১.
কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন-- এ সবই ছাত্রদের ইস্যু। দেশে অসংখ্য ছাত্র সংগঠন আছে। তাদের দায়িত্ব ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা। কিন্তু এই দুটি আন্দোলনে দেশের ছাত্র সংগঠনগুলো নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন। তাহলে এদের ছাত্র সংগঠন হিসেবে থাকার দরকার কী?
২.
কোটা আন্দোলন করছে সাধারণ ছাত্র পরিষদ। তাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মতো দায়িত্বোবধ বিবেচনা বোধের ঘাটতি থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে এ আন্দোলনকে সহজেই সাবোটাজ করার মতো লোকজন ঢুকে পড়তে পারে। এটা ঘটছে-- আমরা দেখতে পাচ্ছি।
এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ছাত্র সংগঠনগুলোই। তারা নানা মত ও পথের সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলেছিল। আবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আলাদা থেকেও যুগপৎ আন্দোলন করেছে। সে আন্দোলন সফল হয়েছে। এরশাদ পড়ে গেছে।
এই অভিজ্ঞতা মনে রেখে ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। তারা আড়েঠারে বলার চেষ্টা করছে, এইসব আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলো যোগ দিলে সরকার মাইন্ড করতে পারে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজতে পারে। খুঁজুক। সরকারের পারমিশন নিয়ে সরকারের ডিজাইন অনুসারে আন্দোলনের অর্থ নেই। যারা যেকাজ, তার সেই কাজই করতে হবে।
ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ো। নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর দরকার নেই।
৩.
সড়কপথে ছাত্ররাই শুধু মরে না-- সকল ধরনের নাগরিকই মরে--সড়কপথের দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে নিরাপদ আন্দোলনটি কেনো শুধু মাইনর ছাত্ররা করবে? এই আন্দোলন সকল নাগরিকেরই করা অবশ্য কর্তব্য। ছাত্ররা শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে রাজপথে সবার নেমে আসতে হবে। বাচ্চাদের একা ছেড়ে দেবেন না। সবাই নেমে আসলে সরকার বাপ বাপ বলে দাবী মেনে নেবে। শাজাহান খানের মতো দানব খড়কুটার মতো স্রোতে ভেসে যাবে। কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
৪.
রাজনৈতিক দলগুলো বুড়ো হাবড়াদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। এদেরকে বাতিল করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। নাগরিকের সমস্যা নিয়ে যেহেতু তারা মাঠে নামে না, তাদের থাকারও দরকার নেই। নতুনদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে হবে। বুড়ো হাবড়াদের মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিতে হবে।
৫.
ছাত্ররা আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনে ছাত্র সংগঠন নেই, পেশাজীবীরা নেই, অভিভাবকরা নেই, রাজনৈতিক দলগুলো নেই-- এরা সাধারণ ছাত্রদের শিশুদের মাঠে ছেড়ে দিয়ে খেলা দেখছেন। এরা সবাই আন্দোলনে থাকলে জামায়াত শিবির এই আন্দোলনে ফাঁকে ঢুকে পড়ার সুযোগ পেতো না। যদি ঢুকে থাকে তবে সে দায় শিশুদের নয়--সে দায় সকলের। দায় সরকারের।
কেনো সরকারের? শুরু থেকে সরকার এই আন্দোলনকে গুরুত্বই দিতে চায়নি। তারা মনে করেছে পুলিশ পেটোয়া বাহিনী দিয়ে এ আন্দোলন সহজেই হাওয়া করে দিতে পারবে।
হাওয়া হয়নি। সরকারের দীর্ঘসূত্রীতার কারণে আন্দোলন বিচিত্রভাবে বিস্তারিত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে ফাঁক ফোকর। তার মধ্যে দিয়ে ভালো মানুষ না ঢুকলে জামায়াত শিবির কি বসে থাকবে? তারা ঢুকছে। ঢুকবে। আন্দোলনকে তাদের কোটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। রাজনৈতিকভাবে আবার গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করার চেষ্টা করবে। জামায়াত শিবিরকে এভাবে সরকারই রাজনীতির মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত করছে। জামায়াত শিবিরের ধুয়া তোলার অধিকার আওয়ামী সরকারের নেই।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্দোলনে জামায়ার শিবির ঢুকেছে বলে এতো চিক্কুর পাড়ছেন কেনো? এই যে দলে দলে জামায়াত শিবিরকে হানিফসহ আপনার সহকর্মীরা ক বছর ধরে আওয়ামী লীগে ঘোষণা দিয়ে ঢোকালো--তার বেলা?
৬.
আমাদের বুদ্ধিজীবীরা অধিকাংশই হলো অসৎ। সরকারকে তেল মেরে জনগণের টাকা থেকে নানা পদ পদবী পুরস্কার প্লট বিদেশ ভ্রমণ বাগানো ছাড়া এনাদের আর কোনো ধান্ধা নেই। রামেন্দু মজুমদার নাসিরুদ্দিন ইউসুফ শামসুজ্জামান খান নির্মলেন্দু গুণ এন্ড ব্লা ব্লা ব্লা-- এরা সরকারের মুখোপানে চেয়ে আছেন? এদেরকে কষে কিছু অশ্লীল গালি দেওয়া দরকার।
প্রকৃত বুদ্ধিজীবী যে কোনো ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ করবেন। হায়, এই বুদ্ধিজীবী আমাদের দেশে আর নাই।
৭.
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে থামাতে হলে দানব শাজাহান খানকে অবিলম্বে বিদায় করা ছাড়া উপায় নেই। একই সঙ্গে ওবায়দুল কাদের নামের স্ট্যান্টবাজ সড়কমন্ত্রীকেও দূর করে দিতে হবে। শাজাহান খান সড়কের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী- তার চেয়ে কোনো অংশেই কম দায়ী নয় ওবায়দুল কাদের। বকবক করা ছাড়া এই লোক কোনো কাজের নয়। এই লোক অদক্ষ। অথর্ব। জনগনের পয়সায় একে পোষার দরকার নেই।
৮.
শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো মন্ত্রী মিনিস্টারদের কোনো ক্ষমতা নেই। তিনিই একমাত্র। মন্ত্রী মিনিস্টার এমপিদের কাজ হচ্ছে হাসিনার গুণগান করা। আর চুরি চোট্টামি করা।
শেখ হাসিনা কি পারবেন শাজাহান খানকে সরিয়ে দিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিগুলো সত্যি সত্যি বাস্তবায়ন করতে? যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিজের কথাই রাখেননি তিনি। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা তাকে বিশ্বাস করতে চাইছে না। বলেছে, তিনি মিথ্যেবাদী।
বঙ্গবন্ধুর কন্যার কি মিথ্যে কথা বলার দরকার ছিল? তিনি মিথ্যে কথাই বলেছেন। ক্ষমতায় থাকার জন্য তার মিথ্যে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই। ক্ষমতায় থাকার জন্য শাজাহান খানদের মতো দানবদের উপরেই ভর করতে হচ্ছে তাঁকে। তাঁর কাছে ছাত্র জনতার চেয়ে দানব শাজাহান খানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানব নয়-- দানবই আপনজন যেকোনো ক্ষমতার কাছে।
৯.
এপ্রিল মাসে দুটি বাসের পাল্লা দেওয়ার কারণে রাজীব নামে এক ছাত্রের হাত কাটা পড়েছিল | সেই হাতটি ঝুলেছিল দুটি বাসের মাঝখানে| এই ছবি দেখে সারা দেশ শিউরে উঠেছিল! প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল মানুষ।
বিদেশ থেকে ফিরে তখন সংবাদ সম্মেলন করে শেখ হাসিনা হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, সড়ক দূর্ঘটনার জন্য ড্রাইভার-মন্ত্রীদের দোষ দেওয়া যাবে না। তাহলে দোষ কার? দোষ পাবলিকের। তারা পথ চলতে জানে না।
পাবলিক ঠিকই জানে। জানে না, শেখ হাসিনার মন্ত্রী, এমপি, নেতা, আফিসার, পুলিশ। জানে না বলেই মাইনর ছাত্র ছাত্রীদের কাছে তাদের গাড়ির ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ধরা খেয়েছে। ছাত্রদেরকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদেরকে রাস্তার নিয়ম শিখতে হচ্ছে।
প্রমাণিত হয়েছে সরকারের লোকজন আসলেই ভুয়া।
১০.
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একটা বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। সেটা হলো আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে তরুণদের সমর্থন হারাচ্ছে। হারানোর দায় অন্য কারো নয়-- আওয়ামী লীগের নিজেরই।