খুব হিসেব কষে, ছক কেটে ছড়ানো হচ্ছে গুজবটা। মান্দাসৌরের অত্যাচারিতা মেয়েটি নাকি মারা গেছে।
এই মিথ্যের পরিবেশনাও খুব নিখুঁত। মেয়েটির মৃত্যুকালীন কাতরোক্তি দিয়ে শুরু করে শেষ হচ্ছে মোমবাতি জ্বললো না কেন এই হাহাকারে।তারপরই তীব্র বর্শামুখ বাম এবং প্রগতিবাদীদের প্রতি। এই শালারাই সব নষ্টের গোড়া। অমুকের বেলায় প্রতিবাদ, এব্বেলা চুউউপ। এদের মুখোশ টেনে খুলে ফেলা হোক।
এই করতে গিয়ে স্বঘোষিত নিরপেক্ষদের খেয়াল থাকছে না যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অত্যাচারিতাদের নাম নেওয়া বারণ। দিব্যি কাঠুয়ার শিশু আর মান্দাসোরের শিশুকে নাম ধরে ধরে ডাকছেন তারা। তাদের আরো খেয়াল থাকছে না যে সহমর্মিতার ছলে তারা আগুন জ্বালাবার ব্যবস্থা করছেন। এমনিতেই দেশটা বসে রয়েছে বারুদের স্তূপের ওপর। একটা দেশলাই কাঠি ছোঁয়াবার অপেক্ষা শুধু। তারপর যে মৃতপ্রায় মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে বলে রোজ হাসপাতালের বুলেটিনে লেখা হচ্ছে, সব আশায় ছাই ঢেলে যদি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে তার কষ্টকর মৃত্যুর কাল্পনিক ধারাবিবরণী, তাহলে আশাভঙ্গজনিত রাগ, দুঃখ বিস্ফোরিত হবে না? সেই থেকে দাঙ্গা বেঁধে যাওয়াও কি খুব কষ্টকল্পনা?
এই ধর্ষণগুলো সত্যি আর নিতে পারছি না। মোমের শরীরগুলো গলে পুড়ে যাচ্ছে বদমাইশির আগুনে এ দেখা বড় মর্মান্তিক। এ নিয়ে কোন তর্কবিতর্ক করতে ঘৃণা হয়। তবু সত্যের খাতিরে বলি এই দেশের সংখ্যালঘুরা বড় রেজিলিয়েন্ট,বড় ঘাতসহ। নাহলে দাঙ্গার বিষ এতোদিন খেয়ে নিতো আমাদের। গোরক্ষার নামে লিঞ্চিং, লাভ জিহাদের ধুয়ো তুলে খুন, নমাজ পড়তে দেব না বলে নানা গা জোয়ারি -এতোসব সহ্য করেও যে তারা সমষ্টিগত ভাবে ধৈর্য রেখেছেন, প্ররোচনায় পা দিচ্ছেন না মোটেই, এইটা আমাকে বিস্মিত করে, শ্রদ্ধা জাগায়। যে জানোয়ারটি টুইট করেছে যে মান্দাসোর হল কাঠুয়ার জবাব, তার পাশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে একজনও দাঁড়ায়নি। সম্প্রদায় নির্বিশেষে পুরুষ মহিলারা রাস্তায় নেমেছেন শিশুকামের কঠিন শাস্তি চেয়ে। কোন আইনজীবী পায়নি ধর্ষক। বরং তার কবরের জমি দিতে অস্বীকৃত হয়েছেন স্বসম্প্রদায়ের লোকেরাই। পরে অবশ্য জানা গেছে টুইটারের ওই প্রোফাইলটি আপাদমস্তক ভুয়ো প্রোফাইল। হতেও পারে কোন হিন্দুত্ববাদী রাজিয়া বানো নামে ওই প্রোফাইলের আড়াল থেকে চূড়ান্ত উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে চলেছে।
এর পাশে মনে পড়ে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল? মনে পড়ে মহিলা আইনজীবীকে শাসানি ও ধর্ষণের হুমকি? মনে পড়ে ভিন্ন গ্রামে ধর্ষিতা শিশুকে কবর দেবার অসহায়তা?
কোন তুলনায় যাব না, তাই এইটুকু। নাহলে এদেশের সংখ্যালঘুর ঘাতসহতা নিয়ে অনেক বলা যায়।
শেষে বিস্ময়াতুর একটি প্রশ্ন না রেখে পারলাম না। প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল ধর্মান্ধ শাসকের বিরুদ্ধে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে। বিকৃত মানসিকতা, শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক দুর্দশা, এমন অনেক কিছুর বিরুদ্ধে। পর্ণ দেখা, মদ খাওয়ার বিরুদ্ধে বললেও কিছু যুক্তির দেখা পাওয়া যায়।
কিন্তু সব ব্যাটাকে ছেড়ে বেঁড়ে ব্যাটা ঐ বামেদের কথাই মনে পড়ে কেন আঁতেলেকচুয়ালদের সবার আগে? তাও কিনা যখন রাজ্য এবং কেন্দ্রে তারা সম্পূর্ণ 'অপ্রাসঙ্গিক'?
এরা কি কেবল হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে?