ভারমিয়েরের ছবি নিয়ে কিছু লেখালিখি দেখছিলাম, এই গুরুচন্ডা৯-র পাতাতেই। চমৎকার কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছে সেখানে। (নামগুলো ব্লগের পাতায় যেমন পেয়েছিলাম, তেমনই রাখলাম। পুরো নাম জানার সুযোগ হয় নি।)
ভারমিয়েরের অনবদ্য সৃষ্টি, আ গার্ল অ্যাস্লিপ, ছবিটি দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষ্ণকলি বলেন,
“অনেক দিন যাবৎ এই ছবি দেখে আমি ভাবতাম যে মেয়েটি কারুর আসার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। দেখুন, দরজার পাশে ঝোলানো ভুস্কো মতন কোট, মলিন দেওয়াল, চেয়ারের পিঠে চটা উঠে যাওয়া দেখে মনে হয়না এখনও খুব ঝাঁ চকচকে বিলাসবহুল রয়েছে এই বাড়ি। কিন্তু মেয়েটির পরণের গাউনের রং,তার ফ্যাব্রিক বেশ দামী বলেই মনে হচ্ছে। আমার মনে হতো, নিশ্চয়ই কোন স্পেশ্যাল অকেশনের সাজ। স্পেশ্যাল কেউ আসবে বলে। ওর গালের লালচে আভাও তাই। স্বাভাবিকের থেকেও বেশি মনে হয়, হয়তো যত্ন করে একটু প্রসাধন করা। বিশেষ কেউ আসবে বলেই। তাই আমি কেবলই ভাবতাম,ও অপেক্ষা করছে,কোথাও যেন কিছুটা "কি জানি সে আসবে কবে" সেন্স দেখতাম।পরে এই ধারণা বদলে গেছে। কেন বদলে গেছে বলি। অন্য চেয়ারটিই মূল কারণ, ধারণা বদলানোর। চেয়ারের অবস্থানটা লক্ষ্য করুন। কারুর আসার অপেক্ষায় থাকা চেয়ার ওভাবে থাকেনা। বরং বেশ বোঝা যাচ্ছে চেয়ার থেকে কেউ উঠে গেছে। হঠাৎ। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে,যাবার কথা ছিলোনা,কিন্তু উঠে যেতে হয়েছে। হঠাৎ। একই কথা বলছে কুঁচকে থাকা টেবিল রানার। টেবিলে রাখা ফলগুলো দেখুন। সযত্নে সাজানো হয়েছিলো, তখনো খাওয়া শুরু হয়নি। কেউ এসেছিলো, সেই বিশেষ জন। এসেছিলো, বসেছিলো টেবিলে। নাড়াচাড়া করেছিলো এটা সেটা। তারপরে কোন কারণে 'আসছি' বলে উঠে গেছে। কিন্তু আসেনি আর বহুক্ষণ হলো। আপনার কল্পনাকে ভীষণ ভাবে প্রোভোক করছে না কি? ঐ খোলা থাকা দরজা, ঐ বেঁকে থাকা চেয়ার, ঐ কোঁচকানো টেবিল রানার।আপনি মনে মনে গল্পটার খানিকটা বানিয়ে ফেলেননি কি?”
অসামান্য বর্ণনা, নিঃসন্দেহে। ন্যারেটিভ-ধর্মী ছবি দেখার সাথে দর্শকের অনুভব-কল্পনা মেলানো এমন চমৎকার বিশ্লেষণ পাঠের সুযোগ, বাংলাভাষায়, কমই হয়। (ইনি যে কেন আরো বেশী লেখেন না, আমাদেরই দুর্ভাগ্য!!)
আর, আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন। বর্ণনায় ছবিটি একাধিকবার দেখার অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে। আর, বারবার দেখার ফলে, ছবিটির অর্থ, কোনো এক জায়গায়, বদলে গিয়েছে। ছবি দেখার ক্ষেত্রে, এই পৌনপুনিক দর্শনের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব প্রসঙ্গে পরে আসছি।