
সভ্য পোশাক পরুন
বঙ্গে এখন চলছে মোল্লা নাসিরুদ্দিন যুগ। কামদুনি এপিসোডের পর এখন স্রেফ জামা-কাপড় হাব-ভাব দেখেই বুঝে যাওয়া যাচ্ছে কোন ব্যাটা মাওবাদী, আর কার চিত্তটি শুদ্ধ। কে বস্তিবাসী আর কে অনুপ্রবেশকারী। কে ভব্য বুদ্ধিজীবি আর কে গেঁয়ো ভূত। কে নোংরা জামা পরে সভা ভন্ডুল করতে এসেছে, আর কে শুদ্ধচিত্তে "জল উঁচু, জল নিচু" আওড়াচ্ছে। এই দুনিয়ায় সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকলে হলে সতত সভ্যভদ্র পোশাক পরবেন। আর চিত্তটি শুদ্ধ রাখবেন। মুখটি "ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারিনা" করে রাখলাম, আর অন্তরে বিষ, ওসব দুনম্বরী করে কোনো লাভ নেই। যুগ বদলে গেছে। এখন পোশাকই চরিত্রের আয়না। আপনার দোপাট্টাই আপনার পরিচয়। আপনার সেলফোনই আপনার আইডেন্টিটি, অভিজ্ঞান শকুন্তলম। মাওবাদী বলে চিহ্নিত না হতে চাইলে এসব সম্ভাবনা মাথায় রেখে ওয়ার্ডরোব থেকে সাবধানে জামা বাছুন। শ্রাদ্ধবাসরে পরুন সাদা শাড়ি, রক-মোচ্ছবে ট্যাঙ্কটপ, বসন্তোৎসবে খোঁপায় গুঁজুন একটি পলাশ ফুল। মতামত জানাতে হলে শুধু একদিকেই মাথা নাড়ুন। সভা-সমিতি করতে হলে লাল রঙ বর্জন করুন। মুখে স্বেচ্ছায় এঁটে দিন বিরাট লিউকোপ্লাস্ট। যেন দূর থেকেই দেখতে পাওয়া যায়, আর টুঁ শব্দটিও ফাঁকতালে বেরিয়ে না আসতে পারে। নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখুন।
শান্ত আচরণ করুন
জনসমক্ষে শান্ত গোরুর মতো চুপচাপ থাকুন। যাই ঘটুক প্রতিবাদের রাস্তায় যাবেন না। বরং পাবলিক প্লেসে আত্মনিয়ন্ত্রণ অভ্যাস করুন। রাগ হলে কাপ-ডিশ ভাঙুন, বালিশে ঘুষি মারুন, বাথরুমে গিয়ে বসে থাকুন, কেউ কিচ্ছু বলবেনা। জাস্ট অকারণে মিটিং মিছিল আর প্রতিবাদের নামে রাস্তাঘাট আটকে হুজ্জুতি করবেন না। নোনাডাঙাই হোক আর পায়রাডাঙা, বারাসাতই হোক আর বেলগাছিয়া, বস্তি উচ্ছেদই হোক আর ধর্ষণ, প্রতিবাদের নামে ওসব বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবেনা। এ ব্যাপারে সরকারের একেবারে সর্বজনে সমদৃষ্টি। সে আপনার পেডিগ্রি যাই হোক। উত্তরবঙ্গে যে হাতিরা মুখ্যমন্ত্রীর রাস্তা আটকেছিল, তারা মাওবাদী কিনা এখনও সে খবর না পাওয়া গেলেও, নোনাডাঙা কান্ডে মাওবাদী আখ্যা পেয়ে একঘাটে লপসি খেয়েছেন প্রলেতারিয়েত বস্তিবাসী থেকে শুরু করে অ্যাকটিভিস্ট বিজ্ঞানী অবধি এক গাদা লোক। কারো সঙ্গে বিশেষ কোনো খাতির করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে গান্ধিগিরির নাম করে রসগোল্লা খাওয়াতে গিয়ে হাজত ঘুরে এসেছে বেলঘরিয়ার যুবকবৃন্দ।
বিশৃঙ্খলা বাধালে এরকমই হবে। ইটের বদলে পাটকেল, টিটের বদলে ট্যাট আর রসগোল্লার বদলে জুটবে জেলের ভাত। একেই গীতায় কর্মফল বলেছে।
মানুষকে সম্মান দিন
গুরুজনদের সম্মান দিন। বড়োরা ডাহা ভুল বললেও অকারণে কূট যুক্তি দেবেন না। মুখে মুখে তর্ক করবেন না। টুম্পা আর মৌসুমীদের কথা মনে রাখবেন। মাথায় রাখবেন, যে, শিবঠাকুরের আপন দেশে কু-তার্কিকদের মাওবাদী বলে। মাওবাদী চক্রান্তে জড়াবেন না। ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে বড়োদের সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলবেন। খুন-ধর্ষণ সর্বত্রই হয়, পুলিশ কখনও ব্যবস্থা নেয়, কখনও নেয় না। মাতব্বররা চাইলে ওসবের সুরাহা হয়, নইলে ধামাচাপা। যা হবার তা হবে, যা না-হবার তা হবেনা, সবই নিয়তি। সে নিয়ে অকারণে তর্ক করে লাভ কী? এ কথা তো ঠিক, যে, অন্য জায়গার তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। এই তো কদিন আগে দুবাইতে নরওয়ের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হল, পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর মেয়েটিকেই জেলে ভরে দিল। নরওয়ে সরকার কিছুই করতে পারলনা। এই তো শাইনিং দুনিয়ার হাল। তৃতীয় বিশ্ব হলে কি হবে, আমাদের রাজ্যে ওরকম হয়না। ধর্ষণ, নারীনির্যাতন, এসব বাড়ুক বা কমুক, অপরাধীরা ধরা পড়ুক বা না পড়ুক, ধর্ষিতাকে কক্ষনো এখানে হাজতে পোরা হয়না। খুব খারাপ হলে খুনী বা ধর্ষণকারীর শাস্তি হয়না। যে জন্য এই রাজ্যকে অপরাধের মরুদ্যান বলা হয়।
আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না
যুবকরা যত্রতত্র বাজে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যুবক বয়স হল খাটনির সময়। হাতের মুঠোয় ধরা জলের মতো যৌবনকে গলে যেতে দেবেন না। রাজ্য প্রগতির পথে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে, রথের রশিতে হাত লাগান। ঘাম ঝরান। যুবকরা স্বামী বিবেকানন্দের পথ অবলম্বন করে ফুটবল খেলুন, যুবনেতাদের অনুসরণ করে প্রোমোটারি করুন, মেয়ে দেখলে সিটি দিন, পাড়ার ক্লাবে তাস পেটান, চোর পেলে পিটিয়ে মারুন, যা খুশি করুন। কেবল আলস্য অভ্যাস করবেন না। গপ্পো থেকেই আসে গুজব। গুজবের সঙ্গে অপপ্রচার, আর অপপ্রচার মানেই চক্রান্ত। অলস মস্তিষ্ক হল মাওবাদীদের কারখানা। হীরকরাজ্যে আলস্য ও চক্রান্ত দুইই নিষিদ্ধ। যুবকরা নিজেরা নিজের মূল্য না বুঝে অকারণ রাজনীতি ও চক্রান্তে জড়িয়ে পড়লে তাদের চোখে আঙুল্ দিয়ে বোঝানো হবে। অলস যুবক দেখলেই নাগরিক কমিটি গড়া হবে। শোধরানোর চেষ্টা করা হবে। তাতেও কাজ না হলে থানায় গিয়ে কড়কে দেওয়া হবে। এর নাম বেলঘরিয়া পদ্ধতি। এর হাত থেকে বাঁচতে হলে পাড়ার ক্লাবে নাম লেখান, নাগরিক কমিটির হয়ে মাতব্বরি করুন, বাড়িতে বসে গীতা পাঠ করুন। মোট কথা গঠনমূলক কাজে ঘাম ঝরান, কারণ কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
পাপ চাপা দেবেন না
এসব অসভ্যতা একটু আধটু করে ফেললে সেটা তবু লঘু অপরাধ। কিন্তু সেসব অপকম্মো করে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন না। তার জন্য গুরুদন্ড। পাপ চাপা থাকেনা। বেলপাহাড়ির শিলাদিত্য চৌধুরীর কথা মনে রাখবেন। একে তো আবোল-তাবোল প্রশ্ন, তারপর ক্যামুফ্ল্যাজ করার চেষ্টা। এসব হুজ্জুতি করে গা ঢাকা দেবার চেষ্টা করলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। এ একেবারে আন্তর্জাতিক নিয়ম। ধীরেসুস্থে হাঁটবেন না, সেটা সন্দেহজনক। আমেরিকায় সন্দেহভাজন ট্রেভর মার্টিনকে ট্যাঁফোঁ করার সুযোগ না দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হল, কারণ, সে নাকি খুবই আস্তে হাঁটছিল। জোরেও দোড়বেন না। সেটাও সন্দেহজনক। লন্ডনে ক বছর আগেই আরেক সন্দেহভাজনকে পুলিশ এনকাউন্টার করে দিল, কারণ সে ব্যাটা দৌড়ে পালাচ্ছিল। মনে রাখবেন, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বিচারই চূড়ান্ত। সেজন্য সন্দেহজনক কাজকর্ম করবেন না। গলিঘুঁজিতে গুজগুজ ফুসফুস করবেন না। জোরে দৌড়বেন না। আস্তে হাঁটবেন না। নেহাৎই ভুল করে প্রশ্ন করে ফেললে বেশি নড়াচড়া না করে মাথার উপর দুহাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গীতে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, নইলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকেই যাবে। আমাদের এখানে পুলিশ অবশ্য এনকাউন্টার করেনা, সন্দেহজনক হলে শুধুই কিঞ্চিৎ বাটাম প্রদান করে। পালাচ্ছিলেন বলে তারা শিলাদিত্যকে স্রেফ ক’দিন ঘোল খাইয়েই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই ঝুঁকি নিয়েই বা লাভ কি?
প্রশ্ন করবেন না
প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। প্রশ্ন করে দু-হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো, কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয় যদি আদৌ প্রশ্নই না করেন। করলেও প্রকাশ্যে নয়। টিভি চ্যানেলে তো একেবারেই না। খুব জোরে ছোটো কিংবা বড়ো বাইরে পেলে যেমন আপনি যত্রতত্র জল কিংবা মলবিয়োগ করেননা, প্রশ্ন পেলেও নদীর কাছে কিংবা উড়ালপুলের কাছে একান্তে যান। হাওয়ার-কাছে, জলের কাছে ফিসফিসিয়ে ভাসিয়ে দিন, দেখবেন, কেউ যেন শুনতে না পায়। নচেৎ সর্বনাশ, জনতা ধাতানি দেবে, পাবলিক নুইসেন্স বলে পুলিশে ধরবে। আর বাইচান্স মুখ্যমন্ত্রীর সামনে একান্তই খুব জোরে প্রশ্ন পেয়ে গেলে হাসি-হাসি মুখে বলুন, নমস্কার, আমি এখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশ্ন কবিতাটি আবৃত্তি করব। উনি খুশি হবেন। একেই বলে সংস্কৃতি। কে না জানে মুখ্যমন্ত্রী সংস্কৃতিবান। কালচারাল। তিনি ফিল্ম স্টারকে দিয়ে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধন করান, ট্রাফিক লাইটে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজান, মুখে মুখে ছড়া কাটেন, প্রেস কাউন্সিলের সভাপতির মন্তব্যকে "কুত্তা ফোঁকে হাজার" বলে সশ্রদ্ধচিত্তে রেফার করেন, আর কী আশ্চর্য, এসবের মধ্যে পাঁচবছরের কাজ কখন চুপি চুপি ছয়-মাসে সেরে ফেলেন। অকারণে প্রশ্ন করে কাজ পিছিয়ে দেবেন না। উন্নয়নে বাগড়া দেবেন না। মনে রাখবেন, প্রশ্ন করে তানিয়া ভরদ্বাজ ছাড়া পেয়ে গেলেও, আপনি কিন্তু নাও পেতে পারেন।
শঙ্খ | unkwn.***.*** | ৩১ জুলাই ২০১৩ ১১:৪৬77501
sosen | unkwn.***.*** | ৩১ জুলাই ২০১৩ ১১:৪৮77502
s | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০১:০১77503
keuna | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০২:৪১77504
Born Free | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০৪:৪৫77505
siki | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০৪:৫৬77506
ক্কঃ | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০৫:১৩77507
ranjan roy | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০৬:৪৫77510
Bee | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০৮:২৬77508
de | unkwn.***.*** | ০১ আগস্ট ২০১৩ ০৯:১৩77509
কান্তি | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০১:২৮77511
বিপ্লব রহমান | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০২:৩৮77512
Bishnu Dev | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০৪:১১77513
Bishnu Dev | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০৪:১১77514
রূপঙ্কর সরকার | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০৪:১৩77515
b | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০৫:০৭77516
siki | unkwn.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০১৩ ০৬:২৪77517
Nripen Pandey | unkwn.***.*** | ১৬ আগস্ট ২০১৩ ০৯:৩৩77518
SIDDHARTHA'DA | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৩ ১২:০৯77519
পল্লব | unkwn.***.*** | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ১০:০৮77520
souvik | unkwn.***.*** | ২৪ আগস্ট ২০১৩ ১০:৩৫77521