এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খ্যাঁটন  খানা জানা-অজানা  খাই দাই ঘুরি ফিরি

  • ভাতুড়ে দুপুর

    কেকে
    খ্যাঁটন | খানা জানা-অজানা | ১২ আগস্ট ২০২১ | ২১৪৯ বার পঠিত
  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’। আমি ভাবলাম, তাই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিই বা কিছু লিখে ফেলিনা কেন? যেমন ধরো ‘গলা ভাত ও পান্তভূতের গল্প’। মানে ঠিক পান্তভূতও না। পান্তাভাত। খুব মন্দ হবে?

    গলাভাত জিনিসটা শুনলেই কেমন রুগীর পথ্য মনে হয় না? অবশ্য রুগীর পথ্য হলেই খেতে বিস্বাদ হবে তা নয়! তেমন করে রাঁধতে পারলে দূর্বাঘাসই ভালো খেতে হয়, তা গলাভাত তো অনেক ওপরের জিনিস! গলাভাত নিয়ে আমার এক সময়ে বেশ আগ্রহ জেগেছিল। বাণী বসুর ‘মৈত্রেয় জাতকে’ বারবার পড়েছি ‘কাঁজি’ খাবার কথা। যদিও জিনিসটাকে খুব রোমাঞ্চকর কিছু বলে লেখা হয়নি, তবু আমার মনে টিকটিক করলো, যে ব্যাপারটা কী একবার দেখতে হবে। ইচ্ছেটা সে সময়ে নানা কারণে শিকেয় তুলে রাখতে হয়েছিল। পরে, যখন ‘ফুডি’ ও ‘শেফি’ পরিমণ্ডলে বেশ সড়গড় হয়েছি, তখন চীনে-খাবারের মধ্যেও শুনলাম ‘কনজি’। অমনি আমার তুলে রাখা শখ ডানা-ঝটপটিয়ে শিকে থেকে নেমে এল।

    -- “হ্যাঁ, কনজি”, শখ বললো – “কনজি আর ‘কাঁজি’, সব একই তো। আসলে নামটা ‘কাঞ্জি’। দাক্ষিণাত্যে কাঞ্জির রমরমা খুব। অনেক বেশি জল দিয়ে রান্না হয় বলে ভাত বেশ ঘন মণ্ড-মতো হয়। অনেকটা পরিজের মত। অবশ্য ভেজানো ভাতের ওপরের জলকেও কাঞ্জি বলে অনেক জায়গায়।“
    -- “কিন্তু আমি জানতে চাইছিলাম চৈনিক কনজির কথা। একই ভাবে রান্না হয় নাকি? স্বাদও এক?”
    -- “চৈনিক কনজির নানারকম নাম আছে। বাবা ডাকুন কনজি কুমার, খুড়ো ডাকুন ‘জুক’ বা ‘ঝাও’। রান্না মানে তো বেশি করে জল দিয়ে, একটু নুন দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট ধরে চাল ফোটানো। হ্যাঁ, জলের মধ্যে পাতলা করে কাটা আদা দিয়ে দিলে ভালো স্বাদ হয়। তো, রান্নার পদ্ধতি এমন কিছু হাতিঘোড়া ব্যাপার না। তবে ফ্লেভার-প্রোফাইলের কারসাজি আছে বৈকি। কনজি হলো সাদা পাতার মত। এর মধ্যে যেমন-ইচ্ছে স্বাদের ছবি তুমি আঁকো না। চীনে-স্বাদ তো আর ভারতীয় স্বাদের সাথে এক হবে না? ওখানে এর মধ্যে নানা রকম জিনিস মিশিয়ে খায়। ভিনিগারে ভেজানো কাঁচা সবজি দাও, লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে জারানো বাঁশের কোঁড় দাও, রোস্ট করা চীনেবাদাম দেওয়া যায়, লাল লংকার পেস্ট দেওয়া যায়। ধনেপাতার কুচি, সয় স্যস, কুড়মুড়ে করে ভাজা পেয়াঁজ, সেজুয়ান পেপারকর্ন এসবও দেয় লোকে। সকাল বেলায় কাজে যাবার আগে কনজি খেয়ে যেতে হলে অবশ্য আরেকটু প্রোটিন-টোটিন দিতে হবে। তা দিলেই হল। ডিমের ভুর্জি হোক, ডিমসেদ্ধ হোক, সেই কুখ্যাত প্রিসার্ভড এগ হোক (কালো কুচকুচে, বহুদিন ধরে রেখে দেওয়া চূড়ান্ত গন্ধঅলা ডিম), চিকেনের টুকরো, ভাজা পোর্ক, মাছের আচার সবই দেওয়া চলে। উনুন থেকে সদ্য নামানো কনজির বাটিতে একটা কাঁচা ডিম ভেঙে গুলে দিলে তারও ভারী স্বাদ হয়। জিভের ওপরে সিল্কি একটা অনুভুতি হয়। তবে সবচেয়ে শৌখীন লোকেরা কী পছন্দ করেন জান? কনজির মধ্যে মাছের চোখের মণি দিয়ে খাওয়া।”

    সাপের মাথার মণির কদরের কথা জানতাম। মাছের চোখের মণির এমন আদরের কথা আগে শুনিনি! কতকিছুই জানার আছে এই পৃথিবীতে!

    শখ আরো বলে চলল – “জাপানেও এই জিনিস আছে। ওখানে বলে ‘কায়ু’। ‘ওকায়ু’ও বলে কেউকেউ। এই ওকায়ু বানাতে গেলে কিন্তু বিশেষ একটা পাত্র লাগবে। চীনেমাটির তৈরী ঢাকা দেওয়া স্যুপ-পটের মত পাত্র। তার নাম ‘ডোনাবে’।”
    ডোনাবে। বেশ রোমান্টিক নাম না? শুনলেই কিমোনো পরা, প্যারাসোল নেওয়া জাপানী মেয়ের ছবি মনে আসে।
    “ডোনাবের মধ্যে যতখানি চাল, তার পাঁচগুণ জল দিয়ে ওকায়ু রাঁধতে হয়। জলের বদলে ফিশব্রথ দেওয়া চলে। তাকে ‘দাশি’ বলে ওখানে। নয়তো মিসো ব্রথও দিতে পারো। ‘মিসো’ জানো তো? সয়বীনের পেস্ট ফার্মেন্ট করে বানায়।”

    হ্যাঁ, মিসো জানি আমি। মিসোতে খুব ‘উমামী’ স্বাদ হয়। উমামী, পঞ্চম স্বাদ। নোন্তা, মিষ্টি, টক, তেতো এই চারজন মৌলিক স্বাদের কথাই তো আগে জানা ছিল। এ ছাড়াও আরেকজন যে আছে, তার কথা জাপানীরাই প্রথম বলেন।
    -- “এবার এই ওকায়ুর ওপরে তুমি সাদা তিল রোস্ট করে ছড়িয়ে দিতে পারো। কিংবা গ্রিন অনিয়নের কুচি। ঝিরিঝিরি করে কেটে ‘নোরি’ দেয় কেউকেউ। নোরি হলো সমুদ্রের শ্যাওলা, মাছের মত গন্ধ! নোনা মাছ দিলেও অসুবিধে নেই। কিম্বা মুলো, গাজর, স্কোয়াশ এইসব মিহি করে কেটে ভিনিগারে জারিয়ে দেওয়া চলে। এই আচারকে ওদেশে বলে ‘ৎসুকিমোনো’।”
    -- “মাছের চোখ দেয় না কেউ? এর মধ্যে?”
    -- “নাঃ, সবদেশে কি আর একই নিয়ম হবে? জাপানে সবথেকে পছন্দের টপিং হলো ‘উমেবোশী’। তার মানে প্লাম ফলের আচার। নোনতা-টক। খুব ভালো লাগে ওকায়ুর সাদামাটা স্বাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে।”

    প্লাম এমনি খেয়েছি। কিন্তু তার আচার খাইনি কখনও। আমি ভাবছিলাম চীনের মত জাপানেও এই ভাতের পরিজ ব্রেকফাস্টে খায় নাকি। তা শখ বললে – “নাঃ, চীনের মত, দক্ষিণ ভারতের মত, প্রধান পদ হিসেবে ওরা খায় না, জাপানীরা। ওখানে ওকায়ু সাইড ডিশ হিসেবে পাবে। কিংবা কারুর অসুখ-বিসুখ করলে, সর্দি হলে, পেটের গণ্ডগোল হলে পথ্য হিসেবেও খায়। অবশ্য সব ওকায়ু এক নয়। কিয়োটো আর নারা অঞ্চলে ‘চাগায়ু’ বলে এর এক রকমফের আছে। বলে নাকি জাপানী সন্ন্যাসীরা বানাতেন। নাম যেমন চাগায়ু, সত্যি সত্যি চায়ের জলে সেদ্ধ এই ভাত। সাধারণত ‘হৌজিচা’ বলে একরকম চা-পাতা দিয়েই করার কথা। তবে যেকোনও জাপানী চা হলেই হয়। এ জিনিস ওখানে পালে-পার্বণে খাওয়া হয়। কোনও উৎসব হল, কারুর বিয়ে-শাদী হল, তখ্ন। এমন বিশ্বাস আছে, যে চাগায়ু সৌভাগ্য নিয়ে আসে। কিয়োটোতে ‘নানাকুসা গায়ু’ বলে আরেকরকম কায়ু বানায়। তার মানে ‘সাতপাতার ভাতের মণ্ড’। পাতা মানে বইয়ের পৃষ্ঠা নয়। গাছের পাতা, হার্বস। ‘মিৎসুবা’ বা জাপানী পার্সলে পাতাই প্রধান। আরো নানা হার্বস মিলিয়ে ঐ সাত রকম। জাপানী নববর্ষের দিন ভালো স্বাস্থ্য আর ভাগ্য আনার জন্য খেতে হয় এই নানাকুসা-গায়ু।”
    আমি মনেমনে ভাবলাম – “গায়ু, আনে আয়ু।” বেশ মিল হচ্ছে, না?




    দেশে দেশে গলাভাতের নানান-রকম রূপ আছে। নানান-রকম নাম। ইন্দোনেশিয়াতে একে বলে ‘বুবুর আয়াম’। সেখানে এর মধ্যে চিকেন, চিংড়ি, নারকোলের দুধ, লেমন গ্রাস, লেবুপাতা, মিষ্টি সয় স্যস, এইসব দেওয়া হয়। আবার থাইল্যান্ডে গেলে পাওয়া যাবে ‘জোক’। ঐ চীনের ‘জুক’ নামের সাথেই মিল আর কী। সেখানেও নারকোলের দুধ দেয় এতে। আর শুয়োরের মাংসের কিমা। রসুন, ধনে, মিহি করে কাটা বাঁধাকপি, মুলো এসবও পাবে। ফিলিপিন্সে বলে ‘লুগাও’। লুগাওতে ওখানেও লেমনগ্রাস থাকে। চিকেন, আদা, রসুন, ফিশ স্যস থাকে। আরো একটা অদ্ভুত জিনিস থাকে। প্যান্ডান পাতা। প্যান্ডান হল অনেকটা কেয়াগাছের মত এক গাছ। কেয়াপাতার নৌকোর কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু প্যান্ডান পাতা দিয়ে কোনও রান্না আমি কখনও খাইনি!

    গলাভাতের কথা তাহলে কতক হল। এবার আমার পান্তভূত। অর্থাৎ পান্তাভাত। শুনতে সাধারণ, কিছুটা বরং আনগ্ল্যামারাসই, কিন্তু স্বীকার করতেই হয়, যে পান্তাভাত আসলে জনপ্রিয় কম নয়। আমি তো বহু মানুষকে দেখেছি পান্তাভাত শুনলেই যাঁদের জিভ জল-ভেজা হয়ে ওঠে। জনপ্রিয় না হলে কি আর সাহিত্যেও তাকে নিয়ে এত কথা হয়? পান্তাবুড়ি (চোর না পালাতেই তাঁর কত বুদ্ধি বেড়েছিল), বড়াই বুড়ি (পান্তাভাতে কাঁচা কাঁচা লংকা মাখার গপ্প), এমনকী বর্ধমানের ডাকসাইটে হৃষিকেশ রায় (কাঁচা তেঁতুলের অম্বল দিয়ে পান্তা না খেতে পেয়ে দুর্দান্ত রাগী হয়ে গেছিলেন)। কিন্তু এসব তো এর মধ্যেই অনেকবার বলা হয়ে গেছে। পান্তাভাতের অন্যরকম গল্প আজ দু’একটা শুনবে নাকি? পান্তাভাতের ভারী মিষ্টি একটি দিকও আছে তা কি তুমি জানতে? আমিও আগে জানতামনা, কিন্তু ঐ যে আমার ভাতুড়ে শখ! একবার তার মুখ খুলিয়েছ, কি সবটা তোমায় শুনতেই হবে!

    শখ বললো – “শোন তাহলে মিষ্টি পান্তাভাতের কথা। চীন দিয়ে ভাতের গল্প শুরু করেছিলাম, তা চীনের কথাই হোক। ইয়াংসি নদীর আশেপাশে যে অঞ্চল সেখানে একে বলে ‘জিউ নিয়াং’। আরও নাম আছে। কোথাও বলে ‘মি জিউ’, কোথাও ‘তিয়ান জিউ’, কোথাও ‘লাও জাও’। এক এক এলাকায় এক এক নাম। জিনিসটা হলো আসলে মিষ্টি গেঁজানো ভাত। একটু মৃদু মোদো গন্ধ থাকবে, কিন্তু খুব কড়া কিছু না। অ্যালকোহলের পরিমাণ খুবই কম থাকে, বাচ্চারাও খেতে পারে। আর খুব সহজপাচ্য।”
    কেমন করে বানায় এই জিউ নিয়াং? এর জন্য বিশেষ জিনিসপত্র লাগে নাকি?

    -- “তা লাগে। যে চাল দিয়ে তৈরী হবে তার স্টার্চ কনটেন্ট হাই হওয়া চাই। যেমন চাল দিয়ে স্টিকি রাইস তৈরী হয়। আর লাগে এক রকম ইস্ট। যেমন ইস্ট দিয়ে আমরা বাড়িতে পাউঁরুটি বানাই, পিৎজা-ডো বানাই সে নয়। এ হল চীনে মদ তৈরী করার জন্য বিশেষ রকম ডিস্টিলার্স ইস্ট। এর নাম ‘জিউ-কু’। তো, আগে ঠান্ডা জলে চাল ভিজিয়ে রাখতে হয়, সারারাত। তারপরে সেই চাল ভাপিয়ে নিতে হবে। সেদ্ধ না কিন্তু। ৪০-৪৫ মিনিট ধরে স্টিম করা। এরপরে ভাপানো চাল পুরো ঠাণ্ডা করে নেয় ওরা। এবার ঐ জিউ-কু ইস্ট জলে গুলে ভালো করে ভাতটার মধ্যে মিশিয়ে নিতে হয়। একটা বেশ চওড়া-মুখ বাটিতে এই ইস্ট মেশানো ভাত রেখে মধ্যিখানে একটা গর্ত করে দিতে হয়। তারপর আলগা করে ঢেকে দু’দিন এমনি রেখে দাও। ভাত গেঁজবে, তার স্বাদ-গন্ধ সব পাল্টে যাবে। ফার্মেন্টেশনের জন্য প্রচুর শুগার তৈরী হবে ওর মধ্যে, আর মাইল্ড অ্যালকোহল। সেটাই রাইস ওয়াইন। ঐ যে ভাতের মধ্যে গর্ত করা হল, ঐখানে জমবে এই রাইস ওয়াইন। শুগার তৈরী হয়েছে বলেই বেশ মিষ্টি হয় জিউ নিয়াং। চীনেরা মিষ্টি স্যুপের মতও খান, কিম্বা ডেজার্ট হিসেবেও খাওয়া যায়। আরও মিষ্টি চাইলে, ওপরে এক চামচ মধু দেওয়া যায়, কিংবা ‘ওসমান্থাস’ ফুলের থেকে তৈরী চিনি। ঐ দু’দিন গেঁজার পর্ব শেষ হলে অবশ্য ফ্রিজে রেখে দিতে হয়। না হলে পচাই মদের মত হয়ে যাবে।”
    এই রকমই একটা কিছু ইন্দোনেশিয়াতেও আছে শুনেছিলাম। তার নাম নাকি ‘তাপাই’?

    -- “বানান তাপাইই কিন্তু উচ্চারণ করে ‘তা-পে’।” শখ বললো – “তা-পে আরেকটু মিষ্টি হয়। এই জিউ-নিয়াং এর মত করেই বানাতে হয়। খালি যে জলে ইস্ট গুলবে তার মধ্যে চিনি মিশিয়ে দিতে হয়। এবার জারের মধ্যে এক পরত ভাত দাও, তার ওপরে কিছুটা চিনি-ইস্টের জল। আবার ভাত, আবার ঐ জল। এমনি করে সাজিয়ে তারপর ঐ দিন-দুই-তিন গেঁজানো আর কী। কলাপাতায় মোড়া, টকমিষ্টি স্বাদের, ঐ বিশেষ রকম গন্ধওলা ‘তা-পে’ খুব পছন্দের খাবার ওসব দেশে।”
    হ্যাঁ, পছন্দের বৈকি। এই পান্তাভাতের মিষ্টির কথায় মনে পড়ল, একবার কোনও ফুড-ফেয়ারে ভিয়েতনামি স্টলে কী-এক খাবার দেখেছিলাম, ঠিক যেন ভাতের রসগোল্লা!

    -- “হ্যাঁ, ওকে বলে ‘কম রুয়উ’। মেকং উপত্যকায় যাও, তো দেখবে এর কীরকম রমরমা। মে মাসের পাঁচ তারিখে একটা বিশেষ উৎসব হয় ওখানে। তাকে বলে ‘পোকা মারণ দিবস’। না, ফসলের পোকা, মাটির পোকা নয়। এ হল শরীরের ভেতরের যতসব জীবাণু-পোকামাকড়। এই ‘কম রুয়উ’-এর খাদ্যগুণে সেসব অক্কা পায়, শরীর সুস্থ হয়। এই হল বিশ্বাস।




    কী ভাবে বানায় এই শরীর-সারানি পান্তাভাত?
    -- “ঐ চাল ভিজিয়ে রাখা, ভাপিয়ে নেওয়া, এইসব পর্বগুলো একইরকম। তারপর ভাত খুব ভালো করে হাত দিয়ে চটকে নিতে হয়। এইবারে ইস্ট একেবারে মিহি করে গুঁড়ো করে ভাতের সাথে মিশিয়ে নেওয়া হবে। খেয়াল করে দেখ, গুঁড়ো-ইস্ট কিন্তু, জলে গুলতে হবে না। এরপর একটা বেতের ঝুড়িতে কলাপাতা পেতে নিলে তো? ঐ চটকানো ভাতের গোল্লা গোল্লা পাকিয়ে ঝুড়ির মধ্যে রাখো। তারপর আলগা ঢাকনা দিয়ে ঐ দু’তিনদিন রেখে ফার্মেন্ট করতে হবে। ঝুড়িটা একটা বাটির ওপরে বসিয়ে রাখতে হয়। তাহলে যে রাইস ওয়াইন তৈরী হবে তা ঐ বাটির মধ্যে গিয়ে জমা হবে। পরে, খাওয়ার সময়ে বাটির মধ্যে ভাতের গোল্লা রেখে ওর ওপরে হাতা করে ঐ রাইস ওয়াইন ঢেলে দেওয়া হবে। চিনির রসও দেয়। ভাতের রসগোল্লা বলাই যায়!”

    আমি ততক্ষণে ভাবতে লেগেছি, একে ‘ভাতুগোল্লা’ বলাটা সমীচীন হবে কি না। তো শুনি শখ বলছে – “তা অনেক রকম ভাতের গল্প তো হল, এবার কোনটা বানানো হবে তাই শুনি?”
    কিন্তু আমার মনে যে এক ভারী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাগছে, তার উত্তর না-পাওয়া অবধি অন্যকিছু করাই মুশকিল!
    প্রশ্নটা শোনার জন্য শখ খুবই উদগ্রীব। বললাম – “ব্রাউন রাইস দিয়ে যদি কনজি বানানো যায় তাকেই কি ‘কাঞ্জিলাল’ বলে?”
    এই শুনেই আমার শখ চোখ ঘুরিয়ে শাঁ-করে উড়ে চলে গেল। আমিও আর কী করব খুঁজে না পেয়ে, প্রশ্নটা ভাবতে ভাবতে ঘুমের জোগাড় করতে গেলাম।




    ** ‘ওকায়ু’র ছবি ‘জাস্ট ওয়ান কুকবুক’ ব্লগের থেকে নেওয়া। ‘কম রুয়াউ’-এর ছবি তুলেছেন Ngan Mai. ভিয়েতনামি ভাষা বাংলায় উচ্চারণ করা আমার সাধ্য নয়। তাই ইংরেজি হরফেই লিখলাম।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খ্যাঁটন | ১২ আগস্ট ২০২১ | ২১৪৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা  - S Azad
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১২ আগস্ট ২০২১ ২৩:১৫496701
  • ইশ সেই কখন রাতের খাবার খেয়েছি! এটা পড়তে পড়তে খিদে পেয়ে গেল। 


    সেদিন একজনের ট্রেকিং এর দিনপঞ্জীতে পড়লাম সকালে বেরোবার আগে সাহায্যকারী বানিয়েছে রাইস পরিজ। আসলে ফেনাভাতে বেশী করে মালহন দিয়ে বানানো। লিখেছেন আমাদের বাঙালি জিভে ব্যপারটা খুবই সুস্বাদু। 


    (যাহ আরো খিদে পেয়ে গেল) 

  • | ১২ আগস্ট ২০২১ ২৩:১৬496702
  • *মাখন দিয়ে বানানো

  • 4z | 184.145.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০২১ ০০:২৭496707
  • লাঞ্চ করে এসে আবার খিদে পেয়ে গেল। 

  • aranya | 2601:84:4600:5410:2528:65de:db45:***:*** | ১৩ আগস্ট ২০২১ ০১:৫৮496711
  • সুন্দর। ছোটবেলায় খুব প্রিয় পদ ছিল গলা ভাত (সম্ভব হলে গোবিন্দভোগ চালের ) আলুসেদ্ধ,  মাখন বা  ঘি দিয়ে মাখা 

  • Abhyu | 47.39.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০২১ ০৬:১২496714
  • Ngan বোধহয় ন্যান। আরেকটা নাম হল Nguyen - বলে নিউন।

  • kk | 68.184.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০২১ ২০:১৮496729
  • যাঁরা পড়েছেন, মতামত দিয়েছেন , সব্বাইকে ধন্যবাদ।

  • পিউ রায় | 115.187.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০২১ ২০:৪৩496732
  •  হমমম...ভাতুর আমি ভাতুর তুমি তাই দিয়ে যায় চেনা।.. আর খিদে বেজায় পাচ্ছে বটে ☺☺

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন