

রাজ্যের দল বহির্ভূত রাজনীতি সচেতন ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মানুষেরা চায় এমন একটি সরকার, যারা দলীয় আস্ফালন দেখিয়ে বিরোধীপক্ষকে গণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধিতার রাজনীতি করতে বাধা দেবে না। প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠতাসম্পন্ন সরকার ক্ষমতায় থাকলে তা কিন্তু বেশ অসুবিধাজনক যে হয়ে ওঠে, তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ফলে, কোনও কারণে সরকার চাপে থাকলে গণতন্ত্র অপেক্ষাকৃত সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। অতীতে দেখা গেছে- ২৩৫-এর দম্ভ যথেষ্ট সমস্যা তৈরি করেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির এবং আখেরে খোদ সরকারেরও। সেকারণেই কিছুটা নির্ভরশীল ও শর্তাধীন সরকার খানিকটা জনমুখী কর্মসূচী রূপায়ণে বাধ্য হয় এবং লাভ হয় সাধারণ মানুষের, বিশেষত গরিব ও দুর্বল শ্রেণির। তবে বিজেপির বিষয়টি স্বতন্ত্র, কারণ কেন্দ্রের ক্ষমতায় বলীয়ান বিজেপি কোন রকমে ক্ষমতায় এলেও যে প্রবল মূর্তি ধারণ করবে, এমন আশঙ্কা অনেকেরই।
বর্তমান ভোটচিত্রে এটা পরিষ্কার যে, লড়াই হবে মূলত ত্রিমুখী- তৃণমূল, বিজেপি ও সিপিএম-কং জোটের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে কোন একদলেরই জেতার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু কোন কারণে বিহারের মতোই কড়া টক্কর হতে হতে যে কোনও দলই যদি শেষ পর্যন্ত সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়, একমাত্র তাহলেই সিপিএম জোটের কপাল খুলে যেতে পারে, নচেৎ নয়। বিহারের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, ভোট কাটাকুটি খেলার কুশলতায় বিজেপি প্রায় অপ্রতিরোধ্য। পরিষ্কার হেরে যাওয়া খেলাতেও নানাবিধ বৈধ বা অবৈধ কৌশলে যে 'কান ঘেঁষে'ও জিতে যাওয়া যায়, তার চাক্ষুষ প্রমাণ আমরা পেলাম সদ্যসমাপ্ত বিহার নির্বাচনে। মমতা সরকার বিরোধী 'ইনকামবেনসি ফ্যাক্টর'-এর ভোট প্রায় পুরোটাই বিজেপির খাতায় যাবে। সিপিএম জোটের ভাগে সামান্য কিছু এলেও, তাঁদের ভোট মূলত সাংগঠনিক শক্তির উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দলীয় পুরনো ভোট যতটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বিজেপির পরাজয়কে নিশ্চিত করতে হলে তিন দলের বড় জোট হওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু সিপিএম জোট তাতে রাজি নয়। তাঁরা চান, আগে মমতা বিদায় পরে বিজেপির সাথে লড়াই। সারা দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী সব দল যখন চাইছে সর্বত্র বিজেপির পরাজয়, তখন এই রাজ্যে কিন্তু ভিন্ন সুর। যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে যে, রাজ্যের মানুষ নাকি ভীষণভাবে মমতা সরকারের উপর ক্ষেপে আছে। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে সব ভোট নাকি বিজেপির ঝুলিতেই চলে যাবে! এই যুক্তির বাস্তব ভিত্তি আছে আদৌ সন্দেহাতীত নয়। কারণ, এটা রাজ্যের ভোট, দিল্লির নয়। আর ২০১৬-র ভোটে সারদা, নারদা, ফ্লাইওভার ভেঙে পড়া ইত্যাদি নিয়ে পরিস্থিতি ছিল মমতার কাছে অনেক বেশি প্রতিকূল। এছাড়াও ত্রিমুখী লড়াইয়ে সবসময়ই অ্যাডভান্টেজ শাসক দল। যাঁরা তিন দলের বোঝাপড়া চান, তাঁদের অভিযোগ- সিপিএম নেতৃত্ব দলীয় স্বার্থে চায় যে বিজেপি ক্ষমতায় আসুক এবং বিজেপির হাতে তৃণমূল ধ্বংস হোক। আর তৃণমূল ধ্বংস হলেই সিপিএমের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে, বিজেপির হাতে তৃণমূল ধ্বংস হলেও সিপিএম রক্ষা পাবে কীভাবে? বিজেপি কি সিপিএমের বন্ধু? এর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর নেই। এ হেন বিদ্বেষের কারণ হতে পারে, অতীত ক্ষমতাচ্যুতির প্রতিহিংসা। তবু এটা কোন দায়িত্বশীল দলের আচরণ হতে পারে না। সবাই জানে, বিজেপি একবার বাংলা দখল করতে পারলে তার ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের পক্ষে চরম ক্ষতিকর। আর যে সিপিএম নেতৃত্ব বিহারে কংগ্রেস ও আরজেডি-র সাথে হাত মেলাতে পারে তারা কোন যুক্তিতে তৃণমূলের সাথে বোঝাপড়ায় অপারগ? সিপিএম ও তার দোসর কংগ্রেস নেতৃত্ব যতই বলুক বা ভাবুক যে, বিজেপির চেয়েও তৃণমূল বেশি ক্ষতিকর দল, তা কোনও বিবেচক ও নিরপেক্ষ মানুষ মানতে পারবেনা। এই একই মত স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেছেন লিবারেশন দলের নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। এমন কি অমর্ত্য সেন সহ বহু বিশিষ্ট মানুষও দীর্ঘদিন ধরে একথাই বলে চলেছেন যে, আগে বিজেপিকে আটকাও।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম-কংগ্রেসের বড় অভিযোগ যে, তৃণমূল তাদের দল ভাঙিয়ে বহু জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা কর্মীকে নিয়ে গেছে নিজেদের দলে। দল ভাঙানো বা দল বদল অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ। কিন্তু এমন কাজের জন্য কি তৃণমূলই একমাত্র দায়ী, তারাই কি শুধু এমনটা করেছে? এ তো দীর্ঘদিনের কু-অভ্যাস এবং এ কাজ তো শুরু করেছে কংগ্রেস। দেশ জুড়ে তার অজস্র উদাহরণ আছে। আর শুধুই কি কংগ্রেস, কমবেশি প্রায় সব দলই এই অপরাধে অপরাধী। যে দলের যখন বাজার ভালো, তখন সব দল থেকেই লোকজন ঐ দলে যায়। এটাই স্বাভাবিক। সিপিএমের এখন বাজার খারাপ তাই এই দল থেকে অন্য দলে সবাই চলে যাচ্ছে। যেমন, আব্দুস সাত্তার, আমডাঙার সিপিএম নেতা, প্রাক্তন এমএলএ এবং মন্ত্রী। কিন্তু তিনি দল বদলে কংগ্রেসে চলে গেলেন, কেন? আর সিপিএম থেকে তো বিজেপিতে যাওয়ার কোন বিরামই নেই। এর পরেও কি নীতি-আদর্শের বাগাড়ম্বর চলে? রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কতবার দল বদলেছেন? নকশাল থেকে সিপিএম হয়ে আরএসপি এবং অবশেষে কংগ্রেস। তাঁর রাজনৈতিক জীবন কি যথেষ্ট আদর্শ মেনে চলেছে? সুতরাং, দল ভাঙানোর অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে ব্রাত্য করে রেখে বিজেপিকে তোল্লা দেওয়া বর্তমান রাজনীতিতে হবে এক অমার্জনীয় অপরাধ।
আমরা জানি, ঘোড়াকে জোর করে জলের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু জোর করে জল খাওয়ানো যায় না। ফলে সিপিএম জোট কিছুতেই তৃণমূলের সাথে বোঝাপড়ায় যাবে না। তবে সিপিএম যেতে বাধ্য হত, যদি কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব ভবিষ্যতে বিজেপি বিরোধী ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথা ভেবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা করতো। কিন্তু তেমনটি হবার কোন লক্ষণ নেই। ফলে বিজেপির পথ সুগম করতে সিপিএম জোটের মমতাকে হটানোই এখন একমাত্র লক্ষ্য। তবুও বিজেপির বঙ্গ দখলে সিপিএম মন থেকে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। একে তো বিজেপির ক্ষমতা দখলের দায়ভাগ অনেকটাই ঘাড়ে এসে পড়বে, তারপরেও পুরো আশঙ্কা থাকে যে, ক্ষমতায় এসে বিজেপি কি মূর্তি ধরবে? সে কারণেই এই 'আংশিক বোঝাপড়া'র তত্ত্বটি সবদলের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। অবশ্য তৃণমূলের বিষয়টি সম্পুর্ন অজানা। এই তত্ত্বে সাড়া দেবে কিনা, বলা মুশকিল। কারণ তাঁরা গোড়া থেকেই একলা লড়ার কথাই ভেবেছে এবং সেইমতো এগোচ্ছে। তবে সিপিএম - কংগ্রেস যদি আন্তরিকভাবে এই তত্ত্বকে গ্রহণ করে তৃণমূল নেতৃত্বের সাথে আলোচনায় বসে, তবে 'মিরাকল' কিছু ঘটলেও ঘটতে পারে। এটি সত্যিই ঘটলে এই রাজ্যে শুধু বিজেপিকেই আটকানো যাবে না, জাতীয় ক্ষেত্রেও বিজেপি বিরোধী এক বড় লড়াইয়ের মঞ্চ গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও দেখা দেবে।
এবার সেই 'আংশিক বোঝাপড়া'র তত্ত্ব বা ফর্মুলা নিয়ে সহজ ব্যাখ্যায় আসা যাক। আমাদের বিধানসভায় মোট আসন ২৯৪ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক ফিগার হোল ১৪৮। মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ধরা যাক ১৫০ (১০০+৫০) আসনে তৃণমূলের সাথে সিপিএম জোটের বোঝাপড়া হোল। সেই ১৫০ আসন হবে, যেখানে বিজেপি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। বাকি ১৪৪ আসনে লড়াই হোক ত্রিমুখী। সেই ১৪৪-এর মধ্যে যদি তৃণমূল ৪৪টি আসনও না জেতে তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে, সিপিএমের অনুমানই সঠিক অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সরকার বিরোধিতা খুবই তীব্র। সে অবস্থায় সিপিএম জোট ও তৃণমূলের মিলিত বা সমর্থনপুষ্ট সরকার গঠন ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এই আংশিক বোঝাপড়া সুসম্পন্ন হলে বিজেপির বঙ্গদখল নিশ্চিতভাবেই আটকানো সম্ভব হবে। আর এর ফলে অবশ্যই বেশি লাভবান হবে সিপিএম জোট।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 14.14.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১০:২৪101746খুবই আন্তরিক এবং মিনিংলেস লেখা :---))))) ধরেই নেওয়া হচ্ছে তৃণমূল এর এ ধরণের জোটে কোন আগ্রহ নেই , আর কংগ্রেস আর সিপিএম কে মিরাকল ঘটাতে হবে:---))))) বিজেপি আর তৃণমূল জোট হবেনা তার গ্যারান্টি কি!
আতা | 2405:8100:8000:5ca1::7c6:***:*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৩৬101748বিজেপি-তৃণমূল জোট হবে, তাহলে দিল্লিতে বিজেপি-কংগ্রেস জোট হতে পারে
সিপিম | 2405:201:c007:8825:31f1:b653:17ce:***:*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১১:২২101750এগুলি ওই সিঙ্গুরের টাটা তাড়ানো অতিবামেদের সূক্ষ খেলা। এরা এখনো মমতার পা চেটে উচ্ছিট ভোগে উৎসাহী ।সিপিম ২বার হেরেছে আরও ২০ বার হারতে রাজি ।কিন্ত ক্ষমতার গুড় এখন এই 'শুয়োরের খোঁয়াড়' যাওয়ার জন্য কি উধ্ধুব্ধ করেছে অতি বামেদের
কল্যাণ সেনগুপ্ত | 103.216.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:১১101754@ বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
রাজনীতিতে গ্যারান্টি কে কাকে দেয়? আসল কথা, একসময় মমতা যেমন Cpm কে সড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, তেমনই অবস্থা এখন Cpm এরও। কোন কিছুই নীতিহীন মনে হচ্ছে না। এবং এভাবেই দলের ও দেশের সর্বনাশ করতে কোনও সংকোচই হচ্ছে না। 34বছরের শাসনে বামপন্থার যে সর্বনাশ এঁরা করেছেন, তার মেরামত করা খুব সহজ সাধ্য নয়।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 42.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:০১101759দেখা যাচ্ছে মেরামত করার খুব দরকার আছে বলে সিপিএম মনে করেনা , কিন্তু তাও তার ভোটটি হগলেই চায়:---))))আহা এরকম যদি হত খুব ভালো হত, সিপিএম বলে কোন পারটি নেই কিন্তু সিপিএম এর ভোট বলে অনেক ভোট আছে, সেটি বেশ তৃণমূল আর বিজেপি পছন্দ মত ভাগ করে নিত।:----))))) হাস্যকর যুক্তি:---)))
T | 103.15.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:১৬101760খনুদা অ্যাত হাশ্চে ক্যানো! এই মার্কেটে শিপিয়েমের অভিভাবকও পাওয়া যাচ্ছে এই গদগদ ব্যাপারটা খ্যাল কচ্চে না।
b | 14.139.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৩৩101762জীবন গিয়েছে চলে আমাদের চাউ তিস বছরের পর
তখন হঠাৎ যদি ইভিএমে দেখা হয় তোমার আমার
cpm | 91.192.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:৫৯101763শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু।
santosh banerjee | ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৫৮101766শ্রদ্ধেয় দীপঙ্কর বাবুর দেয়া তত্ত্ব টা মানলে বোধ হয় ভালো হতো !!!প্রধান শত্রু এই মুহূর্তে বিজেপি ।।.এটা অস্বীকার করা মানে ইতিহাস কে ভুলে যাওয়া !!যে বীভৎস এবং নারকীয় নীতি সঙ্গে করে বিজেপি এগিয়ে আসছে এই রাজ্যে ।...তাতে তৃণমূল ।...কংগ্রেস ।..সিপিম ।..কেউ থাকবে না ।...সিপিম কেন বৃহত্তর জোটে যাচ্ছে না..বোঝা মুশকিল নয় !!!সুবিধা বাদী রাজনীতি সিপিম অনেকের থেকে ভালো বোঝে ।....গত ৭০ - ৭৪ বছরে আমরা ঢের লক্ষ্য করেছি !!! সুতরাং এই দোলাচল কাটাতে হলে সোজা সাপ্টা কাজ হওয়া উচিত বিজেপি 'র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ।...ওই অসভ্য বর্বর এবং গুন্ডা পার্টি কে রাজ্য ছাড়া করা !!বাকিটা অধীর - বিমান -সুজন বাবু দের হাতে !!!!
# | 112.199.***.*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৫৬101795হলদি নদীর কুমিরগুলো কত বড় হল?