দু’হাজার বাইশের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। শীত শেষ হবার মুখে, অথচ এখনই বেশ কয়েকটি রাজ্যে শৈত্যপ্রবাহ থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হল। বেশির ভাগই উত্তর ভারতের রাজ্য, তবে আমাদের রাজ্যেও আবার তীব্র শীতের ভবিষ্যতবাণী রয়েছে, সঙ্গে দারুণ কুয়াশা। হিমালয় পর্বতের পাহাড়ি শীত এবার ক্যানিং, বোলপুরেও উপস্থিত হয়েছিল। এখনও তার রেহাই দেবার ইচ্ছে নেই। এবার শীত প্রবলতর হবে – এ-ই আবহাওয়া দপ্তরের ইঙ্গিত।
তাই মনে পড়ে গেল ১৭০৯ সালের কথা। আওরঙ্গজেব সবে দু’বছর হল মারা গেছেন। দিল্লি কাঁপিয়ে নাকি সেবার শীত পড়েছিল। এবার এখনই ৯ ডিগ্রির নিচে, সেবার হয়তো ৩/৪-এর নিচে গোঁত্তা খেয়ে নেমেছিল। কোনো পূর্বাভাস ছাড়া বেগানা, আওয়ারা-রা খোলা রাস্তার পাশে কেমন কেঁপেছিল – জানার কোনো উপায় নেই। তখন বিজ্ঞান এত উন্নত ছিল না। তবে ঐ একই সময়ে যা ঘটেছিল ইউরোপে, তা আজও অব্যাখ্যাত রয়ে গেছে।
সে বছরের শুরুতে, জানুয়ারি মাসে ভোর ভোর ঘরের দরজা খুলতেই যে হিমেল হাওয়ার ঝাপটা টের পেল মানুষ, তাতে টেম্পারেচার মনে হয় -১২°সেলসিয়াসের আশেপাশে। অথচ আগের দিন অবধি দিব্যি আলো-ঝলমল দিন, উষ্ণ সোনালি রোদ, সব স্বাভাবিক!
কিন্তু থার্মোমিটারেও এই রিডিং-ই ছিল সেদিন। মানুষ বা পশু যারা রাস্তায় ছিল, তারা তো জমে মরলই, লোকে দরজা বন্ধ করে বাঁচবে – সে উপায়ও নেই, পায়ের নিচের মাটি এক মিটারের বেশি বরফ হয়ে জমাট বেঁধে গেছে। গোয়ালে গরু, খামারে শুয়োর, ঘোড়া, অন্যান্য পশু পাখিরা জমাট বেঁধে – কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে – সবাই প্রাণহীন। মোরগদের মাথার গর্বিত ঝুঁটি-অবধি জমে শক্ত হয়ে খসে খসে পড়ছে।
বাইরে দুম দুম করে আওয়াজ। কাচের জানালা দিয়ে দেখা গেল – গাছের গুঁড়ি, শাখাপ্রশাখা সব বিস্ফোরণে ছিটকে যাচ্ছে, কারণ তাদের ভেতর দিয়ে চলাচল করা প্রাণরস (sap) জমাট বেঁধে গেছে। মানব শরীরের শিরা-উপশিরা যে ফেটে যায়নি – এই না কত! রুটি (bread) জমে এমন অবস্থা, যে কোথাও কোথাও তা টুকরো করতে হয়েছে কুড়ুল দিয়ে।