এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • গো গোয়া

    প্রগতি চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জুন ২০১১ | ১২২৩ বার পঠিত
  • গোয়া জানেন আপনি।

    গেছেন সপরিবারে সমুদ্রতীরের পর্যটনে,পুজোর অবকাশে, গ্রীষ্মের ইস্কুলবিহীন বাচ্চাদের নিয়ে। অনেকসময় নবদম্পতি হিসেবেও গোয়া যাওয়া "টু ডু' ম্যানুয়ালের মধ্যে পড়ে যায়। কালাঙ্গুটের বিচ চেনা হয়ে যায়,"সুজা লোবো' রেস্তোরাঁর বারান্দায় নোনতা হাওয়ায় বসে "রেশাদ' মশলায় জারানো পমফ্রেট "ফেনি' দিয়ে খাওয়া যায়। আপনার বালিকা কন্যাটি ছুটে যায় দূরে,চুপচাপ ঢেউ স্পর্শ করা রঙীন প্যারাশুট দেখতে। কিনতে পারেন বানজারা ঘাঘরা, অনজুনা ফ্লি মার্কেট থেকে ছুটকো-ছাটকা রুপোর গয়না।

    একদিন ঘুরে এসেছেন পুরোনো গোয়ার বম জিসাস ব্যাসিলিকা, "সে' ক্যাথেড্রাল, ক্রিশ্চান আর্ট মিউজিয়ম, ফোর্ট আগুয়াডা। গোয়ার হেরিটেজ ট্রেল। অনজুনা,...বাগা... কালঙ্গুটে...ভাগাটর... এই নামগুলি পৃথিবী সুদ্ধু সবাই জানে। ভিড়ে ভিড়াক্কার চারাদিক। কোনো ম্যাজিক নেই। দোকানে দোকানে রঙীন সারং ঝোলে, অনেক সাদা মানুষ... সারা পৃথিবীর স্নানার্থী, মে মাসের ভারতীয় রোদ্দুরে পিঁপড়ের মতন ঘুরে বেড়ায়,...

    পড়ুয়া পাঠক আপনি। "গোয়া পর্তুগিজা' জানেন, জানেন গোয়ার হিপি-সংস্কৃতি,মাফিয়া চক্র, ক্রাইম...

    গোয়া মানেই সান "এন স্যান্ড, এই ক্লিশে নিয়ে আপনার-ও একটা দ্বন্দ্ব আছে... "পরিচয়' হয়ে যাওয়া গোয়ার সঙ্গে একটু ভিন্ন পরিচয় হলে কেমন হয়?

    প্রশ্নটা আমার-ও ছিলো।

    এবং এজন্য একটু সমুদ্র-বিমুখিনতার দিকে ফিরতে হবে। একবারে হয়তো নয়, গোয়ায় সমুদ্র উঁকি মারে কারণে-অকারণে। তবু বলবো,আপনার মনের মধ্যে ঐ একটেরে যে স্বপ্ন-দেখার স্ট্রীকটি আছে,তাকে একটু তোয়াজ করুন, অন্য রকম গোয়ার কথা ভাবুন।

    "সুসেগাদ'।

    এই পর্তুগিজ শব্দটি গোয়া-সংক্রান্ত লেখায় ফিরে ফিরে আসে। ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে এইরকম : এক ধরনের "লেড-ব্যাক/ জাস্ট চিল' এর মাঝামাঝি জীবনশৈলী। এই আকর্ষক গোয়ান মানসিকতাই কি দায়ী, গোয়া ১৯৬১ এ পর্তুগিজ শাসন মুক্ত হবার পর হিপি-ট্যুরিসম এর রাজধানী হয়ে ওঠার জন্য? বা এখনকার উচ্চকোটির তরুণসমাজের বছর-শেষের "রেভ-পার্টির' এক নম্বর উৎসবস্থল হয়ে উঠতে?

    "সুসেগাদ'-এর মানে এই ক্লিশেগুলির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই পর্তুগিজ শব্দটির সঙ্গে মিশে আছে ৪৫০ বছরের কলোনিয়াল নিসিক্তকরণ--- ভাষায়, খাদ্যে, পোশাকে,সঙ্গীতে... যা ফোঁটা ফোঁটা ভাবে কাজে লেগেছে কুম্ভভরণের প্রক্রিয়ায়। কুম্ভটি ছিলো অবশ্য বেশ ভর-ভরন্ত, পূর্ব-পর্তুগিজ কাল থেকেই--- নিজের মণিরতনে। হিন্দু-কোঙ্কনি গোয়ার সঙ্গে ক্যাথলিক-পর্তুগিজ গোয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে যে দ্বন্দ্বগুলি ৪৫০ বছরের মধ্যে উঠে এসেছে, যাদের সমাধান কখনও হয়েছে বা কখনও হয়নি,তার মধ্যে হয়তো থেকে গেছে "সুসেগাদ'।

    "সুসেগাদ' সম্পূর্ণভাবেই গোয়ান। নিজের একটি বাড়ি,তার সঙ্গে ফলের গাছ, সবজি-বাগান, নিজের ভাষা কোঙ্কনিতে দু'একটি গানের কলি, নিজের মাছ ধরার সাদা নৌকা,পাড়ার চার্চে রবিবারের "মাস',গণেশ-চতুর্থীর দিনের পারিবারিক উৎসব...."সুসেগাদ'। ঐতিহাসিক ভাবে গোয়াবাসী নিজের একটা ছোট্টো পৃথিবীর দিনান্তরের নিশ্চিত স্বস্তিতে বিশ্বাস করে। নিজের গ্রামের ঠিকানা গোয়াবাসীর কাছে সিন্দুকে রাখা প্রার্থিত ধন। নিজের বাড়ীতে, নিজের পরিজনের মধ্যে নির্বিরোধ একটি জীবন... গানে, গল্পে,পরম্পরায়... তার মধ্যেই থাকে "সুসেগাদ'। এমন "সুসেগাদ' কি আমরা সকলেই খুঁজে বেড়াই না? এবং তা মোটেই সান এন স্যন্ড এর বিজ্ঞাপিত গোয়ার মধ্যে নেই। গোয়ার আসল ছবির মধ্যে ঢুকলে হয়তো দেখা যাবে সেখানে "জাস্ট চিলে'র বেখাপ্পা পাখনা-আঁটা মানুষেরা নেই। হয়তো সেখানে থাকে বিচ থেকে দূরে নারকেল -বাগানের অদ্ভুত ছায়ার মধ্যে আশ্চর্য সুন্দর ইন্দো- পর্তুগিজ রীতিতে বানানো বাড়িতে থাকে কেউ-কেউ... যাদের নামের মধ্যে রয়েছে মিরান্দা, পিন্টো, রডরিগেস,নায়েক,সরদেশাই,কেলেকার, কামাত,শেনয়... কেউ কেউ পাঞ্জিম-এর ল্যাটিন কোয়াটার্স-এর "রুয়া থার্টি ফার্স্ট জানেইরো'র হেরিটেজ বাড়ীর বাসিন্দা, এঁরা কেউ বলিউডের স্টিরিও টাইপ গোয়ান নন। এদের কেউ কেউ অ্যান্টনি গঞ্জালভেস, কেউ নন। কেউ কেউ অ্যালবার্ট পিন্টো, কেউ নন। অ্যালবার্ট পিন্টো হলেও খেদ নেই হয়তো তাঁর মনের মধ্যে, ২০১১ এ দাঁড়িয়ে ২০১১-র শর্তেই হয়তো এই গোয়াবাসীরা বাঁচতে চাইছেন।

    বইটি, গোয়া: এ ডটার্স স্টোরি।

    লেখক, মারিয়া অরোরা কুতো।

    বইটি আমি গোয়া যাবার আগে ও পরে দু'বার পড়লাম। যে গোয়াকে খুঁজছিলাম, তার দিকে টেনে নিয়ে গেছে আমাকে এই বইটি। যে কোনো সংস্কৃতির , জনসমষ্টির ইতিহাস পড়তে যেমন ভালো লাগে, এই বইটি সেটুকু পুরিয়ে আমাকে একটা অন্য আস্বাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। মারিয়া অরোরা নিজের "গোয়া'র সঙ্গে পরিছেদ থেকে পরিছেদান্তরে রেখেছেন বিপুল তথ্যে, নানা স্তরের গোয়া : পূর্ব-কলোনিয়াল কাল থেকে শুরু করে ১৯৬১'র লিবারেশন পর্যন্ত মোটামুটি পাঁচশ বছরের একটি প্রামাণিক ইতিহাস, যেখানে নিজের পরিবারের কথা বৃহৎ ম্যুরালটি সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে, রেখে রেখে, তৈরি করেছেন লেখাটি। এই নিজস্ব, আন্তরিক পারিবারিক সংলাপ বইটিকে নি:সন্দেহে পাঠকের কাছাকাছি এনেছে।

    "বিবিন্‌কা' এক প্রসিদ্ধ গোয়ান মিষ্টি। ঠিক কেক নয়, ডিম- ময়দা থাকলেও বিবিন্‌কায় দেওয়া হয় নারকেল দুধ। পরতের পর পরত জুড়ে তৈরি এই খাবারের রঙ ঘন বাদামী। আমার মনে হয়, গোয়া কে যদি এই মিষ্টির রূপকল্পে বর্ণনা করা হয়, হয়তো ভুল হবেনা। প্রথমত:, গোয়ার নিজস্ব দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশেছে ১৫১০ থেকে বাহিত কলোনিয়াল ধর্ম-রাজনীতি-ভাষা-আচার। নারকেল দুধের সঙ্গে ডিম-ময়দা। এবং গোয়ার যে নিজস্ব দেশিয়তা রয়েছে তার রঙ -- ঘন বাদামী। একটি ভারতীয় রঙ।

    "চিকো'র কথা বারবার এসেছে একটি পাতা থেকে আরেকটি পাতায়। লেখকের বাবা। ড: ফ্রান্সেস্কো দ্য ফিগুইরেদো। সকলের কাছে পরিচিত নাম, "চিকো'। চিকো কে লেখক দেখিয়েছেন তিরিশ-চল্লিশের দশকের অফুরন্ত প্রাণময় এক যুবক হিসেবে। মাড়গাঁও- এর এলিট পরিবারের সন্তানটি এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিকেল কলেজ, ১৮৪২এ প্রতিষ্ঠিত এস্কোলা মেদিকা থেকে ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে সাতটি সন্তান, স্ত্রী ফিলোমেনার সঙ্গে চুয়ান্ন বছরের যে জীবন কাটান,তাতে সমাজের গছিয়ে দেওয়া নিয়ামাবলির বাইরে বাইরে থাকা এক প্যাশনেট, ট্র্যাজিক হিরো কে পাঠক চিনে নেন। চিকো কোনোদিন ডাক্তারি করেননি, সঙ্গীতের মধ্যে ডুবে থেকেছেন। গ্রেগোরিয়ান চান্ট থেকে ক্লাসিকাল, কোঙ্কনি পল্লীগীতি,গোয়ার সঙ্গীতাত্মার নিউক্লিয়াস-পর্তুগিজ-কোঙ্কনি তে মেশা "মান্দো'--- গোয়ার যুবকদের কাছে যা সেরেনাদের অস্ত্র, সবের মধ্যে চিকো বাস করেছেন। ধনী পরিবারের সন্তানটি যখন ইস্কুলে সংগীতের শিক্ষকতা করে বাঁচতে চাইলেন, চিকো কে আগলে রাখলেন ফিলোমেনা। বই-এর যে পরিচ্ছদটি দালি'র ছবির নামে রাখা, "পার্সিস্টেন্স অফ মেমোরি, সেখানে চিকো-ফিলোমেনার একটা ছবি আছে : তিরিশের দশকের ফ্যাশনের টুপি ফিলোমেনার,অতি সুদর্শন যুবক চিকো হাতের বেড় দিয়ে আগলে রেখেছেন নতুন বৌকে। ছবিটি খুব ঝলমলে,তিরতিরে-রোম্যান্টিক।

    নিজের অতি প্রিয় গোয়া ছেড়ে ১৯৪৫ এ গোয়ার ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে ধারওয়াড় এ পরিবারকে স্থানান্তরিত করেন চিকো। পর্তুগিজ শাসনের বাইরে বৃটিশ ভারতে। সঙ্গীত শিক্ষকের পেশা নিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতায় মাঝে মাঝেই টান পড়েছে। ফিলোমেনাই আসতেন গোয়ায়, ইন্দো-পর্তুগিজ বর্ডার পেরিয়ে নিজেদের জমি-জিরেত থেকে কিছু অর্থ জোগাড় করতে, ধারওয়াড়-এর সংসারের জন্য। চিকো থেকেছেন তাঁর নিজের মতন, নিজের পেশা-প্যাশ্যনের অগোছালো অস্থিরতা নিয়ে। চিকো'র কন্যা অরোরা মারিয়া জানাচ্ছেন, এমন অস্থিরতায় গোয়ার শিক্ষিত যুবকরা বারে বারে চঞ্চল হয়েছেন ও তাদের ক্ষুদ্র ভৌগোলিক সীমানার বাইরে বেরিয়ে পড়তেন অন্য পেশা অন্য জীবনের কথা চিন্তা করতে। চিকো যেমন ধারওয়াড়ে, অন্যেরা গেছেন বম্বে। আরেকজন গোয়াবাসী, দীননাথ মঙ্গেশকার সংগীত ও পরিবার নিয়ে চলে এসেছিলেন বৃহত্তর সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক আবর্তের মধ্যে নিজের মাটি খুঁজে নিতে।



    ধারওয়াড়- এ ঐ সময় গড়ে ওঠে কিছু গোয়ান- ক্যাথলিক পরিবারের ছোটো একটি সামাজিক- সাংস্কৃতিক মরূদ্যান। এখানেই স্কুল-কলেজের পাঠ নেন মারিয়া অরোরা। মাড়গাঁও-এ যাওয়া হয় ইস্কুল-কলেজের ছুটিতে। ট্রেন-বাস-নৌকো-র ৯০ কিলোমিটারের যাত্রাশেষে শুধু রাজনৈতিক সীমানা নয়, আরও অনেকধরণের সীমানা পেরিয়ে অন্য একটি পৃথিবীতে যেন ঢুকে পড়া। পঞ্চাশের দশকের "লিবারেশন'এর আন্দোলন তীব্র হলে বর্ডার সিল করে দেওয়া হয়। তখন প্রায় কঠিন হয়ে দাঁড়ায় পারাপার। এতদিন পর্তুগালের একটি প্রদেশ হিসেবে, কলোনিয়াল শাসকের কাছে যা"ইন্ডিকা পর্তুগিজা' নামে পরিচিত-- সেখানে শুরু হহেছে মুক্তি আন্দোলন, এবং তা কঠোর ভাবে দমনের একটা হীন প্রক্রিয়া চলছে পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট সালজারের হাত দিয়ে। এই অবরুদ্ধ, অস্থির গোয়ায় এর মধ্যেই ফিরে এসেছেন চিকো, একা। পরিবারের থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। অভিমানী,প্যাশনেট, ভোলাটাইল, রোমান্টিক চিকো--- ১৯৬১র লিবারেশন-এর দু'বছর আগেই মারা যান।

    "গো গোয়া'। গোয়া পর্যটনের বিজ্ঞাপন। প্রায় প্রতিটি রাজ্য, বিশেষ করে যারা পর্যটনকে ভালোরকম অর্থকরী শিল্প হিসেবে দেখছে, এই ক্যাচ ফ্রেসগুলি নিয়ে আসে। "ঈশ্বরের দেশ', "ভারতবর্ষের হৃদয়'...।

    আমাদের "গো গোয়া' স্থির হল অক্টোবরের শেষে। এই সময় কেরালায় দ্বিতীয় বর্ষাকাল। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর। বিকেল থেকে মেঘ করে আসে, সারা রাত্তির বৃষ্টি। সকাল বেলায় নীলকান্তমণি আলোয় চারিদিক ঝকমক করে। পাঞ্জিম-এও দেখলাম মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের থাকার আস্তানা,শহরের ল্যাটিন পুরোনো হেরিটেজ অঞ্চল ফন্টেইনাস -এ। "পাঞ্জিম ইন'। বেশী পুরোনো নয়, উনিশ শতকে বানানো। রাস্তার দিকে রট আয়রনের "বালকাও'। ঝুল বারান্দা। ভেতরের ঘর,সিঁড়ি , দালানের পাষে মস্ত খাবার জায়গা কলোনিয়াল আসবাব, ছবি,আয়নায় সাজানো। সেরামিকের নীল-সবুজ টালি বসানো ফোর-পোস্টার বেড। ফন্টেইনাসে এই রকমই সব বাড়ী। সদর দরজার দেওয়ালে লাগানো নীল-সাদা হাতে আঁকা আজুলেজো (Azulejo) টালি তে গৃহকর্তার নাম, বাড়ীর নম্বর। রাস্তায় একটু এগিয়ে আঠেরো শতকের সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ।



    ফন্টেইনাসের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একধরনের লেবেলবিহীন, বিশেষণহীন রোমান্টিকতায় ভাসছিলাম। এমনসময় কানের কাছে কেউ বললো," চলো ঐ গলির মধ্যে "ভিভা পাঞ্জিম'এ চিকেন সাকুতি আর পাও খাই'। হোয়াই নট?

    সারাদিন পুরোনো গোয়ায় ঘুরে ঘুরে গির্জার না-প্লাস্টার করা ফাসাদ, ক্রুশস্তম্ভের নিচে রাখা মোমবাতি, মিউজিয়মে রাখা খ্রিষ্টিয় শিল্প, বম জিসাসের কাসকেট,"সে' ক্যাথিড্রালের, একহারা চৌকোনা বেল-টাওয়ার দেখে আবার নোভা গোয়ায়, পাঞ্জিমে। সেখানে শহরের প্রধান গির্জা, আর তার জিক-জ্যাক সাদা সিঁড়ি- ঘোরানো স্বচ্ছ-সুন্দর উপস্থিতি পাঞ্জিম শহরের একটি বেখুদী ক্যামেরা-মোমেন্ট... পাঞ্জিমের আরেকদিন, বৃষ্টির শেষে,শহরের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই একেবারে "কাম্পাল'-এ। কলোনিয়াল বাড়ি আর বাগানে ঘেরা একটি রাস্তার ধারে ডিজাইনার ওয়েন্ডেল রডরিক্সের ডিজাইন স্টুডিয়ো। সাদা আর গন্ধক-হলুদের সুতির পোষাক ঝুলছে গ্রাফিত্তি, স্ট্রীট-আর্ট দিয়ে মণ্ডিত দেওয়ালে।

    ট্যাক্সি ড্রাইভার রবিনিয়ো, ও ওর সঙ্গী কথা বলছিলো কোঙ্কনি তে। একধরনের সুরেলা সিঙ্গ-সঙ্গ উচ্চারণে। মরাঠীর একটা আভাস হয়তো আছে, কিন্তু ভিন্ন ভাষা। গোয়ায় সবাই কোঙ্কনি-ই বলে। গির্জার স্যুভেনির শপের মাদোনা মূর্তির বিক্রেতা, রবিনিয়ো, গ্রামের রবিবারের বাজারে সসেজের মালা ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা মেয়েটি, সকলের ভাষা কোঙ্কনি। ১৯৬১-র আগের রাজভাষা পোর্তুগিজ,অব্যবহারে ক্ষয়ে আসছে, কিন্তু পাঁচশো বছরের একটা সিপিয়া প্রেক্ষাপট থেকে গেছে ইতিহাসের কুচি ছড়ানো গোয়ার পথ-ঘাটে।

    মারিয়া অরোরার বই থেকে জানছি, ১৯৬১-র আগে ইস্কুল-কলেজের পড়াশোনা মোটামুটি পর্তুগিজেই চলতো। মরাঠীর কিছু চলন হিন্দু ছাত্রদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকলেও, মাতৃভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধই ছিলো ইস্কুল-কলেজের পাঠক্রমে, এবং তা ছিলো রাজাদেশে।

    গোয়ার যে কন্যাটি নিজের সংস্কৃতির যে পরিচিতি এই বই-এর মাধ্যমে তুলে আনতে চেয়েছেন, সেখানে কোঙ্কনির কথা বাদ দিয়ে তা লেখার কথা ভাবেননি।

    কোঙ্কনি ভারতের একটি অনন্য ভাষা, যা বলা হয় কম-বেশি মহারাষ্ট্রের উপকূল থেকে আরও দক্ষিণে কেরালায়। লিখিত স্ক্রিপ্ট নেই; ভাষার লেখ্যরূপ আছে মরাঠী, কন্নড়,মলয়ালম, দেবনাগরী, রোমান এবং মারিয়ার রিসার্চ অনুযায়ী বাংলাতেও। কেরালায় বহু গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণ আছেন যাদের বাড়ির ভাষা কোঙ্কনি।

    পাঁচশো বছরের পর্তুগিজ রাজত্বে সরকারি আইন ছিলো যেন-তেন-প্রকারেণ ভাষাটিকে সর্বান্তকরণে একঘরে করে রাখতে। দেশীয় এলিটদের পার্লারে পর্তুগিজ ক্রমে ক্রমে প্রধান ভাষা হয়ে উঠলেও কোঙ্কনি সুস্থ-সবল ভাবে বেঁচে-বর্তে ছিলো আম-জনতার অবারিত পশ্রয়ে, গ্রামীণ জনতার রান্নাঘরে, চাষের মাঠে, মেছো নৌকোয়। মারিয়া লিখছেন: এলিট গোয়ার রান্নাঘরের দিকে কোঙ্কনি-ই বেশি শোনা যেতো।

    চিকো আর ফিলোমেনা কোঙ্কনি বলতেন নিজেদের মধ্যে, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। চিকোর পশ্চিমী আবহে বড় হয়ে ওঠা, পর্তুগিজে ক্ষুরধার দক্ষতা, ঘরোয়া ভাষাটিকে দূরে সরিয়ে রাখেনি। কোঙ্কনিতে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে হাস্য-কৌতুক,কোঙ্কনি পল্লীগীতির অবারিত চর্চা, চিকোর গ্রেগোরিয়ান চান্ট প্রীতির সঙ্গে কোনো আপাত সংঘাত তৈরি করেনি।

    ষোলো শতকের গোয়ায় জারি করা ইনক্যুইজিশন, আর বিশের দশকের পর থেকে পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট সালাজারের শাসনের তীব্রতম রুক্ষতার দিনগুলির মধ্যে চারশো বছরের ব্যবধান : এই সময়কালে কোঙ্কনির ওপর এসেছে নিয়ত চাপ। ভাষাটি মুখে-মুখে বলা ভাষা, এর ওর দোরে লিপি ভিক্ষা করেও বেঁচে গেছে। বাড়ির মেয়েরা বলেছেন সবসময়েই, হিন্দু পরিবারে এবং খ্রিস্টান পরিবারে। বিশ শতকের গোড়ায় বামন রঘুনাথ শেনয় ভারদে ভালুলেকর অক্লান্ত পরিশ্রমে জাগিয়ে তুলেছেন ভাষা-অস্মিতা, মনোহর রাই দেশাই, জোসে পেরেরা,রবীন্দ্র কেলেকর, উদয় ভেম্ব্রে সকলেই নিজের মতন করে কোঙ্কনি ভাষা-শ্রমিক। ২০১০ এ রবীন্দ্র কেলেকরের জ্ঞানপীঠ পুরস্কার সমস্ত কোঙ্কনি- ভাষা প্রেমিকের জয়। ১৯৬৭ এ গোয়া-বাসীদের কাছে ভারত সরকার একটি ওপিনিয়ন পোল নিয়েছিলো, গোয়া মহারাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় কি না, তা দেখতে। গোয়াবাসীর প্রায় এক-তরফা রায়ে গোয়া থেকে যায় কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল। এর কুড়ি বছর পরে ১৯৮৭ এ গোয়া ভারতের অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পায়।

    এই সবই নিঁখুত ভাবে খুঁটিয়ে লিখেছেন অরোরা মারিয়া।

    রবিনিয়ো কে জিগ্যেস করছিলাম শান্তাদুর্গা আর মঙ্গেশী মন্দির কোনদিকে, বম জিসাস ব্যাসিলিকা, "সে' ক্যাথিড্রাল দেখে ফিরছিলাম... রোবিনিয়ো বললো, সেতো "পণ্ডা' তালুকায়, এখন গেলে ঘুর-পথ হবে,যাবার সময় পুরোনো গোয়ার গির্জাগুলি দেখে পণ্ডায় যাওয়া যেতে পারতো। আর যাওয়া হলো না সেদিকে। "পন্ডা' তালুক প্রথম চোটের পর্তুগিজ শাসনের বাইরে ছিলো। সব সময় থেকেছে হিন্দু-প্রধান। শান্তাদুর্গা আর মঙ্গেশী মন্দিরের স্থাপত্য ইন্দো-পর্তুগিজ, মন্দিরের দীপস্তম্ভ গির্জার বেলফ্রাই এর আদলে। সামনা-সামনি দেখিনি, তাই পুরো ছবিটা লিখতে পারছিনা... কিন্তু ছবিটা নিশ্চিত ভাবে হবে আদ্যন্ত গোয়ান, তার সংস্কৃতির পুরোপুরি নিজস্বতা নিয়ে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। মিডিয়া এবং বলিউড সিনেমার কল্যাণে একটি স্টিরিয়োটাইপ অনেকদিন চলছে : গোয়ান মানেই পিন্টো-ডি'সুজা-গোমেজ। অরোরা-মারিয়ার বইতে রয়েছে যে তথ্যটি, ১৯৪০ এ সরকারি আদম-সুমারী হিন্দুর সংখ্যা মোটামুটি ৬০% এবং খ্রিস্টানের সংখ্যা ৪০% রেখেছিলো। একুশ শতকেও পরিসংখ্যানটি অপরিবর্তিত আছে। মুসলিম জনসমষ্টি সামান্যই। অনেক তথ্য দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন, গোয়াবাসী হিন্দুরা নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে ভালোমতন গর্বিত। অরোরা মারিয়ার এক হিন্দু বন্ধুর ক্ষুদ্ধ জিজ্ঞাসা : "আগো, আমিম কোনুম? আমিম গোয়েনকার নুইম?' "আমি কে? আমি গোয়াবাসী নই?'

    অরোরা মারিয়া দেখাচ্ছেন,হিন্দু গোয়ার নানা স্তর পর্তুগিজ অধিকৃত গোয়ার মধ্যে থেকে গেছে। এই অবস্থানগত সমান্তরলতার একটি বড় বাহন ছিলো বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কাজকারবারে হিন্দুদের ভালোরকম উপস্থিতি। ইনক্যুইজিশনের দু'শতাব্দী পরে ইয়োরোপের মানচিত্রে পর্তুগালের রাজনৈতিক প্রাধান্য তরল হয়ে এলে গোয়ায় নিজেদের কলোনিয়াল অস্তিত্ব রাখতে হিন্দু বণিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর হতে শুরু করে শাসক গোষ্ঠী। আজকের গোয়ার প্রধান শিল্পপতিদের মধ্যে, সালগাঁওকর, ডেম্পো, কামাতরা সবাই হিন্দু এবং প্রায় দুশো বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। ডেম্পো-পরিবার প্রায় ১৬ শতক থেকে সরকারি নথিপত্রে উপস্থিত। কোঙ্কনির পাঠ ইস্কুলে রদ হলেও হিন্দুরা আরেকটি চর্চিত ভাষা , মরাঠীর মাধ্যমে নিজেদের আত্মপ্রকাশের একটি পথ বার করে নেয়। একটি শিক্ষিত গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা সরকারের মধ্যে বাড়তে থাকে। পর্তুগিজে দক্ষ এই হিন্দুরা বিশের দশকের প্রথম থেকেই নিজেদের আস্থাবান করে তোলেন। ঐতিহাসিক ডি. ডি. কোশাম্বীর ঠাকুর্দা চাইছিলেন ছেলে পর্তুগিজ সরকারের চাকরি নিক। ধর্মানন্দ কোশাম্বী এই ছক থেকে বেরিয়ে প্রায় রূপকথার নায়ক হয়ে স্ত্রী-সন্তান সহ হার্ভাডে যান বৌদ্ধধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে।

    ১৫১০ সালে ভারতের পশ্চিম উপকূলে ছোট্টো ভৌগলিক সীমানার মধ্যে কলোনিয়াল শক্তির একটা বড় রকম সামাজিক প্রতিফলন হয়। যা গোয়াবাসীর জীবনে আনে একটি গূঢ়, জটিল টানাপোড়েন। সরকারের আরোপিত ভাষা, নিজের ভাষা, প্রাথমিক স্কুলের ভাষা হিন্দু গোয়াবাসীদের সমৃদ্ধ করে। এর মধ্যে মধ্যেই কাজ করে গেছে কিছু নিজস্ব পর্তুগিজ ভিনেৎ, যা জীবনের অঙ্গাঙ্গী করতে - সময় লেগেছে, কিন্তু এই ইন্দো-পর্তুগিজ "মেলঞ্জ'এর বাইরেও থাকেনি তারা। "ভিনো' বা ভিনিগার আর "আলো' বা রসুন দিয়ে রাঁধা পর্ক ভিন্দালু সারস্বত ব্রাক্ষ্মণের রান্নাঘরে ঢোকেনি ঠিকই, মাছের ঝোলে ভিনিগারের বদলে এসেছে "কোকাম'এর অম্লতা। মারিয়া অরোরা জানাচ্ছেন, "প্রন বালচাও' এর মত পর্তুগিজ পদ হিন্দু গোয়ার রসুইঘরে জায়গা করে নেয়।অন্য দিকে গোয়ার ক্যাথলিক পরিবারে চিরকাল থেকে গেছে কোঙ্কনির আধারে খ্রিষ্টিয় আবহ ও পশ্চিমি সংস্কৃতি। মারিয়া জানাচ্ছেন, তাঁর মায়ের মাসী টিয়া মারিয়া বারেতো'র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করেছেন ব্রিটিশ ভারতের পুনা-বম্বেতে, বাড়িতে একই সঙ্গে বলা হয়েছে ইংরেজি-কোঙ্কনি-পর্তুগিজ। বাড়ির মেয়েরা পরেছে শাড়ি।

    আমরা "চন্দোর'এর দিকে যাচ্ছিলাম। কয়েকটি বিখ্যাত কলোনিয়াল বসতবাটি দেখতে। সকালের মার্জিত আলো চারধারে পড়ে ম্যাজিক সৃষ্টি করে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশে পুরোনো গোয়ান বাড়ি,যার সামনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা "বালকাও, পথপার্শ্বে পাথরের ক্রুশের বেদীতে জবাফুল রাখা,... সবই অনেকটা কেরালার মতন, আবার নয়ও। কেরালার গ্রামগুলি মণিমুকুতার মতন ঝকমক করে, দু'ধারে মাঝে মাঝে আসে ছোটো বড় গির্জা,সন্ধেবেলার প্রদীপ সাজানো মন্দির। কেরালার খ্রীষ্টধর্ম ও দেশজ সংস্কৃতির সংকর গোয়ার থেকে আলাদা। গোয়ার ধর্ম, সংস্কৃতি,ও ভাষার নিষিক্ততা আমার মনে হয় অনেক ট্রাজিক। দেশীয় ভাষাটি নির্দিষ্ট লিপিহীন থেকেছে,সাড়ে চারশো বছরের বিদেশি শাসন তৈরি করছে একধরনের অস্তিত্বহীনতার অবয়বহীন সংশয়। গোয়াবাসীর প্রশ্ন থেকে গেছে, " আমি কোনুম " --- আমি কে?



    মারিয়া অরোরা ঐতিহাসিক "ডি. ডি. কোশাম্বীর বই, An Indian Introduction to Indian History থেকে কয়েকটি চমৎকার লাইন উদ্ধৃত করেছেন, যেখানে কোশাম্বী তাঁর পৈত্রিক গ্রামের কথা বলেছেন ... যেখানে গোখরো সাপেরা পদ্মফুলে ছাওয়া পুকুর থেকে উঠে এসে গ্রামের রাস্তায় শুয়ে থাকে। আর , কেউ যদি ১৯২৪ এর খ্রিসমাস ঈভের সন্ধেতে গ্রামেতে উপস্থিত থাকতো, সে শুনতে পেত বাঘিনীটির প্রায়- নি:শব্দ পদক্ষেপ তার ফেলে যাওয়া শিকারের কাছে, গ্রামের চ্যাপেল থেকে ভেসে আসতো কোঙ্কনিতে প্রার্থনাসঙ্গীত,আর বাড়ির ভেতর থেকে জেঠামশাইএর গলা...

    মাড়গাঁও থেকে পুবদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে, কোঙ্কনিতে রাস্তার হদিশ করতে করতে রবিনিয়ো আমাদের চান্দোরে নিয়ে আসে। চান্দোরের কথা আজকলের ট্যুরিস্ট জানেন। মেনেজেস ব্রাগাঞ্জার ম্যানশন হেরিটেজ- ট্রেলের মধ্যে প্রধানতম। রাস্তার ওপরই বাড়ি। এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। ওপর থেকে কেই জিগ্যেস করলো, "বাড়ি দেখবেন? উঠে আসুন'। ইনি বাড়ির মালিক, দনা আইদা। আশির ঘরে ওপরের দিকে বয়স। আর কাউকে দেখলাম না, একা একাই থাকেন দনা আইদা?

    সোনালি গিল্টির নক্‌শা-কাটা বিশাল নাচঘর। বেলজিয়াম আয়নার কনসোল টেবিলে ম্যাকাও থেকে আনা চিনা ভাস। ফোর- পোস্টার খাটের ওপর ঝুলছে লেসের মশারি। হলদে-বাদামি ফোটোতে তরুণী আইদা। ক্রিস্টাল, অর্গান, পারিবারিক চ্যাপেল, ল্যুই সিক্সিন চেয়ার। কাঠের জাফরি করা জানালার বাইরে কাজুগাছে ঝুলছে যেন ছবির ফ্রেমে আঁটা, একটি কাজু-আপেল, ম' ম' করছে মৌতাতের ভারি বাতাস এবং খুব মেঘ করেছে, বৃষ্টি আসি-আসি করছে....

    চন্দোর গ্রামে রয়েছে আরো একটি বেশ বিখ্যাত বাড়ি, ফার্নান্ডেজদের বাড়ি। একটু কম সামগ্রীতে ভরা,যার ফটকের ওপর ইংরেজি হরফে কোঙ্কনিতে লেখা, "ফার্নান্ডেজ ঘর'। বাড়ির মালিক তাঁর সবথেকে ছোটো সন্তানটি কোলে নিয়ে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। বউ আর দুটি সন্তান পাড়ার গির্জায় সানডে মাসে গেছেন। বাড়ির নিজস্ব চ্যাপেলটি বসার ঘরের পাশেই। শিশুর খেলনার পাশ দিয়ে নি:শব্দে হেঁটে গেল বাড়ির মোটাসোটা বেড়াল।

    ফিরে আসি পাঞ্জিমে, হেরিটেজ- পল্লীতে। রাস্তার নাম, "রুয়া ৩১ জানেইরো, ৩১শে জানুয়ারি রোড। কবে এই নামকরণ? নিশ্চই ১৯৬১র পরে।

    একদিন বিকেলে ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি এলো, বৃষ্টির মধ্যেই বসে রইলাম ঝুলন্ত বালকাও তে, ছেলেমেয়েরা ইস্কুল থেকে ধুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরছিলো।



    আমাদের আস্তানার পাশের দোকানটি গোয়ার নানা শিল্পসামগ্রী বিক্রি করে, তার মধ্যে প্রধান, হাতে আঁকা আজুলেজো সেরামিক টালি। এই দোকান টি, যার নাম "ভেলা গোয়া', সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে বিখ্যাত শিল্পী মারিও মিরান্দার আঁকা গোয়ার রঙ-রূপ, এবং নিখাদ নস্ট্যালজিয়া, এক-একটি টালির মধ্যে।

    গোয়া থেকে ফিরে আসার পর মারিয়া অরোরা কুতো'র বইটি আবার পড়তে বসি... অ্যানেকডোট, পার্সোনাল হিস্ট্রি, রিসার্চ, সব নিয়ে একধরনের মুডবোর্ড...

    গোয়ার "আলমা', পর্তুগিজে যা "আত্মা', তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার এই আন্তরিক চেষ্টা "অন্যরকম গোয়া'র দিকে পাঠককে নিশ্চই উৎসাহী করবে।

    এবং পাঠক তা খুঁজে-পেতে, লাইব্রেরির সেল্ফ থেকে বা গ্রন্থবিপণি ঘেঁটে করলব্ধ করে পড়ে ফেলবেন।

    *লেখাটির মুখ্য আধার, Goa : A Daughter's Story. Maria Aurora Couto.
    Penguin Books
    2004

    ** লেখাটির গৌণ আধার, অক্টোবর, ২০১০ এর শেষ চারদিনে পাঞ্জিমে বসে কষ্টার্জিত কয়েকটি ছেঁড়াখোঁড়া বাক্য।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২০ জুন ২০১১ | ১২২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন