নিরপেক্ষতা
মজার ব্যাপার হল, পক্ষ বিপক্ষ এবং নিরপেক্ষ— এই নিয়ে আমার-আপনার-সবার রোজকার দেখা-ভাবা-শোনা-বলায় এত যে ভেদ— মাথা-ফাটাফাটি— বাদ-প্রতিবাদ— ভোটতন্ত্রের সাপেক্ষে সবই কিন্তু মায়া! খানিক খতিয়ে ভাবলেই যা-কিনা খসে পড়তে বাধ্য। আগ্রহী ভোটতন্ত্রসাধকের ক্ষণিক সঙ্গ পেলেই, এ-লেখা হয়ে উঠতে পারে সে পথের পথিক— অবিলম্বে।
দেখুন, সাধারণভাবে আমি-আপনি যতই 'পক্ষ'-র বিপরীতে 'প্রতিপক্ষ', 'বিপক্ষ' বা 'বিরোধীপক্ষ' মার্কা শব্দগুলো ব্যবহার করতে চাই-না-কেন, ভোটতন্ত্রে তা আদতে 'পক্ষ'-র নামান্তর, অর্থাৎ একাধিক 'পক্ষ' মাত্র। আমার কথার অভিপ্রায় আরো খানিক খোলসা করতে, একটা বাস্তবিক বোঝাপড়া হাজির করা যাক বরং। ধরা যাক পশ্চিমবঙ্গের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, আমি কোন কোন দলকে ভোট দেব না স্থির করলাম। সেক্ষেত্রে ভোটতন্ত্রের কাছে আমার এই গুচ্ছ-সিদ্ধান্তের কোনোই মূল্য আছে কি? আমি কার কার বিপক্ষে, আপনি কার কার বিপক্ষে, সেসব না— আমি-আপনি কার পক্ষে একমাত্র সেটাই গুরুত্বপূর্ণ এখানে। অর্থাৎ কাকে ভোট দেব, সেটাই শুধু বিচার্য, পক্ষ-অবলম্বন প্রক্রিয়াই এক এবং একমাত্র মান্য ক্রিয়া। চায়ের দোকান বা টিভি চ্যানেলের আড্ডায় ধরুন আপনি আর আমি পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে রোজ গা-গরম করি, কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখুন, ভোটতন্ত্রের বিচারে এসব বাজারি-বিরোধের আদৌ কোনো স্থান আছে কি! ভোটতন্ত্রে সকলই কেবল পক্ষ, এমনকি খানিক ছাগলের তৃতীয় সন্তান মার্কা নিরপেক্ষতা— নোটা— সে-ও!
অধীর পাঠক বিরক্ত হয়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন,বৃদ্ধ-গণতন্ত্রের পোড়-খাওয়া নাগরিক হিসেবে এসব কথা তো সকলেই জানি হে, মোদ্দা কথায় এলে বরং সময় বাঁচে খানিক। সেক্ষেত্রে আমার সপাট প্রশ্ন হল,ভোটতন্ত্রে নিরপেক্ষতাও কি পক্ষপাতগ্রস্ত তবে?
অনির্বাণকে আমি প্রথম দেখি পুলিশ ট্যাগিং করানোর সময়। চাকরিসূত্রে ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে সেবারই আমার প্রথম ডিউটি । প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা। বুথভিত্তিক নিরপেক্ষতা প্রতিপালক! ইতিপূর্বে জীবনের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের সরাসরি কোনো যোগ না-থাকলেও, কর্পোরেশন ভোটের নিরিখে এটুকু অন্তত বুঝতাম, নিরপেক্ষতার মতো নির্গুণ বস্তুর প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা কোন ভোটে বেশি, আর কোন ভোটে কম। জানতাম, ভোট যত নিম্নকোটির, নিরপেক্ষতার প্রকট হয়ে ওঠার প্রসঙ্গ সেখানে, ততই অবান্তর।
জুতোয় পেরেক থাকায় সবেতেই দেরি হয়ে যাওয়ার প্রবাদ যাঁদের মনে আছে, জানবেন, আমার জুতোয় গজাল। সেসব সামলে আমি যে-সময়ে ফাইনালি সেই হট্টমেলার মাঝে (টেকনিকালি যাকে DC/RC অর্থাৎ Distributing Centre/Receiving Centre বলা হয়; মানে যেখান থেকে ভোটের মালপত্র নিয়ে ভোটকর্মীরা বুথের জন্য রওনা হন এবং ভোট শেষে এসে সবকিছু জমা করেন) গিয়ে হাজির হলাম, পাওয়ার মতো পুলিশ আর একজনও তখন পড়ে নেই সেখানে। বাকি যাঁরা— এইচ জি— হোমগার্ড! পুলিশ ট্যাগিং-এর ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি গলা তুলে হাঁকাহাঁকি শুরু করতেই, মুখ ভরা হাসি নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল এক তরতাজা দাবাং যুবক— আমাদের বুথের সশস্ত্র নিরপেক্ষতা রক্ষক— চুলবুলে অনির্বাণ।
— 'অনেক দেরি করে ফেললেন তো স্যার! আমিও লেটে এসে হেব্বি ঝাড় খেয়েছি। দেখে মনে হচ্ছে এটাই প্রথম? আপনার নামটা স্যার? আমি অনির্বাণ।'
— 'সুদীপ। হ্যাঁ, এই প্রথম।'
— 'আমারও। চাপ নেবেন না স্যার একদম। বাকিদের পেয়েছেন?'
— 'হ্যাঁ। ওদিকে ছায়ায় বসে আছেন সবাই। আপনি হলেই দল সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।'
— 'আচ্ছা স্যার। আপনারা বাসে চলে যান। আমি একটু ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে সোজা বাসে চলে যাচ্ছি।'
আধা ঘণ্টা প্রায় হতে চলল আমাদের দলের চারজন পোলিং অফিসার, অন্য আরও দুটি দল এবং তাঁদের সশস্ত্র দুজন রক্ষী বাসে অপেক্ষা করে চলেছি, অনির্বাণের পাত্তা নেই কোনো...
নিরপেক্ষতা এবং ভোটতন্ত্র! ভাবা যাক, নিরপেক্ষতা যখন একটা পক্ষেই পরিণত হয়, ভোটারের সাপেক্ষে অন্তত— নোটার মাধ্যমে— কেমন চেহারা দাঁড়ায় ব্যাপারটার? 'None Of The Above'— থেকে গড়ে ওঠা এই NOTA— যা-কিনা সবার নীচে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে 'ওপরের কারুরই নয়'— নিরপেক্ষ তো দূর, পক্ষ পেরিয়ে বরং প্রতিপক্ষ— ওপরের সকলের প্রতিপক্ষ বলেই তো তাকে মনে হয় যেন। সবার শত্রু! বেড়ে বিরোধী! পেকো প্রতিবাদী! হাড় হারামি! যেঁচে একঘরে! ধোপা-নাপিত...
থাক সেসব পরে হবে না-হয়। এখন কথা হল গিয়ে, এমন একটা অবস্থানের কোনো প্রয়োজন— বাস্তবতা— একচুল ঠাঁই আছে বলে মনে না-করাটাই ছিল ভোটতন্ত্রের দীর্ঘদিনের রীতি-রেওয়াজ। অবশ্য গণতন্ত্রের ময়দানে আমাদের বড়দা, আমেরিকা, গত শতকের সাতের দশকেই (১৯৭৬) ব্যাপারটা নামিয়ে ফেললেও, এতদিন নোটাকে ভোটতন্ত্রে অঙ্গীভূত করেননি আমাদের দেশচালক সম্প্রদায়— ভোটতন্ত্রের গুরুকূল। গুগল জানাচ্ছে, ২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশন কথা তোলার পর, অবশেষে ২০১৩ সালে গিয়ে মঞ্জুর হয় নোটা। লোকসভা ভোটে ২০১৪ সালে নোটায় ভোট পড়ে ১.১%, যা সংখ্যায় ছিল ষাট লক্ষের সামান্য বেশি (তথ্য-প্রাপ্তি/ভ্রান্তির কৃতিত্ব লেখকের নয়, গুগলের)।
সংখ্যার হিসেব দিয়ে যদিও বুঝে ওঠা যায় না কিছুই, তবু, ষাট লক্ষেরও বেশি মানুষ সবার শত্রু হওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন— ভোটতন্ত্রের কাছে এ কি কোনো সামান্য কথা হল! এই পরিসংখ্যান পাওয়াটাই আসলে হয়ে উঠল খুব জরুরি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ কিন্তু ভোটতন্ত্র-সাধক, বিশ্বাসী, অথচ, সাধনার প্রতিষ্ঠিত কোনো মার্গেই যেতে এঁরা অনিচ্ছুক! ভোটতন্ত্রের আসলে খুব জানতে ইচ্ছে করে, সাধক সংখ্যার বাড়া-কমা ভিত্তিক প্রতিটা খুঁটিনাটি তথ্য। কখন কোন পথে যে বিপর্যয় ঘটে যায়, বলা যায় নাকি কিছু! কাজেই প্রয়োজন সদা সতর্ক সহস্রদৃষ্টি!
উপায় নেই, তবু আমারও খুব জানতে ইচ্ছে করে, নোটার প্রতিটা ছোটোখাটো কথা। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ কি হঠাৎ করেই অনুভব করলেন, 'যত মত তত পথ'! এবং, সেই অনুভবের তাড়া খেয়ে পথ হারাবেন বলেই নেমে পড়লেন পথে! নাকি এঁরা আগে ভোট দিতেন না, হঠাৎই... নাকি...
উপায় নেই জানার। অসংখ্য সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ সার্থক ছোটোগল্প। শেষ হয়েও শেষ হবে না। ভোটতন্ত্রের এসব জানতে লাগে না। লাগে শুধু পরিসংখ্যান, যা থেকে বিপন্নতা আঁচ করা সম্ভব। কাজেই নোটা সারিবদ্ধভাবে ওপরে উপস্থিত সকলেরই শুধু নয়, ভোটতন্ত্রেরও পরোক্ষ-প্রতিপক্ষ! যে কারণে নোটার নির্মাণকল্পে ভোটতন্ত্রের খোঁজ মনে করায় বাবুরাম সাপুড়ের কথা, জ্যান্ত অথচ ছোটা-হাঁটা-কাটার ক্ষমতা বিহীন সাপ চাই— ডান্ডার ঘায়ে ঠাণ্ডার ব্যাপারটা অবশ্য শর্তসাপেক্ষ এবং আপাত উহ্য!
বাসে বিরক্তির গুমোট পরিস্থিতি বেশ স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি। টানা চল্লিশ মিনিট কেটে গেছে একটা খাটারা মিনিবাসে। গ্রীষ্মের ভরদুপুরে ওই টিনের খোলের মধ্যে কাঁহাতক বসে থাকা যায় আর! অনির্বাণের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে সমালোচনায় আর গায়ের জ্বালা কমছে না কারুরই। ক্রমশ ব্যাপারটা এবার খুবই ভদ্রতার ভঙ্গিতে আমার দিকে টার্ন নিতে শুরু করেছে। এমনটা আর কিছুক্ষণ চললে ভদ্রতার প্রলেপও যে গরমে গলতে শুরু করবে, বেশ বুঝতে পারছি।
পঁয়তাল্লিশ পেরিয়ে গেল। অনির্বাণ নেই। সজোরে দরজাটা খুলে নিজের সিট থেকে নেমে পড়ল বাস ড্রাইভার।
—'আমার নম্বরটা আছে তো, নাকি হারিয়ে ফেলেছেন? দেখে নিন। মালটা এলে ফোন করবেন আমায়। চলে আসব।'
নীচ থেকে আমার পাশের জানলায় মুখ বাড়িয়ে কথাগুলো বলেই হাঁটা লাগাল বাস ড্রাইভার। বেগতিক বুঝে আমিও 'খুঁজে আনছি' বলে বাস ছাড়লাম। আমার পিছন পিছন কিছু না-বলেই, যেন ওঁরাও খুঁজতেই যাবেন, এমন ভঙ্গিতে নেমে এলেন অনেকেই। শৃঙ্খলাপরায়ন একত্রিত ভোটকর্মীরা এক অনির্বাণের খোঁজে আবারও ছড়িয়ে ছত্রাকার।
খুব বেশি যেতে হল না। দেখা পাওয়া গেল অনির্বাণের। খোশগল্পের মাঝে দূর থেকে আমায় দেখেই ছুটতে ছুটতে আসছে। মুখের হাসিটা শুরুতে যেমন দেখেছিলাম, একই রকম এখনও।
— 'চলুন চলুন স্যার! অনেক দেরি হয়ে গেছে!'
—'সেটা এতক্ষণে মনে পড়ল আপনার! অতগুলো লোক আপনার জন্য ঠায় বাসে অপেক্ষা করছে!'
— 'একটা ফোন করবেন তো...
— 'তার কোনো উপায়—'
— 'এ বাবা! ভেরি সরি স্যার! মাইরি মনে ছিল না! আমি ভেবেছি ফোন নম্বর তো আছেই আপনার কাছে...'
নিজের ভুলের মাত্রাটা যেন হঠাৎই টের পেয়ে, আবার করে বাসের দিকে যেতে ছুটতে শুরু করল। আমিও ওর পিছু নিলাম। বাসে উঠে দেখলাম একমাত্র আমাদের দলের ফার্স্ট পোলিং, নীলোৎপল বাবু ব্যতিরেকে সবাই উধাও।
উপায় নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হল, ভোটতন্ত্রের কাছেও তা চিরকাল ছিল কি? EVM অর্থাৎ Electoral Voting Machine নামের বস্তুটি আমাদের দেশে মোটামুটি চালু হয়েছিল নয়ের দশকের একেবারে শেষে। যদিও গুগল জানাচ্ছে দেশের সর্বত্র এর ব্যবহার শুরু হয় সেই ২০১৪ সালেই। সুতরাং ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ে ওঠার যাত্রাপথেই, নোটার ডেটা সংগ্রহ করার সহজ উপায় যে ভোটতন্ত্রের হাতে এল, এ-কথা বুঝতে অসুবিধা তো দেখছি না কিছু। সাধারণ বুদ্ধিতেই যদি ভাবি, তাহলেও কিন্তু খুব স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় বিষয়টা।
দেখাই যাচ্ছে ভোট যখন ব্যালটে নেওয়া হত অথবা হয়ও, তখন কিন্তু নোটার প্রসঙ্গ বেমালুম চেপে যাওয়াটাই রেওয়াজ। যেমন ধরুন, আমাদের রাজ্যের শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের (২০১৮) কথা— নোটার কোনো অপশন কিন্তু সেখানে রাখাই হয়নি। আসলে ব্যালট গুনে নিরপেক্ষতা নির্ণয়ের মতো ফালতু কাজে সময় নষ্ট করা কি আর ভোটতন্ত্রের পোষায়! কিন্তু নিদেন প্রযুক্তির প্রযত্নে উপায় যখন আপনিই এসে ধরা দেয় হাতে, তখন আর তাকে খামোকা উপেক্ষা করা কেন! কাজেই সংগৃহীত হতে শুরু করল নোটার ডেটা। আগামী নিরাপত্তার প্রতিটি সূক্ষ্ম পরতের পর্যবেক্ষণ! নিরপেক্ষতার ছাতার তলায় দল বাঁধা প্রতিপক্ষের বুথভিত্তিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ!
নোটা নিয়ে আরও বিচিত্র যে ব্যাপারটা ঘটছে এবং ঘটেই চলেছে— সে প্রসঙ্গে খানিক কথাবার্তায় আসা যাক এবার। এই সেদিন, মানে এই ২০২১ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে 'টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া' কাগজে একটা খবরে চোখ আটকে গেল। খবরটির মোদ্দা কথা হল, নোটা চালু করার অনুমতি দেওয়ার আট বছর পরেও আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, সেন্টার এবং ইলেকশন কমিশনের কাছে জানতে চাইছেন, নোটার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কোনোভাবে কোনো কেন্দ্রে সর্বাধিক হয়ে দাঁড়ালে, আইনত, সেই কেন্দ্রের দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়ে জয়ী প্রার্থীকে কি পরাজিত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে! মহামান্য আদালতের এই ভাবনার উদ্যোগে, নোটার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে বলেই হয়তো মনে করছেন/করবেন অনেকে— এবং আমরাও। কিন্তু আসল কথা হল গিয়ে খানিক গভীরতর। নোটার অর্থ এখন যেমনটা বোঝানো হচ্ছে, তাতে নোটা যেন কোনো কেন্দ্রে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদেরই কেবল অপছন্দ করছে, বা প্রত্যাখ্যান করছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তাই এমনটা করার কথাই শুধু ভাবা হচ্ছে যে, কোথাও নোটার ভোট সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থীকে ছাপিয়ে গেলে, ওই কেন্দ্রে আবারও ভোট করা হবে এবং পুর্বের ওই প্রার্থী আর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না।
এখন কথা হল গিয়ে এমনটা কে কাকে কবে কোথায় এবং কীভাবে বলে দিল, কেমনেই-বা গেল ভোটতন্ত্রের কানে এ-কথা, যে, নোটায় যাঁরা ভোট দিচ্ছেন, তাঁরা শুধু ওই কেন্দ্রের প্রার্থীর প্রতিই তাঁদের অপছন্দের কথা জানাচ্ছেন! None of the above— অপশন শুধু কেন ব্যক্তিকেই খারিজ করার অধিকার পাবে? দল কি এক্ষেত্রেও ব্যক্তির ঊর্ধ্বে থেকে যাবে! সিন্ধুতে বিন্দু দর্শনের এই প্রক্রিয়াই অবশ্য ভোটতন্ত্রের সার্বিক এবং সার্থক প্রবণতা। বাবুরাম সাপুড়ের কথা কী আর সাধে ফিরে ফিরে আসে! যথাযথ সাপের সাপ্লাই সে শীঘ্রই করল বলে...
ড্রাইভারকে ফোন করার বেশ খানিক পরে তিনি এসে হাজির হলেন। ততক্ষণে বাকি সবাই একে একে ফিরেছেন বাসে। নানান রকমের চাহনি এবং টিপ্পনি নীরবে সহ্য করতে করতে অনির্বাণ শেষমেশ চোখে চাপিয়েছে একটা দাবাং চশমা! ড্রাইভার নিজের সিটে বসেই যদিও সপাটে ছুঁড়ে দিলেন ধিক্কার—
— 'কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? টাইমের একটা ব্যাপার আছে তো, নাকি? আজব সব লোক শালা!'
—'আরে বাথরুমে যেতে হত। বন্দুকটা দিয়ে যাওয়ার মতো খুঁজে পাচ্ছিলাম না কাউকে! যা হালত বাথরুমের, বন্দুক নিয়ে তো আর ওখানে ঢোকা যায় না! বললেই হল! টাইম কি আমার মাথায় নেই নাকি!'
বন্দুক আর বাথরুমের ব্যাপারটায় আমার ভাবনা সবে হারাতে শুরু করেছে, এমনই সময় বাজে শব্দ করে বাসটা স্টার্ট নিল— অবশেষে।
বেশ লেখা।
শুধু প্রিসাইডিং অফিসারদের অভিজ্ঞতা দিয়েই একটা চটি হয়ে যায়। এলেবেলেবাবু আর বাকি যাঁরা গুরুতে লেখেন আর এই ভোটের কাজ করেছেন বা করছেন তাঁদেরও লিখতে বলা হোক!
তবে একটা কথা: যতদূর জানি EVM হল Electronic Voting Machine-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
আজকের পরে বোধি ও এলেবেলে লিখুন না!
বর্তমান লেখকের হাতটি ভাল। আরও পড়তে চাই।
E=Electoral বোধহয় ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ!