মার্চ ও এপ্রিল পরপর দু মাসে দুজন স্বনামধন্য সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী দীর্ঘ কারাবাসের নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৭ই মার্চ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা প্রায় এক দশকের কারাবাসের পর নাগপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। এর প্রায় এক মাস বাদে ভীমা কোরেগাঁও (বিকে) মামলায় ধৃত নারী ও দলিত অধিকার কর্মী, অধ্যাপক সোমা সেন জামিন পান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই দুজনের মুক্তি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, কিন্তু যা ঢের বেশি অস্বস্তিকর তা হচ্ছে তাঁদের গ্রেপ্তার, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিচার বা বিচার না-হওয়া পুরো বিচারব্যবস্থার স্বরূপকে নগ্ন করে দিয়েছে। সাইবাবার কাহিনি বহু চর্চিত, তবুও সেটাকে আমরা ফিরে দেখব এবং কোন কারণে অধ্যাপক সোমা সেন সহ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত অন্যান্যদের এতো বছর কারাবাস করতে হল, এবং কয়েকজনকে এখনো করতে হচ্ছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করব।
সাইবাবা আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে সরব ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ‘অপারেশন গ্রীন হান্ট’ এর বিরুদ্ধে তিনি প্রবল ভাবে সোচ্চার হন। তাঁর বক্তব্য এই অভিযানের উদ্দেশ্য মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ আদিবাসী অঞ্চলের সম্পদ লুট করে তা কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া। ২০১৪র মে মাসে মাওবাদীদের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায় এক বছর বাদে শারীরিক কারণে জামিন দেওয়া হয়। ২০১৫-১৬ সালে এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। পরের বছর সিপিআই, মাওবাদীদের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ইউএপিএ নামক দানবীয় আইনের অধীনে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সাইবাবা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামলাল আনন্দ কলেজে ইংরাজির অধ্যাপক ছিলেন। ২০২১ সালে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ২০২২ এর অক্টোবরে বম্বে হাই কোর্ট তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেয়, বিচারপতিরা বলেন যে তাঁকে অভিযুক্ত করার জন্য যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। কোর্ট সাইবাবা এবং তাঁর পাঁচ সাথিকে বেকসুর খালাস করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, মহারাষ্ট্র সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করে। এরপরে শীর্ষ আদালত যে ভাবে শনিবার, একটা ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে তাঁদের মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে তা এক কথায় বিস্ময়কর। আদালতের সময়সীমার বাইরে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিশেষ বেঞ্চ মিলিত হওয়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সাংবিধানিক সংকট, ব্যক্তি স্বাধীনতা বা ফাঁসির আসামির আবেদন রদ করার শুনানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মধ্যরাতেও বিচারকরা মিলিত হয়েছেন। কিন্তু তথাকথিত একজন মাওবাদী, যিনি ৯০% প্রতিবন্ধি, যিনি ষোলোটি মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত, যাঁকে সামান্য দৈনন্দিন কাজ করতেও অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হয়, তাঁর মুক্তি আটকাতে যেভাবে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাতে বিশিষ্ট আইনজ্ঞরাও স্তম্ভিত হয়ে যান। মাননীয় অধ্যাপকের আইনজীবী একটা অন্তিম চেষ্টা করেন, তিনি তাঁর মক্কেলের অসুস্থতার কারণে তাঁকে অন্তত কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দী রাখার আবেদন করেন। আদালত তাতেও আপত্তি করে, যুক্তি দেয় ঘরে বসেও তিনি নাশকতা মূলক কাজকর্ম করতে পারবেন, ফোনে কর্মীদের নির্দেশ দিতে পারবেন। প্রস্তাব দেওয়া হয় যে তাঁর ফোন বাজেয়াপ্ত করা হোক, নিষ্ঠুর আদালত তাতেও কর্ণপাত করতে অস্বীকার করে। এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে বিচারব্যবস্থা সাইবাবার মস্তিষ্ককে ভয় পায়।
সেই অভুতপূর্ব স্থগিতাদেশের প্রায় ষোলো মাস পর সেই একই বম্বে হাই কোর্টের নাগপুর বেঞ্চ তাঁকে পুনরায় মুক্তি দেবার আদেশ জারি করে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত লক্ষ্যণীয়। তাঁরা বলেন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপ্রমাণিত অভিযোগ আনা হয়েছে এবং চক্রান্তের প্রস্তুতি হিসাবে তাঁর কাছে কোন নির্দিষ্ট উপাদান পাওয়া যায়নি। তাঁরা আরও বলেন কী ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাজ তা ব্যাখ্যা না করার দরুন অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল। রাজ্য সরকার আবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করে কিন্তু এবার তাঁরা স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করছে যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুয়ো, সম্পূর্ণ মনগড়া যেটার ভিত্তিতে একজন গুরুতর অসুস্থ মানুষকে অন্তত সাত বছর ব্রিটিশ আমলের অন্ডা সেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত বৃদ্ধা মাকে দেখার জন্য তাঁর জামিনের আবেদন বারবার নাকচ করা হয়েছে। মার মৃত্যুর পর শেষকৃত্যেও তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তখনো তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এনআইএর মতে তিনি নাকি এতোই বিপজ্জনক যে কয়েক ঘণ্টার জন্য তিনি বাইরে এলেও তা রাষ্ট্রকে বিপন্ন করতে পারে।
প্রক্রিয়াটাই যখন শাস্তি
প্রতিবাদী কন্ঠ দমন করার জন্য এটাই এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন বিচার ছাড়াই, শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে বছরের পর বছরের কাউকে কারাবন্দি করে রাখা। এর জন্য ইউএপিএ আইন হচ্ছে মোক্ষম হাতিয়ার যেটার লাগামছাড়া ব্যবহার হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০২০ এই আইনে ৮৩৭১ জন ধৃত হয়েছেন, সাজা পেয়েছেন মাত্র ২৩৫ জন, ৩% এরও কম! ২০০৮, ২০১২, ২০১৯, বিভিন্ন সময়ে এই আইনকে সংশোধন করে আরও কঠোর, দানবীয় করে তোলা হয়েছে। এই আইন এক উলটপুরাণ যেখানে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি দোষি নন এবং এই আইনে জামিন দেওয়া নিয়ম নয়, সেটা ব্যতিক্রম; বিচারক এবং সরকারি কৌঁসুলি যদি মনে করেন অভিযুক্ত আপাত ভাবে নির্দোষ শুধুমাত্র তবেই জামিন দেওয়া যেতে পারে। এর সেরা উদাহরণ দিল্লি দাঙ্গা মামলায় অভিযুক্ত উমর খালিদ। ২০২০র সেপ্টেম্বরে উনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারপর থেকে নানা অজুহাতে ওনার জামিনের শুনানি চোদ্দো বার মুলতুবি করা হয়েছে।
২০১৮র জুন মাসে অধ্যাপক সোমা সেন সহ আরও চারজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমা সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি সিপিআই মাওবাদী দলের সক্রিয় কর্মী, তিনি তাঁদের হয়ে তহবিল সংগ্রহ করতেন, হিংসাত্মক কার্যকলাপে ইন্ধন যোগাতেন এবং তিনি নাকি মাওবাদীদের বিভিন্ন ছদ্ম সংগঠনের সাথে যুক্ত। এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ পুনের কাছে ভীমা কোরেগাঁও-য়ে জনতাকে তিনি হিংসায় প্ররোচিত করেছিলেন। সোমা সেন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং জানান যে ২০১৭র শেষ দিনে কোরেগাঁও-য়ে তিনি উপস্থিতই ছিলেন না। ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮ তিনি প্রথম বার জামিনের আবেদন করেন। এরপর তাঁর আবেদন, এমনকি অসুস্থতার কারণে আবেদনও উপরোক্ত সব কারণের দরুন খারিজ করা হয়। অথচ আজ প্রায় ছয় বছর বাদে সুপ্রীম কোর্ট বলছে তাঁর বিরুদ্ধে যা প্রমাণ আছে তাতে আপাত ভাবে (প্রাইমা ফেসি) তিনি কোন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন এটা প্রমাণিত হয় না। আদালত এটাও বলে তিনি কিছু সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং কিছু মহিলাকে সংগ্রামে উদ্দিপ্ত করেছেন বলেই তিনি মাওবাদী বা তাঁদের কোন ছদ্ম সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন এটাও প্রমাণিত হয় না। এছাড়া আদালত জানায় তৃতীয় কোন ব্যক্তির থেকে পাওয়া তথ্য বা উপাদান থেকে প্রমাণিত হয় না তিনি তহবিল সংগ্রহে যুক্ত ছিলেন।
সোমা সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যে কোন সারবত্তা নেই এই উপলব্ধিতে আসতে আদালতের প্রায় ছয় বছর লেগে গেল। ভীমা কোরেগাঁও বা দিল্লি ‘দাঙ্গা’ মামলায় এটাই হচ্ছে প্যাটার্ন! বছরের পর বছর অভিযুক্তদের কারাগারে বিনা বিচারে ফেলে রাখা হয়েছে, তারপর বহু টালবাহানার পরে কয়েকজনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রাইমা ফেসি এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত নয়, এবং জামিন দেওয়া হয়েছে। বাকিরা তো এখনো জেলের ঘানি টানছেন। ছয় বছর হয়ে গেল বিকে মামলায় এখনো বিচারই শুরু হয়নি; শোনা যাচ্ছে চার্জশীটই নাকি ৫০০০ পাতা, ২০০ জন সাক্ষী। দিল্লি ‘দাঙ্গা’ মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কেউই পরিষ্কার নন।
জামিনের শর্তাবলী
এরপরেও আরও গল্প আছে। যাঁরা জামিন পাচ্ছেন তাঁদের মানমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাই দুরূহ হয়ে পড়ছে কারণ জামিনের শর্তাবলী ভয়ঙ্কর! সোমা সেনের জামিনের শর্তাবলী দেখা যাকঃ (১) পাসপোর্ট জমা দিতে হবে, (২) বিশেষ আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি মহারাষ্ট্রের বাইরে যেতে পারবেন না, (৩) যেখানে বসবাস করবেন সেখানকার নিকটবর্তি থানায় তাঁকে চোদ্দো দিন অন্তর হাজিরা দিতে হবে, (৪) মোবাইল সব সময় অন রাখতে হবে এবং ব্যাটারিতে চার্জ থাকতে হবে, (৫) জিপিএস অন রাখতে হবে এবং নিকটবর্তি এনআইএ অফিসারের ফোনের সাথে সেটি লিঙ্ক রাখতে হবে। শর্ত পালনে কোন বিচ্যুতি ঘটলে তৎক্ষণাৎ জামিন বাতিল হয়ে যাবে।
সোমা নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজির অধ্যাপক ছিলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি কি অবসরকালীন সুযোগ সুবিধাগুলি পাবেন? আদালত নীরব। একই ভাবে সাইবাবা কি তাঁর চাকরি ফিরে পাবেন? এসব ব্যাপারে আদালত কোন নির্দেশ ব্যক্ত করেনি। বিশিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ানিস্ট, আইনজীবী, সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ ২০২১ এর ডিসেম্বর মাসে বিকে মামলায় জামিন পান। তাঁর জামিনের ষোলোটি শর্ত আছে। সোমার ওপর যে শর্তগুলি চাপান হয়েছে সেগুলো তো আছেই আরও যা আছে তা হলঃ (১) তাঁকে মুম্বাই আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে থাকতে হবে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া এই চৌহদ্দির বাইরে তাঁর যাওয়া নিষেধ (অথচ তিনি দিল্লির ‘ন্যাশানাল ল বিশ্ববিদ্যালয়’-এর অধ্যাপক ছিলেন। সেটা তাঁর কর্মক্ষেত্র, সেখানে না গেলে তিনি জীবিকা অর্জন করবেন কী ভাবে?) (২) রক্তের সম্পর্ক আছে এরকম তিনজন আত্মীয়ের বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা, ডকুমেন্ট সহ জমা দিতে হবে, (৩) মিডিয়ার কাছে তাঁর মামলা সংক্রান্ত কোন বক্তব্য রাখা নিষিদ্ধ, (৪) বিচারের সময় তাঁকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে, তাঁর অনুপস্থিতির জন্য বিচার যেন বিলম্বিত না হয় (ছ বছরে বিচার শুরুই হয়নি!), (৫) বিকে মামলার অন্য সাথীদের সাথে যোগাযোগের কোন রকম চেষ্টা করবেন না, (৬) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা ছাড়া তাঁর বাড়িতে অন্য ব্যক্তিদের জমায়েত নিষিদ্ধ ইত্যাদি।
জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ
এই জমানায় মুক্তির আদেশের পরেও যখন স্থগিতাদেশ হতে পারে, তখন জামিনের ওপর তো হবেই। মহেশ রাউত, টাটা ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের প্রাক্তনি এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ উন্নয়নের ফেলো, জুন, ২০১৮ গ্রেপ্তার হন। ২০২৩ এর সেপ্টেম্বরে আদালত তাঁকে জামিন দেয়, বলে যে ইউএপিএ-তে তাঁর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট উপাদান নেই। এনআইএ এর বিরুদ্ধে আবেদন করে এবং কয়েক দিনের মধ্যে আদালত নিজেদের রায়ের বিরোধিতা করে বলে তাঁর সাথে মাওবাদীদের যোগাযোগ পাওয়ার কারণে তাঁরা পুনর্বিবেচনা করে রায়ের ওপর এক সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিচ্ছেন। সেই এক সপ্তাহ এখনো চলছে! কোন না কোন অজুহাতে আজ পর্যন্ত সেই স্থগিতাদেশ বহাল আছে।
একই ভাবে প্রসিদ্ধ মানবাধিকার কর্মী গৌতম নাভলাখা ডিসেম্বর ২০২৩ জামিন পান এবং প্রায় সাথে সাথেই এনআইএর আবেদনের কারণে আদালত জামিনের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করে। এর মধ্যে শারীরিক অসুস্থতার কারণে কারাগার থেকে সরিয়ে তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে গৃহবন্দিত্ব বা হাউস এরেস্টের কোন কনসেপ্ট ভারতীয় আইনে স্বীকৃত নয়। যেহেতু গৌতম নিজে গৃহবন্দি হওয়ার আবেদন করেছিলেন, তাই আদালত শর্ত দেয় যে গৃহবন্দিত্বের খরচ (সিসিটিভি লাগান, যাঁরা প্রহরায় থাকবেন তাঁদের পারিশ্রমিক ইত্যাদি) অভিযুক্তকেই বহন করতে হবে। শেষ যা জানা গেছে সেই খরচ নাকি প্রায় দেড় কোটিতে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে এই খরচ নিয়ে এনআইএ এবং অভিযুক্তের আইনজীবীর মধ্যে দরাদরি চলছে।
আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে চূড়ান্ত ভাবে হেনস্থা করা, বারবার বুঝিয়ে দেওয়া নিপীড়িত শ্রেণী, লিঙ্গ, জাতপাতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছ তো তুমি শেষ। বনে জঙ্গলে খনন হচ্ছে, বড় বড় কর্পোরেট মাইনিং করছে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার, সংগ্রামি আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানর কোন অধিকার তোমার নেই। সোমা, সুধা, মহেশ, গৌতম এঁরা তো সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, আর যাঁরা নন? ২০২২য়ে ইউটিউবে ফাদার স্ট্যান স্বামীর ওপর একটি ভিডিওতে পারাকালা প্রভাকর জানাচ্ছেন ওই বছরের মার্চ মাসে ইউএপিএতে অভিযুক্ত ১২২ জন ১৯ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পেয়েছেন। ভাবা যায়! এতগুলো বছরে তাঁদের নিয়মিত আদালতে যেতে হয়েছে, জেল থেকে থানায় যেতে হয়েছে। অরুণ ফেরেরা, কার্টুনিস্ট, বিকে মামলায় অভিযুক্ত ২০০৭ থেকে ২০১২ কারাবাস করেছেন, ২০১৮য় পুনরায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং পাঁচ বছর বাদে মুক্তি পেয়েছেন। সেই মাওবাদী অভিযোগ, কিন্তু কোন কিছুই প্রমাণিত নয়। আমাদের রাজ্যে গৌর চক্রবর্তী সাত বছর ইউএপিএতে কারাগারে থাকার পর ২০১৬য় মুক্তি পেয়েছেন। এই তালিকার শেষ নেই, এই নরক-যন্ত্রণারও শেষ নেই।