এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • শ্যামাসুন্দরীর ডায়রি- শেষ পর্ব

    শতরূপা বসুরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ মার্চ ২০১১ | ৬৮৮ বার পঠিত
  • আগের সপ্তাহে প্রথম পর্বের পর :

    শ্যামাসুন্দরীর শ্বশুরবাড়ি বেশ বড় । শান্তিপুরের নামকরা পরিবার। কুলে মানে শ্যামাসুন্দরীর বাপের বাড়িকে টেক্কা দেওয়ার মতই। হারাধন গোস্বামী নিজে পন্ডিত লোক। খুব সজ্জন ব্যাক্তি। একমাত্র জীবিত ছেলেকে তাই কলকাতা পাঠালেন ডাক্তারি পড়তে। ফিরে এসেই তারপর বিয়ে। এক কাপড়ে.. শুধু শাঁখা সিন্দুর দিয়ে শ্যামাসুন্দরীকে ঘরে তুলেছিলেন। পাশের গ্রামের মেয়ে। জানতেন সবই যে মেয়েটা কত কষ্টে আছে। এক রকম উদ্ধারই করেছিলেন শ্যামাসুন্দরীকে সে সময়। সেই ঋণ শ্যামাসুন্দরী তার জীবন ভর চোকানোর চেষ্টা করেছে। কখনো শ্বশুর ঠাকুর বা শাশুড়ি ঠাকরুনকে অবজ্ঞা করে নি। কিন্তু গোপাল গোস্বামীর পরের এক বোন যখন বিধবা হয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাপের বাড়ি এসে নতুন করে আবার ঘর বাঁধলে তখনি প্রায় শ্যামাসুন্দরীর ঘর ভাঙতে বসে আর কি!

    গোপাল গোস্বামীর বিধবা বোনের নাম চারুবালা.. তার বিয়ে হয়েছিল মুর্শিদাবাদের আরেক ডাক্তার পরিবারে। সুখেই ঘর করছিল সে কিন্তু হঠাৎই এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে তার স্বামী মারা যায়। "পোড়ারমুখী'! "হতভাগী'! "স্বামীকে খেয়েছিস'? এমন অনেক কটুকথা শোনার পড়ে মনের দু:খে সে একদিন নদীতে ঝাঁপ দিতে যায়.. তখনি গ্রামের লোক দেখতে পেয়ে তাকে আবার ফিরিয়ে দেয় ওই ডাক্তারের হাতে। কিন্তু তারপর চারুবালার আর ঠাঁই হয় না শ্বশুর গৃহে। সে ফিরে আসে কমলা দেবীর সংসারে। সে সময় বিধবা বিবাহ আরম্ভ হয়েছিল বটে কিন্তু খুব দু:সাহসিক পরিবার ছাড়া এমন কাজ কেউ করত না তখনকার দিনে.. হারাধন গোস্বামী সজ্জন ব্যক্তি, ডাক্তার মানুষ কিন্তু সমাজের সামনে তিনি ভীরু। বাড়িতে বিগ্রহ আছে চার পুরুষ ধরে! যেচে অমঙ্গল ডেকে আনেন কি করে? তাই মেয়েকে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখাই মনস্থ করেন হারাধন। তখন চলছিল অম্বুবাচি। বিধবাদের নিরম্বু উপবাস। শুধু একবেলা ফলাহার। তাই আম জাম, কাঁঠাল, বেল সব এনে রাখা রয়েছে চারুবালা আর গোস্বামীবাড়িতে আশ্রিতা আরো কয়েকজন বিধবার জন্য। ঠাকুর দালানের পশ্চিম পারে ওই বিধবাদের বাস। কিন্তু চারুবালা থাকে তার নিজের ঘরে। দোতলায়, শ্যামাসুন্দরীর ঘরের পরের ঘরটায়। কাঠ ফাটা রোদে ঝল্‌সে যাচ্ছে চতুর্দিক। কমলা দেবী ক্ষণে ক্ষণেই ঘাটে গিয়ে ডুব দিয়ে আসছেন। পাখায় ভিজে কাপড় জড়িয়ে ক্রমাগত হারাধন গোস্বামীকে হাওয়া করে যাচ্ছে বাড়ির চাকর ঢোলক। বৈঠকখানা খোলাই থাকে দুপুর বেলা। বিকেলের দিকে ঢোলক সে ঘর ঝেড়ে মুছে রাখে। পাড়ার অনেকেই আসে হারাধনের কাছে ওষুধ নিতে। হারাধন নারী টিপে যে রোগ নির্ণয় করে সেই রোগের ওষূধ দিয়ে দেয়। তাতে রুগী ভালো হোক না হোক, হারাধনের অমায়িক ব্যবহারে রুগীর অর্ধেক রোগ সেরে যায়। সেদিন দুপুরে শ্যামাসুন্দরী নিজের ঘরের মেঝেতে 'শীতলপাটি' বিছিয়ে উপুড় হয়ে স্লেটএ কি যেন একটা লিখছিল চারুবালা এসে বৌঠান বলে ডেকে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বালিশের নীচে স্লেট লুকিয়ে সোজা হয়ে শ্যামাসুন্দরী ঘুমের ভান করে পড়ে রইলো মেঝেতে। ঘুমন্ত বৌঠান কে দেখে শ্যামাসুন্দরীর ঠাকুরঝি চলে গেল তার মা এর সন্ধানে। পুকুর ঘাটে। ওমনি সুযোগ বুঝে শ্যামাসুন্দরীও পাড়ি দিল বৈঠকখানায় রামায়ণের খোঁজে। কিন্তু "কপাল মন্দ' তাই হাতে নাতে ধরা পড়ে গেল। ঠাকুরঝি চেঁচিয়ে বাড়িময় হইহই শুরু করলো। কমলা ছুটে এসে হাত থেকে বই নিয়ে নিল। তরতরিয়ে শ্বশুরঠাকুরের কাছে গিয়ে নালিশের সুরে ছেলের বউ এর ভূত ভবিষ্যত একেবারে টেনে নামালেন বর্তমানে। এইখানে শ্যামাসুন্দরী লিখছেন, (পৃষ্ঠা ৬১) "সেদিন প্রথম রাম সীতার গপ্প পড়ব বলে বই এনেছি কি ঠাকুরঝি আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। শ্বশুরঠাকুর রক্ষা করলেন। সেদিন সবাই জানলো আমি পড়াশুনা জানি। কিন্তু গর্ব হলো না কারুর!'

    কত সামান্য চাওয়া ছিল শ্যামাসুন্দরীর। কেউ একটু আনন্দ পাক সেইটাই তার সব চেয়ে বড় পাওনা। স্বামী যখন দিনের শেষে বাড়ি ফেরে তখন তার পড়ার কথা বলতে যায় শ্যামাসুন্দরী। অর্ধেক কথা বলার আগেই স্বামীর নাসিকাগর্জনে শ্যামাসুন্দরীর মন ভেঙ্গে যায়। কেউ তো চায় না শ্যামাসুন্দরী পড়ুক। আরো জানুক.. তাহলে কার জন্য তিনি এত লড়াই করে সামান্য একটু পড়াশুনা শিখতে চেয়েছিলেন? কীসের জন্য রামায়ণ পড়ার এত জেদ ছিল তার? হয়ত নিজের জন্যই। পড়াশুনা শিখলে সমাজের কুসংস্কার থেকে নিজেকে হয়ত নিজেই বাঁচাতে পারতেন। ভাবতে পারতেন যে চারুবালা তার সারা জীবন কি নিয়ে বেঁচে থাকবে? সে তো ওই ১৩ বছর বয়সে কোনো দোষ করেনি। তাই তার ডায়েরিতে এক জায়গায় তিনি নিজেই চারুবালার বিয়ে দিয়েছেন। লিখেছেন, " আমার ঠাকুরঝি! আমার সংসার, তার সংসার নেই। কিন্তু কে দেবে ওর বিয়ে? কে আসবে এই গ্রামে? কে বুঝবে আমার ঠাকুরঝির জ্বালা?'

    কোথাও কোথাও ভাষার বাঁধন হারিয়েছে, কোথাও শব্দ যুগিয়ে উঠতে পারেননি তাই ছবির প্রয়োগ। কিন্তু তবুও যেন এক শক্তিশালী নারীর পরিচয় পেলাম এই ডায়েরিতে। যার মনটা খুব স্বাধীন, উদার। সে যুগের মেয়েদের ওই টুকুই ছিল নিজের। আর বাকি সবটাই তো সমাজের চাপে সংসারে চাপে মাথা নত করে পড়ে থাকত।

    শ্যামাসুন্দরীর প্রথম সন্তান জন্মায় ১২ বছর বয়সে! এ সংসারে প্রথম সন্তান যদি মেয়ে হয় তাহলে সেই থেকেই জীবনটাও যেন উল্টো দিকে বইতে থাকে। শ্যামাসুন্দরী ঠিক যে ভয়টাই পেয়েছিলেন তাই হয়েছিল। প্রথম সন্তান জন্মালো ১৮ই ফাল্গুন ১৯৩৯ সাল। বাড়িতে সেদিন কান্নার রোল উঠেছিল। শাঁখ বাজেনি, কেউ এসে উলুধ্বনি করে নি। কোনো আচার বিচার পালন করা হয় নি.. কমলা দেবী শুধু একটা মটকার শাড়ি পরে বউকে ধরে নিয়ে তুললেন আঁতুর ঘরের বাইরে। "যাও বাছা। এবারে এই মেয়ে সামলাও তুমি.. আমার তো ছিস্টির কাজ পরে আচে।' হারাধন গোস্বামী বউ "পোয়াতি' হওয়া মাত্র এক খানা সোনার বালা গরিয়েছিলেন। আর নাতির মুখ দেখে দেবার জন্য একটা সোনার গিনি। কিন্তু হলো তো মেয়ে। কমলা দেবীকে ডেকে বললেন.. "নাও.. এ জিনিস গুলো তুলে রাখো গে যাও। দ্যাকো পরের বার কাজে লাগে কি না.. আমাদের ভাগ্যে কি আচে কে জানে?" শ্যামাসুন্দরী সেদিন এক বুক লজ্জা আর সদ্যজাত মেয়েকে নিয়ে নিজের ঘরে বিছানার ওপরে একা শুয়ে হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন। গোপাল গোস্বামী ঘরে ফিরে এসে বউকে আদর করে বুকে জড়িয়ে বলেছিলেন, "আহা কাঁদছ কেন? পরের বার ছেলেই হবে"। শ্যামাসুন্দরী তার শেষ বয়েসে এসে এই কথাগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন তার ডায়েরিতে। (পৃষ্ঠা ২১৪)। কিন্তু প্রথম সন্তান জন্মানোর পরে ভাষা খুঁজে পান নি লেখার তাই একদিন শুধু একটা পাতা জুড়ে তিনি এঁকেছেন একটা হৃদয়বিদারক ছবি।

    (পৃষ্ঠা ৪৫) একটি শিশু খালি মেঝেতে শুয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। পাশে রাখা একটি ঝাঁটা আর একটা কলসি।

    প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম দেবার পরে ঠিক কি অবস্থা হয়েছিল শ্যামাসুন্দরীর তা সঠিক ভাবে জানতে পারিনি। কারণ আমার জানার কোনো উপায় ছিল না.. যাদের সঙ্গে পরে কথা বলেছি তারা শ্যামাসুন্দরীর নাতি নাতনি। এবং তার পরের জেনারেশন । ইচ্ছে ছিল শান্তিপুরে গিয়ে পাড়া পড়শি কাউকে খুঁজে বের করে সেই সব কথা জানার.. কিন্তু বিদেশ থেকে বার বার যাতায়াত করার উপায় ছিল না আমার.. তাই এইখানে পুরোটা এই ছবি ভরসা.. কলসির ছবি দেখে যে কথা আগেই মনে আসে। যে, নির্যাতন হয়ত চূড়ান্ত মাত্রায় পৌছেছিল তাই হয়ত শ্যামাসুন্দরী আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন। তার কন্যা সন্তানকেও যে অবহেলা করা হত তাও বুঝতে অসুবিধে হয়না ওই ছবি দেখে.. কারণ সেখানে শিশুটি একলা শুয়ে কাঁদছে আর কেউ কোথাও নেই!

    তা হলে কি ওই শিশুকে ফেলে শ্যামাসুন্দরী আত্মহত্যার কথাই ভেবেছিলেন? ওই ছবির পাতার পরে বেশ কয়েকটা সাদা পাতা বাদ দিলে আরেকটা সাদা পাতা। সেই পাতার একদম নীচের দিকে এক জায়গায় ছোট করে লেখা.. "হা ঈশ্বর'। এর থেকেই বোঝা যায়।! যে ৬ মাস তিনি ডায়েরি লিখতে পারেন নি সে সময় তার কি ভাবে কেটেছে! যন্ত্রণা যখন চরমে, সহ্যের সীমা পেরিয়েছে তখন হয়ত গুমরে উঠে লিখেছেন ওই ঐটুকুই। সেই চরম অপমানের দিনে। বিপদের দিনে সেই সময়ের মেয়েদের "ঈশ্বর' ছাড়া আর যে কোনো গতি ছিল না তা শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরির ওই সাদা পাতাগুলোই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। দীনবন্ধু মিত্রের "নীলদর্পণ' নাটকে এক জায়গায় সরলতা বলেছিল, "রমণীর মন কাতর হইলে বিনোদনের কিছুমাত্র উপায় নাই, কেননা পাঁচজন সঙ্গিনী নিয়ে বাগানে যাওয়া, শহরে বেড়াতে যাওয়া মেয়েদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাহাদের জন্য কলেজ নাই, কাছারি নাই, সভাসমিতি নাই,বলতে গেলে কিছুই নাই।' এই "নেই রাজ্যের বাসিন্দারা' তাই হয়ত শুধুই ঈশ্বর ছাড়া কাউকে ভরসাও করতে পারতেন না। সেদিন যখন আমার ওই disseration সকলের সামনে পড়ে শোনাচ্ছিলাম তখন শ্যামাসুন্দরীর জন্য মনটা দু:খে ভরে গেলেও লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়েছিল। এমনি করেই সেই সময়ের বাংলা দেশের মেয়েরা সমাজের বলিকাঠে দাঁড়িয়ে একে একে আত্মাহুতি দিয়েছিল। কয়েকশো বছরের "পুঁথিপ্রমাণ' আর দলিল দস্তাবেজের বস্তাপচা পুরনো সাক্ষীসাবুদ জড়ো না করেও এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে আমাদের সমাজে নারী সম্পর্কিত মূল্যবোধের যে চরম অবনতি ঘটেছিল শ্যামাসুন্দরী সেই অবনতির শিকার। পুরুষের ইচ্ছের হাড়িকাঠে মেয়েদের যেমন ইচ্ছে তেমন বলি দেওয়া হত। পুরুষের কাছে সেদিন নারী ছিল জীবন্ত সম্পত্তি। ভাবতে গায়ে কাঁটা দেয় মেয়েদের এরকম নিরুপায়তার সুযোগ নিয়েই সেকালের পুরুষেরা অধিকারের নামে অবাধে স্বেচ্ছাচার করে গেছেন। শ্যামাসুন্দরীকে একটা সময় বাড়ির সব কাজের ভার দেওয়া হয়।! যতদিন ছেলে সন্তান না হবে তাকে প্রতিদিন হবিষ্যি করতে হবে। সেকালে সধবাদের একাদশী করা পাপ .. কিন্তু পুত্র সন্তানের জন্য শ্যামাসুন্দরী দীর্ঘ ১ বছর একাদশী করেছেন, মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন ছাড়া শুয়েছেন ঠাকুরঘরের দাওয়ায়। যতদিন না ছেলে হয় ততদিন এই ছিল পন্ডিতের বিধান। (পৃষ্ঠা ৭৫) শ্যামাসুন্দরী লিখছেন: "আমার এই দিন গুলি বেশ ভালো কাটে.. ঠাকুর ঘরে রাত পড়লে কেউ আসে না। আমি বৈঠকখানা থেকে বই চুরি করে কোচরে লুকিয়ে রাখি.. যেই সবাই ঘুমিয়ে পরে আমি পিদিম জ্বালিয়ে বই পড়ি। এত পড়ি। তবুও মানে বুঝি না কিচ্ছুটির"।

    পর পর ৩ কন্যা সন্তানের পরে শ্যামাসুন্দরীর যখন ২০ বছর বয়স তখন প্রথম পুত্র সন্তান জন্মায়। সেদিন কমলা দেবী নিজে শ্যামাসুন্দরীকে আঁতুর ঘরে সেবা করেছিলেন। কাউকে আসতে দেন নি ভেতরে। কলকাতার কালিঘাটে ৫০০ কাঙালী খাইয়েছিলেন গোপাল গোস্বামী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। চারুবালা সেদিন প্রথম "বৌঠান' কে জড়িয়ে ধরে বলেছিল "এ বংশের মুখ রক্ষে করলে তুমি।' তাই তো গভীর দু:খে শ্যামাসুন্দরী লিখছেন, (পৃষ্ঠা ৮৭) আমার মেয়েদের বড় অবহেলা.. এত তাড়াতাড়ি সুখময়ীর (অর্থাৎ শ্যামাসুন্দরীর বড় কন্যা) তার বিবাহ আমি দিতে দেব না। আমার শ্বশুরঠাকুর বুঝবেন.. তাঁকে তো ছেলে এনে দিয়েছি। এবার কি আমার কথা তিনি শুনবেন না?"

    শ্বশুরঠাকুর কথা রেখেছিলেন। নাতি হওয়ার আনন্দের আতিশয্যে সেদিন শ্যামাসুন্দরীর শ্বশুরঠাকুর প্রথম নাতনির বিয়ে দেন নি কিন্তু ওই বয়সে। সেই মেয়েকে বাড়িতেই পড়াশুনা শিখিয়েছেন। গানও শিখেছিলেন তিনি। বাড়িতে ওস্তাদ এসে নিয়মিত রেওয়াজও করেছেন সুখময়ী! বাবার মত মেধা ছিল তার। ডাক্তার তো হতে পারেননি কিন্তু বুদ্ধি আর তেজ দিয়ে তিনি মাএর দু:খ ঘোচাতে পরেছিলেন অনেকটাই।

    এরকম যখন শ্যামাসুন্দরীর জীবন চলছে এক গতিকে। রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা মাঝখানে হয়ত একটু পড়াশুনা সেই সময়েই একদিন হারাধন গোস্বামী মারা গেলেন। এত দিন গোপাল ছিল তার বাবার অধীনে। কিন্তু এবারে পুরো সংসারের ভার এসে পড়ল তারই ওপর। গ্রামের সেই ডাক্তারখানা ছেড়ে গোপাল খুললেন বাড়িতেই তার নিজের চিকিৎসালয়। সুখময়ী কে শ্যামাসুন্দরী করলেন বাবার এসিস্টেন্ট। বিধবা কমলা দেবীর ক্ষমতা ততদিনে কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছিল। নানা রকম বিধি নিয়ম আচার বিচার মেনে তার পক্ষে সংসারের অন্য দিকে মন দেওয়াটা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছিল। তাই তার পক্ষে যেটা করণীয় তিনি সেইটাই করলেন ছেলেকে ডেকে এমন অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চারে প্রতিবাদ করে বললেন, "শ্যামাসুন্দরীর হাতে তিনি আর খাবার খাবেন না।' বাড়িতে সেই সময় প্রথম বামুন ঠাকুর রাখা হলো । কিন্তু কমলা দেবী তার হাতেও খাওয়া ত্যাগ করলেন। নিজে রেঁধে যতটুকু পারতেন খেতেন বাকিটা ওই ফলমূল খেয়েই থাকতেন। অন্য বিধবাদের দল (মোট ৬ জন) তাঁদের তখন পোয়াবারো। রোজই ঠাকুরের হাতে ভালো ভালো রান্না, শাক সবজি, তরিতরকারি.. সংসারে তখন বাড়-বাড়ন্ত। আর বিধবাদের মোচ্ছব।! চারুবালা আর কমলা দেবী সেই মোচ্ছবে সামিল হলেন না।

    কমলা দেবী বৈধব্য বেশিদিন ভোগ করেননি। নানা রকম বিচার আচার মেনে চলতেন। দিনের মধ্যে ৬ বার ঘাটে গিয়ে ডুব দিতেন। মাসের মধ্যে ২৫ দিনই উপোস করে থাকতেন। তারওপরে সংসার হাতের বাইরে চলে যাওয়াতে আরো যেন ভেঙে পরেছিলেন উনি। এর মধ্যে একদিন চারুবালা ঘাট থেকে ফিরল না। দিনের তখন বেশ অনেকটা ভাগ বাকি আছে। সূর্য তখন মাথার ওপরে। শ্বেতপাথরের টেবিলের ওপরে পদ্মকাটা থালায় ভাত আর পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে শ্যামাসুন্দরী স্বামীকে খাওয়ানোর জন্য ভিজে কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছে উঠোনে। স্বামী গেলে সেই থালায় ভাত খেয়ে তারপর গঙ্গা স্নান করবে সে। ভিজে কাপড়ে বাড়ি এসে শুকনো মটকা জড়িয়ে তবে আবার ঢুকবে বিধবাদের রান্নাঘরে। বামুন ঠাকুরকে নিজে হাতে সব দেখিয়ে দেয় শ্যামাসুন্দরী.. নুনটা, ঝালটা দিয়েও দেয় কখনো নিজে।! নিরামিষ তরকারি স্বাদ করে রান্না না করলে বিধবাদের মুখে রুচবে কেন? তারপর আবার ঘাটে যায় সে। সন্ধ্যা আরতির ব্যবস্থাও সে করে নিজে হাতে.. হাজার তুলসী দিয়ে নারায়ণ সেবা হয় নিত্য এই গোস্বামী বাড়িতে। কুলগুরুর আদেশ। কমলা দেবী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তত্বাবধান করেন সে কাজ। সেদিন এমনি একটা দিন ছিল। গোপাল গোস্বামী সবে তখন একটু দিবানিদ্রায় মগ্ন হয়েছেন, ছেলেরা দাওয়ায় "ঠাকুরমাদের' সঙ্গে রসিকতায় মত্ত। কমলা দেবী উঠোনের এক পাশে বসে বড়ি শুকোতে দিছিলেন ওমনি ঘাট থেকে খবর এলো। বড় গোঁসাই পাড়ায় পালকিতে দেখেছে চারুবালা কে। কে যেন সঙ্গে ছিল। ! কমলা দেবী সেই শোকে আত্মহারা হয়ে ভিরমি খেয়ে পরেন ডালের বড়ির ওপরে। শ্যামাসুন্দরী ছুটে যান স্বামীকে ডেকে আনতে। রাধামাধবের মন্দিরের কাজ যেমন তেমন পরে থাকে। সবাই ছোটে সদর দরজার দিকে। কমলা দেবীকে বুকের মধ্যে আগলে নিয়ে শ্যামাসুন্দরী প্রমাদ গুনতে থাকে। গোপাল গোস্বামী ও তার তিন ছেলে (তখন তারা বেশ বড় হয়েছে) ফিরে এসে খবর দেয়.. "পালকি কোন দিকে গেছে। ও খুঁজে পাওয়া গেল না। আগে জানলে তবুও হত.. এখন কোথায় খুঁজবো?' আগেকার দিনে দারোগা এসে বেশি কিছু করতো না.. তবুও সেবার ইংরেজ দারোগা বাড়িতে এসেছিল। শ্যামাসুন্দরী সেই প্রথম কোনো ইংরেজ দেখে লিখলেন। (পৃষ্ঠা ৯৯) "এই প্রথম সাহেব দেখলাম। সারা বাংলা এই সাহেবদের তাড়াবে বলে উঠে পরে লেগেছে.. কিন্তু এই সাহেবরা ছিল বলে আমরা আজ বেঁচে আছি। আমি আজ লিখতে পারছি।" স্বামীর মুখে ছেলেদের মুখে নবজাগরণ, স্বাধীনতা এই সব নিয়ে টুকরো টুকরো খবর তো কানে আসতই তার.. কিন্তু দেশের মুক্তির কথা, স্বাধীনতার কথা কাগজে বেরোলেই যে প্রথম তা পরে ফেলত তা হলো সুখময়ী.. গোপাল গোস্বামীর ডাক্তারখানার জন্য কলকাতা থেকে ওষুধ নিয়ে আসত শ্যামাসুন্দরীর বড় ছেলে বিশ্বনাথ। সুখময়ী বিশ্বনাথকে খুব স্নেহ করত আর বিশ্বনাথও দিদি অন্ত প্রাণ। তাই এই দুই ভাই বোনে প্রতিদিনই প্রায় দেশের আলোচনা করত। যুগান্তর কাগজের কথা উল্লেখও করেছেন শ্যামাসুন্দরী কয়েকবার।! অর্থাৎ বলাই যেতে পারে যে সে কাগজ তিনি নিজেও পড়েছিলেন হয়ত কখনো। !

    চারুবালা পালিয়ে গিয়ে তার কি হয়েছিল কেউ জানতে পারে নি.. শ্যামাসুন্দরীর ডায়েরিতে তার আর কোনও উল্লেখ নেই।

    কমলাদেবী মেয়ের নিরুদ্দেশ হওয়ার শোক বেশিদিন বুকে ধরে রাখতে পারেননি। একদিন হঠাৎই ঘাট থেকে ফেরার সময় আমবাগানের মধ্যে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে তখন কেউ ছিল না। পরে একজন ভিস্তিওয়ালা দেখতে পেয়ে চিনতে পারে কমলা দেবীকে। এসে খবর দেয় বাড়িতে। বিশ্বনাথ আর শ্যামাসুন্দরী আর সুখময়ী ছাড়া বাড়িতে তখন আর কেউ নেই.. বিধবার দল তো আর কমলা দেবীকে ঘাট থেকে তুলে আনতে পারবেন না.. তাই বিশ্বনাথ আর সুখময়ী মৃত ঠাকুমার দেহ ঘাট থেকে টেনে হিঁচড়ে দাওয়ায় নিয়ে এসে ফেলে। সুখময়ী নাড়ী টিপে দেখার আগেই যে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল! কমলা দেবীর ইচ্ছে অনুযায়ী বাড়িতে ২০০ ব্রাহ্মণ খাওয়ানো হয়েছিল। দশ জোড়া গোদান করা হয়েছিল। শ্যামাসুন্দরী সেই কথা বর্ণনা করে লিখছেন (পৃষ্ঠা ১৫০) "এমন জাঁক জমক সুখময়ীর বিয়েতে করলে আমার আত্মার শান্তি হত। মৃত মানুষের জন্য আমাদের সমাজে শোকের থেকে আনন্দ বেশি।' সেই সময়ে একজন গ্রাম্যবধুর কলম থেকে এরকম কথা যে বের হয়েছিল সেটা ভাবতেই আমার সমস্ত শরীরে শিহরণ জেগেছিল। ! শুধু নারী স্বাধীনতা বা নারী মুক্তি নয়। শ্যামাসুন্দরী প্রকৃত অর্থে একজন চিন্তাশীল এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্না মহিলা ছিলেন। ওনার ডায়েরি শুধু তখনকার মহিলাদের কথাই ব্যক্ত করেনি। বরং সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। ওই ডায়েরির মধ্যে নিহিত শুধুই একজন নির্যাতিত বাংলার বধূ নয়। ওই ডায়েরি সে সময়ের সমাজের ইতিহাসের সাক্ষ্যও বটে।

    সুখময়ীর বিয়ে হয় উত্তর কলকাতার অক্রুর দত্ত লেনের বাসিন্দা মনমোহন লাহিড়ির বড় ছেলে মাধব চন্দ্র লাহিড়ির সঙ্গে। গোপাল গোস্বামী নিজেই সম্বন্ধ করে বিয়ে দেন। মেয়েকে সাজিয়েছিলেন শ্যামাসুন্দরী নিজের হাতে। সে বর্ণনা তিনি লিখেও গেছেন। (পৃষ্ঠা ১৪৫) কপালে চন্দন পরালাম তারপর একে একে গয়না। মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকাই বেনারসী তৈরি করিয়েছিলাম। শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি বেশ কয়েকটা তত্ত্ব করে দিয়েছি। কিন্তু আমার মত সুতির শাড়ি পরে বিয়ে হোক তা তো আর হয় না। তাই সুখময়ীর পছন্দ মত শাড়ি তৈরি করালাম। আজ সুখময়ী চলে গেল শ্বশুর বাড়ি। দেশ স্বাধীন হবে হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই। আমরাও কি স্বাধীন হব? গ্রাম দেশের থেকে শহর অনেক বেশি উদার। তাই আশা রাখি যে সুখময়ী আমার মত অশিক্ষা আর কুসংস্কারের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না। ও বাঁচবে ঠিক যেমন আর পাঁচটা দেশে আর পাঁচটা মেয়ে বেঁচে আছে।' একে একে শ্যামাসুন্দরী তার তিন মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতায়। তারপর যখন ওই ৬ বিধবাদের মধ্যে মাত্র ১ জন বেঁচে রইলেন তখন তাঁকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামাসুন্দরী নিজেও শান্তিপুরের বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে উঠলেন। বিশ্বনাথ ও বাবার মত মেডিকাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলো। আসার আগে একবার শ্যামাসুন্দরী "বাপের ভিটে' গিয়ে প্রণাম করে আসতে চাইলেন তার মা কে.. বাবা ততদিনে গত হয়েছিলেন। কিন্তু "নতুন মা' তখনও বেঁচে। ছেলে আর ছেলের বউ এর রাজত্বে নতুন মা কে একবার দেখে আসতে যখন ইচ্ছে জাগে শ্যামাসুন্দরীর, তখন গোপাল গোস্বামী বলে ওঠেন, "কি দরকার ওই বাড়িতে যাবার?' শ্যামাসুন্দরী তার ডায়েরির শেষ পাতায় লিখলেন, "বাপের বাড়ি যেমনি হোক সেখানেই তো বড় হয়েছি আমি.. আমার শিশুকাল সে যতই দুর্বিসহ হোক.. সে আগুনে পুড়েছি তো আমি নিজে। তাই তো আজ লিখতে পারি.. সেদিন আগুন না থাকলে আমিও যে সবার মাঝে হারিয়ে যেতাম.. ঈশ্বর আমায় তেমন ভাবেই গড়লেন যাতে সে আগুনে পুড়ে আমি নিজেকে যাচাই করতে পারি.. আমার মা কে আজ মনে পড়ছে। কেমন দেখতে ছিল জানি না.. কিন্তু "নতুন মা' ও তো মা। তাঁকেই মা বলে প্রণাম করে এলাম। আজ আর কোনো কষ্ট নেই। কোনো অভিযোগ নেই।'

    ইংল্যান্ড এ বৃষ্টি হয় খুব.. আর সে সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর মাস.. গাছের পাতায় তখন সব এ হলুদ রং ধরেছে... হওয়ায় একটা বৃষ্টি ভেজা ভাব.. দিন ছোট হয়ে আসছে.. গনগনে সামারের পরে সূর্‌য স্তিমিত হয়ে পরেছে...শীত আসন্ন প্রায়... আমি ইউনিভার্সিটি তে dissertation জমা দিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক এর সামনে দিয়ে হেঁটে আমার হোস্টেলের দিকে গুটি গুটি যাচ্ছি. মনটা বেশ খারাপ.. দীর্ঘ এই এক বছরের এত পড়াশুনা.. এত যুদ্ধর এখানেই ইতি... মনের মধ্যে আগামী দিন নিয়ে কল্পনা জল্পনা... কী লিখলাম.. আর একবার পড়লে ভালো হত হয়ত.. কী জানি..ওই রেফারেন্স ঠিক ছিল তো... ওই খানে ওই বানান তা ঠিক লিখলাম তো? এই সব টানা পোড়েনের মধ্যেই আমার মেন্টর এর সঙ্গে দেখা... আমার কাঁধে হাত রেখে উনি বললেন, তোমার dissertation আমরা পড়েছি... ওটা থেকে excerpts তোমায় পড়ে শোনাতে হবে একটা ইন্টার ইউনিভার্সিটি হিউমানিটিস সেমিনারে... তৈরী থেক...

    পৃথিবীর নানা দেশের ঐতিহাসিক, মানুষের সামনে সেদিন শ্যামাসুন্দরী এলেন।

    আমার বলার শেষে জেরি উঠে এসে শেষ করলেন সেই সন্ধ্যা... বললেন...

    এই রকম অনেক মহিলা আজ বাংলা দেশে আছেন যাদের কথা আমরা জানতেও পারি না.. শ্যামাসুন্দরী ওয়াস লাকি... উনি লিখতে পারতেন বলে ওনার জীবন সম্পর্কে আমরা জানতে পারলাম … there are lots of them like her who have been smothered under the parochial rule of the then society. lets all come together and pray for those hapless lots who have lost their lives under these inhuman doctrines... lets all come together and pray for them who have shed their lives silently... amen!

    পুনশ্চ: বিদেশীদের কাছে শ্যামাসুন্দরীর কিন্তু আর একটা নাম ছিল.. শ্যামাসুন্দরী উচ্চারণ করতে পারত না কেউ একসঙ্গে তাই ওরা ডাকত শুধু "সুন্দরী" বলে). যে শ্যামাসুন্দরী কে একদিন "কালো মাগী" বলে উপেক্ষা করেছিল ওর ঠাকুমা সেই কালো মেয়েকে এই বিদেশীরা অজান্তেই নাম দিলেন "সুন্দরী".


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ মার্চ ২০১১ | ৬৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sharmila | ***:*** | ০৫ মে ২০১২ ০৮:৩০89126
  • সত্যি তিনি সুন্দরী।।।মনের সৌন্দর্য্যে।।যেটা অনেকের ই থাকেনা।।।।খুব ভালো লাগলো এই লেখা।।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন