“One grows out of pity when it's useless. And in this feeling that his heart had slowly closed in on itself, the doctor found a solace, his only solace, for the almost unendurable burden of his days. This, he knew, would make his task easier, and therefore he was glad of it…… To fight abstraction you must have something of it in your make up. But how could Rambert be expected to grasp that? Abstraction for him was all that stood in the way of his happiness. Indeed, Rieux had to admit the journalist was right, in one sense. But, he knew too, that abstraction sometimes proves itself stronger than happiness; and then, if only then, it has to be taken into account.”
প্লেগের মহামারীর ভয়াবহতার মুহূর্তে, মৃত্যুর মিছিলের উলটোপথে হেঁটে অনিবার্যকে থামানোর প্রচেষ্টায় এক চিকিৎসকের অস্ত্র হয়ে থাকে abstraction। এই abstraction ভিন্ন চিকিৎসক-নায়কের অন্য কোনো পথ ছিল কি? কিন্তু, সেই আপাত-অনাসক্তিকে সমকাল না বুঝতে পারলে? বা ভুল বুঝলে? উপরের দীর্ঘ অংশটি আলব্যেয়ার কামু-র দ্য প্লেগ উপন্যাস থেকে উদ্ধৃত।
সেই abstraction আর বিমূর্ত চিত্রশিল্পের abstraction, এই দুয়ের মধ্যে সাযুজ্য কোথায়, আর অমিলই বা কোথায়? প্রশ্নটা আজগুবি শোনালেও খুব অবান্তর কি?
আধুনিক ভারতীয় শিল্পকলার অন্যতম প্রধান শিল্পী গণেশ হালুই যখন বিমূর্ততা প্রসঙ্গে বলেন, “অভ্যাসগত আবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষাই হল abstraction.”, সেই abstraction কি কামু-র নায়কের abstraction থেকে খুব ভিন্ন জাতের কিছু?
চিকিৎসক-নায়কের abstraction বুঝতে চাননি উপন্যাসের আরেক চরিত্র। ভুল বুঝেছিলেন তাঁকে। সেই প্রসঙ্গেই চিকিৎসকের ওই কথাগুলো।
আমজনতাও কি বোঝেন বিমূর্ত চিত্রশিল্পকে? বা, সেই ছবির পেছনে মুখ লুকিয়ে থাকা মানুষটিকে?
প্রায় জনমানবহীন এক আশ্চর্য নিসর্গকে রঙ-তুলিতে ধরতে চেয়ে গণেশ হালুই বারবার ভুল-বোঝার শিকার হয়েছেন। সমকালীন চিত্রধারার আপাত-দৃশ্যমান সমাজমুখিনতার বিপ্রতীপে তাঁর বিমূর্ত নিসর্গকে ফেলে তাঁর শিল্পকে সমাজবিমুখ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। মিতবাক, বিনয়ী মানুষটি উত্তর দিতে পারেন নি এই অভিযোগের। নাকি দিতে চাননি? আজ এক আত্মকথনে তিনি যখন বলেন,
“এখন আমি একজন ছবি আঁকিয়ে। অনেকের মতে আমার ছবিতে মানুষের কথা নেই। আমি এর উত্তর খুঁজি।
নির্ঘাত মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠাতেই মানুষ মৃত্যুর কথা ভোলে এবং এই ভোলার মধ্যেই যে আনন্দের ধারা, তাতেই সেই মৃত্যুর সুর বাজে।”
সেও কোনো উচ্চকিত জবাব নয়, এ এক নিভৃত মনোলগ। নিজের সাথে নিজের কথা।
হ্যাঁ, দেবভাষা প্রকাশিত শিল্পী গণেশ হালুই-এর “আমার কথা” বইখানি সব অর্থেই এক প্রচারবিমুখ শিল্পীর নিভৃত স্বকথন। দেবভাষা-কে ধন্যবাদ, শিল্পীর সেই ঘরের বাইরে আমাদের দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে। পর্দার আড়াল থেকে শিল্পীর সেই কথাটুকু আমাদের শুনতে পারার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে।
একেবারে ছোটবেলার গল্প, অল্পবয়সে বাবাকে হারানোর কথা, সর্ব-অর্থেই অতীত হয়ে যাওয়া এক ওপার বাংলার নদীনালাভিত্তিক জীবনের কোলাজ, মাছ ধরা-ঘুড়ি ওড়ানোর দিনযাত্রা থেকে শুরু হয়ে দেশভাগ, রিফিউজি কলোনি, অসহ দারিদ্র্য - সবকিছুকেই শিল্পী ধরেছেন তাঁর আস্তিনে লুকিয়ে থাকা abstraction দিয়ে। রিফিউজি শিবিরে মানুষের নীচতা, বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা, মুখে-মারি আদর্শবাদীর দ্বিচারিতা - সবটুকুই ধরা আছে এক আশ্চর্য নির্লিপ্ত ক্লেদহীন শব্দের মায়াজালে।
তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠা, শান্তিনিকেতনে গিয়ে পান-সিগারেটের দোকান দেওয়ার সদুপদেশপ্রাপ্তি, কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া, অজন্তার অভিজ্ঞতা, আর্ট কলেজে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা - স্বল্পপরিসরে শিল্পী ধরেছেন সবকিছুই। না, বিস্তারে নয়, তাঁর চিত্রকলার অন্যতম যে ধর্ম, সেই মিনিমালিস্ট দক্ষতার পরিচয় তাঁর লেখাতেও। ছোট ছোট আঁচড় - শুধু তুলির পরিবর্তে এইখানে কলম।
এ এক অসামান্য স্মৃতিচারণ। সরাসরি ছবি নিয়ে কথা খুব একটা নেই৷ নাকি, পুরোটাই ছবি নিয়েই?
ছবির কোনো মেড-ইজি হয় না। ছবিকে বুঝতে হলে ছবির সামনে দাঁড়ানো, দাঁড়িয়ে থাকাই একমাত্র পথ। গণেশ হালুই সেদিন কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন, ছবির জগতে তো কোনো কথাবার্তা নেই, এটা তো কোনো উচ্চকিত কথার জগত নয়, ছবি কথা বলে না।
সত্যিই কি বলে না? কথা না বললেও, কথোপকথন তো চলেই, ছবির সঙ্গে, ছবির আড়ালে মুখ লুকিয়ে থাকা শিল্পীর সঙ্গে।
শিল্পী গণেশ হালুই-এর হয়ে ওঠা, তাঁর ছবির হয়ে ওঠা, তাঁকে, তাঁর অসামান্য ছবিকে বুঝতে হলে - হ্যাঁ, এই বইখানা একটা ছোট পথনির্দেশিকা হয়ে উঠতে পারে।
অনবদ্য পাঁচটি ড্রইং এই বইয়ের সম্পদ। মরা ঢ্যাঁড়সের খেত-এর দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকুন কিছুক্ষণ। পরবর্তীতেই বিমূর্ত জ্যামিতিক রেখার বিন্যাস। কথার ফাঁকে ফাঁকে বারবার ফিরে আসতে হবে ছবিতে। শুরুতেই ব্যবহৃত ড্রয়িং পোকায় খাওয়া পাতা। জীবনের একটা বড়ো অংশ, বা হয়ে ওঠার সময়ের সিংহভাগই কেটেছে কষ্টে, দারিদ্র্যে, অনিশ্চয়তায়। তবুও, এই স্মৃতিচারণে তদজনিত তিক্ততার লেশটুকুও নেই। তাঁর পোকায় খাওয়া পাতা কি সবুজ, নাকি ঝরে পড়ার প্রাকমুহূর্তে? না, এই ড্রয়িং শুধুই কালো রেখায়, রঙহীন।
ভালো কাগজে চমৎকার ছাপা বইটি। সুন্দর মুখে ছোট্ট তিলের মতো একটি বা দুটি মুদ্রণপ্রমাদ। নিরাভরণ, ছিমছাম অনবদ্য প্রচ্ছদখানি শিল্পী কৃষ্ণেন্দু চাকীর আঁকা।