এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নতুন সরকার, নতুন নীতিঃ কিছু প্রস্তাব

    খসড়া - ১ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ মে ২০১১ | ১৩৯৩ বার পঠিত
  • এই বাংলায় নতুন সরকার এসেছে। গুরুচন্ডালিতে লেখেন বা গুরু পড়েন এরকম কিছু মানুষ,অত্যন্ত ঘরোয়া ভাবে কিছু আলোচনার পর নতুন সরকারের কাছে দাবি বা প্রত্যাশার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেন। খসড়াটি পাঠানো হয় শ্রী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। খসড়াটি শুধু প্রাথমিকই নয়,অসম্পূর্ণও। শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এখানে আসেনি। একে পূর্ণতা দেবার জন্য এবং আলোচনার জন্য বুলবুলভাজায় খসড়াটি প্রকাশ করা হল। ঠিক এই ফর্মেই খসড়াটি সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

    আলোচনা করুন, মতামত দিন। টইয়ে দিন, বা মেল করুন গুরুর ঠিকানায়। আপনার মতামতে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়ে খসড়াটি পুনরায় পাঠানো হবে সরকারের কাছে।


    এক। পূর্বশর্ত

    নানা বিষয়ে নতুন প: ব: সরকারের নীতি কী হবে, বা হওয়া উচিত সে নিয়ে আলোচনার অনেক অবকাশ আছে বা থাকবে। কিন্তু যে কোনো নীতিরই কিছু পূর্বশর্ত থাকে। নীতি ভালো হোক বা মন্দ, পূর্বশর্তগুলিকে ঠিকঠাক না বুঝে নিলে যে কোনো নীতিই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এই পূর্বশর্তগুলি নির্মিত হয় কঠিন বাস্তব দিয়ে। সরকারি নীতি স্থির করার আগে এই পুর্বশর্তগুলিকে ভালো করে দেখে নেওয়া দরকার:

    এক। সরকারের ঘাড়ে এই মুহূর্তে দুই লক্ষ কোটি টাকার দেনা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং ঋণ নিতে নিতে ক্রেডিট লিমিটের বিপদসীমা ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে ফেলেছে বা ফেলতে চলেছে। উন্নয়নের কাজে কোনোরকম টাকা ঢালা খুব কঠিন।

    দুই। সরকারি ব্যবস্থা একটি জগদ্দল পাথরের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চূড়ান্ত অদক্ষ। সরকারি আয়ের বেশিরভাগ অংশটাই যায় কর্মচারিদের মাইনে দিতে, কিন্তু এই বিপুল আমলাতন্ত্র কোনো কাজে লাগেনা। বরং যেটুকু টাকা উন্নয়নে ঢালা হয়, তার বেশিরভাগ অংশটাই চলে যায় বিভিন্ন হাতে। যথাস্থানে পৌঁছয়না।

    যেকোনো নীতি প্রণয়নের আগেই, তাই, এই দুটি পূর্বশর্ত বা বাস্তব পরিস্থিতির মোকাবিলা করা প্রয়োজন। কারণ নীতি যাই হোক না কেন, হাতে টাকার যোগান না থাকলে যেকোনো রকম প্রকল্পে হাত দেওয়াই কঠিন। সমস্ত সদিচ্ছা সত্ত্বেও টাকার যোগাড়ের এবং/ অথবা ব্যয়সংকোচের ব্যবস্থা না করা গেলে কোনো জনহিতকর প্রকল্পেই হাত দেওয়া অসম্ভব।

    একই ভাবে, যদি সরকারি ব্যবস্থাকে সহজতর এবং দক্ষ না করা যায়, তবে হাতে টাকা থাকলেও এবং তা ব্যয় করলেও অন্বিষ্ট ফলের সামান্য এক ভগ্নাংশই হয়তো পাওয়া যাবে। বিপুল ব্যয়ের বিনিময়ে কিছু অসাধু মানুষের টাকা রোজগারের নানা উপায় খুলে দেওয়া হবে, সঙ্গে উপরি পাওনা হবে জনতার ক্ষোভ। উল্টোদিকে যদি ব্যবস্থাকে দক্ষ করা যায়, তাহলে তা ব্যয়সংকোচেও সহায়ক হতে পারে। আগে একশটাকা খরচা করে যে ফল লাভ করা যাচ্ছিল, এখন হয়তো পঁচিশ টাকার বিনিময়েই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। সেকারণেই অর্থের যোগাড় করার চেয়েও বেশি জরুরি হল, সফল ভাবে অর্থ ব্যবহার করা, মানুষকে পরিষেবা দেবার যথাযোগ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা। গুরুত্বের বিচারে সরকারি ব্যবস্থাকে দক্ষ করে তোলা তাই এক নম্বর স্থানেই থাকবে।

    যেহেতু এই পূর্বশর্তগুলিকে বিবেচনা না করে কোনো সরকারি নীতি প্রণয়ন সম্ভব নয় তাই এখানে কিভাবে এই সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা যেতে পারে, তার একটি খসড়া চিত্র দেবার চেষ্টা করা হল।

    দক্ষতর প্রশাসনের লক্ষ্যে:

    এক। নজরদারি। সরকারি কর্মীবাহিনী বিপুল। তার একাংশের যথাযথ ব্যবহারেই বিপুল কর্মযজ্ঞ নিখুঁতভাবে সমাধা করা সম্ভব। এই রাজ্যেই তার সাম্প্রতিকতম সফল উদাহরণ হল নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা। এই তথাকথিত অদক্ষ প্রশাসনকে ব্যবহার করেই নির্বাচন প্রায়-নিখুঁতভাবে পরিচালিত হল। সাধারণ মানুষের ভোট-পরিষেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলিরও নেই। সরকারি কর্মকাণ্ডের পরিচালনার একটি সফল মডেল হতে পারে এটি।

    লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নির্বাচন কমিশন একটি মাত্র যাদুমন্ত্রবলে প্রশাসনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছিল। সেই মন্ত্রটি হল নজরদারি। এর দুটি অংশ। এক, আমলাতন্ত্রের প্রতিটি অংশকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান। দুই, দিনশেষে ফলাফল বুঝে নেওয়া। এই নজরদারির নানারকম উপকরণ থাকতে পারে। সরাসরি সব অফিসে নির্বাচন কমিশনের মতো ওয়েবক্যাম বসানো যেতে পারে। বা না-ও যেতে পারে। তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। কিন্তু একটি স্বচ্ছ এবং স্বশাসিত কমিশন করা যেতে পারে, যারা সমস্ত বিভাগেই এই নজরদারির কাজটি করবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজের দায়িত্ব বিভাগের। কিন্তু স্বশাসিত কমিশন কাজটি জানবে ও তার উপর নজর রাখবে। এবং প্রোমোশন বা ডিমোশন বা বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেবে (অবশ্যই বিভাগের সঙ্গে আলোচনার পর, কিন্তু স্বাধীনভাবে)। একটা উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যে, ধরা যাক, ঝাড়গ্রামের কোনো করণিক কী কী কাজ করবেন, সেটা কমিশন ঠিক করে দেবে না। কিন্তু তিনি কোনো কাজে গাফিলতি করছেন কিনা, বা বিধি ভাঙছেন কিনা, টেন্ডারে জালিয়াতি করছেন কিনা, সেটা কমিশন দেখবে।

    দুই। ই-গভর্নেন্স। প্রশ্ন হল, কমিশন জানবে কী করে, যে, ঝাড়গ্রামের করণিকের কী কী কাজ আছে। বা তিনি সেই কাজ ফেলে রেখেছেন কিনা। নির্বাচন কমিশনের মতো সমস্ত সরকারি দপ্তরে ওয়েব-ক্যাম নিশ্চয়ই বসানো যায়, কিন্তু তাতেও কাউকে তাহলে সর্বক্ষণ নজর রাখতে হবে। নজরদারির সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল ই-গভর্নেন্স। ধাপে ধাপে সমস্ত সরকারি ফাইলকেই ইলেকট্রনিক আকারে পরিণত করে ফেলা। এবং হাতে-হাতে ফাইল চালাচালি একেবারে না করা। এতে করে কোন ফাইল, কোন দপ্তরে কতক্ষণ বা কতদিন আটকে থাকল, সেটা খুব সহজে জানা যাবে। কমিশন চাইলেই সহজেই তা জানতে পারে। এবং প্রয়োজনানুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে।

    তিন। অভিযোগ সেল। এই পুরো প্রক্রিয়াটি শুধু প্রশাসনিক নয়। এতে গ্রহীতা বা মানুষের অংশগ্রহণও জরুরি। সে কারণে কমিশনের অধীনেই একটি পুরোদস্তুর অভিযোগের সেল থাকবে। যারা মানুষের বক্তব্য টেলিফোনে শুনবে। ব্যবস্থা নেবে। এবং অভিযোগকারীকে লিখিত বা মৌখিক ভাবে ফলাফল জানাবে। ই-গভর্নেন্স চালু হলে, এটা খুব সহজেই করা সম্ভব। সেই একই সিস্টেমকে ব্যবহার করে কোনো আবেদনের বর্তমান অবস্থা, দেরি হবার কারণ, সবই যে কোনো গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া সম্ভব।

    চার। নজরদারির উপর নজরদারি। সামাজিক নজরদারি। নজরদারি শুধুমাত্র একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। সেরকম হলে ব্যবস্থাটি অতি-আমলাতান্ত্রিকতায় ভেঙে পড়তে বাধ্য। কেবলমাত্র সরকারি অতি-নিয়ন্ত্রণ দুর্নীতি রুখতে সমর্থ হয়না। বরং ছোটো সংস্থাগুলিই আমলাতান্ত্রিকতার শিকার হয়। একটি প্রামাণ্য পেপারে দেখা যাচ্ছে:

    Over-regulation is yet another problem. Small entrepreneurs are the typical victims of corrupt factory inspectors; given the narrow margins on which they operate, the bribes can significantly reduce their prospects of succeeding. The prospect that an inspector could come and shut them down soon after they spend their hard-earned money to buy a small machine, makes them reluctant to invest in the first place.

    One consequence of the fear of the regulator is that small firms do not register themselves, making them ineligible for formal loans and other publicly supplied inputs (such as power supply).

    সূত্র: http://econ-www.mit.edu/files/2490

    তাই সাধারণ মানুষের ভূমিকা শুধু অভিযোগ জানানোতেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বরং নজরদারির প্রক্রিয়াটির উপর নজর রাখতে সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষকে অংশীদার করা একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

    ক। যথাযথ অর্থনৈতিক অডিট, এবং তার ফলাফল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা। বহু টাকা আমলাতান্ত্রিক গাফিলতিতে ব্যবহৃত হয়না, বা ভুল কাজে ব্যবহার করা হয়। যথাযথ অডিট করলে দুর্নীতি ধরা পড়ে, কিন্তু দুর্নীতি ধরা পড়লেও পরবর্তী পদক্ষেপে অনেক সময় খামতি থেকে যায়। টাকা ব্যবহার না করার অদক্ষতা তো সাধারণভাবে চোখ এড়িয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। সামাজিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকলে এগুলি কারো না কারো চোখে পড়বেই। এবং সে নিয়ে চাপ তৈরি হবে।

    খ। একই ভাবে কী কী অভিযোগ লিপিবদ্ধ হল, এবং তার পর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সেগুলিও সামাজিকভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। অভিযোগ-গ্রহণকারী সেল নিজেই যেন আমলাতন্ত্রের শিকার না হয়, সেটা দেখার জন্যও এটা প্রয়োজন।

    গ। ই-গভর্নেন্সের জন্য যে তথ্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে চালাফেরা করবে, একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে তার বেশিরভাগ অংশ (যা গোপনীয় নয়), জনতার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। সেখানেও মতামত নেবার ব্যবস্থা করা হোক। কোনো পুকুর চুরি নজরদারি এড়িয়ে গেলে অন্য কারো না কারো নজরে পড়বেই। একই ভাবে যে কোনও দপ্তরের সামগ্রিক দক্ষতাও জনতার নজরদারির মধ্যে থাকবে।

    ঘ। ইন্টারনেট এবং বিশেষ করে সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করা। প্রতিটি সরকারি দপ্তর এবং সম্ভব হলে প্রতিটি জনপ্রতিনিধি ইন্টারনেট ব্যবহার করুক। এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। যে যোগাযোগ দ্বিমুখী। এটা নতুন কিছু নয়। উদাহরণস্বরূপ: এক, দিল্লি পুলিশ, এমসিডি এরা নিজেদের নামে ফেসবুক খুলে দিয়েছে। লোকে সেখানে নিজেদের গল্প জানাচ্ছে। রাস্তায় কোথায় গারবেজ সাফ হয় নি, কোথায় কোন পুলিশ হেলমেট না পরেই স্কুটার চালাচ্ছে, কোন পুলিশের বাইকের নাম্বারপ্লেট নেই, লোকে ফটো তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিচ্ছে। সব কিছুর যে তাতে সমাধান হচ্ছে তা নয়, কিন্তু পাবলিক ভিজিলেন্সে কিছু দোষী পুলিশ শাস্তি পাচ্ছে, দোষী এমসিডির অফিসার শোকজড হচ্ছে। দুই, বিহারে একটি অসাধারণ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। যা একই সংগে তথ্য সংগ্রহের আকর, এবং জনতার দরবার। লিংক: http://cm.bih.nic.in

    এই ব্যবস্থাটিই আরও বড়ো আকারে এবং সুসংহত ভাবে ব্যবহার করা হোক। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের অসীম ক্ষমতা আজকের দিনে। এতে করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তরুণ প্রজন্মের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে।

    ঙ। প্রশাসন-জনসাধারণের মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ স্থাপন। সামগ্রিকভাবে জনতার অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করতে গেলে সব মিলিয়ে এই দ্বিমুখী যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতেই হবে।

    প্রয়োজন, সরকার, প্রশাসন ও জনগণকে "মুখোমুখি' এনে দেবার প্ল্যাটফর্ম বানানোর, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। ভোটের আগে যেমন নেতা, মন্ত্রীদের "মুখোমুখি' লাইভ অনুষ্ঠানে আনা হয়, এধরণের অনুষ্ঠান নিয়মিত করা হোক, সরকারি, বেসরকারি সব মিডিয়াতে। টিভিতে , রেডিওতে, ইন্টারনেটে। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী, নেতা, আমলা, পুলিশ অফিসার সবাই আসবেন, উত্তর দেবেন, শুধু উপস্থাপকের প্রশ্নেরই না, লাইভ ফোন কল নেওয়া হবে। লোকে আগে থেকে মেইল করেও প্রশ্ন জানাতে পারেন, তার উত্তর ও দিতে হবে। টিভি চ্যানেলগুলি অতি অবশ্যই এই ব্যাপারে উৎসাহ দেখাবে। আর ইন্টানেট ফোরামে হলে ব্যাপারটি আর সহজ। পুরো জিনিসটিই একটি আবশ্যিক সরকারি কর্তব্য হিসেবে পালন করা হোক। এবং নিয়মিতভাবে।

    শুধু মিডিয়াই না, স্থানীয় স্তরে জনতার দরবার জাতীয় কার্যক্রমগুলিকেও একই রকম উদ্যোগ নিয়ে চালু করা হোক।

    চ। লোক আয়ুক্তকে পুনরুজ্জীবিত করা হোক। দুহাজার দশ সালের একটি সংবাদপত্রের রিপোর্টে পাওয়া যাচ্ছে:

    কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে ২০০৬ সালের ফেব্র¦য়ারি মাসে এই আইন কার্যকর কর। রাজ্যের প্রথম লোকায়ুক্ত হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হয়। প্রথমে লোকায়ুক্তের কাজ শুরু হয় ওই বিচারপতির বাড়িতে। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে ভবানী ভবনে লোকায়ুক্তের অফিস তৈরি হয়। অফিস তৈরি হলেও তাতে কখনও পর্যাপ্ত কর্মী ছিল না। তবুও কাজ চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্র¦য়ারি অবসর নেন। এর পর আর কোনও বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ায় প্রায় দু'বছর লোকায়ুক্তের কাজকর্ম বন্ধ।

    জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচারের জন্য লোক আয়ুক্তে জোর দেওয়া হোক। এতে করে জনপ্রতিনিধিদের উপর জনতার নজরদারি থাকবে।

    পাঁচ। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। প্রশাসনের উপর সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করা প্রয়োজন। এটি একটি রাজনৈতিক কর্তব্য। কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রাজনৈতিক নেতা যেন দলবল নিয়ে পুলিশের উপর চাপ না তৈরি করতে পারেন, সরকারি আধিকারিকদের উপর প্রভাব না ফেলতে পারেন, সেটা দেখা অবশ্যকর্তব্য।

    এই ব্যবস্থাগুলিকে একই সঙ্গে চালাতে পারলে অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি প্রশাসন দক্ষতর হয়ে উঠবে। নির্বাচন কমিশনের যেমন এই একই প্রশাসনকে খুব তাড়াতাড়ি দক্ষ করে তুলতে খুব বেশি সময় লাগে নি।

    ব্যয় সংকোচ এবং আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে:

    এক। দক্ষতর প্রশাসন: প্রশাসন যদি দক্ষতর হয়, তবে ব্যয়সংকোচ সহজেই হবে। নজরদারি থাকলে দুর্নীতি কম হবে। দুর্নীতি এবং চুরি কমলে প্রকল্পের খরচ কমবে। পরিষেবাও মানুষের কাছে সহজে পৌঁছবে। যে কাজে আগে একশ টাকা খরচা হচ্ছিল, আজ পঁচিশ বা পঞ্চাশ টাকাতেই তা সম্ভব হবে। মূল্যবান সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে।

    দুই। সমান্তরাল অর্থনীতির ধ্বংসসাধন: এটাও একটি লম্বা এবং বড়ো প্রক্রিয়া, যা সরকারি প্রশাসনকে দক্ষ করে না তুলতে পারলে সম্ভব নয়। এবং একই সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছারও একান্ত প্রয়োজন এই কাজে। এই প্রক্রিয়ার একদিকে আছে বড়ো বড়ো শিল্পপতি নামধারী ফড়েরা, যারা এতদিন শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং সরকারের টাকা মেরে কালোটাকার সমান্তরাল অর্থনীতির সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে, তাদের ঘাড় ধরে টাকা আদায়। প্রশাসন শক্ত হলেই এটা সম্ভব। অন্যদিকে আবার আছে রাজনৈতিক / প্রশাসনিক পতাকার তলায় যারা খুব ছোটো স্কেলে "বিকল্প' অর্থনীতির রাজ্য বানিয়েছে, তাদের ধ্বংসসাধন। যেমন, ফুটপাথে যে লোকগুলি হকারি করতে বসেন, তাঁরা প্রত্যেকে ঐ জায়গাটির জন্য কাউকে না কাউকে "ভাড়া' দেন। সেই "ভাড়া' আসলে সরকারের প্রাপ্য। তার বিনিময়ে সরকার তাঁদের কিঞ্চিৎ পরিষেবাও দিতে পারে। একই ভাবে যাঁরা অটো চালান, তাঁরাও ইউনিয়নের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেন। এই ছাড়পত্র আসলে দেবার কথা সরকারের। এবং বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করার কথা। ছোটো থেকে বড়ো, বিভিন্ন আকার ও মাত্রায় গোটা রাজ্য জুড়ে নানা "বিকল্প' অর্থনীতির চাষবাষ চলছে। কোনো রকম উচ্ছেদ ছাড়াই সরকার ন্যায়সঙ্গত ভাবেই এই অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে নিজের হাতে এঁদের পরিষেবাও দিতে পারে এবং উপার্জনও করতে পারে। প্রাইভেট টিউশন, চিকিৎসায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস - এগুলিকেও এর আওতায় আনা যায়। এঁদের থেকে কর আদায় করাটাও প্রয়োজন। অবশ্যই, এরও পূর্বশর্ত হল, দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন।

    তিন। সরকারি কাজে আমলাতান্ত্রিক পুনরাবৃত্তি কমানো: প্রতিটি দপ্তরে একজন করে বিষয় বিশেষজ্ঞ্‌ এবং সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা প্রসেস কমসালট্যান্ট নিয়োগ করা। যারা একই সঙ্গে পদ্ধতিরও সরলীকরণ করবে, আবার ই-গভর্নেন্সেও কাজে লাগবে। ই-গভর্নেন্স চালু হলে এমনিতেই কিছু পরিমাণ সরকারি খরচ কমবে (স্টেশনারি, ফাইল রাখার জায়গা বাবদ)। পদ্ধতির সরলীকরণ করলে আরও কিছু কমবে। উদ্বৃত্ত কর্মীবাহিনীকে অন্য কোনো কাজে বহাল করা হবে (যেমন নজরদারির কাজে বা উন্নত পরিষেবার কাজে, যেমন দুটোর জায়গায় চারটে কাউন্টার খোলা ইত্যাদি।)।

    চার। ব্যয়সংকোচ এবং আয়ের বিকল্প সংস্থান।

    এ ব্যাপারে চিন্তায় অভিনবত্ব দেখানো প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ:

    ক। ঋণ পুনর্নবীকরণ। অসমর্থিত সূত্রের খবরে জানা যায়, যে, সরকার চড়া সুদে বহু ঋণ গ্রহণ করেছে, যার সুদ এখনও গুণে চলতে হচ্ছে। এখন নানা ক্ষেত্রে কম সুদে ঋণ পাওয়া সম্ভব। চড়া সুদের ঋণগুলি শোধ করার জন্য একই মূল্যের অল্প সুদের ঋণ নেয়া যেতে পারে।

    খ। প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিং। লাক্সারি রেসোর্ট, হাই এন্ড রেস্তোরাঁ , ক্যাফে, মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মলে ট্যাক্স বাড়ানো হোক।

    গ। ট্র্যাফিক আইন আরো শক্ত করা হোক ও তার নিয়মিত ও সঠিক প্রয়োগ করা হোক। নিয়মভঙ্গ করলে জরিমানা আদায় করা হোক। জরিমানার বদলে পুলিশের ঘুষ খাওয়া বন্ধ করতে ট্র্যাফিক পুলিশের সাথে মোবাইল ক্যামেরার বন্দোবস্ত করা হোক, যাতে ঘটনাটি পুরো রেকর্ডেড থাকে। নিয়ম বানানো হোক, যে ক্যামেরায় রেকর্ড করা না হলে গাড়ি থামানো যাবে না, আর থামানো থেকে শুরু করে ফাইন দেওয়া , পুরো অংশ ই-রেকর্ডেড হয়ে থাকবে। একটি শস্তার ডিজিট্যাল ক্যামেরার দাম একদিনের সংগৃহীত ফাইনেই উঠে আসা সম্ভব।

    এ দুটি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু সমস্ত স্তরে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।

    সব মিলিয়ে এই পদক্ষেপগুলি এ যেকোনো নীতি প্রয়োগেরই আবশ্যিক পূর্বশর্ত। দক্ষ প্রশাসন এবং দক্ষতর উপায়ে অর্থ ব্যবহার, না থাকলে যে কোনো নীতিই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এর পরে বিভিন্ন নীতির প্রশ্নে আরও নানাপ্রকার নির্দিষ্ট উপায় আসতে পারে, যা প্রশাসনকে দক্ষতর করে তুলবে, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের দ্বার খুলে দেবে।

    দুই। গুরুত্বপূর্ণ নীতিসমূহ।

    সরকারকে নানা বিষয়ে নানা নীতি গ্রহণ করতে হবে। সমস্ত বিষয়ে এই স্বল্প পরিসরে মতামত প্রকাশ অসম্ভব। এখানে দেওয়া হল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি নীতি, অর্থাৎ কর্মসংস্থান সম্পর্কে কিছু প্রস্তাব।

    কর্মসংস্থান

    ১। ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ থেকে পতিত , অনাবাদী জমি চিহ্নিতকরণ করা হোক।

    ২। এই অনুযায়ী সারা রাজ্যকে কৃষি, শিল্প, মাইনিং, ফিশারি , ফরেস্ট্রি , যেখানে যা অগ্রাধিকার পাবে, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা। এলাকাগুলিতে সার্ভে করে মানুষের সাথে কথা বলে কৃষি, শিল্প নিয়ে তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দাবি-দাওয়া, পরামর্শ শোনা ও সেগুলিকে লিপিবদ্ধ করা হোক। এই রিপোর্টগুলিকে জনতার নজরদারির আওতায় (public domain) রাখা বাঞ্ছনীয়।

    ৩। ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ থেকে পতিত , অনাবাদী জমিকে শিল্পের জন্য চিহ্নিতকরণ, যদি স্থানীয় মানুষ তাতে রাজি থাকেন। শিল্পের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের (পঞ্চায়েত ইত্যাদি) অনুমতি বাধ্যতামূলক হোক। ঐ অঞ্চলে রাস্তা, পরিবহন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পরিকাঠামো গঠন করা হোক। প্রয়োজনে প্রাইভেট কোম্পানীর সাথে পার্টনারশিপে।

    ৪। ভারি শিল্প হলে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে হোক। শিল্পপতিকে বিশাল মাত্রায় কর ছাড় ও ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ হোক। সরকারের সাথে এই ডিলগুলি প্রথম থেকে পাবলিক করা হোক। পূর্বশর্ত হিসেবে আরোপ করে লোকাল এমপ্লয়মেন্ট সুনিশ্চিত করা হোক। জমি নেবার পর থেকে শিল্পস্থাপনের অগ্রগতি মাপা হোক। সন্তোষজনক না হলে (জমি নিয়ে ফেলে রাখলে), একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর জমি নিয়ে নেওয়া হোক, এবং লাইসেন্স বাতিল করা হোক।

    ৫। বন্ধ কারখানাগুলি নিয়ে শীঘ্র কাজ শুরু হোক। যেখানে খোলা সম্ভব, উদ্যোগ নেওয়া হোক। নতুবা ঐ জমিতে নতুন শিল্পস্থাপন হোক। শিল্পের জন্য নতুন জমি অধিগ্রহণ না করেও বর্তমান অবস্থাতেই অনেক শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

    ৬। শিল্পপতিদের জন্য অবশ্যই সিঙ্গল উইন্ডো ব্যবস্থা চালু করা হোক, যাতে তাঁদের অকারণে লাল ফিতের ফাঁসে পড়তে না হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা যেন বিশেষ করে বিশেষ কিছু বড়ো শিল্পপতির জন্য না হয়। সাধারণ ব্যবস্থা হিসেবে যে আমলাতান্ত্রিকতা কমানোর প্রস্তাব ইতিপূর্বেই দেওয়া হয়েছে, এটি যেন সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আসে। নচেৎ বিশেষ সুবিধাভোগী একটি শিল্পপতি শ্রেণী তৈরি হবে, যারা রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে সাধু-অসাধু নানা সুবিধা ভোগ করবে, আর বাকি জনসাধারণের মধ্যে তৈরি হবে ক্ষোভ। যা মোটেই কাম্য নয়।

    ৭। এই সমস্ত শিল্পের ক্ষেত্রে, এবং সামগ্রিক ভাবে গোটা কর্মসংস্থানের প্রশ্নে, নূন্যতম মজুরির আইন এবং অন্যান্য শ্রম আইনকে কড়া হাতে পালন করা হোক। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, যে, নূন্যতম মজুরির বিধিকে লাগু করার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের মধ্যে একেবারে পিছনের সারিতে। এই গাফিলতি দূর করা হোক। একই ভাবে দীর্ঘদিন ধরে অসাধু ব্যবসায়ীরা শ্রমিক কর্মচারিদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য দেয় চুরি করেছে বলে শোনা যায়। এই প্রবণতাকেও কড়া হাতে দমন করা হোক। শিল্প হোক। শিল্পপতিরা নিয়ম মেনে, সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়েই শিল্প করুন, কিন্তু শ্রমিকের অধিকারও একই সঙ্গে রক্ষিত হোক।

    ৮। প্রতিটা শিল্পের সাথে সম্ভাব্য পরিবেশ দুষণের সম্ভাবনা আগে থেকে খতিয়ে দেখা, পরিবেশবিদদের কমিটি গঠন করে তাঁদের সাথে আলোচনা করে তারপর এগোনো।

    ৯। শিল্পগুলি করার সময় কলকাতা থেকে দূরে অন্যত্র বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভাবা হোক।

    ১০। ভারি শিল্পের বদলে শ্রমনিবিড় শিল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

    এ বিষয়ে দুটি রিসার্চ পেপারের উল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে ভারত ও প:বঙ্গের পক্ষে উপযোগী শ্রম নিবিড় শিল্পগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

    ক। পেপার এক: http://www.icrier.org/pdf/WorkingPaper237.pdf

    রিপোর্ট অনুযায়ী চর্মজাত দ্রব্য, বস্ত্র, জুয়েলারী, স্পোর্টস সামগ্রী তৈরি, বাইসাইকেল তৈরি, এগুলোকে লেবার ইন্টেন্সিভ শিল্প বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং এগুলিতে ভাল এমপ্লয়মেন্ট গ্রোথের ট্রেণ্ড ও সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয়েছে। প:বঙ্গে এই শিল্পগুলির বিকাশের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা উচিত।

    উক্ত পেপারে তিরুপুর আপারেল পার্কের মডেল অনুসরণ করে সরকারকে আরো পার্ক বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে কাপড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা (small garment manufacturer) নিজেদের সমবায় গঠন করেছেন, বড় বড় garment exporter রা এই সমবায়কে ব্যবসা আউটসোর্স করছে। যেখানে এই রিপোর্টে কোলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দু'টি শ্রম নিবিড় শিল্পের "হাব' এ এধরণের পার্ক তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, চর্মজ শিল্প ও জুয়েলারী শিল্প।

    এ ব্যাপারে পেপারে বলা হচ্ছে:

    The Apparel Park in Tirupur is fully functional and is assisting manufacturers exporters in meeting the burgeoning demand for apparels. We observed that large exporters are outsourcing orders to small manufacturers who operate out of this park. The large firms can work closely with units located in the park in terms of product specifications and quality. We recommend that the government should explore the possibility of setting up such parks in those districts of the states which are ?hubs? of labour intensive exports in leather, textiles, sports goods, bicycles, and gems and jewellery sectors with private initiative (from non-resident Indians and multinational corporations). In the case of sports goods, districts near Jalandhar and Meerut should be looked at for setting up of sports goods parks and; for gems and jewellery, districts near Chennai and Kolkata could be looked at for setting up gold jewellery parks.

    Similarly, districts bordering Ludhiana and leather goods production hubs like Chennai, Agra, Kanpur, Kolkata, and NCR too could be looked at. This would not only provide employment to workers near their homes thereby doing away with potential migration for employment opportunities but it would also generate revenue at the district level.

    খ। পেপার দুই। http://econ-www.mit.edu/files/2490

    এখানে বলা হচ্ছে, চাহিদা অনু্‌যায়ী ছোট শিল্প বানানো উচিত, যেমন শস্তায় এসি মেশিন, ইলেক্‌ট্রনিক চিপ, ঘড়ি, গৃহসরঞ্জাম, খেলনাপাতি (এগুলি সবই শ্রম নিবিড় শিল্প)। স্বল্প শিক্ষা, মূলধন ও দক্ষতা নিয়ে ও প্রফেশানাল ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও এই শিল্পগুলিতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা আনা সম্ভব, যেটা প:বঙ্গের জন্য আদর্শ।

    এই রিপোর্ট অনুযায়ী, প:বঙ্গে small scale industry স্থাপনের উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। "চাইনিজ' মডেলে এই শিল্প কীভাবে করা যেতে, তাই নিয়ে রিপোর্টের কিছু অংশ কোট করা হল:

    There is a big market potential for West Bengal small-scale units in the supply of cheap toys, stereos, watches and household implements to the rest of India. This is what China supplies to the rest of the world, and has formed the basis of their phenomenal industrial success in the past two decades. One can add to the list of high potential consumer products the following as wellx garments, leather, food processing, spare parts and metal-working, industries all of which have had a long tradition in West Bengal.

    The Chinese strategy is particularly attractive in being labour-intensive and broad-based. Under what is sometimes half ironically referred to as people?s capitalism, a lot of China?s output is produced in relatively small firms located in small towns and villages. The reason is that the products have been so chosen that an entrepreneur with limited education, little capital, semi-skilled workers and no professional management can still achieve a high level of productivity. One also observes similar patterns emerging in Punjab, though with a different product mix. Indeed West Bengal also has a long tradition of successful small-scale enterprises. The engineering workshops of Howrah were once famous all over India, and even now the small garment producers in Metiaburuj and elsewhere in south Bengal have a substantial presence in garment retail stores all over India. Moreover, West Bengal is now flush with savings waiting to be invested. It has a higher rate of small savings net collection per capita than richer states like Maharashtra, Gujarat, Karnataka and Andhra Pradesh. This is no doubt in part a result of agricultural prosperity in the state. A lot of these savings are presumably in small towns and rural areas, where labour is especially cheap. The diversification of agricultural production into a variety of non-food crops also provides promise for the development of agroprocessing industries.


    ১১। কৃষি অনুসারী শিল্পে গুরুত্ব দেওয়া। উদাহরণ স্বরূপ:

    ক। আলু: আলু থেকে শিল্পের কথা ভাবা যেতে পারে। বিশ্বের মধ্যে ভারত ও ভারতের মধ্যে প:বঙ্গ আলু উৎপাদনে প্রথম সারিতে। এই আলু থেকে নানা রকম শিল্পের (পটেটো চিপ্‌স, পটেটো ফ্লেক্স, মেশ, ড্রায়েড ক্যানড পটেটো) বিশাল মার্কেট রয়েছে, দেশে ও বিদেশে। প:বঙ্গে এর বিপুল সম্ভাবনার কথা ইদানিং কালে বেশ কিছু পেপার ও কনফারেন্সে উঠে এসেছে। অথচ এই আলুর অতিফলন একটি সমস্যা, এই জেরে একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করছেন। হিমঘরগুলির সংখ্যা বাড়িয়ে, তাদের আধুনিকীকরণ করে অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণ করা ও নিকটবর্তী অঞ্চলে আলুর শিল্প স্থাপন করলে চাষীদের সমস্যাও মিটবে, শিল্পের মাধ্যমেও কর্মসংস্থান হবে। এই শিল্পের জন্য ভারি শিল্পের মত প্রচুর জায়গা জমির প্রয়োজন নেই। কৃষিজমির কাছাকাছি ফাঁকা জায়গাতে করা সম্ভব। সিঙ্গুরে অধিগৃহীত জমি, যা আর চাষযোগ্য অবস্থায় নেই, সেখানে এই শিল্পের কথা ভাবা যেতে পারে।

    খ। মালদা মুর্শিদাবাদের আম: বিশাল বড় শিল্পসম্ভাবনা আছে লোকাল এবং ন্যাশনাল মার্কেটে। সারা পবঙ্গের মিষ্টি। আরো প্রচুর কুটির শিল্প। রাজস্থান তাদের কটেজ ইন্ডাস্ট্রির প্রডাক্ট নিয়েই এক্সেল করে যাচ্ছে। পাঁপড় আচার কাচের চুড়ি। গুজরাত করছে। আমূল এক ভালো কেস স্টাডি। এই রকমের কিছু আমাদের রাজ্যেও ভাবা যেতে পারে।

    গ। চা শিল্প: চা বাগানগুলি একের পর এক বন্‌ধ হচ্ছে। অথচ দেশে বিদেশে চাএর চাহিদা কিছুই কমেনি। ইন্টারন্যাশানাল বাজারে চীনের নানারকম ফ্লেভারের হারবাল টি-র রমরমা। এধরণের ব্যবসা দেশেও শুরু করার কথা ভাবা যেতে পারে।

    ঘ। পাটজাত শিল্প, নানা ধরণের স্ন্যাক্স, আচার, পাঁপড় জাতীয় খাদ্যশিল্প। এগুলি সমবায় প্রথায় মহিলা গ্রামোদ্যোগ সমিতি গঠন করে করা যায়। এগুলির চাহিদা কিন্তু বিদেশেও বিপুল। সেই চাহিদাকে ব্যবহার করা যায়।

    এই সব রকম শিল্পের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ সংস্থা চালু করা ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থান।

    ১২। কর্মসংস্থানের, প্রশিক্ষণের প্রশ্নের সঙ্গে অতি অবশ্যই একশ দিনের কাজের প্রকল্পকে যোগ করা হোক। একথা সর্বজনবিদিত, যে, পশ্চিমবঙ্গ একশ দিনের কাজ রূপায়ণের প্রশ্নে একেবারে নিচের সারিতে। বহু টাকা বহু জেলা থেকে অব্যবহৃত হয়ে ফেরত চলে যায়। কিন্তু এর সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেক সময়ে নজর এড়িয়ে যায়। টাকা খরচ করতে হবেই বলে, বহু সময়েই যেন-তেন-প্রকারেণ কোনো একটি কাজ করিয়ে টাকা খরচ করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ফলে যেখানে পুকুরের প্রয়োজন নেই, সেখানে পুকুর খনন হয়। নলকূপ খনন অর্ধেক হয়ে পড়ে থাকে। ইত্যাদি।

    এই অ্যাড-হক এবং পরিকল্পনাহীন খরচের বিপরীতে নিয়ে আসা হোক পরিকল্পনাকে। প্রয়োজনীয় কাজগুলিকে খতিয়ে দেখা হোক, এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কাজে নামা হোক। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণও একটি কাজ। আচার থেকে শুরু করে পাটজাত দ্রব্য বানানো, সবই উৎপাদক কাজ। এই কাজগুলির সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি এজেন্সিগুলির (যথা তন্তুজ বা তন্তুশ্রী) সংযোগ স্থাপন করতে পারলে তাদের কাজও কম খরচে হবে, আবার সংশ্লিষ্ট মানুষরাও ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারবেন।

    তন্তুজ বা তন্তুশ্রী এখানে উদাহরণ মাত্র। কিন্তু আসল কথা হল যথাযথ পরিকল্পনা এবং তার সঙ্গে নানাবিধ প্রকল্প, যথা একশদিনের কাজের প্রকল্পকে জুড়ে নেওয়া।

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    পরিশিষ্ট: বিভিন্ন দফায় বেশ কিছু মানুষের মতামতকে মোটামুটি একত্রিত করে এই প্রাথমিক একটি খসড়া বানানো হল। মতামত দিয়েছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ ভট্টাচার্য, শমীক মুখোপাধ্যায়, ঈপ্সিতা পালভৌমিক, পিনাকী মিত্র, সোমনাথ রায়, অরূপ চক্রবর্তী, রঞ্জন রায়, অনির্বাণ বসু ,চিরন্তন কুণ্ডু, কল্লোল দাশগুপ্ত, সৈকত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ । সংকলন করেছেন সৈকত ও ঈপ্সিতা। আরও অজস্র মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকলের মতামত পেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ইত্যাদি আরও নানা বিষয়ে বিশদ এবং বহুমুখী কিছু প্রস্তাব পেশ করা যাবে।

    এই খসড়াটি অত্যন্ত তাড়াহুড়োয় লেখা। কিছু বানান ভুল, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বাদ পড়ে যাওয়া, এসব নি:সন্দেহেই থেকে গেল। আশা করা যাচ্ছে, এটি একটি দীর্ঘতর কথোপকথন হতে চলেছে। অতএব, পরবর্তী খসড়ায় এই ত্রুটিগুলি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৪ মে ২০১১ | ১৩৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন