এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ছলাৎছল, মূষিকেরা এবং একটি জ্যোৎস্না

    পার্থসারথি গিরি লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮ | ১৩০৩ বার পঠিত
  • তবে কি এইখানে দিকবলয় বাসনারহিত? নদীর পিঠের ওপর কৃষ্ণকামবারি বারিধিসম্ভূত? স্থলভাগের পদপল্লবে এই ঊর্মিমালা এই লবণাক্ত এই মীনরঞ্জিত, এ কি প্রচলিতকে প্রত্যাখ্যান করে? তবে চলুন পাঠক, এই ঘাটলায় এসে দুদণ্ড বসি দুজনে।

    এই সন্ধ্যাকালে স্রোতধারা মৃদুস্রাবী, পরিবৃতা। ভাঙা শাঁখার মতো দিকবলয়ের গায়ে বলয়িত হয়ে আছে চন্দ্রমা, স্ফটিকরাজির মতো তারার কুচি ছড়াবে সন্ধ্যা সমাগত হলে। উচ্চকিত আলো থেকে হঠাৎ এইখানে চোখে ধাঁধা লেগে যেতে পারে। চোখ সয়ে এলে দেখা যাবে জলের ওপর একটি পানসি। ধারালো কিরীচের মতো।

    চাঁদের ক্ষতমুখ গলে গেলে রস ক্রমে গড়িয়ে গড়িয়ে নামে মাতলার জঙ্ঘা বরাবর, এইখানে মাতলা পূর্বমুখী এবং পাড়ঘেঁষা। এইবার স্পষ্ট হয়েছে পানসির ওপর দুটি স্ত্রীলোকের ছায়ামূর্তি। বাতাসের ধাক্কায় হালে কচর কচর শব্দ হয়। পানসি আলতো কেটে কেটে দিচ্ছে জোছনামাখা নদীজলকে। দাঁড় দুটি ছোট ছোট ঢেউয়ের ধাক্কায় জলের ওপর ভেসে আছে অল্প গতির কারণে। ক্রীড়াবশত একটি শুশুক দাঁড়ের গায়ে পিঠ বুলিয়ে ফের ডুবসাঁতারে অতিদূর।

    স্ত্রীলোক দুটি নগ্ন দণ্ডায়মান এবং নিগূঢ় চুম্বনরতা। তাহাদের পাতলা জ্যালজেলে শাড়ি কিছু জলে, কিছু পাটাতনে সর্পিল লুন্ঠিত। কোনো শিৎকার নাই, গন্তব্য নাই। পানসির এক কোণায় মাটির হাঁড়ির ভিতর কতকগুলা কাঁকড়া খড় খড় করে শাপান্ত করে। সে সময় তীরবর্তী বাঁশবনে ঝাড়ে ঝাড়ে তুমুল কলরোলের স্মৃতি। তুমুল কোজাগর রতিরাতের ছায়া। কিঁচ কিঁচ কিঁচ কিঁচ।

    ~~~~~~~~~


    বছর চারেক পূর্বে এক রাতে টগরের প্রথম এবং শেষ গর্ভযন্ত্রণা উঠেছিল। টগরের সোয়ামি জনার্দন পেশায় মউলি। অতি শৈশবে রায়তারার জঙ্গল থেকে মধু নিয়ে ফেরার সময় তাকে বাঘে ধরেছিল বলে পিঠময় দাগড়া দাগড়া দাগ এবং তার বাঁ হাতে চারটি আঙুল। জনার্দন খালি গায়ে, নিম্নাঙ্গে একটি গামছা পরে ঘরের বাইরে দাওয়ায় বিড়ি টানছিল এবং সে ভোরের অপেক্ষায়, টগরকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবে ভোর হলে। দূরে কেয়াবনে শিয়াল ডেকে ডেকে উঠতে তার ঝিমুনি তদনুরূপ তরল হয়ে জোড়া লাগার আগে ঘরের বন্ধ কপাটের দিকে আলগোছে তাকিয়ে ফের ঢুলে ঢুলে পড়ছে।

    নদীক্রোড়ের এই ভূমিতে তখনও কোনো টায়ারের দাগ নেই। দুটি পুরুষ ধুতি গামছা বাঁশে বেঁধে ডুলি বানায়। তার মধ্যে আধশুয়ে প্রসূতিরা পাড়ি দেয় সরকারি ট্রেনড নার্সের টেবিলে। কেউ মাঝপথে মরে যায়, যারা পৌঁছোতে পারে, মোটাসোটা ইঁদুরের মতো মানবশিশু প্রসব করে। ডাক্তার কাগজে খসখস করে অপুষ্টির নিদান লিখে দেয়। সে শিশু এক ঝিনুক দুধ পেল কি পেল না, কুচো মাছের ঝালমাখা চটকানো ভাত খেতে শিখে যায় হামাগুড়ি দিতে দিতে।

    লেফ্ট ফ্রন্টের শাসনকালে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নামক বস্তুটির আবির্ভাবের পূর্বে বাঁশের ছিলে দিয়ে নাড়ি কেটে দিত বংশপরম্পরায় ধাই মেয়েছেলে। একটু ঘুঁটের ছাই গুঁজে দিত নবজাতকের নাভিমূলে, কখনও বা তীব্র তপ্ত তেঁতুল বিচি পোড়া। এসব নাকি প্রকৃতির অ্যান্টিসেপটিক। তবু পোকা খেয়ে ফেলত কিছু কিছু শিশুদেহ নামকরণের আগেই।

    অনতিদূর নদীবাঁধের গর্তে তখন মেঠো ইঁদুর ও গোখরোর মারণখেলা। ঝিমুনিরত জনার্দনকে চমকে দিয়ে ভোররাতে টগর হা হা করে কেঁদে উঠেছিল ঘরের মধ্যে। সারারাত পাশে বসেছিল কমলা। প্রায় সমবয়সী আরেকটি স্ত্রীলোক। কালো কষ্টিপাথরের কুমারীর দেহ যেমন হতে পারে তেমনই, কেবল বুক দুটি বিষমায়তন, পীনবৃন্ত। সে তীক্ষ্ম চিলের মতো চিৎকার করে উঠেছিল।
    হায় মাগো...এ কী এটা কী গোওওও...
    ঘরের মধ্যে কেরোসিনের কুপিটি কেন কে জানে ফস করে নিভে গিয়েছিল সেই মুহূর্তে।

    জনার্দন ঘরে দৌড়ে আসে, তড়িঘড়ি গামছার খুঁট থেকে দেশলাই বার করে কুপিটি জ্বালে এবং বিস্ফারিত নয়নে দেখে টগরের অকস্মাৎ প্রসবে রক্তরসভরা জন্মথলির ভেতর থেকে সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসছে একটি বৃহৎ রক্তকাঁকড়া যেন। গুনে দেখল ছটা পা প্রাণীটির, ক্ষুদ্র একটি মস্তক, দেহ বর্তুলাকার, অক্টোপাসতুল্য এবং সে কাঁদতে পারে।

    ঘরের ভিতর আরো তিনটি প্রাণীর সংবিত ছিল না বেশ কিছুক্ষণ। সদ্যপ্রসবিনী গর্ভযন্ত্রণার কারণে প্রায় মূর্ছিতা, বাকি দুজন বাকরহিত এবং ভীত যুগপৎ। নিঃশব্দে একটি বাদুড় ঝুলে আছে খড়ের চালের বাতায়।

    কর্কটরূপী মানব শিশুটির বুকের কাছে হৎস্পন্দন স্পষ্টতর। দপদপ করছে নরম লালচে অর্ধতরল ত্বক। একপ্রকার কুঁই কুঁঅ্যাঁ শব্দ বেরোচ্ছে মস্তকটির একটি ছিদ্র দিয়ে। জনার্দন সজোরে কুপিটিকে ছুঁড়ে মারল শিশুটির ওপর। সেইক্ষণে শিশুটি নিষ্পন্দ হল এবং টগরের শাড়িতে জ্বলে উঠল মরণশিখা।

    মর মর মর ডাহানি খানকি...মরি যা ডাহানি...ভয়ার্ত জনার্দন নদীবাঁধের দিকে দৌড়োল। পরণের গামছা বেড়ার গায়ে আটকে পিছে থেকে গেল। অন্ধকার ঘরের ভিতর অর্ধোলঙ্গ আগুনে সেঁকা এক মাকে বুকে আঁকড়ে বিকৃত অস্ফুট অর্থহীন সান্ত্বনারত কমলা। চালের বাতায় বাদুড়টি কাপড়-পোড়া ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে দরজা দিয়ে উড়ে বেরিয়ে পালায়।

    "কাঁদুটু কেনে রে টগরা...এ বাচ্চা কি তোর একলার? সোয়ামির কুন দোষ নাই কইতে চাউ? মেয়াঝি ডাহানি হিলে পুরুষ বি রাক্ষস। এ ক্যাঁকড়ার মিন তার অঙ্গ থিকাই বারাইছে।"

    টগর তখন উন্মাদ পোড়া কাক। গর্ভরসে রক্তে স্নাত উলঙ্গ একটি মাতৃদেহ যেন বিস্রস্ত কুহকিনী, সেও দৌড়োল নদীবাঁধের দিকে। পিছে কমলা... কই যাস টগরা, খাড়া হ রে বনবিবির কিরা...যাসনি রে...

    ভাঙা শাঁখা চাঁদভাঙা রস ছড়ানো ভূমিময়, চুড়চুড়ি ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে টগরের ধ্বস্ত দেহ। কমলা থাই পেতে দিয়েছিল টগরের মাথার নিচে। নিশ্চিন্তির কেঁচো মাটি ঝুরে ঝুরে চুলের ভিতর ঢোকে। ইতর প্রাণ যদি বুঝেছিল নতুনের ঘ্রাণ, তাই কিলবিল করে টগরের দেহতলে।

    টগরের নগ্ন অবয়বে হাত বোলাতে বোলাতে কমলা তার শাড়িটি যেন অধিক শোকে ছুঁড়ে দিল আঁধার জলে। কঁ কঁ কঁ কঁ মৈথুনরত রাতচরা ডানা ঝাপটায় লালচে পুরু পুরু সুন্দরীপাতার ঘরে। তখন দুটি নির্বাক মৃতবৎ নগ্ন নারী পরস্পরে অঙ্গে অঙ্গে ঘনসংবদ্ধ, মৃত্যুর খুব নিকটে। কারণ এমন রাতে জোছনাকুচিকেও গোখরো কামড়ে ধরে ভ্রমে।

    পরদিন তিনটি মানুষের মধ্যে দুজন ঘরে ফিরেছিল। একজন ফেরেনি। তারপর থেকে জনার্দনকে কেউ দেখতে পায়নি। হাতুড়ে মলয় ডাক্তার বলেছিল শেষরাতে রুগি দেখে ফেরার সময় ওপারের জঙ্গল থেকে একটা মানুষের তীক্ষ্ম আর্তনাদ শুনেছে। শুনে সবাই জিভ কেটেছিল, এ জঙ্গলের কুহক ডাক। দক্ষিণরায়ের ক্ষুধার আর্তি। অর্থাৎ জনার্দনকে বাঘেই খেয়েছে। অতীতে একবার ধরেছিল, বেঁচে ফিরেছিল, এবারে গেল।
    কেউ বলেছিল, মাইল তেরো দূরে পটুয়াঘাটের কাছে নদীর শ্যাওলা কচুরিপানার দঙ্গলে একটা নগ্ন মৃতদেহ আটকে ছিল কয়েকদিন। চেনার উপায় নেই। ফুলে ফেঁপে, কামটের কামড়ে কামড়ে বিক্ষত পচা গলিত দেহে জীবৎকালের কোনো চিহ্নের অবশেষ নেই। সে জনার্দন হতে পারে, নাও হতে পারে।

    ~~~~~~~~~


    মাতলা থেকে একটি ক্ষীণ জলধারা গোলাচকের পুল, পুলের ওপর স্লুইস গেট পেরিয়ে মাইলের পর মাইল এঁকে বেঁকে বদরগাছির ঝিলে এসে মিশেছে। প্রধানত অতিবর্ষার জল নিষ্কাশনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ খাল। যেহেতু লোনাজল, সেচের কাজে বিশেষ লাগে না। খালের বাঁকে বাঁকে কেউ কেউ ডুবজাল ফুটজাল পেতে রেখেছে। গাঁবাসীর বসতিক্ষমতা অনুযায়ী শ্রেণি রয়েছে। অপেক্ষাকৃত কমজোরি বাসীরা বাঁকি, ধোল এসব বসিয়ে রোজের পাতের কুচোকাঁচা মাছ সংগ্রহ করে।

    বদরগাছির বাজারে কমলার দরমা ঘেরা চায়ের দোকান। চায়ের সঙ্গে লোকাল বেকারির বাসি বিস্কুট, চানাচুর, গুটখা ইত্যাদি মেলে। সন্ধ্যের মুখে চায়ের বিক্রিবাট্টা। দিন ফুরোলে পঞ্চাশটি টাকা আয় হয়, তাতে মাসের চাল আলু নুন তেল হলুদ হয়ে যায়। উঠোনে সারাবছর কিছু না কিছু পুঁতে রাখে। শীতের মুখে মুলোটা, সম্বৎসরের কলা থোড় মোচা পেয়ে যায়। খড়ের চালে কচি লাউশাক এবং নধর লাউ।

    সন্ধ্যে গড়ালে কমলার বুক ঘেমে ওঠে কিনা কে জানে, বুকের ওপরের কাপড়টা ঈষৎ নামিয়ে নামিয়ে দেয়। বাঁশের বেঞ্চিতে বসা গেরামের লোক, অধিকাংশই ধান কিংবা সব্জি চাষী। কুপির আলোয় এক চিলতে খাঁজের অন্ধকারে জুলজুল করে চেয়ে থাকে জোড়া জোড়া চোখ।

    --নগেন খুড়া, চা নিভি যাতিছে তো।

    পানচাষী নগেনের কষে লালা গড়ায়। গোয়ালা দুধ বেচে মদ খায়, আর শুঁড়ি মদ বেচে দুধ খায়। নগেন কিন্তু গন্ডা গন্ডা পান খায়। ঝিঙেবিচির মতো দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে বহুকালের বাসনার কুচি।
    নগেন খানিক মাথা চুলকোয়, কিছু যেন বলতে চায়, চা 'নিভে' যাওয়ার মতো তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোনো প্রসঙ্গ নয় হয়ত। অগত্যা এক ঢোকে গেলাস খালি করে একটি দোক্তা পান বাঁ গালে ঠুসে দিল নগেন।

    কমলার একার সংসার। বাপ আইসকলে রাতের বেলা বরফের চাঁই চাপা পড়ে বেঘোরে মরেছে, মা-ও আন্ত্রিকে মরে গেল তিন সন আগের ভাদ্রে। ভাই গোসাবা বাজারে মাছ বেচে, বউ ছেলেপিলের সংসার ওখানেই। কমলার একার সংসার।

    মুখমন্ডল কদাকার নয় কমলার। বেশ টসটসে, দৃষ্টি শাণিত এবং সে চোখ নামিয়ে কখনও কথা বলে না। টানটান গাত্রত্বক। বুনো নোনার মতো বুক জোড়া। অপুষ্ট হাভাতে জীবনে যৌবন সমশারীরিক হয় না। রুগ্ন কোদালিয়ার সুপুষ্ট বাহু যেমন, কমলার সোমত্ত বুক তেমন। তবু, তার উর্ধোষ্ঠটি নেই জন্ম থেকে, কেবল অধোরোষ্ঠ নিয়ে জন্মেছে সে। ওপরের সারির দাঁত সতত দৃশ্যমান। তাই কমলার দেহ দামী, হাসিটি অসভ্য অপাংক্তেয়।

    নগেনের চোখ কমলার বুকের খাঁজে আটকে গেছে বহুকাল, কাজেই তার হাসি-টাসির সমস্যা নেই। সমস্যা অন্যত্র। নগেন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই সম্পন্ন পানচাষি, ঘরের বউকে কালচিতিতে খেয়েছে বছর দশেক আগে। তারপর ক্যানিংয়ের মরানপাড়ার বেশ্যারা নগেনকে রেতঃপাতে দেহ জুগিয়েছে এতকাল। আর হেঁটে বাস ঠেঙিয়ে অতদূর যেতে মন লাগে না। এখন তার বে করতে বড় মন আনচান করে। খুব ইচ্ছে করে কমলার ন্যাংটো শরীরটাকে নধর মারিচ ডাঁটার মতো দাঁতে চিবোয় রেতের চাদরে। কিন্তু কমলা কোনোভাবেই টোপ খেতে আগ্রহী নয়।

    নগেন এখন এই ভ্যাপসা চিড়বিড়ে জ্যৈষ্ঠসন্ধ্যাকালে অন্যমনস্কভাবে রাস্তায় কচিৎ কদাচিৎ বাড়ি ফেরা জলসেচুয়া মেয়েছেলেদের পাছার দিকে তাকিয়ে খচর মচর পান চিবোয় এবং প্রতিপক্ষে কুপির উড়ন্ত স্বল্পালোকে ছায়া আবছায়ায় সাতাশবর্ষিয়া কমলার অধরোষ্ঠে মৃদু তীক্ষ্ম পতঙ্গ-হাসিটি ফুটি ফুটি করে।

    --খুড়া, পইসাটা মিটাও গো।

    ~~~~~~~~~


    সকাল থেকে সংসারের খুঁটিনাটি কাজ, কলাগাছের গোড়ায় পাঁক ফেলা ইত্যাদি সারতে সারতে বেলা বাড়ে। রাঁধা খাওয়া শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পিছনের বাঁশঝাড়ে কটকট শব্দ হয় বুনো হাওয়ায়। কমলা তখন আহারাদি সেরে উনুন নিকিয়ে পুকুরের জলে বাসন ধুতে আসে। নারকোল ছোবায় খানিক ছাই নিয়ে আনমনে ঘষে ঘষে মাজে, ছায়ামাখা এক চিলতে জলে তখন হাজার খেলা।

    জলঢোঁড়াটি জলের ওপর এঁকে বেঁকে আলপনা কাটে। পাশ দিয়ে তেচোখো পিড়িক করে ঠোঁট উল্টিয়ে পালায়। যেন ভেংচি কাটে, খেতে পারবি না পারবি না। সরসরে পোকারা ফাইটোপ্ল্যাংটনের স্তরের ওপর আলস্যে দৌড়োদৌড়ি করে। বোষ্টমফোঁটা কপালে রসকলি পরে ধীর আলস্যে পাড়ের ধারে ধারে ছায়া মাখে পাখনায়, পেটে, বুকে। পোকাদের সঙ্গে তার বৈধ অবৈধ লুকোচুরি।

    পুকুর বলতে কাঠাটাক জমির একটি ডোবা। ঘাট বলতে একটি গরান গাছের গুঁড়ি। তার গায়ে সবুজ চন্দনের মতো পুরু শ্যাওলা। গেঁড়ি গুগলি ঝিনুক সেঁটে গেছে শীতল স্নেহে। কমলার পাতের দু একটি ভাতের দানার টানে তখন দ্বিপ্রাহরিক উতরোল ফিসফিস জল। জলঢোঁড়াটি এগিয়ে এসে জলতলে চোখ রেখে কমলাকে দেখে যায়। বোষ্টমফোঁটা কমলার পায়ে এসে চুমু খায়। শোলমাছের ছানারা খুপ খুপ করে আতিশয্যে। কাঁটা ট্যাংরা নির্ভয়ে পায়ের কাছে ঘুরঘুর করে।

    কমলা কথা বলে, বাসন ধোয়। "খা খা কি খাবি ক। বিরক্ত করিসনি বলি।" ডুবন্ত চিবোনো মারিচ ডাঁটার গায়ে তেচোখো খাবি খায়। ঠিক এ সময় কমলা ঘাটে বাসন আধধোয়া রেখে বাঁশবনতলায় আসে।

    শালতি বাঁশের বন। এক খোঁদলে কমলা বাঁশের গোড়ায় উপুড় করা ঝুড়িটা সাবধানে তোলে। বাঁশের কোঁড় গত একমাসে বেড়ে বেড়ে বৃহৎ ফুলকপির আকার নিয়েছে ঝুড়ির অন্ধকারে। 'আঃ' শব্দ বেরোয় কমলার মুখ দিয়ে এবং তার সঙ্গে আরেকটি আঃ শব্দও শুনতে পায়। কমলা ভয় পায়নি কখনও। কমলা ভয় পেতে জানে না।

    পেছনে নগেন আকর্ণ হাস্যে দাঁড়িয়ে।

    --তুমি?
    -- গতরে কী ভালো হইছে গো কোঁড়টা। কদ্দিন লাগলা?
    -- গত পুন্নিমার আগেনু দিছিলি।
    -- শুঁটকি দেই রাঁধব তো কমলি? ভালো করিকি ঝাল দিব।
    কমলা চোখ তোলে। নগেনের মাথার পেছনে ব্যপ্ত বাঁশপাহাড়ি চালচিত্তির। শিরশিরে হাওয়ায় ছায়াময় কটকট শব্দ। জলঢোঁড়াটি জল থেকে অদ্ভুত অপলকে চেয়েই আছে। অস্থির হাড়গিলে কোথাও তার বাসায় হঠাৎ পাখসাটে বাঁশবন আন্দোলিত করে যেন।

    কমলার বুক থেকে আঁচল খসে পড়ল ঝরে পড়া হলুদ বাঁশপাতার সঙ্গে। আগের মতোই নগেন শরাহত যক্ষের মতো দন্ডায়মান, পিছনে দ্রবীভূত সবুজের আটচালা চিত্র। কমলা আচ্ছন্নের মতো উঠতে গিয়ে একবার টাল খেলে নগেন তাকে আঁকড়ে খিমচে ধরে। কমলা পুনরায় 'আঃ' শব্দে তাকে এক ধাক্কায় ছিটকে দিলে, নগেন ডোবার জলে গড়িয়ে যায়। জলঢোঁড়াটি তৎক্ষণাৎ টুপ করে জলে অন্তর্হিত হওয়ার আগে হঠাৎ ঝপাস শব্দে তেচোখো মৌরলা চাঁদা খলসে খই ফোটার মতো লাফিয়ে ফের জলে ছড়িয়ে পড়ে। জলতলের রাঙাভাঙা সর জোড়া লেগে গেলে পুনরায় ঘন নৈঃশব্দ্যে ছায়া ঢলে আসে।

    কমলা আঁচল সাপটে ধোয়া বাসন ঘাটে নিতে এল জলের দিকে অপাঙ্গ দৃষ্টিপাতে। এক শরীর কাদা লেপটে, মুখে পাতাপচা পাঁক মেখে, যেন পিচ্ছিল মুখোশ, নগেন ঘাটের কাছে শুশুকের মতো ভুস করে ভেসে ওঠে, 'কবে রাঁধব কমলি?'

    ~~~~~~~~~


    জনার্দনের পুরুষানুক্রমে মউলি পেশা। জনার্দনের বাপও দু দুবার বাঘের থাবা খেয়ে, গেল চব্বিশ সনে আন্ত্রিকে মরে গেছে। জনার্দন মাঝে ভেবেছিল মউ ছেড়ে মাছে যাবে। বাধ সেধেছে দূরাগত ম্যানগ্রোভ।

    পায়ের নিচে সরসরে নরম পলিমাটি আঁকড়ে হামাগুড়ি দিয়ে গাছের আড়ালে আড়ালে মানুষ আগুয়ান হিংস্রতার অবাধ গন্ডীতে, এ দুর্নিবার ইশারা। ডালে ডালে শতেক পাখির মিশ্রকাকলির সঙ্গে পাতায় পাতায় ভারি লোনা বাতাসের ঘষা খাওয়ার শব্দ দানা বেঁধে বেঁধে যেন ডালে ডালে জমা হয়। লোকে বলে মধু, জনার্দন জানে তা আসলে গাঙের দুধ।

    কোঁচড় থেকে শুকনো চিঁড়ে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বোঁ বোঁ শব্দ নিকটবর্তী হলে শরীরে অজস্র চোখ স্থাপিত করে ললা খোঁচালে সে বাদামি গাঢ় দুধ ঝরতে থাকে হাতের হাঁড়িতে। মউচাক ধারে ভারে বড় হলে আগুন জ্বালাতে লাগে মউয়ের মাছি তাড়াতে। সে সময় ইন্দ্রিয়কে আরো তীক্ষ্ম রাখে জনার্দন, কেননা ধোঁয়ার ঘ্রাণে বনের সরকারি বাসিন্দারা টের পায় বহিরাগতের অবস্থান।

    নেশার তালে বেতালে দিন শুরু হয়ে সন্ধ্যার জোয়ারে ডুবে গেলে টগরের সারাদিনের মাথা ধরা ছেড়ে যায়। কলাপাতায় সড়সড় করে হাওয়া। জনার্দনের জন্য অপেক্ষা একটা থাকে। গলা অবধি বাংলা মদ ঢেলে জনার্দন ফিরলে বেড়ার আগলটায় কঁচর করে শব্দ হয়, টগর মাথার আঁচল নামিয়ে দক্ষিণমুখো একটা পেন্নাম ঠোকে। সেই আনতশিরের কৃতজ্ঞতা রাজা দক্ষিণরায়ের উদ্দেশে। বাঁচিয়ে রেখো ওরে ঠাকুর।

    আজ ভরা চাঁদের রাত। জোছনা নদীবাঁধে পড়েছে দীর্ঘ অজগরের গায়ে পিছলে পিছলে। কেয়াবন থেকে শুকনো কেয়াফুলের চেনা গন্ধ আসে। বনবিবির ঠেকায় কুপি জ্বলছে, এতদূর থেকে দেখা যায়।

    গতকাল খাল থেকে ছাকনি জালে কয়েকটা খয়রা বাচ্চা, কাদা চিংড়ি ধরেছিল টগর। পাটনি চালের পান্তা বেশি টক ধরে। আজ রাতে রাঁধার তোড়জোড় নেই। ঘুম ভালো হবে।

    টগর দোরের কপাটটা বন্ধ করে উঠোনে এল। বাইরে নিরভিমানী রাতের আয়োজন। বেড়ার আগল খুলে নদীবাঁধের দিকে হাঁটছে টগর। আজ শরীরে কিঞ্চিত বেশি জোয়ারের টান। জনার্দনকে শোয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাছে না টানলে সেদিনের মতো খেলা শেষ। বিছানায় বাঘের শব্দে ঘুমোয় জনার্দন।

    গোলাচকের উপারে মনসাতিলা গাঁ থেকে চার বছর আগে মা-মরা টগর জনার্দনের গৃহে এসেছে। আজও কোল ভরেনি বলে বনবিবির ঠেকায় গেলে বক্রোক্তি শোনে। পথেঘাটে বাঁজা শুনতে হয়। জনার্দনকে বলেছে, বলে লাভ হয়নি। বছর বছর শীতলষষ্ঠী হেলাষষ্ঠী কোনো ব্রত বাদ যায়নি।

    নদীবাঁধে এ সময় কিঁচ কিঁচ শব্দ হয়। মেঠো ইঁদুর বাঁধের গায়ে গর্তে বাসা বেঁধে থাকে। সাপ হানা দিলে দৌড়োদৌড়ি করে কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে। বাঁশবনতলা দিয়ে টগর সেদিকেই যাচ্ছিল।

    আজ এই বাঁশবনে এত কিঁচ কিঁচ শব্দ কেন? টগরের পাতলা অন্যমনস্কতা ভাঙে। বাঁশগাছের গোড়ায় গোড়ায় অজস্র ইঁদুর কেন? বাঁশপাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে জোৎস্না এসে পড়েছে মাটিতে। মৃদু বিচ্ছুরিত শ্বেতপ্রভায় টগর বাঁশের গায়ে তীক্ষ্ম নজর করে দেখল লম্বা লম্বা ঝুরির মতো কিছু। অসমাপ্ত ছিন্নভিন্ন বাবুইয়ের বাসার মতো শ্বেতকায় সেই সব ঝুরির গায়ে জোৎস্না পতিত হয়ে বিচিত্র একটা আভা সৃষ্টি করেছে। কতকটা অপার্থিব বুঝি বা।

    টগর পায়ে পায়ে এগিয়ে একটা ঝুরি ধরে টানল এবং ঝুরি থেকে একটা ধেড়ে ইঁদুর লাফ মেরে পালাল। কী বস্তু এগুলো? রোঁয়ায় বেশ ধার আছে। ফুল নাকি? কিসের ফুল? এত ইঁদুর কেন?

    বাঁশফুল। তবে কি সেই লুপ্ত বাঁশরী দীর্ঘ মায়াজাল বুনে বুনে এক দশক পরে ষড়জ থেকে কোমলগান্ধারে কামনা ছড়িয়ে দেয়? অথচ বাঁশফুল নাকি মড়ক ডেকে আনে। কিষাণের ঘরে দুঃখ ডেকে আনে। হাহাকার ভালবাসে বাঁশফুল।

    আসলে মূষিক বাঁশফুল খেতে ভালোবাসে এবং বাঁশফুল রতিউত্তেজক, যৌনক্রিয়াবর্ধক। অতি প্রজননে মাঠ ঘর গোলা মূষিকে ভরে যায়। মাঠের ধান মাঠে অনেকখানি রয়ে যায়। বিঘাপ্রতি ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে আসে। ভাগচাষী, বর্গাদার, অজস্র ফালি ফালি একছটাক জমির মালিকের গৃহে ধান প্রায় আসে না। সে বছর অনেকের রোজকার পাত ভরে না। পান্তায় ভাতের চেয়ে জল বেশি ছলছল করে। আমানি খেয়ে খেয়ে বছর ঘুরে যায়।

    টগর কোনোদিন দেখেনি এই লম্বিত মঞ্জরী সুখ। খালি শুকনা বাঁশের বন আজ যেন জোছনা বেশি শুষেছে। তবে কি এ মঞ্জরিত তৃষ্ণার বাসনালোক? ইঁদুর কি আলো খাচ্ছে নাকি ফুল?

    টগর আর নদীবাঁধে গেল না। আনমনে ফিরে এসেছিল গৃহে এবং সে রাতে জনার্দনের পূর্ণরেতটুকু শরীরে টেনে নেয়। রজঃক্ষরণক্রিয়া বন্ধ হয় এবং টগর গর্ভবতী হয়েছিল মাসান্তে। বছর ঘুরে গেলে একটি নষ্টগর্ভের নিকষ বিষাদে, জনার্দনের জন্য অপেক্ষায় থেকে থেকে একদিন কাঁকড়া খুঁজতে মেয়েবাহিনীর সঙ্গে গাঙ্গে চলে যায়। ছলাৎ ছলাৎ গানে তার পুরোনো গৃহের জীবন যেন আর ফিরে ডাকেনি।

    ~~~~~~~~~


    কমলা কেন বিবাহ করছিল, কমলা নিজে জানে না। কমলার শরীর কমলা নিজে বোঝেনি হয়ত।

    যেদিন প্রথম নগেনের ঘরে দরজা খুলে ঢুকেছিল, সেদিন কী এক অভিসন্ধি মনে বাসা বেঁধে ছিল। কেন বিবাহ, কেনই বা নগেন, তলিয়ে ভেবেছিল? একটা অজানা ঘোর প্রথাগত বন্দোবস্তে গা মিশিয়ে সাড়া দিয়েছিল হয়ত।

    নগেন সেদিন শখ করে একটা রিক্শা নিয়েছিল লতুন ঘরনীর জন্য। রিকশা খালপাড়ে নামিয়ে ফিরে যেতে কমলার হাঁসফাঁস লেগেছিল। একলা সংসারের গৃহটির জন্য মন উসখুস। ওখানেই কি ভালো ছিল সে?

    দুপুরের খাওয়ার পর নগেন যখন বিছানায় উলঙ্গ হল স্বল্পোত্থিত লিঙ্গে, কমলার দেহ থেকে যেন লজ্জা সংকোচ সব উধাও হল। সেও হড়ফড় করে শিফনের লাল শাড়িটি খুলে ফেলল, ব্লাউসের হুক নিজেই ছিঁড়ে ফেলল। নগেন ভেবেছিল সেই সব একে একে খুলবে। এমন আয়োজনে বিভ্রান্ত হল খানিক এবং সেই অবসরে তার লিঙ্গটি পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল।

    কমলা পাগলের মতো উলঙ্গ নগেনকে খিমচোলো, চড় মারল, এমনকি লাথি মেরে জলচৌকি থেকে ফেলে দিল। নগেন বাকরহিত হয়ে ভূমিতে পড়ে থাকল। কমলা দুহাতে মুখ ঢেকে হা হা করে কাঁদতে চায় কি?

    এই পুরুষ কি সে চায়? সে কি পুরুষ শরীরই চায়? তবে এত তার হাঁসফাঁস দমবন্ধ কেন? কমলার একবার যেন মনে হল, নগেনের দেহখানি যদি একটি নারী শরীর, সেদিনের সেই ঘোরান্ধ বিকেলের পচা পাঁক মাখা নগেন আসলে যদি মৎস্যকন্যা হতো?

    হতচকিত নগেনের সামনে অনাবৃতা কমলা হাঁটু গেড়ে বসে। হাতদুটি জোড়া করে নগেনকে ক্রমাগত বলে, আমুকে ক্ষমা কর খুড়া। ক্ষমা কর। আমু বুঝিনি কিছো।

    খুড়া? ক্ষমা? কে কাকে ক্ষমা করে? এ লবণাক্ত ডাঙা সর্প মুষিকের যথাযথ ক্রীড়াময়। ক্রীড়াতিরিক্ত কিছু ঠাঁই পায় না। নগেন এক দৌড়ে রান্নাঘর থেকে নুনের কৌটো এনে কমলার ওপর ছড়িয়ে দিল। নারকোল পিচের ঝাঁটা সপাসপ মারতে থাকল কমলাকে। কমলার উৎপ্রেক্ষিত দেহবল্লরী রক্তাক্ত, ক্রমে নিস্তেজ হচ্ছিল। দহন, জ্বালা, বিধুননের পরও জ্ঞান হারানোর আগে কমলার ঠোঁটে অপাঙতেয় জেগে ছিল হাসি হয়ে।

    গভীর রাতে দরজা খুলে কমলা পালিয়ে আসে। সেদিন সেই অপ্রকৃত কিঁচ কিঁচ কিঁচ কিঁচ শব্দ পথপার্শ্বের বাঁশবনে। হাতের নোয়া ছুঁড়ে দেয় অন্ধকার ঝাড়ে। দীর্ঘ ব্যবধানের পর এই প্রস্ফুটন। সব মূষিকের ভাগ্যে এই রাতময় মঞ্জরিত পুষ্পকর্তন জোটে না। কমলার নোয়ায় বাধা পায় রসিকেরা। মূষিকেরা যেন ডেকেছিল, চাও? চাও এই সুখোদ্দীপক? রতিসুখখানি চাও কমলা? প্রজনন? গর্ভাধান?

    নিরুদ্দিষ্ট কমলা সেদিনও অসংখ্য অগণিত ইঁদুরে অবাক, পথ হারিয়ে ফেলেছিল। ফিরে যাবে? কোথায়? তার প্রিয় শরীর কি তার অন্দরে লুক্কায়িত? পায়ের পাতার ওপর দিয়ে যাচ্ছে পাগল মূষিকের দল, অথচ কমলা দোসর খুঁজে পায়নি বলে রাতভর হাঁটতেই থাকে, হাঁটতেই থাকে। তার পাশে পাশে হাঁটতে থাকে আরেকটি পূর্ণ নারী-কমলা। সেই পিঠে হাত রেখেছিল, নিজের ঘরে চল প্রিয়। কেউ কি পূর্ণ? সর্বাঙ্গে পূর্ণতা কি ধরা দেয়? গর্ভের ভিতরে কি অপাঙতেয় অমেয়রূপে রসে তরঙ্গে ভেসে থাকে না? কেহ পূর্ণ নয়, পূর্ণতাভিলাষী। চল কমলা, আমু তুমাকে শরীর দিব বিছানায়।

    নগেনকে আজ সে প্রায় মনেই করতে পারে না, দশটি বছর চলে গেছে ভাটির টানে।

    তারপর বছর তিনেক আগে বনবিবির মেলায় টগরের সঙ্গে দেখা।

    ~~~~~~~~~


    টগর গলা ঝাঁঝিয়ে ডাকছিল, 'যাবিনি কমলা? চ চ। চল। আজ ত্বরা করি ফিরব।
    কমলা বলেছিল, গা-টা কেমন ম্যাজ ম্যাজ করতেছে গো।
    -- আরে চ। এক কুড়ি দেড় কুড়ি ক্যাঁকড়া লিয়ে চলি আসব।

    অতঃপর ছোট পানসিটি জলে ভাসায় দুজনে। কমলা দাঁড়ে। টগর হালে। শনশন হাওয়ায় পানসি চলে দুলকি চালে। তীরে তীরে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ইশারা। দূরে খাঁড়ির মুখে নৌকা বাঁধবে তারা। তারপর ঢুকে যাবে হাঁটুজলে জলে।

    সুতো-বাঁধা কাঠির ডগায় কুচো ব্যাঙ, কেঁচো, পুঁটিমাছ গাঁথা। হাঁটুজলে ফেলে ফেলে এগিয়ে গেছে দুজনে। ওই সুতোর পথ ধরে ধরে ফিরতে হবে।

    মধ্যগগন ছাড়িয়ে সূর্য কখন ঢলে পড়েছে পশ্চিমে, খেয়াল করেনি কেউ। কমলা আকাশের দিকে চেয়ে দেখে অপার বলাকার মালা উড়ে চলেছে অস্তরাগে। বেলা যে পড়ে এল! টগর কই গেল? টগর? টগর? টগরা রে?

    কিছু পরে দূরাগত ক্ষীণ ধ্বনি আসে। কমলা? কমলা? ও কমলিইইই? সেই ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত ডাক জলের ঢেউয়ে ঢেউয়ে অরণ্যের ডালে ডালে প্রতিফলিত হয়ে কী এক সুর যেন কর্ণে আসে। ও কমলি...ও টগরা...চল তবে যাই...কোথা যাই...কোন ঘরে...কোন শরীরের জ্বরে জোয়ারে?...সূর্য দিনমণি অস্তাচলগামী। এতক্ষণ মনে পড়েনি ঘর, জল, ফেরা।

    খাঁড়ির বাঁকে দুজন দুজনকে দেখতে পেল। দুজন দুজনের চোখ, দুজনের বুক, দুজনের আঁচল। কমলা অকস্মাৎ আঁ শব্দে আঁতকে উঠেছে। টগর এতক্ষণের অদর্শনের পর হাসতে গিয়েও বিষম খেয়ে গেল।
    তার চোখ ভরা কৌতুহল, ''কী লা? আঁতকাউছু কেনে?''

    কমলা অধরোষ্ঠে আঙুল দিয়ে চুপের ইশারা করে এবং ধীরে নিঃশব্দে তার দিকে এগিয়ে আসতে বলে। টগর কিছু বলতে গেলে ফের কমলা চোখ কটমট করে চুপ করার ইশারা দেখায়।

    টগর হাঁটুজলে আস্তে আস্তে কাদায় ছপছপ করে এগিয়ে এলে কমলা হিসহিসিয়ে 'টগরা রে' বলে টগরের ওপর ঝাঁপিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। "পিছে ফিরি দ্যাখ। বাআআঘ।"

    ম্যানগ্রোভের একটি অনতিযুবক বাসিন্দা উঠে থাকা শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে অগভীর জলে ঘুরে যাচ্ছে আরো দক্ষিণের দিকে। ওরা দুজনে চিত্রার্পিতের মতো দেখতে থাকে। কাঁকড়াভরা দুটি হাঁড়ি জলে ভেসে যাচ্ছে। পালাতে ভুলে গেছে ওরা। পালালে যাবেই বা কোথায়। আক্রমণ প্রতিহত করাই এই প্রান্তিক ভুবনের চল। পালানোর পথ নেই।

    জল থেকে গা ঝাড়া দিয়ে বাঘ পুনরায় অরণ্যে অন্তর্হিত হলে তারা পানসিতে সওয়ার হল। দিন গতপ্রায়। জলের ওপরে ঝিলমিল শেষবেলার সোনার খণ্ড কুচি ফলক চূর্ণ। মহাসামুদ্রিক বাতাসে জোয়ারের আবাহনের গান। পানসি তরতর করে ঢুকে পড়েছে মাতলার বুকে। সওয়ারি আলুলায়িতকুন্তলা সিক্তবসনা দুই বাতাসের নারী। এক হাতে দাঁড়, অন্যের হাতে হাল। দুজন দুজনের দিকে চেয়ে থাকে। ছলাৎছল ছলাৎছল। বাতাস দুজনের আঁচল কেড়ে নিচ্ছে। বাতাস কি শরীরের পিছনে পড়ে থাকা অজগরের মতো ব্যথার ইতিবৃত্তও কেড়ে নিতে পারে?

    হাওয়ার ঝাপটায় ব্যথাভরা দু জোড়া উন্মুক্ত স্তন। বৃন্তে মৃত বাসনার স্বর্ণকুচি। তবে তাই হোক বনবিবি। তাই হোক দক্ষিণরায়। এই অমেয় লবণাক্তে শরীর বাঁধভাঙা, বাসনা বানভাসি হোক।
    দুটি নারী শরীর হাল দাঁড় ছেড়ে পরষ্পরের দিকে এগোয়। পানসি বয়ে চলে ছলাৎছল ছলাৎছল। দু জোড়া হাত জড়িয়ে ধরে কোণাকুণি একে অপরকে। সূর্যাবসান শেষে আকাশে উঠে আসছে পূর্ণাত্মক চন্দ্রমা। তীরে তীরে বয়ে যায় এই জলজ ভূমির শত শত সবুজের মায়া কায়া। চাঁদ পূর্ণরস ছিটোচ্ছে জলে ঢেউয়ে বনে বনে। কিঁচ কিঁচ কিঁচ কিঁচ। এবং এই ঘাটলায় আমরা এতকাল বসে ছিলাম পাঠক। এই অপার্থিব শব্দসঙ্গতে।

    ও কিসের শব্দ? সুখ? হাহাকার? মূষিকেরা মঞ্জরীগুচ্ছে গুচ্ছে আনন্দ করে যদি, তবে গৃহে গৃহে শাঁখ বাজবে না কেন? আনন্দম্ আনন্দম্ কিঁচ কিঁচ কিঁচ। সব মড়কের পর পুনর্বার হাল যোজনা ভূমিকর্ষণে। পানসির ওপরে এক জোড়া ওষ্ঠ আরেকটি অধরোষ্ঠে বাসা খুঁজছে। এক করতল আরেক বুক পিষ্ট করে জানছে বাসনারণ্য। যোনীর গহ্বরে গহ্বরে অঙ্গুরীয় সন্ধানে অঙুলিসকল। এক শরীর আরেক শরীরকে উল্টিয়ে চিৎ করে ওপরে শায়িত হয়ে দেখছে নদীজলে অসংখ্য লুক্কায়িত প্রাণ উতরোল।

    এই ব্যথারসে তবে চাঁদ দাও প্রিয়, মঞ্জরী দাও সখা, ঢেউ দাও দোসর। তোমাকে প্রণাম করি, চুম্বন করি, হৃদয়ে ধারণ করি। দোলায়িত করি ক্ষুধা, নিয়তি এবং শরীর।

    পানসি বয়ে চলে নিরবধি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ অক্টোবর ২০১৮ | ১৩০৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:৩২85792
  • মারাত্মক!
    এবং অপূর্ব। এই সমগখ্যায় যে কটা লেখা পড়লাম এযাবৎ, তার সেরা এইটে।
  • | ***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:৩৩85793
  • *সংখ্যায়
  • Titir | ***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:৩৬85795
  • এই লেখায় কমেন্ট করার মত সাধ্য আমার নেই। অভিভূত হয়ে গেলাম।
  • সিকি | ***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:০৫85794
  • চরম লেখা। জমিয়ে রাখলাম, আবার পড়ব। চরম!
  • Tim | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫৮85796
  • মারাত্মক লেখা। লেখককে অভিনন্দন।
  • kumu | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৪85797
  • লেখা নয়,নির্মাণ। লেখককে অভিনন্দন
  • Tim | ***:*** | ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৪85798
  • হ্যাঁ ঠিক। নির্মাণ
  • ¥ | ***:*** | ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩১85799
  • নির্মান আর সৃষ্টির মধ্যে কি পার্থক্য?
  • Tim | ***:*** | ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫২85800
  • ভালো প্রশ্ন। আমি যে নিশ্চিতভাবে জানি তা নয়। মূল পার্থক্য যেন মনে হয় সতর্কতায়। আমি নির্মাণকে সতর্ক সৃষ্টি বলবো। এবং উদাহরণ দিতে গেলে ভাস্কর্য্যের কথা মনে আসে। কুমুদি আরো গুছিয়ে লিখতে পারবে।
  • i | ***:*** | ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:৩০85801
  • লেখকের আগের লেখাটি গুরুচন্ডালিতে না পড়লে এই লেখাটিতে এক্কেবারে বাকরহিত হয়ে যেতাম।

    ভাষাই এই লেখার প্রাণ। আশ্চর্য ভাষা যে ভাষায় প্রকৃতি মানুষে কী আশ্চর্য ভাবে মিলে মিশে গিয়েছে- কোথাও 'নিশ্চিন্তির কেঁচো মাটি ঝুরে ঝুরে চুলের ভিতর ঢোকে', কাঁটা ট্যাংরা, শোলমাছের ছানারা, জলঢোঁড়া ঘুরঘুর করে-আর অবশ্যই মূষিকরা-'আনন্দম্ আনন্দম্ কিঁচ কিঁচ কিঁচ'- এ লাইন যিনি লেখেন তাঁকে একটি বিনীত জিজ্ঞাসা- শেষ লাইনটি বাদ দেওয়া যেত না? এত শক্তিশালী কলম, পানসি বয়ে চলে নিরবধি দিয়ে শেষ হবে কেন লেখা?

    আর শিরোণামে একটি য ফলা মিস করছি। জ্যোৎস্নায়।
  • পার্থসারথি গিরি | ***:*** | ২১ অক্টোবর ২০১৮ ১১:৪১85802
  • এই লেখার সম্ভবত প্রুফ দেখার সময় পাওয়া যায়নি। শিরোনামে বানান ভুল রয়ে গেছে। আরো তিনটি বানান ভুল রয়েছে লেখার মধ্যে।

    শেষ লাইনটার সত্যিই তেমন একটা যৌক্তিকতা নেই।

    আপনাদের সবাইকে আন্তরিক প্রীতি।
  • মাহবুব লীলেন | ***:*** | ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৩85806
  • একটা ঘোর লাগা লেখা। অদ্ভুত ডিটেইল

    ০২
    ক্যান জানি মনে হয় গল্পের পয়লা তিনটা প্যারা বাদ দিয়া চাইর নম্বর প্যারা "স্ত্রীলোক দুটি নগ্ন দণ্ডায়মান" থাইকা শুরু করলে গল্প শুরুর গতিটা বাাইড়া যায়। অবশ্য সেইটা লেখকের বিবেচনা
  • arpita | ***:*** | ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:০৮85803
  • খুব সুন্দার লেখা
  • arpita | ***:*** | ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:০৯85804
  • সুন্দর
  • Arpita | ***:*** | ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:২৯85805
  • একাধিক অর্পিতা বক্তব্য রাখা সত্ত্বেও এই পাঠে নিজের প্রতিক্রিয়া না জানানো খুব বিবেচনার কাজ হবে না বলেই মনে হয়।

    থম ধরে বসে থাকার আবেশ তৈরী করে এই লেখা। মানুষের বহুমাত্রিক চিন্তা ভাবনা এবং তার ঘটনাক্রম এমনতর ভাষায় প্রকাশ করাকে আমি কোন ভাষায় প্রশংসা করবো, ভেবে থই পাই না।
  • পৃথা | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৫85807
  • অনবদ্য ভাষা আর লেখনশৈলী
  • নির | ***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:৩৯85808
  • ঘোর জাগানিয়া লেখা।
  • নির | ***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:৩৯85809
  • ঘোর জাগানিয়া লেখা।
  • ষষ্ঠ পাণ্ডব | ***:*** | ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৪৯85810
  • যে সব বিষয় বাংলা সাহিত্য হাতড়ালে প্রায় পাওয়া যাবে না তার একটা হচ্ছে সমপ্রেম। এই গল্পের প্রধান বিষয় কি টগর আর কমলার প্রেম? অথবা তাদের অপূর্ণ শারিরীক চাহিদা মেটানোর দিকে এগিয়ে যাওয়া? অথবা সামাজিক শিক্ষা আর সংস্কারের বলয়কে ভেঙে তাদের নিজেদেরকে আবিষ্কার করা? এগুলোর সবগুলোই হয়তো কিছু কিছু করে সত্য তবে আমার চোখে এই গল্প সুন্দরবন বলয়ের প্রান্তিক মানুষদের নিখুঁত গল্পের সাথে তাদেরও মধ্যকার আরও প্রান্তিক দুজন মানুষের গল্প। এই গল্পে প্রকৃতি আর মনোজগতের বর্ণনা বারোক ধাঁচের। লেখকের গভীর পর্যবেক্ষণ না থাকলে এর অনেক কিছুই নির্মাণ করা সম্ভব হতো না।

    তবে এই গল্পটা নিয়ে লেখকের আরও ভাবার স্কোপ রয়ে গেছে। পর্যায় বা অনুক্রম ইত্যাদি কাঠামোগত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ভাবতে পারেন। কয়েকটা জায়গায় বাক্য বেশ আড়ষ্ট লেগেছে - সেগুলো নিয়েও ভাবতে পারেন। গল্পটাকে আরও বাড়তে দেবেন কিনা সেটা নিয়েও ভাবতে পারেন।
  • পার্থসারথি | ***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০১85811
  • ষষ্ঠ পান্ডব পাঠককে আন্তরিক প্রীতি। কয়েক জায়গায় আমিও নিজে একটু খোঁচাব বলে ভেবে রেখেছি গ্রন্থভুক্তির সময়। আর বাড়ানোর জন্য বলি, একটি পার্শ্বচরিত্র বেশ কয়েকবার উঁকি দিয়েচিল, আমি এড়িয়ে গিয়েছি জোর করে। দেখা যাক, ভাবনাটা জমা রইল। আর এও মনে হল, আখ্যানটি যোগসূত্রে ঠিক আছে। আমার যা মনে হয়েছে, আখ্যানটি নিজেই আপনার মননে একই অনুরণন দিল।
    ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার সাজেশন মনে রাখছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন