গুড় নারকেলের ছেইতে ঠাকুমা সাদা এলাচ গুঁড়ো আর কিশমিশ মিশিয়ে পেতলের খাবরি নামিয়ে নিলো উনুন থেকে।
এবার জল ঝরানো লালচিড়ায় ঠাকুমা খানিক ময়দা আর চালের গুঁড়ো মিশিয়ে একটা মণ্ড বানিয়ে নিলো। আর সেই মণ্ড থেকে বানাল অনেকগুলো লেচি।
বেলা ডুবে গেলো। ছায়াহীন উঠোনে এখন খোলা উনুনের ওম। মনিপিসি ধোয়া কাপড়ে সন্ধ্যাবাতি জ্বালাল তুলসীতলায়।
আর এরসাথেই জ্বলে উঠলো রান্নাঘরের বেড়ায় ঝুলানো টিমটিমে ইলেকট্রিক বাতিটা।
লেচিগুলোয় দ্রুতহাতে নারকেলের মণ্ড পুরে দিলো ঠাকুমা। উনুনে উঠলো ঘি মেশানো তেলের কড়াই। অল্প আঁচে তেল তেতে উঠতে সময় নিলো খানিক।
পালদাদু মন্দির আঙিনা থেকে বড়ঘরে গিয়ে উঠলো। কাঠের টেবিলে বেজে চলেছে দাদুর রেডিও। সন্ধ্যা আহ্নিক সেরে দাদুও এসে বসলো পালদাদুর সাথে।
কড়াইয়ে পড়লো লালচিড়ার পুলি। সন্ধ্যার আলগোছ বাতাসে ভেসে আসছে শেফালী ফুলের ঘ্রাণ। শুক্লাদের ঠাকুর ঘর থেকে ছুটে আসছে শঙ্খের শব্দ। ও বাড়ির জেঠি ঠাকুমা সন্ধ্যা পূজায় বসেছে।
চিড়ার পুলিগুলো লাল করে ভেজে নিলো ঠাকুমা। লাল বারান্দায় কেরোসিনের স্টোভে বসেছে চা এর সসপ্যান।
বড় ঘরের মেঝেয় পড়লো পাটি। আজ সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায় ঠাকুমার দেশের গল্প না এলেও সেই দেশের লালচিড়ার গল্প আসবে এ কথায় ও কথায়। সেই গল্পে ঠাকুমা কখনো ঝলমল করে উঠবে তো কখনও নিশ্চুপ।
আর সব ছাড়িয়ে কাঠের টেবিলে দাদুর নিশ্চল রেডিও গেয়ে চলবে,
জীবন নদীর কুল কিনারা নাই
সুখের তরী ডুবে গেছে...,
দুখের সাথি নাই রে
চোখের জলে নদী বইয়া যায়..