সারঙ্গী
চারুবন্ধনযুক্ত সারঙ্গী, শোনো, ধর্মানুশীলনের বাইরে এসে পড়েছি। ঐ রে, ভণ্ডুল হয় বুঝি সব, স্তুতিপাঠক এগিয়ে আসছেন।
আমার দুখানি অস্ত্র----বজ্র ও তুমি। জ্বলে কুটির মধ্যে সীতার ছবি। এই বেলা ধূমলেখা পড়ে কাটানো যাক।
শম ও উগ্রতাটুকু নাও। মোক্ষ কই, কোথায় মোক্ষদাসী, বা কুমারী মাছ।
কোথা-বা মাছঘাট। আমের বোলের পরাগ উড়ছে রাশি রাশি। গন্ধ পাচ্ছ না! একটু পরে, সূর্যকে প্রসব করবেন প্রাচী। কখনো পথপার্শ্বে, কূপ আবির্ভূত হয়। পা ঘেঁষে দাঁড়ায় বেড়াল।
দূরে দূরে, এখনো অপেক্ষমান, মুদ্রামৃগয়া। নাকি রাতমূর্তি! সময় আমায় পিষে রেখে যায়, যবের গুঁড়ার মতো পড়ে থাকি পাথরের সিঁড়ি জুড়ে। আর সেই লিঙ্গরহিত, ধ্রুব, অরূপ, অক্ষয়, পরম ব্রহ্ম তাকিয়ে থাকেন নক্ষত্রদৃষ্টি মেলে। মেঘই যার কেশজাল, সেই তুমি শঠ-হৃদয়, কোথায় তখন?
তোমার খেলা শেষ হলো যেন, সবই দেখি আজ করে তুলছ ইন্ধন। সরস মৃণালসূত্র ধারণ করে নিঃশব্দে হাসছ।
পাখিরা এসে বসছে, পাতা কাঁপছে, কেঁপে উঠছে আমারও অভিসন্ধি, নিতম্বিনী, রতিরণে আজও তেমন নিপুণ নই। উনিও প্রকাশিত, চাঁদঠাকুর, উনি কি মদনবন্ধু?
বিজেত্রীর ঘরে আমি
বিজেত্রীর ঘরে আমি যাইনি সেদিন, লোকে তবু
আমাকেই বেরুতে দেখেছে। কী করে বোঝাব আমি
গোলাপ ও আফিমের কোনো তৃতীয়-উদয়-পথে
হেঁটেছি সেদিন স্বপ্নরিক্ত নটরাজনের মতো।
সেই হাড়-কঙ্কনের পথে, প্রভু, ভেবেছি বিস্ময়ে :
রঘু ডাকাতের মতো হয়ে যাই কেন যে আমরা
ওষ্ঠ চুম্বনের লগ্নে! মাটিতে অর্ধেক ডুবে থাকা
রথের চাকার গোঁয়ার্তুমি কীভাবে শরীরে জাগে!
নায়িকা-চূর্ণের রাতে, মৃত বেলফুলের ভেতর
তার গাঢ় কেশগন্ধ আমি পাই। বিজেত্রী বলেছে :
কাছে না এসেও এইভাবে নিকটে থাকার পথ
উন্মুক্ত রয়েছে, এইভাবে, বাক-বিভূতির দেশে
পৌঁছে গিয়ে দেখা যায় ঘুম-হারা কত মীনশব্দ,
কার স্পর্শ লেগে ওঠে ধীরে শিখীবর্ণ যবনিকা...
দাম্পত্য
যখন তুমি মেয়েমানুষ থেকে দূরে আছ, পড়তে পার চিহ্নবিজ্ঞান, চাঁদের নিচে ডিগবাজি খেতে পার কিছুক্ষণ বা বানাতে পার চাবুক। আসলে তোমার জন্যে কোথাও অপেক্ষা করে আছে কাঠবেড়ালি, তার বগলে এ বছরের রাশিফলের বই, আর অন্য হাতে সেক্স-পিস্তল।
যখন তুমি পুরুষমানুষ থেকে দূরে আছ, খাও যত ইচ্ছে পপকর্ণ, নিজের ভয়ংকর গোপন কথাগুলো নিজেকেই আরেকবার শোনাও ফিসফিস করে। একখানা জ্যান্ত কবিতার বই সঙ্গে রেখ, তোমার দিকে এগিয়ে আসা বিচ্ছুগুলো পিটিয়ে মারার জন্য ওটা লাগবে। খবরদার, ভুলেও বেড়াল কোলে নিও না, যা দিনকাল পড়েছে, স্তনে আঁচড় দেবার ঘটনা গত পরশুও ঘটেছে ভূতের গলিতে। এ সময় ইউক্লিডের উপপাদ্যগুলো মনে আছে কিনা, সেটা আঙুল দিয়ে লিখে দেখতে পার বালিতে।
ছবি ঃ সুমেরু মুখোপাধ্যায়