শতাব্দীর শুরুতেই দম্ভ পতন - ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংসাবশেষ, গ্রাউন্ড জিরো, গ্রাউন্ড জিরোর প্রতিশোধ - ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু, আল কায়দা ধ্বংস। আইসিস, বোকা হারাম ও আরো অনেক ওয়াহাবি-সালাফি কাল্টের বাড়বাড়ন্ত - পৃথিবীকে দার-উল-হার্ব থেকে দার-উল-ইসলাম বানানোর সাধনা। প্রতিস্পর্ধীরাও থেমে নেই - আমেরিকা ইউরোপ ও তাদের মিত্রশক্তিগুলির সিরিয়া ও অন্যত্র জুড়ে নির্বিচারে গণ-নিধন যজ্ঞ। ইউরোপে, আমেরিকায়, ভারতবর্ষে যথাক্রমে নিও-নাৎসি, খ্রিস্টান অ্যাপলজিস্ট, হিন্দুত্ববাদীদের পাল্টা গোঁড়া রণহুংকার! আগাম আভাস কি ছিল না কোথাও! যাঁরা ‘The Clash of Civilizations and remaking of world order’ পড়েছেন তারা জানেন স্যাম্যুয়েল পি হান্টিংটন আটের দশকের শেষ থেকে শুরু করে গোটা নয়ের দশক জুড়ে আগতকালকে তাঁর প্রজ্ঞায় ক্রমাগত চিহ্নিত করে গেছেন ধর্মযুদ্ধের শতাব্দী বলে। দেশ-বিদেশ ছেড়ে ছাপোষা বাঙালি হিসেবে যদি এই রাজ্যের দিকে চোখ রাখি তাহলে দেখব কৃষি বনাম শিল্প, গ্রাম বনাম শহরের বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল এই শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষের দিকে। ঘটে গিয়েছিল চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের রক্তক্ষয়ী পতন। সেই সময় সাঙ্ঘাতিক প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে লিওনার্দ এলমহার্স্টের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯২২ সালে প্রদত্ত The robbery of the soil নামক ইংরেজি বক্তৃতামালার সংকলনটি। অর্থাৎ, প্রাজ্ঞ মানুষেরা বিগত কালের সঠিক মূল্যায়ন এবং আগামী কালের ভবিতব্যকে এমনভাবে ভাবে চিহ্নিত করে যান যার মূল্য চিরন্তন, সময় এলে আমরা দৈববাণীর মত সেগুলি উপলব্ধি করে থাকি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার দু-বছরের মাথায় রবীন্দ্রনাথ ‘সভ্যতার সংকট’ লেখেন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি বছরও পাওয়া যাবে না যখন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ছোট-বড় একটিও যুদ্ধ হয়নি! সারা পৃথিবীর জনসাধারণ-নামক ঘরপোড়া গরুরা ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ নামক হলোকাস্ট-টির জন্য নিরুপায়ভাবে অপেক্ষারত আজ। এরই মধ্যে ১৯৮৬ সালে ‘চেরনোবিল’ হয়ে গেছে, অতি-উন্নত বিজ্ঞান ফিশান-ফিউশানের হাত ধরে অর্থে ও ক্ষমতায় বলীয়ান দেশগুলি এখন পরমাণু শক্তিধর, তাদের গুপ্তকক্ষ বোঝাই পরমাণু বোমায়! এই কারণে বিংশ শতাব্দীকে অনেকেই বলেছেন ভৌতবিজ্ঞানের বা প্রযুক্তির শতাব্দী, আর একবিংশ শতাব্দী হল জীববিজ্ঞানের বা আরো ভালো ভাবে বললে আণবিক জীববিজ্ঞানের (molecular biology) শতাব্দী। আণবিক জীববিজ্ঞানের গঠনমূলক গবেষণা নিবিড়ভাবে চলছে সন্দেহ নেই, কিন্তু বর্তমান অতিমারী গত দু-দশকের মহামারীগুলির কথা আমাদের ঘাড় ধরে মনে করিয়ে দিয়েছে। সার্স মার্স ইবোলা জিকা নিপা হয়ে আজকের সার্স-কোভ-২! জনজীবনের বিরামহীন ছন্দপতন! বিশ্বব্যাপী এই সার্স-কোভ-২ নিয়ে যে চিন্তাগুলি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তার মধ্যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব (conspiracy theory) অন্যতম। এ নিয়ে সন্দেহ থাকলেও কেউই বুক ঠুকে সম্ভাবনাটিকে একেবারে নাকচ করে দিতে পারছেন না। পরমাণু যুদ্ধে ক্ষতি ছাড়া কারোরই কোনো প্রকার লাভের আশা নেই, তাই এখন ভাবা শুরু হয়েছে জৈব যুদ্ধাস্ত্রের, থুড়ি জৈব যুদ্ধের কথা! তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে, তা নাকি হবে জৈব যুদ্ধ! আমাদের আশু আলোচনা কিন্তু এই জৈব যুদ্ধাস্ত্র বা জৈব যুদ্ধ নিয়ে নয়। আমরা বরং এই আবহাওয়ায় স্মরণ করব এমন একজন প্রাজ্ঞ মানুষের বক্তব্যকে, প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত যা ক্রমান্বয়ে বিনির্মিত হয়ে চলেছে তাঁর নিবন্ধের কালাতীত ও বহুস্তরীয় সারবত্তার জন্য।
আধুনিক যুগে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন মানুষের চিন্তা গোটা পৃথিবীকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে তাঁদের মধ্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েড অন্যতম। পরবর্তীকালের মনস্তত্ত্ববিদ ও সমাজতত্ত্ববিদদের মধ্যেও ফ্রয়েডের প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী। সর্বাঙ্গীণ আলোচনা নয়, আমরা কেবলমাত্র তাঁর ‘Thoughts for the times on war and death’-এর ভিত্তিতে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করব।
ব্যক্তিমানসে দুরকমের মৌলিক উপাদান রয়েছে, একটি সৃজনাত্মক (creative, defensive), অন্যটি ধ্বংসাত্মক (destructive, aggressive)। এর প্রথমটিকে ফ্রয়েড এককথায় বলেছেন ‘ইরোটিক’ (Erotic), দ্বিতীয়টিকে বলেছেন ‘থ্যানাটোটিক’ (Thanatotic)। এই ‘ইরোটিক’ কথাটি ফ্রয়েড অনেক বৃহৎ অর্থে ব্যবহার করেছেন। যা কিছু সৃজনাত্মক তাকেই ফ্রয়েড ‘ইরোটিক’ বলেছেন। তাঁর মতে সমস্ত রকম সৃজনের নেপথ্যেই কাজ করে যৌনকামনা বা লিবিডো (Libido)। এই লিবিডোকে ফ্রয়েডীয় অর্থে সৃষ্টিশীল কর্মপ্রেরণাও বলা যেতে পারে। নর-নারীর যৌনক্রিয়া ফ্রয়েডের ‘ইরোটিক’-পৃথিবীর একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। একই ভাবে যা কিছু ধ্বংসাত্মক তাকেই বলেছেন ‘থ্যানাটোটিক’। মানুষ যখন কোনো কাজ করে তখন ইরোটিক-থ্যানাটোটিক দুটি মৌলিক উপাদানই একসঙ্গে থাকে, এদের পৃথক করা যায় না। অর্থাৎ, মানুষ যখন ভালবাসে তার মধ্যে নিহিত থাকে ধ্বংসের ইচ্ছা, আবার মানুষ যখন ঘৃণা করে বা হত্যা করে তখন তার মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে সৃজনের বাসনা। এই দু ধরনের প্রবৃত্তি অবশ্য সমান পরিমাণে থাকে না। যখন যেটা বেশি থাকে তখন সেটাই আমাদের ইন্দ্রিয়ে ধরা পড়ে, কমটা পড়ে না। কমটা মনোসমীক্ষক বা মনোবিশ্লেষকই সম্ভবত ধরতে পারেন। দুধরনের প্রবৃত্তির যুগপৎ অস্তিত্বের বা উপস্থিতির চমৎকার প্রমাণ পাওয়া যায় আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে। আত্মরক্ষা মূলত ‘ইরোটিক’, কিন্তু একজনের আত্মরক্ষার জন্য অন্য আরেকজনের ক্ষতি বা ধ্বংসসাধন অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং একজন মানুষ বা প্রাণী তাই করে থাকে। এই পরের কাজটা ‘থ্যানাটোটিক’। এখন এই দুধরনের প্রবৃত্তি এবং তাদের যুগপত্তা ব্যক্তি-মানুষের ক্ষেত্রে যেমন, গোষ্ঠী মানুষের ক্ষেত্রেও তেমনই। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে ‘ন্যায়’ ও ‘শক্তি’-র মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে। কারণ প্রায়ই দেখা যায় শক্তি ন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করছে! ফ্রয়েড এই প্রসঙ্গে শক্তির বদলে আরো অর্থবহ ও সরাসরি শব্দ ‘হিংস্রতা’ ব্যবহার করেছেন। ন্যায়গতভাবে ভাবতে যতই খারাপ লাগুক একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এযাবৎ মানবসমাজে এবং পশুসমাজে ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত অধিকাংশ বিরোধ মীমাংসার প্রধান উপায় হল হিংস্রতার প্রয়োগ। মানুষে মানুষে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, জাতিতে জাতিতে যত বিরোধ-বিদ্বেষ তার মিটমাট বা মীমাংসার পূর্বে হিংস্রতার উপস্থিতি অনিবার্য। মানুষের ক্ষেত্রে হিংস্রতা প্রয়োগ করার পদ্ধতি ও প্রকরণ যুগে যুগে বদলেছে। আদিতে ছিল শুধু গায়ের জোর, তারপর এসেছে অস্ত্র ও বুদ্ধি এবং বুদ্ধির প্রয়োগে আরো উন্নত, জটিল ও মারাত্মক অস্ত্র! এখানে শুধুমাত্র শারীরিক হিংস্রতার কথাই বলা হচ্ছে না, এরমধ্যে রয়েছে বহুক্ষেত্রে শারীরিক হিংস্রতার থেকেও সুদূরপ্রসারী ও ক্ষতিকারক মনস্তাত্ত্বিক হিংস্রতাও। এই হিংস্রতার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক জীবনে কিছু সৃজনাত্মক জিনিসও এসেছে। যেমন, নিয়ম, বিচার, বিধি ইত্যাদি। কিন্তু কৌতুক হল এগুলির প্রয়োগেও শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন হয় হিংস্রতারই! স্বার্থের দ্বন্দ্ব যখন সমাজে বা রাষ্ট্রে সুবিধা-না-পাওয়া মানবগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্রোহের জন্ম দেয়, তখন আমরা সেই চিরাচরিত হিংস্রতারই প্রয়োগ দেখতে পাই – এটা প্রধানত প্রয়োগ করে সুবিধাভোগী কিছু মানুষ যারা সংখ্যায় কম কিন্তু ক্ষমতায় বেশি। মানবসভ্যতার আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত সমাজজীবনের অনিবার্য নানা ধরণের দ্বন্দ্ব বা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটাতে হিংস্রতার ভূমিকার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ফ্রয়েড দেখতে পাননি। কোনো ‘শান্তি রক্ষাকারী বিশ্ব সংস্থা’ (ফ্রয়েডের সময় তৈরি হয় League of Nations, অকৃতকার্য League of Nations-এর পরিবর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হয় United Nations বা UN) পৃথিবী থেকে যুদ্ধ বা সামরিক অভ্যুত্থান বন্ধ করতে পারবে এমন আশা ফ্রয়েড করতে পারেন নি। কারণ এর প্রতিষ্ঠা যদিও তত্ত্বগত বিচার ও শুভবুদ্ধি থেকে অর্থাৎ রাষ্ট্রগুলির ‘ইরোটিক’ প্রবৃত্তি থেকে (যা এখানে রক্ষণাত্মক) তবু কোনো রাষ্ট্রই এই প্রতিষ্ঠানকে হিংস্রতা প্রয়োগ করার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয় নি, কোনদিন দেবেও না। পরেরটা না থাকলে আগেরটা নিরর্থক। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই ফ্রান্সের এক সেনা নায়কের উক্তি। ১৯১৯ সালে ভার্সাইল চুক্তি সই হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফ্রান্সের সেনা নায়ক মার্শেল ফস মন্তব্য করেছিলেন “This is not peace, this is an armistice of twenty years!”। তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছিল -- হিটলার ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ ও দখল করে।
রাসায়নিক অস্ত্রের জিগির তুলে গত শতাব্দীর শেষ দশকে আমেরিকা ইরাকে উপসাগরীয় যুদ্ধ করেছিল। সাম্প্রতিক অতিমারীর প্রেক্ষিতে UN-এর বহুবিধ কার্যক্রমের অন্তর্গত ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (World Health Organization(WHO)) নানা ভাবে শিরোনামে উঠে এসেছে। অতিমারীর প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে এই সংস্থা চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পরা সার্স-কোভ-২-কে চীনের সুরে সুর মিলিয়ে ‘অতিমারী’ দূরের কথা ছোঁয়াচে রোগ বলেই মানতে চায় নি। সার্স-কোভ-২ সত্যি সত্যিই জৈব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া কিনা তা শবদেহবাহী মা গঙ্গাই জানেন, কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হল সত্যিকারের জৈব যুদ্ধ লাগলে WHO নামক এই সংস্থাটির ভূমিকা কি দাঁড়াবে!
সম্ভবত এই একই মনস্তাত্ত্বিক কারণের জন্য ‘বল প্রয়োগ না করে আত্মরক্ষা’-র মতবাদ যাঁরা প্রচার ও প্রয়োগ করার (যেমন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী) চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা সম্পূর্ণ সফল হন নি। ‘থ্যানাটোটিক’ বা ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা ফ্রয়েড জানিয়েছেন। তা হচ্ছে ‘মর্ত্যুকাম বৃত্তি’ অর্থাৎ নিজেকে ধ্বংস করার প্রবৃত্তিগত কামনা। এই বৃত্তি অনেকটা ‘মর্ষকাম’-এর কাছাকাছি, তবে তার চেয়েও ভয়ংকর। এ জিনিস শুধু মানুষে নয়, প্রাণীদের ভেতরেও ক্রিয়া করে (আসামের জ্যাটিঙ্গা গ্রামে পাখিদের দলে দলে আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার কথা বহুশ্রুত)। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কী ভাবে আপাতশান্ত এক বিরাট মানবগোষ্ঠীকে এরকম উন্মত্ত করে তোলা যায় যাতে তাঁরা অকাতরে জীবনের মায়া ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে! তার উত্তর একই, অর্থাৎ নিজেদের অন্তর্গত ‘থ্যানাটোটিক’ বা ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি, যার ফলে মানব সমাজে তৈরি হয় যৌথ সম্মতি যা অনেক সময়ই পর্যবসিত হয় ‘যৌথ মানস-বিপর্যয়ে’ (collective psychosis)। আশ্চর্যের ব্যপার হল, অধিকাংশ সময়ই দেখা গেছে এই মানস-বিপর্যয় তৈরি করা হয় কোনো না কোনো প্রকার আদর্শবাদের মাধ্যমে, যেমন দেশপ্রেম, ধর্মপ্রেম, এমন কি নীতিবোধ, ন্যায়বোধ ইত্যাদি। যে কোনো মনোযোগী ফ্রয়েড পাঠক এই মানস-বিপর্যয়ের (psychosis) নানা বিচিত্র ধরনের বহিঃপ্রকাশ সমাজে দেখতে পাবেন। যেমন প্রথমত -- বহু বৈচিত্র্যের ভারতবর্ষে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের একমাত্রিক ও ভয়ংকর গৈরিক বাসনা, জার্মানির জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হিটলারের নাজি পার্টির (National Socialist German Workers' Party!) ইহুদি নিধনের উন্মত্ততা, সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার এষণা থেকে স্তালিনের গুলাগ দ্বীপপুঞ্জের কারাগারগুলির বীভৎসতা (ওসিপ ম্যান্ডেলস্টাম বা আলেকজান্ডার সোলঝেনিৎসিনের মত কবি সাহিত্যিকদের দীর্ঘ দুর্বিসহ নির্বাসন!), চিনে বিপুল জনসমর্থিত মাওএর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে ভয়াবহ Guangxi Massacre! অর্থাৎ এইসব ক্ষেত্রে পার্টির একচ্ছত্র বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়া অসংখ্য পার্টি কর্মী ও অন্ধ-সমর্থক যাদের কেউ বা সংকীর্ণ দেশপ্রেম, কেউ আবার তথাকথিত বিপ্লব, এই জাতীয় মানস-বিপর্যয়ের শিকার। দ্বিতীয়ত -- অতিমারীর চেতাবনিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে নেতা-নেত্রীদের অমোঘ টানে কাতারে কাতারে মাস্কবিহীন জনসমাগম! এক্ষেত্রে জনগণও রাজনীতি নামক কুহকের তাড়নায় মানস-বিপর্যয়ের শিকার। তৃতীয়ত -- আরো এক ধরনের ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে এই মানস-বিপর্যয় আরো অনেক বেশি জটিল ও রহস্যময় মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া -- এদেশে এককালে রাজপুত নারীদের মধ্যে এবং অন্যত্রও সংঘটিত ‘জহর ব্রত’ নামক আত্মবলিদান। রাজপুত রানি পদ্মিনীর ঘটনাটি বহুশ্রুত, এই বাংলাতেও এরকম কিছু ঘটনার কথা জানা যায়। যেমন বল্লাল সেনের সময় নিজেদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য নারীদের সমবেত হয়ে আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার কথা শোনা যায়, ১৬৯৬ সাল নাগাদ বরদার জমিদার শোভা সিংয়ের দখলদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য বর্ধমান রাজবাড়ির নারীদের মধ্যেও ঘটে গিয়েছিল সমবেত বিষপানের ঘটনা! নারী শরীরের শুচিতা, সতীত্ব নামক সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে এখানে কাজ করছে দখলদারের হাতে অত্যাচারিত লাঞ্ছিত হওয়ার অসম্মান-ভয়! জাপানের ‘হারাকিরি’ বা জাপানি ভাষায় ‘সেপ্পুকু’-র কথাও আমরা জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে হার সুনিশ্চিত বুঝতে পেরে (হিরোহিতোর রাজকীয় আত্মসমর্পণের পর) অসহায় আত্মসমর্পণের সম্মানজনক বিকল্প হিসেবে জাপান জুড়ে শুরু হয়ে যায় নিজের পেট চিরে ফেলার প্রাচীন প্রথাটি! এই নিয়ে আলোচনা আর না বাড়িয়ে আমরা পুনরায় প্রসঙ্গে ফিরে যাই।
এই আদর্শবাদ মানুষের ‘ইরোটিক’ প্রবৃত্তির মধ্যে পড়ে। এখানেই রয়েছে কূটাভাস বা paradox – সৃজনাত্মক প্রবৃত্তির সাহায্য নিয়ে মানুষের ধংসাত্মক প্রবৃত্তিকে কাজে লাগানো! এই কূটাভাসই প্রমাণ করে এই দুই বিপরীত প্রবৃত্তির মধ্যে সম্পর্ক কত গভীর ও অবিচ্ছেদ্য। এখন এই ধংসাত্মক প্রবৃত্তিকে যথেষ্ট নিষ্ক্রিয় করার ব্যপারে ফ্রয়েড বড় কোনো আশার কথা শোনাতে না পারলেও একটা ক্ষীণ সম্ভাবনার কথা বলেছেন! এই সম্ভাবনার মূলেও রয়েছে মানুষের একধরণের জৈবিক প্রেরণা যাকে উনি বলেছেন ‘ইডিওসিনক্রেসি’ (Idiosyncrasy)। অতি প্রাচীনকাল থেকে মানবজাতির মধ্যে (শুধু মানুষের মধ্যে, পশুদের মধ্যে নয়) আরেক ধরনের প্রক্রিয়া কাজ করে চলেছে, যার নাম ‘সংস্কৃতি’ (Culture)। সংস্কৃতি মানুষের মানস-চেতনার এক উন্নত স্তর, তা মানুষের বুদ্ধি ও বোধের শক্তি বাড়ায় এবং তাকে ‘স্বাধীন ও অবাধ চিন্তক’ করে তোলে। ‘ইরোটিক’ এবং ‘থ্যানাটোটিক’ প্রবৃত্তি মানুষের চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করে। মানুষকে বাধ্য করে অন্য কোনো উচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্রের অধীন হতে, যে ক্ষমতাকেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে এবং তারা বিনা আপত্তিতে তা পালন করবে। মানবসমাজ এখনও প্রধানত নেতা ও অনুগামী এই দুই ভাগে বিভক্ত। অনুগামীরাই বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিরাট জনসমাজের এই প্রবণতা অর্থাৎ কোনো এক কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করার নিবিড় আগ্রহ কখনো কখনো এত বেড়ে যায় যে সমাজের গোটা শরীর এক ব্যধিত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। ফ্রয়েড একে ‘সামাজিক বিকার’ বা ‘Social morbidity’ বলতে চেয়েছেন। কিন্তু যারা ‘স্বাধীন ও অবাধ চিন্তক’ তারা এই বিকারের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে। শুধু তাই নয় চারপাশের আরো অল্প কিছু মানুষকে তারা সামান্য প্রভাবিতও করতে পারে। মানবসমাজের ইতিহাসে এই জৈবিক সাংস্কৃতিক উপাদানের অস্তিত্ব খুব অল্প পরিমাণে হলেও ফ্রয়েড তা দেখতে পেয়েছেন। এখন একে জৈবিক বলার কারণ, এই সাংস্কৃতিক প্রেরণা ডারউইনিয় অর্থে মানবপ্রজাতির বিবর্তনের পথ ধরে এসেছে এবং এই প্রেরণা মানুষের মন তথা মস্তিষ্কের গঠনের পরিবর্তন ঘটায়, উপরন্তু এই পরিবর্তন মৌলিক এবং স্থায়ী!
সংস্কৃতির দুটি অংশ আছে – একটা বুদ্ধি বা ধীশক্তি, আরেকটা রসের উপলব্ধি। ধীশক্তি প্রধানত বিশ্লেষণাত্মক, রসবোধ প্রধানত সংশ্লেষণাত্মক। রসের ক্ষেত্রে সূত্র হচ্ছে, ক + খ = গ, যেখানে গ, ক-ও নয় খ-ও নয় কিন্তু ঐ দুটির সংশ্লেষণে উদ্ভূত এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। রসপোলব্ধি বিশ্লেষণাত্মক নয় কারণ ব্যপারটা শুধুমাত্র মনের দ্বারা উপলব্ধিযোগ্য, যুক্তি-বিশ্লেষণের দ্বারা বুদ্ধিগ্রাহ্য বা বোধগম্য নয়। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কোনো জন্মান্ধ মানুষকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যেমন অসম্ভব, তেমনি, মন যদি সঠিকভাবে গ্রহণক্ষম না হয়, তা হলে রসপোলব্ধি দুষ্কর। ধীশক্তিও সাধারণভাবে বুদ্ধি বলতে যা বোঝায় তা নয়। ধীশক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা দুর্লভ বস্তু, বোধ ও বুদ্ধির এক অতি উন্নত স্তরকে প্রজ্ঞা বলে। বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মধ্যে তফাতটা গুণগত, পরিমাণগত নয়। ধীশক্তির ফসল বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। রসের ফসল সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটা খুবই আশ্চর্যের যে এই মাধ্যমগুলির উৎপত্তির মূলে যে সংস্কৃতি নামক জিনিসটি কাজ করছে, তা যে ‘জৈবিক’, নিছক আবেগের ব্যপার নয়, তা মানবসমাজ বহু যুগ পরেও বুঝতে পারে নি। তবে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের উৎস এবং ক্রিয়াকলাপের ধরন এখনো মনস্তাত্ত্বিকদের কাছে অস্পষ্ট। এর চূড়ান্ত রূপ কী দাঁড়াবে তাও খুব নির্দিষ্ট নয়।
কিন্তু তবু এই সংস্কৃতিই মানুষের জৈবিক মস্তিষ্কে যুদ্ধ বা হিংস্রতা সম্পর্কে এক প্রবল বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, হিংস্রতা জিনিসটা কুৎসিত এবং সেহেতু নান্দনিকভাবে ঘৃণ্য। এই জৈবিক বিতৃষ্ণাকেই ফ্রয়েড বলেছেন ‘ইডিওসিনক্রেসি’! এখন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে যুগ যুগ ধরে স্বাধীন ও অবাধ চিন্তকরা মানুষকে নানা সদুপদেশ দেওয়া সত্ত্বেও মানব সমাজের প্রাথমিক ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তিগুলির বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেন নি। এর মূল কারণ তাঁরা মানবমনের জৈবিক কাঠামো অর্থাৎ মস্তিষ্কের জৈবিক গঠনে বিশেষ পরিবর্তন আনতে পারেন নি। তাঁরা কেবলমাত্র অত্যন্ত ভাসা ভাসা ভাবে মানবসমাজের মানসিক উপরিস্তরকে ছুঁয়েছেন এবং আবেগজাত সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করেছেন। এই আবেগজাত সাময়িক উত্তেজনাকে আমরা প্রায়ই সাংস্কৃতিক অর্জন বা সিদ্ধি বলে ভুল করি। এই ক্ষণিক প্রক্রিয়া কখনোই মানুষের মস্তিষ্কের কাঠামোতে কোনো প্রভাব আনতে পারে না, কারণ ‘জৈবিক সাংস্কৃতিক বিবর্তন’ একটা অত্যন্ত ধীর, ক্রমিক এবং স্থায়ী প্রক্রিয়া। সাংস্কৃতিক বিবর্তন একদিকে মানুষের মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে, অন্যদিকে মানুষের ‘থ্যানাটোটিক’ প্রবৃত্তিকে নিজের মনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার হাত থেকে বাঁচিয়ে তাকে কিছুটা বহির্মুখী খাতে বইয়ে দিতে পারে, যার মধ্যে আত্মপরতা নেই। এমন ক্ষীণ সম্ভাবনার কথা ফ্রয়েড বলেছেন। কিন্তু এটা এত ধীর গতিতে হয় যে হয়তো দেখা যাবে কাজের কাজ কিছু হাওয়ার আগেই মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফ্রয়েড কিছুটা কৌতুকের সুরে একটি গম কলের কথা বলেছেন, যে-কল এত আস্তে আস্তে গম ভাঙে যে দেখা গেল আটা তৈরি হবার আগেই মানুষ ক্ষুধায় মরে যাচ্ছে। প্রবল নৈরাশ্যের মধ্যে একটা আশার আলো দেখতে পেলেও ফ্রয়েড শেষ পর্যন্ত বিষাদগ্রস্তই থেকে গিয়েছিলেন (এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ঋষি অরবিন্দ মনে করতেন মানবসমাজের একটা অতি মন্থর সমষ্টিগত ঊর্ধ্বগতি আছে অশুভ থেকে শুভর দিকে এবং এই গতি ব্যক্তিমানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিরপেক্ষ!)। সভ্যতার যেমন উত্থান পতন থাকে সংস্কৃতিরও তেমনই উত্থান পতন থাকে এবং এই দুটি সম্পৃক্ত বলেই সভ্যতা-সংস্কৃতি শব্দ দুটি এক সাথে ব্যবহৃত হয়। একটি চলমান সমাজ, সভ্যতা-সংস্কৃতির একটি উন্নত পর্যায় প্রাপ্ত হওয়ার পর কিছু কাল বাদে তার অবধারিত অধোগতি ঘটে এবং এর বিপরীতটাও একই ভাবে দেখা যায়। প্রশ্ন ওঠে তাহলে ঐ ঊর্ধ্বগতি বা অধোগতির কালখন্ডগুলি নিয়ে ফ্রয়েডের অবস্থান ঠিক কি ছিল! খুব স্পষ্ট না হলেও শুধু এটুকু বলা যায়, ফ্রয়েড সম্ভবত সাংস্কৃতিক অর্জন ব্যপারটির স্থায়ী কোনো ঊর্ধ্বগতি বা অধোগতি আছে এরকম কিছু বলতে চাননি। বরং উত্থান ও পতনের ক্রমান্বয়িত কালচক্রগুলির দীর্ঘকালীন কোনো সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।
Ape থেকে Homosapiens, Cro-Magnon মানুষ পার হয়ে আদিম মানুষে পৌছতে বহু লক্ষ বছর কেটে গেছে। দু-চার জন মহাপুরুষের (স্বাধীন ও অবাধ চিন্তক) দু-চার হাজার বছরের বাণী মানুষের মনের কোনো জৈব পরিবর্তন আনতে পারে নি। সুতরাং, সংস্কৃতির সুস্পষ্ট বিকাশ, যা হয়ত মানুষের সমষ্টিগত প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে – এরকম অবস্থার জন্য আমাদের আরো বহু হাজার বছর অপেক্ষা করা ছাড়া বোধ হয় উপায় নেই। তাও যদি ধরে নিই যে, সাংস্কৃতিক বিবর্তনের গতি শারীরিক বিবর্তনের গতি থেকে বেশ কিছুটা বেশি! প্রশ্ন হচ্ছে ততদিন মানবজাতি টিকবে কি না!
ফ্রয়েডের তত্ত্ব পেরিয়ে পরবর্তী কালে আরও অনেক বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব দিয়ে মানব আচরণ ( ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী) ব্যাখ্যা করাহয়েছে। লেখকের দৃষ্টিভঙ্গী নেহাতই একপেশে। সংস্কৃতি মানব আচরণের নির্ণায়ক যেমন হতে পারে আবার তা মানব আচরণের ওগোষ্ঠী আচরণের নির্ধারকও হতে পারে। সভ্যতা ও সংস্কৃতি যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন 3000 বছর আগে যা ভারতীয়সংস্কৃতি ছিল আজ তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। গোষ্ঠীতে
টিঁকে থাকার তাগিদ থেকে অনেক সময় অনেক আচরণ স্বীকৃত ও গ্রহনযোগ্য হয়ে ওঠে। গণ ধোলাইয়ের ঘটনার ফ্রয়েডীয় ব্যাখ্যাছাড়াও অন্য ব্যাখ্যা হতে পারে। অবদমিত যৌনতা একমাত্র কারণ হিসাবে বিবেচ্য না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আবেগের বশে অনেকআচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়।যা অবশ্যই ধ্বংসাত্মক হতে পারে। যেমন তথাকথিত জাতীয়তাবাদ মানুষের মধ্যে গোষ্ঠী বিভেদ ওরাআমরার বিভেদ চাগিয়ে তুলে মানুষকে আবেগ চালিত করে। তার চিন্তা ভাবনা ও যুক্তিবোধকে আচ্ছন্ন করে। মানব আচরণেরএই বিশেষ দিকটি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
@রুমঝুম ভট্টাচার্য
আপনার মতামত অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য।
অনেক ধন্যবাদ।
সময়ের ব্যবধানে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফ্রয়েডকে ফিরে পড়া, খুবই প্রশংসনীয়। thought provoking একটি প্রবন্ধ। ধন্যবাদ।
ফ্রয়েড বলতে সাধারণত অবদমিত যৌনতা, অচেতন মন ইত্যাদি যা বোঝা হয়, আলোচনাটি সেদিকে যায়ই নি, বরং এক অচেনা ফ্রয়েডের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।সমসাময়িক ও দারুন প্রাণবন্ত একটি আলোচনা। অনেক ধন্যবাদ।
@পারমিতা সেন
হ্যাঁ, কাল্ট ব্যক্তিত্বদের ব্যক্তব্যকে সময়ের ব্যবধানে কোনো রকম পক্ষপাত ছাড়া দেখতে পারা লেখক ও পাঠক উভয়ের কাছেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@Ratna Ghosh অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটিকে এইভাবে অনুধাবন করার জন্য।
অভিনব লাগল প্রবন্ধটি পড়ে। সমাজ ও মানুষের মনকে এইভাবে দেখা, সমৃদ্ধ করল। সবথেকে বড় কথা লেখাটি ভাবাচ্ছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
এরকম সাবলীলভাবে ফ্রয়েড-চর্চা বাংলায় কমই হয়। ধন্যবাদ লেখককে।
@Rusha Dutta
তোমার মতামত পেয়ে খুব ভালো লাগলো। ভাবানোর ব্যাপারটা অবশ্যই একটা বড় পাওনা। অনেক ধন্যবাদ।
@সংবরণ সরকার
সাবলীল লেগেছে শুনে নিশ্চিন্ত হলাম। অনেক ধন্যবাদ তোমার মতামতের জন্য।
আবহমান কাল ধরে মানুষের আপাত বিচ্ছিন্ন গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে একটা সামগ্রিক ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, বারবার পড়ার মত জমিয়ে রাখার মত লেখা। অসাধারণ। তবে একটা কথা মনে এল, জহর ব্রত সম্পর্কে।শত্রুর হাতে পড়ে নির্যাতন ও অপমানকর মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মহত্যা করাটা কি সত্যিই জটিল ও রহস্যময় ?
@উজ্জ্বল
ব্যক্তিগত স্তরে আত্মহত্যাও জটিল কিন্তু চারপাশে এর অভাব নেই। মূলত ব্যক্তিগত অসহনীয় কোনো ক্ষতি থেকে মানুষ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু সমবেত আত্মহত্যা যথেষ্ট আলাদা ও তুলনায় বিরল। এক্ষেত্রে একজনের সিন্ধান্ত প্রেরিত হয় আরেকজনের মধ্যে এবং এইভাবে একে একে বহুতে। কিভাবে এটা ঘটে এই ব্যাপারটা বেশ জটিল ও রহস্যময়। সমস্তরকম সামুহিক বিপর্যয়েই কিন্তু এই ঘটনা ঘটে না, যুদ্ধ দাঙ্গার এই পৃথিবীতে বড় ক্রাইসিসের তো অভাব নেই, কিন্তু সবক্ষেত্রে কি এই ঘটনা আমরা দেখতে পাই? নিশ্চই না। তাই বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে একে একে চারিত এই সিন্ধান্ত সমষ্টিগত ঘটনায় রূপান্তরিত হয় - এই ব্যাপারটা জটিল ও রহস্যময় অবশ্যই। আশা করি খানিকটা পরিষ্কার করতে পারলাম।
আপনার পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
একটু সোজা বাংলায় লেখা যায় না? এই রকম প্যাচানো আর অনাকর্ষক লেখার চক্করে ছোটবেলায় অনেক বিষয় ভালোকরে পড়িনি। পরে দেখি অনেক দারুন জিনিস মিস করেছি |
সোজা ভাষায় লিখতে না পারলে একাডেমিক জার্নাল এ পাবলিশ করলেই তো হয় | যত্ত সব ফোঁপরা পন্ডিতি দেখানোর চেষ্টা |
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা। সুলিখিত।অনেক নতুন কিছু জানলাম। লেখককে ধন্যবাদ।
@অপ্রতিম রায়
পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অনবদ্য । বারংবার পড়ার মত লেখা। ধন্যবাদ।
@সুমিত্রা পাল
আপনার মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।