এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • একটি পাশবিক প্রতারণা কিংবা প্রেম

    নীড় সন্ধানী
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৭৬ বার পঠিত


  • সে এক গহীন গন্ডগ্রামের দেশ। সেই দেশে একাকী এক বলদ মাঠে ঘাস খাইয়া সুখে দিনাতিপাত করিতেছিল। তাহার কোন সঙ্গীসাথী ছিল না। বিশাল প্রান্তরে একা একা চরে বেড়াত আর আর মনের আনন্দে হাম্বা হাম্বা করিত। প্রান্তরের পাশে একটা জঙ্গলে একটা হরিনী বাস করতো। হরিনীটা প্রান্তরের ওপাশের জঙ্গলের এক হরিনকে ভালোবাসতো। বহুদুর থেকে তাকিয়ে হরিনের সন্ধান করতো। কিন্তু অতদুরের পথ একা যাবার সাহস তার হয় না সহসা। প্রান্তরে ভুতের ভয় আছে। সে দুর থেকে হরিনকে ডাক দিত, হরিনও তাকে প্রত্যুত্তরে ডাক দিত। হরিনেরও সাহস হয় না বিশাল প্রান্তর পেরিয়ে হরিনীর কাছে যেতে। তবে প্রেম কি এসব মানে?

    হরিনী মরিয়া হয়ে একদিন জঙ্গলের প্রান্তে এসে গেল। দেখলো সেখানে চরছে একটা বলদ। মিস্টি সুরে ডাক দিল বলদকে। বলদ এত মিষ্টি সুরে জীবনে কখনো ডাক পায়নি। সুর শুনে গলে গিয়ে মাঠে শুয়ে পড়লো সে। কিন্তু কান খাড়া করে আবার শুনলো ডাক। এত মিষ্টি ডাক যে শুয়ে শুয়ে শুনতে ইচ্ছে হয়। চোখ বুজে হরিনীর মিষ্টি ডাক উপভোগ করতে থাকে বলদ। দিন যায়। বলদের মুগ্‌ধতা বাড়ে। একদিন হঠাৎ চোখ মেলে দেখে ফেললো বনের ধারে দাঁড়ানো হরিনীকে। দেখামাত্র হরিনীর প্রেমে পড়ে গেল সে।

    এই হরিনী মিষ্টি সুরে তাকে ডাকছে সেও নিশ্চয়ই তার প্রেমে পড়ে গেছে। আহা, কঠিন প্রেমের সুখে বুকটা ফেটে চৌচির হয় হয় বলদের। সেও মিষ্টি সুরে ডাক দিল হরিনীকে। এভাবে দুজনের মধ্যে অল্পদিনেই ভাব হয়ে গেল। বলদ নিজেকে তার সমাজ থেকে উন্নত জাতের প্রাণী ভাবতে শুরু করলো এবং তার খায়েশ হলো হরিন সমাজে অনুপ্রবেশ করবে। তবে পশুরাজের আইনে এক প্রাণী অন্য প্রাণীর সমাজে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু হরিনী তাকে ভালোবাসে, নিশ্চয়ই তার জন্য সুপারিশ করবে। সে নিশ্চয়ই তাকে বলদ সমাজ থেকে হরিন সমাজে নিয়ে যাবে। বলদ আশায় আশায় থাকে।

    একদিন হরিনী প্রস্তাব দিল চল আমরা দুজনে একসাথে গাইতে গাইতে প্রান্তরটা পাড়ি দেই। এরকম অপ্রত্যাশিত ডেটিংঅএর অফার বলদকে এমন পুলকিত করলো যে সে আকাশের মরা চাঁদের পানে চেয়ে দুলাইন কবিতাই রচনা করে ফেললো তাৎক্ষনিক। ভাবলো মাঠে চরতে চরতে তার প্রিয়তমা হরিনীকে শোনাবে কবিতাখানি।

    পরদিন দুজনে একসাথে মাঠে চরতে চরতে দুপুর নাগাদ মাঝমাঠ পেরিয়ে প্রান্তরের ওপাশে পৌঁছে যায়। প্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে বলদ আরো ডজনখানেক গান গেয়ে শোনালো হরিনীকে। হরিনীও তার হরিনের জন্য সঞ্চিত কবিতা আর গানগুলো গেয়ে শোনালো। দুজনে সুখের সাগরে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বিকেলের মধ্যে প্রান্তরের শেষ মাথায় পৌছে গেছে। হরিনী ভাবলো ঐতো দেখা যায় তার প্রিয় হরিনের বাসস্থান। অধীর আগ্রহে যেখানে অপেক্ষায় আছে হরিন। ওদিকে বলদ ভাবলো আজকে আমার স্বপ্নপুরন হলো। আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম!

    বলদ তার শেষ গানটা সূর্যাস্তের সময় শোনাবার জন্য রেখে দিয়েছে। আজ তার প্রেম পূর্ন হবে। কানায় কানায় পূর্ন হয়ে বলদ জীবন থেকে হরিন জীবনে প্রবেশ করবে। রীতিমতো রোমাঞ্চিত বলদ। ওদিকে প্রান্তরের এইদিকে আসার পর থেকে হরিনীর গান থেমে গেছে। কেমন উদাস হয়ে গেছে। বলদের কথা শুনতেই পাচ্ছে না যেন সে। বলদ ভাবছে অধিক আবেগের কারনে এমন চুপ হয়ে গেছে। বাকরূদ্ধ হওয়ার মতৈ তো প্রেম। তার চোখ দিয়েও প্রেমাশ্রু টলটল করছে। আজ তার মহামিলন। আরেকটু অপেক্ষা মাত্র।

    হরিনী প্রান্তরের শেষ প্রান্তে পৌছে বলদকে বললো, "অনেক হাঁটা হয়েছে তুমি একটু রেষ্ট নিয়ে নাও। আমি জঙ্গলের ভেতরটা দেখে আসি কোন শিয়াল টিয়াল আছে কিনা। তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না। এখুনি ফিরবো।"

    বলদ একটু অবাক হলেও বলার কিছু নাই। সে শুয়ে পড়লো ঘাসের উপর। ক্লান্তি লাগছে সারাদিনের হাঁটাহাঁটিতে, ঘুম ঘুমও। একসময় ঘুমিয়েই পড়লো সে। ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে। বলদ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজলো হরিনীকে। চিৎকার করে ডাকলো। কোন সাড়া নেই। জঙ্গলের ভেতর অন্ধকার, সে ঢুকতে ভয় পেল।

    সকালের সোনা রোদ এসে পড়লো তার গায়ে। কাছেই কোথাও একটা দোয়েল পাখি তিরিক্ষি সুরে ডেকে উঠলো। বলদের মনে হলো পাখিটা বলছে, বলদিয়া..বলদিয়া...বলদিয়া। মানে বলদ চিরকালই বলদ, বলদ কখনো হরিন হতে পারে না। তার দু'চোখ বেয়ে দরদর করে জলের ধারা নামলো। বুঝলো হরিনী তাকে ফাঁকি দিয়েছে। মহা ফাঁকি। খুব দেরীতে বুঝলো বেচারা বলদ।
    গল্পটির একটা উপসংহার আছে। পাঠক তার পছন্দনীয় উপসংহার বেছে নিতে পারে-
    ১. ঘুমিয়ে আছে বলদ গরু সব পুরুষের অন্তরে
    ২. কোথায় বলদ, কোথায় প্রান্তর কে বলে তা বহুদুর
    মানুষের মাঝেই আছে বলদ মানুষেতেই সুরাসুর।

    ছবি- শঙ্কর সরকার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন