এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  মনে রবে

  • হাসান আজিজুল হকের উপন্যাস ‘লাল ঘোড়া আমি’

    ষষ্ঠ পাণ্ডব
    পড়াবই | মনে রবে | ২১ নভেম্বর ২০২১ | ২৫০৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৬ (৫ জন)

  • কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ – ১৫ নভেম্বর ২০২১) সাহিত্যকর্মের হিসাব দিতে গেলে আমরা সাধারণত তিনটি উপন্যাসের নাম বলি – ‘আগুনপাখি’ (২০০৬), ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ (২০১৩) এবং ‘শামুক’ (২০১৫) । এর মধ্যে ‘আগুনপাখি’ সর্বাধিক আলোচিত, ‘শামুক’ প্রায় অনালোচিত। আপাতদৃষ্টিতে ‘আগুনপাখি’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হলেও ‘শামুক’ লেখা হয়েছে ১৯৫৭ সালে এবং এক সময়ের বহুল আলোচিত পত্রিকা ‘পূর্বমেঘ’-এ ১৯৬২ সালে সেটির তিন কিস্তি প্রকাশিতও হয়েছিল, কিন্তু পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় কেবল ২০১৫ সালে। এসব তথ্য নিয়ে কথা বলার সময় যে সত্যটিকে উপেক্ষা করা হয় সেটি হচ্ছে, হাসান আজিজুল হকের পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হচ্ছে ‘লাল ঘোড়া আমি’। এটি ১৯৮৩ সালে মাসিক ‘শিশু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং ১৯৮৪ সালে তা শিশু একাডেমি থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘লাল ঘোড়া আমি’কে এই উপেক্ষা করার কারণ হচ্ছে উপন্যাসটির গায়ে ‘কিশোর উপন্যাসের’ তকমা সেঁটে দেয়া আছে। ‘কিশোর উপন্যাস’ আদৌ ‘উপন্যাস’ পদবাচ্য কিনা বা উপন্যাসের মর্যাদা পাবার যোগ্য কিনা সেটা নিয়ে অনিঃশেষ তর্ক করা যায়, কিন্তু ‘লাল ঘোড়া আমি’র গায়ে প্রকাশকরা যে তকমাই সাঁটুন না কেন সেটি যে একটি সার্থক উপন্যাস সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই। উপন্যাস হিসাবে ‘লাল ঘোড়া আমি’র সার্থকতা যথাসময়ে যাচাই করা হবে, তার আগে উপন্যাসটি সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা করা প্রয়োজন।

    ‘লাল ঘোড়া আমি’ উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে লেখা। এখানে উত্তম পুরুষটি একটি কুড়ি বছর বয়সী ঘোড়া যার মৃত্যু সন্নিকটে। ঘোড়া গড়ে ২৫-৩০ বছর আয়ুসম্পন্ন প্রাণী, সুতরাং একটি ঘোড়ার ক্ষেত্রে ২০ বছর বেশ পরিণত বয়সই বটে। এই উপন্যাসে এই পরিণতবয়সী ঘোড়াটি বর্ণনা করে যায় নিজের জীবনেতিহাস – আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত, সাথে অবধারিতভাবে তার চারপাশে থাকা মানুষদের কথা আর ঘটনাপ্রবাহও চলে আসে। বাংলা সাহিত্যে মানুষের সাথে মনুষ্যেতর জীবের যোগাযোগ ও মিথষ্ক্রিয়া বিরল নয়। রূপকথার ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী পাখি হোক অথবা ‘হ য ব র ল’-এর চন্দ্রবিন্দু নামের বেড়াল, শ্রীকাকেশ্বর কুচকুচে নামের কাক বা ব্যাকরণ শিং নামের ছাগল হোক মানুষের সাথে তাদের কথোপকথন ও মিথষ্ক্রিয়ার কথা সর্বজনবিদিত; কিন্তু একটি বাংলা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ও মূল কথক একটি মনুষ্যেতর প্রাণী সেটি খুব সুলভ নয়। অন্য ভাষায়, বিশেষত ইংলিশে, লিখিত উপন্যাসের ক্ষেত্রে এটি বিরল নয়। ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত আনা সিওয়েলের ‘ব্ল্যাক বিউটি’ বা ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত মার্শাল সন্ডার্সের ‘বিউটিফুল জো – আ ডগ’স ঔন স্টোরি’ এই ধারার জনপ্রিয় উপন্যাস। এগুলোর পরে প্রকাশিত জ্যাক লন্ডনের ‘দ্য কল অব দ্য ওয়াইল্ড’ (১৯০৩) বা ‘হোয়াইট ফ্যাং’ (১৯০৬), জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ (১৯৪৫) বা রেনে পল গ্যিও’র ‘কেপু দ্য প্যান্থার’ (১৯৫৫) (মূল রচনা ফরাসী)-এর মতো উপন্যাসগুলোকেও এই ধারায় ধরা যায়। এই দিক বিবেচনায় ‘লাল ঘোড়া আমি’ বাংলা উপন্যাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। ‘লাল ঘোড়া আমি’র আগে প্রকাশিত হাবীবুর রহমানের ‘লেজ দিয়ে যায় চেনা’ (১৯৫৯) ও ‘বনমোরগের বাসা’ (১৯৭৬) উপন্যাসেও কেন্দ্রীয় চরিত্র ও মূল কথক একটি করে মনুষ্যেতর প্রাণী, কিন্তু এই উপন্যাসদ্বয় কাহিনী, গঠন ও আঙ্গিকে কেবল শিশু-কিশোর উপযোগী নয় সাথে সেখানে মনুষ্য সমাজের অনুপস্থিতিও আছে। পক্ষান্তরে ‘লাল ঘোড়া আমি’ পুরোপুরি মনুষ্য সমাজের ভেতরকার গল্প যার কাহিনী, গঠন ও আঙ্গিক প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও উপযুক্ত বটে।

    “সে অনেক আগের কথা, তখন আমার চার বছর বয়স। আজ আমি বুড়ো হতে চলেছি, এক কুড়ি বছর বয়স হলো। মানুষদের এক কুড়ি বছর বয়স কিছুই না। কিন্তু আমাদের জাতের – মানে ঘোড়াদের এক কুড়ি অনেক বয়স। আর ক’বছর পরেই থুরথুরে বুড়ো হয়ে যাবো। এখনই তো ভালো চলতে-ফিরতে পারি না। চার পায়েই বাত হয়েছে। পেছনের দু’পায়ের হাঁটু ফুলে ওলকপির মতো হয়ে গেছে। অমাবশ্যে আর পূন্নিমেয় চার হাঁটুতে এমন রস জমে যে, দাঁড়াতে পর্যন্ত পারি না। আমাকে শুয়েই থাকতে হয়। অথচ মানুষ বলে, ভালো ঘোড়া নাকি কোনো দিন শোয় না। দাঁড়িয়ে ঘুমায়। তা কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। অল্প বয়সে আমি কোনো দিন মাটিতে শুয়ে ঘুমাইনি। সব সময় তিন ঠ্যাঙে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়েছি। কিন্তু কী আর করব এখন? বয়সের ওপর তো কারও হাত নেই।“

    — উপন্যাসের এই শুরু দিয়ে বোঝা যায় সেটির কেন্দ্রীয় চরিত্র কে এবং তার কীরূপ ভাষ্যে কাহিনী অগ্রসর হবে। একইসাথে এখানে এটিও স্পষ্ট যে কেন্দ্রীয় চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত কোন্‌ পরিণতি লাভ করবে। কেন্দ্রীয় চরিত্রের পরিণতি দিয়ে একই প্রকারের সূচনা আমরা ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এও দেখতে পাই –


    “এখ্ন বয়েস পঁচাশি। আর বিছানারও দরকার নেই তার। একটা বড়সড় ঝুড়ি থাকলে সেখানেই বেশ কুলিয়ে যায়। ঘর থাকলে ভালো, নাহলে বারান্দার কাছ ঘেঁষে বুড়িসুদ্ধু ঝুড়িটা টেনে এনে রেখে দিলেই হলো। দিন-রাতে কিছুই তার জেগে থাকে না। জেগে থাকে শুধু দুটি চোখ” ।

    তবে ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এ কোন কথক নেই যেমনটা ‘আগুনপাখি’ এবং ‘লাল ঘোড়া আমি’-তে দেখতে পাওয়া যায়।

    ‘লাল ঘোড়া আমি’ উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র মর্দা ঘোড়াটির গায়ের রঙ টকটকে লাল হলেও কপালে সাদা দাগ আছে, কান দুটো আর চার পা হাঁটুর নিচে সাদা। লালের সাথে সাদার এই সমাহার ঘোড়াটিকে অনন্য করে তুলেছে, বিশেষত সাদা পায়ের জন্য এটি ছুটলে মনে হয় যেন শূন্যে ভেসে যাচ্ছে।
    “তাছাড়া আমার ছিল বিরাট লম্বা ল্যাজ। দেখলেই লোকের মাথা একেবারে ঘুরে যেত। তাছাড়া ভালো জাতের ঘোড়ার আর যা যা চিহ্ন সবই আমার ছিল। মানুষরা বলে ছোট কান, ছোট খুর, ছোট মাথা, সরু ঠ্যাঙ আর লম্বা ঘাড়ওয়ালা ঘোড়ারা খুব দৌড়াতে পারে । মানুষরা যা বলে তা সত্যি কিনা জানি না তবে তারা প্রায়ই মিথ্যে কথা বলে তা আমি অনেকবার দেখেছি। যাই হোক, আমি যে ভালোই দৌড়াতে পারতাম তা আমার বেশ জানা আছে” ।

    ঘোড়াটির রূপ প্রথমে আকৃষ্ট করে এক কিশোরকে। সে তার পিতার সাথে পশুর হাটে গিয়েছিল হালের বলদ কেনার জন্য, কিন্তু ঘোড়াটির রূপে মুগ্ধ হয়ে সেটি কেনার জন্য চীৎকার শুরু করে “ওরে আমি ঘোড়াটো লোবো রে” বলে। নিরুপায় পিতা বাধ্য হয়ে বলদ কেনার টাকায় ঘোড়াটি কেনেন। এই হাটেই ঘোড়াটির মায়ের সাথে তার চিরতরে বিচ্ছেদ ঘটে। দ্বিতীয় মালিকের গৃহস্থবাড়ির অন্যান্য প্রাণীকুলের সাথে তার প্রথম পরিচয়কালে মানুষ কর্তৃক গৃহপালিত প্রাণীর শ্রমবিভাজন ও তদ্দজনিত বৈষম্যের এক ভিন্ন রূপকে সামনে নিয়ে আসে। জাতিভেদ, বর্ণভেদ, শ্রেণীভেদ – বিভেদের নানা রূপ মনুষ্যেতর প্রাণীদের দ্বন্দ্বের আকারে হঠাৎ করে সামনে চলে আসে। বিভাজিত ক্ষুর আর জোড়া ক্ষুরের প্রাণীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব, মার খেয়ে বলদের কান্না, পাঁঠার বিনা কারণে ঢুসানো সব মিলিয়ে গোয়ালঘরের রাতের দৃশ্য কি নিছক গল্প নাকি কোন রূপকল্প সেটি পাঠক আর সাহিত্য সমালোচকদের ভাবার বিষয়।

    ঘোড়াটি দ্বিতীয়বার হাত বদল হয় তার রূপে মুগ্ধ জমিদারের কারণে। কিছুটা ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’র মতো করে। গৃহস্থ বাড়ি থেকে ঘোড়াটির ঠাঁই হয় জমিদার বাড়িতে। গৃহস্থ বাড়িতে তাকে বিরক্ত করার মতো মনুষ্য প্রতিবেশি ও মনুষ্যেতর গৃহবাসী ছিল যা জমিদার বাড়িতে নেই। এখানে অন্য ঘোড়া আছে, ঘোড়াদের উপযুক্ত জমকালো সাজপোশাক আছে, আয়েশের ব্যবস্থা আছে। সেই সাথে জমিদারী নিষ্ঠুরতা আছে – তা সেটা মানুষের ক্ষেত্রে হোক আর ঘোড়ার ক্ষেত্রে হোক। একই দৃশ্যপটে খাজনা দিতে ব্যর্থ প্রজাকে আমৃত্যু নির্যাতন করা আর দৌড়ে হেরে যাওয়া তিলফুল রঙা ঘোড়াকে খুন করা কি কেবল সামন্তপ্রভুর নিষ্ঠুরতা আর খামখেয়ালীপনাকে নির্দেশ করে নাকি মনুষ্য আর মনুষ্যেতরকে একই কাতারে এনে বুঝিয়ে দেয়া হলো যে শ্রেণী পরিচয়ের ভেদ জীবতাত্ত্বিক পরিচয়ের ভেদের চেয়েও শক্তিশালী!

    জমিদার বাড়িতে ঘোড়াটি জীবনের যে অংশটুকু কাটিয়েছিল নিঃসন্দেহে সেটাই তার জীবনের সবচেয়ে আয়েশের সময়। সেই সুখের অবসান ঘটে যখন ক্রমাগত সামন্তবাদী শোষণ আর অত্যাচারে স্থানীয় পর্যায়ে গণবিপ্লবের সূচনা হয় ও পরিণতিতে জমিদার নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডটির যে বর্ণনা এখানে দেয়া হয়েছে সেখানে একইসাথে হত্যাকারীদের নৃশংসতা যেমন দেখানো হয়েছে তেমন তাদের নৃশংস হবার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ এক অদ্ভুত সমাপতন যেখানে পাঠক দুর্দশাগ্রস্থ নিম্নবর্গের মানুষের পক্ষ নিতে চাইবেন এবং একই সাথে তাদের নৃশংসতাকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইবেন। আপত্তিকর বিষয় হচ্ছে ঐ মানুষগুলোর জমিদারের ঘোড়াটাকেও মেরে ফেলতে চাওয়া। লাল ঘোড়াটি খুন হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে বটে কিন্তু মারাত্মকভাবে আহত হয়। আমরা মনে করতে পারি, ১৯১৮’র ১৭ই জুলাই ইপাতিয়েভ ভবনে বয়স-লিঙ্গ-পদ নির্বিশেষে রোমানভদেরকে যখন তাদের কর্মীদলসহ খুন করা হচ্ছিল তখন তাদের কুকুরও রক্ষা পায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সময় দেশ-জাতি-শিক্ষা-পরিচয়-শ্রেণী অবস্থান নির্বিশেষে মানুষের আচরণ বুঝি একই প্রকারের হয়।

    জমিদার তার নিজের করুণাকর মৃত্যুকে ঠেকাতে না পারুক সেটাকে আরও কিছু দিনের জন্য হয়তো বিলম্বিত করতে পারতো যদি সে ঝুঁকি না নিত; কিন্তু তার ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদী ফুটানির জন্য তা হতে পারেনি। মৃত্যুর একেবারে মুখে দাঁড়িয়েও সে হত্যাকারীদেরকে নরকের ভয় দেখায়। হত্যাকারীরা জমিদারের হুমকির যথাযথ প্রত্যুত্তর দিলেও বাস্তবের দুনিয়ায় তাদেরকে এবং সন্দেহভাজন সকল সাধারণ মানুষকে অশেষ নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় যখন পুলিশ হত্যা মামলাটির দায়িত্ব গ্রহন করে। পুলিশী অত্যাচার এবং দুর্নীতির প্রকাশও এখানে স্পষ্ট। এই পর্যায়ে ঘোড়াটি হাতবদল হয়ে প্রথমে এক ঘুষখোর দারোগার এবং শেষ পর্যন্ত এক গ্রাম্য হোমিওপ্যাথের হাতে এসে পড়ে। ঘোড়াটির শেষ মালিকের কাছে তার জীবন প্রাচুর্যের বা সুখের নয়, কিন্তু সেখানে সে মানুষের গল্পের শ্রোতা হয়। এই মানুষগুলোর গ্রামীন জীবন সরল এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন। বস্তুত এখান থেকেই ঘোড়াটি দ্রুত শেষ পরিণতির দিকে ধাবিত হয়।

    ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ২০১৫ সালে উপন্যাসটির যে সংস্করণ বের হয়েছে তার মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা মাত্র ৫৪, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে উপন্যাসটি কতোটুকু ক্ষুদ্রায়তনের। কিন্তু পৃষ্ঠা গুনেই কি নির্ধারিত হবে একটি রচনা উপন্যাস কি উপন্যাস নয়? উপন্যাসের আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য – গদ্যে লিখিত ও কাল্পনিক আখ্যান এর দুটোই ‘লাল ঘোড়া আমি’ পূরণ করে। একটি উপন্যাসের ছয়টি মৌল উপাদান – চরিত্র (character), কাহিনী (plot), দৃষ্টিভঙ্গী (point of view), পটভূমি (setting), নির্মাণশৈলী (style) ও বিষয়ধারণা’র (theme) প্রত্যেকটি খুব স্পষ্ট এবং শক্তিশালীভাবে এই উপন্যাসে আছে, সেগুলোর যথাযথ বিকাশও আছে। এই উপন্যাসের ক্যানভাসের ব্যাপ্তি বিশাল, চরিত্রের সংখ্যাও খুব কম নয়। এখানে কাহিনী ও পটভূমির বিস্তার উভয়ই একরৈখিক। বস্তুত কোন উপন্যাসে এক বা একাধিক চরিত্রকে যে পূর্বতন কোন কাহিনীতে বা পটভূমিতে কখনো না কখনো ফেরত যেতেই হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। উপন্যাসের জন্য খুব বাধ্যতামূলক নয় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য, যথা, প্রারম্ভ হতে শুরু করে সময় সময় আকর্ষণীয় বিষয়ের আমদানী, নতুন নতুন অধ্যায়ের সূচনা, কাহিনীতে নতুন নতুন মোড়, ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টি, যথার্থ সমাপ্তি – এসব বিচারেও এই উপন্যাসটি উৎরে যায়।

    হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ পুস্তকাকারে ২২৪ পৃষ্ঠা, ‘আগুনপাখি’ ১৫৮ পৃষ্ঠা, ‘শামুক’ মাত্র ৯৫ পৃষ্ঠা; অর্থাৎ তাঁর কোন উপন্যাসই বৃহদায়তন নয়। সেখানে ৫৪ পৃষ্ঠার ‘লাল ঘোড়া আমি’ আকারে হাসান আজিজুল হক সুলভই হয়েছে। এই ৫৪ পৃষ্ঠার মধ্যেই কাহিনীর যথাযথ বিস্তৃতি ও বিকাশ হয়েছে, চরিত্রগুলো তাদের গুরুত্ব অনুযায়ী বিকাশ ও পরিণতি লাভ করেছে। যারা হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্প পাঠ করেছেন তাঁরা জানেন তিনি স্বল্প পরিসরেও কী বিশাল ব্যাপ্তির বিষয় ধারণ করে সেটিকে যথার্থ পরিণতিও দিতে পারেন। সুতরাং আয়তনগত কারণে ‘লাল ঘোড়া আমি’কে উপন্যাস না বলার কারণ নেই। অবশ্য গল্প, বড় গল্প, উপন্যাস ইত্যাদির আয়তন মাপার স্কেলটি যদি লেফ তলস্তোয়ের রচনা অনুগ হয় তাহলে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার দশ-পনের শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা হয়।

    একটি উপন্যাস কিশোরদের উপযুক্ত কনটেন্ট নিয়ে তাদের উপযোগী ভাষায় লেখা হয়ে থাকলে সেটিকে ‘কিশোর উপন্যাস’ বলা যায়। যথা, মাহমুদুল হকে ‘কুশল ও চিক্কোর মারণ কাবুক’ (১৯৭৯), আল কামাল আবদুল ওহাবের ‘গহন বনের পথে’ (১৯৮১), মাহমুদ আল জামানের ‘ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়’ (১৯৭৮) বা ‘সমুদ্র ও টুকুর গল্প’ (১৯৮২)। ‘লাল ঘোড়া আমি’র কনটেন্ট বা ভাষার কোনটিই কেবলমাত্র কিশোরদের জন্য নয়, বরং সেগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও উপাদেয় বটে। যেসব কারণে সৈয়দ ইকবালের ‘কুশল আর মৃত্যুবুড়ো’ (১৯৭৮), আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘জলহস্তি’ (১৯৮৩), সরদার জয়েন উদ্দিনের ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ (১৯৮২), বা নাজমুল আলমের ‘রক্তমণি’ও (১৯৭৯) এক একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস, নিছক কিশোর উপন্যাস নয়; ঠিক সেসব কারণে ‘লাল ঘোড়া আমি’ও একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস।

    ‘লাল ঘোড়া আমি’ উপন্যাসটি কোন সময়ের কথা বলে? কোন দেশের বা কোন অঞ্চলের কথা বলে? চলাচলে ঘোড়ার ব্যবহার, একইসাথে জমিদার ও ইউনিফর্মধারী দারোগার উপস্থিতি, গ্রামাঞ্চলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং অন্যান্য আনুসঙ্গিক উপাদান থেকে ধারণা করা যেতে পারে এর কাহিনীকাল বিংশ শতকের প্রথম ভাগের। পাহাড় ও নদীর অনুপস্থিতি, দিগন্ত বিস্তৃত বড় বড় মাঠের উপস্থিতি থেকে ধারণা করা যেতে পারে কাহিনীর পটভূমি রাঢ় অঞ্চল। তবে কৃষিভিত্তিক সমাজের যে সার্বিক চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে সেটা পুরো বাংলার জন্যই প্রযোজ্য, হয়তো ভারতীয় উপমহাদেশের যে কোন সমতলভূমির জন্যও প্রযোজ্য।

    জোনাথন সুইফটের ‘গালিভার’স ট্রাভেলস’ (১৭২৬)-এর চতুর্থ পর্ব ‘আ ভয়েজ টু দ্য ল্যান্ড অব দ্য হুয়াহনমস’-এ প্রভুর ভূমিকায় থাকা সবাক ঘোড়াদের মুখে যেমন ‘ইয়াহু’ তথা মানুষের সমালোচনা শুনতে পাওয়া যায় এই উপন্যাসেও কেন্দ্রীয় চরিত্র ও কথক ঘোড়াটির মুখে মানুষের দৈহিক ও চরিত্রগত দিকের সমালোচনা শুনতে পাওয়া যায়। সে অবলীলায় মানুষকে অর্থলোভী, তোষামোদকারী, পাজী, বদমায়েশ, মন্দ স্বভাবের, মিথ্যুক, স্বজাতির সাথে কলহকারী, হল্লাবাজ ইত্যাদি বলে গেছে। যেসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘোড়াটি মানুষ সম্পর্কে এমনসব মন্তব্য করছে তাতে তার দাবী যৌক্তিক ও গ্রহনযোগ্য হয়। মুখে দুর্গন্ধওয়ালা ঘোড়ার ব্যাপারী, মুগুরের মতো চেহারার কৃষক, জালার মতো পেটওয়ালা মেদবহুল দারোগা, রোগা প্যাঁকাটি নেংটি ইঁদুরের মতো হোমিও ডাক্তার – ঘোড়াটির মালিকদের এসব দৈহিক বিবরণ খুবই বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাভাবিক। তবে মানুষ সম্পর্কে এরচেয়ে রূঢ় সমালোচনাও ঘোড়াটি করেছে।
    “ঘোড়ায় ঘোড়ায় তফাত কিছু আছে বটে। কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের একি তফাত! আমার প্রথম মনিব তো বলতে গেলে ছিল ভিখিরি। জমিদারবাবু যদি মানুষ হন, তাহলে আমার প্রথম মনিবও মানুষ নয়, দ্বিতীয় মনিবও নয়” ।
    লক্ষণীয় হচ্ছে এইসব সমালোচনা কোনো মানুষের কাছ থেকে নয়, বরং একটি মনুষ্যেতর প্রাণীর কাছ থেকে আসছে। তারপরও পাঠক তাতে অস্বস্তি বা অপমানিত বোধ করেন না যেমন তারা সুইফটের রচনাতেও অস্বস্তি বা অপমানিত বোধ করেননি।

    সাহিত্যসমালোচকরা হয়তো ‘লাল ঘোড়া আমি’কে উপন্যাস না বলে উপন্যাসিকা বলবেন, অথবা বিদ্যমান ‘কিশোর উপন্যাস’-এর তকমাটিকেই সমর্থন করবেন কিন্তু তাতেও এই সাহিত্যকর্মটির গুরুত্ব একটুও কমবে না। সার্বিক বিবেচনায় ‘লাল ঘোড়া আমি’ হাসান আজিজুল হকের তো বটেই গোটা বাংলা সাহিত্যেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা বলে বিবেচিত হবার দাবি রাখে। হাসান আজিজুল হকের রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার শক্তিশালী ভাষা, এই উপন্যাসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেটি বোঝার জন্য উপন্যাসের শেষ অনুচ্ছেদটি দেয়া হলো –

    “তিন তিনবার দাঁড়াতে গিয়ে যখন পড়ে গেলাম, তখন বৃঝতে পারলাম আর চেষ্টা করে লাভ নেই। এ জীবনে আর উঠে দাঁড়াতে পারব না। জীবন আমার শেষ হয়ে আসছে। মানুষের মতো জীবন নিয়ে আদেখলাপনা দেখাই না আমরা। মৃত্যুতেও আমাদের কোন ভয় নেই। মানুষের কাজ করতে গিয়ে, তাদের লড়াইয়ে, তাদের যুদ্ধে হাজার হাজার বছর ধরে আমরা অকাতরে প্রান দিয়ে এসেছি। একটু ভাবলেই তো বোঝা যায়, ওদের ব্যাপারে আমাদের কী? ওদের হিংসায়, ওদের লোভে, ওদের বদমায়েশিতে আমাদের প্রাণ দেবার কোন মানে নেই। তোমরা যদি একবার মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবো, তাহলেই বুঝতে পারবে, মানুষের থেকে আমরা সবদিক থেকেই শ্রেষ্ঠ। শুধু একটা জিনিষের অভাব আমাদের । সে হলো মানুষের বুদ্ধি। এই বৃদ্ধির জোরেই দুনিয়াটা লণ্ডভণ্ড করে বেড়াচ্ছে তারা। আমাদের কেটে টুকরো করে আমাদের মাংসে তাদের পেট ভরাচ্ছে জেনেও আমরা মানুষদের ছাড়তে পারছি না। উচ্ছন্নে যাক মানুষের বুদ্ধি! মৃত্য ঘনিয়ে আসছে আমার। চোখে আর তেমন দেখতে পাচ্ছি না। আমার অন্ধকার ঘরটা আরো অন্ধকার লাগছে। যে মেঝেতে শুয়ে আছি, সে মেঝে ঠাণ্ডা। মাটির গোয়ালের ভিতরে আসছে গা-জুড়ানো বাতাস। কানে আসছে পাখির ডাক। একটুও ভয় করছে না আমার। ঘাড়টা লম্বা করে দিয়ে চেয়ে রয়েছি। চোখ বন্ধ করে আমি যেন আমার মাকে দেখতে পাচ্ছি। আহ্‌! কী শান্তি। আমি এখন মারা যাচ্ছি....”





    ছবিঃ Attribution: Nahid.rajbd, CC BY-SA 3.0, via Wikimedia Commons.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ২১ নভেম্বর ২০২১ | ২৫০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ëñďý Ŕozario | ২১ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৪২501358
  • ভালো 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:49a9:3f9f:6b86:***:*** | ২১ নভেম্বর ২০২১ ১০:১৪501359
  • সুন্দর লেখা 
  • Ranjan Roy | ২১ নভেম্বর ২০২১ ১৯:২৭501370
  • ভালো লেগেছে। বইটার দাম ও প্রাপ্তিস্থান যদি জানিয়ে দেন। 
  • ষষ্ঠ পাণ্ডব | 103.98.***.*** | ২২ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৯501374
  • @Ranjan Roy: এখানে খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার কাছে পাঠাতে পারবে কিনা।

    https://www.rokomari.com/book/33997/lal-ghora-ami
  • Ranjan Roy | ২২ নভেম্বর ২০২১ ২১:৩৭501377
  • ধন্যবাদ, দেখছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন