এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ভাবনার নিষ্ক্রিয়তা, নিষ্ক্রিয়তার ভাবনা

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৯৪৩ বার পঠিত
  • ১।
    পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে গুরুচন্ডালির পক্ষ থেকে যে খসড়া প্রস্তাবগুলি পেশ করা হয়েছিল তা কয়েকটি পর্বে ‘একদিন’এ প্রকাশিত হয়েছে। অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘একদিন’এ প্রকাশিত তাঁর ‘এই কারণে ভাবনার জন্য ভাবনা হয়’ শীর্ষক নিবন্ধে তার বেশ কিছু মূল্যবান সমালোচনা করেছেন। তাঁর লেখাটি বেশ কিছু প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। এই ছোট্টো লেখাটিতে ক্ষুদ্র পরিসরে সমালোচনাটির কিছু প্রশ্নের জবাব দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্পিতা তাঁর প্রকাশিত লেখায় মূলতঃ দুটি বিন্দু থেকে প্রস্তাব-সংক্রান্ত সমালোচনাটিকে নির্মাণ করেছেন। সেই দুটি বিন্দুকে কেন্দ্র করেই এই জবাবী আলোচনাও নির্মিত হচ্ছে। এতে করে নিঃসন্দেহে বেশ কিছু প্রসঙ্গ অনুল্লেখিত থেকে গেল। সে বিষয়ে প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরও বিশদে বলা যেতে পারে।

    খসড়া সংক্রান্ত সমালোচনায় যে দুটি বিন্দুকে ঘিরে অর্পিতার রচনাটি আবর্তিত হচ্ছে, তার প্রথম বিন্দুটি হল এক্তিয়ারের প্রশ্ন। ‘আমরা’ (পড়ুন এলিটরা), যারা সরকারের পলিসি কী হবে এই নিয়ে ‘নিদান’ দিচ্ছি, তাদের কি এক্তিয়ার আছে, যাদের নিয়ে বা যাদের জন্য এই নীতিমালা লিখনের তোড়জোড়, তাদের কথা আমাদের মতো করে বলে দেবার? এই হল অর্পিতার প্রশ্ন। তিনি সাফসাফ জানিয়েছেন, ‘যাদের গরিবিকে কুমির ছানার মতো দেখিয়ে এই উন্নয়নের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে পলিসি ভাবার আগে তাদের অনুমতি নিয়েছি কি?’

    প্রাথমিক ভাবেই এই সমালোচনাবিন্দুটি নিতান্তই গোলমেলে মনে হয়। সাধারণভাবে একটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, সে ‘এলিট’ হোক বা না-হোক, স্রেফ টিকে থাকার কারণেই একটি বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে। এবং এই দৃষ্টিভঙ্গীর কিছুটা তার/তাদের ব্যক্তিগত/গোষ্ঠীগত অভিজ্ঞতাপ্রসূত, কিন্তু বেশিরভাগটাই আন্দাজ বা অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন। যেমন, জর্জ বুশ সম্পর্কে কোনো প্রত্যক্ষ ধারণা না থাকা সত্ত্বেও, কখনও ইরাক বা আফগানিস্থানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও আমাদের ‘প্রগতিশীল’ গোষ্ঠীরা আমেরিকান ‘আগ্রাসন’এর প্রতিবাদ করেছেন। সেক্ষেত্রে এ প্রশ্ন কখনও ওঠেনি, যে, ইরাক বা আফগানিস্থানের ‘জনগণ’এর তরফে ‘নিদান’ হাঁকার অধিকার কি আদৌ রয়েছে দুনিয়ার ‘প্রগতিশীল’ বা ‘এলিট’ গোষ্ঠীর? প্রতিবাদ করার আগে ঐসব দেশের ‘জনগণ’এর অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা সে প্রশ্নও কখনও ওঠেনি। উঠলে সেটা হাস্যকরই মনে হত। কারণ, একটি বিশেষ বিষয়ে কোনো একটি অবস্থান নিতে হলে, এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ, যে, সেই অবস্থান সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সকল দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিনিধিত্ব করেনা। বরং একটি বিশেষ বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গীকেই উপস্থাপন করে। অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনের কারণে সেটি অতি অবশ্যই খন্ডিত, আংশিক। কিন্তু তার জন্য মতপ্রকাশ থমকে থাকেনা। সেটা কোনো অপরাধও নয়। কারণ সম্পূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করতে হলে কোনো বিষয়েই মুখ খোলা বস্তুতঃ অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিন সেনা হটানোর দাবী তুলতে হলে ইরাকের জনগোষ্ঠীর অনুমতি নিতে হবে, বা নন্দীগ্রামে গুলিচালনার প্রতিবাদ করতে হলে আগে নন্দীগ্রামের তাবৎ জনগোষ্ঠী কী ভাবেন তা খতিয়ে দেখতে হবে, এরকম দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করলে কোনোদিনই নন্দীগ্রাম বা ইরাক নিয়ে কোনো কথা বলা যেতনা।

    ফলে ‘সম্পূর্ণতা’ একটি অলীক অবস্থান, যার জন্য অপেক্ষা করতে হলে কোনো অবস্থান নেওয়াই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অর্পিতা কি তাহলে ‘সম্পূর্ণতা’র অভাবজনিত কারণে অবস্থানহীনতার পক্ষে? হয় ‘সম্পূর্ণতা’ নয় ‘নীরবতা’, এরকম একটি দার্শনিক অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করছেন? এমন একটি ‘সার্বজনীন’ ডিসকোর্স নির্মান করতে হবে, যা, সকল বর্ণ ও সমস্ত স্বরের উপস্থিতে ঋদ্ধ ও ‘সম্পূর্ণ’, এরূপ একটি অলীক কল্পনায় বিশাস স্থাপন করছেন? সমগ্র আলোচনাটি থেকে এই প্রশ্নটির স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। যদিও সম্পূর্ণতার দাবিটি গোটা আলোচনাতেই প্রচ্ছন্ন ভাবে উপস্থিত। এবং এই অবস্থানটিই আলোচনাটিকে যৌক্তিকভাবে এগিয়ে দিয়েছে তার পরবর্তী গন্তব্যে। যে গন্তব্যকে ছোটো করে লিখতে গেলে তা এরকম দাঁড়ায়, যে, নীতিনির্মাণের এই যে ডিসকার্সিভ অনুশীলন, তা ‘অসম্পূর্ণ’ এবং এক্তিয়ার-বহির্ভূত, কারণ এটি মূলতঃ এলিটদের অনুশীলন। সেই অনুশীলনে প্রান্তিক মানুষের কোনো স্থান নেই। প্রান্তিক এবং/অথবা নিম্নবর্গীয় মানুষদের নিয়ে নীতিমালা রচিত হয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা ঘরে বসে, কিন্তু সেই নীতিমালায় প্রান্তিকতার ‘নিজস্ব’ কন্ঠস্বর উপস্থিতিহীন । এমনকি সেই কন্ঠস্বরের সঙ্গে ডায়ালগে যাবারও কোনো প্রচেষ্টা নেই। ফলত এই অনুশীলন, জ্ঞানের ক্ষমতার একটি একমুখী সরবরাহব্যবস্থা, যেখানে ডায়ালগের কোনো জায়গা নেই।

    খুঁটিয়ে পড়লে দেখা যাবে ‘সম্পূর্ণতা’র অভাব, এবং তৎসহ অভিযোগসমূহ এই অবস্থানের প্রতিটি পংক্তিতে বিরাজমান। কিন্তু তার সঙ্গে এখানে যোগ হয়েছে আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয়। অর্পিতার যুক্তিপরম্পরা দেখাচ্ছে, যে, এলিটকূল রচিত যেকোনো নীতিমালাই ‘অসম্পূর্ণ’, উপর থেকে চাপানো, কারণ, তাতে নিম্নবর্গীয়দের ‘নিজস্ব’ কন্ঠস্বরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। অসম্পূর্ণতার কাঠামোটি নির্মাণ করতে গিয়ে এই ‘নিজস্বতা’ নামক বর্গটিকে অর্পিতাকে ব্যবহার করতে হয়েছে। ‘অসম্পূর্ণতা’র অভিযোগটি তাঁর আলোচনায় প্রচ্ছন্ন। কিন্তু যুক্তিপরম্পরা নির্মাণের প্রক্রিয়ায় ‘নিজস্বতা’ নামক বর্গটির উপস্থিতি কিন্তু প্রকট। তাঁর লেখায় বারবার এই প্রসঙ্গটি এসেছে। কখনও ‘তাঁদের হয়ে নীতি-নির্ধারণ করার সময় প্রত্যেক আলুচাষকারী, প্রত্যেক পাঁপড়-আচার প্রস্তুতকারী আর প্রত্যেক চটের থলে প্রস্তুতকারীর স্বেচ্ছা-অনুমতি নিয়ে তবে নীতি বানানোর কথা ভাবছি তো?’ -- এই আকারে। কখনও ‘আদিবাসী’দের ‘জল-জঙ্গল-জমিনের’ অধিকার ‘পাইয়ে দেওয়া’র প্রসঙ্গে। কখনও অন্যভাবে।

    বস্তুতঃ এই নিম্নবর্গের ‘নিজস্বতা’ নামক বর্গটি অর্পিতার আলোচনার হৎপিন্ড। মজার কথা হচ্ছে, এই ‘নিজস্বতা’ এবং তাকে খুঁজে বার করার প্রকল্প সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। নিম্নবর্গীয়দের নিয়ে কথা বলার আগে, নিম্নবর্গীয়দের ‘নিজস্ব’ চিন্তাভাবনাকে আবিষ্কার করতে হবে, ‘এলিট’ ডিসকোর্সের চক্রব্যূহ ভেদ করে খুঁড়ে বার করতে হবে তাদের ‘প্রকৃত’ সত্ত্বাকে, এই রোমান্টিক অবস্থান, ইতিপূর্বেও আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে আমরা স্মরণ করতে পারি আশির দশকের নিম্নবর্গীয় ইতিহাস বা ‘সাবল্টার্ন স্টাডিজ’ চর্চার প্রাথমিক বিন্দুটিকে। সে সময় একদল ঐতিহাসিক, ‘সাবল্টার্ন স্টাডিজ’ নামক একটি ছাতার নিচে সমবেত হন, প্রায় এই একই কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে। ‘সাবল্টার্ন স্টাডিজ’এর ইতিহাস প্রসঙ্গে এই ধারার অন্যতম পুরোধা পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যে, এই ধারার প্রাথমিক কর্মসূচীতে দুটি বিষয় প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছিল। ‘এক, ঔপনিবেশিক আর দেশীয়, দু-ধরণের উচ্চবর্গের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আর পদ্ধতির সঙ্গে নিম্নবর্গের রাজনীতির পার্থক্য। দুই, নিম্নবর্গীয় চেতনার নিজস্বতা।’ (পার্থ চট্টোপাধ্যায় -- নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার ইতিহাস )। এই ‘নিম্নবর্গীয় চেতনার নিজস্বতা’ খুঁড়ে বার করা ছিল এই ধারার ইতিহাস চর্চার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী। অর্পিতার ঘোষিত অ্যাজেন্ডার সঙ্গে যা একেবারে মিলে যায়।

    এই বিশেষ কর্মসূচীতে মনোনিবেশ করে তৎকালীন ঐতিহাসিকরা নানা ভাবে খননকার্য চালিয়ে এই নিজস্বতা খুঁড়ে বার করার চেষ্টা করেন। যেহেতু কর্মসূচীটি এক, তাই এই অনুশীলনকার্য ও তার ফলাফল এই আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে বড়ো করে আলোচনার অবকাশ নেই, শুধু এইটুকু উল্লেখ করা যেতে পারে, যে, পরবর্তীকালে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের দুটি সমালোচনার পর এই "নিজস্বতা' খুঁড়ে বার করার প্রোজেক্টটি থেকে সাবল্টার্ন স্টাডিজ সরে আসে। কারণ গায়ত্রী দেখিয়েছিলেন, যে, নিম্নবর্গ তার ‘নিজের’ কথা কখনই বলতে পারে না। খননকার্যে লিপ্ত ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি দেখান, যে, ‘...it is only the texts of counter-insurgency or elite documentation that give us the news of the con-sciousness of the subaltern.’ (গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক – সাবল্টার্ন স্টাডিজঃ ডিকন্সট্রাক্টিং হিস্টোরিওগ্রাফি)। অর্থাৎ সাবল্টার্ন সততই প্রকাশিত হয় কেবলমাত্র এলিট-উচ্চারিত টেক্সটে। এলিট-উচ্চারণহীন ‘বিশুদ্ধ’ কোনো সাবল্টার্ন নেই। তাই তার ‘নিজস্বতা’ খুঁড়ে বার করা একটি অলীক প্রকল্প।

    গায়ত্রীর সমালোচনাটি তাত্ত্বিক আলোচনা। তত্ত্ব থেকে সরে এসে সোজা বাংলায় বলতে গেলে ‘সবার উপর নিম্নবর্গ সত্য’ - এরকম কোনো আপ্তবাক্যে বিশ্বাস রাখা আজ অসম্ভব। প্রথমত নিম্নবর্গ যে কথা বলে, তা সর্বদাই কোনো না কোনো ভাবে অ্যাপ্রোপ্রিয়েটেড হচ্ছে। তার চৈতন্যকে ‘প্রভাবিত’ করছে এলিট মিডিয়া। তার চাহিদাকে ‘কলুষিত’ করছে বাজার। এবং এর পরেও তার কন্ঠস্বরকে ইন্টারপ্রেট ও এডিট করছে এলিট চৈতন্য। এই গোটা প্রক্রিয়ার পর কোনটা নিম্নবর্গের ‘নিজস্ব’ কন্ঠস্বর, তার আবিষ্কার করা হবে কোন মাপকাঠিতে? কোনো মাপকাঠি বানাতে গেলে সেটি নিজেই তো আবার ‘এলিটত্ব’এর দোষে দুষ্ট হয়ে যাবে। অর্পিতার নিজস্ব কর্মসূচীই এর একটি চমৎকার উদাহরণ। তিনি যে ‘নিজস্বতা’র কথা বলছেন, যাকে খুঁড়ে বার করার প্রকল্পের কথা বলেছেন, সেই প্রকল্পটি নিজেই তো একটি ‘এলিট’ অবস্থান। ‘এলিট’ অবস্থানে না পৌঁছলে ‘নিম্নবর্গ’ নামক বর্গটির উচ্চারণই অসম্ভব।

    দ্বিতীয়ত ‘এলিটত্ব’ বা ‘নিম্নবর্গত্ব’ তো কোনো বিশুদ্ধ বর্গ নয়, যাকে একটি নির্দিষ্ট মানুষ বা গোষ্ঠীর গায়ে সন্দেহাতীতভাবে মেরে দেওয়ার লেবেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, জীবিকাগতভাবে ‘উচ্চস্তর’এ বিরাজ করেন এমন মানুষও ক্ষমতার অলিন্দে প্রান্তিক হতে পারেন। ব্যবস্থার দানবিক জটিলতার সামনে দাঁড়িয়ে তথাকথিত ‘এলিট’ মানুষও স্তব্ধবাক প্রান্তিকতায় পৌঁছে যেতে পারেন (কাফকা প্রণীত জোসেফ কে’র উপাখ্যান স্মর্তব্য)। আবার তথাকথিত ‘নিম্নবর্গ’এর মানুষও ‘নিজস্ব’ উচ্চারণে ‘এলিট’ ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারেন (আন্তোনিও গ্রামশি স্মর্তব্য)। ফলে ‘বিকল্প’ ব্যবস্থার খোঁজে ‘নিম্নবর্গ’এর উচ্চারণের উপর যেমন পরিপূর্ণ ‘নিম্নবর্গত্ব’ আরোপ করা যায়না, তেমনই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ‘এলিট’দের আকুতিকেও স্রেফ ‘এলিটত্ব’এর কারণেই বর্জন করা যায়না।

    আমরা একটি বাস্তব জগতে বসবাস করি, যেখানে নিখাদ নিম্নবর্গত্বকে খুঁজে বার করা যায়না। এখানে এটি আদতে একটি মীমাংসিত তর্ক, যে, এলিটত্বহীন কোনো ‘বিশুদ্ধ’ নিম্নবর্গীয় অবস্থান অসম্ভব। ‘প্রভাবহীন’ ‘বিশুদ্ধ’ নিম্নবর্গীয় অবস্থান একটি অলীক কল্পনা। সেই কল্পিত ছায়াশরীরের সঙ্গে ডায়ালগ অবাস্তব। সেই ডায়ালগের জন্য অপেক্ষা আদতে শবরীর প্রতীক্ষা। এবং সব মিলিয়ে এই প্রতীক্ষার দর্শনটি আদতে নিষ্ক্রিয়তার তাত্ত্বিক অভিব্যক্তি।

    এই নিষ্ক্রিয়তার অভিব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা এমন একটি তাত্ত্বিক অবস্থানের কথা বলার চেষ্টা করছি, যে, তার অসম্পূর্ণতাকে স্বীকার করে। কিন্তু সম্পূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করেনা। সে স্বীকার করে, যে, তার রচিত নীতিমালা জন্মদোষেই অসম্পূর্ণ। অসম্পূর্ণতাই তার জন্মদাগ। তার ডায়লগহীন জন্মমুহূর্তের কথা সে স্বীকার করে। কিন্তু এই তাত্ত্বিক অবস্থান তো শুধু টেক্সটে সীমাবদ্ধ নয়। নিষ্ক্রিয়তায় সীমাবদ্ধ নয়। কাজেই শুধু স্বীকার করেই সে ছেড়ে দেয়না। সে প্র্যাক্সিসের জায়গায় আসার চেষ্টা করে। এমন একটি নীতিমালা সে বানানোর চেষ্টা করে, যা ডায়ালগের জায়গাগুলোকে উন্মুক্ত করবে। ডায়লগের চ্যানেলগুলোকে খুলে দেবে। টিভি, ইন্টারনেট, মুখোমুখি, ইন্টারপ্রিটেশনের সমস্ত চ্যানেলগুলিই সে এক্সপ্লোর করবে, যাতে ডায়লগ শুরু করা যায়।

    আমাদের খসড়া প্রস্তাব অবিকল এই জিনিসটিই করেছে। ছত্রে ছত্রে সে ডায়লগের জায়গাগুলিকে খুলে দেবার, এক্সপ্লোর করার কথা বলেছে। কিন্তু এই প্রাথমিক এক্সপ্লোরেশনের জায়গাটি ডায়লগহীন হতে বাধ্য। ডায়ালগ নির্মাণের প্রস্তাবের নীতিমালা নিজেই ডায়ালগের জন্য অপেক্ষা করতে পারেনা। করলে, তা হবে নিষ্ক্রিয়তার অন্য নাম।

    ২।
    এই পূর্বোল্লেখিত ‘নিষ্ক্রিয়তা’ একটি নৈতিক বর্গ, যাকে আমরা অর্পিতার সমালোচনার দ্বিতীয় বিন্দুটি প্রসঙ্গে পুনরায় ব্যবহার করব। তাঁর আলোচনার দ্বিতীয় বিন্দুটিতে অর্পিতা যে বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেছেন, তার মূল কথা হল আমাদের উচ্চারিত নীতিমালা বস্তুত প্রচলিত ব্যবস্থা, এবং তার বর্গসমূহকে বৈধতা প্রদান করছে। ‘আমরা কোনও সামগ্রিক বর্গকে (যেমন বাজার, যেমন পিতৃতন্ত্র, যেমন ক্ষমতা) নিয়ে তেমন ভাবিত নই, উল্টে ডান-বাম নির্বিশেষে দশকের পর দশক ধরে এই বর্গগুলিকে বৈধতা দিয়ে বসে আছি। কারণ এই বর্গগুলির কোনও বাহির বা আউটসাইড আমাদের ধারণার অতীত।’ -- এই জায়গা থেকে শুরু করে ক্রমশ অর্পিতার মনে হচ্ছে ‘উন্নততর গভর্নেন্স’ এর দাবি আদতে ‘মিশেল ফুকোর মৃতদেহের সৎকার-গাথা’। নজরদারির প্রকরণকে মনে হচ্ছে প্যানপ্টিকনের নবজন্ম। এবং সর্বশেষে তিনি এই সিদ্ধান্তে আসছেন, যে, ‘আমরা স্বীকার করতে ভয় পাই যে হেজিমনির দাসত্ব আমরাও করে চলেছি, উদ্বৃত্ত শ্রম চুরি করে উন্নত হচ্ছি, বাজার-ব্যবস্থার উপস্থিতিতেই সরকার-রাজাবাহাদুরের প্রধানমন্ত্রী (অথবা সরকার-ভগবানের পুরোহিত) হয়ে বসেছি আমরা’।

    সব মিলিয়ে, খসড়া সংক্রান্ত অভিযোগটি এই, যে, খসড়ায় আমরা প্রচলিত বর্গসমূহকে নিয়ে প্রশ্ন তো তুলছিই না, বরং চালু ব্যবস্থাকে বৈধতা প্রদান করার চেষ্টা করছি। আমরা প্যানপ্টিকনের কাছে আত্মসমর্পণ করছি। আমরা পুঁজির কাছে আত্মসমর্পণ করছি। আমরা বাজার ও প্রশাসনিকতার বিকল্পের কথা না ভেবে বাজারি কাঠামো ও প্রশাসনিকতার চালু ঘরানার মধ্যে মুখ গুঁজে, এই ব্যবস্থাটিকেই ‘দক্ষতর’ করে তোলার পক্ষে ওকালতি করছি।

    এই সমালোচনার একটা সহজ উত্তর হতে পারে এই, যে, চালু কাঠামোকে বা তার বর্গসমূহকে ‘ব্যবহার’ না করলে কোনোপ্রকার উচ্চারণই অসম্ভব। এগুলিকে ‘ব্যবহার’ প্রত্যেকেই করেন। অর্পিতা নিজেও করেছেন। আমাদের নীতিমালার উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বাজার ও পুঁজিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে নদী বা সমুদ্র, কিংবা নিদেন পক্ষে কোনো প্রান্তিক গ্রামীণ হাটে চিৎকার করে তাঁর সমালোচনাটিকে উচ্চারণ করতে পারতেন। তাহলে তা প্রচলিত ব্যবস্থা ও বর্গসমূহের ‘আউটসাইড’এ যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে গণ্য করা যেত। কিন্তু অর্পিতা তা করেননি। কারণ এইভাবে ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বাইরে বেরিয়ে গেলে অর্পিতার উচ্চারিত বাক্যসমূহ আমাদের কর্ণগোচর হতনা। সেই কারণেই তিনি খুব কৌশলে, সংবাদপত্র নামক একটি মাধ্যমকে ব্যবহার করেছেন। ব্যবহার করেছেন বাজার, পুঁজি, ও ব্যবস্থার একটি প্রকরণকে। শুধু সেখানেই শেষ নয়, অর্পিতা তাঁর আলোচনায় ব্যবহার করেছেন সেই সমস্ত সুশীল ও এলিট বর্গসমূহ, যারা কোনো না কোনো ভাবে বাজারচালিত মাধ্যমের ফসল। তাহলে যে প্রক্রিয়ার প্রতি অর্পিতার বিরুদ্ধতা, তিনি নিজেই কি সেই প্রক্রিয়াকেই অনুসরণ করছেন না? তিনি কি বাজার-পুঁজি-মিডিয়া/ এলিট বর্গসমূহকে একরকম বৈধতা প্রদান করছেন না? তাঁর যুক্তি অনুসারে, অবশ্যই করছেন।

    এখানে প্রশ্ন হল, কেন অর্পিতা এটা করতে চাইছেন? এর উত্তরও খুব সোজা। খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটে একটি খসড়া নীতিমালা প্রকাশিত হয়েছে, তার কিছু অংশ অর্পিতার পছন্দ নয়। অতএব তিনি একটি কথোপকথনের প্রক্রিয়ায় আসতে চাইছেন। যেহেতু কথোপকথনের একটি পূর্বশর্ত হল একটি ‘সাধারণ’ জায়গায় ও একটি ‘সাধারণ’ ভাষায় কথা বলা, অর্পিতা তাই প্রচলিত বর্গসমূহ ও প্রচলিত ব্যবস্থাকে একরকম করে মান্যতা দিয়েই কথোপকথনে লিপ্ত হয়েছেন। এই মান্যতা দেওয়া কথোপকথনের প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ। নচেৎ ডায়লগ অসম্ভব। বাজারকে অস্বীকার করে পাহাড় বা সমুদ্রের কাছে দাঁড়িয়ে অর্পিতা যদি নিজের মনের কথা খুলে বলতেন, তাহলে এই উত্তর ও প্রত্যুত্তর অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত।

    অর্পিতা এই মান্যতা দেওয়াকে বৈধতা দেওয়া বলবেন। বা আত্মসমর্পন। অর্পিতার সম্পর্কে আমাদের সে অভিযোগ নেই। আমরা একে অন্যভাবে বলতে চাই। যে, অর্পিতা এখানে ডায়ালগের প্রয়োজনীয়তায় ‘সক্রিয়’ হয়েছেন। এবং ‘সক্রিয়’ হবার প্রয়োজনে নিজের চারপাশের ব্যবস্থা ও বর্গসমূহ সম্পর্কে "সচেতন' হয়েছেন। নচেৎ তিনি কথাই বলতে পারতেন না। এবং এই খসড়া রচনাকালে আমরাও ঠিক সেই কাজই করেছি। কোনো এক শুভপ্রভাতে একটি বিকল্প ব্যবস্থা বা চিন্তনপদ্ধতি তৈরি হবে (আদৌ হবে কিনা কে জানে), চিন্তনের মুক্তরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে, তার জন্য শবরীর প্রতীক্ষায় বসে থাকি, ততদিন লোকে খেতে পাক বা না পাক আমাদের কিছু যায় আসেনা, ততদিন আমার বাড়ির সামনে ভিখিরিদের লাইন দীর্ঘতর হোক আর একই সাথে বাড়তে থাক শপিং মলের সারি, কিন্তু এ নিয়ে আমি কিছুই বলবনা, কোনো অবস্থান নেবনা, পাছে চালু ব্যবস্থা বা বর্গকে বৈধতা দিয়ে ফেলি, এ ধরণের উচ্চমার্গের দার্শনিক চিন্তা মূলত: ‘নিষ্ক্রিয়তা’ প্রসূত। এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই আমাদের এই খসড়া প্রচেষ্টা। ডায়লগ তৈরির চেষ্টা।

    খুব সহজ করে বিষয়টা এভাবে বলা যায়, যে, একটি ঘিঞ্জি বস্তিতে যদি আগুন লাগে, তাহলে আমি আমার তাত্ত্বিক অবস্থান নিয়ে খুব চিন্তা না করেই, অগ্নিকান্ড থেকে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ করে মানুষকে বার করে নিয়ে আসার জন্য হাত লাগাবো। সেই ‘শৃঙ্খলা’ প্যানপ্টিকনময় হলেও করব, না হলেও করব। তার জন্য ‘দুষ্ট’ পুলিশ থেকে শুরু করে ‘অকেজো’ দমকলব্যবস্থাকে যতটুকু ‘দক্ষ’ভাবে ব্যবহার করা যায় সেই প্রচেষ্টা করব। আগুন লাগার সময় এটি আমার ন্যূনতম কর্তব্য। এটি করতে করতে পরবর্তীতে বস্তির ‘উন্নয়ন’ কী, কীভাবে হবে, ডায়লগে কিভাবে যাওয়া যায়, সেসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেই পারি, এবং করাই উচিত। কিন্তু পাছে কোনো কিছু কে বৈধতা দিয়ে ফেলছি এই ভয়ে ‘আশু’ কর্তব্যটি না করলে, আগুন দেখে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে, সেটি হবে নানা তত্ত্বের মোড়কে নিষ্ক্রিয়তাকে বৈধতা প্রদান করা। আমরা তত্ত্বের অজুহাতে আগুন দেখে হাত-পা গুটিয়ে থাকার বিরুদ্ধে। বাজারকে বৈধতা দিয়ে ফেলছি কিনা এই আতঙ্কে ভুগে ‘ভ্যালারে নন্দ বেঁচে থাক চিরকাল’ অবস্থানে চলে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমরা এইভাবে ‘নিষ্ক্রিয়তা’কে বৈধতা প্রদান করার বিরুদ্ধে।

    বৈধতা দানের প্রসঙ্গে অর্পিতা ‘সারপ্লাস চুরি’ জাতীয় কয়েকটি মার্কসীয় অনুষঙ্গের ব্যবহার করেছেন। তাই এই ব্যাপারে একটি প্রাসঙ্গিক মার্কসীয় যুক্তিও ব্যবহার করার লোভ সংবরণ করা যাচ্ছেনা। মার্কসবাদীরা তাত্ত্বিকভাবেই ‘পুঁজিবাদী’ ব্যবস্থা ও বাজারের আধিপত্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু মার্কসবাদের সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মার্কসবাদীরা চালু ব্যবস্থাকে অক্ষত রেখে তার মধ্যেই মধ্যেই ট্রেড-ইউনিয়ন নামক একটি সংগঠন তৈরি ও তার অধিকার রক্ষার পক্ষে সরব থাকেন, যদিও ট্রেড ইউনিয়নের প্রাথমিক কাজই হল চালু ব্যবস্থার মধ্যেই একটু অর্থনৈতিক দরাদরি করা। ‘সারপ্লাস চুরি’কে বন্ধ না করে, কেবল একটু কমিয়ে ব্যবস্থাটিকে সহনীয় করে তোলা। বর্তমান ব্যবস্থাকে ‘সহনীয়’ করে তোলা হবে, বা ব্যবস্থা ও বাজারকে ‘বৈধতা’ দেওয়া হয়ে যাবে এই ভয়ে মার্কসবাদীরা কখনও ট্রেড ইউনিয়ন করা থেকে বিচ্যুত হননি। বরং এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই ‘আশু’ কর্তব্য হিসেবে ব্যবস্থাটিকে কিঞ্চিৎ ‘সহনীয়’ করে তোলার চেষ্টা করেছেন।

    মার্কসবাদী হই বা না হই, আমরা যখন আমাদের খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করি, তখন ঠিক এই ‘আশু’ কর্তব্যের কথাটিই আমাদের মাথায় ছিল। অন্য কিছু না। আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হন, আপনি ডান হোন বা বাম, ব্যবস্থাপন্থী বা ব্যবস্থাবিরোধী, প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, কিছু ন্যূনতম জিনিস বোধহয় এখনই করা যায়, যা এই ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষকে কিছু স্বস্তি দেবে। এবং সেই কাজ করা যায় এই ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে, বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য নির্বিশেষে। আমাদের খসড়ায় ঠিক সেই টুকুই আছে। এর পরে বাকি কথোপকথনের চিন্তা, বাকি তাত্ত্বিক আদানপ্রদান তো করাই যাবে। সে প্রস্তাবও খসড়াতেই আছে। অর্পিতা এই আদানপ্রদানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং করছেন। সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ৯৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন