বিশ্বের প্রাচীনতম মহাকাব্যগুলির মধ্যে একটি হল গিলগামেশ। ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর মধ্যবর্তী ভূমিখন্ডটির প্রাচীন নাম ছিল সুমের। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে সেখানে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তাকে সুমেরিয়ান সভ্যতা বলা হয়। গিলগামেশ মহাকাব্য এই প্রাচীন সভ্যতার এক রাজার কাহিনি।
খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে তার কাহিনি লোকের মুখে মুখে ফিরত। সেকালে এই কাহিনির অনেকগুলি কথ্য রূপ ছিল। খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে এটি লিখিত রূপ খঁজে পাওয়া যায়। বারোটি কাদার ট্যাবলেটে আক্কাডিয় ভাষায় কিউনিফর্ম লিপিতে এটি লেখা হয়েছিল। রাজা অসুরবানিপালের লাইব্রেরিতে এটি সংরক্ষিত ছিল, পরে কালের গর্ভে এই কাহিনি হারিয়ে যায়। উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে ইরাকের নিনেভে লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ থেকে এটিকে উদ্ধার করা হয় ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে জার্মান ভাষায় এর অনুবাদ প্রথম প্রকাশিত হয়। বিশ্বের লোক এই প্রাচীন কাহিনি পড়ে বিষ্মিত হয়ে যায়। তাদের এই বিষ্ময়ের আরো কারণ ছিল, এই যে, এইমহাকাব্যে যে মহাপ্লাবণের কথা আছে তা হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত মহাপ্লাবণের কাহিনিরই অনুরূপ।
যদিও গিলগামেশ মহাকাব্য বহু হাজার বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিল কিন্তু আজ এটি ইরাকে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুপঠিত সাহিত্য। এটি ইরাকের জাতীয় মহাকাব্যও বটে। বিশ্বজুড়েও এর কদর কম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বসাহিত্যের পাঠক্রমে এটি অবশ্যপাঠ্য। আজও বহু গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে এই কাহিনির প্রাচীনত্ব, স্বৈরাচারী শাসন, ন্যায়বিচার, ভালবাসা এবং মৃত্যু, শিল্প ও অমরত্বের সন্ধান ইত্যাদির প্রভাব দেখা যায়। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর ইরাকের রাজনৈতিক পটভূমিতে এই মহাকাব্য প্রভাব কম ছিলনা।
২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আমেরিকা সাদ্দাম হুসেনকে পদত্যাগ ও নির্বাসনে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার সাথে সাথে ইরাকের এই একনায়ক পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের সময় তাঁর সেনাপতিদের সামনে তিনি তাঁর বিদায়ী ভাষণ রেখেছিলেন। বক্তব্যটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যাই থাক সাদ্দাম যা বলেছিলেন তা থেকে বোঝা যায় তিনি ইরাকের মহাকাব্যের নায়ক গিলগামেশের সাথে নিজেকে তুলনা করছেন। তিনি বলেছিলেন তিনি তাঁর সিংহাসন ত্যাগ করছেন এবং এবার তিনি অমরত্বের সন্ধানে যাত্রা করবেন। সাদ্দাম গিলগামেশ মহাকাব্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং ইরাকের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বুক দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন। এর আগের বছর সাদ্দাম ঘোষণা করেন তিনি নিনেভে অসুরবানিপালের লাইব্রেরি আবার নতুন করে গড়ে তুলবেন। যেহেতু সেই লাইব্রেরির সমস্ত ট্যাবলেট এখন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে তাই তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন যে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত সমস্ত ট্যাবলেটের প্লাস্টার কাস্ট তৈরি করে সেগুলি প্রস্তাবিত অসুরবানিপালের লাইব্রেরিতে রাখা হবে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত পঁচিশ হাজার ট্যাবলেটের প্লাস্টার কাস্ট তৈরির সূচনাও হয়। আমেরিকার চাপে তাঁর পদত্যাগের কারণে সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।
১৯৯২ সালে প্রথম ইরাক যুদ্ধের পরে সাদ্দাম সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি সাহিত্যচর্চার ভিতর দিয়ে গিলগামেশের মত অমরত্ব লাভ করবেন। বিষ্ময়করভাবে তিনি রাজনৈতিক প্রেমকাহিনি লিখতে শুরু করেন। দ্বিতীয় ইরাক যুদ্ধের সময় তাঁর এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই তিনি ইরাকের যাবতীয় সামরিক দায়িত্ব তাঁর ছেলের উপর ছেড়ে দিয়ে নিজে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।
সাদ্দাম দীর্ঘদিন ধরে ইরাকের ইতিহাস এবং তার মধ্যে তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। ১৯৮০ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন "আসুন আমরা আমাদের ইতিহাসে ফিরে যাই,কারণ এই ইতিহাস আমার চোখের সামনেই রয়েছে।" সাদ্দাম মধ্যযুগীয়-ক্রুসেডার-বিরোধী সালাদিনের (তাঁর নিজের দেশ টিক্রিটের অধিবাসী) প্রশংসা করেছিলেন এবং তিনি ইরাকের প্রাক-ইসলামী ইতিহাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন; তিনি নিজেকে নবুচাদনেজার, সেন্নাচেরিব বা গিলগামেশের সাথে তুলনা করতে পছন্দ করতেন। তাঁর এই ভাবনা তাঁর বাথ পার্টির উপরও প্রভাব বিস্তার করেছিল। তারা ইরাক এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যত্র জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেয়ে আরো গভীরে প্রোথিত প্যান-আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তি গড়ে তুলতে চেয়েছিল। সাদ্দাম ১৯৭৮ সালের একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, "ইতিহাস লেখার সময়, তিনি বিশ্বাস করেন যে আরব জাতির ইতিহাস প্রাচীন যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং আরব বিশ্বে যে সমস্ত বড় বড় সভ্যতা জন্মগ্রহণ করেছিল এই অঞ্চলের বর্তমান বাসিন্দারা তারই উত্তরসূরী”।
সাদ্দামের প্রথম উপন্যাস এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। গিলগামেশ মহাকাব্য, আরব্য উপন্যাস ও ইরাকের যুদ্ধের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ রয়েছে এই কাহিনিতে। ২০০০ সালে লেখকের নাম ছাড়াই এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। নাম ছিল Zabibah wal-Malik বা জাবিয়া ও রাজা। গল্পের পটভূমি আসিরিয়া, যেখানে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা এক সাধারণ মেয়ের প্রেমে পড়ে যান রাজা। এই কাহিনিতে লেখকের নাম না থাকায় এটি যুদ্ধের পরে সি আইএর গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সি আইএর একজন এজেন্ট কাহিনির মধ্য দিয়ে লেখকের মনস্তত্ব খোঁজার চেষ্টা করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে যতবার তিনি উপন্যাসটি পড়ছেন ততবার রাজার প্রতি তাঁর মন অনুকম্পায় ভরে যাচ্ছে। সাদ্দামের উদ্দেশ্যও ছিল তাই, তিনি চেয়েছিলেন ইরাকের জনগণ তাদের এই প্রাক্তন শাসকের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুক। এই বইটির জার্মান অনুবাদের একটি সমালোচনায় মন্তব্য করা হয়েছে যে যতক্ষণ পর্যন্ত বইটি শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি বইটির সাথে বন্দী হয়ে থাকবেন। জার্মান ভাষায় fesseln কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ শিকল বা হাতকড়ি।
সাদ্দাম ইরাকের ইতিহাসের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল ও অনুরক্ত ছিলেন তা তাঁর উপন্যাসের শুরুতেই বোঝা যায়। এর মুখবন্ধে রয়েছে ইরাকের মহান ঐতিহ্য ও টাওয়ার অফ ব্যাবেল থেকে শুরু করে আদম, ইভ আব্রাহাম ও নোয়ার জন্মভূমির কথা। বলা হয়েছে এই ইরাক শুধুমাত্র পর্বত আর নদীর দেশ নয়, এটি নোয়ার দেশ যিনি ঈশ্বরের আদেশে মহাপ্লাবণের সময় মানবতাকে রক্ষা করেছিলেন। আমাদের এই প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজও জীবন্ত। এই মেসোপটেমিয়া আজও অনেক বিষ্ময় এই পৃথিবীকে উপহার দিতে পারে। এখানেই যেমন পূণ্যবানের জন্য স্বর্গের দরজা উন্মুক্ত রয়েছে তেমনই এখানেই রয়েছে নরকের পথ। এই দেশেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কাহিনি নির্মানের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য।
প্রথমে প্রচ্ছদের কথায় আসা যাক। মূল সংস্করণটি প্রচ্ছদে একটি লোভনীয়, কালো চোখের এক সুন্দরীর একটি ছবি রয়েছে। প্রচ্ছদটি একটি চোরাই ছবি, এমনকি এটি মধ্যপ্রাচ্যেরও নয়। আসলে এটি একটি কানাডিয়ান শিল্পীর পেইন্টিং যার নাম The Awakening, এটি "বসন্ত ও ভোরের দেবীর" একটি প্রতীকী চিত্র, যা এশিয়া এবং আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের চিত্রশৈলী তুলে ধরেছে। সাদ্দামের প্রকাশক তার কপিরাইট করা ছবি চুরি করেছে। এটা আবিষ্কার করার পরে তার ওয়েব সাইটে শিল্পী জোনাথন আর্ল বাউসার তার ভয়াবহতা এবং বিমোহিততার বর্ণনা দিয়েছেন। বর্তমানে বইটির ইউরোপীয় সংস্করণে একটি খাঁটি ইরাকি চিত্র রয়েছে: তাতে আছে সাদ্দাম হোসেন, হাতে মাথা রেখে, অন্ধকারে প্রেম এবং মৃত্যুর কথা ভাবছেন।
সাদ্দামের উপন্যাসের প্রথম পর্বে রয়েছে এক স্বৈরাচারী শাসকের কথা যার অত্যাচারে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। সেই সময় একটি সাধারণ মেয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে আসে। রাজা তার প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু তিনি প্রথমে তাঁর এই মনোভাব প্রকাশ করতে চাননি, কারণ রাজা হয়ে একটি সাধারণ মেয়ের প্রেমে পড়া তাঁর পক্ষে অগৌরবের। কিন্তু তিনি ক্রমশঃই তাঁর এই মানসিক অবস্থার বন্ধনে পড়ে যান। তিনি মেয়েটিকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান ও তার সাথে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বুঝতে পারেন মেয়েটি অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী। রাজা, যিনি গিলগামেশের মতই তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করছিলেন, ধীরে ধীরে এই মেয়েটির প্রভাবে পরিবর্তিত হতে থাকেন। এই মেয়েটি তাঁর চেতনা, আনন্দ ও সময় অধিকার করে নেয়।
উপন্যাসটি আশ্চর্যজনকভাবে একজন প্যারানয়েড, নিজের জালে আটকে পড়া শাসকের চরিত্র চিত্রায়িত করেছে। যখন জাবিবা বলেছেন, “আপনার প্রাসাদের দিকে তাকান: মোটা দেয়াল, জানালা প্রায় নেই, অন্ধকার, বাইরের বাতাস ঢুকতে পারেনা, বাঁকানো করিডোর। এখানে থেকে আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো এক দানবের বাড়িতে বাস করছি। এখানে শুধু রাক্ষস বাস করতে পারে, এখানে ষড়যন্ত্রের বীজ অঙ্কুরিত হয়। রাজার দুর্গ তার কাছে কারাগারে পরিণত হয়েছে: যেমন মোটা দেয়াল আপনাকে বাইরে কী চলছে তা শুনতে বাধা দেয়, ঠিক যেমন আপনি খুব কমই দিনের আলো বা তাজা বাতাস পেতে পারেন, তেমনি বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য আপনার আর্তনাদ কখনই শোনা যাবে না। তার উপর আপনার পালানোর পথ অবরুদ্ধ, এবং আশেপাশে এমন কেউ নেই যে আপনাকে সাহায্য করবে।” রাজা উত্তর দেন যে তিনি সম্ভবত তার প্রাসাদ ছেড়ে কোনোদিন যেতে পারবেন না, কারণ তার কৈশোরের অভিজ্ঞতা তাই বলে। “আমার ভাই এবং আমার পিতার উপপত্নীর ছেলেরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তারা আমার পিতাকে আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত করেছিল, আমি পালিয়ে যেতে বাধ্য হই - তখনই আমি বাইরের জীবন সম্পর্কে জানতে পারি।" এর মধ্যে সাদ্দামের নিজের জীবনের কথাই রয়েছে। গভীর দারিদ্রের মধ্যে জন্ম নেওয়া সাদ্দামকে তার কঠোর সৎ বাবা শিক্ষা ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। ইরাকের সামরিক নেতাকে হত্যার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে, তিনি মিশরে পালিয়ে যান এবং বেশ কয়েক বছর পরে ইরাকে ফিরে আসেন একজন পেশাদার ঘাতক হয়ে।
গল্পে আছে এর পর জাবিবা কোমলভাবে রাজার চুল ও গালে স্পর্শ করল। এর চেয়ে বেশি কিছু করার জন্য সে নিজেকে অনুমতি দেবে না। তবুও সে মাঝে মাঝে তাকে চুম্বন করার ইচ্ছা অনুভব করেছিল - সর্বোপরি সে দেখেছিল যে রাজা তার তিক্ত স্মৃতিতে কতটা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তিনি নিজেকে সংযত রেখেছেন, কারণ তিনি রাজাকে বিভ্রান্ত করতে চাননি এবং তার বাবার গল্পের শেষ পর্যন্ত শুনতে চেয়েছিলেন।
কিছু সময়ের জন্য, জাবিবাহ এবং রাজা কেবল ভাল বন্ধু। প্রতিদিন রাতে অন্ধকার প্রাসাদে তাদের দীর্ঘ দার্শনিক এবং রাজনৈতিক আলোচনা হয়, তারপরে সে তার ঘোড়া ডেকে তার স্বামীর বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু তারপর তাদের সম্পর্ক একটি সিদ্ধান্তমূলক মোড় নেয়। জাবিবা রাজাকে বলে যে নিজেকে রক্ষার জন্য আপনার আত্মীয়দের বিশ্বাস করার পরিবর্তে আপনার উচিত আপনার জনগণের মন জয় করা।" সন্দিহান হয়ে রাজা জিজ্ঞেস করলেন, "আচ্ছা, কিন্তু 'এই জনগণ' কে?"
কাহিনিটি একটি রূপক এবং সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। এই কাহিনিতে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। জাবিবার সাথে রাজার এই সম্পর্ক জাবিবার স্বামী মেনে নিতে পারেনি। এক রাতে, প্রাসাদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে জাবিবার নিজের স্বামী তাকে আক্রমণ করে এবং ধর্ষণ করে। তার স্বামী হেজকেল এবং তার গ্যাংয়ের অন্যান্যদের নিয়ে জড়িত একটি বিস্তৃত চক্রান্তের অংশ এই ধর্ষণ৷ জাবিবা ষড়যন্ত্রের তীব্রতা উপলব্ধি করে আসন্ন বিদ্রোহ সম্পর্কে রাজাকে সতর্ক করার জন্য প্রাসাদে ছুটে যায়। রাজা, ঠিক করেন এর প্রতিশোধ তিনি নেবেন। তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার এবং জাবিবার সম্মান রক্ষা করার জন্য শপথ করেন। এর পর রাজা নিজের সৈন্য ও জনগণকে সংগঠিত করে জাবিবার স্বামীকে হত্যা করেন। এই লড়াইয়ে জাবিবারও মৃত্যু হয়। তারিখটা ১৭ই জানুয়ারী। মজার ব্যাপার হল ১৯৯১ সালে ১৭ই জানুয়ারী সদ্দাম উপসাগরীয় যুদ্ধে নিজের পরাজয় মেনে নেন।
এই বইয়ের আরো একটি রূপক হল জাবিবাকে সব সময় ইরাকী নিপীড়িত জনগণের প্রতীক হিসাবে দেখানো হয়েছে। জাবিবার উপর তার স্বামীর অত্যাচার সেই অর্থে ইরাকী জনগণের উপর মার্কিন হামলারই প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।
সি আই এ মনে করে আংশিকভাবে, এটি বিশুদ্ধ প্রচারের উদ্দেশ্যে লেখা। এর মধ্য দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ইরাকের মহিলাদের সামনে, একটি দয়ালু, নম্র নারীবাদী সাদ্দাম এর চরিত্র তুলে ধরেছে যাকে তাদের ভালবাসা উচিত এবং সমর্থন করা উচিত। এই উপন্যাসেই রাজা ঘোষণা করেন, "মহিলাদের ইচ্ছাকে সম্মান করা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ," জাবিবা অহংকারী, প্রাসাদে আবদ্ধ রাজার চেয়ে তীক্ষ্ণ চোখের গ্রাম্য মহিলার সাথে বেশি পরিচিত।
অনেকে এই উপন্যাসটিকে খুব উঁচুদরের সাহিত্য বলতে নারাজ, তাঁরা এটিকে Dic-lit নামক জঁরের অন্তর্ভুক্ত করেন। Dic-lit কথাটির অর্থ হল শাসকের দ্বারা রচিত সাহিত্য, যার মধ্যে পড়ে মাও সে তুং এর কবিতা, গদ্দাফির লেখা গল্প ইত্যাদি। এই উপন্যাসটি নিয়ে চর্চাও কম হয়নি। সি আই এর গবেষকের মতে এটি আদৌ সাদ্দামের নিজের লেখা নয়। গল্পটি হয়তো সাদ্দামের মাথায় এসেছে। তিনি এই গল্পের বুনটও তৈরি করেছেন, কিন্তু এটা লেখার জন্য তিনি ভূতুড়ে লেখক বা ঘোস্ট রাইটারে সাহায্য নিয়েছিলেন। অনেকে সাদ্দামের এই উপন্যাসে নায়কের সাথে গিলগামেশের মিল খুঁজে পেলেও সাদ্দামকে গিলগামেশের সাথে তুলনা করতে নারাজ। শরিফ এলমুসা নামে একজন পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট সাদ্দামকে সিডার বনের রক্ষাকর্তা হুমবাবার সাথে তুলনা করেছেন। হুমবাবা, যে সিডার বনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিল, ঠিক যেমন সাদ্দাম তাঁর দেশ ইরাকের প্রাকৃতিক সম্পদ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিদেশিদের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সাদ্দামের মৃত্যুও হয়েছিল হুমবাবার মতই বিদেশীদের হাতে।
তথ্য সূত্র: