সম্প্রতি একটি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলাম। করোনাকালের বিধি অনুযায়ী সবাই কম বেশি মাস্কে আবৃত। কিন্তু বদ্ধ ঘরে খাব না, খাবার প্যাক করে নিয়ে যাব একথা জানাতেই এক পরিচিত বললেন “আরে মশাই কপালে থাকলে যা হবার হবে, এসব করে কিছু ঠেকান যাবে না!” জটলার বেশ কিছু মুখে স্মিত সমর্থন দেখতে পেলাম। বুঝলাম এই অদৃষ্টবাদে সমর্পণ আসলে একধরনের অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। গত সাত আট মাসে পরস্পরবিরোধী স্বাস্থ্য গবেষণার নিদান আর প্রচলিত–অপ্রচলিত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনে মানুষ ক্লান্ত, দিশাহীন এবং বেপরোয়া। ব্যঙ্গ করে একজন বললেন “আমি তো ভ্যাক্সিন বেরোলেও নেব কিনা ভাবছি, শুনেছি সুঁই ফুঁড়লে চার পাঁচ মাস নাকি জলপথে ভ্রমণ বন্ধ। করোনার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে গলা শুকিয়ে মরি আর কী!” পাশের জন দোহার দিলেন “ভ্যাক্সিন যে বলছেন, তা কোন ব্র্যান্ডের কিনবেন? আর পাবেনই বা কোথা থেকে?” এসব উত্তরাতীত প্রশ্নের গুঞ্জন, শীতের ধোঁয়াশার মধ্যে ক্রমে প্রসারিত হতে থাকল। সেই রেশ ধরেই মনে হল ভ্যাক্সিন প্রয়োগের সম্ভাবনা সত্যি কি আমাদের এই অতিমারীর উপান্তে পৌঁছে দিতে সক্ষম? নাকি আবার সাধারণের হাতে থাকবে শুধুই পেন্সিল!
ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এই উদ্বেগ বা অনিশ্চিয়তা অহেতুক নয়। এখনও পর্যন্ত কম বেশি প্রায় ২০০ ভ্যাক্সিন পরীক্ষা নিরীক্ষার বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। এই দৌড়ে এখন ফাইজার, মডার্না (এই দুটি সংস্থাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত) এবং আস্ত্রজেনেকার (ইংল্যান্ড) মত সংস্থাগুলি এগিয়ে আছে, কিন্তু তাদের কার্যকারিতা এখনও বাস্তব ক্ষেত্রে অপরীক্ষিত। আমাদের দেশে ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিন নামের টিকার তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে, যদিও তার নমুনা পরীক্ষা রীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন আছে, যা আমরা পরে আলোচনা করব। কিন্তু কার্যকারিতার অনিশ্চয়তা ছাড়াও অন্য আরেকটি সমস্যা হল পৃথিবীর সব দেশে ভ্যাক্সিন উৎপাদনের পরিকাঠামো নেই – অর্থাৎ ভ্যাক্সিনের বাজার ঠিক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়। কতিপয় ফার্মা-কর্পোরেট এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং মুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম মেনে ভ্যাক্সিন জোগান দিলে যাঁদের কেনবার ক্ষমতা নেই, সেই অল্প-আয় ভুক্ত দেশগুলি অকূল-পাথারে পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিদান অনুযায়ী, প্রথম ধাপে প্রতিটি দেশ তাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশকে যাতে টিকাকরণ করাতে পারে সেই অনুপাতে ভ্যাক্সিন হাতে পাবে। কিন্তু ফারমা-কোম্পানি গুলি অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ব্যাবসার সুযোগ সুবিধের ক্ষেত্রে দেশীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল। বহু দেশেই কোভিড মোকাবিলা, যার একটি চূড়ান্ত পর্যায় হল ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণ করবে। ভ্যাক্সিনের জোগান যেহেতু পরিমাপযোগ্য, অনেক ক্ষেত্রেই এই সংখ্যাকে ব্যবহার করার তাগিদে, সরকারের তরফ থেকে ভ্যাক্সিন মজুদ করার একটা টান থাকে। সে ক্ষেত্রে, কোভিড উপদ্রুত এবং আর্থিকভাবে অনগ্রসর দেশগুলি ভ্যাক্সিন ব্যবহারের সমান সুযোগ আদৌ পাবে কি না সে নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকছে। যদিও পিছিয়ে থাকা দেশগুলিকে টিকাকরণে সহায়তা করতে ২০০০ সালে গঠিত গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেসন (সংক্ষেপে গাভি) সংস্থার মাধ্যমে ডাবলু এইচ ও ভ্যাক্সিন বণ্টনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, কিন্তু এই উদ্যোগ সম্পর্কেও সন্দেহ থাকে কারণ উন্নত দেশগুলি এবং মাইক্রোসফটের মত কর্পোরেট সংস্থাগুলিই হলো গাভির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সুতরাং ভ্যাক্সিন বণ্টনব্যবস্থা কতটা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।
এই নিবন্ধে আমরা এমনই কিছু প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা মূলত দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেব:
১। ভ্যাক্সিনগুলির কার্যকারিতা বোঝার জন্যে কোন পরিমাপযোগ্য মানদণ্ড আছে কিনা? এবং
২। যদি ভ্যাক্সিন আদৌ কার্যকরী প্রমাণিত হয় তাহলে বণ্টন এবং টিকাকরণের বর্তমান ব্যবস্থা সামাজিক কল্যাণের পক্ষে কতটা অনুকুল?
প্রথম প্রশ্নের ক্ষেত্রে বলা যায়, যে কোনও ধারার ওষুধের ক্ষেত্রেই তা আদৌ কার্যকরী কিনা তা বুঝতে গেলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রমাণের প্রয়োজন আছে। এই প্রামাণিক তথ্য সংগ্রহ করা হয় র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আর সি টি )-এরমাধ্যমে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এখানে দুটি দল বেছে নেওয়া হয়, মনে করা যাক তাদের নাম ক এবং খ। এই দলে কারা ঢুকবেন তা সম্পূর্ণ আকস্মিক - ধরা যাক কয়েন টস করে ঠিক করা হয়। এর কারণ (অ)সুস্থতার নিরিখে যদি দু দলের পার্থক্য থাকে তাহলে তাঁদের মধ্যে তুলনা করা কঠিন। টসের মাধ্যমে যদি দলের সদস্যদের বেছে নেওয়া হয় তাহলে দুটি দলের মধ্যেই সুস্থ-অসুস্থ থাকার সমান সম্ভাবনা থাকবে।অর্থাৎ, যদি ধরে নেওয়া হয় একটি জনসমষ্টির কেউ হেড পড়লে ক দলে যাবেন এবং টেল পড়লে খ দলে. তাহলে যে কোন দলে তাঁর অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনা পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। এরপর, যে ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চলছে, তা ক দলকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে খ দলকে দেওয়া হয় প্রচলিত চিকিৎসা। এখন যদি দেখা যায় এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে অধিকাংশ সময়ে ক দলের সুস্থতার হার খ দলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি তাহলেই জোর দিয়ে বলা যেতে পারে এই ওষুধটির রোগ নিরাময়ে সফল হবার সম্ভাবনা অধিকতর।
ভ্যাক্সিন আরসিটি-র চারটি পর্যায় আছে
চিকিৎসাপূর্ব নিরীক্ষণ: এই পর্যায়ে বৈজ্ঞানিকরা নতুন টিকা ইঁদুর বা বাঁদর জাতীয় মনুষ্যেতর প্রাণীর উপর পরীক্ষা করেন। এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য পরীক্ষা করে দেখা যে উক্ত প্রাণীদের মধ্যে এই টিকা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম কি না।
প্রথম পর্যায়: এই পর্যায়ে কম সংখ্যক (৩০-৪০) মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়। মূল উদ্দেশ্য এই টিকা থেকে মানুষের শরীরে কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব হয় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা।
দ্বিতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ে সাধারণত বিভিন্ন বয়স এবং জাতির কয়েকশ মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়। এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য বিশদে পরীক্ষা করে দেখা যে এই টিকা থেকে মানুষের শরীরে কোন ক্ষতিকারক প্রভাব হয় কি না।
তৃতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ে কয়েক হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়, যাঁদের আরসিটির মাধ্যমে আসল টিকা বা প্লাসিবো দেওয়া হয়। এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য টিকার কার্যকারিতার হার (এফিকেসি রেট) নিরূপণ করা।
ফাইজারের টিকার উদাহরণ নেওয়া যাক। এই পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়ে ৪৩০০০ এরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেছিলেন, যাঁদের আরসিটির মাধ্যমে দুই দলে ভাগ করে দেওয়া হয়, ক এবং খ। ক দলকে আসল টিকা দেওয়া হয় এবং খ দলকে দেওয়া হয় প্লাসিবো। এখানে উল্লেখ্য যে, এই স্বেচ্ছাসেবকরা কিন্তু জানতেন না যে তাঁরা আসল টিকা পেয়েছেন না নকল টিকা। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় যে ক এবং খ দলের সদস্যরা টিকা পাওয়ার পর থেকে একইরকম জীবনযাপন করেছে। সম্ভাব্যতা তত্ত্বের পরিভাষায় বলা যায়, দুই দলের সদস্যদেরই ভাইরাসের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা সমান। অথচ প্রায় চার মাস ধরে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেলো, খ দলে ১৬২ জনের কোভিড হয়েছে, আর ক দলে মাত্র ৮ জনের। অর্থাৎ, দুই দলের ভাইরাসএর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা সমান হলেও,ক দলের সংক্রমণের অনুপাত খ দলের থেকে (১ - ৮/১৬২) বা ৯৫% কম। সুতরাং, এই টিকার কার্যকারিতা অনুপাত ৯৫%। একইভাবে, মডার্না তাদের তৃতীয় পর্যায়ে ৩০০০০ স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষা করে জানিয়েছে, যে তাদের টিকার কার্যকারিতা অনুপাত ৯৪.১%। আস্ট্রোজেনেকার পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ১১৬৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবীকে, এবং তাদের টিকার কার্যকারিতা অনুপাত ৬২%। এই বিশ্লেষণের সারমর্ম এই যে, যে কোন টিকার কার্যকারিতার অনুপাত নির্ভরযোগ্যভাবে নিরূপণ করার জন্য, রাশিবিজ্ঞান এবং সম্ভাব্যতা তত্ত্বের নিয়ম মেনে বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষা আবশ্যক। অন্তত আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান তথা জনস্বাস্থ্য গবেষণার সবর্জনবিদিত নীতি তাই বলে। এই মাপকাঠিকে এড়িয়ে গেলে সেই টিকাকে অন্তত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কার্যকরী বলে যায় না। সম্প্রতি ভারত বায়োটেক তাদের কোভ্যাক্সিন টিকার সর্বজনীন ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। মেক ইন ইন্ডিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দেশজ টিকার আবিষ্কার জনমানসে যথেষ্ট উৎসাহ জাগিয়ে তুলেছে। এই উৎসাহ এবং আশঙ্কার পরিবেশে আমাদের মনে রাখা দরকার, যে কোভ্যাক্সিনের কোন বড়মাপের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা এখনো হয়নি। সুতরাং, এই টিকার কার্যকারিতা সম্বন্ধে কোনো প্রামাণিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
এফিকেসি রেট খাতায় কলমে ভাল দেখালেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন যেখানে এই ধরনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল করতে অন্তত কয়েক বছর লাগার কথা সেখানে এত তাড়াতাড়ি ভ্যাক্সিন বাজারে আসছে কী করে? সব কিছু ঠিকঠাক হচ্ছে তো? ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত যে তিনটি ভ্যাক্সিন প্রয়োগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাদের ক্ষেত্রে অন্তত সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে বিশেষ বেনিয়ম হয়নি বলেই মনে হয়।
ফাইজারের কথাই ধরা যাক; এদের নমুনার সংখ্যা হিসেব করা হয়েছিল এই অনুমানের ভিত্তিতে যে বার্ষিক সংক্রমণের হার থাকবে ১.৩%। অর্থাৎ, এখানে ধরা হয়েছিল এক বছরের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রতি ১০০ জনে ১ জনের একটু বেশি, জুলাই মাসের নিরিখে – যখন এর ট্রায়াল শুরু হয়। এই অনুমান অনুযায়ী, প্লাসিবো গ্রুপে যথেষ্ট সংখ্যক সংক্রমিত পেতে গেলে অন্তত সাত মাস অপেক্ষা করতে হত। কিন্তু এরা সেই সংখ্যায় পৌঁছে যায় ঠিক ৩.৫ মাসে – অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে। কারণ, ওই সময়কালে সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩-৪ শতাংশের মধ্যে, যা অনুমিত হারের তুলনায় প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি।
অর্থাৎ, কার্যকারিতার দিক থেকে অন্তত প্রথাগত সূচকের নিরিখে ভ্যাক্সিনগুলি উৎসাহব্যঞ্জক।
কিন্তু ভ্যাক্সিন যতই কার্যকর হোক, তার বণ্টনে যে অসাম্য থাকবে না তা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। অন্তত বাজারের প্রাথমিক ঘটনাপ্রবাহ তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। আস্ত্রাজেনেকা বা ফাইজারের মতো যেসব সংস্থা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করেছে, তাদের তো বটেই এমনকি নভোম্যাক্স বা জনসন অ্যান্ড জনসনের মত সংস্থা, যারা এখনও তাদের ফলাফল প্রকাশ করেনি, তাদের ভ্যাক্সিনের বিক্রির চুক্তিও আগেভাগে সম্পন্ন হয়ে রয়েছে। এমন চুক্তিবদ্ধ টিকার পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ কোটি। চুক্তি করেছে এমন দেশগুলির একটা খতিয়ান
তথ্যসূত্র: Mullard (2020)
লক্ষ্যণীয় বিষয় এখানে চুক্তিবদ্ধ মাথাপিছু ডোজের পরিমাণ যে দেশগুলির বেশি সেগুলি সবকটিই মাথাপিছু জিডিপির নিরিখে উচ্চ আয়ের দেশ। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউকে ছাড়া বাকি দেশগুলির করোনা সংক্রমণ এবং তা থেকে মৃত্যুর হার বেশ কম। যেমন মোট সংক্রমণের নিরিখে এই হিসেবের ভিত্তিতে কানাডা আছে ২৬ নম্বরে অথচ ভ্যাক্সিন মজুদ করার প্রবণতায় তার স্থান এক নম্বরে। অন্যদিকে এই দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান আয়ের দিক থেকে কম হলেও, যেহেতু পুনেতে অবস্থিত সেরাম ইন্ডিয়া বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক, সেই সুবিধে কাজে লাগিয়ে আগাম বুকিং করা সম্ভব হয়েছে।
ডাবলু এইচ ও র নিদান অমান্য করে ফার্মা কোম্পানিগুলি এই চুক্তিতে উৎসাহ দেখাল কেন? আমাদের ধারণা তার কারণ এই ভাইরাস ঘন ঘন তার চরিত্র বদলাচ্ছে। যে বিপুল বিনিয়োগ করে এই প্রথম প্রজন্মের টিকাগুলি তৈরি করা হয়েছে তা দ্রুত বাজারজাত না হলে রাতারাতি এর চাহিদা কমে যেতে পারে - জলে যেতে পারে কোটি কোটি ডলার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভ্যাক্সিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এখন একের বেশি ভ্যাক্সিন নেবার কথা আলোচনা হচ্ছে – যা আলাদা আলাদা ভাইরাল ভেক্টর প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে। একটি ভ্যাক্সিনের পরে, পরবর্তী অন্য ভ্যাক্সিন বুস্টার ডোজের কাজ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই স্বল্প আয়ুর দ্রব্য যার কোন পরিবর্ত ব্যবহার নেই, তা যত তাড়াতাড়ি বিক্রি করা যায় মুনাফা সুরক্ষার সম্ভাবনা ততই বেশি হবে।
অতএব, প্রতিষেধক আমাদের আছে, কিছুটা অনিশ্চিত ফলাফল হলেও আছে, কিন্তু তা ভুক্তভোগী মানুষের কাছে পোঁছে দেবার প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো নেই। সম্প্রতি, ভ্যাক্সিন গবেষণা ও উৎপাদনের ওপর থেকে মেধাস্বত্ব তুলে নেবার আর্জি জানিয়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইউ কে, আমেরিকা এবং কানাডার মতো দেশগুলি বলেছে পেটেন্ট না থাকলে উদ্ভাবনের উৎসাহ কমে যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে চিকিৎসা বিজ্ঞান। এই যুক্তি চেনা, গত কয়েক দশকে উদারীকরণের প্রবক্তারা দক্ষতা বা এফিসিয়েন্সির পক্ষে এইভাবেই সওয়াল করে এসেছেন। তবে জনস্বাস্থ্যের সংকট যখন উচ্চ সংক্রমণের অতিমারী প্রসূত, তখন শুশ্রূষার অধিকার সর্বজনীন হওয়াই বাঞ্ছনীয়।