এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব ২০১২

  • নগরপেঁচার নকশা -- কোলকাতার বারোয়ারি ১৪১৯

    সুরজিত সেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ইস্পেশাল | উৎসব ২০১২ | ২৩ অক্টোবর ২০১২ | ৭৬৪ বার পঠিত
  • এবচর সাবোন মাসের শেষে, তেমন বিষ্টির দ্যাকা নেই,  কোলকাতা ডেঙ্গি জ্বরে কাঁপচে, রোদে চাঁদি ফাটিয়ে দিচ্চে, এমন সময় কাগজের স্টলগুলো পুজো সংখ্যার বোইতে ছেয়ে গ্যালো। বুজলুম মা আসচেন, মানে তাকে ঘেঁটি ধোরে আনার উজ্জুগ চলচে। আগে আমাদের যকোন বয়েস কম ছিলো, তকোন পিত্তিপোক্ষের তপ্পণের পর দেবীপোক্ষের শুরুতে এরা সব একে একে দেকা  দিতো, আজকাল  ভুবনবাজারের হুজুগে সবার আগে পুঁজির বাজার দখলের পুজো, এমনকি বোধয় সিদ্ধিদাতা গণেশেরও আগে। তাই পুজোসংখ্যাওলাদের একোন হোয়েচে - কী ছাপলুম, তার চেয়ে বড়ো কতা, কে কার  আগে  সেজেগুজে  গলির মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলুম কি পারলুম না। চাড্ডি খোদ্দের ধোরতে পারলে ঘরের কড়ি ঘরে ঢোকে। 

    এদিকে ভাদ্দোর মাসে কদিন ধুম বিষ্টি হল। শহরে কোতাও হাঁটু জল, কোতাও বুক জল কোতাও বা মাতা ছাড়িয়ে গ্যাচে। হাওয়া আপিস  বলচে, এবচর  থেকে বর্ষা মাস পাল্টে ফেলেচে, এই ভিজে ভাদ্দোরে পথের কুকুরগুলো পোজ্জ্যন্ত  তাল বেভ্ভুল হয়ে প্রোকিতির ডাকে সাড়া দেবে কি দেবে না তা  ঠিক কোরতে না পেরে একে অপরের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আচে। ওদিকে বারোইয়ারি দুগ্গাপুজোর কত্তারা বসে নেই। তারা তাদের ফুত্তির পয়সা ওড়ানোর জন্য বাবু(স্পনসর) ধরতে দিগবিদিগে বেরিয়ে পড়েছে। বাবুরাও সেজে বসে আচে, তেমন গতরবাহারি বারোয়ারি দেকলে  টাকার ফোয়ারা ছুটিয়ে দেবে। কতরকমের বাবু তার কোনও ইয়ত্তা নেই, রং কোম্পানি, ঢং (ফ্যাশন –কাপড়) কোম্পানি, সোডার ছুতোয় মদ কোম্পানি, মাজন কোম্পানি, সাবান কোম্পানি, পানীয় (ঠান্ডা) কোম্পানি  - সব বোলতে গেলে মুকে ফেনা উটে যাবে তবু নাম শেষ হবে না।                    

    আগে মা আসতেন, ৫ দিনের জায়গায় ১০ দিন থেকে একেবারে লক্কির পুজো সেরে ছেলেমেয়ে নিয়ে  বাড়ি যেতেন। মানে বারোইয়ারির কত্তারা  ৫ দিনের বদলে ১০ দিন ফুত্তি কোরতেন। এখন গরমেণ্ট মায়ের যাবার দিন বেঁদে দিয়েছে, দিলে কী হবে, সেয়ানা পুজোকত্তারা গরমেণ্টের আইনের মুকে নুড়ো জ্বেলে, মায়ের আসার দিনটি আগিয়ে এনেচে, আমোদ সেই ১০ দিনেরই। তারই বায়না এই থিম। সে’রম পুজো হলে খরচা কোটি টাকা নয়তো খরচা  ৩০ থেকে ৫০ লাকের মদ্যে উটচে – নাবচে। এর নীচেও আচে অনেকে।       

    সারা শহরের রাস্তা বারোইয়ারি পুজোর থিম নিয়ে ছড়া লেকা চাঁদোয়ায় ছেয়ে গ্যাচে। গত ১০ / ১২ বচর ধরে এই থিমের ছেরাদ্দ  চোলচে। সে বাইলেনের পুজো থেকে বাইপাসের পুজো সবেতেই  থিমের কেত্তন। থিমেরও 

    কোনো মা –বাপ নেই। কেউ সারা দেশ খামচে তুলে আনচে  মরুভূমি কি পাহাড়, কেউ কাঁদচে  গাচ বাঁচাও - নদী বাঁচাও, কেউ পৌরাণিক প্যাঁয়তারা কসচে আর কেউ লোকজীবনের লপচপানি দেখাচ্ছে, মানে গাঁ উজোড় করে ধোবা, নাপিত, জেলে, চাষা, কুমোর, কামার এনে বারোয়ারিতে বোসিয়ে দিচ্চে। যারা এতোটা পেরে 

    উটচে  না তারা বোতোল, জামার বোদাম,কাট, কাঁচ, হেনতেন আরও উনপঞ্চাশ জিনিসের ঠাকুর কোরে তাক লাগিয়ে দেবার ফিকিরে আচে। 

    আর ষষ্টি থেকে থিমের পুজো দেকার জন্য পঙ্গপালের মতো পিলপিল করে লোক হামলে পড়বে, তাই একটু ফাঁকায় দেকাবে বলে বারোয়ারিগুলো তৃতীয়ে কি চতুথ্থির দিন থেকে লোক ডাকচে – ফলে সেদিন থেকেই পঙ্গপালের ভিড়। এর মদ্যেএক আমোদ গেঁড়ে বাংলা ডেলি নিউজ আবার পুজোর ক’রাত ভিড়ের মাতা গুণে রোজ ছাপিয়ে দেয়। কী করে গোণে কে জানে, তাতেই তাদের আমোদ, আর এ এমন আহম্মুকির আমোদ যে বাকি কাগজওলারা বুক ঠুকে করতে পারে না। যেমন, সোপ্তুমীতে রাত ১২টায় বাগবাজারে  ২ লাক লোক আর বালিগঞ্জে ৩ লাক লোক। এইভাবে রাত তিনটে অব্দি শহরের ৪/৫ টা পাড়ার পুজোর ভিড়ের গোণা গাঁতার হিসেব ওস্টুমীর দিন সকালে ছাপিয়ে তারা খুব আমুদে হাসি হাসে। দশমীর সকাল পোজ্জ্যন্ত এই আদেকলেপনা চলে। 

    আর বাংলা টিবি চ্যানেলগুলোতো সেই কবে থেকে পর্দার কোণে মায়ের মুকের ছবি লাগিয়েচে আর তলায় লেকা আর ৬০ দিন বাকি, আর ৫৫ দিন বাকি - এই করে যাচ্চে। দেকাচ্চে হয়তো কোন বাড়ি দাউ দাউ আগুনে পুড়চে আর পর্দার কোণে হাসি মুকে মায়ের ছবি, তার তলায় লেকা আর ৪০ দিন বাকি। এর সঙ্গে চলচে বারোয়ারিতে ঘুরে ঘুরে কার জল কদ্দুর গড়ালো তার হিসেব দেওয়া। সেকানে পুজোকত্তারা কেউ হাসি মুকে, কেউ গোমড়া মুকে (ক্যানোনা নইলে লোকে থিমের মাহাত্ম্য  বুজবে না), কেউ বা সবজান্তা  মুক করে থিমের গপ্পো শোনাচ্চে আর তার সঙ্গে মাইক হাতে চ্যানেলছোঁড়া খিল্লি  কাটচে।  যে বারোয়ারিতে টিবি চ্যানেল আসে না, সে অনামুকোদের যে কী হাল হয় ভগবান জানে।  

    এছাড়াও আচে সমাজ শিরোমণিদের (নেতা, মন্ত্রী) বারোয়ারি। পুলিশের কাচে সেগুলোর আবার আদর বেশি। আচে আবাসন বারোয়ারি। আর সের’ম পাল্লা দিয়ে পুরস্কারের ছড়াছড়ি। খবরের কাগজ থেকে শুরু করে চ্যানেল আর হরেক কিসিমের কোম্পানি – সবাই কিচু না কিচু  দিচ্চে। দিলে নেবে নাই বা ক্যানো?  দেকা গ্যালো ৩০০ বারোয়ারির মধ্যে ২৫০ টা প্রাইজ মেরে দিয়েচে। যারা পেলে না, পাড়ার লোক পুজোর পরে মিটিঙ ডেকে  সেসব পুজোকত্তাদের গুষ্টির তুষ্টি করে দিলে। তাদের আর পাড়ায় মুক দেকানোর জো রইলো না। ওই মিটিঙেই যারা সামনের বচরের কত্তা হল তারা পুরোনোদের দিকে যেভাবে তাকাতে লাগলো তার মানে হল :  

    আমরা তোদের ঘাড়ে হাগি। দেকবি পুজো কাকে বলে। কিন্তু  গজমুক্ক্যুরা এটা ভাবলে না যে আগের বচরের কত্তারাও তাই ভেবেচিল ।

     ছবিঃ সম্বরণ।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ২৩ অক্টোবর ২০১২ | ৭৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিদ্ধার্থ | ***:*** | ২৩ অক্টোবর ২০১২ ০৫:২০90598
  • টু-উ গুড
  • শ্রী সদা | ***:*** | ২৩ অক্টোবর ২০১২ ০৫:৪৩90597
  • অসাম শালা।
  • শঙ্খ | ***:*** | ২৩ অক্টোবর ২০১২ ০৮:৩৮90599
  • ফাটাফাটি!!
  • ranjan roy | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১২ ০৭:৩৫90600
  • কালীপোসন্ন সিঙ্গি মশায় মিটমিটিয়ে হাসচেন,-- এ ছোঁড়া কোরে খাবেঃ))))
  • de | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১২ ১১:৩৩90601
  • দারুণ!!
  • গান্ধী | ***:*** | ২৮ অক্টোবর ২০১২ ০৫:১৪90602
  • যা-তা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন