এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • বঙ্গীয় রোকড়ী মহাজনের সন্ধানে

    ষষ্ঠ পাণ্ডব লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ জুন ২০১৮ | ১৪০২ বার পঠিত
  • একটা বিশেষ প্রয়োজনে স্বাধীনতাপূর্ব ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে একটু খোঁজখবর করা দরকার হয়ে পড়েছিল। খোঁজ নিতে নিতে ভাবলাম যা কিছু টুকে রাখছি সেটা বরং গুরুচণ্ডালী’র পাঠকদের সাথে ভাগ করে নেই। ফলে আমার জানায় যা কিছু খামতি বা ভুল আছে সেটা শুধরে যাবে।



    ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হবার আগে বাংলায় গ্রামে গ্রামে ঋণ দেবার জন্য কুসীদিক বা মহাজনেরা, বন্ধক রাখার জন্য পোদ্দাররা, ভিন্ন স্থানে অর্থ পরিশোধের জন্য হাতচিঠি বা হুন্ডির প্রচলন থাকলেও আনুষ্ঠানিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। শেঠ ও বানিয়া সম্প্রদায় — যারা ঋণ প্রদান, মূল্য পরিশোধ, বন্ধক রাখা, শষ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রেডিং, বিভিন্ন ব্যবসায়ে অর্থ লগ্নী করতেন তারা আসলে এক একটি পরিবারভিত্তিক ব্যাংক হিসাবে কাজ করতেন। এইসব শেঠ ও বানিয়াদের কারো কারো (যেমন, জগৎশেঠ) টাকা উৎপাদনের অনুমতি পর্যন্ত ছিল। তাদের উৎপাদিত মুদ্রা স্বর্ণ বা রৌপ্যে নির্মিত ছিল বলে এই প্রকার টাকশালে যত খুশি মুদ্রা ছাপিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির লাগাম শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেবার উপায় ছিল না। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আর্থিক লেনদেন, সঞ্চয় রাখা, ঋণ গ্রহন, বন্ধক দেবার ব্যাংকিং ব্যবস্থা না থাকায় সুদের হার ও পর্যায়, সঞ্চয়-বন্ধক-ঋণের শর্তাবলীর কোন আকাশ পাতাল ছিল না। পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শুরু হলে ইউরোপে চলমান ব্যাংকিং ব্যবস্থা এদেশেও চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়।

    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলের শুরুতে ফারগুসন এন্ড কোম্পানি আর আলেক্সান্ডার এন্ড কোম্পানি নামে দুটো ব্রিটিশ এজেন্সি হাউজ স্বল্প মাত্রার ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বতন্ত্র কোন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বদলে নিজেদের হাউজের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতো। ১৭৭০ সালে আলেক্সান্ডার এন্ড কোম্পানি ‘ব্যাংক অভ হিন্দোস্তান’ নামে প্রাইভেট ব্যাংক স্থাপন করলে এদেশে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। এই ব্যাংক প্রথম ব্যাংক নোটও চালু করে। কাগজের এই নোট ছিল প্রতিনিধিত্বমূলক মুদ্রা, কারণ আসল মুদ্রা ছিল স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রা। ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রায়। সুতরাং চাহিবা মাত্র ব্যাংক নোটের বাহককে ব্যাংক অভ হিন্দোস্তান স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রায় সমমান পরিশোধ করতে বাধ্য থাকার কথা উক্ত নোটে উল্লেখ থাকতো।

    ব্যাংক অভ হিন্দোস্তান তিন বার ডুবে যাবার উপক্রম হয় কিন্তু তাদের রিজার্ভ যথেষ্ট থাকায় প্রতিবারেই বেঁচে যায়। ১৮৩২ সালে যুক্তরাজ্যে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পুনর্গঠন হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে বিশেষত বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লাগে। এই দফা ব্যাংক অভ হিন্দোস্তান ধাক্কা সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের কার্যক্রম আবারও আলেক্সান্ডার এন্ড কোম্পানির হাউজের আওতায় চলে যায়।

    অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে ব্রিটিশরা যখন কলকাতায় জাঁকিয়ে বসে তখন তাদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনেই আরও ব্যাংক খোলা দরকার হয়ে পড়ে। মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কলকাতায় ১৭৮৬ সালে ‘জেনারেল ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই সময়ে বা জেনারেল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কিছু আগে এদেশে বসবাসরত ইউরোপীয়দের প্রয়োজন মেটাতে ‘বেঙ্গল ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৭৯১ সালে জেনারেল ব্যাংকের নাম পালটে ‘জেনারেল ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া’ রাখা হয়। ১৮০৬ সালে এই দুটো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

    একই বছরে অর্থাৎ ১৮০৬ সালের ২রা জুন ৫০ লাখ টাকার মূলধন নিয়ে ‘ব্যাংক অভ ক্যালকাটা’ নামের স্থানীয় ব্যাংক চালু করা হয়। এই ব্যাংকের মালিকানায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (২০%), কিছু ইউরোপীয় বণিকের পাশাপাশি কিছু ভারতীয় ধনী ব্যক্তিও ছিলেন। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল মারাঠা আর টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে জেনারেল ওয়েলেসলি’র যুদ্ধে অর্থের যোগান দেয়া। ১৮০৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এই ব্যাংককে সারা বাংলায় ব্যবসা চালানোর অনুমতি প্রদান করে এবং সীমিত দায়ের শেয়ার বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়। এই পর্যায়ে ব্যাংক অভ ক্যালকাটার নাম পালটে ‘ব্যাংক অভ বেঙ্গল’ রাখা হয়। এটি এদেশের প্রথম জয়েন্ট স্টক ব্যাংক। মহারাজা সুকুমার রায়চৌধুরী প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই ব্যাংকের বোর্ডের একজন পরিচালক নির্বাচিত হন। অন্য সকল পরিচালকই ছিলেন হয় ব্রিটিশ উদ্যোক্তা অথবা ব্রিটিশ রাজকর্মচারী। ব্যাংকটির কার্যক্রম ছিল মূলত স্থানীয় ইউরোপীয়দের প্রয়োজনকে ঘিরে। এই ব্যাংক ১৮৬১-১৮৬২ সালের মধ্যে রেঙ্গুন, পাটনা, মির্জাপুর এবং বেনারসে শাখা খুলতে সমর্থ হয়। ১৮৬২ সালে ব্যাংক অভ বেঙ্গল ঢাকায় তাদের শাখা খুলতে গেলে ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। ১৮৪৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘ঢাকা ব্যাংক’ তাদের সাথে সমঝোতায় আসে এবং ‘ঢাকা ব্যাংক’ ‘ব্যাংক অভ বেঙ্গল’-এ একীভূত হয়।

    এরপরে ‘কমার্শিয়াল ব্যাংক’ আর ‘ক্যালকাটা ব্যাংক’ নামে দুটো ব্যাংকপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়; কিন্তু উদ্যোগদুটো সাফল্যের মুখ দেখেনি। এই দুই ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, কিংবদন্তীতুল্য বাঙালী ধনী ব্যবসায়ী রামদুলাল দে’র পুত্র আশুতোষ দে ও প্রমথনাথ দে ছিলেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরসহ এই উদ্যোক্তাদের কয়েকজন ১৮২৯ সালে ‘ইউনিয়ন ব্যাংক অভ ক্যালকাটা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪৮ সালে এই ব্যাংক ডুবে যায়। বাঙালী উদ্যোক্তাদের মধ্যে মহারাজা দুর্গাচরণ লাহা, পতিতপবন সেন, হীরালাল শীল অন্যান্যদের সাথে (যথা, মানুকজী রুস্তমজী, ডব্লিউ ডব্লিউ এন্ডারসন প্রমুখ) ১৮৬৩ সালে ৫০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ‘ক্যালকাটা সিটি ব্যাংকিং কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬৪ সালে এই ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার ইউরোপীয়দের হাতে চলে যাবার পর এর পুনঃনামকরণ করা হয় ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া’। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে পোস্তার লক্ষ্মীকান্ত ধর (নুকু ধর) অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং শুরু করেন। তিনি মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও ইউরোপীয় বণিকদের ঋণ প্রদান করতেন।

    রাষ্ট্রীয় অর্থায়ণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের তিনটি প্রধান ইউনিট – বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বম্বে প্রেসিডেন্সি ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের নিয়ন্ত্রণসম্পন্ন ব্যাংক স্থাপনের পরিকল্পনা করে। এভাবে ১৮৪০ সালে ‘প্রেসিডেন্সি ব্যাংক অভ বম্বে’ ও ১৮৪৩ সালে ‘ব্যাংক অভ মাদ্রাজ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক-পঞ্চমাংশ মালিকানা থাকায় ‘ব্যাংক অভ বেঙ্গল’-কে ‘দ্য প্রেসিডেন্সি ব্যাংক অভ বেঙ্গল’ও বলা হতো। এই তিন ব্যাংকেরই কাগুজে নোট চালুর অনুমতি ছিল। পরে ১৮৬১ সালে ‘পেপার কারেন্সি অ্যাক্ট ১৮৬১’-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ রাজ তিনটি ব্যাংকেরই এই ক্ষমতা প্রত্যাহার করে। রাজকীয় চার্টারের আওতায় আসার আগ পর্যন্ত এদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রম ব্যক্তির পরিচয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। যেমন, সাধারণ মানুষের জন্য ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১ লাখ টাকা ও পরিশোধকাল মাত্র ৩ মাস হলেও রাজকর্মচারী, ইউরোপীয় বা ঊচ্চশ্রেণীর ভারতীয়দের জন্য তার কোন সীমা ছিল না। ব্রাহ্মণদের জন্য ঋণের সুদের হার ১৫%-২০%-এর মতো হলেও শুদ্রদের জন্য ঋণের সুদের হার ছিল কমপক্ষে ৬০%। রাজকীয় চার্টার এইসব অনিয়ম বন্ধ করে কঠোর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়ে ব্যাংকগুলো এতোটাই আইননিষ্ঠ হয় যে, একবার অ্যাকাউন্টে চার আনা কম থাকায় ব্যাংক অভ বেঙ্গল গভর্নর জেনারেলের দেয়া একটি চেক বাউন্স করে। ১৮৭৬ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্সি ব্যাংকগুলো দেশের প্রধান শহরগুলো ও ব্যবসায় কেন্দ্রগুলোতে তাদের শাখা, এজেন্সি বা সাব-এজেন্সি খুলতে সমর্থ হয়। এভাবে ব্যাংক অভ বেঙ্গলের ১৮টি এবং বম্বে ও মাদ্রাজ ব্যাংকের ১৫টি করে শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

    ভারতীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৮৬৫ সালে এলাহাবাদ ব্যাংক, ১৮৮১ সালে কমার্শিয়াল ব্যাংক অভ আউধ, ১৮৯৪ সালে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, ১৯০১ সালে পিপল্‌ ব্যাংক, ১৯০৬ সালে ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া, কানাড়া ব্যাংক ও কর্পোরেশন ব্যাংক, ১৯০৭ সালে ইন্ডিয়ান ব্যাংক, ১৯০৮ সালে ব্যাংক অভ বরোদা ও পাঞ্জাব এন্ড সিন্ড ব্যাংক, ১৯১১ সালে সেন্ট্রাল ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া, ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া, ১৯২৩ সালে অন্ধ্র ব্যাংক, ১৯৩১ সালে বিজয় ব্যাংক, ১৯৩৫ সালে ব্যাংক অভ মহারাষ্ট্র, ১৯৩৭ সালে ইন্ডিয়ান ওভারসীজ ব্যাংক, ১৯৩৮ সালে ডেনা ব্যাংক, ১৯৪৩ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অভ কমার্স ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিও ব্যাংক) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরও আগে ১৭৮৮ সালে কর্ণাটিক ব্যাংক, ১৭৯৫ সালে ব্রিটিশ ব্যাংক অভ মাদ্রাজ, ১৮০৪ সালে এশিয়াটিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলোর বাইরে বিভিন্ন শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলোতে অনেক স্থানীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

    ১৯১৮ সালে বাংলা ভিত্তিক ‘বেঙ্গল সেন্ট্রাল ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫০ সালের ১৮ই ডিসেম্বর এই ব্যাংক ‘কুমিল্লা ব্যাংকিং কর্পোরেশন’, ‘কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাংক’ ও ‘হুগলী ব্যাংক’-এর সাথে একত্রিত হয়ে ‘ইউনাইটেড ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া’ গঠন করে।

    ১৭৭৩ সালে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে ‘দ্য জেনারেল ব্যাংক অভ বেঙ্গল এন্ড বিহার’ প্রতিষ্ঠা করলেও সেটিকে টিকিয়ে রাখা যায়নি। মাত্র দু’বছরের মাথায় ১৭৭৫ সালে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক না থাকায় ছোট আকারের স্থানীয় ব্যাংক, এজেন্সি হাউজ, সাব-এজেন্সিগুলোতে বিপুল পরিমাণে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, তহবিল তসরুপ, ব্যাংক ডুবে যাবার ঘটনা নিয়মিত ঘটতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে ১৯১৪ সালে ‘দ্য চেম্বারলেন কমিশন’ গঠন করা হয়। কমিশনের সুপারিশে ১৯২১ সালের ২৭শে জানুয়ারী তিনটি প্রেসিডেন্সি ব্যাংককে একত্র করে (মার্জ) একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরূপ – ‘দ্য ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া’ গঠন করা হয়। তিন প্রেসিডেন্সি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ছিল ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা, পক্ষান্তরে ইম্পেরিয়াল ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ১১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এর আগেই ‘দ্য ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট ১৯২০’ প্রণয়ন ও পাশ করিয়ে নেয়া হয়েছিল। এই ব্যাংক ব্যাংকনোট প্রণয়নের অধিকারী না হলেও ক্লিয়ারিং হাউজ ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় তহবিল সংরক্ষণের অধিকারী ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৫৫ সালের ৩০শে এপ্রিল ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া ‘স্টেট ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া’ নামে পরিবর্তিত হয়।

    ১৯৩৪ সালে মুদ্রা নিয়ন্ত্রক ও মুদ্রা নীতি পরিচালনার উদ্দেশ্যে ‘রিজার্ভ ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট ১৯৩৪’ প্রণয়ন ও পাশ করা হয়। তার আলোকে ১৯৩৫ সালে ‘রিজার্ভ ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।


    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হবার এবং ব্যাংকিং আইনের ফাঁকফোকরগুলো দূর করার আগে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ছোট ছোট ব্যাংক ছিল যারা স্থানীয় পর্যায়ে আমানত নিত, ঋণ দিত, ব্যবসায়ে টাকা খাটাতো, বন্ধকী কারবার করতো। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ জোরালো না থাকায় এই ব্যাংকগুলোর কোন কোনটা হঠাৎই ডুবে যেত অথবা উদ্যোক্তারা সমূদয় আমানত নিয়ে গা ঢাকা দিত। নারায়ণগঞ্জে ‘কোম্পানী টাউন ব্যাংক’ নামে এক শাখা বিশিষ্ট একটা ব্যাংককে আমি নিজে ডুবে যেতে দেখেছি।

    ভারতের স্বাধীনতার সাথে সাথে যেহেতু দেশটা ভাগ হয়ে যায় তাই অনেক ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা যায় তার প্রধান কার্যালয় পড়েছে এক দেশে আর অনেকগুলো শাখা পড়েছে আরেক দেশে। অথবা ব্যাংকের উদ্যোক্তারা এক দেশে থেকে গেছেন আর ব্যাংকের বেশির ভাগ কার্যক্রম রয়ে গেছে অন্য দেশে। এর ফলে অনেক ব্যাংক একীভূতিকরণ, অধিগ্রহনের পাশাপাশি প্রচুর ব্যাংক ডুবে গেছে। এতে কিছু মানুষ রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন আর বিপুল সংখ্যক মানুষ এক রাতের মধ্যে পথে বসে গেছেন। হাজার হাজার ব্যাংককর্মী চাকুরী হারিয়েছেন। সেগুলো নিয়ে গবেষণা হলে হাজার হাজার অভিসন্দর্ভ হবে, অসংখ্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-চলচ্চিত্র হবে। ওসব যারা করতে পারেন তারা ভেবে দেখবেন।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ জুন ২০১৮ | ১৪০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • h | ***:*** | ১৮ জুন ২০১৮ ০৮:০৪84484
  • ভালো লেগেছে।
  • দেব | ***:*** | ১৮ জুন ২০১৮ ০৮:৫৯84485
  • খাসা।
  • ষষ্ঠ পাণ্ডব | ***:*** | ২৮ জুন ২০১৮ ০৬:৩৯84486
  • @h এবং @দেবঃ পোস্ট পড়া আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
  • sm | ***:*** | ২৮ জুন ২০১৮ ০৭:২৯84487
  • স্বাধীনতার আগে অনেক ছোট ছোট ব্যাংক ডুবেছে, এটা ঘটনা।
    এই জন্যই ব্যাংক গুলো সরকার নিয়ে নেয়।
    এই পর্যন্ত গপ্পো ঠিক আছে।
    কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কেমন দেখা যাক। সাড়ে আট লাখ কোটি টাকা অনাদায়ী দেনা।
    সম্প্রতি মেরিল লিঞ্চ সংস্থার দাবি বিদ্যুৎ সেক্টরে দেওয়া আড়াই লাখ কোটি ঋণ শীঘ্রই অনাদায়ী খাতায় ঢুকবে।
    নিরব মোদী, মালিইয়া, রটম্যক পেন, অভিজিৎ গোষ্ঠী, ভূষণ স্টিল, ভিডিওকন কোম্পানি, চন্দ্রা কোচার এদের কথা সবাই জানে। আরো কত হিডেন লোন বা টক্সিক লোন আছে কে জানে!
    এরপর আছে অন্য আর এক অদ্ভুত গপ্পো।
    সরকার এল আই সি কে বলেছে দেনার দায়ে জর্জরিত দেনা ব্যাংক (নামটা খাসা!)নিয়ে নিতে।
    অর্থাৎ আর একটি বৃহৎ সরকারি সংস্থার ভরাডুবি বা কমজোরী করার ব্যবস্থা!
    এরপর নিশ্চয়,পি এন বি কে নিয়ে নেবার রিকোএস্ট আসবে।
    অর্থাৎ স্বাধীনতার আগে যে পরিমান চুরি হতো, এখন চুরির পরিমাণ আরো বেড়েছে।
    এই নিয়ে বেশি আলোচনা করলে ভালো হয়।
  • শিবাংশু | ***:*** | ০২ জুলাই ২০১৮ ০৬:২৯84488
  • তথ্যসমৃদ্ধ।
    তবে আধুনিক অর্থে বঙ্গীয় 'ব্যাংকিঙে'র 'জনক' মুর্শিদাবাদের জগৎ শেঠদের নাম থাকলে ভালো হতো।

    আগ্রহীদের জন্য একটি বই, অভীক রায় প্রণীত "Banking beyond Boundaries' (Penguine-Viking)।
  • sm | ***:*** | ০২ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩১84489
  • আজ পেপারে দেখলাম, রাষ্ট্রপতি কভিন্দ পর্যন্ত বলেছেন, রিসেন্ট ফ্রড সমূহ ,ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্কিং তথা ইকোনমি কে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
    মালিয়া, নিরব মোদী, স্টিল কোম্পানি,পাওয়ার সেক্টর, রটম্যাক পেন, ছন্দা কচর --এইসব নাম গুলো বার বার খবরের শিরোনামে আসছে।
    সাধারণ লোক ভাবতেও পারছেনা, একটি ব্যাংকের শাখা কি ভাবে দশ বারো হাজার কোটি টাকার লোন স্যানকশন করছে?কিভাবে সাত আট রকম অডিট সিস্টেমে তা,ধরা পড়ছে না?
    এই চুরি ও অনাদায়ী লোন লাখ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
    সাধারণ মানুষ তার সঞ্চয় রেখে কিভাবে নিজেকে নিরাপদ ভাববে?
    সরকার আর কতো লাখ কোটি ট্যাক্স পেয়ারের টাকায় ভর্তুকি দেবে?
    এই নেক্সাস এ জড়িত অফিসার বা কর্মী দের কি কি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হচ্ছে?
    সৎ কর্মীরা কেন এই ষড়যন্ত্রের ভাগীদার হবেন?
    সর্বোপরি, ব্যাংক ইউনিয়ন গুলি এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কি ভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে?
    একটু ডিটেইল এ লিখুন, প্লিজ।
    https://www.google.com/search?hl=en-GB&ie=UTF-8&source=android-browser&q=kobind+says+about+banking
  • ষষ্ঠ পাণ্ডব | ***:*** | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৯84490
  • প্রথমে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতো দেরিতে উত্তর দেবার জন্য। ‘গুরু’বাড়ির আচারে অনভ্যস্ততার দরুণ এই বিঘ্নটি ঘটেছে।

    @শিবাংশুঃ
    জগৎশেঠদের কথা বলা হয়েছে তো। তার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

    @sm:
    ভারতে ব্যাংকগুলোর অনাদায়ী দেনা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির কথা যা বললেন সেখানে নামগুলো আর টাকার অংক একটু পালটে দিলে সেটা বাংলাদেশের গল্পও হয়ে যাবে। কে জানে হয়তো অন্য আরও অনেক দেশের গল্প হয়ে যাবে। বিশ্ব পরিস্থিতি এমন কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। কে জানে কয়েক শতাব্দী ধরে চলা বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থাতে বড় আকারের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে কিনা!

    জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহনের নামে ব্যাংকগুলো থেকে যে বিপুল ঋণ নেয়া হয় তার কিস্তি নিয়মিত শোধ দেয়া হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুই শোধ দেয়া হয় না। কারণ, ঋণ শোধ করার মতো টাকা রাষ্ট্রের হাতে থাকে না। পরের বছর আবার ঋণ নেয়া হয়। এভাবে রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে পাহাড় সমান হয়ে যায়। অপরপক্ষে ব্যাংকের অনাদায়ী দেনা বাড়তে বাড়তে ব্যাংক ডোবার অবস্থায় যায়। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষসম্পন্ন জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হলে সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা যেমন বাড়ে রাষ্ট্রের দেনাও তেমন বাড়ে। পার্টি আর নেতাদের উচ্চাভিলাষের দায় মেটাতে, কর্মীদের পুষতে বিপুল টাকা লাগে। এর জন্য বাজেটে নানা রকমের প্রকল্প আর থোক বরাদ্দ রাখতে হয়। সেসবের খরচ যোগাতে বাজেটের আকার আরও বাড়ে, রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়ে, ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ে।

    এক কালে একটু বড় মাপের ঋণ দিতে গেলে দুচারদশটা ব্যাংক মিলে সিন্ডিকেট করে ঋণ দেয়া হতো। আর এখন ব্যবসায়ে গতি আনার অজুহাতে ছোট ছোট ব্রাঞ্চগুলোর ব্যবস্থাপকদের হাতে দফায় দফায় ছোট/মাঝারি অঙ্ক মিলিয়ে বিশাল বড় মাপের ঋণ দেবার ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। ব্যবস্থাপকগুলো সব ধোয়া তুলসীপাতা অমনটা নয়। তবে তাদের ভাগে বিশাল রুইয়ের সামান্য আঁশের জল মেলে মাত্র। বাকি সবটা উপরের মহল গিলে খায়। রামলালের ব্যাংক শ্যামলালের শালাকে ঋণ দেয়, শ্যামলালের ব্যাংক গণ্ডেরিরামের জামাইকে ঋণ দেয়, আবার গণ্ডেরিরামের ব্যাংক রামলালের ছেলেকে ঋণ দেয়। দিন শেষে ব্যাংক ডোবার হায়! হায়!! হিসাবের নামগুলো ঘুরে ফিরে তাই একই থাকে। ব্যাংক ইউনিয়নের নেতা-হাতাদের রমরমা দেখলে কী করে কী হয় আঁচ করা যায়। কিছু বোকচন্দর সৎ কর্মকর্তা আছে তাদের কপালে লালঘরের ডালরুটি বরাদ্দ।

    যে হতভাগা ব্যাংকে মাত্র কয়েক লাখ টাকা ঋন চাইতে যায় তাকে কয়েক ডজন রকমের ডকুমেন্ট দিতে হয়, তার জিম্মাদার লাগে, সন্নিহিতিকরণ লাগে। তার পরে বিশ জন কর্তার সম্মতি নিয়ে ঋণ মেলে। সেই হতভাগার ঋণ পরিশোধের একটা কিস্তি বকেয়া পড়লে তার ভিটেয় ঘুঘু চড়ার দশা হয়। অথচ বড় আকারের ঋণ যখন লোপাট হয় তখন দেখা যায় কোন কর্মকর্তার কোন দায় নেই — নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা! ক্ষমতাকাঠামো আর কর্তৃত্বকাঠামোর দুটোতে দুর্বৃত্তায়ণ হলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।

    পুঁজির যথাযথ বিকাশ হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়তো, আয় বাড়তো। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য বিশুদ্ধ লুটেরাদের হাতে পড়লে সাধারণ জনগণের আমানতে হাত পড়ে, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হওয়াটা স্বাভাবিক। দলের, নেতা-কর্মীদের, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আর নির্বাচনের খরচটা এদের কাছ থেকে আসে বলে বার বার ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ, কুঋণ অবলোপন, সুদ স্থগিত করে অতি দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ প্রদান, থোক বরাদ্দকরণ, বেনামে ঋণ প্রদান, সন্নিহিতিকরণ ব্যতিরেকে ঋণ সবই চলে। লুটের টাকাটা যদি দেশে থাকতো তাহলে কিছুটা মানা যেতো। টাকা তো আর সিন্দুকে লুকিয়ে রাখার জিনিস না — কোথাও না কোথাও সেটা খাটতো। কিন্তু টাকা তো কী করে যেন আলপাইন এলাকার কোন্‌ কোন্‌ ব্যাংকে চলে যায়! সাধারণ জনগণের আম-ছালা দুইই যায়।

    ব্যাংকগুলোর অ্যাসোসিয়েশন সরকারকে চাপে রাখে আমানতের সুদ কমানোর জন্য। সরকার এক ঝটকায় আমানতের সুদ ‘নাই’-এর কাছাকাছি নিয়ে আসে। ওদিকে সরকার যখন ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদের হার কমাতে বলে তখন তারা নানা গড়িমসি করে। যারা এক কানাকড়ি পরিমাণ সুদের হার কমালো তারা সেই ক্ষতি পোষানোর জন্য ঘোষিত-অঘোষিত দশ রকমের চার্জ বাড়িয়ে দিলো। ফলে এক কালে ব্যাংকে আমানত রাখলে কালে কালে তা বাড়তো, আর এখন তা ‘নাই’ হয়ে যায়। জনগণ কীসের আশায় আর ব্যাংকে টাকা রাখবে, বন্ড কিনবে! রাষ্ট্র চায় জনগণ হয় তার টাকাপয়সা ভোগ্যপণ্যে ফুঁকে দিক, নয়তো বড় জোর শেয়ার বাজারে ফাট্‌কা খেলুক। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দুই টাকার জিনিসে ব্রান্ডের তকমা লাগিয়ে কুড়ি টাকায় বিকিয়ে পকেট ফাঁকা করা হয়, আর শেয়ার বাজারে ফাট্‌কা খেললে কোন এক কালো দিনে পাতি বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে দেয়া যায়।

    বোকা ছেলে পুচু পুচু কোকাকোলা খায়
    বোকাচোদা বাপ তার পয়সা যোগায়
  • sm | ***:*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:২৩84491
  • ভারতের ব্যাঙ্কিং সিস্টেম এর এখন বেশ কাহিল অবস্থা।এখনই খুব কড়া কিছু স্টেপ না নিলে ,আই সি ইউ তে যেতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
    একজন গরিব মানুষ পাঁচশ টাকা চুরি করলে মাথা নিচু করে থাকে বা ভয়ে ভয়ে থাকে।
    আর শিল্পপতিরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাঁট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে,পার্টি থ্রো করে,মাথা উঁচু করে চলা ফেরা করে।কারো 47 হাজার ,কারো কারো 80 হাজার কোটি টাকার লোন।কেন দেওয়া হয় এতো লোন?
    সম্প্রতি দুটি ফিন্যান্স ইনস্টিটিউট --দেওয়ান ফিন্যান্স ও আই এফ এল এস এর অনাদায়ী লোন 1 লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

    নয়তো আই সি আই সি আই এর সর্বময় কত্রীর নামে এমন অভিযোগ ওঠে?ভাবা যায় না!
    এগুলো থেকে,একটা বিষয় স্পষ্ট।দু ধরণের জনতা সব থেকে বেশি মার খাবে।রিটায়ার্ড বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা, যারা সমস্ত জীবনের সঞ্চয় ;কয়েক লাখ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড করে রেখেছেন।ব্যাংকের সুদ ই তাদের ভরসা। এমতবস্থায়,দিন কে দিন মূল্য বৃদ্ধি, বর্ধিত চিকিৎসায় খরচ,নিন্মগামী সুদ তাঁদের আতঙ্কিত করে রেখেছে।এদের অবস্থান জীবিত মৃত সম।
    দুই,বিভিন্ন ব্যাংকের মার্জার হেতু প্রচুর পদ বিলোপ,প্রচুর রেডানডেন্সি ও নতুন রিক্রুইমেন্ট কার্যত স্তব্ধ।
    এই অচলাবস্থা ও ভয়ানক দুর্নীতি কন্টিনিউ করলে, দেশের অর্থনীতির সমূহ বিপদ।
  • ষষ্ঠ পাণ্ডব | ***:*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৩৪84492
  • @sm:
    শুধু ভারত কেন, বাংলাদেশেও ব্যাংকিং সিস্টেমের অবস্থা বেশ কাহিল। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক ব্যাংক খোলার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২টিতে। এই ৬২টির অর্ধেকের বেশি আইসিইউ কেস। কতগুলো তো জন্মের পর আঁতুড়ঘর থেকেই ধুঁকছে — কোনদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রের মালিকানাধীন তফসিলী ব্যাংকগুলোকে প্রতি প্রান্তিকে রাজস্ব খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা এনে দেয়া হচ্ছে। আরেক প্রান্তিক আসতে না আসতে তারা তার চেয়ে বেশি টাকা ফুঁকে দিচ্ছে। অনাদায়ী দেনা, কুঋণ, ঋণ অবলোপনের গ্রাফ বাম দিকের ভূমি থেকে ডান দিকে কোনাকুনি বরাবর ঊর্ধ্বমুখে ছুটছে যে ছুটছেই। এটা নিয়ে কর্তাদের কী হেলদোল তা বোঝা মুশকিল। নয়তো গ্রাফটা নিম্নমুখী হওয়া দূরে থাক আনুভূমিকও হয় না কেন!

    ব্যাংকের বাইরে এনবিএফআই-গুলো যথা সাধারণ বীমা, জীবন বীমা, লীজ ফাইন্যান্স, ইক্যুইটি ফাইন্যান্স, কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইত্যাদিতেও একই অবস্থা।

    এখানেও পাঁচ হাজার টাকার কৃষিঋণ বা ক্ষুদ্র উদ্যোগের ঋণ বা তার সুদ শোধ করতে না পারলে ঘরের চাল খুলে নিয়ে যায় বা সার্টিফিকেট মামলা হয় আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে তাদেরকে সম্মানিত করা হয়, উচ্চ পদে বসানো হয়।

    ব্যাংকে টাকা জমা রেখে তার সুদে বুড়ো বয়সে চলার দিন শেষ হয়ে গেছে। এমনকি যারা ট্রেজারী বন্ড কিনে তার সুদে চলতেন তাদের ভাঁড়ারেও হাত পড়েছে। বন্ডে সুদের হার কমানো হচ্ছে, আয়কর/মূল্য সংযোজন কর/সাধারণ সেবা ক্রের হার বাড়ানো হচ্ছে, বন্ড কেনার সিলিং কমানো হচ্ছে। ওদিকে বড় বড় কর্পোরেটগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার বন্ড কিনে বসে আছে। তাদের ক্ষেত্রে সিলিং মানা হয়নি।

    বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো যে নানা রকমের স্কিম অফার করে সেগুলো আসলে বিভিন্ন প্রকার মোড়কে একই মাল। ম্যাচ্যুরিটি শেষে প্রাপ্তব্য সুবিধার পরিমাণ হিসেব করলেই ফাঁকিটা বোঝা যায়। আর যতদিন পরে সেই সুবিধা পাওয়া যায় ততদিনে মূল্যস্ফীতি আর টাকার মূল্যমানের অবমূল্যায়ণের দরুণ তার আর কোন কার্যকারিতা থাকে না।

    বাংলাদেশে এখনো মার্জার-অ্যাক্যুইজিশন শুরু হয়নি, তবে শুরু করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে – সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই দরকার। মার্জার-অ্যাকুজিশন হলে পোস্ট অ্যাবোলিশমেন্ট, রিডানডেন্সি, নতুন রিক্রুটমেন্ট বন্ধ — এসব অবশ্যম্ভাবী। গত দুই দশকে হাউইয়ে ওড়া মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি এখন এই ব্যাপারটা পার করছে, আগামীকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ওটা পার করবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন