এবচর সাবোন মাসের শেষে, তেমন বিষ্টির দ্যাকা নেই, কোলকাতা ডেঙ্গি জ্বরে কাঁপচে, রোদে চাঁদি ফাটিয়ে দিচ্চে, এমন সময় কাগজের স্টলগুলো পুজো সংখ্যার বোইতে ছেয়ে গ্যালো। বুজলুম মা আসচেন, মানে তাকে ঘেঁটি ধোরে আনার উজ্জুগ চলচে। আগে আমাদের যকোন বয়েস কম ছিলো, তকোন পিত্তিপোক্ষের তপ্পণের পর দেবীপোক্ষের শুরুতে এরা সব একে একে দেকা দিতো, আজকাল ভুবনবাজারের হুজুগে সবার আগে পুঁজির বাজার দখলের পুজো, এমনকি বোধয় সিদ্ধিদাতা গণেশেরও আগে। তাই পুজোসংখ্যাওলাদের একোন হোয়েচে - কী ছাপলুম, তার চেয়ে বড়ো কতা, কে কার আগে সেজেগুজে গলির মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলুম কি পারলুম না। চাড্ডি খোদ্দের ধোরতে পারলে ঘরের কড়ি ঘরে ঢোকে।
এদিকে ভাদ্দোর মাসে কদিন ধুম বিষ্টি হল। শহরে কোতাও হাঁটু জল, কোতাও বুক জল কোতাও বা মাতা ছাড়িয়ে গ্যাচে। হাওয়া আপিস বলচে, এবচর থেকে বর্ষা মাস পাল্টে ফেলেচে, এই ভিজে ভাদ্দোরে পথের কুকুরগুলো পোজ্জ্যন্ত তাল বেভ্ভুল হয়ে প্রোকিতির ডাকে সাড়া দেবে কি দেবে না তা ঠিক কোরতে না পেরে একে অপরের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আচে। ওদিকে বারোইয়ারি দুগ্গাপুজোর কত্তারা বসে নেই। তারা তাদের ফুত্তির পয়সা ওড়ানোর জন্য বাবু(স্পনসর) ধরতে দিগবিদিগে বেরিয়ে পড়েছে। বাবুরাও সেজে বসে আচে, তেমন গতরবাহারি বারোয়ারি দেকলে টাকার ফোয়ারা ছুটিয়ে দেবে। কতরকমের বাবু তার কোনও ইয়ত্তা নেই, রং কোম্পানি, ঢং (ফ্যাশন –কাপড়) কোম্পানি, সোডার ছুতোয় মদ কোম্পানি, মাজন কোম্পানি, সাবান কোম্পানি, পানীয় (ঠান্ডা) কোম্পানি - সব বোলতে গেলে মুকে ফেনা উটে যাবে তবু নাম শেষ হবে না।
আগে মা আসতেন, ৫ দিনের জায়গায় ১০ দিন থেকে একেবারে লক্কির পুজো সেরে ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ি যেতেন। মানে বারোইয়ারির কত্তারা ৫ দিনের বদলে ১০ দিন ফুত্তি কোরতেন। এখন গরমেণ্ট মায়ের যাবার দিন বেঁদে দিয়েছে, দিলে কী হবে, সেয়ানা পুজোকত্তারা গরমেণ্টের আইনের মুকে নুড়ো জ্বেলে, মায়ের আসার দিনটি আগিয়ে এনেচে, আমোদ সেই ১০ দিনেরই। তারই বায়না এই থিম। সে’রম পুজো হলে খরচা কোটি টাকা নয়তো খরচা ৩০ থেকে ৫০ লাকের মদ্যে উটচে – নাবচে। এর নীচেও আচে অনেকে।
সারা শহরের রাস্তা বারোইয়ারি পুজোর থিম নিয়ে ছড়া লেকা চাঁদোয়ায় ছেয়ে গ্যাচে। গত ১০ / ১২ বচর ধরে এই থিমের ছেরাদ্দ চোলচে। সে বাইলেনের পুজো থেকে বাইপাসের পুজো সবেতেই থিমের কেত্তন। থিমেরও
কোনো মা –বাপ নেই। কেউ সারা দেশ খামচে তুলে আনচে মরুভূমি কি পাহাড়, কেউ কাঁদচে গাচ বাঁচাও - নদী বাঁচাও, কেউ পৌরাণিক প্যাঁয়তারা কসচে আর কেউ লোকজীবনের লপচপানি দেখাচ্ছে, মানে গাঁ উজোড় করে ধোবা, নাপিত, জেলে, চাষা, কুমোর, কামার এনে বারোয়ারিতে বোসিয়ে দিচ্চে। যারা এতোটা পেরে
উটচে না তারা বোতোল, জামার বোদাম,কাট, কাঁচ, হেনতেন আরও উনপঞ্চাশ জিনিসের ঠাকুর কোরে তাক লাগিয়ে দেবার ফিকিরে আচে।
আর ষষ্টি থেকে থিমের পুজো দেকার জন্য পঙ্গপালের মতো পিলপিল করে লোক হামলে পড়বে, তাই একটু ফাঁকায় দেকাবে বলে বারোয়ারিগুলো তৃতীয়ে কি চতুথ্থির দিন থেকে লোক ডাকচে – ফলে সেদিন থেকেই পঙ্গপালের ভিড়। এর মদ্যেএক আমোদ গেঁড়ে বাংলা ডেলি নিউজ আবার পুজোর ক’রাত ভিড়ের মাতা গুণে রোজ ছাপিয়ে দেয়। কী করে গোণে কে জানে, তাতেই তাদের আমোদ, আর এ এমন আহম্মুকির আমোদ যে বাকি কাগজওলারা বুক ঠুকে করতে পারে না। যেমন, সোপ্তুমীতে রাত ১২টায় বাগবাজারে ২ লাক লোক আর বালিগঞ্জে ৩ লাক লোক। এইভাবে রাত তিনটে অব্দি শহরের ৪/৫ টা পাড়ার পুজোর ভিড়ের গোণা গাঁতার হিসেব ওস্টুমীর দিন সকালে ছাপিয়ে তারা খুব আমুদে হাসি হাসে। দশমীর সকাল পোজ্জ্যন্ত এই আদেকলেপনা চলে।
আর বাংলা টিবি চ্যানেলগুলোতো সেই কবে থেকে পর্দার কোণে মায়ের মুকের ছবি লাগিয়েচে আর তলায় লেকা আর ৬০ দিন বাকি, আর ৫৫ দিন বাকি - এই করে যাচ্চে। দেকাচ্চে হয়তো কোন বাড়ি দাউ দাউ আগুনে পুড়চে আর পর্দার কোণে হাসি মুকে মায়ের ছবি, তার তলায় লেকা আর ৪০ দিন বাকি। এর সঙ্গে চলচে বারোয়ারিতে ঘুরে ঘুরে কার জল কদ্দুর গড়ালো তার হিসেব দেওয়া। সেকানে পুজোকত্তারা কেউ হাসি মুকে, কেউ গোমড়া মুকে (ক্যানোনা নইলে লোকে থিমের মাহাত্ম্য বুজবে না), কেউ বা সবজান্তা মুক করে থিমের গপ্পো শোনাচ্চে আর তার সঙ্গে মাইক হাতে চ্যানেলছোঁড়া খিল্লি কাটচে। যে বারোয়ারিতে টিবি চ্যানেল আসে না, সে অনামুকোদের যে কী হাল হয় ভগবান জানে।
এছাড়াও আচে সমাজ শিরোমণিদের (নেতা, মন্ত্রী) বারোয়ারি। পুলিশের কাচে সেগুলোর আবার আদর বেশি। আচে আবাসন বারোয়ারি। আর সের’ম পাল্লা দিয়ে পুরস্কারের ছড়াছড়ি। খবরের কাগজ থেকে শুরু করে চ্যানেল আর হরেক কিসিমের কোম্পানি – সবাই কিচু না কিচু দিচ্চে। দিলে নেবে নাই বা ক্যানো? দেকা গ্যালো ৩০০ বারোয়ারির মধ্যে ২৫০ টা প্রাইজ মেরে দিয়েচে। যারা পেলে না, পাড়ার লোক পুজোর পরে মিটিঙ ডেকে সেসব পুজোকত্তাদের গুষ্টির তুষ্টি করে দিলে। তাদের আর পাড়ায় মুক দেকানোর জো রইলো না। ওই মিটিঙেই যারা সামনের বচরের কত্তা হল তারা পুরোনোদের দিকে যেভাবে তাকাতে লাগলো তার মানে হল :
আমরা তোদের ঘাড়ে হাগি। দেকবি পুজো কাকে বলে। কিন্তু গজমুক্ক্যুরা এটা ভাবলে না যে আগের বচরের কত্তারাও তাই ভেবেচিল ।