১৭৬৫ সালের কথা। সেই বছরই মুঘল বাদশাহ বাংলার নবাবদের হাত থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার কেড়ে নিয়ে সেই অধিকার ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে দেওয়ায় নবাবদের অর্ধেক ক্ষমতা কমে যায়। নবাবদের সেই অবশিষ্ট ক্ষমতা টুকুও নবাব মুনসুর আলির খান ফেরাদুন জা’র আমলে চলে যায় উনবিংশ শতকের অন্তিম লগ্নে। আসলে নবাব মুনসুর আলির খান ফেরাদুন জা আর্থিক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অথচ বহু অনুরোধের পরেও ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তার ভাতা বৃদ্ধির আর্জিতে রাজি হননি। ফলে তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে প্রথমে গভর্নর জেনারেলের সাথে দেখা করেন কিন্তু সেখানে কোন কাজ না হওয়ায় ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে গিয়েও তিনি ব্যর্থ হন। অবশেষে তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে ইংল্যান্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়ার সাথে দেখা করেন এবং তাঁর পরামর্শ মত নিজের বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার, সুবাদারীর পদটি ইংরেজ সরকারের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে অবশ্য নবাবের ঋণমুক্তি ঘটে এবং হাতে বেশ কিছু টাকাও আসে। কিন্তু তা হলে কি হবে? নবাবের সুবাদারী ক্ষমতা বিলুপ্তির সাথে সাথেই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব নাজিমের উপাধি টুকুও বিলুপ্ত হয়ে যায়, ফলে বাংলার সুবার একদা নবাব নাজিমরা পরিণত হন শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুরে। সেই সাথে তাদের বাৎসরিক আয়ও বহুলাংশে কমে যায়।
উনবিংশ শতকের একেবারে শেষ লগ্নের কথা, প্রিন্স ওয়াসিফ আলি মির্জা সদ্য বিলেতে পড়াশোনা শেষ করে এক প্রকার আধা ইংরেজ হয়েই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। মুর্শিদাবাদের মসনদে তখন তাঁর পিতা নবাব হাসান আলি মির্জা অধিষ্ঠিত। এদিকে দীর্ঘদিন বিলেতে থাকার ফলে প্রিন্স ওয়াসিফ আলি মির্জার রুচিতেও বদল ঘটেছিল। তিনি দেশে ফিরে তাদের প্রাসাদে থাকতে চাইলেন না। কিন্তু নতুন প্রাসাদ নির্মাণের সামর্থ্যও ছিলনা। তাই ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া পুরানো প্রাসাদের একটা অংশকে তিনি কিছুটা সংস্কার করে সেখানেই নিজের জন্য একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করে নিজের নামেই সেই প্রাসাদের নামকরণ করেছিলেন ওয়াসিফ মঞ্জিল। তখনও তিনি নবাব হননি। ১৯০৬ সালে তাঁর পিতা নবাব হাসান আলি মির্জার মৃত্যু হলে প্রিন্স ওয়াসিফ আলি মির্জা পরিণত হন নবাব বাহাদুরে।
ওয়াসিফ আলি মির্জা এই প্রাসাদ নির্মাণ করলেন বসবাস করার জন্যই, কিন্তু ভাগ্যের কি করুণ পরিহাস। তিনি নিজেও খুব বেশি দিন এই প্রাসাদে বসবাস করতে পারেননি। নবাব হওয়ার পরে নানান আর্থিক বিড়ম্বনায় পড়ে বাধ্য হন এই প্রাসাদ ত্যাগ করে কলকাতায় জীবনের বাকী দিন গুলি অতিবাহিত করতে।
বর্তমানে মুর্শিদাবাদ নিজামত কেল্লার অবশিষ্ট প্রাসাদ গুলির মধ্যে অন্যতম হল নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার নির্মিত কারুকার্য খচিত সেই ‘ওয়াসিফ মঞ্জিল’ প্রাসাদ। এই প্রাসাদটি আমাকে সেই ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ করত। কিন্তু ভেতরে ঢোকার কখনও সুযোগ হয়নি তখন। আসলে জনসাধারণের জন্য এই প্রাসাদ কোনদিনই উন্মুক্ত ছিলনা। নবাব কলকাতা চলে যাওয়ার পর এই প্রাসাদটি মুর্শিদাবাদ এস্টেটের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় দীর্ঘদিন। বর্তমানে এই প্রাসাদটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
ওয়াসিফ মঞ্জিলের ভেতরটা দেখার ইচ্ছে আমার বহু দিন থেকেই ছিল। সেই ইচ্ছে পূরণের সুযোগ আসে ২০২০ সালের ৩০শে জুলাই। চারিদিকে করোনার ভয় এমনকি মুর্শিদাবাদ শহরেও ধরা পড়েছে কয়েকজন করোনা রুগী। কিন্তু অতীত অনুভব করার সুযোগ যেন আমার সব উৎকণ্ঠাকে দূর করে দিল। আগের দিনই আতাহার ভাই এর সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি আমাকে দুপুর দু’টোর সময় ওয়াসিফ মঞ্জিলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি অবশ্য তার অনেক আগেই মুর্শিদাবাদ শহরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। প্রথমে নবাবী আমলে নির্মিত শহরের বেশ কিছু স্থাপত্য ঘুরে আমি যখন কেল্লায় প্রবেশ করলাম তখন সময় দুপুর দু’টো বেজে সাত মিনিট। কিছুক্ষণের মধ্যেই এবার প্রাসাদে পৌঁছে গেলাম।
প্রথমেই বাইরের প্রধান লোহার গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মনটা এক অদ্ভুত ভাল লাগায় ভরে উঠল। দীর্ঘ দিনের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে বলেই হয়ত এমন অনুভূতি। প্রবেশ পথের দুই প্রান্তে ফুলের বাগান। তাতে দৃষ্টি নন্দন দুটি মূর্তি ও দুটি ফোয়ারা রয়েছে। যদিও ফোয়ারা দুটি এখন অচল। কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল দুটি সেলামী তোপ। না এখন আর সেই তোপ দাগা হয়না। কিন্তু এমনও একটা দিন ছিল যখন এই প্রাসাদে নবাবের বন্ধু স্থানীয় কেউ অথবা কোন ইংরেজ অফিসার প্রাসাদে এলে তাদের সম্মানে এই তোপ দাগা হত। এখন সবই স্মৃতি। যাইহোক, এবার তোপ পার করে একটি বড় হল ঘরে প্রবেশ করলাম। সেখানেই আমার সেই পরিচিত আতাহার ভাই রয়েছেন। তিনি আমাকে দেখেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বসতে বললেন। আমিও বেশ ক্লান্ত ছিলাম, ঠাণ্ডা হাওয়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে উঠে পড়লাম প্রাসাদ দেখার জন্য। আমি যে ঘরে বসেছিলাম সেটি একটি বড় হল ঘর। এই বিরাট হল ঘরের ভেতরের দিকে দেখলাম দুটি দরজা যা দেখেই বোঝা গেল ভেতরে আরও ঘর রয়েছে। আতাহার ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানলাম নবাবী আমলে প্রাসাদের সমগ্র নিচ তলা নবাবের অফিস ছিল। এখন স্টোর রুম হিসেবে প্রচুর পুরানো দলিল দস্তাবেজে ভর্তি। ঘরে একটি নবাবী আমলের ড্রেসিং টেবিলও চোখে পড়ল তাতে বেলজিয়ান কাঁচ লাগান। দরজার মাথাতেও দেখলাম নানান রঙের বেলজিয়ান কাঁচ দেয়া নক্সা। এবার তিনি আমাকে নিয়ে পাশের ঘরে গেলেন প্রধান সিকিউরিটি গার্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। উনার সাথে পরিচয় হল, তাঁর নাম লাল বাহাদুর হালদার, বয়স অল্প, দেখলাম তিনি বেশ চনমনে ও মিশুকে স্বভাবের মানুষ। তিনি আমার প্রাসাদে আসার উদ্দেশ্য জেনে আমাকে অনুমতি দিলেন প্রাসাদ ঘোরার। এবং আতাহার ভাইকে প্রাসাদের দোতলায় ওঠার চাবি দিয়ে আমাকে বললেন আতাহার ভাই আমাকে পুরো প্রাসাদটি ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবেন। সাথে আরও একটি অনুরোধ করলেন যাতে প্রাসাদের ভেতরে যেন কোন ছবি না তুলি। আমিও তাকে সেই ব্যাপারে আশ্বস্ত করে এগিয়ে চললাম আতাহার ভাইয়ের সাথে।
প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করার মুল দরজার দুই পাশে বড় বড় ঘর রয়েছে, যার একটিতে থাকেন আতাহার ভাই এবং অন্যটিতে থাকেন লাল বাহাদুর দা। এই ঘরটিও ঠিক আতাহার ভাইয়ের ঘরের মতই, এই দুই হল ঘরের মাঝে রয়েছে প্রাসাদে প্রবেশের বৃহৎ লোহার নক্সা করা দরজা। সেই দরজা পার করেই চোখ পড়বে মাথার উপর ঝোলান সুন্দর একটি ঝাড়বাতির উপর। তারপর কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই ফাঁকা চত্বরের একদিকে পড়বে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। উপরে ওঠার আগে আতাহার ভাই পকেট থেকে টর্চ লাইট বের করায় আমি আর কৌতূহল নিবারণ করতে না পেরে বলে বসি, ‘ভাই এই দুপুরে টর্চ লাইট কেন?’ আমার কথা শুনে আতাহার ভাই জানালেন প্রাসাদের ভেতরে সাপের খুব উৎপাত। শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। আসলে এখানে সাপ থাকারই কথা, প্রাসাদের চারিদিক আজ আগাছায় পরিপূর্ণ। এখন আমি আতাহার ভাই এর পিছন পিছন এগোতে থাকলাম। দাদা টর্চ জ্বালিয়ে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। এর মধ্যেই দাদা থামলেন একটি সিঁড়ির সামনে এসে। দাদার টর্চের আলোয় হঠাৎ দেখতে পেলাম মার্বেল পাথরের সেই দৃষ্টি নন্দন সিঁড়ি। যার কথা বহুজনের মুখে এতদিন শুনে এসেছি এই প্রথম দেখছি। অবাক হলাম এত দামি এত সুন্দর প্রাসাদের দোতলায় ইলেকট্রিকের কোন ব্যবস্থা নেই। আতাহার ভাই জানালেন বছরে একবার বেরা উৎসবের দিন এই প্রাসাদ আলোয় ভরে ওঠে। সেদিন এই ওয়াসিফ মঞ্জিলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর পদের যোগ্য উত্তরাধিকারী সহ নিজামত পরিবারের বহু প্রবীণ সদস্য, রাজ্যের মন্ত্রী, জেলা শাসক, মহকুমা শাসক, জেলা পুলিশ আধিকারিক, জাজ সহ বহু গণ্যমান্য মানুষদের আগমনে প্রাসাদ সেজে ওঠে। আর বছরের বাকি দিনগুলি এমনি অন্ধকারে পড়ে থাকে। আমি এবার সেই মার্বেল ধরে উপরের দিকে উঠতে শুরু করলাম। কিছুটা উঠতেই চোখে পড়ল দেয়ালে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার একটি বাঁধান ছবি রয়েছে। সেই ছবি দেখে কষ্ট হল খুব। মনে হল নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা আজও তারই প্রাসাদে অন্ধকারে বন্দী। যাইহোক, আরও কিছুটা সিঁড়ি পার করতে চোখে পড়ল আরও একটি বাঁধান ছবি। এই ছবিটি শিকার যাত্রার ছবি। তবে এই ছবিটির অবস্থা খুব একটা ভাল না, তাই বোঝা গেলনা ছবিটা আসলে কার। তবে যিনি শিকাররত রয়েছেন তাকে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা বলেই মনে হল। আমি নিজেও নবাবের নাতির কাছে শুনেছিলাম যে তিনি শিকার করতে খুব ভালবাসতেন এবং বছরের বিভিন্ন সময় দলবল নিয়ে শিকার যাত্রায়ও বেরতেন।
আমি এবার দোতলায় উঠে গেছি। উঠে প্রথমেই নজর কাড়ল বেলজিয়ান কাঁচের নক্সা করা জানালা। এবার সামনের দিকে এগোতেই আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম কারুকার্য খচিত এই সুন্দর প্রাসাদ দেখে, চোখ পড়ল সামনে থাকা মার্বেল পাথরের একটি নগ্ন পুরুষের মূর্তির উপর। তারপর চোখ পড়ল প্রাসাদের পেছন দিকের স্বচ্ছ বেলজিয়ান কাঁচের বড় জানালার দিকে। আমি ভেতরের দিকে প্রবেশ করলাম কিছুটা এগিয়ে যেতেই বেশ কিছু স্তম্ভ বিশিষ্ট একটি দৃষ্টি নন্দন ড্রয়িং রুম চোখে পড়ল। স্তম্ভ গুলির মাথায় সুন্দর নক্সা করা এছাড়া ড্রয়িং রুমের প্রবেশ পথের মাথাতেও রয়েছে বহু নক্সা আঁকা। নবাবী আমলে এই প্রবেশ পথে লাগান থাকত দামি মখমলের পর্দা। ড্রয়িং রুমের ছাদটিও সুন্দর নক্সা করা। ছাদের মধ্য অংশটি দেখতে অনেকটা গম্বুজের ভেতরের অংশের মত হলেও এটা ঠিক গম্বুজ নয়। কারণ এটির মাথাটা ঠিক গম্বুজের মত নয়। মাথার উপর একটি বড় গোল আকারের একটি ঘোলাটে কাঁচ বসান রয়েছে যাতে সূর্যের আলো সেখান দিয়ে প্রবেশ করে ঘরটিকে আলোকিত করে রাখতে পারে। এই মধ্যের গম্বুজ আকৃতির অংশ থেকেই এক সময় একটি ঝাড়বাতি ঝুলত। আজ ঝাড়বাতি নেই তবে ঝাড়বাতি ঝোলার সেই লোহার চেন গুলি আজও ঝুলছে। ছাদের গম্বুজ আকৃতি অংশটির ঠিক চারপাশে চারটে বড় লোহার রড ঝুলছে। এই চারটি রড ছিল ফ্যানের জন্য। তবে এই রডের সাথে আরও একটি করে বড় রড লাগান হত যাতে ফ্যানকে নিচে নামান যায়। কারণ তা না হলে অত উপর থেকে ফ্যানের হাওয়া সোফায় বসা মানুষদের গায়ে এসে পৌঁছত না।
এই ড্রয়িং রুমের মাথায় চারপাশে রয়েছে রেলিং দেওয়া বারান্দা। যেখান থেকে সমগ্র ড্রয়িং রুমটি সুন্দর ভাবে দেখা যেত। ড্রয়িং রুমের দুই পাশে অগোছালো ভাবে পড়ে আছে নবাব ও তার বেগমের ব্যবহার করা নানান দ্রব্য সামগ্রী। যেমন একটি রাজকীয় খাট, একটি হাওদা, কয়েকটি পালকি, কয়েকটি আলমারি, শোকেস, তাছাড়াও সোনা ও রুপার জরি দেওয়া বেগমের কয়েকটি মূল্যবান শাড়িও সেখানে রয়েছে।
এগুলি ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু পুরানো চিঠি, নানান সরকারি আদেশনামা সংক্রান্ত কাগজপত্র, নবাবের হিসেব পত্রের কাগজপত্র সহ বহু মূল্যবান বই। এসব বাদেও সমগ্র প্রাসাদের বিভিন্ন স্থানে বেলজিয়ান কাঁচের আয়না ও বেলজিয়ান কাঁচের আয়না বসান ড্রেসিং টেবিল ও আলমারি ছড়িয়ে রয়েছে।
নিচ তলার মত দোতলাতেও দেখছি বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে। এই দোতলার ঘর গুলিতেই নবাব ও তার পরিজনরা বসবাস করতেন। দোতলার ড্রয়িং রুমের সামনের দিকের বড় দরজা খুলে দিলেই দেখা যায় সামনের প্রবাহমান ভাগীরথী নদী। সেখান থেকে উড়ে আসা ফুরফুরে হাওয়ায় ভরে যায় সমগ্র কক্ষটি। এদিক সেদিক তাকাতেই চোখে পড়ল ঘরের দেয়ালে একটি ছবি টাঙ্গান, কাছে যেতেই দেখি সেই ছবি লর্ড কার্জনের। হয়ত নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার সাথে কার্জনের সখ্যতা ছিল সেই জন্যই হয়ত এই ছবি তার ঘরে টাঙ্গিয়ে রেখেছিলেন, কিংবা হয়ত ব্রিটিশদের কাছে নিজের ভাব মূর্তি ভাল করতে তিনি এমনটা করেছিলেন। আসল কারণ নবাবই ভাল জানবেন।
অনেকক্ষণ হল প্রাসাদের দোতলায় আছি। এদিকে আতাহার ভাই এর ফোন আসছে ঘন ঘন, আসলে এই সময়টা তার ডিউটি টাইম। তাই আমি বলে বসলাম ভাই এবার চলুন আমার দেখা শেষ। ইতিমধ্যেই সাড়ে চারটে বেজে গিয়েছে, ফলে প্রাসাদের দোতলা থেকে আমরা নিচে নেমে এলাম এবং আতাহার ভাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। প্রাসাদ থেকে বেরিয়েও আমার যেন কিছুতেই ঘোর কাটছিল না। করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র কেল্লা চত্বর জনশূন্য। কেল্লার এমন রূপ দেখে মনে হচ্ছিল যেন কেল্লার ভেতরে নবাবী আমল পুনরায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।