শুরুর চারকথা
প্রথমেই বলে রাখা যাক, লেখাটি অসম্পূর্ণ। সম্পূর্ণ মহাভারত রচনা কারও একার কম্মো নয়। এই লেখকেরও সেরকম সাধ্যি নেই। যুগে যুগে লিখতে হবে, মিলেমিশে লিখতে হবে; নাহলে তা আর মহাভারত হয়ে উঠবে কি উপায়ে! কিছুটা ভারতবর্ষের নানান বিদগ্ধ রাজনীতিকরা লিখেছেন মুখে মুখে, কিছুটা এই অকিঞ্চিৎকর লেখক প্রয়াস পাইলেন নিজের সীমিত জ্ঞানভাণ্ডার মাঝে চিরুনিতল্লাশি চালিয়ে। বাকিটা আপনারা লিখুন। আপনারা মানে যাঁরা প্রকৃতই সত্যানুসন্ধিৎসু, যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় খিল্লি হয়ে যেতে ভয় পান না বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। জুড়তে থাকুন যে যার মতো, কারণ একমাত্র সেইভাবেই ভারত মহা হইয়া উঠিতে পারে। ব্লগে লিখুন, ডায়রীতে লিখুন, গদ্যে লিখুন, শায়রীতে লিখুন, ফাঁকা দেওয়াল পেলে লিখে দিন, বোকা বালক ধরে জিকে দিন; মোদ্দা কথা যেভাবে পারেন ছড়িয়ে দিন আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের কথা।১
রামের জন্ম অযোধ্যাতেই হয়েছিল। সেসব নিয়ে আমরা কোনো তর্কে যেতে চাই না। বাবরি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ যেখানে, ঠিক সেখানেই অবস্থিত ছিল দশরথের বাড়ির আঁতুরঘর। কিন্তু মানুষ অনেক কিছুই মানেনা বা মানতে চায় না। এটা মানুষের সমস্যা। বিশেষত সে মানুষ যদি শিক্ষিত হয় তখন সে প্রমান চাইবে, জিজ্ঞেস করবে বিজ্ঞান এই কথার মান্যতা দেয় কিনা, পুরাতত্ত্ববিদরা এ বিষয়ে কি বলে; এইসব হাজারো টালবাহানা করে পেট ভরলে তবে সে ভেবে দেখবে যে একটা ব্যাপারকে সন্দেহ করা উচিত নাকি মেনে নেওয়া উচিত।২
যুদ্ধের মূল গল্পটা শরিকি বিবাদ সংক্রান্ত। পূর্বপুরুষের প্রপার্টির ভাগ নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে ক্যাচাল। কৌরব আর পাণ্ডবদের মধ্যে জনমত নিজেদের দিকে টানার প্রতিযোগিতা। এর জন্য তারা নিজেদের ট্রোল আর্মি বানিয়ে যে যার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে উঠে পরে লাগে। কৌরবদের ট্রোল আর্মি পাণ্ডবদের ট্রোল আর্মি-র চেয়ে অনেক বড় ছিল। কিন্তু মাইটি হিন্দু গড শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং পাণ্ডবদের পক্ষে শেপার্ড ট্রোল-এর ভূমিকা নেওয়ার ফলে তারা বিশেষ এঁটে উঠতে পারেনি। তাঁর হাতে নারায়ণী সেনা নামক যে প্রাইভেট ট্রোল আর্মিটি ছিল সেইটা অবশ্য কৌরবরা কান্নাকাটি করে বাগিয়ে নেয়। কিন্তু তাতে কি? কে না জানে যে লক্ষ লক্ষ শীপ ট্রোল অ্যাকাউন্ট-এর চাইতে একটি অথেন্টিক শেপার্ড ট্রোল অ্যাকাউন্ট অনেক বেশি হাঙ্গামা তৈরী করার ক্ষমতা রাখে। তিন লক্ষ ন্যাশনালওয়ারিয়ার_১৯৯৮ আর দু'লক্ষ ভারত_কা_সাচ্চা_বেটা_৩২৫ বস্তুত কিছুই করে ওঠার ক্ষমতা রাখে না যদি না পরেশ রাওয়াল জাতীয় কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে একটা জব্বর টুইট বেরোয় মার্কেটে।৩
মহাভারতের পাতায় নানারকম সৈন্যব্যূহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, যুদ্ধটা যদি সত্যিই ফেসবুকে তথা কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরের বদলে কুরুক্ষেত্র ডট কম নামক একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট-এ হয়ে থাকে তাহলে এসব ব্যূহ-ফ্যূহ কি ঢপের কথা? --- একেবারেই না। প্রথমেই বুঝতে হবে যে সৈন্য বলতে বোঝানো হচ্ছে ট্রোল আর্মি। এবার ধরা যাক একটা লড়াই হচ্ছে যেখানে আপনি এবং আপনার শত্রু দুজনেই নিজেদের ট্রোল আর্মি নামিয়ে দিয়েছেন। আপনার থেকে আপনার শত্রু-র ট্রোল আর্মি অনেক বড়। তার ওপর আবার আপনার ট্রোল আর্মির হাতে যথেষ্ট তথ্য বা যুক্তি ইত্যাদি নেই। এইবার এই পরিস্থিতিতে কিভাবে সেনা সাজালে আপনি যুদ্ধটা তুড়ি মেরে জিতে যেতে পারবেন সেই কৌশলকেই ব্যূহ নামে ডাকা হয়। ধরুন আপনার শত্রু একা পরে গেছে, বা তার দলের একটি ট্রোল অ্যাকাউন্ট ঘুরতে ঘুরতে আপনার ওয়ালে এসে পড়েছে, তখন আপনি ব্যবহার করবেন সূচিব্যূহ। এই ব্যূহের নিয়মানুসারে সবাইকে একই কথা বলে যেতে হবে নানাভাবে। মানে একজন যদি বলে "এটা কিন্তু মেনে নেওয়া গেলো না" তাহলে আরেকজনকে বলতে হবে "তাই বলে আপনি এরকম বলবেন!" মানে অভিব্যক্তি আলাদা হলেও মোদ্দা বক্তব্যটা এক থাকতে হবে যতক্ষণ না সূঁচের ঘায়ে শত্রুপক্ষের ট্রোলটি ফালাফালা হয়ে রণে ভঙ্গ দিচ্ছে। এইরকমই মকরব্যূহ বা গর্ভব্যূহ সবেরই আলাদা আলাদা ব্যবহার রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় থেকে চক্রব্যূহের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ তুলে আনা যাক। এখানে শ্রী অনিন্দ্য সেনগুপ্ত সৃষ্ট এই মিমটি দ্রষ্টব্য।৪
সম্প্রতি, ত্রিপুরায় না কোথায় যেন, মহাভারতের আমলের একটি জাম্বো পেন ড্রাইভ পাওয়া গিয়েছে। স্বভাবতই এই নিয়ে হইচইয়ের অন্ত নেই। অনেকেই বলছেন, ওটি নাকি পেন ড্রাইভ নয়। হত্তেই পারে না! ওটি নাকি নিতান্তই ভিতরের লোহার কাঠামো বেড়িয়ে যাওয়া কোনো একটি পথপার্শ্ববর্তী বসবার জায়গা জাতীয় কিছু একটা। পুনরায় বলে নেওয়া যাক, না! যাঁরা এসব বলছেন তাঁদের দোষ ধরে কোনো লাভ নেই। এসব যুগ যুগ ধরে চলে আসা চক্রান্ত এবং অজ্ঞানতার ফল। মানুষকে ভাবতে শেখানো হয়েছে যে পুরাকালে হিন্দুরা নিতান্তই অনুন্নত ছিল। ফলে একথা স্বাভাবিক যে পেন ড্রাইভকে উন্নত প্রযুক্তি বলে মনে করে যে পিছিয়ে থাকা জনজাতি, তারা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মহাভারতের সময়কার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কথা কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু আমরা হলফ করে বলতে পারি যে নিচের ছবির বস্তুটি শুধু একটি পেন ড্রাইভই নয়, ওটি একটি ফেলে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় পেন ড্রাইভ।উপসংহার
এইরকম আরও অনেক ঘটনার কথাই বলা যায়। যেমন, সঞ্জয় কোনো লাইভস্ট্রিমিং দেখছিলেন না। তিনি নিতান্তই কুরুক্ষেত্র ডট কম খুলে রেখে কে কি লিখেছে সেইসব পরে শোনাচ্ছিলেন ধৃতরাষ্ট্রকে। তারপর দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ তথা ভীমকর্তৃক সেই বিলো দ্য বেল্ট আঘাত আসলে "বাপের পয়সায় বিপ্লব হয় না। তুই আগে নিজে রাজা হ, তারপর এসব বাতেলা দিবি" জাতীয় কোনো যুক্তি। তারপর যেমন, অর্জুন আসলে কোনো যুদ্ধ থেকে সরে যেতে চাননি। তিনি নিজের কুরুক্ষেত্র অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করতে চেয়েছিলেন। তখন কৃষ্ণ তাঁকে, "ডিঅ্যাক্টিভেট কেন করবি রে পাগলা? তবে শোন" বলে নিজের ১০৮ খানি ফেক প্রোফাইলের নাম বলে দেন। এইসব।