তবে কি এইখানে দিকবলয় বাসনারহিত? নদীর পিঠের ওপর কৃষ্ণকামবারি বারিধিসম্ভূত? স্থলভাগের পদপল্লবে এই ঊর্মিমালা এই লবণাক্ত এই মীনরঞ্জিত, এ কি প্রচলিতকে প্রত্যাখ্যান করে? তবে চলুন পাঠক, এই ঘাটলায় এসে দুদণ্ড বসি দুজনে।
এই সন্ধ্যাকালে স্রোতধারা মৃদুস্রাবী, পরিবৃতা। ভাঙা শাঁখার মতো দিকবলয়ের গায়ে বলয়িত হয়ে আছে চন্দ্রমা, স্ফটিকরাজির মতো তারার কুচি ছড়াবে সন্ধ্যা সমাগত হলে। উচ্চকিত আলো থেকে হঠাৎ এইখানে চোখে ধাঁধা লেগে যেতে পারে। চোখ সয়ে এলে দেখা যাবে জলের ওপর একটি পানসি। ধারালো কিরীচের মতো।
চাঁদের ক্ষতমুখ গলে গেলে রস ক্রমে গড়িয়ে গড়িয়ে নামে মাতলার জঙ্ঘা বরাবর, এইখানে মাতলা পূর্বমুখী এবং পাড়ঘেঁষা। এইবার স্পষ্ট হয়েছে পানসির ওপর দুটি স্ত্রীলোকের ছায়ামূর্তি। বাতাসের ধাক্কায় হালে কচর কচর শব্দ হয়। পানসি আলতো কেটে কেটে দিচ্ছে জোছনামাখা নদীজলকে। দাঁড় দুটি ছোট ছোট ঢেউয়ের ধাক্কায় জলের ওপর ভেসে আছে অল্প গতির কারণে। ক্রীড়াবশত একটি শুশুক দাঁড়ের গায়ে পিঠ বুলিয়ে ফের ডুবসাঁতারে অতিদূর।
স্ত্রীলোক দুটি নগ্ন দণ্ডায়মান এবং নিগূঢ় চুম্বনরতা। তাহাদের পাতলা জ্যালজেলে শাড়ি কিছু জলে, কিছু পাটাতনে সর্পিল লুন্ঠিত। কোনো শিৎকার নাই, গন্তব্য নাই। পানসির এক কোণায় মাটির হাঁড়ির ভিতর কতকগুলা কাঁকড়া খড় খড় করে শাপান্ত করে। সে সময় তীরবর্তী বাঁশবনে ঝাড়ে ঝাড়ে তুমুল কলরোলের স্মৃতি। তুমুল কোজাগর রতিরাতের ছায়া। কিঁচ কিঁচ কিঁচ কিঁচ।