এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই

    সায়ন্তন চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৭ মে ২০২০ | ৩০২৬ বার পঠিত
  • এঁটো পাতের পাশে মাছের কাঁটার মতো শহরের উপকন্ঠে সে নিরবিচ্ছিন্ন পড়ে রয়েছে বেড়ালের অপেক্ষায়, — আর প্রত্যেকদিন এই শহরটা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ তার মাথায় পড়িয়ে দম বন্ধ করে মেরে ফেলতে চায়; সে ভুলেই গেছে শেষ কবে জেগে উঠে মরে যাবার কথা ভাবেনি, অথচ এই মুহূর্ত পর্যন্ত তার রুলটানা জীবন সাক্ষ্য দেয় যে সে আজও আত্মহত্যা করেনি। এটা অনেকের কাছে একটা আশ্চর্য ব্যাপার বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তাদের কেউ কেউ জানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বন্দুকের সামনেও হাই ওঠে, দাবনা চুলকোয়। সাধারণত শহরতলির ফায়ারিং স্কোয়াডগুলো একটু গলিঘুঁজির ভেতরে হয়ে থাকে, মোড়ের সেলুনে জিগ্যেস করলে অবশ্য নাপিত কাঁচি না থামিয়েই চট করে বলে দেবে, তারপর কতিপয় বেলুনবিক্রেতা অথবা ঘুগনিওয়ালার গালে বসন্তের দাগ লক্ষ্য করে কম্পাস ও মানচিত্র সতর্ক রেখে সে এসে পৌঁছেছিল এইখানে এগারো বছর আগে, গত এগারো বছর ধরে এভাবেই সুবিমল এসে পৌঁছাচ্ছে এই শ্যাওলা-ধরা-চুনখসা-রোদ না ঢোকা, টিটেনাস সম্ভাবনাপূর্ণ ভাঙা লোহার গেট লাগানো, নর্দমার পূতিগন্ধ-সমাকীর্ণ ভাড়াবাড়িটার সামনে, যেখানে পৃথিবীর আর কেউ কখনও পৌঁছতে চায়নি কোনোদিন। গেটটার গায়ে হাত রেখে অন্যহাতে কয়েকটুকরো মাছসুদ্ধু পলিথিন ব্যাগটা ঝুলিয়ে সে দুইমুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল আজ; আজ কত তারিখ হবে, ধরা যাক তেরোই আষাঢ়। এই তেরোই আষাঢ়ে এসে তাকে পৌঁছতে হল একথা জানতে, এতগুলো ঋতু সুখে-দুঃখে-আত্মমৈথুনে কাটিয়ে দেবার পরই কেবলমাত্র — আজ, জানল সে, সুবিমল ও সুবিমলের বাস্তবতা এক জিনিস নয়। অথচ অন্যরকম বিশ্বাস করানো হয়েছিল তাকে। এগারো বছর আগে কোনো এক তেরোই আষাঢ় তার বিয়ে হয়েছিল শ্যামলীর সাথে, বাড়ি ফিরে স্যাঁতসেঁতে পেছল বাথরুমে ফাটা শার্সির সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে হিমশীতল জল ঢালতে ঢালতে ভাবছিল সে, এগারো বছর কেটে গেল দেয়ালের অন্ধ টিকটিকির সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করে, মাঝে মাঝে তাকায় কালো নর্দমার দিকে; যেখানে দু-একটা বিছে কখনও সখনও — এরকম ভাবলে গা ঘিনঘিন করে। আয়রন জলে হলুদ হয়ে যাওয়া মগের তলাটা চোখে পড়লে মনে পড়ে একদিন ভোরে রাস্তার মোড় থেকে জল আনতে গিয়ে দেখেছিল কোনো পাগলি গু মাখিয়ে রেখেছে আগাগোড়া মিউনিসিপ্যালিটির কলে, একারণে সেইদিন থেকে প্রতিদিন তাকে দূরের কলে যেতে হয়েছে। দু'হাতে ছিপিআঁটা বোতলগুলো বয়ে ফিরতে ফিরতে সমস্ত সমস্যাটা সে স্পষ্টভাবে বুঝতে চেষ্টা করে। সকালের রোদ, পাখি ও অন্যান্য আয়োজনগুলি তার ভেতর থেকে চিরে চিরে বের করে আনে রক্তমাখা ফুসফুস। কোরানে উল্লিখিত উটের মতো সারাদিন রক্তমুখে ঘুরে বেড়ায় সুবিমল ক্রেতা ও বিক্রেতার সরণীগুলো ধরে। একটা প্রকৃত সত্যের দিকে ক্রমশ পৌঁছে যাবে, এই বিশ্বাস ছিল তার, যদিও বাস্তবে দেখা গেল চল্লিশ পেরিয়েও চার-পা এগোনো গেল না।

    মেয়ের জন্মের পরেই শ্যামলী বাড়ি থেকে আঁশবটি বিদেয় করে দিল, অগত্যা বাজার থেকেই মাছ কাটিয়ে আনতে হয় সুবিমলকে, মুড়ো ও দাগাগুলি কখনো শ্যামলীর পছন্দ হয়, কখনো হয়না; ল্যাজা সে মোটে সহ্য করতে পারে না। রক্তাক্ত মাছ ধুয়ে তাতে নুন-হলুদ মাখাতে মাখাতে শ্যামলীর চিবুক শক্ত হয়। জীবনটাকে অনেক মহোত্তর প্রেক্ষাপটে দেখেছিল সে, সুবিমলের চেয়ে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয় ছিল তার; কোনোদিন খোলা রেললাইন পেরোতে গিয়ে সামনে ধাবমান ট্রেনটি শেষ হওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে করতে তার ভয় করেনি যদি সে মুহূর্তের টানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে হেলথসেন্টারের কাজটা পেয়ে যাবার পর শ্যামলী কোনো দোনামোনার মুখোমুখি হয়নি। তার ভাল লেগেছিল এই ভেবে যে, একটা সামাজিক সার্থকতার নিকট ক্রমে ক্রমে আসা গেল। প্রচুর বৃষ্টিদিনে অন্ধকার হয়ে আসা বিকেলের ভেতর মোম জ্বেলে শ্যামলী নেড়েচেড়ে দ্যাখে উজলানো প্রয়াসের সফলতা-নিস্ফলতাগুলি। দেয়ালের দিকে চেয়ে সুবিমল স্থির হয়ে বসেছিল। তেরোই আষাঢ় আজ, মনে হল শ্যামলীর, মেয়েটা বিছানায় অঘোরে ঘুমোচ্ছে; অথচ এমন কোনো কথোপকথন নেই যা এখন একটা বাক্য থেকে শুরু হতে পারে। বাক্যগুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছে পরস্পরের, শব্দগুলো বিভিন্ন ঊর্ণনাভ অক্ষর, যারা আঙুল বেয়ে উঠে আসে হাতে, হাত থেকে কবজি ও অন্যান্য কনুই পেরিয়ে গিয়ে থামে প্রকৃত শরীরে, ও একারণে তাদের বিচিত্র পোশাক দেখে যেন মনে হয় অপর মানুষ, মানুষের মতো নির্মম উট সেজে অপেক্ষা করছে। সেই কবে সদ্য বিয়ের পর ডাকবাংলোর দোতলা বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে উষ্ণ চাদর জড়িয়ে দিয়েছিল সুবিমল শ্যামলীর গায়ে — জানো, এই জায়গাটা একেবারে স্বপ্নের মতন। ছোটবেলায় বেড়াতে যেতে চাইলেই বাবা জিগ্যেস করত, পাহাড় না সমুদ্র? তারপর কোথাওই আর যাওয়া হতনা। মন খারাপ হয়ে যেত। ঘুমিয়ে আমি স্বপ্নে দেখতে পেতাম এইরকম একটা জায়গা। সুবিমল পাহাড় ভালবাসত, শ্যামলী জেনেছিল, সমুদ্রে যাবার কথা কোনোদিন ভাবেনি সে। বাংলোর বেতের চেয়ারগুলো ছেড়ে উঠে গিয়ে সুবিমল বারান্দার রেলিংয়ে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিল — আশ্চর্য এই নেতারহাট জায়গাটা, একেবারে স্বপ্নের সাথে মিলে যাচ্ছে। এমনকি ঐ দূরের জঙ্গলে কাঠের বাড়িটা, কে থাকে ওখানে? দেখতে পাচ্ছ শ্যামলী? জলের ট্যাঙ্কের পাশ বরাবর দ্যাখো। — ধুস, জলের ট্যাঙ্ক কেন হতে যাবে? ওয়াচটাওয়ার ওটা! দেখা যাচ্ছিল বাংলোর পিছনে রাস্তাটা ঢালু হয়ে যেখানে ওয়াচটাওয়ার, তারপরে অনেক খাদে নেমে নদী, রোগা নদীর ওপাড়ে, পরে চৌকিদার বলেছিল কোনো এক খ্রীশ্চান সাহেবের বানানো ঘর। ওসব জায়গায় শুধু মরে যাওয়া মানুষেরা থাকে; আর থাকে মানুষের হাড়। তাদের চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, তবু সেই স্বপ্নময় জগতের কথা ভাবতে ভাবতে এক-একদিন অনেক গভীর রাতে বাল্বের হলুদ আলোর নীচে কপালের রগ টিপে ধরে সুবিমল বসে থাকে। শ্যামলী অন্যঘর থেকে চিলতে আলোয় দ্যাখে একটি জড়ভরত ছায়া ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। ঘরের চৌকাঠে এসে ইতস্ততঃ করে, তারপর ঘরে ঢোকে আস্তে আস্তে; মেঝেতে ছড়ানো খুকির খেলনাগুলো, কয়েকটা বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ছোট ছোট ঘোড়া, খুকিকে দেখতে পায় সুবিমল মশারির ভেতর ঘুমে অচেতন, শ্যামলীর পাশে; এইসব একদিন সুবিমল ভুলে যাবে, একথা ভাবতে ভাবতে সে শ্যামলীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। একসময় তার পা টানতে টানতে ঘর ছেড়ে চলে যাবার অলস শব্দে শ্যামলী বিস্মৃতি থেকে জেগে উঠে নিভিয়ে দিল মোমবাতিটা। সুবিমল তখনও চুনখসা দেয়ালের দিকে চেয়ে।

    স্বপ্ন দেখে মাঝে মাঝে সুবিমল জেগে ওঠে, কোনো দুঃস্বপ্ন নয়; সহজ মানুষ-জাগা রাতে নামহীন এক শৈলশহরে গিয়ে পৌঁছোয় সচরাচর। এই উপত্যকা, যেখানে অন্ধকার কুয়াশায় পাহাড়ী নেকড়েরা নেমে এসে নিঃশব্দে চোখ খুবলে টেনে নিয়ে চলে গেছে শিশুদের লাশ, এখানে সে আগেও এসেছে। আগেও থেকেছে ঐ হলুদ বাংলোর পুরনো দেয়ালঘেরা ড্যাম্প ঘরগুলোয়, তবু যেন ভুলে গেছে অথবা সূর্যোদয়ের দৃশ্য মিস করতে চায়না এইভাবে চৌকিদারকে হেঁকে সে জিগ্যেস করল — কোনদিকে সূর্য ওঠে এখানে? চৌকিদার অবাক হওয়া মাত্র কারণটা বুঝে সে লজ্জিতভাবে প্রশ্নটা পাল্টে ফ্যালে — পুবদিকটা কোনদিকে? সঠিকভাবে এ উত্তর জানতে পারা গেল না দেখে সুবিমল অসহিষ্ণুভাবে — কে? কে জানে আপনাদের মধ্যে? বারান্দায় সারসার চুরুটখোর অদৃশ্য পর্যটক এই চন্দ্রভুক আকাশের নীচে বিব্রত বোধ করে। ক্রমে ক্রমে মাঝরাতে তহশিলদার বাংলোর সামনে এসে অর্জুনগাছের গুঁড়িতে সাইকেলটা ঠেসিয়ে হিম-ভেজা টুপি খুলে মাথা নাড়ে; সমস্ত উপত্যকায় কেউ জানেনা কোনদিকে উঠবে সূর্যটা। অন্ধকারে মশার ধূপের কাছে বসে থাকতে থাকতে সুবিমলের ভয় করতে শুরু করে; ঝুঁকে সে গোড়ালির কাছটা চুলকোতে চায়। উঠে বাংলোর এঘর থেকে ওঘরে, এঘর থেকে ওঘরে শ্যামলীকে খোঁজে; দ্যাখে কেউ নেই শুধু মোমের হলুদ আলোয় বাদামী ফ্রেমে বাঁধানো তৈলচিত্রগুলি ছাড়া। একটা সবুজ তরল ভয় ক্রমে ক্রমে লোমশ নক্ষত্রের দিক থেকে মানুষের দিকে এগিয়ে আসছে এইভাবে তার হঠাৎ মনে পড়ে যায় এখানে শ্যামলী কোনদিন আসেনি তো! ঘুম ভেঙে আলো জ্বেলে কিছুক্ষণ বসে থাকে সুবিমল; ওঘরে শ্যামলী ঘুমোচ্ছে, পাশে মেয়েটাও। বসে থেকে থেকে বসে থেকে থেকে একথা সে মানে ঘুম হোক না হোক, শোওয়া দরকার। চোখ নিভিয়ে বালিশে মাথা ঠেকানো মাত্র পুরনো সেলুলয়েডের মতো তার মাথার ভেতর কিড়কিড় শব্দে চলতে শুরু করে প্রোজেক্টার মেশিন। নেতারহাটের সেই বাংলোটায় ওরা পৌঁছেছিল এক সন্ধ্যেয়; সরু প্যাঁচালো রাস্তা ভাঙা-ভাঙা হয়ে উঠে গেছে পাহাড়ে — রেলিংবিহীন, কোনো আটক নেই খাদের ধারে। বাসের জানলায় বসে মুখ ঝুঁকিয়ে দেখেছিল সুবিমল দু-চারবার বেসামাল হয়ে খাদের কিনারায় পেছনের একটা চাকা শূন্যে ঘুরতে ঘুরতে ফের মাটি ধরে নিল। নীচে কুয়াশা-জমা খাদ দেখতে দেখতে মাথা ঘুরিয়ে সুবিমল তাকিয়েছিল শ্যামলীর দিকে। নিম্নচাপের কারণে সেসময় পরপর কয়েকদিন ঘোলাটে আবহাওয়া; নেতারহাট পৌঁছে ওরা শুনেছিল টানা লোডশেডিং চলছে। স্রেফ মোমের আলো আর হ্যারিকেন, বাংলোয় এই ব্যবস্থা। অন্ধকার আর অচেনা জায়গা বলে রাতে ওরা শুয়ে পড়ত তাড়াতাড়ি। একদিন ঘুমিয়ে ঘুমের সবুজ নীচে অনেক অমসৃণ নুড়ি গোল করে চেতনার সমাচ্ছন্নতায় ঘুরে এসে হঠাৎ একটা চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে গেছিল শ্যামলীর। সুবিমলের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ দেখে প্রথমে হকচকিয়ে বুঝেছিল দুঃস্বপ্ন। জল-টল খেয়ে একটু স্বস্তি পেয়ে খোলা জানলার জাল পেরিয়ে শ্যামলীর চোখে পড়েছিল থকথকে চাঁদের আলোয় বাইরেটা ভেসে গ্যাছে। — যাবে বারান্দায়? — বলেছিল — চলো — বলেছিল সুবিমল।

    — বেঁচে থাকা সবচেয়ে ভালো — এইপর্যন্ত ভেবেছিলো শ্যামলী — তবুও অনায়াসে মরে যেতে পারি। মরে যাওয়া প্রিয়, প্রিয়তর — এরকম অনুভব করে বোঝা গেল এই দৃশ্যে আগেও এসেছি আমি, আগেও হেঁটেছি এই দ্রাঘিমার পাশে, মানুষ এমনই এক জলচর জীব। বাচ্চাদের ইঞ্জেকশন দেবার সময় নানারকম আগডুম-বাগডুম বকতে বকতে একহাতে চামড়ায় স্পিরিটে-ভেজা তুলো ঘষতে ঘষতে অন্যহাতে সিরিঞ্জটা যতটা সম্ভব অনুভূমিকভাবে ধরে সতর্ক যত্নসহ অতিসামান্য চাপে ছুঁচটা ঢুকিয়ে দেয় সে। ভালো লাগে তার সদ্যোজাতর মায়েদের বিভিন্ন ভ্যাকসিনের কথা বুঝিয়ে বলতে, চার্ট বানিয়ে দিতে; এইসব কাজ তার চিরকাল ভালো লেগে এসেছে। সুবিমলের মতো নিজস্ব একাকিত্বের জগত তার নয়; এই শ্রীহীন শহরতলির রাস্তায় ট্রেনের শব্দ শুনতে শুনতে হুশ করে গতি বাড়ানো গাড়ি আর পানের পিক বাঁচিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিকেলের আলোর ভেতর বৃষ্টিতে কাকভেজা কয়েকটা নেড়িকুকুরের মারামারির নিঃশব্দ দৃশ্য দেখতে দেখতে শ্যামলী একটা আটপৌরে শান্তির সুখ খুঁজে পায়। ঘুমের ভেতরে স্বপ্নের দূরতর কোণে এইখানে এই জল, জলঙ্গীর সন্নিকটে এসে শ্যামলীর মনে হয়েছিল — থিওডোলাইট পেতে আগেও দেখেছি চোখে লঘুসপ্তর্ষির আলো, বিভিন্ন গ্রহের ঋণগ্রস্ত নদী আমাদের চিন্তিত করেছে, তবু কী আছে অপ্রেমের মতো, মৃত্যুর মতো আমার জীবনে? বাড়ির কাছাকাছি গলিটায় এসে যখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, শ্যামলীর বাঁ-পায়ের চটিটার ফিতে ছিঁড়ে গেল। একহাতে ছাতা অন্যহাতে চটি নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা পেরেক বা কাঁকর বাঁচিয়ে ড্রেন ওপচানো নোংরা জল কাটিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির সামনে এসে দেখল বাইরের দরজার গোড়ায় সুবিমলের জুতোজোড়া। অর্থাৎ সুবিমল আগেই ফিরেছে। বাড়ি ঢুকে শ্যামলী হাত-পা ধোয়ার পর ঘরে উঁকি দিল, খুকি জানলার ধারে বসে আষাঢ়ের বৃষ্টি দেখছে, বিছানায় খেলনাগুলো ছড়ানো। রান্নাঘরে গিয়ে প্রথমে শ্যামলী খাবার জল আছে কিনা দেখল, তারপর গ্যাস জ্বালানোর জন্যে নীচু হয়ে সিলিন্ডারের গায়ে রেগুলেটরটা ঘোরাতে গিয়ে লক্ষ্য করল সিলিন্ডারের ওপাশে কোণে একটা চুপসানো পলিথিন পড়ে আছে আর পাশে একটা ঢাকা দেওয়া স্টিলের কানাউঁচু থালা। ঢাকাটা খুলে দেখল মাছগুলোয় নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখা। — অবেলায় মাছ আনলে? — বলেছিল শ্যামলী।
    — ল্যাজা নিইনি।
    — চটিটা ছিঁড়ে গেল আমার।
    — এই রে, খালিপায়ে ফিরলে? — সুবিমল বলল — আচ্ছা কাল আমি দেখি, সকালে বাজারের মুখে একজন মুচি বসে —
    — না থাক — ওভেন জ্বালতে জ্বালতে শ্যামলী।
    — কেন?
    — কেন?
    সুবিমল একটু চুপ করে থেকে — অনেকদিন আগে আমার একবার চটির ফিতে ছিঁড়ে গেছিল, মনে আছে? — না বলেই চলে গেল দূরে। শ্যামলী ভাবল, অনেকদিন আগে তোমার একবার চটির ফিতে ছিঁড়ে গেছিল যেন, থাক সে কথা। বৃষ্টির জন্যে লোডশেডিং, বিছানায় খেলনাগুলোর মাঝে এঁকেবেঁকে শুয়ে খুকি ঘুমিয়ে পড়েছে; কিছুক্ষণ পরে ঘরের ভেতরটা বেশ অন্ধকার হয়ে গ্যাছে দেখে ওভেনের নীল আগুনে একটা মোমবাতি ধরিয়ে এনেছিল শ্যামলী, যেটা খানিকবাদে নিভে যাবে।

    আলোহীন নির্জন ডাকবাংলোর বারান্দায় গায়ে চাদর জড়িয়ে শ্যামলী ও সুবিমল বসেছিল চাঁদের আলো দেখবে বলে। বড়ো বড়ো গাছেদের ছায়া কাঁপতে কাঁপতে বাংলোর সামনে মাটিতে ঘাসের ওপর, ঘাসহীন জায়গাটায় অথবা দূরে একটা জাল তৈরী করেছে। ঘোলাটে আকাশ খানিকটা পরিস্কার হয়ে গিয়ে চাঁদ উঠেছিল যেন, কী একটা জন্তু, হয়তো শেয়াল, হয়তো শেয়াল নয়, তবু পাটকিলে ধূসর, অথবা ধূসর নয়, অন্য কোনো রঙের জানোয়ার গলায় অনেকটা করুণতা নিয়ে থেকে থেকে ডাকছিল। পাখির বাসায় মুখ বাড়িয়ে গাছের ডালে জড়ানো খয়েরি সাপে টেনে নিচ্ছিল সাদা ছিটছিট ডিম। — ঘুমের মধ্যে তুমি কোথায় চলে যাও? এইখানে আসো তুমি? — হয়তো এখানে আসি, নদী পেরিয়ে ঐ দূরে চলে যাই জঙ্গলের দিকে ঐ কাঠের বাড়িটায়। রাইফেল হাতে ঐখানে বসে থাকত সাহেব, নদীর ওপর দড়ির সেতুটা পেরিয়ে পেরিয়ে হেঁটে যায় সুবিমল, সেতুর নীচে পূর্ণিমার রাতে মাংসাশী হরিণেরা জল খেতে আসে। কাঠের সিঁড়িতে পা রাখামাত্র মচমচ করে উঠল। ধোঁয়া-ধোঁয়া হিমহাওয়ায় ভেসে রয়েছে অনেকদিন আগে সাহেব অদ্ভুত মন্ত্র পড়তে পড়তে শয়তান আত্মা তাড়ানোর জন্যে যে রসুন পোড়াত, সেই গন্ধ। টসটস শব্দে, শুনতে পায় সুবিমল, সিঁড়ির পাশে আপেলগাছে ঝুলন্ত খরগোশের কাটা মাথা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে শিশিরের মতো রক্ত। থিরথির করে আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে মাকড়সার বাচ্চারা, হলদেচোখো সরীসৃপ ঘাসের ভেতর দিয়ে চলে যায় আরো অনেক ঘাসের ভেতরে। সিঁড়ি পেরিয়ে সুবিমল ঘরটার দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল। ধুলোময় ঘরটায় একটামাত্র জানলা। জানলা দিয়ে দেখা যায় ঘন জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়, যার মাথায় কারা যেন লাল আগুন জ্বেলেছে। কুয়াশায় সবকিছু ঢেকে যায়। রিনরিনে কান্না ভেসে আসে সারাক্ষণ। পাতা থেকে টপটপ জল পড়ার বিরামহীন শব্দ বয়ে চলে। জানলার পাশে একটি ভাঙা টেবিল। উল্টোদিকের দেয়ালে একটা ওয়ার্ড্রোবের মতো কিছু। গায়ে প্রায় অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া আয়না, যেটা আড়াআড়ি ঈষৎ বক্ররেখা বরাবর ফেটে গ্যাছে। এই স্বপ্নের জগত সুবিমলের একার। কী এক অদ্ভুত টানে সে এখানে এসে পৌঁছায়। এখানে পৃথিবীর সব নিয়ম উল্টোপাল্টা হয়ে আছে যেন। এখানে শ্যামলী কোনোদিন আসবে না? শ্যামলীর দিকে তাকায় সে। — যাবে? — কোথায়? — চলো, ঐ ওয়াচটাওয়ারের মাথায় গিয়ে বসি। একটু পরে ভোর হবে। হয়তো জন্তুজানোয়ার জল খেতে আসবে নদীতে। একটু ইতস্ততঃ করে শ্যামলী — এত রাতে? তারপর ওরা বেরিয়ে পড়ে। সামান্য হাঁটতেই পৌঁছে যায় ওয়াচটাওয়ারটার কাছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে সুবিমলের চটির স্ট্র্যাপটা ছিঁড়ে যায়।
    — যাঃ! কী হবে?
    — থাক, পড়ে থাক এখানে।
    — ফেরার সময়?
    — আমারটা পরে নিও। এইটুকু রাস্তা আমি হাঁটতে পারব চটি ছাড়া।
    — ধ্যাৎ — সুবিমল হাসল। তারপর ওরা গিয়ে বসল ওপরে। সমস্ত উপত্যকার রূপ দেখতে দেখতে একটু পরে চাঁদ ডুবে গেলে মেঘে ওরা দুজন দুজনকে কাছে টেনে আদর করেছিল।

    সবকিছু শেষ হয়ে আসছে শ্যামলী জানে। সুবিমলের মাথার ভেতরের ঐ আলোআঁধারি জগত একদিন ওকে গিলে নেবে; আর ফিরতে দেবে না এই ক্ষয়াটে শহরের বাস্তবতায়। সুবিমল টের পায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠতে গিয়ে পা টলে যায়। ভুল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আধঘন্টা পরে বুঝতে পারে ঠিকানা ভুলে গেছে। মাঝে মাঝে মাথার ভেতরটা ছিঁড়ে যায় যন্ত্রণায়। কোনোকিছুতে মন বসাতে পারে না। গভীর রাতে কী যেন অজানা ভয়ে জেগে উঠে শুনতে পায় সারা ঘরময় খুকির খেলনাগুলো, বাঁকুড়ার ঘোড়াগুলি ঠকঠক শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে একলা হয়ে যাচ্ছে ও। শ্যামলী আসবে না কোনোদিন ওর জগতে? ঘুম থেকে তুলে খুকিকে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে খাওয়াতে চেষ্টা করে ওর মা। ভাতের পাতেই ঘুমে গড়িয়ে পড়ে সে। ওকে কোনোক্রমে মুখ ধুইয়ে শুইয়ে দিয়ে আসে সুবিমল। খেতে খেতে শ্যামলীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে অন্যমনস্কভাবে বলে — আজ আষাঢ়ের তেরো তারিখ হল তবে?
    — তাই বুঝি? — কোনো কৌতুহল না দেখিয়ে সামান্য ঝোল ঢেলে ভাত ভাঙে শ্যামলী।
    — এগারো বছর আগে জীবনের তীরতট পাওয়া যাবে কিছু, এরকম ভাবা গিয়েছিলো — সুবিমল ভাবল — শুধু শহরতলির কোনো শ্যাওলাধরা ভাড়াবাড়িতে এসে নৌকো ফুটো হয়ে যাবে একথা মনে আসেনি। ভাবতে ভাবতে পেটের ভেতর থেকে একটা খোলা সোডার বোতলের মতো হাসি হঠাৎ প্রচন্ড বেগে উপচে এলো। — হাঃ, হাঃ, তেরোই আষাঢ় আজ — তেরোই আষাঢ়, হি হি। শ্যামলী থমকে স্থির হয়ে দুইমুহূর্ত দেখে সজোরে বলল — পাগলের মতো হাসছ কেন? তারপর দুজনেই চুপ করে একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল যেন। শুধু টিকটিক ঘড়ির আওয়াজ শোনা যেতে লাগল। একটা মাছি, সুবিমল দেখল, না-খাওয়া ভাতের ডগায়, প্রগাঢ় মাছের ওপর বসে বসে সব নষ্ট করে দিচ্ছে। সেদিন অনেকরাতে আলো নিভিয়ে জ্বালিয়ে ফের নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেল সুবিমল। — আসবে আমার সাথে শ্যামলী? — স্বপ্নের ভেতর নদীর ওপর দড়ির সেতুটাতে দাঁড়িয়ে যেন সে মিনতি করছিল। শ্যামলীর চুলগুলো উড়ছে হাওয়ায়, সে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে, কোনো উত্তর দিলো না। — সবকিছু আছে এই জগতে; মানুষের অপরিমেয় সার্থকতা — ফের বলল সুবিমল। ব্রিজটা মৃদু মৃদু দুলছে, দেখল শ্যামলী, মাংসাশী হরিণেরা জল খেতে এসেছে নদীতে। ব্রিজ পেরিয়ে ওদিকে গেলেই সেই জগত, যেখানে সমস্তকিছু মায়ার মতন। এ জগত কিছুতেই পৃথিবীর মানুষের স্বাভাবিক প্রেরণার নয়, জোর করে ভাবল শ্যামলী; পিছনে ব্রিজের এপারে যেন সে দেখতে পেল তার চেনা মানুষদের। বাবা-মা, খুকি, প্রিয়-পরিজন, হেলথসেন্টারের লোকেরা, এমনকি সেই রাস্তার লালু-ভুলু কুকুরদুটো, যাদেরকে মাঝে মাঝে বিস্কুট কিনে দিয়েছে খেতে, কানখাড়া করে দাঁড়িয়ে তারা সতর্ক ভঙ্গিমায়। সুবিমলের সাথে যেতে হলে এই সব সুস্থিতির হরিদ্রা ছেড়ে চলে যেতে হবে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে নদীর ওপর। দেখতে পেল সুবিমল আস্তে আস্তে একা ঢুকে যাচ্ছে ওর নিজের জগতে। ক্রমশ ঝাপসা হয়ে নদী ও ব্রিজসুদ্ধু দৃশ্যটা কেঁপে উঠল হঠাৎ আর শ্যামলী ঘুম ভেঙে চমকে উঠল যেন কে ওর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়েছে দেখে। পাশে খুকি অকাতরে ঘুমোচ্ছে। শ্যামলী উঠে পিঠটা ঠেসিয়ে দিল খাটের শিয়রে। মশারিটা তুলে আস্তে আস্তে সুবিমল বিছানার কিনারায়। রোদ-না-ঢোকা ঘরে এখন চাঁদের আলো ফ্যাটফ্যাট করছে। এইমুহূর্তে সুবিমল ও সুবিমলের বউ বসে আছে পাশাপাশি। তাদের রূপোলী শরীর দূরত্বে দেখাচ্ছে প্রেমিক ও প্রেমিকার মতন।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৭ মে ২০২০ | ৩০২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • !@#$%^& | 2405:201:8805:37c0:5070:e9d5:898d:***:*** | ৩১ মে ২০২০ ১৩:৩৯93845
  • তুলে রাখি, আবার পড়বো।
  • সিএস | 2405:201:8803:be1f:692e:41f2:4be:***:*** | ৩১ মে ২০২০ ১৬:০৬93848
  • এটা ভালো কাজ হল লেখাটা তুলে। পড়ব ভেবে পড়া হয়নি, এই লেখকের লেখাগুলো পড়ার পর একটু টাল সামলাতে হয়, বাক্যস্রোত যেন এমনি যে কয়েকবার পড়লেই কোটেবল কোটসের মত সেগুলো বাজতে থাকবে।

    ধাবমান ট্রেন দেখেও শ্যামলীর ইচ্ছে হয়নি ঝাঁপ দেওয়ার, শ্যামলীর চরিত্র বোঝাতে এমন একটি দৃশ্যের ব্যবহার, লেখাটি পাঠককে প্রবলভাবে টানে তার ঘূর্ণির ভেতরে।
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2405:201:8802:c7b5:8571:2531:955f:***:*** | ০১ জুন ২০২০ ০৯:৩০93863
  • ফেনোমেনাল লেখা, অবসাদ এর অসুখের সিম্পটমের বিবরণ মেন, প্রেসক্রিপশন এর বাঁদিকটা। ফ্যানটাস্টিক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন