আজব খবর -১
২০১৬ সালে একটি সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ভারতীয় সেনায় ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দিতে গেলে সেনা আধিকারিকরা উল্টে তাকে জেলে পুরে দেওয়ার হুমকি দেন। কারণ পদপ্রার্থীর পেশ করা ডকুমেন্টে গন্ডগোল ছিল। ভারতীয় সেনার মতে ভুয়ো ডকুমেন্ট। ব্যারাকপুরের ঘটনা।
খবর - ২
২০১৮ সাল। ওই একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই ছাত্র ভারতীয় উপকূলরক্ষীবাহিনীতে চাকরি পায়। কিন্তু শেষ অবধি তারা যে চাকরিতে যোগ দিতে পারেনি তার কারণ তাদের পেশ করা সার্টিফিকেট, রেজাল্ট, ইত্যাদির সত্যাসত্য যাচাই অসম্ভব বলে জানিয়ে দেয় উপকূলরক্ষীবাহিনী। অথচ যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ছাত্ররা পড়াশোনা করেছে সেটি কাগজপত্রের হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিং, প্রণব মুখার্জীর মতো হেভিওয়েট নেতাদের ঘুরে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান, গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, মালদা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অনশন-আন্দোলনের সুবাদে বেশ কয়েকদিন ধরেই কানে আসছিলো যে মালদা মেডিক্যাল কলেজেও কিছু একটা চলছে। কানে আসছিলো বলার চেয়ে চোখে পড়ছিলো বলা ভালো বরং, সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-একটা মন্তব্য দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু বিশদে বোঝা যাচ্ছিলো না কিছুই। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, মেডিক্যাল নয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কিন্তু কলেজ কি বলা যায়? নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? নাকি শুধুই কয়েকটি বিল্ডিং যার কোথাও কোনোদিন সঠিকভাবে নিবন্ধীকরণই হয়নি। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো পাওয়া যেতে পারতো প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের থেকে, কিন্তু মজার বা ভয়ের ব্যাপার হলো, তাঁরা নিজেরাও এ বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখেন না। ২০১৬ থেকে ধরলে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা এই নিয়ে তৃতীয় দফায় আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সদুত্তর তারা পায়নি কর্তৃপক্ষের থেকে। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও তথৈবচ।
GKCIET অর্থাৎ গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। MHRD তথা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, দুর্গাপুরের অধীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মডিউলার প্যাটার্নে শিক্ষা ও তৎপরবর্তী শংসাপত্র প্রদানের কথা ছিল। মডিউলার প্যাটার্ন হওয়ার ফলে মাধ্যমিকের পর ৬ বছরের মধ্যে একেবারে B.Tech সম্পূর্ণ করে বেরোনোর আশায় অল ইন্ডিয়া এন্ট্রান্স টেস্ট-এর মাধ্যমে প্রথম বছর ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হন। সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রমটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগ দু'বছর করে। অর্থাৎ, মাধ্যমিকের পর প্রথম ২ বছর সার্টিফিকেট কোর্স যা ভোকেশনাল কোর্সে উচ্চ-মাধ্যমিকের সমতুল অথবা আইটিআই সমতুল্য ডিগ্রি, দ্বিতীয় ২ বছর – ডিপ্লোমা অর্থাৎ পলিটেকনিকের সমতুল, তৃতীয় ২ বছর – বি টেক ডিগ্রী। এই প্রত্যেক দু'বছরেই পুরোনো ছাত্রছাত্রীরা যে কেউ, যাঁরা সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমাতেই সন্তুষ্ট, কোর্সটি ছেড়ে দিতে পারেন এবং ভর্তি নেওয়া যেতে পারে নতুন ছাত্রছাত্রীদেরও।
শুরুতে ইনস্টিটিউটের কোনো নিজস্ব বিল্ডিং ছিলনা। ক্লাস হতো মালদা পলিটেকনিক কলেজের কাছে গভর্নমেন্ট টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভিতর ভাড়া করা সরকারী জায়গায়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্পূর্ণ করে। মালদার নারায়ণপুরে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং। উপস্থিত ছিলেন সোনিয়া গান্ধীও। সেইদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক বড় বড় কথা হয়েছিল। যেমন কিভাবে এই মডিউলার কোর্সের মাধ্যমে ছাত্রদের দক্ষতার বিকাশ ঘটবে, অথবা কিভাবে অদূর ভবিষ্যতেই GKCIET মালদার প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য হয়ে উঠতে চলেছে M.Tech বা Ph.D-র সোপান, কিভাবে এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা কাজ পেতে পারেন এই প্রতিষ্ঠানেই, ইত্যাদি।
এরপর ২০১৪ সালে ক্যাম্পাসে নতুন বিল্ডিং-এর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন ভারতবর্ষের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জী। ২০১৪ সালেই ২০১০, ২০১২ এবং যাঁরা নতুন ভর্তি হলেন সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চালু হয় বি.টেক। ২০১৬তে এই ব্যাচটির উত্তীর্ণ হওয়ার কথা ছিল আর গন্ডগোলের সূত্রপাত ঠিক তখনই।
(ক্রমশঃ)