এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরি - প্রথম কিস্তি

    শতরূপা বসুরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১১ | ৭০০ বার পঠিত
  • শ্যামাসুন্দরী দাসী! জন্ম ১৯২৭ মাঘ মাস, তারিখটা লেখা ছিল না ডায়েরির কোথাও. প্রথম যেদিন এটি আমার হাতে আসে তখন কলকাতার এক পত্রিকার অফিসে সামান্য মাইনের একটা চাকরি করি- তাও পার্ট টাইম। মাসে হয়ত একটা লেখা ছাপা হয়, কখনো তাও হয় না।

    এক বৃষ্টিঘন অন্ধকারের দিনে এক বন্ধুর বাড়িতে চায়ের নেমন্তন্ন ছিল সেদিন আমার। বাইরে তখন বৃষ্টি নেমেছে অঝোরে আর ভেতরে চলেছে অনেক বন্ধুদের সঙ্গে ফেলে আসা দিনের স্মৃতি রোমন্থন। হঠাতই বন্ধুর বইয়ের কালেকশন দেখতে দেখতে এই ডায়েরিটা চোখে পরে আমার। বন্ধুকে ডেকে জিজ্ঞেস করি, "এটা কার ডায়েরি রে? দেখব একটু"? বন্ধু তখন ধোঁয়া আর বাস্তব নিয়ে সোফায় শুয়ে শুয়ে অন্য আরেকজনের সঙ্গে লড়াই করছে আর বৃষ্টি দেখছে, আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, "দেখ না...! আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন'?

    অন্য লোকের ডায়েরি চট করে খুলে পড়তে একটু বাধে বৈকি... কিন্তু ওই লাল শালুতে মোড়া ঝুরঝুরে পাতা গুলো যেন নিজেই সেদিন আমায় হাতছানি দিয়ে ডেকে বলেছিল "খুলে দেখ আমায়'। এক পাতা পড়েই বন্ধুকে বলেছিলাম, "এ জিনিস তোরা কোনো লাইব্রেরিকে দিস নি? এ তো একটা ক্লাসিক রে...! যেকোনো বড় লাইব্রেরি এটা পেলে লুফে নেবে!'

    সেই থেকে এই ডায়েরি নিয়ে কাজ করেছি আমি। আমার পড়াশুনার অনেকটা ভাগ জুড়ে আছে এই ডায়েরি আর এর পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ এক অনন্য সাধারণ জীবনচরিত: শ্যামাসুন্দরী ... তারই জীবনের গল্প।

    শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরির পাতায় চোখ রাখার আগে একটু পূর্বকথা বলা প্রয়োজন- নদীয়া জেলার শান্তিপুরে শ্যামাসুন্দরীর জন্ম। বাবার নাম নীলমণি গোস্বামী, মা শ্রদ্ধাময়ী দেবী। শ্রদ্ধাময়ীর বিয়ে হয় ৬ বছর বয়সে। ১৪ বছর বয়সে প্রথম সন্তান জন্মায় কিন্তু তা আঁতুড় ঘরের বাইরে আর বেরোয়না। ২ দিন যেতে না যেতেই সেই সন্তান মৃত বলে ঘোষণা করে দাই... এর পর ১৫ বছর বয়সে শ্রদ্ধাময়ী দ্বিতীয়বার জন্ম দেয় আরেকটি মৃত সন্তানের। পর পর দুবার এরকম হওয়ায় গোস্বামী বাড়ির ১০০ বছরের বিগ্রহ রাধামাধবের পুজো বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে নামে শোকের ছায়া। বউ "অপয়া', নীলমণির "আবার বিবাহ দেওয়া হউক'। এমনি নির্ধারণ করেন নীলমণির মা শ্যামাকালী। নীলমণি ৭ ভাইবোনের সবার বড়। তার বয়সও তখন ২৩ ছুঁই-ছুঁই। কিই বা এমন বয়স? এ বয়সে শ্যামাকালীর উনি তো ২ সন্তানের পিতা।

    নীলমণি আর নিশিকান্ত দু ছেলের পরে যখন রাসু জন্মায় তখন ক্ষিতিমোহন, নীলমণির পিতাঠাকুরের বয়স মাত্র ২৪.. তাই যখন ২৩ বছরেও নীলমণি পিতা হতে পারল না তখন ছেলের আবার বিয়ে দেওয়াই ঠিক কাজ বলে মনে করলেন ক্ষিতিমোহন আর শ্যামাকালী।

    কৃষ্ণনগর থেকে মেয়ে খুঁজে বের করলেন শ্যামাকালী নিজে। শ্যামাকালীর ছেলেবেলার গ্রাম কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে প্রায় ৩০০ মাইলের রাস্তা। সে পথ গরুর গাড়ি করে পেরোতে হয়, মাঝে আবার একটা সাঁকো আছে... সে সাঁকো পেরোতে হয় পায়ে হেঁটে.. তারপর আবার গরুর গাড়ি... শ্যামাকালী অবশ্য পুরোটাই গেলেন পালকিতে বেহারার কাঁধে চড়ে। হুন হু না হুন হু না করতে করতে শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগরের সেই প্রত্যন্ত গ্রামে যখন এসে পৌছলেন শ্যামাকালী ও ক্লান্ত বেহারার দল তখন তার ছেলেবেলার সই এসে তার নাতনির কথা বললেন শ্যামাকালীকে। "গায়ের রং ময়লা হলে কি হবে, নাতনি আমার খুব গুণী। ঘর নিকোতে জানে, উনুন জ্বালতে পারে, রান্নাও শিকেচে, মুখে রা টি নেই... এমন লক্ষ্মী মেয়ে কোতায় পাবে শুনি?' শ্যামাকালী সেই ৪ বছর বয়সে একদিন ঘাটে যাবার সময় সই পাতিয়েছিল এই অকাল বিধবা বিজয়ার সঙ্গে। সেই থেকেই দুটি তে খুব ভাব। আম পাতার ওপরে দুজনে হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে আমরণ বন্ধুত্বের। গঙ্গাজল দিয়ে মন্ত্র পড়ে সেই পাতা আম বাগানে গাছের নিচে পুঁতে দিয়ে বলেছিল তুমি আমার জন্মজন্মান্তরের সখী... তাই এই সখীর কথা কেমন করে ফেলবে শ্যামাকালী? একেবারে মেয়ে নিয়েই শান্তিপুর যাবেন ঠিক করেন.. সেইখানে গিয়েই সেই অষ্টাদশীর সঙ্গে ছেলের বিবাহ দেবেন এমন যখন সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে তখন খবর এলো শ্রদ্ধাময়ী নাকি আত্মঘাতী হতে চলেছে স্বামীর অন্যত্র বিয়ের কথা শুনে। তড়িঘড়ি শ্যামাকালী শান্তিপুর ফিরে যান একা। এবং স্থির হয় যে শেষ চেষ্টা করে দেখবেন শ্যামাকালী। যদি সামনের মাঘ মাসের মধ্যে শ্রদ্ধাময়ী "জ্যান্ত" সন্তান প্রসব না করতে পারে তাহলে ওই কৃষ্ণনগরের সই এর নাতনি নীলমণির ঘাড়ে চাপাবেন তিনি।

    হিন্দু শাস্ত্রে আছে মনুষ্য জন্ম নাকি আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে... শ্রদ্ধাময়ী হয়ত সেই বিধাতার নিয়ম মেনেই মাঘ মাসের এক জ্যোৎস্নাস্নাত রাত্রে জন্ম দিল আরেক সন্তানের.. আঁতুড় ঘরে কান্নার শব্দে সেই শীতের রাত্রেই শুরু হলো হইচই বাড়ি ময়... দাই এসে নারী কেটে একটি কালো কষ্টি পাথরের মত ঝকঝকে কন্যা সন্তান এনে তুলল শ্যামাকালীর হাতে... " ও মা এযে মিশকালো গা... এমন কালো মেয়ে দেকেচ কোনদিন? আ মোলো যা!.. আমার ভাগ্যেই কি এমনটি ছিলো?' শ্যামাকালী ভর্ৎসনার সুরে বলে ওঠে। নীলমণি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে "কৈ দেকি দেকি' বলে আঁতুর ঘরের দিকে ছুটে যায়- অমনি চারু দাসী এসে বলে শ্রদ্ধাময়ীর শ্বাস পড়ছে না, কালো মেয়ের কথা ভুলে, নিয়ম ভুলে, নীলমণি ঢুকে দেখে আঁতুর ঘরে শ্রদ্ধাময়ী এক বুক রক্ত গায়ে মেখে, এলো চুলে চোখ খুলে পড়ে আছে। নীলমণির পেছন পেছন ক্ষিতিমোহনও আঁতুর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দাই ঘরের ভেতরে ঢুকে নারী টিপে বলে, "বউ যে মোলো, বউ যে আর নেই গো'।

    এই সমস্ত ঘটনা ডায়েরির পাতায় লেখা ছিল না অবশ্যই। আমার কাজের স্বার্থে আমি এ গল্প জেনেছি, as a part of my background work। আমি ২০০১ সালে শান্তিপুর যাই এবং সেখান থেকেই এই তথ্য আমি সংগ্রহ করে আনি।

    তারপর থেকেই শুরু হয় এই ডায়েরি নিয়ে পড়াশুনা। ইতিমধ্যে রাসসুন্দরী দেবীর "আমার জীবন' প্রকাশিত হয়েছে। সেকালের মেয়েদের জীবন নিয়ে লেখালেখিও হয়েছে প্রচুর। আশাপূর্ণা দেবীর "প্রথম প্রতিশ্রুতি' নিয়ে রিসার্চ করতে বিদেশ থেকে লোক আসছে।। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের মহিলাদের নিয়ে রিসার্চ চলছে সেই একই আগ্রহ নিয়ে। women 's studies থেকে দলে দলে ছাত্র ছাত্রী সেই সময়ের মেয়েদের আত্মজীবনী নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু তবুও এই অখ্যাত শ্যামাসুন্দরীর অজানা ডায়েরির কথা আমি ভুলতে পারিনি।

    লালশালু খুলে যখন প্রথম পাতা ওল্টালাম, ভেবেছিলাম না জানি কি অজানাকে জানব! কিন্তু না, যা দেখলাম তা অভাবনীয়।

    পৃষ্ঠা ১: শুধু একটা শব্দ লেখা "শিশু' আর তারপর বাকি পাতা খালি -

    পৃষ্ঠা ২: একটা ছবি - ঘর, খাট, উনুন, ঝাঁটা, তারপর পাতার নিচের দিকটায় বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে কালো কালির শুধুই হিজিবিজি।

    পৃষ্ঠা ৩: একটা সাদা পাতা, নীচে কোণার দিকে একটা সাপ আঁকা। তার তলায় লেখা: বিষ, মৃত্যু, কান্না...

    ইতিমধ্যে কলকাতা ছেড়ে আমি বিদেশে পাড়ি দি... ইংরিজি সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হই ইংরেজদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সাবজেক্ট ভিক্টোরিয়ান লিটারেচার। একদিকে Elizabeth Barret Browning , Elizabeth Gaskel পড়ছি অন্যদিকে শ্যামাসুন্দরী আমার কানে বাজছে। যেন আমি শুনতে পাচ্ছি ওর চোখের জল এর শব্দ।।শেষে না পেরে একদিন আমার মেন্টরকে দেখালাম ওই ডায়েরি, বললাম পূর্বকথা: কী করে জন্ম শ্যামাসুন্দরীর, কোথায় জন্ম,... সব।

    Geraldine Forbes সেই সময়ে আমেরিকা থেকে এসেছিলেন আমাদের কলেজে একটা লেকচার সেসন করবেন বলে। আমার মেন্টর সেই ডায়েরি ওনার হাতে তুলে দিলেন। Geraldine Forbes বহু দিন কলকাতায় কাজ করেছেন। Ranajit Guha, Gayatri Chakravorty Spivak-এর সঙ্গেও Geraldine Forbes জড়িত ছিলেন। বহু বছর কাজ করেছেন ওনাদের সঙ্গে। তিনি নিজেও "women in modern india' বলে একটি বই লিখেছিলেন। Geraldine Forbes সেই ডায়েরি পেয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, "এর কি কোনো কপিরাইট আছে?' আমি বললাম, "না! যার থেকে এনেছি সে আমার বন্ধু। কিন্তু তার বিশেষ ইন্টারেস্ট নেই এই সবে।'

    সেই থেকে ওনার সঙ্গে কাজ শুরু করি আমি। শ্যামাসুন্দরী আমার রাত্রের ঘুম কেড়ে নেন। কলেজ থেকে ছুটি মঞ্জুর হয়। বিশেষ ছুটি, স্টাডি লিভ - আমি পাড়ি দিই শান্তিপুর... সঙ্গে Geraldine Forbes।

    যে সময় গিয়ে পৌছই আমরা সে সময়টা শান্তিপুরে রাস উৎসব। ৪ দিন ধরে চলে এই উৎসব। শান্তিপুরে বেশিরভাগই বৈষ্ণব ভাবাপন্ন মানুষের বাস। শ্রী চৈতন্যদেব নাকি পুরী যাওয়ার পথে এই শান্তিপুরে এসেই বিশ্রাম করেছিলেন। তাছাড়া শান্তিপুর অদ্বৈতাচার্যের জন্মস্থান। এখনো একটা জায়গা আছে বাঁধানো গঙ্গা তীরে যেখানে তিন মহাপ্রভু, অর্থাৎ চৈতন্যদেব, নিত্যানন্দ এবং অদ্বৈতাচার্য একসঙ্গে বসে আধ্যাত্মিক আলোচনা করেছিলেন।

    যেদিন মাঝের রাস সেদিন আমরা পৌছলাম শান্তিপুর। Geraldine Forbesততদিনে আমার বিশেষ কাছের লোক হয়ে গেছেন। কলকাতায় ফিরে আমার মা তাকে হাত দিয়ে ভাত খাইয়ে তবে ছেড়েছে। তাই দু দিন আমাদের বাড়িতে থাকার পরেই Geraldine, ‘Gerry’ তে পরিণত হয়েছে। প্রথমে লোকাল ট্রেনে তারপর ভ্যান রিক্সা করে আমরা গেলাম গোঁসাই বাড়ি। সেখানেও ওই রাধা কৃষ্ণ বিগ্রহ। যে বিগ্রহের কথা শ্যামাসুন্দরী তার ডায়েরিতে লিখে গেছেন। কালো কষ্টিপাথরের বিগ্রহ রাসমঞ্চে হাওদার ওপরে বসানো। সারা গায়ে সোনার গয়না ঝকঝক করছে। পাথরের মূর্তির এমন রূপ আগে কখনো দেখিনি আমি। সেই সঙ্গে নেমেছে ভক্তের ঢল। আরতি হচ্ছে। শাঁখ বাজছে, ধূপ ধুনোর গন্ধে সারা মন্দির চত্বর যেন ফেটে পড়েছে ভক্তিতে আর প্রেমে। আমরা দেখা করলাম বাড়ির কর্তার সঙ্গে। (বিশেষ কারণে এখানে ওনার নামের উল্লেখ করছি না)। যিনি আমাদের সঙ্গে কথা বললেন শ্যামাসুন্দরী তার ঠাকুমা। জানলাম আরো অনেক তথ্য। জানলাম কী করে শ্যামাসুন্দরী সেই তার "নতুন মা' এর কাছে বেড়ে উঠেছিলেন। শ্যামাকালী কী চোখে দেখতেন শ্যামাসুন্দরীকে। কী ভাবে কেটেছে শ্যামাসুন্দরীর ক্ষণজন্মা জীবন।

    কিন্তু তখনও সেই ডায়েরির শ্যামাসুন্দরী আমাদের কাছে অচেনা। সেই টুকরো টুকরো শব্দ আর ছবির মধ্যে দিয়ে কোন শ্যামাসুন্দরীর পরিচয় পাব, সেই কৌতুহল বুকের মধ্যে ধরে রাখা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছিল।

    শ্যামাসুন্দরীর নামকরণ করেছিলেন শ্যামাকালী। মুখ বেঁকিয়ে পাশের বাড়ির মেজগিন্নিকে বলেছিলেন, "ভারী তো সুন্দর মেয়ে! "কালো মাগী' নাম যে রাখিনি এই ঢের, আর জন্মের পুন্নি গা যে এই বংশে জম্মালো। নাও একন এ বোঝা সামলাও!' শ্যামাকালীর হাতেই বড় হয়ে ওঠে শ্যামাসুন্দরী। বাবা তো সেই সময় "নতুন কচি বউ' পেয়ে আত্মহারা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছেলের জন্ম দেয় সেই কচি বউ - বাড়িময় সেদিন হুলুস্থুলু! লাল বেনারসি পরে মাথায় সিন্দুর পায়ে আলতা গা ভর্তি গয়না পরে শ্যামাসুন্দরীর "নতুন মা' ছেলে কোলে আঁতুড়ঘর থেকে নিজের ঘরে গেল। সেদিন ১০০ ব্রাহ্মণ আর ৫০ জন কাঙালী খাওয়ানো হয়েছিল এই গোস্বামী বাড়িতে। লোকে বলেছিল, "কচি বউ বিয়ে করলে কি হবে? নীলমণির ক্ষেমতা আচে।' পাড়ার বউ ঝিরা সেদিন ঘাটে গিয়ে ওই একই কথা আলোচনা করছিল। "কালো বউ! চেহারার কোনো ছিরি আচে?' তবুও এর সাতখুন মাপ। ছেলের মা বলে কথা, তার কি আর রূপের দরকার আছে? সে ছিল শ্রদ্ধাময়ী। যেমন টকটকে গায়ের রং তেমনি পেটানো চেহারা। চুল যেন রেশমের মত। সাক্ষাৎ জগৎজননী - কিন্তু কী ভাগ্য! এর চেয়ে এই নতুন বউ ঢের ভালো। নীলমণির নতুন বউ এর নাম ব্রজবালা। সেই মেয়ে সত্যি গুণী মেয়ে। জানে কি করে স্বামী কে বশে রাখতে হয়। ফি বছর স্বামীর কোলে একটা করে পুত্র সন্তান এনে দেয়। আর রাজরানি হয়ে বাড়ির মধ্যে দাপটে ঘুরে বেড়ায়। শ্যামাসুন্দরী যায় হারিয়ে সেই নতুন মায়ের দাপটের তলায়, নতুন মায়ের 'কালো' ছেলেদের ভিড়ে। ছোটবেলা থেকেই শ্যামাসুন্দরী অন্যরকম - চুপ চাপ, গম্ভীর। সে সময় মেয়েরা একটু আদটু পড়াশুনা শিখত। বাড়িতেই পন্ডিত মশাই এসে পড়াশুনা করাতেন, সকাল-সন্ধ্যে। তার সেই ভাইদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে সবে যখন একটু সংস্কৃত শিখতে শুরু করেছে । শ্যামাকালী একদিন নীলমণিকে ডেকে বললেন, "এই কালো মেয়ে নিয়ে কতদিন আর ভুগবি? ৫ বছর তো হলো আমি এই বার ছেলে দেকি একটা? এই কালো মেয়ের ছেলে খুঁজতেও তো সময় লাগবে? কে বিয়ে করবে?'

    যে কোনও তথ্য যখন তা ইতিহাসের পর্যায়ে চলে যায় তার একটা আইডেনটিটি ক্রাইসিস থেকে যায়। বিশেষ করে লোকের মুখে শোনা কথা- সেটাকে ইতিহাস বলে ধরে নেওয়া খুব কঠিন। কারণ প্রমাণ একমাত্র যিনি বলছেন তিনি। আর তো কোনো প্রমাণ নেই। শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরি কোন সময় থেকে উনি লিখতে শুরু করেছিলেন সেটা জানা যায় নি, উনি যে ডায়েরি লিখেছেন কোনদিন সেটাও ওনার পরিবারের লোক জানতেন না। কিন্তু ডায়েরিতে নামটা লেখা ছিল বলে আমরা জেনেছি যে ওটা শ্যামাসুন্দরীর লেখা ডায়েরি। ওই প্রথম পাতার "শিশু' শব্দটি উনি শিশুকালেই লিখেছিলেন না বিয়ের পরে স্মৃতি রোমন্থন করে লিখেছিলেন সেটা আমরা জানি না। তাই ওই গোস্বামী বাড়ির ৯৫ বছরের বৃদ্ধ যেমন করে আমাদের শ্যামাসুন্দরীর কাহিনী শোনালেন সেইটাই আমাদের বিশ্বাস করে নিতে হলো। মন্দিরের দাওয়ায় বসে যতই ওই বৃদ্ধ আমাদের গল্প শোনাচ্ছেন ততই আমি দেখছি জেরির মুখের রং পাল্টাচ্ছে - শ্যামাসুন্দরীকে বার বার "কালো' "কালো' বলে সম্বোধন করায় একবার দেখলাম জেরি "damn' বলে চেঁচিয়ে উঠলো। বুঝলাম ওর ফ্রাসট্রেসন লেভেল কোন অব্দি পৌঁছেছে!

    যে কোনো ডায়েরি নিয়ে পড়াশুনা করার আগে এই ধরনের "পূর্বকথা' বা background work করাটা খুব দরকার। না হলে যখন লেখিকাকে বোঝার সময় আসবে শুধুই পাতার অক্ষরগুলো দিয়ে সেটা সম্ভব হবে না। যে জীবনটাকে অতিবাহিত করে লেখিকা ডায়েরি লিখেছেন সেই জীবনটা জানা খুব প্রয়োজন। কারণ ডায়েরির পাতায় ওই হিজিবিজি কাটারও একটা মানে আছে। এমনিএমনি ডায়েরি লিখতে বসে পাতা ভরে কেউ হিজিবিজি কাটে না। কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ ভদ্রলোক একটু জিরোতে চাইলেন। আমরাও বললাম, "ঠিক আছে, আমাদের কিছু প্রশ্ন জেগেছে সেইগুলি তাহলে আপনাকে করি। আপনি শুধু উত্তর দিয়ে যান। এতে কথা হয়ত কম বলতে হবে।' জেরি করলো প্রথম প্রশ্ন। "শ্যামাকালীর গায়ের রং কিরকম ছিল'? আমাদের ওই ডায়েরি সম্পর্কে পড়াশুনার সময় শ্যামাকালীর গায়ের রং জেনে কি লাভ হবে ঠিক বুঝলাম না, কিন্তু তবুও প্রশ্নের তাৎপর্য বুঝতে আর বাকি রইলো না কিচ্ছুই। এখানে বলে রাখা ভালো যে জেরি খুব ভালো বাংলা জানে। কলকাতায় এসে কাজ করার সময় সে ইস্তিরিওয়ালা, দুধওয়ালা সবার সঙ্গে বাংলায় কথা বলে। ট্যাক্সিওয়ালাকেও বাংলায় বাড়ির ঠিকানা বলে, "কত হলো' জিজ্ঞেস করে। তাই ওই বৃদ্ধের কথা বুঝতে ওর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় নি। বৃদ্ধ এই প্রশ্নে একটু হেসে আমাদের বললেন, "হ্‌ম্‌ম্‌ ওই জন্যইতো ওনার নাম শ্যামাকালী। মিশ্‌মিশে কালো গায়ের রং ছিল শুনেছি ওনার, আমি দেখিনি ওনাকে-' আমাদের বাংলাদেশের কালো মেয়ের এরকম অনেক কাহিনী শোনা যায়। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে অভ্যস্ত। কিন্তু সেই বিদেশিনীর সামনে তবুও সেদিন লজ্জা পেয়েছিলাম। জেরি এই দেশের অনেক নির্যাতিত অভাগী গৃহবধুদের নিয়ে কাজ করেছে, ওর কাছে কিচ্ছুই অজানা নয়.. তবুও.. সেদিন আমি লজ্জা পেয়েছিলাম। জানতাম না লজ্জার তখন অনেকটাই বাকি ছিল। শ্যামাসুন্দরীর কাহিনী যতই শুনছিলাম ততই লজ্জা পাচ্ছিলাম। আর মনটা ভারী হয়ে উঠছিল।

    অন্যদিকে তখন মাঝের রাসের পুজো শেষ হয়ে গেছে। ঠাকুর দালানে আসন পেতে সবাই তখন রাত্রের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা শুরু করেছে। পরের দিন ভাঙা রাসের জন্য বড় বড় ইলেকট্রিক গেট তৈরী হচ্ছে গোস্বামীবাড়ির সদর দরজার বাইরে। ঘোড়া এনে রাখা রয়েছে হাওদা টানবার জন্য। আর রয়েছে ১০৫ জন ঢাকি। এমন আড়ম্বরের মাঝেও আমাদের সেই বৃদ্ধ গোঁসাই বলে চললেন তার জীবনের ইতিহাস। সেই সঙ্গে আমরাও লিখে চললাম শ্যামাসুন্দরী দাসীর দু:খের দিনলিপি।

    শ্যামাকালী মারা যান ১৯৩৪ সালের দূর্গা পুজোর অষ্টমীর দিন। কিন্তু যাবার আগে তিনি পার করে গিয়েছিলেন তাদের বংশের ওই "বোঝাকে'। এই গোঁসাই বাড়ির সব চেয়ে বড় ছেলে গোপাল গোস্বামীর সঙ্গে। এরা অদ্বৈতাচার্য়ের বংশধর। কুলে, মানে এদের পরিবার শান্তিপুরে বিখ্যাত। শ্যামাকালী যাবার আগেই নিজের হাতে বিয়ে দিয়ে যান শ্যামাসুন্দরীর। ডায়েরির ৬ নম্বর পাতায় একবার শ্যামাসুন্দরী তার বিয়ের কথা লিখেছিলেন। সেই বৃদ্ধের কথা আর ডায়েরির কথা আমরা পরে মিলিয়ে দেখেছিলাম। যখন দেখলাম মিলে যাচ্ছে তখন ওনার বাকি কথাগুলো আরো বেশি করে সত্যি বলে মনে হলো। বলা বাহুল্য আমাদের কাজ ও অনেকটা সহজ হলো। সেই বৃদ্ধের কাছ থেকে আর বেশি কিচ্ছু জানার আমাদের প্রয়োজন ছিল না। শ্যামাসুন্দরীর জীবনের বাকিটুকু তিনি নিজেই লিখেছিলেন বা এঁকেছিলেন তার ডায়েরির পাতায়। শুধু একটা প্রশ্ন আর..! তখন তো ছেলে মেয়েদের আঁকা শেখানো হত না, তাহলে এমন নিখুঁত ভাবে ওই পাখির ছবি কি করে আঁকলেন শ্যামাসুন্দরী? সেই বৃদ্ধ এবারে সত্যি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবুও তার উৎসাহ দেখে আমরা অভিভূত হয়েছিলাম। এমন মনের জোরও আমরা কল্পনা করতে পারি না। হাত কাঁপছে, মুখের একদিক বেঁকে গেছে গত বছরে স্ট্রোক হওয়ার পর। তবুও কি স্মৃতিশক্তি ভদ্রলোকের! শান্ত কন্ঠে বললেন, "না: আঁকা টাকা শেখাবে কে? সেই সময় মেয়েরা খুব ভালো হাতের কাজ জানত। আমার ঠাকুমার করা অনেক টেবিলকভারএ ওরকম পাখি দেখেছি। মনে হয় সেলাই জানতেন বলে আঁকতে অসুবিধা হত না ওনার'।

    এর পর আমরা আবার ফিরে গেলাম ইংল্যান্ডে। আমার সেমিস্টার সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই ডায়েরি ছিল আমার dissertation। তাই ফিরে গিয়ে আবার কাজ করতে শুরু করলাম নিজের মত করে। বাকি ছিল আর ৩ মাস। সেই ৩ মাসেই আমায় শেষ করতে হবে ডায়েরি সবটুকু পড়া। বোঝা এবং শেষে শ্যামাসুন্দরীকে বোঝা।

    তারপর আবার শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরিকে ইংরিজিতে ট্রান্সলেট করা।

    শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরির পাতা থেকে কিচ্ছু তথ্য -

    পৃষ্ঠা ৬: আমার বিয়ে হলো। তখন শীত কাল। লাল বেনারসী পরতে পাইনি। লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে বিয়ে হয়েছিল আমার। ফুলের মুকুট ছিল। মার গয়না পরেছিলাম মনে আছে। আর কিচ্ছু মনে নেই, শুধু লাল বেনারসী না পরতে পারার দু:খ আজও ভুলি নি। খোকাকে বলেছি আমি মরলে লাল বেনারসী দিয়ে আমায় সাজাতে। আমি জানি উনি যাওয়ার আগেই আমি যাব। তাই তো পরম করুণাময়ের ওপরে এত ভরসা..

    পৃষ্ঠা ১৮: আমার বাড়িতে রাধা কৃষ্ণর বিগ্রহ আছে। শ্বশুরঠাকুর নিজেই নিত্য পুজো করেন। আজ পুজো করতে করতে তিনি অসুস্থ হলেন।

    পৃষ্ঠা ১৯: শ্বশুর ঠাকুর আজ মারা গেলেন। আমার পিতৃবিয়োগ হলো।

    বেশ বড় মাপের নিজের হাতে সেলাই করা এই খাতা শ্যামাসুন্দরীর। কিন্তু সারা পাতা জুড়ে শুধু ওই এক লাইন কি দু লাইন লেখা। একটা গোটা মানুষকে জানার জন্য ওইটুকুই বোধ হয় যথেষ্ট নয়। যেমন তার লেখা তেমন ভাবে শ্যামাসুন্দরীকে কল্পনা করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমি যেখানে এসে প্রবলভাবে ঠোক্কর খেলাম তা হলো প্রথম কয়েকটি পাতা এবং পরের দিকে আরো কয়েকটি পাতা জুড়ে যে ছবি গুলো ছিল সেইখানে। সেই ছবিগুলো আমাকে ভীষণ ভাবে বিভ্রান্ত করলো। আবার লিখলাম জেরিকে। ও তখন আমেরিকা চলে গেছে। ওই ৩ মাসের মধ্যে ইংল্যান্ড এ ফেরার ও কোনো সম্ভবনা নেই। তাই উনি লিখে দিলেন একটা চিঠি। আমার মেন্টর ইন্ডিয়ান রাইটিং নিয়ে যতটুকু জ্ঞান সবটা দিয়ে আমায় সাহায্য করলেন কিন্তু ওই ইম্প্রেসন বুঝে তার ব্যাখ্যা ওনার পরিধির বাইরে। তাই জেরির চিঠি আর ইউনিভার্সিটির মেন্টরের চিঠি নিয়ে আমি লাল শালুতে মোড়া শ্যামাসুন্দরীকে সঙ্গে নিয়ে পৌছলাম যাঁর কাছে তিনি ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড রাইটিং এর একজন দিকপাল। নাম William Radice।

    ১৯৮৬ সালে "আনন্দ পুরস্কার' প্রাপ্ত এই বিশাল ব্যক্তিত্বর কাছে গিয়ে যখন দাঁড়ালাম গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো। তিনি ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে আমায় বললেম, "এটা তো মাস্টারপিস।' ঝরঝরে বাংলায় কথা বললেন উনি আমার সঙ্গে। ১৯৮৭ সালে oxford university থেকে বেঙ্গলি লিটারেচারে ডি.ফিল করেছিলেন উনি। রবিঠাকুর গুলে খেয়েছেন। মাইকেল মধুসুদন কন্ঠস্থ তাঁর। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিদেশে এমন ভাবে কেউ আগলে রেখেছে জেনেও ভালো লাগে। আর আমি যে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারব সেটা ভেবে আরো ভালো লাগছিল সেদিন।

    আমার কাছ থেকে ঘন্টাখানেকের সময় চেয়ে নিলেন। তারপরে বললেন আমি তোমায় impressonism নিয়ে কিছু বলতে চাই। ইতিমধ্যেই ওই ১ ঘন্টায় উনি ডায়েরি পড়ে শেষ করেছিলেন। আমরা ওনার কেবিন এ গিয়ে বসলাম। ঢুকতেই যেটা দেখে আমার চোখে জল এলো তা হলো একটা রবিঠাকুরের নিজের হাতে আঁকা "পুষ্প"। গলানো সোনার মত রঙের একটা ফ্রেমে বাঁধানো। ঢুকেই নজর কাড়ে সবার। আমি মুগ্ধ হয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ওনার টেবিলের এক দিকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।

    impressionism শব্দটা আমাদের সকলের চেনা একটা শব্দ। মিড নাইন্টিন সেঞ্চুরি ফ্রেঞ্চ পেন্টিং থেকে এই শব্দের উৎপত্তি। "Impressionism' বোঝাতে গিয়ে Radice আমায় যা বলেছিলেন সেইটাই আমি তুলে ধরছি এখানে। ভাষাটাও এক রাখলাম। আমি ওনার লেখা ট্রান্সলেট করলে তার ভার কমে যাবে।

    The term ‘Impressionism’ comes from the school of mid-nineteenth century French painting, which was in reaction to the academic style of the day. The Impressionists, as they called themselves, made the act of perception the key for the understanding of the structure of reality. They developed a technique by which objects were not seen as solids but as fragments of colour which the spectator’s eye unified. The basic premise involved was that “truth” lay in the mental processes, not in the precise representation of external reality.

    The literary use of the term ‘Impressionism’ is, however, far less precise. Many of the French Symbolist poets have at one time or another been called Impressionists. In England, Walter Pater, concerned with aesthetic matters, used the term ‘impressionism’ in ‘The Renaissance’ (1873) to indicate that the critic must first examine his own reactions in judging a work of art. Arthur Symons felt that the Impressionist in verse should record his sensitivity to experience, not the experience itself; he should express the inexpressible. In Wilde’s ‘Impression du Matin’, perhaps influenced by Whistler’s painting, the Impressionist technique is apparent in the subjectivity of description.

    In the modern novel, ‘Impressionism frequently refers to the technique of centering on the mental life of the chief character rather than on the chief character rather than on the reality around him. Writers such as Proust, Joyce and Virginia Woolf dwell on their character’s memories, associations, and inner emotional reactions. In ‘A Portrait of the Artist as a Young Man’, for example, Joyce presents Stephen Dedalus’ unarticulated feelings but little of physical surroundings.

    আরো অনেক জ্ঞান অর্জন করে ফিরলাম আমার হোস্টেলের ঘরে। চলল এবারে আমার শ্যামাসুন্দরীকে খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা। যিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন সমাজের কিচ্ছু কুসংস্কার আর মিথ্যার অতলে। "কালো' মেয়ের পরিচয় ছিল যার একটি মাত্র পরিচয় তাকে আজ সবার সামনে এই বিদেশের মাটিতে। আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার জেদ চাপলো আমার মধ্যে।

    শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরি মোট ২২৩ পাতার। মাত্র ৬০ বছরের জীবন তার, কিন্তু কয়েকটা ছোট ছোট শব্দের মধ্যে তিনি তার সমস্ত জীবনের কথা বলে গেছেন নিঁখুত ভাবে। ২২৩ পাতার মধ্যে বেশিরভাগ পাতাই খালি। কিছু পাতায় দু চারটে শব্দ । কোনো পাতায় শুধুই হিজিবিজি আর কোথাও ছবি। থিসিস এর জন্য সেই সমস্তর একটা চার্ট বানিয়েছিলাম সেইটাই তুলে ধরছি এখানে:

    বক্তব্য লেখা ১৬৩ পাতা - এর মধ্যে কয়েকটা পাতা জুড়ে শুধু একটা কি দুটো শব্দ

    ছবি আঁকা ৩০ পাতা

    ১০ পাতা হিজিবিজি কাটা

    সাদা পাতা ২০

    শ্যামাসুন্দরীর পড়াশুনা শুধু ওই পন্ডিতমশাইয়ের কাছে শেখা অল্প কিছু সংস্কৃত। তারপর ৬ বছর বয়সে যখন বিয়ে হয়। তখন সেকালের নিয়ম মেনে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে শ্বশুরকুলের মর্যাদারক্ষার্থে নিজের অস্তিত্বকে শুধুই ঘোমটার আড়াল থেকে দেখা। দিনের শেষে স্বামী গোপাল গোস্বামী যখন বাড়ি ফেরেন ক্লান্ত "স্বামীর চরণে' তখন "দু দন্ডের আশ্রয় মেলে'। সেই সময় একদিন স্বামীর কানে কানে ফিস ফিস করে শ্যামাসুন্দরী বলে ওঠে "আমি পড়াশুনা শিখব?' তখনকার দিনে মেয়েদের পড়াশুনা শেখাটা ছিল পাপ। পড়াশুনা শিখলে মেয়েরা নাকি সংসার ধর্ম ভুলে যায়। কিন্তু গোপাল গোস্বামী নিজে ছিলেন শান্তিপুরের নাম করা ডাক্তার। কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে সে সময় শান্তিপুরের গ্রামের এক হাসপাতালে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাই হয়ত তার চিন্তাধারাও ছিল উদার। একদিন বিকেলে কলকাতা থেকে ফেরার সময় শ্যামাসুন্দরীর জন্য বই আর স্লেট কিনে আনলেন। কিন্তু পড়াশুনা নিজে হাতে শেখানোর মত সময় তার ছিল না। তাই বইএর অক্ষর দেখে দেখে নিজেই স্লেট নিয়ে শ্যামাসুন্দরী তার শব্দের ভাণ্ডার বাড়িয়ে তোলেন।

    পৃষ্ঠা ২১: পড়তে পারি আমি!
    শব্দ জানি আমি!
    কেউ জানে না জানুন!
    আমার আনন্দ আজ দারুণ!
    উৎসাহে মরি আমি!

    পৃষ্ঠা ২২: এক রাশ ফোটা ফুলের ছবি।

    পড়তে পারার আনন্দ উপভোগ করতে করতে একটা গোটা ছড়াই গেঁথে ছিলেন সেদিন নিজের অজান্তে শ্যামাসুন্দরী। কিন্তু তার কথা কেউ জানতে পারেনি কখনো, এমনকি তার স্বামীও না। পরের পাতাতেই এক রাশ ফুলের ছবি। সেই "কালো' মেয়ের "গোপন' আনন্দের মধ্যে যে ফুলের মতই এক রাশ স্নিগ্ধ স্বচ্ছ আনন্দ জড়ানো ছিল তার প্রতিফলন ওই ফুলের ছবি। ভাবতে অবাক লাগে সারাদিন যার কাজ শুধু ঘর পরিষ্কার আর রাধামাধবকে সাজানো সেই বালিকাবধূর মধ্যে এরকম চিন্তার বিকাশ ঘটল কী করে?

    সেকালের ডায়েরির লেখিকারা সময় তারিখ দিয়ে ডায়েরি লিখতেন না। তাই আমরা যারা এই ডায়েরি নিয়ে পরে রিসার্চ করতে বসি তখন ওই লেখিকার বয়স নিয়ে একটা বড় সমস্যা দেখা দেয়। শ্যামাসুন্দরীর বিয়ে হয়েচ্ছিল ৬ বছর বয়সে। প্রথম সন্তান হয় ১২ বছরে। এই ৬ বছরের মধ্যে তিনি অনেকটাই লেখাপড়া শিখেছিলেন কারণ প্রথম সন্তান হওয়ার আগে তিনি লিখছেন:

    পৃষ্ঠা ৩৩: আমার যেন মেয়ে না হয়! মেয়েদের বড় কষ্ট এ সমাজে।!

    শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরিতে বার বার এই মেয়েদের কষ্টের উল্লেখ আছে। স্বামীর কথা লিখতে গিয়ে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন -

    পৃষ্ঠা ৪৫: স্বামীকে আমি দেবতা মানি
    হাজার লোকের ঠাকুর তিনি
    তবুও তিনি মানুষ তো!
    বোঝেন না আমার কষ্ট।
    সদাই ভাবি পালাই পালাই
    এ সমাজে কোথায় ঠাঁই?

    এই সবই লেখা প্রথম সন্তান প্রসব করার আগে। কারণ সন্তান হবার পরে প্রায় ৬ মাস তিনি লেখালেখি বন্ধ রেখেছিলেন। তাই এই সমস্ত লেখার সময় ওনার বয়স যে ১২ বছেরর কম ছিল সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়না। যত হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছিলাম শ্যামাসুন্দরীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ততই বেড়ে চলছিল। ওই শিশু বয়সে যে নিজেনিজে রাত্রের অন্ধকারে সবার অজান্তে লেখাপড়া শিখেছেন তিনি সঠিক সুযোগ পেলে কোথায় কোন শীর্ষে পৌঁছতেন সেটা ভেবেই আজও আমার গায়ে কাঁটা দেয়।

    ডায়েরি পড়ছি আমি। সেই সময়ে আমার ওই একটাই কাজ। মেন্টর বলেছিলেন এই সব লেখা যত পড়বে তত নতুন মানে খুঁজে পাবে। খানিকটা তদন্তের মতো পুরো ব্যাপারটা। মুগ্ধতার সঙ্গে কৌতুহলও যেন বাগ মানছিল না। আমার কাজ এগোচ্ছিল কিন্তু তবুও আমি শ্যামাসুন্দরীকে ঠিক মর্যাদা দিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল লেখার মধ্যে কোথায় যেন একটা অসঙ্গতি একটা বিশাল ফাঁক থেকে যাচ্ছে। ওনার ডায়েরি translate করছি আর ভাবছি। কী মানসিকতা নিয়ে উনি লিখছিলেন। কেন লিখেছিলেন? কি করে সম্ভব এইভাবে পড়াশুনা করে নিজের চাওয়াপাওয়ার প্রকাশ ঘটানো? সেই সময় একটু দিক্‌ভ্রান্তের মতই ঘুরছিলাম আর ভাবছিলাম যে আমি শ্যামাসুন্দরীকে ঠিক করে বুঝতে পারছি না হয়ত। আর সেরকম কথা মাথায় আসা মাত্রই মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় একদিন আমি আবার পৌছলাম Radice র কাছে। বললাম কোথায় আমি আটকে গেছি। একটা পাজ্‌ল যেন। কিচ্ছুতেই বেরোতে পারছি না। খুব সহজ ভাবে উনি বললেন, "শ্যামাসুন্দরীর লেখার মধ্যে ওনাকে খুঁজে পাবে না তুমি। ওনার ছবির মধ্যে try and find out her real self। লেখার মধ্যে যে poetic imbalace রয়েছে সেটা ছবির মধ্যে নেই। try to figure out why she is sketching a bird। the flowers। তার আগের পরের লেখার সঙ্গে ছবির কোনো মিল আছে কি না সেটা খুঁজে বের করো'।

    পরে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে গিয়ে যখন রাসসুন্দরী দেবী, জ্ঞানদাসুন্দরী, কুন্ডলিনী দেবীর ডায়েরি পড়লাম আর সেই সঙ্গে Virginia Woolf আর Elizabeth Gaskell তখন যেন অনেক কিচ্ছুই আরো পরিষ্কার হলো। ওই অখ্যাত গ্রাম্য বালিকাবধুর লেখার সঙ্গে impressionism এর যে কি মিল কোথায় মিল তাও বুঝলাম ওই সব বইগুলো পড়ার পরে।

    এইটুকু বুঝতে বাকি ছিল না যে শ্যামাসুন্দরী বিয়ের পরে ডায়েরি লিখতে শুরু করেন। অর্থাৎ যদি ৬ বছর বয়সে ওনার বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে ৭/৮ বছর বয়সে প্রথম ডায়েরি লেখা শুরু। ডায়েরির প্রথম পাতায় যে "শিশু' শব্দটি আছে.. তা যে লেখিকার স্মৃতি রোমন্থন তাও বুঝতে অসুবিধা হলো না। ভাবতে অবাক লাগে যে সেই সময় শ্যামাসুন্দরী নিজে একটি ৮ বছরের শিশু তবুও তিনি তার লেখার মধ্যে তার হারিয়ে যাওয়া শৈশব কে খুঁজে বেরিয়েছেন। ওই ফুরিয়ে যাওয়া শৈশবের সঙ্গে যে একবুক নি:সঙ্গতা যে হাহাকার তাও ধরা দেয় ওই সাদা পাতায়। শুধুই শৈশব তার সঙ্গে আর কিচ্ছুই নেই! হয়ত ভাবতে চান নি লেখিকা.. হয়ত মনে রাখার মত ছেলেবেলাও ছিল না ওনার। তাই হয়ত সাদা পাতায় শুধুই ওই একটি শব্দ।

    পরের পাতার খাট, উনুন, ঝাঁটা, এই সব যখন এঁকেছেন তখন বুঝেছি পলক ফেলার আগেই শৈশব পেরিয়ে মাত্র ৮ বছর বয়সেই তিনি সংসার সংগ্রামে নেমেছেন। খাট, উনুন, ঝাঁটা এই সবই তো মধবিত্ত গ্রাম্য সংসারের একটা প্রতীক.. তাই হয়ত ওইগুলি তখন তার জীবনের বেঁচে থাকার উপকরণ! আর বাইরের জগৎ তো তখন দেখতে শেখার বয়স হয় নি.. সমাজ তখন তাকে সেই সম্মতিও দেয় নি.. যত পড়ছিলাম ততই Radice র কথা গুলো কানে বাজছিল। "Arthur Symons felt that the Impressionist in verse should record his sensitivity to experience, not the experience itself; he should express the inexpressible' ... শ্যামাসুন্দরী সেই inexpressible কেই তুলে ধরেছেন। তার এই ডায়েরি পড়বার জন্য ভাষার দরকার হয় না। দরকার একটা মননের।!

    শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরি জুড়ে শুধুই একজন সাধারণ মেয়ের কথা। তার জীবন জুড়ে শুধুই আলোড়ন। কিসের যেন একটা ব্যর্থতা। এক জায়গায় তিনি লিখছেন:

    পৃষ্ঠা ৫৪: "ছেলেদের বললাম আমি "রামায়ণ' পড়ে সবটার মানে বুঝতে পারি নে। আমি সংস্কৃত পন্ডিতের কাছে রামায়ণ পাঠ করতে যাব?'

    শ্যামাসুন্দরীর প্রত্যেক ইচ্ছের প্রকাশ যেখানে সেখানেই একটা করে প্রশ্নবোধক চিহ্ন! সে কালের মেয়েদের কোনো ইচ্ছেই পূর্ণ হত না পুরুষের আজ্ঞা ছাড়া। সে কথা শ্যামাসুন্দরী নিজেও এক জায়গায় লিখছেন,

    পৃষ্ঠা ৫৭: "ছেলেরা না বললে তো আমার আর রামায়ণ পড়াই হবে না.. ওদের ইচ্ছের ওপরে আমার ইচ্ছের যে কোনো দামই নেই। এ যুগে জন্মেছি! পুরুষের ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে.. সে যাক। রামায়ণ পড়েই বা কি হবে?'

    তার পরের পাতায় (পৃষ্ঠা ৫৮) তিনি "সীতার পাতাল প্রবেশের' একটা নিঁখুত ছবি এঁকেছেন।

    ওই বয়সে মেয়েদের জীবনকে এত গভীর ভাবে চিন্তা করার মত সাহস তবুও তিনি অর্জন করেছিলেন। তার জন্য একটা কঠিন মনও তিনি তৈরী করেছিলেন নিজের হাতে। পৃষ্ঠা (৬১) তিনি আবার লিখছেন, "আমার মেয়ে জন্ম কোনো দিনও সার্থক হবে না.. আমি নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাই নে' সেদিন শ্যামাসুন্দরীর সেই ডায়েরির প্রত্যেকটি কথা পড়ে, বুঝে শিহরণ জেগেছিল আমার সমস্ত শরীরে। সে যুগের মেয়েদের বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিকরা একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন ব্যাপকভাবে - অন্ত:পুরবাসিনী। কিন্তু তবুও সেই চার দেওয়ালের গন্ডির মধ্যে বসবাসকারী মহিলাদের মধ্যেও যে এমন তেজ কোথা থেকে এসেছিল তা শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরি পড়লে খানিকটা হলেও জানা যায়।

    গোপাল গোস্বামী, শ্যামাসুন্দরীর স্বামী, বাড়ির বড় ছেলে। বাবা হারাধন গোস্বামী আর মা কমলা দেবীর ১১ সন্তানের সবার বড় এই গোপাল। তাই তার সংসারে স্থান সবার থেকে একটু আলাদা। ১১ সন্তানের মধ্যে কমলা দেবীর মাত্র ৪ সন্তান জীবিত ছিল। বাকি ৭ সন্তানের মৃত্যু কমলা দেবীকে যেন মৃত্যুঞ্জয়ী করে তুলেছিল। শোকতপ্ত মাতৃহৃদয় পাথরের মতই কঠিন হয়ে উঠেছিল। জীবনে কোনো কিছুকেই আর ভয় করতেন না তখন কমলা দেবী। যেমন ডাকসাইটে দেখতে তেমনি বাজখাঁই গলা ছিল কমলা দেবীর। কমলা নাম হলে কি হবে? কমলের মত স্নিগ্ধ স্বভাব তার মোটেই ছিল না। শুধু শ্যামাসুন্দরীকে খুব স্নেহ করতেন তিনি। যখন শেষ কন্যা সন্তানটি, নাম ছিল খ্যান্তমনি, কালাজ্বরে মারা যায়, কমলা দেবীর বয়স তখন মাত্র ৩৩। তাই প্রথম দিকে শ্যামাসুন্দরী শ্বশুর ঘরে গিয়ে ওই খ্যান্তমনির জায়গায়ই দখল করে বসে। ৬ বছরের শিশু কে কমলা দেবী নিজের মেয়ের মত স্নেহ করে বড় করে তোলেন। তাকে হাতে ধরে রান্না শেখান, ঘর পরিষ্কার করতে শেখান, হাতের কাজ শেখান। তাই তো শ্যামাসুন্দরী লিখছেন

    পৃষ্ঠা ৫: আমার মা নতুন
    রেগে গেলে তেলে বেগুন
    আমার বাবা ভালো
    কিন্তু আমার কপাল মন্দ বড়

    পরের কিস্তিতে সমাপ্য।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৮ মার্চ ২০১১ | ৭০০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন