"আপনি এখন বুঝতে পারছেন তো, আমার গাড়ির আয়না ভাঙা কেন?" আঙুল তুলে সাইড-ভিউ মিররটা দেখিয়ে হাসে জাভেদ।
ভাঙা রাস্তা হোক আর যাই হোক, একহাতে গাড়ির ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণ করতে করতে মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকে জাভেদ।
আগেরটা থেকে এই ক্যাম্পটা বেশ ছোটো। কুয়ো বা টিউবওয়েল কিছুই নেই। মাইলখানেক দূরে একটা পাথুরে নদী থেকে গ্রামের লোক জল নিয়ে আসে। নদীর ধার ঘেঁষে জমে থাকা জলের কিছু কুন্ডের মত। এখান থেকে ওরা খাবার জল সংগ্রহ করে।
(পাথরে) "পরিশ্রুত" জল
"ওই দেখুন, প্রাকৃতিক ফিল্টার করা জল", বলে জাভেদ।
বাস্তবিকই, নুড়ি পাথরের জন্য কিছুটা হলেও জল পরিশ্রুত। কিন্তু কতটা? বস্তারের বেশীরভাগ গ্রামে লোকে এমনই জল খায়। পাহাড়ি স্রোত ঝোরাগুলোর জল সমতলভূমির জলের চাইতে কম দূষিত হলেও কখনোই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। বস্তারের গ্রামে আজও ডায়েরিয়ার মড়ক লাগে। গতবছর ছত্তিসগড়ে প্রায় একশ'র ও বেশী লোক কলেরা হয়ে মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানতে পেরে যাতে মহামারি আখ্যা না দেয়, সেইজন্য কলেরা ছড়ানোর খবর গোপন রাখা হয়েছিল। এমন খবর উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মত ছত্তিসগড়ের গর্ব অবশ্যই খর্ব করতে পারতো।
"খাবার জল যাতে চুঁইয়ে চুঁইয়ে জমতে পারে, আমরা তাই অন্তত দশ ফীট গভীর একটা কুয়ো খুঁড়ছি" – জাভেদ বলে।
দেখা গেল, একটার পর একটা সাজিয়ে পাঁচটা কংক্রিটের রিং দিয়ে "কুয়ো" তৈরী হচ্ছে। দশ ফীট গভীর খাদান। কুয়োর নীচে জল দেখা যায়। বোরওয়েলের মত অত নিরাপদ না হলেও জমির উপরের জমে থাকা জলের চাইতে এই কুয়োর জল হাজারগুণ ভালো।
কুয়োর গভীরতা মাপা হচ্ছে
"জঙ্গলের এত গভীরে গাড়ি ঢোকে না, তাই এই কংক্রিটের রিংগুলো হাতে করে বয়ে আনতে হয়েছে" জাভেদ আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে মন্তব্য করে।
কুয়োতে দশ ফীট নীচে জল
কুয়ো দেখে আমি গ্রামে ফিরে এলাম। একটা বসতির ধার দিয়ে যাওয়ার সময় জাভেদ উৎফুল্ল গলায় আমাকে বলে "ওই দেখুন, ছেলেটা বীজ রাখার ঝুড়ি বানাচ্ছে"।
আমরা হেঁটে ওদের বাসার সামনে যাই। ছেলেটা চিরাচরিত ধাঁচের ঝাঁকি বানাতে ব্যাস্ত। পিছনে বাঁশের ছুলিতে তৈরী একটা দোলনা, দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা, তাতে ঘুমিয়ে রয়েছে একটা বাচ্চা। বাবা (বাবা নয়, মা) পাশে বসে অল্প দুলিয়ে চলেছে দোলনা।
আমি এই ধরণের ঝাঁকি আগে কখনও দেখিনি। পুরোপুরি পাতায় তৈরী। পাতার ধারগুলো সূক্ষ্মভাবে চেঁছে ছুঁচালো ক'রে বোনা। ছেলেটা সবেমাত্র একটা বানানো শেষ করেছে। ও এমনিতেই আরও বানাতো, তাও আমি ছেলেটাকে আরেকটা বানাতে বললাম।