয়ার পর জানুয়ারি ১০ তারিখে ভাইরাসের জেনেটিক বিশ্লেষণ জেনে পাব্লিক ডোমেইনে জানানো বেশি সময় নেওয়া কিনা সেটা অন্য কিছু কেসের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে। ইতিমধ্যে ৩১ ডিসেম্বর World Health Organization (WHO) কে, ভাইরাসটির বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়িয়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করে। ২০০২ সালে যে SARS ভাইরাসের আউটব্রেক হয়েছিল, তখন তার জেনেটিক বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ করতে ২০০৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বলাই বাহুল্য ২০০২ সালের অভিজ্ঞতা এবছরের দ্রুত জেনেটিক বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করেছে। SARS রোগকে দ্রুত আয়ত্তে আনা গিয়েছিল কারণ মানুষ থেকে মানুষে তার সংক্রমণের হার ছিল কম। প্রথম দিকে সংক্রমিত একজন রোগী থেকে নেওয়া ভাইরাসের জেনেটিক সিকুয়েন্স করার পর আরও ১২ টি ভাইরাসের সিকুয়েন্স করা হয়। ২০১৪ সালের EBOLA ভাইরাসের প্রথম সিকুয়েন্স করা University of Edinburgh এর বিজ্ঞানী Andrew Rambaut বলেন, এই ভাইরাসটির বিস্তার অভাবনীয় ও বিস্ময়কর ভাবে অত্যধিক। তাই ভাইরাসটির জেনেটিক সিকুয়েন্স জানতে কম সময় লাগলেও ইতিমধ্যে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু বহির্বিশ্বের কাছে তখনও এর ছড়িয়ে পড়ার রেট অস্বাভাবিক লাগে ও ব্যবস্থা নিতে দেরি করে। প্রথম দিকে ১০ জনের কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে জেনেটিক বিশ্লেষণ করে ৯৯.৯৮%এর বেশি মিল পাওয়া যায় [21]। এর পরে শেঞ্ঝেন, থাইল্যান্ড ও উহানের ২৪ টি ভাইরাসের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন ভাইরাসগুলির খুবই সীমিত বৈচিত্র্য আছে, এবং সেখান থেকে Andrew Rambaut সিদ্ধান্ত নেন সবগুলিরই সাধারন উৎস খুবই সাম্প্রতিক। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে ভাইরাস রিপোর্ট করার অনেক আগে থেকে সংক্রমণ শুরু হলে এই ২৪ টি জিনোমের মধ্যে যা বৈচিত্র্য দেখা গেছে তার পরিমান আরও অনেক বেশি হত। এরকম নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর নির্দিষ্ট সময় জানতে বিজ্ঞানীরা অ্যাডাম ইভ নামক একটি ভাইরাসের জিনের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন, যার থেকে সব জীব জগতের আদিকাল থেকে ভাইরাস উত্তরাধিকার পেয়েছে। এই তুলনাটির নাম বলপার্ক এস্টিমেশন। Andrew Rambaut বলপার্ক এস্টিমেট করে বলেন এই করোনা ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রথম সংক্রমণের সময় ৩০ অক্টোবর, ২০১৯ এর আগে এবং ২৯ নভেম্বর ২০১৯ এর পরে হতে পারে না। একমাসের মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর যখন চিন বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে তখনও ভাইরাসটির ব্যাপারে সেইভাবে কোন তথ্য হাতে আসেনি। পরবর্তীতে এর লিনিয়ার ও এক্সপোনেন্সিয়াল স্প্রেড দেখে এর সংক্রমণ রেট সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয় এবং বোঝা যায় কোন এক জনপদে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কোন লকডাউনই “সাফিসিয়েন্টলি আর্লি” নয়। সুতরাং দেরীতে বিশ্ববাসীকে ভাইরাসটি সম্পর্কে জানানোর অভিযোগ ধোপে টেকে না বরং সমস্ত তথ্য যখন পাবলিক ডোমেইনে চলে এসেছে তার পরেও দেশে দেশে ব্যবস্থা নিতে দেরি করা নানা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতা কে নির্দেশ করে। তার মধ্যে এই ভাইরাসটি উষ্ণ প্রধান অঞ্চলে সেইভাবে ছড়াতে পারবে না বলে একটি ধারণাও বেশ ক্ষতি করে। এটি যে শুধুমাত্র ধারণাই, কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষার অনুসিদ্ধান্ত নয় সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিলে সেটি ক্ষতিকারক হয় সেটাও প্রমাণ হয়ে গেছে। ভাইরাসটি ইতিমধ্যে বহুবার মিউটেট করে সব দেশে সব রকম পরিবেশে সংক্রমণ করার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ের ২৪ টি জিনোমের সিকুয়েন্সের ইউনিফর্মিটি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে এটি একটি “ওয়ান-টাইম-ইনফেকশন”, এই ভাইরাসটি যদি বিভিন্ন প্রানী থেকে মানব দেহতে আসতো তাহলে যতগুলি জিনোম এর সিকুয়েন্স করা হয়েছে তার মধ্যে আরও অনেক বৈচিত্র্য দেখা যেত। ঠিক কোন প্রানী থেকে এই ভাইরাসটি মানব শরীরে এসেছে সেটি কিন্তু জেনেটিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় না। অন্য কিছু জিনোমের তুলনা করে সম্ভাব্য একটি ধারণা করা যেতে পারে। উহান ইন্সিটিউট অফ ভাইরলজির গবেষণায় SARS-CoV-2 ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে বাদুড়ের করোনা ভাইরাসের জিনোমের ৯৬% মিল খুজে পাওয়া গেছে [22]। স্ক্রিপ রিসার্চ সেন্টারের এন্ডারসন বলেন এই ভাইরাসটির সঙ্গে SARS ভাইরাসের অনেক মিল থেকে ধারণা করা যায় এটিও বাদুরের মধ্যে ছিল। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে ২০০২ এর অভিজ্ঞতা এই ভাইরাসটির সিকুয়েন্স দ্রুত বার করতে সাহায্য করতে পারে, এবং চীন দ্রুত সেটা পাবলিক করায় বিশ্ব বাসী তার অরিজিন নিয়েও গবেষণা করতে পারে। এবং চিকিৎসার পদ্ধতি খুঁজে বার করতেও পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনোনিবেশ করতে পারেন এই জিনোম সিকুয়েন্স কাজে লাগিয়ে।
করোনা ভাইরাস আক্রমনের চিকিৎসা
এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস সংক্রমণের কোন চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন না হওয়ায় মূলত উপসর্গ গুলি ধরেই চিকিৎসা হচ্ছে এবং ঠিক যেভাবে SARS-CoV-2 ভাইরাসের উৎসের সন্ধান করতে ভাইরাসের স্পাইক লিপিড ও ACE-2 রিসেপ্টর ইন্টার্যাকশন এর উপর ফোকাস করা হচ্ছে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে ACE-2 এনজাইমের ইন্টার্যাকশনে ACE-2 এর লেভেলের দ্রুত পতন হয় যা দ্রুত ফুসফুস ব্রেকডাউনের দিকে নিয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ACE inhibitors এবং angiotensin receptor blockers (ARBs) ব্যবহার করে ACE-2 লেভেলে উন্নতি দেখা গেছে এবং ভাবা হচ্ছে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ACE-2 এর ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখার জন্য কার্ডিও ভাস্কুলার রোগে এর ব্যবহার হয়। যেহেতু করোনা ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, তাই এর চিকিৎসা মূলত অর্গান স্পেস্ফিক উপসর্গ ভিত্তিতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে করা হচ্ছে। রোগীর যে অঙ্গের উপর ভাইরাসের উপর বেশী প্রভাব ফেলছে সেই অঙ্গের অন্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা করতে যেসব ওষুধপত্রের ব্যবহার করা হয় সেগুলিই ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন সংক্রামণ যাতে না হয় তাঁর জন্য সোশ্যাল দূরত্ব তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে টোটাল লকডাউন করে সোশ্যাল ডিস্টান্স এফেক্টিভ করার চেষ্টা হচ্ছে। যে দেশ যত বেশি টেস্টিং করছে সেই দেশ তত বেশি সাফল্য পেয়েছে। ভারতেও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে আর এন এ কে পৃথক করে স্যাম্পল হিসাবে বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে পাঠিয়ে গবেষণা কেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করে এই ভাইরাস ডিটেক্ট করতে কাজে লাগানোর জন্য কিছু কিছু বিজ্ঞানী মতামত দিয়েছেন। এই বিজ্ঞানীদের মতে শুধু টেস্ট কিটের উপর নির্ভর করে থাকা ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। এখনই ব্যাপক সংখ্যায় পরীক্ষা করে সংক্রামিত রোগীদের আইসোলেট করার প্রয়োজন। যত দ্রুত দেশ জুড়ে পরীক্ষা হবে ততই ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকবে।
করোনা ভাইরাস আক্রমণ প্রতিরোধে দেশে দেশে তারতম্য
করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ করার জন্য লকডাউন একদম প্রাথমিক স্টেপ কিন্তু সেটি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার রেট কমাতে পারে কিন্তু প্রতিরোধের কার্যকরী উপায় নয়। বিশ্বের সমস্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে চলেছেন যে, এই কোভিড ভাইরাসকে রোখার কার্যকরী পদ্ধতি আরও বেশি বেশি করে পরীক্ষা করা এবং করোনা পজিটিভ রোগীদের আইসোলেট করা। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের দেশে পরীক্ষা করার রেট আশঙ্কা জনক ভাবে কম। এর ফলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে যে ভাইরাসটি প্রথম দিকে এনলাইটেন্ড উচ্চ/মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম ও বস্তিতে পৌঁছে যাবে। উচ্চ বা মধ্যবিত্ত এমনকি কিছু নিম্নবিত্ত ঘরের মানুষ হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছালেও, দারিদ্র সীমার নিচের অনেক বস্তিবাসী হাসপাতালে যাওয়ার সাহসও পায় না। তাদের কিছু করোনামিটারের কাঁটায় কোনোরকম প্রভাব না ফেলে বেঘোরে মারা যাবে এবং বাকি কিছু কতদিন যে এই ভাইরাসটি ছড়াতে থাকবে তার ঠিক নেই। ভাইরাসটি সম্পর্কে অনেক তথ্য হাতে এসে যাওয়ার পরেও নাগরিক মৃত্যু ও অন্যান্য ক্ষয় ক্ষতি অনেকটাই নির্ভর করে সেই দেশের সামাজিক ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর। ৩০ মার্চ ভারতে প্রথম কোভিড পজিটিভ কেস ধরা পরে। ততদিনে চীন থেকে অন্য দেশেও ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে দিয়েছে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবী জুড়ে হুশিয়ারী দিয়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও ৩ মার্চ পর্যন্ত নতুন ভিসা দেওয়া হয়েছে এবং সব ভিসা ক্যান্সেল করতে ১১ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোন কারণ বোঝা যাচ্ছে না। ১৮ মার্চ পর্যন্ত বিদেশ থেকে যাত্রীদের ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। লকডাউন অবস্থায় মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা, কৃষিক্ষেত্র থেকে ষ্টোর হয়ে বা সরাসরি ক্রেতা পর্যন্ত খাদ্য দ্রব্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা কেমন তার উপরে মানুষের মধ্যে কন্টাক্ট কমানো নির্ভর করছে। এই ভাইরাসটি মানুষের সামনে একটি নতুন শিক্ষা দিয়েছে যে, ব্যক্তির সুস্থ থাকতে হলে প্রতিবেশীকেও সুস্থ রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য যেখানে যত বেশি হবে সেখানে এই ভাইরাস আক্রমন নিয়ন্ত্রন করা তত কঠিন। এমন কিছু সামজিক সিস্টেম দরকার যা সামাজিকভাবে সবাইকে সুস্থ রাখবে। কোন দেশের অর্থনীতি কতটা বিপর্যস্ত হল তাই দিয়ে বিজ্ঞানের ফাইন্ডিং বদলায় না। সব শেষে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত, বিজ্ঞানের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বা শিক্ষা সেই সময়ে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে প্রাপ্ত পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। একমাত্র বৈজ্ঞানিক নতুন কোন তথ্য পূর্ববর্তী বৈজ্ঞানিক কোন সিদ্ধান্তকে নাকচ করতে পারে, এটা বিজ্ঞানের বিকাশ পদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থনীতি রাজনীতির ককটেল বানিয়ে গুজব তৈরি করা যায়, গোয়েন্দা রিপোর্ট দিয়ে কন্সপিরেসি থিওরি লেখা যেতে পারে, তাই দিয়ে বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত বদলানো যায় না। বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত বদলাতে নতুন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দরকার হয়। এর পরেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নতুন তথ্য কিছু আবিষ্কার হলে তখনই এই অনুসিদ্ধান্ত বদলাতে পারে। সঙ্কট কালীন অবস্থায় বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ভাবনা আরও বেশি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
[1] https://www.cdc.gov/flu/pandemic-resources/2009-h1n1-pandemic.html
[2] https://www.cdc.gov/vhf/ebola/history/2014-2016-outbreak/index.html
[3] Wheelis M. (1999) in Biological and Toxin Weapons: Research, Development and Use from the Middle Ages to 1945 (eds Geissler, E. & Moon, J.E.v.C.), 35–62. Stockholm International Peace Research Institute, Oxford Univ. Press, Oxford, UK.
[4] Geissler E. & Moon J.E.v.C. (1999) Biological and Toxin Weapons: Research, Development and Use from the Middle Ages to 1945. Stockholm International Peace Research Institute, Oxford Univ. Press, Oxford, UK
[5] Avery D. (1999) in Biological and Toxin Weapons: Research, Development and Use from the Middle Ages to 1945 (eds Geissler, E. & Moon, J.E.v.C.), 190–214. Stockholm International Peace Research Institute, Oxford University Press, Oxford, UK.
[6] Moon J.E.v.C. (1999) in Biological and Toxin Weapons: Research, Development and Use from the Middle Ages to 1945 (eds Geissler, E. & Moon, J.E.v.C.), 215–254. Stockholm International Peace Research Institute, Oxford Univ. Press, Oxford, UK.
[7] Japanese biological warfare research on humans: a case study of microbiology and ethics, Harris S
Ann N Y Acad Sci. 1992 Dec 31; 666():21-52.
[8] Harris S.H. (2002) Factories of Death.Japanese Biological Warfare, 1932-1945, and the American Cover-up, revised edn. Routledge, New York, USA.
[9] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1326439/
[10] Alibek K. & Handelman S. (1999) Biohazard. Random House, New York, USA
[11] Iraq's biological weapons.The past as future?Zilinskas RAJAMA. 1997 Aug 6; 278(5):418-24.
[12] Biological weapons in the twentieth century: a review and analysis.Leitenberg MCrit Rev Microbiol. 2001; 27(4):267-320.
[13] Miller J., Engelsberg S. & Broad W. (2002) Germs: Biological Weapons and America's Secret War. Simon & Schuster, New York, USA
[14] The specter of biological weapons.Cole LASci Am. 1996 Dec; 275(6):60-5.
[15] Biological weapons in the twentieth century: a review and analysis. Leitenberg M Crit Rev Microbiol. 2001; 27(4):267-320. https://doi.org/10.1080/20014091096774
[16] https://www.sciencedirect.com/topics/immunology-and-microbiology/fort-detrick
[17] https://www.sciencedaily.com/releases/2019/05/190521162437.htm
[18] https://www.nature.com/articles/s41423-020-0400-4
[19] https://www.hindawi.com/journals/ijpep/2012/256294/
[20] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/nuccore/MN908947
[21] https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(20)30251-8/fulltext
[22] https://www.biorxiv.org/content/10.1101/2020.01.22.914952v2