আমরা মানুষ। তা এই 'মানুষ' জিনিসটা কি শুনি? মানুষ হল একদম আধুনিক যুগের বেশ বুদ্ধিমান এক প্রাণী যারা কিনা দুই পায়ে হেঁটে চলে বেড়িয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আপাতত এই সমগ্র পৃথিবী। বিশ্বের এমন কোনও প্রান্ত বোধহয় নেই, যেখানে আমাদের পায়ের ছাপ এখনও পড়েনি। তবে, আমাদের গোটা এই মনুষ্যজাতির মধ্যে মিলের থেকে বেশি সর্বাগ্রে চোখে পড়ে ভিন্নতাই। আমাদের রঙ, রূপ, বর্ণ, ভাষা, ধর্ম - সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে এই বিভেদের ছাপ স্পষ্ট। তবে, একটা ব্যপারে বোধহয় একমত না হয়ে আমাদের খুব একটা উপায় নেই। তা হল, আমাদের ভোজনপ্রীতি বা রসনাবোধ। বাঁচতে হলে আমাদের প্রত্যেকের সবার আগে প্রয়োজন খাদ্য যা শুধু যে আমাদের 'পেটের খিদে'ই মেটায়, এমন কিন্তু নয়, সাহায্য করে আমাদের সার্বিক বিকাশের পথে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতেও। তার মানে এই যে প্রতিদিন খাদ্যগ্রহণ করি আমরা, তা কি শুধুই আমাদের জীবনধারণের প্রয়োজনে? এর উত্তর হ্যাঁ এবং না, দুটোই। আমরা স্বাদ, বর্ণ, ঘ্রাণ, স্পর্শ এমনকি কখনোসখনো শ্রবণশক্তিরও রসনা তৃপ্তির কথা ভেবে জম্পেশ করে মন দিয়ে থাকি তাই রন্ধনক্রিয়ায়। রান্না হয়ে ওঠে সাদামাটা খাবার ছেড়ে বেঁচে থাকার, ভালো লাগার, নিজের সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর গল্প।
আর তাই, প্রতিটি দেশের এসব রকমারি আলাদা আলাদা উপজাতির বিভিন্ন হেঁশেলের সৃষ্টি হয়ে চলা পদেরা মিলেমিশে গিয়ে এক সার্বিক জটিল কিন্তু বিশ্ববাসীর হৃদয়ের কাছাকাছি ভাষা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিনিয়ত নিজের সুবাসে সমৃদ্ধ করে আমাদের সকলকেই। খাবার টেবিলে বসে আড্ডার ছলে যে ভাব আদানপ্রদানের হুজুগে মেতেছে তাই আজ গোটা বিশ্ব, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে মাসিমা কাকিমা বা শেফেদের রোজকার কুকিং শো থেকে শুরু করে মাস্টারশেফের মতো রিয়ালিটি ইভেন্টদের বাজারও আজকের 'মাল্টি কালচারাল' সমাজে দাঁড়িয়ে হয়ে উঠেছে বলা যেতে পারে, একেবারে অপরিহার্য।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে সাম্প্রতিক কালে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এমনই এক আয়োজন, 'মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া সিজ়ন ১৩'। এর আগেও এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বহু দেশের বিভিন্ন ধরণের রন্ধনশৈলী উঠে এসেছে সকলের সামনে। চ্যানেল ১০-এ সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠান প্রাইম টাইমে প্রচারিত অস্ট্রেলিয়ার আর অন্য বাদবাকি সকল অনুষ্ঠানের থেকে আলাদা এবং স্বতন্ত্রই থেকেছে সবসময়। এত বর্ণের চরিত্রের মানুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেসে খেলে তাঁদের সৃষ্টিদের মেলে ধরে এগিয়ে গেছেন - এমন দৃশ্য সচরাচর আর কোথাও এত সহজে দেখা যায় বলে মনে হয় না। সেই হিসেবে এই শো প্রথম থেকেই যথেষ্ট ব্যতিক্রমী। এখানেই তাঁদের নিজের নিজের দেশীয় খাবারকে আন্তর্জাতিক মানে সাজিয়ে বিচারকদের সাথে সাথে বিপুলসংখ্যক সাধারণ তথাকথিত সাদা চামড়ার অস্ট্রেলিয়দের মন জিতে নিয়ে আজকে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হয়েছেন পো লিং ইয়াও (মলেশীয় বংশোদ্ভূত), শশী চেলিয়াহ্ (সিঙ্গাপুরী তামিল বংশোদ্ভূত), অ্যাডম লিয়াও (চাইনিজ় বংশোদ্ভূত) দের মতো বহু ভাষাভাষী ও বর্ণের অস্ট্রেলিয়ান। আমাদের ভারতবর্ষের মতোই এখানেও অনুষ্ঠানটির মোটামুটি ভাবে একই ফরম্যাট - শেফের ডিগ্রী বা 'স্কিল সেট' না থাকা সাধারণ ঘরোয়া রাঁধুনেরা তাঁদের রন্ধন প্রতিভা দেখাতেই মূলতঃ উপস্থিত হন এখানে। প্রায় ছয়মাস ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববরেণ্য শেফেদের কাছ থেকে এরপর নানা কসরত শিখে এবং তাঁদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের প্রতিভায় শান দিতে দিতে একসময় এঁদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন বিচারকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ হয়ে 'মাস্টারশেফ' শিরোপা ও দু লাখ পঞ্চাশ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
তবে, এ বিষয়ে আরও কিছু বলার আগে অস্ট্রেলিয়ার ডেমোগ্রাফি সম্পর্কে দু চার কথা বলে নেওয়া বোধহয় এই ক্ষেত্রে অন্তত ভীষণ জরুরি। দক্ষিণ গোলার্ধের এই মহাদেশে বিগত প্রায় দুশো আড়াইশো বছর ধরে ব্রিটেন থেকে শুরু করে ইউরোপের বাদবাকি দেশ যেমন ফ্রান্স, জার্মানি হয়ে তুরস্ক, ইরান, মিশরের মতো মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি, এমনকি রাশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, চায়না, জাপান, ভিয়েতনাম, ভারত, বাংলাদেশ এর মতো এশিয়ার প্রভৃতি জায়গা থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে তাঁদের বসতি গড়েছেন; ষাট হাজার বছর ধরে বাস করে আসা এদেশের আদি-বাসিন্দাদের পাশে রেখে, তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই। তাই বুঝতেই পারছেন, অস্ট্রেলিয়া দেশটি আপাতভাবে ইংরেজ প্রধান হলেও হাবেভাবে এতটাই মিশ্র যে তা কখনোই পুরোপুরি সাদা চামড়ার সাহেবি অন্তত নয়। অতয়েব, এখানকার আধুনিক কুইজিনও এই সকল জাতির সমষ্টিতে আজ হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে বহুমাত্রিক।
এই বিপুল সমাহারের ছাপ মাস্টারশেফের এবারের সিজ়নের প্রতিযোগীদের পটভূমিকা একটু ঘাঁটলেও খোলসা হয়ে যাবে। জাস্টিন নারায়ণ ফিজি ইন্ডিয়ান বংশতভুত, মিনোলি শ্রী লঙ্কন, দেপীন্দর পাঞ্জাবী, আমির মধ্য প্রাচ্যের, এলিস ইতালীয়, এরিক চৈনিক, লিণ্ডা লাওশিয়ান, মায়া জার্মানির, টমি ভিয়েতনামিজ, এবং যাকে নিয়ে আমাদের আজকের মূল আলোচনা, সেই কিশোয়ার চৌধুরীর আদি বাড়ি আবার বাংলাদেশে। কিশোয়ারের জন্মকর্ম অবশ্য সবই মেলবোর্নে। দুই ছেলে মেয়ে, মা বাবা, স্বামীকে নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। বাংলাদেশের সমস্ত রান্নার পদ যদিও তিনি মূলত শিখেছেন তাঁর মায়ের কাছেই। মা আবার জন্মসূত্রে এপার-বাংলার মানুষ হওয়ায় তাঁর রান্নায় কলকাতার তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন খাবারের ছোঁয়াও প্রথম থেকেই দৃষ্টি এড়ায়নি আমাদের মতো প্রবাসী সব বাঙালিদেরই। মাস্টারশেফে তাঁর প্রথম রান্নাও ছিল মনে আছে একেবারে এই খাঁটি বাঙালীয়ানায় ভরপুর - কাঁচা আমের হালকা ঝোলে দেওয়া মাছভাজা, ডাল আর ভর্তা। এছাড়াও, তাঁর উল্লেখযোগ্য রান্নাগুলির মধ্যে অবশ্যই অন্যতম চিংড়ি ভর্তা, ভেটকি মাছের টমেটো দিয়ে ঝোল, পাতুরি, ভাপা মাছ, মউরি লজেন্স ছড়ানো পান আইসক্রিম, কচিপাঁঠার ঝোল, হরিয়ালি মুর্গ, ফুচকা, চটপটি, সিঙ্গারা, টমেটোর চাটনি, খিচুড়ি, বেগুনপোড়া, কলকাতার প্যাটিস, সাবুমাখা, রসের মিষ্টি ইত্যাদি।ফাইনালেও এই একই ঘরানাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েই তাঁর তুরুপের তাস হয়ে ওঠে আমাদের বাঙালিদের একেবারে গ্রামীণ ঘরোয়া সেই চিরকালীন পদ - পান্তা ভাত, আলুর চোখা বা ভর্তা, আর ঝলসানো সার্ডিন মাছভাজা।
না, কিশোয়ার মাস্টারশেফ জেতেননি। প্রতিযোগিতা শেষে তিনি পার্থের ভারতীয় বংশতভুত ইয়ু্থ প্যাস্টর জাস্টিন এবং সিডনির ট্যাটু আর্টিস্ট পিটকে যথাক্রমে সামনে রেখে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন শেষমেশ। তাতে অবশ্য তাঁর আর্থিক সম্মাননা বাবদ টাকাপয়সা ছাড়া আর কোনোরকম বড় একটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয় না। এই প্রথম এতো বড় একটা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার ঘরের খাবারকে স্বীকৃতি দিইয়ে এপার ওপারের বিভেদ মুছে ফেলে সকল বাঙালির মনই নিঃসন্দেহে জয় করে নিয়েছেন কিশোয়ার। একজন বাঙালি হিসাবে যা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবী রাখে। সিনেমায় খরাজ মুখার্জীর গলায় একটা গান ছিল মনে পড়ল হঠাৎ যার একখানা লাইন ছিল, "চিতল মাছের মুইঠ্যা, গরম ভাতে দুইটা, ভুইলা বাঙালি খায় চিনা জাপানি লুইট্যা পুইট্যা!... হায় বাঙালি হায়, তুই আর বাঙালি নাই"... এমত যুগে দাঁড়িয়ে পান্তা ভাত তো দূরের কথা, মাছের ঝোল, পোলাও বা পরটা মাংসও তিনজন খুঁতখুঁতে ডাকসাইটে বিচারকদের খাওয়াতে সবার আগে যেটা লাগে সেটা অবশ্যই সাহস। আর এই সাহসে ভর দিয়েই আটত্রিশ বছর বয়সী কিশোয়ার তাই আজ আমাদের কাছে অন্তত বিশ্বজয় বলা যেতে পারে অবশ্যই পেরেছেন করতে।
তবে এবার আসব আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামতে, যা অবশ্যই কিশোয়ারের কৃতিত্বকে কোনো অংশে ছোট করার জন্য লেখা নয়। শুধু পান্তাভাত বানিয়ে কিশোয়ার মাস্টারশেফে তৃতীয় যেহেতু হননি, আমার বরং মনে হয়েছে তাই, তাঁর বাদবাকি লড়াইটাকেও সমানে বোধহয় এই ক্ষেত্রে আমাদের সম্মাননা জানানো উচিৎ। আর সবার আগে 'কিশোয়ার আমাদের দেশের মেয়ে' না 'ওদিককার'; এই দ্বন্দ্ব মুছে জেনে নেওয়া উচিৎ যে সবার আগে তাঁর খাতায় কলমে কিন্তু একজন অস্ট্রেলিয়ান হিসেবেই। তাঁর জন্ম, কর্ম, ভাবনা, বেড়ে ওঠা, সবকিছুই এ দেশে। কিশোয়ার অবশ্যই আমাদের অহঙ্কার, আজ আছেন, থাকবেনও আগামীর দিনগুলিতে; তবে আমাদের ঠিক এখানেই কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে কিন্তু ভেবে দেখতে হবে, তাঁকে নিয়ে শুধু মেতে থেকে আমাদের নিজেদের দেশের ঘরের খুব কাছের বাদবাকি সব রাঁধুনে বা শেফদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাটাও আমাদের নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কি? একটা কার্টুন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সবাই দেখে থাকব আমরা এ ক'দিনে, যেখানে বাড়ির সব মা, বউ, বাবুর্চি, রাঁধুনে, এমনকি খ্যাতনামা রন্ধনপটিয়সীরাও গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন কিশোয়ারের পিছনের সারিতে ঠাসাঠাসি করে। এর যেমন একটা মানে দাঁড়ায় (ধরে নিচ্ছি শিল্পীও এই অর্থকেই চেষ্টা করেছেন নিজের সৃষ্টিতে ফুটিয়ে তুলতে) যে সমস্ত বাঙালি রাঁধুনেদের সম্মান জানিয়েই কিশোয়ার আজ লাইমলাইটে, তেমনই আরেকখানা সুপ্ত মানেও কোথাও গিয়ে থেকে যায় না কি, যেখানে এতদিন ধরে যেই মানুষগুলোর ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের মন, ইন্দ্রিয় এবং সর্বোপরি পেট, সেখানে আজ হঠাৎ একজনের উপর সমস্তটা আলো ফেলে দেওয়ায় তাঁরা কিন্তু রয়ে গেলেন শেষমেশ সেই অন্ধকারেই।
দিনশেষে দাঁড়িয়ে আমরা টিভি, ওটিটি মিলিয়ে আজকাল যাই দেখি না কেন, মনে রাখাটা বোধহয় একান্ত জরুরি, 'মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া' ভারত বা বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে থাকা দক্ষিণ গোলার্ধের এক মহাদেশের রিয়ালিটি শো-ই, 'বিগ বস' বা 'সা রে গা মা পা' র মতো যেই ফ্র্যাঞ্চাইজ়িরা শুধু তাদের নিজেদের চ্যানেলের টি আর পি বাড়াতেই সবসময় থাকে ব্যস্ত। পৃথিবীর এতে এদিক ওদিক কোনও কিছু হয়না। যেই খাবার খেয়ে আজীবন বড় হয়েছি আমরা, যা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষার মতোই দামী, তাকে কোনও বিদেশী তকমা ছাড়াও কিন্তু দিব্বি ভালবাসা যায়, গ্রহণ করাও যায় বিনা চিন্তা ভাবনা করেই। একবার ভেবে দেখুন তো, আমাদের রবিঠাকুর নোবেল না পেলে কি কোনোদিন আমাদের মনের ঠাকুর হয়ে উঠতেন না কোনোভাবেই? নাকি আমরা বাঙালিরা তালকানা, অন্যের মতামত ছাড়া নিজের শিক্ষাকে তার যথাযথ মান দিতে আমাদের মন সায় কিছুতেই দেয় না!
আরেকটি কথাও বোধহয় এখানে না বললেই নয়। চব্বিশ জন প্রতিযোগী যারা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন, সবাই তাঁদের মনের কাছাকাছি যে খাবার, তাঁদের ঘরে যা রাঁধা হয়ে থাকে নিত্যদিন, তাদেরকে সম্বল করেই এসেছিলেন কিন্তু লড়তে কিশোয়ারের মতোই। বাকি যা কিছু শো চলাকালীন তাঁরা শিখেছেন তা তাঁদের সেই ঘরোয়া শিক্ষার ব্যপ্তিকেই কিন্তু প্রসারিত করেছে মাত্র, সেভাবে দেখতে গেলে তেমন আমূল পাল্টে কিন্তু দেয়নি। বিচারকেরাও তা কখনোই আশা করছিলেন বলে মনে হয় না। তাঁদের মধ্যে থাকা তিনটি মিশেলিন স্টার প্রাপ্ত শেফ জক জ়নফ্রিলো ইতালিয়ান ও স্কটিশ ব্যাকগ্রাউন্ডে বড় হওয়া অস্ট্রেলীয়। মনে আছে, 'চাষীদের খাবার পান্তাভাত' দিতে কিশোয়ার যখন সামান্য দোনামনা করছিলেন শেষটায়, এই জকই কিন্তু হেসে বলেছিলেন, "সব খাবারেরই একটা ইতিহাস থাকে। সেটাকে মান্যতা দিয়ে তাকে নিজের মতো করে সাজাতে পারাটাই আসল রাঁধুনির কাজ।"
অন্যান্য প্রতিযোগীদের মধ্যে তাই টমি ভিয়েতনামিজ, সাবিনা, স্কট ও পিট অস্ট্রেলিয়ান, দেপীন্দর ভারতীয় কারি আর এলিস ইতালিয়ান পাস্তাই বানিয়ে গেছিলেন একের পর এক, দিনের পর দিন, সবসময়। কিশোয়ার সেখানে ব্যতিক্রমী হয়ে বাংলাদেশী খাবার আমরা বাঙালি হয়েও ধরেই বা কেন নিলাম বলুন তো পাতে সাজাবে না? এতটাই কম ভরসা আমাদের নিজেদের খাদ্যাভ্যাসের উপর যে তাকে আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠানে দেখতে পাওয়া আমাদের কাছে শুধুমাত্র অলীক সুখকল্পনা?
যদি সেরকমই হয়, তাহলে বোধহয় এইসব টিভি শো ছেড়ে আগে আয়নায় নিজেদের মুখোমুখি হওয়াটা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমাদের বেশি জরুরী। পরেরবার যাতে বাংলার মাটির টানে কোনও গ্রামে ভুলবশতঃ শহুরে হাওয়া বাতাস ছেড়ে বেরিয়ে পৌঁছেও যাই, গিয়ে সেখানকার কোনও কুঁড়ে ঘরে বসে সে বাড়ির মা কাকিমাদের হাতে রাঁধা সর্ষের তেল, কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ ও নুন দিয়ে আগের দিনের জল ঢেলে রাখা পান্তা খেয়েও ফেলি দৈবক্রমে; তাকে অন্তত ভুল করে 'ছোটলোকেদের খাবার' বলে হেও করতে না পারি তার গায়ে বড় কোনও রেস্তোরাঁর বা সংস্থার ছাপ মারা নেই দেখে। জেনে রাখবেন, সব খাবার মাস্টারশেফের রান্নাঘরে সবসময় তৈরি না হলেও কিশোয়ার ও তার বাদবাকি সকল সমসাময়িক মানুষজনের রাঁধা প্রতিটা নিত্যদিনের পদের মতোই ওই খিদের মুখে দাঁড়িয়ে কিন্তু ভীষণ দামী ছিল, আছে, থাকবে বরাবরই।
বা! সুন্দর লেখা. অনেক কিছু জানলাম।