

বিদ্যেকে নেহাত বোঝা করেফেলা বাবুমশাইয়ের শেষমেশ কী পরিণতি হয়েছিল,সেটা সুকুমার রায় আমাদের বলে যাননি। কিন্তু, প্রকৃতবিদ্যা ও শিক্ষা বলতে আমরা ঠিক কী বুঝবো? কেবলডিগ্রি? নাকি বাস্তব জীবনে পথ চলাকে অর্থবহ ও সহজ সুন্দর করা? আর, প্রয়োজনে তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সাধের একমাত্র জীবন বাঁচানোর কাজেও তার তাৎক্ষণিক প্রয়োগগুলোও জেনে বুঝে রাখা? কোনটা বুঝব? এই তো সেদিন ১৪ জুন ইউরোকাপ ২০২০ র ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড এর ম্যাচে ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল খেলার মাঠে! কিন্তু সহ ফুটবলারদের এবং পরে মেডিকেল টিমের তাৎক্ষণিক সিপিআর প্রদান ফুটবলারের জীবন বাঁচিয়ে দিল। হই হই করে সবাই শিখতে ও শেখাতে চাইলেন কেবলমাত্র বুকের চ্যাপ্টা হাড়ের মাঝে নির্দিষ্ট গভীরতায় পর্যায়ক্রমিক চাপ দিয়ে থেমে যাওয়া হৃৎপিণ্ডের এস এ - এভি নোডে পুনরায় তড়িৎ প্রবাহ চালু করে হৃদপিণ্ডের লাবডুব আবার চালু করার প্রকৌশল। জীবনদায়ী। কিন্তু খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক পদ্ধতিমালা মেনে ওই কাজটি না করলে তা একেবারেই কাজ করবেনা ।
অথচ আমাদের কজনেরই বা জানা আছে, এই পদ্ধতিমালার কথা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বইয়ের পাতায় বহুদিন ধরেই লিপিবদ্ধ। জলে ডুবে গেলে কীভাবে বাঁচাবে কাউকে তার কথা উল্লেখ আছে তৃতীয়শ্রেণির আমাদের পরিবেশ বইএর “প্রত্যেকে আমরা পরের তরে" অধ্যায়ে?
আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই সেই ডাক্তার বাবুর কথা। যিনি কার্ডিয়াকঅ্যারেস্ট-এ আক্রান্ত রোগীকে পড়িমরি করে যখন সিপিআর দিয়ে বাঁচাতে যাচ্ছেন তখন বাড়ির লোকের মনে হচ্ছে --- এ আবার কী করছে রে বাবা ডাক্তার! ডাক্তার আপ্রাণ চেষ্টা করেও যখন বহু দেরি করে হাসপাতালে আনা রোগীকে বাঁচাতে পারলেন না, তখন প্রচেষ্টার জন্যসাধুবাদের পরিবর্তে ডাক্তারের কপালে জুটল আত্মীয়-স্বজনদের মারধোর! “ব্যাটা শয়তান ডাক্তার বুকে চাপ দিয়ে মেরে দিলে আমাদের রোগীকে”!
একবার খেয়াল করে দেখেছেন? সেই আত্মীয়-স্বজনদের কেউ যদি সরকারি স্কুলের ওই বইটার ওই পাতাটা একবার উল্টেও দেখত তাহলে সেই ডাক্তারকে মারতে উদ্যত লোকজনকে থামিয়ে চিৎকার করে বলতো “কী করছ তোমরা? ডাক্তার তো বাঁচাতে চেয়েছিল! তোমরা জানো না, কিন্তু আমি জানি, এভাবে মানুষকে বাঁচানো যায়! আমার স্কুলের বইয়ে এই পদ্ধতির কথা আমি পড়েছি!”
কিন্তু হায়! সরকারি বইয়ের ওই সুন্দর পাতাগুলো তার গুরুত্ব পায়নি। ওই রোগীর আত্মীয় স্বজন হয়তো বা বেশ কিছু টাকা খরচ করে কোনোও কর্পোরেট বা প্রাইভেট স্কুলে পড়াতেন তাঁদের সন্তানকে। যেখানে ঝকঝকে তকতকে দেখানোই প্রাধান্য পায়। কত দ্রুত ছেলেমেয়েকে কত বেশি বেশি জিনিস শেখাতে হবেএইটাই বেশিরভাগ সিলেবাসের মূল চালিকাশক্তি। শিশুদের কী পড়াতে হবে এবং কীভাবে পড়াতে হবে আর কেনই বা পড়াতে হবে তার সঠিক মনোবৈজ্ঞানিক ধারণার ঠাঁইনেই সেখানে ।
কেন নেই, তার নানা কার্যকারণ থাকতে পারে। এইলেখায় সেই বিষয়ে আমরা যাচ্ছি না।
কিন্তু আমরা, যারা শিক্ষা নিয়ে কিছু মাত্র ভাবনা চিন্তা করি বা এমন কোনও কাজে যুক্ত যাতে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত, তারা সত্যিই কি নিজেদের দায় এড়াতে পারি? বরং আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থেকেছিসিলেবাসের বইয়ে রামধনু না রংধনু কোন কথাটা আছে, এই চর্চায়।
আজ গোটা দুনিয়া হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জীবাণু ঠেকাতে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া কিংবা কনুই ভাঁজ করে হাঁচি-কাশির সময়ে জীবাণু আটকে দেওয়া কীভাবে একটা সমাজের বিস্তর মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। আজকলার টিউনে দেশের প্রতিটি মানুষকে পাখি পড়ার মতো করে সে কথা মনে করাতে হচ্ছে। বড় বড় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় শিরোনামে ঠাঁই হচ্ছে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার সঠিক পদ্ধতিমালা। কিন্তু আমাদের কয়জনেরই জানা আছে এই পদ্ধতিমালাগুলি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বইয়ের পাতায় বহুদিন ধরেই লিপিবদ্ধ।
এইরকম বহু জিনিস আছে, যেগুলো সঠিকভাবে শেখানোর প্রয়োজনীয়তা, আমরা যখন পড়াশোনা করেছি তখনকার পাঠ্যবইয়ে ঠাঁই পায়নি।
ডায়রিয়া আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে কারো না কারো হয়। কিন্তু আপনার বাড়ি সহ আপনার পাড়ায় একটা সার্ভে করুন। কতজন মানুষ --- বাচ্চা থেকে বড়ো --- বাড়ির কারো পাতলা পায়খানা শুরু হলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পরিবর্তে ওআরএস বানানোকে প্রাধান্য দিয়েছেন? আরকতজনই বা কোনও একটা এন্টিবায়োটিকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি মনে করেছেন?
নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয় ভাবনার লোকই আপনি বেশি পাবেন। অথচ পরিসংখ্যান বলছে --- বন্যা কবলিত এলাকা ছাড়া সাধারণ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ডায়রিয়া হয় ভাইরাসের কারণে যাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই।
আরও একটা সার্ভে করার অনুরোধ করবো। একটাওআরএস-এর প্যাকেট নিয়ে আপনি যে কাউকে বলুন এক গ্লাস ওআরএস বানিয়ে আপনাকে দিতে। কতজন সঠিকভাবে ওআরএস-টা বানিয়ে আপনাকে দেবেন? হিসাব করুন। শতাংশে তা এক অংক তো দূর অস্ত দশমাংশ ছোঁবে কিনা সন্দেহ আছে। অথচ ডায়রিয়া হলে কীভাবে বাড়ির উপাদান দিয়েই ওআরএস বানাতে হয় কিংবাওআরএস-এর পুরো প্যাকেটটা যে এক লিটার জলেই একসাথেই গুলতে হয়, এখানে আন্দাজের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই, সেটা কিন্তু বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সেমিনার থেকে শুরু করে ইন্ডোরে ভর্তি থাকা ডায়রিয়া রোগীকেপর্যন্ত পই পই করে বলে দিতে হয়।
প্রাতঃস্মরণীয় মহান বাঙালি চিকিৎসক ডাক্তার দিলীপচন্দ্র মহলানবিশ এর যুগান্তকারী আবিষ্কার ওআরএস আজ শতাব্দীর দ্বিতীয় সেরা জীবনদায়ী ওষুধ। যা বাড়িতেই বানানো যায়। তার উল্লেখ কিন্তু আছে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে। হ্যাঁ, সরকারি পাঠ্যবইয়ে এই কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারেই বলা আছে।
এ তো নাহয় গেলো জনস্বাস্থ্যের নানা দিক। যা দীর্ঘ সময় ধরে উপেক্ষিত থেকেছে মূল ধারার পাঠক্রমে। এবং তা বর্তমানে বাংলার পাঠক্রমে ঢুকলেও অবহেলিত থেকেছে সমাজের বেশিরভাগ মানুষের কাছে।
হাতে-কলমে ওআরএস বানিয়ে কিংবা ওআরএস তৈরির একটা পোস্টার বানিয়ে পাড়ার কোন দেওয়ালে টাঙানোর মধ্যে সময় অপচয় হচ্ছে সন্তানের --- এমন মনে হয়েছে হয়তো আমাদের কারো কারো। অথচ এইবিশ্বমহামারীর সময়ে এই জিনিসটা এবার হয়তো আমরা বুঝতে শিখেছি যে ভালো থাকতে গেলে পাড়ার সকলকে একসাথে ভালো থাকতে হবে। আমার পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে আমার বাচ্চাটিও যদি সিপিআর জানে সে-ও হয়তো কখনো আমাকে বাঁচিয়ে দিতে পারবে।
এবার আসুন একটু নির্ভেজাল একাডেমিক বিষয়েই যাওয়া যাক।সুকুমার রায়ের সেই বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাইকে যদি কেউ একটু যাচাই করে দেখতেন, হয়তো বা দেখা যেত তিনি যেগুলো জেনেছেন তার মধ্যেও রয়ে গেছে বিস্তরফাঁক ও ফাঁকি।
আমার বেশ মনে আছে, ছোটবেলায় আমি যখন লসাগু গসাগু করতাম তখন স্রেফ মুখস্থ করতাম। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি বললে গসাগু করব এবং সবচেয়ে কম এই কথাটা থাকলে লসাগু করবো।
কিন্তু আমাদের মধ্যে কজন জানি যে দুটো সংখ্যার লসাগু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা যায়? হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন।২ আর ৩ এর লসাগু যে ৬ তা সত্যি সত্যিই হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা যায়। দুটি সংখ্যার গসাগু বের করে ফেলা যায়সামান্য কিছু নুড়িপাথর কিংবা কাগজের টুকরো ব্যবহার করে। হ্যাঁ সেই পদ্ধতিমালার কথা বলা আছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বানানো চতুর্থশ্রেণির গণিতবইয়ে।
একটা শিশু যোগ শিখেছে কিনাসেটা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায়এইটা দেখে নেওয়া যে, সে এমন একটি সমস্যা তৈরি করতে পারছে কিনা যাতে যোগ করে ওই সমস্যার সমাধান ঘটানো সম্ভব। ঠিক সেই রকম ভাবে একটি শিশু ও লসাগু গসাগু শিখেছে কিনা বোঝার শ্রেষ্ঠ উপায় সে দুটি সংখ্যা দিয়ে এমন একটা সমস্যা বানাতে পারছে কিনা যার উত্তর লসাগু গসাগু করেই হবে।
আমি নিশ্চিত, দুটি সংখ্যার লসাগু গসাগু অনেকেই করতে পারবে কিন্তু তা দিয়ে সমস্যা তৈরি? খুব কম জনই সেটা পারবে। কিন্তু এখানে তো তার কোনও দোষ নেই। আমরা কি ওই পদ্ধতিমালার মধ্যে দিয়ে তাদের নিয়ে গেছি? যদি নিয়ে যেতে পারি কাউকে বড়ো বেলায় আর আক্ষেপ করতে হবে না যে আমি অংকে কাঁচা ছিলাম। আসলে আমরা শিক্ষকরাই তাকে বিষয়টা বোঝাতে পারিনি।
নির্দ্বিধায় বলা যায় এযাবতকালেরকোনও নামিদামি এডুকেশন অ্যাপ্লিকেশনেরও এতো ক্ষমতা নেই যে, এইভাবে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের ৫ই (5E)(Engage, Explore , Explain, Elaborate and Evaluate) পদ্ধতিমালা মেনে সহজ করে শেখাতে পারে শিশুদের। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে গিয়ে যেদিন আমি যেদিন প্রথম এটা দেখি সেই দিনটা আমি আজও মনে করতে পারি। চমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু বলুন তো এই অসাধারণ পদ্ধতিমালার কথা আমরা কজন জানি? না,আমরা বেশির ভাগই জানি না। ওই পদ্ধতিমালার যতটা প্রচার এবং প্রসার এর প্রয়োজন ছিল তা ঘটেনি।
হাতে কলমেবিজ্ঞানশিক্ষা প্রসারের অগ্রণী মানুষ, পথপ্রদর্শক ও বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের প্রাক্তন অধিকর্তা শ্রদ্ধেয় সমর কুমার বাগচী এক একান্ত আলাপচারিতায় আমাকে বলেন - “জানো সৌম্য, আমি দিল্লির একটি অত্যন্ত নামি স্কুলে গিয়েছিলাম। যে স্কুলের বাৎসরিক ফি লক্ষাধিক। সেই স্কুলে একটি শিশুকে আমি জিজ্ঞেস করি আচ্ছা বলতো তোমার ঐ সামনের গাছটা কতটা উঁচু হতে পারে? আন্দাজে বল। প্রশ্ন শুনে শিশুটি উত্তর দেয় 25 স্কয়ার মিটার!” না, একক সম্বন্ধে তারকোনও ধারণাই হয়নি।
এই যে মিলিমিটার সেন্টিমিটার ডেসিমিটার দিয়ে ভুরিভুরি অংক কষেবাচ্চারা হরদমই ফুল মার্কস পায়। কিন্তু, ওই এককগুলির এক দুই বা তিন মাত্রিকআকারের আন্দাজ আমাদেরবাচ্চাদের মধ্যে কতজনের কাছে সুস্পষ্ট?
সমরবাবুআরও বলেন “অথচ সামান্য কিছু কাগজ সুতো কাঠি এইসব দিয়েই যোগ বিয়োগগুণ ভাগ ভগ্নাংশের লসাগু ও গসাগু এই সমস্ত কিছুর সুস্পষ্ট ধারণা শিশুদেরকে দেওয়া সম্ভব।” সেই পদ্ধতিমালার কথাও কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক এর বইগুলিতে আছে।
যোগ বিয়োগগুণ ভাগ লসাগু গসাগু ভগ্নাংশ শতকরা এই সমস্ত কিছুই সামান্য কিছু কার্ড কাঠি কাঁকর এইসব দিয়ে হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে শেখার অপূর্ব পদ্ধতিমালা রয়েছে আমাদের বর্তমান সরকারি গণিত বইয়ের পাতায় পাতায়। কিন্তু আমরা, যারা পেশা বা নেশার বাসামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদে শিক্ষা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করি, তাদের তো এগুলো নিয়ে বেশি বেশি কথা বলার এবং আলাপ আলোচনা করার কথা ছিল! কিন্তু কজন তা খেয়াল করেছি? করিনি!
বিনামূল্যের স্বল্পমূল্যের হাতের কাছে থাকা সামান্য কিছু উপকরণ ব্যবহার করে বিজ্ঞানের জটিল জটিল নিয়মগুলি যে সুন্দর সহজ হয়ে আমাদের চোখের সামনে প্রতিভাত হতে পারে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন এই সমরবাবুদের মত মানুষরা। সমরবাবুর বিখ্যাত অনুষ্ঠান ‘কোয়েস্ট’ দূরদর্শনে বহুদিন ধরে প্রচারিত হয়েছে। সেগুলি --- সেই সুন্দর মজার নানা পদ্ধতিমালা আজ উঠে এসেছে ষষ্ঠ সপ্তম অষ্টম নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে।
আমাদের রাজ্যের বর্তমান পাঠক্রম এবং পাঠ্যসূচিতে হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে শিক্ষার এমন ভুরিভুরি নিদর্শন তুলে ধরে আর প্রবন্ধ দীর্ঘায়িত করছি না। কিন্তু আমরা যারা সচেতন, তারা কতজন সেই পরীক্ষাগুলো বাড়িতে করার জন্য উৎসাহিত করেছি আমাদের বাড়ির শিশুদের? বরং হয়তো বা আমাদের মনে হয়েছে এতে ওদের সময় অপচয় হচ্ছে ! ফলে আমরা যেভাবে শিখে এসেছি সেই ভাবেই শিশুদের শেখাতে গিয়ে ঠিক আমাদেরই মত তাদের মনে তৈরি করে ফেলছি অংকের প্রতি দুর্বলতা, বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি। যথারীতি তৈরি হচ্ছে এমন এক মন যে চিন্তা করতে পারে না, যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেনা,যে শুধুমাত্র মুখস্ত করে পরীক্ষা পাস করে এবং বিনা প্রশ্নে সবকিছু মেনে নিতে শেখে।
আর তাইতো আমরা দেখতে পাই, সেলিব্রেটিরা মানুষকেকত সহজেই বোঝাতে পারেন, পুষ্টির জন্য দরকার‘শক্তিদাতা’ খাবার। একজন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ করার জন্য মুখস্থ করে--- ‘ভিটামিন শুধু বিপাকে সাহায্য করে, কিন্তু নিজে কোনও শক্তি দেয় না’ --- কিন্তু বড়ো হয়েসে-ই আবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে, ডাক্তারবাবু দুর্বলতা কমাতে আমাকে একটা ভিটামিন টনিক লিখে দিন!
আমরা ভুলে যাই আমাদের ঘামের সঙ্গে নুন বের হয় ও ঘেমে নেয়ে কেউ এলে বিগ বি এর বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে তাকে নুন চিনি কাগজির সুস্বাদু শরবত এর পরিবর্তে গ্লুকোজ জল দিয়ে নিজেদের 'মান' বাড়াতে গিয়ে তার শরীরের এবং নিজেদের পকেটের বারোটা বাজাই। এবং### মাধ্যমিকে পড়া ওই সামান্য জ্ঞানটুকু বেমালুম ভুলে যাই যে “সুক্রেজ সুক্রোজ কে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ এ পরিণত করে”, ফলে আমরা যদি চিনি খাই তা নিজে থেকেই পেটে গিয়ে পাচিত হয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয় ৷ ওই তথ্যটা কেবলমাত্র নাম্বার পাওয়ার জন্যই মুখস্থ করা হয়েছিল। তাকে আর জীবনে কাজে লাগানো হয়নি ।
আর তাই তা নিয়ে মানুষকে বোঝানোর জন্য "অসুখ-বিসুখ" এবং "স্বাস্থ্যের বৃত্তে"-র মত চিকিৎসা-সংক্রান্ত জনবোধ্য পত্রিকায় তা আলাদা করে লিখতে হয়। আমাদের কোনও এক বন্ধু চিকিৎসককে রোগীদের সচেতন করতে পোস্টার লিখতে হয় --- “বোকায় গ্লুকোজ খায়/ চালাকে খায় চিনি/ বুদ্ধিমানে গুড় খায়/ স্বাস্থ্যবিধান মানি।”
শরীরের উপরিভাগে আনত তলে ঘর্ষণ বল এর প্রভাবে নানা জিনিস আটকে যাওয়ার সাধারণ ঘটনা মানুষের কাছে চৌম্বকত্ব মনে হতে থাকে। কোভিড-এর টিকার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়েহুলুস্থুলু বেঁধে যায়। বিজ্ঞান কর্মীদের আলাদা করে বোঝাতে হয় যে এটা আসলে সামান্য একটা ঘর্ষণবলের প্রভাবে ঘটছে। অথচ শিশুরা যদি সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার, বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখার বোঝার মন ও মনন এর পাঠ প্রাথমিক স্তর থেকেই পায় তাহলে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়।
আর ঠিক সেইকারণেই একটা সভ্যতা কতটা উন্নত হবে তা নির্ভর করেতার শিক্ষাব্যবস্থা কতটা যুক্তিপূর্ণ বিজ্ঞানমনস্ক এবং শিশুকে কতটা হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে মজা করে তাদের বুনিয়াদিশিক্ষাটা আমরা দিতে পারছি তার উপর। যুক্তি বুদ্ধি বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে দেখতে শেখার প্রাথমিক পাঠ শিশুদের আমরা কতটা দিতে পারছি তার উপর।
আমাদের এই বর্তমান পাঠক্রমে তার যথেষ্ট সুচিন্তিত প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই। আমি যে স্কুলে পড়াই সেই স্কুলে আমরা দীর্ঘদিন ধরে উক্ত পদ্ধতিমালা মেনে আনন্দদায়ক পদ্ধতিতে হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে শেখার বিষয়টি আমাদের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরিবেশন করার চেষ্টা করেছি আমাদের সাধ্যমত।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে যখন স্কুল বন্ধ হয়ে গেল তখন আমরা প্রথমদিকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাস শুরু করি। কিন্তু আমরা দেখি বেশিরভাগ শিশুর কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না। কারণ আমরা সবাই জানি --- বেশিরভাগ শিশুর কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। কিন্তু আমরা দেখলাম আরো বেশকিছু শিশুদের বাড়িতে বা পাড়ায় অন্তত একটা টিভি আছে। তাই ২০২০ সালের ১৫ই জুন থেকে সিটি কেবল এর একটি চ্যানেলে আমরা ক্লাস শুরু করি।
আমাদের আসরের নাম রাখা হয় "খেলতে খেলতে লেখাপড়া পড়তে পড়তে খেলা।" ধীরে ধীরে আমাদের পাশে এগিয়ে আসেন নানা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি বেশকিছু ডাক্তার, সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট, বিজ্ঞানী, মৃৎশিল্পী, বাচিক শিল্পী থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন।
হাতে-কলমে মজা করে অংক শেখা,বিজ্ঞানের নানান নিয়ম শেখা, যাতে সহজেই মুখস্থ হয়ে যায়।গানের মাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজি কবিতা শেখা-র পাশাপাশি চলতে থাকেছবি আঁকা,গান শেখা,আবৃত্তি শেখা। পাশাপাশি চলতে থাকেগল্পের আসর হাতের কাজ,নাটক থেকে শুরু করে শারীরতত্ত্বেরখুঁটিনাটি,মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা।
শিশুদের সিলেবাসকে কেন্দ্র করে এই ক্লাসগুলোতে একইসাথে উঠে আসেজনস্বাস্থ্যের নানা বিষয়। সাপের কামড় ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে জানা বোঝা, ডায়রিয়া হলে করণীয় কী সেই প্রসঙ্গ, নাক কান গলার সমস্যা ও তার ঘরোয়া সমাধান, মৃগী রোগ নিয়ে আলোচনা, অটিজম-এর মত বিষয় নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে বর্তমানে নবীন প্রজন্মের এক ভয়ানক চামড়ার অসুখ, যা ফর্সা হওয়ার জন্য - স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম মাখার ফলে ঘটে চলেছে, সেই --- ট্রপিক্যাল স্টেরয়েডড্যামেজড ফেস (TSDF )--- ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়েনানা চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানী মূল্যবান ক্লাসগুলো নিয়েছেন তা আমাদের কাছে এক অমূল্য পাওনা।
মূলত বাংলা মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আমরা তৈরি করতে থাকি এমন ধরনের ভিডিও কনটেন্ট যা একাধিক প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দেবে।
ক্লাসগুলি দেখছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্রছাত্রীরা। এমন বহু শিশু দেখছে যাদের বাড়িতে কোন এন্ড্রয়েড ফোন নেই। শুধু দেখছে তাই নয় তারা তাদের গান পাঠাচ্ছে, তাদেরআঁকা ছবি পাঠাচ্ছে, এমনকি বিজ্ঞানের নানা মজার পরীক্ষা হাতে-কলমে করে তার ভিডিওগ্রাফি অন্যের ফোন থেকে রেকর্ড করে পাঠাচ্ছে সুদূর নদিয়ার এক শিশু, কেউ হয়ত ফোন করে আমাদের কবিতা শোনাচ্ছে। তার বা তাদেরঅনেকেরই স্মার্টফোন নেই।
না, ক্লাস রুম এর বিকল্প এই ক্লাস নয়। হতে পারেও না। কিন্তু তাই বলে কি আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি? না পারি না! খুব দুঃখের সাথে এই কথাটা বলতে হচ্ছে --- “ক্লাস রুম এর বিকল্প এই টিভি ক্লাস নয়, বা অনলাইন ক্লাস নয়” --- এই কথা বলা মানুষজন, এই আমরা কি নিজের সন্তানের অনলাইন ক্লাস বন্ধ রেখেছি?
না রাখিনি। তাহলে যাদের কাছে এন্ড্রয়েড ফোন নেই কিন্তু বাড়িতে বা পাড়ায় অন্তত একটা টিভি আছে তাদের কথা আমরা এই মুহূর্ত থেকে কেন ভাববো না? আমরা কেন ভাববো না যে দেশের এই পরিস্থিতিতে টিভি এবং রেডিও কে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরা আশু কর্তব্য। দেশের প্রতিটি রাজ্যের নানা ভাষাভাষী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শুরু করা আশু কর্তব্য।
অথচ বর্তমানে, হাজার হাজার চ্যানেল, তাতে হাজার হাজার অনুষ্ঠান, তাতে হাজার হাজার টকশো, তাতে হাজার হাজার সিরিয়াল-সিনেমা-গান মানুষকে বুঁদ করে রাখতে পারে --- কিন্তু কী অদ্ভুতভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য কোনও ২৪ ঘণ্টার টিভি চ্যানেল নেই!
আমার প্রশ্ন ঠিক এই জায়গাটায়। আমি জানি অনেকেরই প্রশ্ন আমার মতো। ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু না, সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য টিভি রেডিও এর মত গণমাধ্যমে সর্বক্ষণের একটিশিক্ষা-চ্যানেল কেন থাকবে না বলতে পারেন? আমাদের রাজ্যের তথা দেশের কত শত বিজ্ঞানী আছেন যাদের কত অমূল্য কথা আমাদের শোনা হয়নি --- তাঁদের মস্তিষ্কের অপূর্ব ভাবনাচিন্তা --- কত কত শিল্পী আছেনযাঁদের শিল্পকর্ম আমাদের দুচোখমেলে দেখা হয়নি।ফেলে দেওয়া লোহার টুকরোতে মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কী অপূর্ব শিল্প কর্ম হতে পারে --- সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ হতে তো আমাদের জানা হয়নি, ফেলে দেওয়া মাটির টালি বা কাঁচের বোতলে থেকে যে অপূর্ব সুর বের হতে পারে,সেই অনন্য সুর, আমাদের কজনেরই বা শোনা হয়েছে? কত কত গণিতজ্ঞ আছেন, সাহিত্যিক আছেন কৃষক আছেন যাঁদের সকল সৃষ্টি আমাদের দেখা বাকি। অথচ এমন একটি গণমাধ্যম যদি থাকতো যেখানে এই সমস্ত সৃষ্টি ও কৃষ্টি উঠে আসতো আমাদের চোখের সামনে, কতোই না ভালো হতো বলুন !
অথচ ঠিক তারবিপ্রতীপে কত ভুলভালজিনিসের কতশত রমরমা! সেই ভুলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য সঠিক পথ দেখানোর জন্য এত বিদগ্ধ মানুষের বাসভূমি এই দেশেগণমাধ্যমের একটা স্বাধীন ক্ষেত্র বানানো কি খুবই জটিল? বিজ্ঞাপনের কাছে সবই কি হেরে যাবে? আমি তা বিশ্বাস করি না। আফ্রিকার, তানজানিয়া এর মতো গরিব দেশে যদি ঘরে ঘরে টেলিভিশনে শিশুদের পাঠ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে পারে, তাহলে আমরাও পারব।
আমরা রাধানগর বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ নানা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার অভিভাবক অভিভাবিকা এবং শুভানুধ্যায়ীবৃন্দ সকলের সহযোগিতায়, বিগত এক বছর ধরে এক ঘণ্টার একটি টিভি অনুষ্ঠান করে চলেছি কিন্তু! জানি সমস্ত টিভিতে তা দেখা যায় না। কিন্তু প্রায় ৬০ লক্ষ বাড়িতে তা দেখা যায়। কিছুদিনের মধ্যে আমরা, যাদবপুরের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের এবং পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলার শিক্ষক শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আরও এক ঘণ্টার ক্লাস শুরু করতে চলেছি। না আমরা কোন বিজ্ঞাপনদাতারমুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকিনি। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই যদি হাতে হাত রাখি আমরা পুরোদস্তুর এমন একটি টিভি চ্যানেল বানাতে পারব যে টিভি চ্যানেল সমস্ত টিভিতে দেখা যাবে।
আমি তো বেশ স্বপ্ন দেখি। কোন এক লকডাউনের সকালে আমার রাজ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া সবার বাড়ির লোক তার সন্তানকে একদিন বলবেন --- আরে তোদের ক্লাসকটা থেকে রে? ক্লাসটা দেখে বুঝতে না পারলে দিদিমণিকে একটা ফোন করিস!
আর আর পাঁচটা দিনের মতো স্বাভাবিক কোন এক দিনে যখন স্কুল-কলেজ সব কিছুই খোলা তখন...
কোনও এক মাহয়ত তাঁর সন্তানকে বলবেন --- সেদিন একটা খুব ভালো স্বাস্থ্যকর খাবারের রেসিপি দেখালেন রে হার্টের ডাক্তার গৌতম মিস্ত্রি। হার্ট ভালো রাখতে গেলে যে ছোট থেকেই তোদের কেউ ভাজাভুজি কম দিতে হবে তা কিন্তু আমার জানা ছিলো না রে!আর ওই যে হরলিক্স কমপ্লেন বোর্নভিটা এগুলো যে কত ফালতু আর ক্ষতিকারক খাবার তা তো আমাদের এমন করে কেউ বলেননি রে আগে ! সত্যিই অনেক কিছুই নতুন করে শিখছি রে !
সন্তান বলবে "না গো মা, অনেকেই বলেছেন, কিন্তু সেই বলা-গুলো আমাদের কাছে পৌঁছায় নি!"
কোনও এক মেয়ে তার বাবাকে বলবে ---“বাবা আজ সন্ধেবেলা বিনা রাসায়নিকে যে কত ভালো চাষ হতে পারে তা নিয়ে আমার একটি তথ্যচিত্র ওই চ্যানেলে দেখানো হবে। মাঠে কাজে যাওয়ার সময় তোমার সব বন্ধুদের বলে দিও।“
তাই শুনে বাবা বলবেন সত্যি, “তোদের এই অনুষ্ঠানে ডাক্তারদয়ালবন্ধু মজুমদারের কাছে আমি প্রথম জানলাম যে,রাত্রে বেলায় পেটে ব্যথা এবং ঢোঁক গিলতে পারা অসুবিধা কালাচ সাপের কামড় এর লক্ষণ! সেটা যদি না জানা থাকতো তাহলে হয়তো আমরা নবীনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতাম না...। সত্যি, অনুষ্ঠানগুলো খুবই ভালো হচ্ছে রে! আমরা সবাই কত কী শিখতে পারছি !”
সেই দিন যখন আবার "বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই" এর মাঝির সাথে দেখা হবে সেদিন বাবুমশাই মাঝির হাতটা দুহাতে ধরে বলবে, "আমার সেদিন বড্ড ভুল হয়েছে ভাই! নিজেকে সবজান্তা ভাবাটা আমার বড্ড বড় ভুল হয়ে গেছে! চলো ভাই, আমাকে সাঁতারটা শিখিয়ে দাও! নইলে যে আমার জীবনটা ষোল আনাই বৃথা" মাঝি তখন হেসে বলবে "সে না হয়দেব’খন, কিন্তু তার আগে আমি যে কাঁকর দিয়ে গসাগু শিখছি নাতনির সাথে,সেটা একটু দেখবেন না ?"
কিছু পরে দেখা যায় বালুচরে দুজন মানুষ বসে মজা করে অংক নিয়ে কথা বলছেন। আর দূরে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সুরেকে যেন গাইছে,
অরিজিৎ | 2409:4060:e92:eecb:5a1:8c33:1481:***:*** | ২২ জুলাই ২০২১ ০০:১৩495976রাধানগর স্কুলের ক্লাস সিটি cable এ দেখেছি।চমৎকার ক্লাস হচ্ছে।
আশিস নবদ্বীপ | 2401:4900:3a01:e060:4f8a:589f:f385:***:*** | ২২ জুলাই ২০২১ ০৮:১৬495980খুব ভালো লাগলো সৌম্য। অনেক দিন পর তোমার লেখা পড়লাম। খুব ই আকর্ষণীয়। আরও লেখো। আশিস দা। নবদ্বীপ। ফোন করবে। 6297926930।
Abhyu | 47.39.***.*** | ২২ জুলাই ২০২১ ০৯:৩৪495982অত্যন্ত ভালো লেখা।
Anindita Roy Saha | ২২ জুলাই ২০২১ ১৫:৩৮495987খুব ভালো লাগলো। জরুরি আলোচনা , সাধু উদ্যোগ।
এই ভাবধারাতেই লেখা একটি প্রবন্ধের লিংক দিলাম , বিষয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা অথবা জীবনের হিসাব।
https://arekrakam.com/issues/9th-Year-13th-Issue-1-15-July,-2021/details/?details=310
অলকানন্দা গুহ | 103.215.***.*** | ২২ জুলাই ২০২১ ১৭:৪১495994সৌম্য সেনগুপ্তর এই লেখাটি খুব ভালো লাগল। রাধানগরের এই উদ্যোগের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হতে পারি ? সৌম্যবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই। কীভাবে করব? রাধানগর সিটি কেবলে সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানগুলি ফিরে দেখার কোনো ব্যবস্থা আছে? আমি দেখতে চাই।
সৌম্য সেনগুপ্ত | 103.217.***.*** | ২২ জুলাই ২০২১ ১৯:৪২496000গুরুচন্ডা৯ র মতো একটি পত্রিকায় লেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলী কে জানাই শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
এই উদ্যোগে যাঁরা আসতে চান তাঁরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আমাদের এই কাজ যে ওয়েবসাইটে পাবেন ( যদিও এখনো নির্ণয়মাণ ) !
কথা বলতে চাইলে 9474565047
অসাধারণ কাজ করছ, সৌম্য ! জীবনকে এভাবেই অর্থপূর্ণ, অ-তুচ্ছ করে তুলতে হয়। ভাল থেকো। তোমার শিশু-শিক্ষার্থীদের ভাল রেখো।
সৌম্য সেনগুপ্ত | 117.227.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২১ ০৮:৫৬496007শ্রদ্ধেয় পাঠক মন্ডলী কে শ্রদ্ধা জানাই !
মাননীয়া অলকানন্দা গুহ আমাদের ক্লাস গুলি দেখতে চেয়েছেন ।
আমাদের প্রায় দুই শতাধিক পর্ব , যেগুলো টিভিতে দেখানো হয়েছে, তা সবই তোলা আছে ইউটিউবে। ইউটিউবে গিয়ে Radhanagar Board Primary School সার্চ করলে পেয়ে যাবেন ।
187 পর্ব অব্দি একক ১ ঘণ্টার পর্ব ক্লাস হিসেবে আছে । সেখানে নানা ক্লাসের নানা বিষয় একত্রিতভাবে আছে । তারপর থেকে আমরা ক্লাস গুলিকে আলাদা আলাদা ভাবে ইউটিউবে তুলে যাচ্ছি যাতে বিশেষ শ্রেণির বা বিশেষ বিষয়বস্তুর ক্লাস গুলি আলাদাভাবে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
দেখে মতামত দেওয়ার অনুরোধ রইল।
স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২১ ১৩:৩৩496009সাধু উদ্যোগ। খুব ভাল লাগল।
গৌতম ঘোষ | 103.217.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২১ ১৬:৫০496013বাংলা মাধ্যম এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য আপনাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই ৷ জীবনের প্রয়োজন মেটানোর নাম শিক্ষা ৷ আর সেটার জন্য ইংরাজী মাধ্যমের কোনও প্রয়োজন নেই ৷
সুদেষ্ণা মৈত্র | 42.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২১ ২০:৪৮496022ভালো লেখা।
সুদেষ্ণা মৈত্র | 42.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২১ ২০:৪৮496023ভালো লেখা।
খুব ভালো লাগলো
Gopal Basak | 2401:4900:314a:1b15:1d50:8fe2:17e4:***:*** | ২৪ জুলাই ২০২১ ০১:৫০496033এইসময়ে টিভিতে ক্লাস নেয়ার আইডিয়া খুব-ই অভিনব, বিশেষতঃ গ্ৰামাঞ্চলে। এটার একটা প্রব্লেম যে এটা ননইন্টারাক্টিভ --- কিন্তু এই মাড্যাম-এর বিকল্প গ্রামাঞ্চল-এ করা খুব-ই মুশকিল। অন্য দিকে এই মাধ্যমে অ্যানিমেশন, মুভি ছাত্রছাত্রী-দের দেখানোর যে সুযোগ আছে সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে এই মাধ্যমে পড়ানো আরও আকৃষ্ট হবে।
কতজন এই মাধ্যম ব্যবহার করছে কোনো সঠিক এস্টিমেট জানতে পারলে খুব ভালো লাগতো --- সময়ের সাথে সাথে এর সংখ্যা কিরকম পরিবর্তন হচ্ছে তার আইডিয়া পেলে খুব ভালো হতো।
সৌম্যবাবুদের এই কাজটার কথা জেনে খুবই ভাল লেগেছিল।
আজ অরুণাভ অধিকারীর পোস্ট পড়ে এই ব্যবস্থার কথা জেনেও
"প্রায় বছরখানেক হল পশ্চিমবঙ্গে "বাংলার শিক্ষা" বলে একটা প্রকল্প চালু হয়েছে। ইস্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের পাঠ্যের কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধে হলে একটি টোল-ফ্রি নাম্বারে ফোন করতে হয়। কি বিষয় জানতে চাইছে বললে সেই বিষয়ের কোনো একজন বিদ্যালয় শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।
আমার বউ একজন স্কুল শিক্ষক। ফিজিক্সের শিক্ষক। বেশ কিছুদিন যাবত বলছিল যে আর ক্লাসে পড়িয়ে আনন্দ পাওয়া যাছে না। ওর ছাত্রীরা নাকি বিষয়টা ভালো করে বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে ক্রমশ উৎসাহ হারাচ্ছে। এই বাংলার শিক্ষা প্রকল্পে ও খুব খুশি। কেননা যার মনে জিজ্ঞাসা আছে সেই প্রশ্ন করছে। বিষয়টা ছাত্রটি পড়েছে কিন্ত প্রশ্ন রয়ে গেছে। সে যদি প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝে নিতে চায় একমাত্র একজন শিক্ষকই জানেন যে তার তুল্য আনন্দ জগতে খুব কমই আছে।
সোনালি গত এপ্রিলে অবসর নিয়েছে। কিন্তু ফোনের আসা থামে নি । সোনালি তো খুশিই। কিন্তু এই ব্যবস্থাটা ও তো মন্দ নয়।"
ভাটিয়া৯ র আলোচনা প্রসঙ্গে মনে হল, এই লেখাটা তুলি
ভালো।