আবারো কাঠগড়ায় আপনজনেরাই। তবে এবারে সত্যিই কাঠগড়ায়।
নেহা দীক্ষিত
অনুবাদঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক
২০১৩। বছরের প্রথম দিন। প্রিয়ার পরিবার অপেক্ষা করছিল, টিভিতে ‘আজ তক’এর ক্রাইম শ ‘ওয়ার্দাত’ কখন শুরু হবে। শামস তাহির খান, এই অনুষ্ঠানের গত দশ বছরের সঞ্চালক তো উত্তর ভারতে একরকমের সেনসেশন। একবার খবর ছড়িয়ে পড়লো, উনি অমুক ট্রেনে আছেন, ব্যাস, উত্তরপ্রদেশের ছোট শহরটাতে সেবার ভক্ত আর অটোগ্রাফশিকারিদের ঠ্যালায় সেই ট্রেন লেটই হয়ে গেল! ‘আমার নিজেকে খুব আত্মবিশ্বাসী লাগে, ওঁর ক্রাইম স্টোরিগুলো দেখতে দেখতে। আমি কখনো কোন এপিসোড মিস করিনি’, প্রিয়া বলছিল।
সেদিন, রাতের খাওয়াদাওয়ার পর প্রিয়া আর তার দুই ভাই অপেক্ষা করছিল,অনুষ্ঠানটার পুনঃপ্রচারের জন্য। শুরু হতে তখনো কুড়ি মিনিট বাকি। টিভিতে খবর হচ্ছিল, ২০১২র ১৬ ই ডিসেম্বর নির্ভয়ার সেই গণ-ধর্ষণ ও হত্যার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে।
‘দুটো রিপোর্ট দেখানো হয়েছিল। নির্ভয়ার বাবা ওর ছাই গঙ্গায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, প্রথম খবরটা সেই নিয়ে ছিল। দ্বিতীয়টা ছিল, ঐ ঘটনা নিয়ে নতুন কিছু প্রতিবাদের খবর সংক্রান্ত, আমারই বয়সী কিছু মেয়ে দিল্লির ইণ্ডিয়া গেটে প্রতিবাদ করছিল। আমি অনুষ্ঠানটা দেখছিলাম আর মা বকাবকি করছিল। বাবার ডাকে সাড়া দিচ্ছিলাম না বলে। বাবা নিজের ঘরে ডাকছিল।‘সেই রাতে, প্রিয়াকে তার বাবা ধর্ষণ করে, যেমনটি করে এসেছে, গত নয় বছর ধরে’।
প্রিয়ার বয়স ২৫, লখনৌএর এক কলেজ থেকে কলাবিদ্যায় স্নাতক। প্রিয়ার বাবা, রমেশ সিং, বয়স ৫০, ভারতীয় রেলের কর্মচারী। কুড়ি বছর আগে, লখনৌয়ের রেল ওয়ার্কশপে ফিটারের চাকরি নিয়ে রমেশ বিহারের বস্তার জেলার দুমরাও থেকে চলে আসেন। জাতে রমেশ ক্ষত্রিয়, এখন মাইনে পান মাসে ১৬০০০ টাকা। প্রিয়া দশম শ্রেণী পর্যন্ত উত্তর প্রদেশের মুঘলসরাইয়ে দাদু দিদার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছিল। পড়ার খরচাপাতি দিদাই দিত। ২০০৫ সালে মা বাবার কাছে লখনৌতে চলে আসে। প্রিয়ার বয়স তখন ১৬।
প্রিয়ার কথায়, “প্রথম যেবার এটা ঘটে, মা তখন রান্নাঘরে। বাবা একটু আগে কাজ থেকে ফিরেছে।আমি বাবার ঘরে গিয়েছিলাম, চা দিতে। বাবা দরজাটা বন্ধ করে দেয় আর আমার সালওয়ার ধরে টান মারে। আমি চেঁচিয়ে উঠেছিলাম যখন আরো এগোতে শুরু করল, কিন্তু বাবা চুপ করিয়ে দিল, বললো আমি চেঁচালে জিন কুপিত হবে –বলতে বলতে প্রিয়া নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, শূন্যদৃষ্টিতে। পরে ওর বাবা ওকে বুঝিয়েছিল, প্রিয়ার উপর যে জিনটা ভর করেছে, সেই মাঝে মাঝে বাবার উপরেও চড়াও হয় আর ধর্ষণ করিয়ে নেয়।
প্রিয়া যখন মাকে জানালো, মা বললো চুপ করে থাকতে। মা পড়াশুনো শেখেনি কখনো, বাড়ির বাইরেও পা দিয়েছে ক্বচিৎ কদাচিৎ। অমিত, প্রিয়ার এক বছরের ছোট ভাই। অমিতকে যখন প্রিয়া বাবার কথা জানালো, সেই রাতেই অমিত ওকে ধর্ষণ করে।“ও খুব গোদাভাবে আমাকে বললো যে এটা ও করছে নিজের তৃপ্তির জন্য”, প্রিয়া জানালো।
এইসব জিনটিনের গল্প প্রিয়ার পরিবারে নতুন নয়। “আমার ঠাকুর্দার ছোট ভায়ের বৌ অনেক দিন আগে মারা গেছে। সেই থেকে সে আমাদের বাড়ির অনেককে ঝামেলার ফেলেছে। প্রত্যেকবারই , যখনই কেউ না কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, দোষ হয়েছে জিনের”, প্রিয়া এই তথ্যটা জানায়। ওর বাবা ওকে এও বলেছিল যে,ওদের ‘গুরুজি’ রমেশ তিওয়ারি, লখনৌএর কাছের ছোট শহর সীতাপুরের এক তান্ত্রিক, যিনি তাঁর ‘ক্ষমতা’বলে এর আগে এক সম্পত্তির ঝামেলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন, তিনিই মেয়েকে ধর্ষণ করার প্রস্তাব দেন। ২০০৯ সালে, এই গুরুজি যখন ওদের বাড়িতে আসেন, প্রিয়া একান্তে দেখা করেছিল, এবং এই নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। উনি অস্বীকার করেন আর এর পর কখনো ওদের বাড়িতে আসেনওনি।
“পয়লা জানুয়ারি,যখন বাবা আমাকে ধর্ষণ করছিল, তখন আমার পুরো পরিবার, আমার মা আর ছোট দুই ভাই বাইরের ঘরে বসে ওয়ারদাত দেখছিল, আমার কানে আসছিল, ইন্ডিয়া গেট থেকে একটা ছেলে বলছে, ‘আমরা চাই নির্ভয়ার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক। আমাদেরও মা, বোন, মেয়ে আছে।’ শুনে আমার অসহ্য লাগছিল। যাদের বোন এবং মেয়ে আছে, তারা ধর্ষণ করেনা? আমিই কি একা এভাবে ধর্ষিতা হই? ... ২০১২র ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে ১৯৬৩টি নথিভূক্ত ধর্ষণের মধ্যে মাত্র বারোটি পারিবারিক নিকট সম্পর্কযুক্ত(ইন্সেস্টিয়াস)ধর্ষণ।
বছরের পর বছর প্রিয়া দেখেছে, ওর মা কীভাবে বাবার কাছে নিপীড়িত হচ্ছেন। “বাবা বাড়িতে অন্য লোকজন আসা পছন্দ করত না। এমনকি বাড়িতে এলে খারাপ ব্যবহার করে নিজের আত্মীয়দেরও দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। ২০০৮ সালে আমার দিদা, যার কাছে আমি বড় হয়েছিলাম, তাকেও তাড়িয়ে দেয়।” প্রিয়ার দাদু দিদা এক বছরের মধ্যেই মারা যান।কারুর কাছে কোনরকম নৈতিক সমর্থন না পেয়ে প্রিয়ার মনে হতে থাকে, বিয়ে করলে হয়তো শান্তি মিলবে। ওর বয়সী সব মেয়ে, ওর কলেজের বন্ধুরা, তুতো বোন, সবার বিয়ে হয়ে গেছিল।কিন্তু না, সেই দরজাটাও ওর জন্য বন্ধই ছিল।“আমি এই নরকযন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতেও ভীষণভাবেই বিয়ের আশা করেছিলাম, কিন্তু যারা আমার বিয়ের প্রস্তাব আনছিলেন, তাঁদের সাথেই আমার বাবা আর ভাই খুব বাজে ব্যবহার করছিল। এরকম তিনবার হয়েছিল।”
আমি ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও যদি শারীরিক তৃপ্তিই চাই তো একটা বিয়ে করছে না কেন? ও সেটা পারবে না, এই বলে ও চলে গেল। পরের দিন বিকেলে ও আবার আমার কাছে এল, আমাকে মারলো ও সোডোমাইজ করলো।
প্রিয়া ক্রমশঃ অস্থির হয়ে উঠছিল। মায়ের সাহায্য নিয়ে বারবার গর্ভপাত করাতে করাতে আর পেরে উঠছিল না।“আমি কলেজে যেতে পারতাম না, আমাকে রান্না করতে হত আর তার সাথে আমার বাবা আর ভাই আমাকে ধর্ষণ করে যেত, এমনকি আমার গর্ভপাতের দুই দিন পরেও। আর মা এমন ভাব দেখাতো যেন কিছুই হয়নি”।
দিল্লির ধর্ষণকাণ্ডের পর দিল্লিতে নানা প্রতিবাদ দেখতে দেখতে প্রিয়া ভাবতে থাকে, “কাগজে যেসব কেস আসছে, আমি তো তাদের মতই একজন। আয়নার মত নিজেকে দেখতে পাচ্ছি”। বিয়ের যখন আর কোন আশাই নেই, প্রিয়ার সামনে একটাই রাস্তা খোলা ছিল, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের উপায় দেখা, কোন চাকরিবাকরি। “আমার বাবা স্নাতকোত্তর পড়াশুনার জন্য টাকা দেবে না বলেছিল। আমি বললাম, তাহলে আমাকে কলসেন্টারে কাজ করতে দাও”, জোরগলায় প্রিয়া বলে।
প্রিয়া একটা জ্যোতিষ সংস্থার কল সেন্টারে তিন মাস কাজ করলো, মাসিক চার হাজার টাকা বেতনের বিনিময়ে।একটা সেলফোন কেনার মত টাকা জমে গেল।“আমি জানতাম, সাহায্য চাইতে গেলে এটাই আমার প্রথম দরকার হবে”। এদিকে প্রিয়ার বাবা নাইট-শিফট নিয়ে আপত্তি তোলা শুরু করলেন, রাতে আর নিজের যৌনখিদে মেটানোর জন্য প্রিয়াকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা যে। চাকরিটা ছাড়তে হল। “আমি সমানে ভেবে যাচ্ছিলাম, কীকরে বাবাকে এড়িয়ে চলা যায়, কীকরে কাজ করা যায়, কীকরে বাইরে বেরোনো যায়, কীকরে একটা সমাধান বের করা যায়!”প্রিয়া বলে, হাতের মুঠি তুলে। প্রিয়া ভেবেচিন্তে একটা বিউটি পার্লারে ট্রেনিং কোর্সে ঢুকলো। প্রথম দুমাসের শিক্ষানবিশির পরে প্রিয়া হাতে কিছু টাকা পেতে শুরু করলো আর অনেক খদ্দেরের সাথে আলাপ হয়ে থাকলো। এরকম এক খদ্দেরের কাছেই প্রথম অখিলেশ যাদবের জনদরবার নিয়ে শোনা।
গত বছর এপ্রিলে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব সরকারি বাসভবনের দরজা সাধারণ জনগণের জন্য খুলে দিয়েছিলেন,হপ্তায় দু’বার জনদরবার। এটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, বিশেষ করে এর আগের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী পাঁচ বছরে কোনরকম জনশুনানি করেন নি বলে।
“আমি প্রায় একমাস এনিয়ে ভেবেছিলাম। একমাস ধরে কাগজে এই নিয়ে পড়েছিলাম, শেষমেশ একটা আবেদনপত্র লিখেই ফেললাম, বিউটি পার্লারে বসে বসে। কাউকে এনিয়ে কিচ্ছুটি বলিনি। বললে কি কেউ বিশ্বাস করতো, আমাকে আমার বাবা আর ভাই ধর্ষণ করে! আমি ভয় পাচ্ছিলাম, কিন্তু আমার কিছু টাকা ছিল, আর ছিল একটা সেলফোন, ঝাঁপটা দিয়েই ফেললাম। ৪ঠা সেপ্টেম্বর, প্রিয়া বাড়ি থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিল, বাড়িতে বলেছিল বেরোজগারি ভাতা আবেদনপত্র জমা দিতে যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা মাসিক ১০০০ টাকা বেকার ভাতার জন্য নাম নথিভূক্ত করতে। ‘বিক্রম’, লখনৌতে চালু ডিজেল টেম্পো, তাতে চড়ে প্রিয়া সিধে গিয়ে হাজির হল শহরের মধ্যিখানে অখিলেশ যাদবের বাসভবনে।
“ওখানে এক বিশাল লম্বা লাইন ছিল, প্রচুর লোক একটা বড় হলের মধ্যে বসে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক আমার সামনেই বসে ছিলেন। আমার ডাক এল এক ঘণ্টা পরে। আমার আবেদনপত্র পড়ার সাথে সাথেই উনি ওটা ওঁর পাশে দাঁড়ানো ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে দিলেন। আমাকে বললেন, আমি খুব সাহসী, আমি যেন কান্নাকাটি না করি।”এক ঘণ্টার মধ্যে, মহিলা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার শিভা শুক্লার ডাক পড়লো আর এফআইআর ও হয়ে গেল। “সেদিনই আমরা প্রিয়ার ভাইকে গ্রেপ্তার করি, ওর কাজের জায়গা নতুন হওয়া ফিনিক্স মলের আডিডাসের দোকান থেকে আর তারপরে বাবাকেও গ্রেপ্তার করি, রেলওয়ের ওয়ার্কশপ থেকে। আশ্চর্যজনকভাবে, দুজনেই বিনাবাক্যব্যয়ে অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিল”, শুক্লা জানান।
প্রিয়াকে একটি এনজিও পরিচালিত একটা শেলটার হোমে পাঠানো হয়। প্রিয়া বেশ কিছু ফোনকল পায়, প্রতিবেশী আর মামাবাড়ি থেকে, তারা জানায় প্রিয়ার পাশে আছে। অবশ্য প্রিয়ার মা-কে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে এসব কিছু তাঁর জ্ঞানত হয়েছিল, সেকথা অস্বীকার করেন। প্রিয়ার ভাই পুলিশকে জানিয়েছিল সে যা করেছিল, নিজের তৃপ্তির জন্যই করেছিল। আর বাবার বক্তব্য ছিল, তার মন সাময়িকভাবে জিনের প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছিল। না, প্রিয়াকে দেওয়া অজুহাতের কথা আর বলেনি। দুজনেই এখন জেলে, দুজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।
প্রিয়াকে যথেষ্ট ভাগ্যবানই বলা যেতে পারে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবং একটি পাবলিক প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সাহস করে যাবার ফলে এত তাড়াতাড়ি আইনি সাহায্য পেয়ে গেছিল, অনেক মহিলারই সেই সুযোগ ঘটে না। ২০১৩র মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনীকুমার রাজ্যসভায় জানিয়েছিলেন, দেশে অন্তত ২৪০০০ ধর্ষণের কেস এখনো রায়ের অপেক্ষায় এর মধ্যে ৮২১৫টি কেবল এলাহাবাদ হাইকোর্টেই। লখনৌর নিম্ন আদালতের অবস্থাও কিছু সুবিধের নয়, সেখানে এরকম কেসের সংখ্যা ৬০৫, তার মধ্যে ৫৪টি গণধর্ষণের কেস। ৩৭৩টি কেস ট্রায়াল অধীন, ৩৪টি গণধর্ষণ ও ১৪৪টি রেপ কেস ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে সেসন কোর্টে যাবার অপেক্ষার।
ভারতে রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয়দের মধ্যে যৌন নির্যাতন নিয়ে কোন আলাদা আইন নেই। অপরাধীরা যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত হয়। অথবা, নির্যাতিত নাবালক হলে, কাস্টডিয়াল অপরাধ হয়। এই ইস্যু নিয়ে বিতর্কের মধ্যে প্রায়ই “পারিবারিক মূল্যবোধ”এর ফ্যাক্টর চলে আসে। অতি নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যৌন নির্যাতন নিয়ে শিভা শুক্লাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।শিভা মেয়েদের কেস নিয়ে এমনিতে বেশ সহানুভূতিশীল, কিন্তু এই ইস্যুতে তাঁর ইতস্ততঃ উত্তর ছিল,“৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এধরণের কেস মিথ্যা হয়। কিছুদিন আগে এম বি বি এস পাঠরতা একটি মেয়ে একটি মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করতে চায়।মেয়েটি তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে। বাবা মা রা আজকের দিনেও ততটা উদার হয়নি যে মেয়েকে তার জীবনসঙ্গী নিজে পছন্দ করতে দেবে। সেরকম হলে আজকালকার মেয়েরা এটা ভুলে যায় যে তাদের পড়াশুনার পিছনে মা বাবা কী বিশাল পরিমাণে ব্যয় করেছে, আর বদলে এধরণের অভিযোগ আনে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।” ইন্সপেক্টর শিভার এই কথা কিন্তু বেশ চিন্তাজনক। এই একই যুক্তিধারা প্রিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হলে প্রিয়াকেও মিথ্যাবাদী ও অনৈতিক বলে অভিযুক্ত হতে হত এবং সেটা হলে ভুল হত।
‘ভয়েসেজ ফ্রম সাইলেন্ট জোন’– দিল্লির একটি এন জি ও ‘রাহি’(রিকভারিং এন্ড হিলিং ফ্রম ইন্সেস্ট), যারা শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন নিয়ে কাজ করে, তাদের রিপোর্ট। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত ভারতীয় পরিবারে অন্তত তিন চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা পরিবারের কারুর দ্বারা, বেশিরভাগ সময়েই কাকা,মামা, তুতো-ভাই বা বড় দাদার দ্বারা যৌন নির্যাতিত হয়। ‘রাহি’-র ফাউন্ডার ও এক্সেকিটিভ ডিরেক্টর অনুজা গুপ্তার কথায়,“এই বিষয়ে কোন কঠোর আইন না করার অর্থ এই ইস্যুটাকেই সিরিয়াসলি না নেওয়া। এই নিয়ে কোন কঠিন শাস্তি আইনি করতে হলে আগে স্বীকার করতে হবে এধরণের যৌন নির্যাতন সত্যি হয়। কিন্তু আমরা তো সেটাই স্বীকার করি না।সারা পৃথিবীর জন্যই এটা সত্য, এবং মুখোমুখি হবার জন্য খুবই কঠিন সত্য।”
এই অস্বীকারের মনোভাবই এধরণের কেস রিপোর্টিং এর সংখ্যা এত কম হবার জন্য দায়ী। ভুবন রিভু, এক আইনজীবী এবং শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা এন জি ও ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন’ আক্টিভিস্ট বলছিলেন,“স্কুলের মধ্যে একটা ঠিকমত সিস্টেম তৈরি হওয়া জরুরি, যেখানে বাচ্চাদের শেখানো হবে, পরিবারের মধ্যে এধরণের নির্যাতন হলে রিপোর্ট করাটা উচিত। কিন্তু এই ব্যাপারে কোন উৎসাহই দেওয়া হয়না, আমাদের মূল্যবোধের দ্বিচারিতার জন্য।আমরা বছরে এরকম কেস মাত্র একটা বা দুটো পাই।”
প্রিয়া এখন ওর শেলটার হোমের রান্নাঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত। শেলটারের বাকিদের মধ্যে ও খুব জনপ্রিয়ও। প্রিয়া এখন সি প্লাস প্লাস শিখছে,একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য আবেদনপত্রও পাঠিয়েছে। এই কিছুদিন আগে করওয়া চৌথের সময় কাছের এক বিউটি পার্লারে মেহেন্দি করে ২০০০ টাকা রোজগার ও করেছে।যাঁরা ন্যায়বিচারের দাবি করতে গিয়ে যেকোন মেয়ের কথা না বলে আলাদা করে মা, বোন, মেয়ের উল্লেখ করে থাকেন, প্রিয়ার গল্প তাঁদের জন্য একটা শিক্ষা। .
(নাম পরিবর্তিত) মূল লেখাঃ http://www.openthemagazine.com/artic।e/true-।ife/fathers-brothers-and-other-demons