[বহু দিনের জমানো বিপুল পরিমাণ পুরনো কাগজপত্র ফেলে দেবার উদ্দেশ্যে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলা ভাষায় বানানের সমস্যা নিয়ে ১৯৯৯ সালে তৈরি করা এই মুসাবিদাটি হঠাৎ করে সেদিন আমার চোখে পড়ল এবং হাতে এল। তখন আমি ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির সক্রিয় কর্মী হিসাবে তার বাংলা প্রকাশনার ক্ষেত্রে বানান সমস্যার সমাধানে একটা সাধারণ নির্দেশিকা হিসাবে এটা লিখেছিলাম। আমাদের মধ্যে তখন ডঃ সৌমিত্র ব্যানার্জী, ডঃ শুভাশিস মাইতি এবং ডঃ মাখনলাল নন্দ গোস্বামী ছাড়া আর কেউ এসব ব্যাপারে খুব একটা মাথা ঘামাতেন না। আর আমরা কয়েকজনই যেহেতু অধিকাংশ লেখার সংশোধন এবং প্রুফ দেখার কাজ করতাম, তাতে এটা সামান্য হলেও কাজে দিয়েছিল।
তারপরে জল নানা দিকে ছড়িয়ে গেছে। আমরা আর সবাই এক জায়গায় নেই। শুভাশিস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালে চলে গেল। আমাদের নতুন মঞ্চ সেস্টাস সবে কিছু কিছু প্রকাশনার কাজ শুরু করেছে। হাতে যে সব লেখাপত্র আসে তাতে যথারীতি বানানের সমস্যা একটা বিরাট ধাক্কা হয়ে দেখা দিচ্ছে। অনেকেই শুধু যে বাংলা বানানের নিয়মকানুন সম্পর্কে অ-হুঁশ তাই নয়, নিজেদের একই লেখায় একই শব্দ এবং একই ধরনের নানা শব্দ বিভিন্ন বানানে লিখে ফেলতেও ভুল করেন না। বোঝাই যায়, তাঁরা এই বানানের বিষয়ে চূড়ান্ত উদাসীন। তাই মনে হল, এই লেখাটিকে সামান্য অদল-বদল করে যদি সকলের সামনে রাখা যায়, হয়ত বানান-নৈরাজ্য খানিকটা হলেও দূর হতে পারে।
এই রচনার প্রায় কোনো বিন্দুই আমার মৌলিক ভাবনা নয়। সমস্ত তথ্য ও যুক্তি বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বইপত্র প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা। পেছনে একটা সহায়ক গ্রন্থপঞ্জিও দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি, শুধু মাত্র বানানের জন্য মোটা মোটা ব্যাকরণ বই ও অভিধান পড়ার হাত থেকে পাঠকদের খানিকটা সময় বাঁচাতে এবং সংক্ষেপে আসল কথাগুলো ধরিয়ে দিতে। তবে মনে রাখা দরকার, শব্দার্থ ও প্রয়োগবিধি জানার জন্য মোটা বইগুলির কোনো বিকল্প এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। আমারও জানা নেই। এরকম একটি নির্দেশিকা হাতের সামনে রেখে কিছুদিন লেখার অভ্যাস করলে তৃতীয় কি চতুর্থ লেখা থেকেই সঠিক বানান-বিধি আয়ত্তে চলে আসবে (অন্তত আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে)। তখন আর প্রতি পাতায় বারবার এর দিকে ফিরে তাকাতে হবে না।
আর একটি কথা। এখানে উল্লেখিত বানান-বিধির কোনো কোনোটা নিয়েও হয়ত চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মধ্যে ভিন্ন মত হতে পারে। আমার উপস্থাপনায় কিছু ভুল থাকার সম্ভাবনাও আছে। বিশেষ করে সংস্কৃত ব্যাকরণ আমার খুব ভালো জানা নেই। বাংলা শিখতে যতটা লাগে ততটুকুই আমি কম-বেশি জানি। সুতরাং এটাকে এখনও একটা মুসাবিদা হিসাবে দেখতে সবাইকে অনুরোধ করছি। ভুল সংশোধন এবং পরামর্শ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কাতর আবেদন রইল। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬]
[১] ভূমিকা
১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে বাংলা একাডেমী আয়োজিত বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে দুটো ব্যানার হোর্ডিং-এর লেখা শ্লোগান পড়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম—“শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলুন”, “শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখুন”। তখনই মনে কয়েকটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। শুদ্ধ ইংরেজি বলা বা লেখার জন্য আমরা যতটা আগ্রহ বোধ করি এবং যত্ন নিই, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তার অভাব কেন? আমরা সকলেই কি বেশিরভাগ সময় শুদ্ধ বাংলা বলি বা লিখি? অথবা ব্যাপারটা কি এরকম যে বাংলা ভাষায় সব রকম বানানই চলে, এবং, শুদ্ধতার কথা বলা এক রকম স্পর্শকাতরতা বা ছুতমার্গ? নাকি, আমরা যে অনেক সময়ই ভুল বলি বা লিখি তা নিজেরাও জানি না বলেই এই সব ভাবি?
এই সব কথা বলার মানে এ নয় যে আমরা সকলেই সব সময় ভুলভাবে বাংলা উচ্চারণ করি বা ভুল বানানে লেখালেখি করি। কিন্তু সঠিক উচ্চারণ করলেও বা সঠিক বানান লিখলেও অধিকাংশ সময় কোনটা কেন সঠিক এবং কোনটা কেন ভুল তা না জেনেই করি।
সঠিক উচ্চারণের জন্য এক ধরনের ব্যবস্থা দরকার, সঠিক বানানে লেখার জন্য দরকার অন্য ব্যবস্থা। আমাদের বিভিন্ন ফোরামের বাংলা প্রকাশনাগুলির ক্ষেত্রে বানানের ভুল এবং বিভিন্নতা অনেক সময় কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই ধীরে ধীরে এই সব বিষয়ে একটা সমতা ও ঐকমত্য গড়ে তোলা দরকার। এই উদ্দেশ্যেই আমি একটি আদর্শ বিধি এখানে প্রস্তাবনার আকারে পেশ করছি। ব্যাপক আলাপ আলোচনা ও মত বিনিময় করে এর প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদ সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
[২] কয়েকটি সাধারণ নীতি
২-১] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী ঢাকা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, প্রমুখ বাংলা ভাষায় তৎসম ও বিদেশি শব্দ সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বানান সংস্কার বিষয়ক যে সমস্ত নিয়ম নীতি প্রস্তাবনা ও প্রবর্তন করেছে আমরা তার সাধারণ সারমর্ম গ-সা-গু হিসাবে গ্রহণ করব। যথাঃ
ক) তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সংস্কৃত বানান রীতিই অনুসরণ করা হবে;
খ) ব্যতিক্রম হিসাবে, তৎসম শব্দে রেফ (/)-এর পর একই বা সমোচ্চারিত ব্যঞ্জন-দ্বিত্ব বর্জন করা হবে;
গ) সমস্ত অ-তৎসম শব্দের বানানে ই-ঈ ধ্বনির ক্ষেত্রে ই-কার এবং উ-ঊ ধ্বনির ক্ষেত্রে উ-কার ব্যবহৃত হবে;
ঘ) বিদেশি শব্দের বানানে উচ্চারণ বোঝানোর জন্য উপযুক্ত অক্ষর ব্যবহার করতে হবে; ইত্যাদি।
২-২] আমরা যে বানান ব্যবহার করব, তার থেকে ভিন্ন অথচ বর্তমানে প্রচলিত বানানগুলিকে আমরা ভুল বলে দাবি করব না। সেগুলিকে আমরা চিহ্নিত করব অসুবিধাজনক বা অপ্রচলিত বিকল্প বানান হিসাবে।
২-৩] বানান নির্ধারণে আমরা মানের নিম্নমুখী ক্রমানুসারে গুরুত্ব দেব এই ব্যাপারগুলিকেঃ
ক) সরলীকরণ;
খ) অত্যাবশ্যক পার্থক্যীকরণ;
গ) রেখা পরিমিতি;
ঘ) মুদ্রণ সারল্য;
ঙ) অত্যধিক প্রচলন;
চ) দৃষ্টি মাধুর্য।
২-৪] যতদিন পর্যন্ত আমরা ‘গর্দভ’ শব্দটিকে ‘গর্ধব’ উচ্চারণ করতে থাকব [সৌজন্যঃ রবীন্দ্রনাথ] এবং ‘সেদ্ধ’-কে বলতে থাকব ‘সেদ্দ’, ততদিন বাংলা শব্দগুলিকে উচ্চারণ অনুযায়ী লেখার জন্য জেদ করব না।
২-৫] লেখা বা মুদ্রণের সময় কোনো শব্দের বানান নিয়ে দ্বিধা বা বিতর্ক দেখা দিলে প্রামাণ্য বা সাম্প্রতিক বাংলা অভিধান দেখতে হবে।
২-৬] বানান বিধি সমগ্র ব্যাকরণের একটা অংশ মাত্র, ব্যাকরণের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নয়। অর্থাৎ, বাংলা ব্যাকরণ ভালো করে আয়ত্ত করতে না পারলে শব্দ গঠন ও বানানের রহস্য বোঝা যাবে না, শব্দের উৎস জানা যাবে না, বানান রীতি সম্পর্কেও স্পষ্ট উপলব্ধি হবে না। হয় সংস্কৃতর পেছনে দৌড়তে হবে, না হলে বেনিয়মের পাল্লায় পড়তে হবে।
২-৭] বানান সংস্কার বা বানান রীতি বোঝার জন্য বাংলা ভাষার শব্দতত্ত্ব ভালো করে জানা দরকার। আধুনিক বাংলা গদ্যের অঙ্গ নির্মাণে সংস্কৃত পালি প্রাকৃত ইত্যাদির মতো উর্দু ফারসি হিন্দি ভাষারও যে বিভিন্ন মাপের অবদান রয়েছে তা বুঝতে এবং মনে রাখতে হবে। বিশেষ করে ক্রিয়াপদের গঠনে।
[৩] স্বরবর্ণ ব্যবহার
বাংলা ভাষা লেখার সময় স্বরবর্ণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন—হল, হোল, হোলো, হলো, হ’ল; দেখ, দ্যাখ, দেখো, দ্যাখো, দে’খ; করব, কোরবো, করবো; ইত্যাদি। বাংলা ভাষার গঠনশৈলী অনুযায়ী এখানে হিন্দি বা পাঞ্জাবির মতো করে উচ্চারণানুগ বানান লেখা সম্ভব নয়। প্রয়োজনও নেই। সংস্কৃত জার্মান বা লাতিন ভাষায় (সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে) বানান অনুযায়ী উচ্চারণ হলেও বিশ্বের বহু উন্নত ভাষায় উচ্চারণ অনুযায়ী বানান বা বানান অনুযায়ী উচ্চারণ নেই। যেমন, ইংরাজি বা ফরাসি ভাষা। তাতে তাদের মর্যাদার হানি হয়নি। বাংলার ক্ষেত্রে এটা মনে রেখে স্বরবর্ণের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। এখানে কয়েকটা মূল নিয়ম উল্লেখ করছি।
৩-১] তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে সংস্কৃত বানান অনুযায়ী ই-কার বা ঈ-কার ব্যবহার করা হবে। যেমন—পক্ষী, হস্তী, হস্তিনাপুর, স্ত্রী, নারী, প্রীতি, দিন, দীন, দ্বারী, বারি, তড়িত, অধিকার, প্রতিযোগী, প্রতিযোগিতা, ইত্যাদি।
৩-২] ইন-প্রত্যয়ান্ত বিশেষণ পদের সঙ্গে ত্ব বা তা যোগ করে বিশেষ্য পদ রচনাকালে ঈ-কার স্থলে ই-কার হবে। যেমনঃ প্রতিযোগী > প্রতিযোগিতা, স্থায়ী > স্থায়িত্ব, বিলাসী > বিলাসিতা, কৃতী > কৃতিত্ব, ইত্যাদি। [বিঃ দ্রঃ—যে বিশেষণ পদ মৌলিকভাবে ঈ-কারান্ত, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটবে না। যেমনঃ কুশ্রী > কুশ্রীতা, নারী > নারীত্ব, সতী > সতীত্ব, ইত্যাদি।]
৩-৩] তদ্ভব শব্দের ক্ষেত্রে উৎস শব্দে ই/ঈ-কার যাই থাকুক না কেন, বাংলা বানানে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন, পাখি < পক্ষী, হাতি < হস্তী, বাড়ি < বাটী, ইত্যাদি।
৩-৪] অতৎসম/বিদেশি শব্দের বানানে সর্বদাই ই-কার ব্যবহার করা হবে। যেমন—গাড়ি, পার্টি, বেটি, বন্দি, ফন্দি, খুশি, পানি, তির, মির্জা, হিন্দি, শাদি, গ্রিস, চিন, জার্মানি, শেক্সপিয়র, জিন, মার্কশিট, শহিদ, কাহিনি, গরিব, ইত্যাদি।
৩-৫] প্রশ্নবোধক অব্যয় পদ হিসাবে ‘কি’ এবং প্রশ্নবোধক সর্বনাম পদ হিসাবে ‘কী’ ব্যবহৃত হবে। উদাহরণঃ তুমি কি এখন স্কুলে যাবে? আজ কি বৃষ্টি হবে বলে মনে হয়? বসে বসে এত কী ভাবছ? কী যে বলেন, কাজ হবে কি হবে না, এখনই বলা যাবে না। এই কঠিন অঙ্ক আমি এখন কীভাবে করব? ছেলেটার কী বুদ্ধি! কি বাংলা কি ইংরেজি—কোনোটাই ভালো করে শেখনি। কী ব্যাপার? কিছু কি বলবে?
[বিঃ দ্রঃ (১) ‘তুমি কি খাবে?’—এই প্রশ্নবোধক বাক্যে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদটি অকর্মক; এর উত্তরে হ্যাঁ কিংবা না বলতে হবে। ‘তুমি কী খাবে?’—এই প্রশ্নবোধক বাক্যে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদটি সকর্মক; এর উত্তরে কিছু না কিছু নাম পদ বা বিশেষ্য (ভাত/রুটি/পরোটা/অমলেট/ট্যাবলেট, ইত্যাদি) ব্যবহার করতে হবে।
(২) অনিশ্চয়তা/বিকল্প বোঝাতেও অব্যয় পদ হিসাবে ‘কি’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—হবে কি হবে না কে বলবে? আট কি দশ বছর আগেকার ঘটনা; ইত্যাদি। অন্যদিকে, বিস্ময়/স্মরণ ইত্যাদি বোঝাতেও সর্বনাম পদ হিসাবে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়। যথাঃ কী সুন্দর (কত অর্থে)! ওদের মধ্যে কী যেন হয়েছে! ইত্যাদি।]
৩-৬] বাংলা গুণ/জাতি বাচক বিশেষ্য বিশেষণ ও প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ই-ঈ ধ্বনি থাকলে বানানে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমনঃ দেশি, বিদেশি, পাগলামি, চাকরানি, ভঙ্গি, জঙ্গি, চাপরাশি, ঢাকি, গিন্নি (< গৃহিনী), কলমদানি, মুখোমুখি, মাখামাখি, তাড়াতাড়ি, বাড়াবাড়ি, ঝাঁকুনি, বাঙালি, ইংরেজি, ফরাসি, ফারসি, আরবি, কানাড়ি, দরবারি, খেলোয়াড়ি, কবিরাজি, ব্যবসায়ি, জমিদারি, সরকারি, পণ্ডিতি, দস্তুরি, পাকামি, ওস্তাদি, পিটুনি, দোস্তি, নামি, দামি, ইত্যাদি।
[বিঃ দ্রঃ যে সব শব্দের শেষে ই-কার আছে, সেই সব ক্ষেত্রে তাদের থেকে ভিন্ন শব্দ নিষ্পন্ন করতে হলে ঈ-কার ব্যবহার করা হবে। যেমন—ইতালি (দেশ), ইতালী (ভাষা); খুশি (বিশেষণ), খুশী (বিশেষ্য); ইত্যাদি। ‘ঈদ’ শব্দের গাম্ভীর্য বোঝাতে ঈ-কারই ব্যবহার করা হবে।]
৩-৭] যে সমস্ত তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষাতেই বিকল্প বানান সিদ্ধ সেই সব ক্ষেত্রে ঈ-কার স্থলে ই-কার ব্যবহৃত হবেঃ যেমন, রাণী > রাণি, রচনাবলী > রচনাবলি, শ্রোতৃমণ্ডলী > শ্রোতৃমণ্ডলি, সূচীপত্র > সূচিপত্র, ইত্যাদি। বিঃ দ্রঃ—কিন্তু মনে রাখতে হবেঃ প্রাণী > প্রাণি হবে না।
৩-৮] তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে সংস্কৃত বানান অনুযায়ী উ-কার বা ঊ-কার ব্যবহার করা হবে। যেমন—দুর্গা, দুর্গতি, দুর্দশা, রূপ, বিদ্রূপ, মুখ, মূক, মূর্খ, মুখ্য, শূদ্র, মূত্র, মুমূর্ষু, বহু, ন্যূন, অন্তঃপুর, সুর, মধু, বিদ্যুৎ, দূত, দ্যূতক্রীড়া, ইত্যাদি।
৩-৯] তদ্ভব শব্দের ক্ষেত্রে উৎস শব্দে উ/ঊ-কার যাই থাকুক না কেন, বাংলা বানানে উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন, কুয়ো < কূপ, নতুন < নূতন, ধুঁয়া/ধুঁয়ো < ধূম্র, পুব < পূর্ব, পুজো < পূজা, শুঁড় < শুণ্ড, শুয়র < শূকর, সুতো < সূত্র, সুচ/ছুচ < সূচি, ইত্যাদি।
৩-১০] বিদেশি ও বাংলা শব্দের বানানে সাধারণভাবে উ-কার ব্যবহৃত হবে। যথাঃ হুইল, ক্যাঙারু, স্ক্রু, রুলিং, পুডিং, উশুল, ভুল, আদুল, ইত্যাদি।
৩-১১] অতৎসম/বিদেশি নামের বানানেও উ-কার ব্যবহার করা হবে। যথাঃ মকবুল, নজরুল, হারুন-অল-রশিদ, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, ম্যাক্সম্যুলার, ব্রুনার, তিরুপতি, গুনটুর, ব্রুকলিন, মাদাম কুরি, ইত্যাদি।
৩-১২] অগ্রে এ-ধ্বনি বিশিষ্ট কয়েকটি শব্দের একাধিক বানান প্রচলিত। যেমন—এত, এতো, অ্যাতো, অ্যাত; দেখ, দ্যাখ, দেখো, দ্যাখো; গেল, গ্যাল, গেলো, গ্যালো, ইত্যাদি। এই সব ক্ষেত্রে আমরা সরলতর রূপগুলিই ব্যবহার করব। যথাঃ এত, দেখ, গেল, ফেল, এমন, কেমন, যেমন, ইত্যাদি।
৩-১৩] তৎসম ছাড়া অন্য শব্দে ‘ঐ’ অক্ষর বা ঐ-কার, কিংবা, সর্বনাম পদ হিসাবেও ‘ঐ’ ব্যবহার করা হবে না। তার বদলে ‘ওই’ ব্যবহার করা হবে। যেমন—ঐশ্বর্য, ঐতিহাসিক, ঐরাবত, দৈবাৎ, নৈতিক, শৈল, কিন্তু ওইভাবে, ওই কথা, ওই ব্যক্তি, বই, দই, কই, খই, মই, হই-চই, ইত্যাদি।
৩-১৪] বর্তমান কালের সাপেক্ষে অনুজ্ঞাবাচক (মধ্যম পুরুষে) ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও’-ধ্বনি উচ্চারিত হলেও বানানে ও-কার থাকবে না। যথাঃ দেখ, লেখ, লিখে রাখ, বল, চল, করে ফেল, বস, ইত্যাদি।
৩-১৫] অতীত ও ভবিষ্যত কাল বোঝাতে ক্রিয়াপদের শেষে ‘ত’, ‘ব’ ও ‘ল’ ইত্যাদি ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ‘ও’-ধ্বনি উচ্চারিত হলেও বানানে ও-কার থাকবে না। যেমনঃ হল, গেল, করল, বলল, পারত, যেত, বলত, আসব, যাব, শিখব, ইত্যাদি।
৩-১৬] ভবিষ্যত কালের সাপেক্ষে অনুজ্ঞাবাচক (মধ্যম পুরুষে) ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও’-ধ্বনির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বানানেও ও-কার যুক্ত হবে। যথাঃ মনে রেখো, মাকে দেখো, ভালো থেকো, একটু বোসো, কাকুকে তুমি বুঝিয়ে বোলো, যা করবে ভেবেচিন্তে কোরো, বাড়িতে আবার সব কথা বলে ফেলো না যেন, ইত্যাদি।
৩-১৭] স্বর সঙ্কোচনের ফলে বাংলা ভাষায় অনেক অ-কারান্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণে ‘ও’-ধ্বনি থাকে। কিন্তু আমরা বানানে তা প্রকাশ করব না। উদাহরণ—কত, কাতর, গরু, পাথর, দর্জি, মর্জি, নজরুল, বন, নজর, কলম, কাগজ, আস্ত, বাঁদর, শুয়র, ছোট, বড়, কেন, যেন, তিনশ টাকা, স্বপন, মাতব্বরি, সবজি, বই, ইত্যাদি।
৩-১৮] কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুটি ভিন্নার্থবোধক সমোচ্চারিত ও প্রায় সমান প্রচলিত (এবং পৌনঃপুনিক ব্যবহৃত) শব্দের মধ্যে পার্থক্যীকরণের স্বার্থে একটির বানানে ‘ও’-কার ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ মতো > মত, আরো > আর, বারো > বার, ভালো > ভাল (কপাল), আলো > আল, কালো > কাল, কোনো > কোন, দাঁড়ানো > দাঁড়ান, থামানো > থামান, খাটো > খাট, পরো > পর, ইত্যাদি।
৩-১৯] বাংলায় অবাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ বোঝানোর স্বার্থে ও-কার ব্যবহার করতে হতে পারে। যথা—বোরো, কানোরিয়া, শিকাগো, রুশো, সোনিয়া, দিদরো, হোটেল, কোপারনিকাস, ইত্যাদি।
৩-২০] বাক্যের মাঝখানে অসমাপিকা ক্রিয়াপদের উচ্চারণে ‘ও’-ধ্বনি থাকলেও বানানে ও-কার দেওয়া হবে না। যেমন—পড়ে (< পড়িয়া) দেখ, নিজে করে অপরকে বলবে, একই কথা বারবার বলে লাভ কী, ইত্যাদি।
৩-২১] তৎসম শব্দ ছাড়া বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে ‘ঔ’-এর সাধারণত ব্যবহার নেই। আমরাও ‘ঔ’-ধ্বনির জন্য ‘অউ’ বানান ব্যবহার করব। যেমন—বউ, মউ (যদিও মৌমিতা < মধুমিতা), ইত্যাদি।
৩-২২] কিন্তু যে সব বিদেশি বা অবাংলা শব্দে ‘অউ’ উচ্চারণ বোঝাতে হলে ও-কার দিতেই হবে, সে সব ক্ষেত্রে ‘ওউ’ ব্যবহার না করে আমরা লেখার সুবিধার্থে ঔ-কারই ব্যবহার করব। যেমনঃ শৌখিন, অরুণ শৌরি, চৌ এন-লাই, ঝৌ-কৌ-দিয়াং, নৌকা, চৌরিচৌরা, পালামৌ, কৌম, চুনৌতি, চৌবে, ইত্যাদি।
৩-২৩] তৎসম শব্দ ছাড়া অন্যান্য বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে ঋ-কার ব্যবহার হয় না এবং আমরাও করব না। যেমন—কৃষ্ণ, খ্রিস্ট, পৃথিবী, ব্রিটেন, তৃতীয়, ত্রিনিদাদ, ইত্যাদি।
৩-২৪] বাংলা ভাষায় ‘এ’ এবং ‘আ’—এই দুইয়ের মধ্যবর্তী স্বরধ্বনিটির ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও তার জন্য আলাদা কোনো অক্ষর বা চিহ্ন নেই। এই ব্যাপারে মনে রাখতে হবেঃ
ক) ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সাধারণত য-ফলা দিয়ে আ-কার যোগ করে এই ধ্বনি বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন—ব্যাখ্যা, ট্যারা, খ্যাপা, ব্যাঙ, ল্যাঠা, জ্যাঠা, ম্যাটিনি শো, ব্যাট, মাউন্টব্যাটেন, ক্যাবলা, প্যান্ট, ন্যাড়া, ইত্যাদি।
খ) কিন্তু কিছু বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে আদি স্বরধ্বনি হিসাবে ব্যবহারের জন্য এর তিনটি রূপ প্রচলিত। যথাঃ অ্যাকাডেমি, একাডেমি, এবং ত্র্যাকাডেমি। আমরা এর মধ্য থেকে অ্যা-কারই গ্রহণ ও ব্যবহার করব। যেমন, অ্যাকাডেমি, অ্যালুমিনিয়াম, অ্যাটম, অ্যানাটমি, অ্যাসিড, অ্যাজেন্ডা, অ্যান্টেনা, অ্যান্ডারসন, অ্যানায়ন, অ্যানোড, অ্যান্টনি, হ্যান-ত্যান, ইত্যাদি।
৩-২৫] কিছু কিছু শব্দের ক্ষেত্রে উচ্চারণে স্বর প্রসারণ ঘটে এবং ‘এ’-ধ্বনির স্থলে ‘অ্যা’-ধ্বনি উচ্চারিত হয়। এই সমস্ত শব্দের জন্য আমরা এ-কারই ব্যবহার করব। যেমনঃ একক কিন্তু এক, একশ, একবার; মেঝে কিন্তু মেলা; বেড় কিন্তু বেড়া; বেল কিন্তু বেলা; খেয়াল কিন্তু খেলা; এমনি কিন্তু এমন, এমনই; দেখেছ না দেখনি; ইত্যাদি।
৩-২৬] সাধু থেকে চলিত ভাষায় রপান্তরের প্রেক্ষিতে কোনো কোনো সময় অসমাপিকা ক্রিয়াপদে লুপ্তস্বরের স্থানে ঊর্ধ্ব–কমা (’) এক সময় খুবই প্রচলিত ছিল। আমরা এখন থেকে আর তা ব্যবহার করব না। যেমনঃ করিয়া > ক’রে > করে; মরিয়া > ম’রে > মরে; হইল > হ’ল > হল; বলিয়া > ব’লে > বলে; ইত্যাদি।
[৪] ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহার
বাংলাভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রূপভেদের ব্যাপক কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা দেখা যায় দুদিক থেকে—একদিকে তৎসম শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে সংস্কৃত বানান রীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা; অপরদিকে অন্যান্য শব্দের বেলায়ও নির্বিচারে তৎসম শব্দরীতি প্রয়োগ। এই দুটি ব্যাপারে নিচের কয়েকটি সূত্র কাজে লাগতে পারে।
৪-১] ক্ষুদ্র, ক্ষুণ্ণ, ক্ষুধা, ক্ষতি, ক্ষমা, ক্ষীর, ক্ষুর, আকাঙ্ক্ষা, ইত্যাদি তৎসম শব্দসমূহে ‘খ’-ধ্বনি উচ্চারণ সত্ত্বেও আমরা প্রচলিত বানান বজায় রাখছি। কিন্তু তদ্ভব বা অন্যান্য বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে আমরা এই রীতি বর্জন করব এবং ‘খ’-ই ব্যবহার করব। যথাঃ খুদে, খিদে, খ্যাপা, খেত, ইত্যাদি।
৪-২] ক খ গ ঘ পরে থাকলে অনুনাসিক ধ্বনি হিসাবে ঙ ব্যবহৃত হবে। যেমন—অহঙ্কার, শৃঙ্খল, সঙ্গীত, লঙ্ঘন, আকাঙ্ক্ষা, ইত্যাদি। সন্ধি বা সমস্ত পদের ক্ষেত্রে বিকল্পে অনুস্বার ব্যবহারও সিদ্ধ বলে গণ্য হবে। যেমন—সংখ্যা, শুভংকর, হৃদয়ংগম, বাংলা, সংঘ, ইত্যাদি।
৪-৩] যে সমস্ত অনুনাসিক ধ্বনির শেষে ‘গ’ বা ‘গ্’-এর উচ্চারণ আছে, সে সব ক্ষেত্রে ঙ ব্যবহার করতে হবে। যথাঃ বাঙালি, ভাঙা, রাঙা, রঙ, রঙিন, টঙ, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, বঙ্গ, রঙ্গ, অঙ্গন, প্রাঙ্গন, গঙ্গা, ইত্যাদি। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে অনুস্বার ব্যবহার সিদ্ধ। যেমনঃ ব্যাংক, পিংক, হুংকার, ইত্যাদি।
৪-৪] চ-বর্গের অক্ষর থাকলে অনুনাসিক ধ্বনির জন্য ‘ঞ’ ব্যবহার করা হবে। যথাঃ চঞ্চল, মনোবাঞ্ছা, গঞ্জনা, ঝঞ্ঝা, ইত্যাদি। বাংলা ও বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। উদাহরণ—কঞ্চি, মঞ্জিল, জিঞ্জির, নিঞ্জা, পাঞ্চিং, ইত্যাদি।
৪-৫] তৎসম শব্দের জন্য সংস্কৃত ণ-ত্ব বিধান মেনে বানান করতে হবে। যথাঃ প্রাণ, গুণ, প্রমাণ, গণেশ, পরিণয়, প্রণয়, পরিণাম, পরিমাণ, ত্রাণ, বিষাণ, কারণ, কিরণ, হরণ, গণ্য, বীণা, দারুণ, পাণি (হাত), ইত্যাদি; কিন্তু, শূন্য, প্রবীন, প্রধান, নবীন, অন্ন, পান, অনুমান, মন, সান্ত্বনা, কীর্তন, বন্ধন, ক্রন্দন, ইত্যাদি।
৪-৬] ট-বর্গের ক্ষেত্রে যুক্তাক্ষরে তৎসম শব্দে মূর্ধণ্য ‘ণ’ ব্যবহৃত হবে। যেমন—কণ্টক, লুণ্ঠন, ব্রহ্মাণ্ড, ইত্যাদি।
৪-৭] তদ্ভব এবং অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ণ-ত্ব বিধির প্রয়োগ করব না। সমস্ত ক্ষেত্রেই ‘ন’ ব্যবহার করা হবে। যেমন—ধরন, দরুন, বিনা, পরান (< প্রাণ), পুরনো, পানি (জল), আগুন, বেগুন, সমান, গনগনে, গিনি, গিন্নি, জাহান্নাম, ইত্যাদি।
৪-৮] তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে একমাত্র ত-বর্গের যুক্তাক্ষরে সব সময় ‘ন’ ব্যবহৃত হবে। যেমন—অন্ত, পান্থ, আনন্দ, সন্ধান, ইত্যাদি। কিন্তু অতৎসম শব্দে যুক্তাক্ষরে সমস্ত ক্ষেত্রেই দন্ত্য ‘ন’ ব্যবহার করা হবে। যথাঃ প্যান্ট, লন্ঠন, বান্টি, সেন্টার, লন্ডন, ঠান্ডা, ইত্যাদি।
৪-৯] বাংলা ভাষায় ‘জ’-ধ্বনির জন্য বিভিন্ন শব্দে ‘জ’ এবং ‘য’—দুটোই ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ‘য’-এর উচ্চারণ ‘ইয়’ হলেও তার জন্য বাংলায় অন্তস্থ ‘অ’ নামে ‘য়’ অক্ষরটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং ‘জ’ এবং ‘য’-এর ব্যবহারে জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা দরকারঃ
ক) তৎসম শব্দের বানান সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী হলেও ‘য’-এর উচ্চারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘জ’-এর অনুরূপ। যেমন—জীবন, যৌবন, যান, যজমান, ভজন, পূজা, সংযম, জয়, যম, যেমন, যথা, জাল, স্বজন, যামিনী, যখন, কাজল, লজ্জা, সজ্জা, শয্যা, ইত্যাদি।
খ) অতৎসম শব্দে সাধারণত আদিতে ‘জ’-ধ্বনি বোঝাতে ‘য’ ব্যবহার করা হয়। যথাঃ যাওয়া, যখন, যেমন, যাদু (ম্যাজিক অর্থে), যোয়াল, যুতসই, যারপরনাই, যোগান, যোগাড়, যিশু, যোসেফ, ইত্যাদি।
গ) অতৎসম শব্দে মধ্য বা অন্তে ‘জ’-ধ্বনি থাকলে সাধারণত বর্গীয় জ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন—কাগজ, মগজ, জাহাজ, বাজার, হাজার, মাজার, ব্যাজার, আজ, হুজুর, মজুর, তাজমহল, তাজা, সাজঘর, সজনে-ডাঁটা, ইত্যাদি।
ঘ) কিন্তু বেশ কিছু ইংরাজি, উর্দু, ফারসি ও আরবি শব্দে আদি ‘জ’ ধ্বনির জন্য সংস্কৃত রীতি অনুযায়ী বর্গীয় জ ব্যবহার অনেক দিন ধরে প্রচলিত আমরা তাদের বানানে পরিবর্তন আনছি না। উদাহরণ—জেলা, জমি (< জমিন), জরিমানা (< জুর্মানা), জেলখানা, জঙ্গল, জঙ্গি, জবাব, জবাই, জবরদস্তি, জমা, জলসা, জানা, জাহান্নাম, ইত্যাদি।
৪-১০] বাংলা ভাষায় ‘শ’, ‘ষ’ ও ‘স’-এর আলাদা উচ্চারণ না থাকলেও, অর্থাৎ, সব কটি ধ্বনিই তালব্য ‘শ’-এর মতো উচ্চারিত হলেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তৎসম শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী হবে। যেমন—নেশা, পেশা, ষষ্ঠ, ষান্মাসিক, সমতা, সময়, কেশব, অসি, মসী, পরিসর, সম, বিষম, কেশদাম, সমাবেশ, আবিষ্কার, সৃষ্টি, সৌজন্য, বিশ্লেষণ, শৃঙ্খল, সংশয়, শ্রেণি, ইত্যাদি।
৪-১১] তৎসম শব্দের বেলায় ষ-ত্ব বিধান মেনে চলতে হবে। যেমন—সুভাষ, ভাষা, ঘোষণা, আষাঢ়, পরিষ্কার, পরিষেবা, সততা, সেবা, সত্তা, সমূহ, নিমেষ, নিষেধ, ইত্যাদি।
৪-১২] তৎসম শব্দের বেলায় ট-বর্গের সাথে যুক্তাক্ষরে ‘ষ’ ব্যবহৃত হবে। যথা—আবিষ্ট (< আবেশ), ক্লিষ্ট (< ক্লেশ), কষ্ট, স্পষ্ট, শিষ্টাচার, নিষ্ঠা, বিষ্ঠা, পৃষ্ঠা, ইত্যাদি।
৪-১৩] তদ্ভব এবং অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে আমরা কখনই ষ-ত্ব বিধির প্রয়োগ করব না। সমস্ত ক্ষেত্রেই উচ্চারণ অনুযায়ী ‘শ’ অথবা ‘স’ ব্যবহার করা হবে। যেমন—হিসাব, জিনিস, পুলিশ, শহর, শৌখিন, প্রেস, বিসমিল্লা, অসোয়াল, শাদা, মশলা, পোশাক, কসরত, সেলাম, ইসলাম, শমন, সিনেমা, মুসলিম, মুশলমান, একুশ, সিম, কিসান, নিশান, ইত্যাদি। [ব্যতিক্রমঃ সাল, সন, আপস, সিধা/সিধে, সরেজমিন, সংসার, সাজা (শাস্তি), সাত, সত্তর, ইত্যাদি দীর্ঘ প্রচলিত শব্দ ও বানান।]
৪-১৪] তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে একমাত্র ত-বর্গের যুক্তাক্ষরে সর্বদাই দন্ত্য ‘স’ ব্যবহৃত হবে। যেমন—অস্ত, আস্থা, ইত্যাদি। কিন্তু অতৎসম শব্দে যুক্তাক্ষরে সমস্ত ক্ষেত্রেই দন্ত্য ‘স’ ব্যবহার করা হবে। যথাঃ স্টেশন, খ্রিস্ট, নাস্তা, মেগাস্থিনিস, শেক্সপিয়র, রিক্সা, ট্যাক্সি, দামাস্কাস, ইত্যাদি। [সাধারণত যুক্তাক্ষরেই বাংলায় দন্ত্য ‘স’-এর প্রকৃত উচ্চারণ ধ্বনিত হয়ঃ ব্যস্ত, খাস্তা, স্টুডিও, বিস্তার, ইত্যাদি। ব্যতিক্রমঃ ক্রিশ্চান।]
৪-১৫] সংস্কৃত ভাষায় রেফ-এর পর যুক্তাক্ষরের বানানে একই বা সমোচ্চারিত ধ্বনি-দ্বিত্ব সিদ্ধ হলেও আমরা এমনকি তৎসম শব্দের ক্ষেত্রেও বাংলা বানানে এই ধ্বনি দ্বিত্ব বর্জন করব। উদাহরণঃ সূর্য (< সূর্য্য), কার্য (< কার্য্য), ধর্ম (< ধর্ম্ম), অর্জন (< অর্জ্জন), আবর্তন (< আবর্ত্তন), ঊর্ধ্ব (< ঊর্দ্ধ্ব), অর্ধ (< অর্দ্ধ), উর্বর (< উর্ব্বর), পূর্ব (< পূর্ব্ব), মুর্ছনা (< মুর্চ্ছনা), দুর্দান্ত (< দুর্দ্দান্ত), ইত্যাদি।
৪-১৬] কিন্তু অন্যান্য তৎসম শব্দের বেলায় যুক্তাক্ষরে সম ধ্বনি-দ্বিত্ব, বিষম ধ্বনি-ত্রিত্ব এবং রেফ-এর পর বিষম ধ্বনি-দ্বিত্ব অক্ষুণ্ণ থাকছে। যেমন—উজ্জ্বল, উচ্ছ্বাস, তত্ত্ব, সত্ত্বেও, মহত্ত্ব, আকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য, তন্দ্রা, বক্তৃতা, সম্পৃক্ত, উদ্বৃত্ত, বক্ষ্যমান, স্বাস্থ্য, কম্প্রমান, নিষ্ক্রিয়, বৈশিষ্ট্য, নিষ্প্রাণ, নিস্পৃহ, স্মৃতি, উদ্ভ্রান্ত, অর্ঘ্য (> অর্ঘ), আর্দ্র, কর্ত্রী, কর্তৃপক্ষ, পার্শ্ব, নির্গ্রন্থ, নির্জ্ঞান, দুর্জ্ঞেয়, দুর্বৃত্ত, নৈর্ব্যক্তিক, ইত্যাদি।
৪-১৭] বিশেষ্য পদের গুণবাচক বিশেষ্যরূপ বোঝাতে ‘ত্ব’ যোগ করা হয়। যথা—জীবত্ব, কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব, গুরুত্ব, স্বত্ব, ব্যক্তিত্ব, ইত্যাদি। এই রকম মূল বিশেষ্য পদের শেষে ‘ৎ’ থাকলে তার সঙ্গে ত্ব যোগ হয়ে ত-দ্বিত্ব হয়। একে বর্জন করা হয়নি। যেমন—মহৎ + ত্ব = মহত্ত্ব; বৃহৎ + ত্ব = বৃহত্ত্ব; তৎ + ত্ব = তত্ত্ব; ইত্যাদি।
[বিঃ দ্রঃ—এই শব্দগুলিকে এইভাবে লেখা ভুল, যথা, মহত্ব, তত্ব, বৃহত্ব, ইত্যাদি। প্রসঙ্গত, নিম্নলিখিত শব্দগুলির বানানও লক্ষণীয়ঃ সত্য, স্বত্ব, সত্তা, আয়ত্ত, সত্ত্বেও, তত্ত্ব, মহত্ত্ব, মাহাত্ম্য।]
৪-১৮] বাংলায় ‘ঙ’ ‘ঞ’ ‘ণ’ ‘ন’ এবং ‘ম’—এই পাঁচটি বর্গীয় অনুনাসিক ধ্বনি ও বর্ণ আছে। এই সম্পর্কিত নিয়মসমূহ নিম্নরূপঃ
ক) তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে অনুনাসিক ধ্বনি সংযোগের সাধারণ নিয়ম হচ্ছেঃ যার যার তার তার। যেমন—শঙ্খ, সঙ্ঘ, চঞ্চল, ঝঞ্ঝাট, জঞ্জাল, খণ্ড, অন্তর, পন্থা, বন্ধন, বিম্ব, শম্ভু, ইত্যাদি।
খ) অতৎসম শব্দে ‘ঙ’ ‘ন’ ও ‘ম’ ছাড়া অন্য ধ্বনিগুলির ব্যবহার নেই বা দরকার পড়ে না। যেমনঃ ব্যাঙ্গালোর, সাদাত হোসেন মান্টো, মুম্বাই, ইত্যাদি।
গ) অন্যান্য ক্ষেত্রে বিযুক্ত ধ্বনি অথবা অ-বর্গীয় অনুনাসিক ধ্বনি ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ ঘোমটা, চুমকি, ন্যাংটো, কাঁকড়া, কাঁথা, কাঁহাতক, ক্যানিং, বেইজিং, ব্যাংকক, মানচুরিয়া, ইত্যাদি।
৪-১৯] অনুস্বার সম্বন্ধীয় নিয়মগুলি বিশেষভাবে মনে রাখতে হবেঃ
ক) ব্যঞ্জনসন্ধিকৃত শব্দদ্বয়ের প্রথমটির শেষ অক্ষর ‘ম্’ এবং দ্বিতীয় শব্দের আদ্যক্ষর ‘ক’-বর্গীয় হলে সন্ধিস্থলে ‘ঙ’ বা অনুস্বার দিয়ে যুক্তাক্ষর গঠিত হবে। যেমনঃ অহম্ + কার = অহঙ্কার/অহংকার; সম্ + কট = সঙ্কট/সংকট; সম্ + গীত = সঙ্গীত/সংগীত; ইত্যাদি।
খ) ব্যঞ্জনসন্ধিকৃত শব্দদ্বয়ের প্রথমটির শেষ অক্ষর ‘ম্’ এবং দ্বিতীয় শব্দের আদ্যক্ষর অন্তস্থ বর্ণের কোনো একটি (অর্থাৎ, য, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ) হলে ‘ম্’ স্থলে শুধু অনুস্বার দিয়েই যুক্তাক্ষর গঠিত হবে। যেমনঃ সম্ + যোগ = সংযোগ; সম্ + লগ্ন = সংলগ্ন; সম্ + বাদ = সংবাদ; সম্ + শয় = সংশয়; সম্ + সৃষ্টি = সংসৃষ্টি; সম্ + রক্ষণ = সংরক্ষণ; সম্ + হার = সংহার; ইত্যাদি। এই কারণে প্রিয়ম্বদা, সম্বর্ধনা, সম্বলিত, স্বয়ম্বর, জাতীয় বানানগুলি ভুল; এদের শুদ্ধ রূপ যথাক্রমে প্রিয়ংবদা, সংবর্ধনা, সংবলিত, স্বয়ংবর, ইত্যাদি।
গ) ব্যঞ্জনসন্ধিকৃত শব্দদ্বয়ের প্রথমটির শেষ অক্ষর ‘ম্’ এবং দ্বিতীয় শব্দের আদ্যক্ষর বর্গীয় ‘ব’ হলে যুক্তাক্ষরে ‘ম্ব’ হবে। যেমন—সম্ + বল = সম্বল; সম্ + বোধন = সম্বোধন; সম্ + বন্ধ = সম্বন্ধ; ইত্যাদি। এই সব ক্ষেত্রে অনুস্বার ব্যবহার অসিদ্ধ। [বাংলা ভাষায় বর্গীয় ‘ব’ এবং অন্তস্থ ‘ব’ (ওয়-ধ্বনি)—এই দুইয়ের উচ্চারণ অভিন্ন এবং ওষ্ঠ্য বর্ণের মতো। এসব ক্ষেত্রে তৎসম শব্দের জন্য সংস্কৃত নিয়ম দ্রষ্টব্য।]
ঘ) মৌলিক শব্দের যুক্তাক্ষরে ‘ঙ’ স্থানে অনুস্বার ব্যবহার করা যায় না। যেমন—অঙ্ক, বঙ্গ, বঙ্কিম, পঙ্কিল, রঙ্গন, পঙ্গপাল, পঙ্গু, ভঙ্গুর, লিঙ্গ, গঙ্গা, ইত্যাদির ক্ষেত্রে অংক, বংগ, বংকিম, পংকিল, পংগপাল, গংগা, ইত্যাদি লিখলে তা ভুল হবে।
৪-২০] সাধারণত মূল সংস্কৃত শব্দে অনুনাসিক ধ্বনি থাকলে তার থেকে নিষ্পন্ন তদ্ভব শব্দে অনুনাসিক স্থলে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথা—আঁকা (<অঙ্কন); বাঁকা (< বঙ্কিম); কোঁচকানো (< কুঞ্চিত); কাঁটা (< কণ্টক), কাঁদা (< কান্না < ক্রন্দন); গাঁ (< গ্রাম); সাঁতার (< সন্তরণ), শাঁখ (< শঙ্খ); হাঁস (< হংস); বাঁশ (< বংশ); ইত্যাদি।
৪-২১] বাংলা ভাষায় বিসর্গ-ধ্বনির উচ্চারণ নেই বললেই চলে। তাই বিসর্গ ব্যবহারের সম্পর্কে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি স্মরণে রাখতে হবেঃ
ক) তৎসম শব্দে মধ্যস্থলে বিসর্গ থাকলে তা বাংলা বানানেও ব্যবহৃত হবে। যথা—অতঃপর, অন্তঃপুর, পুনঃপুন, পৌনঃপৌনিক, অধঃক্ষেপ, শিরঃপীড়া, দুঃসাহস, নিঃশব্দ, প্রাতঃস্মরণীয়, ইত্যাদি।
খ) তৎসম বিসর্গযুক্ত পদের সন্ধিকৃত বা সমাসবদ্ধ পদের বানান সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী হবে। উদাহরণ—স্বতঃস্ফূর্ত, সরস্বতী, শিরশ্ছেদ, নিশ্চিহ্ন, নির্ঝঞ্ঝাট, নির্বিকার, পরস্পর, মনোবিকলন, মনোবিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, সদ্যোজাত, সরোবর, পুনর্বার, পুনরাবিষ্কার, অন্তর্ভুক্ত, অন্তর্লীন, নিরন্তর, নিরবচ্ছিন্ন, ইত্যাদি।
গ) তৎসম শব্দের অন্তে বিসর্গ বাংলায় বর্জনীয়। যেমন—প্রায়শ, ক্রমশ, প্রথমত, প্রধানত, বিশেষত, সাধারণত, অন্তত, সতত, আয়ু, সদ্য, বক্ষ্য, ইতস্তত, মন, ইত্যাদি।
ঘ) বাংলা ভাষায় স্ত, স্থ, স্প এবং শ্ব-এর আগে বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন—নিস্তব্ধ, অন্তস্থল, নিস্পৃহ, নিশ্বাস, সুস্থ, ইত্যাদি।
ঙ) বিস্ময়বাচল শব্দে বিসর্গ ব্যবহার না করে শুধু মাত্র বিস্ময়চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হবে। কোনো কোনো শব্দে দরকার হলে ‘হ্’ যোগ করা যেতে পারে। যথাঃ বা! যা বাবা! আহ্! ওহ্! ইত্যাদি।
৪-২২] তৎসম শব্দে ঈয়ন-প্রত্যয় নিষ্পন্ন হলে তা ক্রিয়া পদের ঔচিত্যবাচক বিশেষণ ও বিশেষ্য বোঝায়। এই জাতীয় শব্দগুলিকে একভাবে দুইভাবে লেখা যায়। যেমনঃ উদ্দেশ্য, নিন্দনীয়, অকল্পনীয়, দর্শনীয়, অনিবার্য, ধার্য, বিচার্য, ইত্যাদি; এবং করণীয়/কর্তব্য, স্মরণীয়/স্মর্তব্য, পঠনীয়/পাঠ্য, গ্রহণীয়/গ্রাহ্য, লক্ষণীয়/লক্ষ্য, খণ্ডনীয়/খণ্ড্য, বর্জনীয়/বর্জ্য, ইত্যাদি।
৪-২৩] এই জাতীয় শব্দগুলি থেকে ক্রিয়া পদ রচনা করতে হলে প্রত্যয় বিভক্তি বাদ দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণ—উদ্দেশে (বা উদ্দেশ করে) বলা, নিন্দা করা, কল্পনা করা, বিচার করা, স্মরণ করা, পাঠ করা, গ্রহণ করা, লক্ষ করা, খণ্ড (বা খণ্ডন) করা, বর্জন করা, ইত্যাদি।
৪-২৪] উপরোক্ত কিছু কিছু প্রত্যয়ান্ত পদকেও কখনও কখনও সরাসরি ক্রিয়াপদ রূপে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তখন সেটা—হয়, কর্তৃবাচ্যের বদলে কর্মবাচ্যের ক্রিয়াপদ রূপে, অথবা, সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে—ব্যবহার করা হয়। যেমন—পাঠ্য (> পাঠ) করা, গ্রাহ্য (> গ্রহণ) করা, ধার্য (> ধারণ) করা, লক্ষ্য (> লক্ষ) করা, ইত্যাদি। [মনে রাখতে হবেঃ লক্ষ করা = পর্যবেক্ষণ করা; কিন্তু লক্ষ্য করা = লক্ষ্যে পরিণত করা। উদাহরণঃ “যুক্তিশীল মনন গড়ে তোলাই বিজ্ঞান আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য করতে হবে, তাই প্রতিটি কর্মসূচি এর পরিপূরক হচ্ছে কিনা তাও লক্ষ করতে হবে।“]
ইত্যাদি . . .।
[৫] এই বিধিসূত্র কীভাবে ব্যবহার করবেন
৫-১] যদি পছন্দ হয়, হাতের সামনে এটিকে প্রস্তুত রাখুন। খুব ভালো হয় যদি এর একটা মুদ্রিত অনুলিপি কাছে রাখতে পারেন। কোনো কিছু লিখবার সময় যে শব্দটিকে ঘিরে আপনার সন্দেহ হচ্ছে, ঠিক লিখছেন কিনা, প্রথমে চিহ্নিত করে নিন, কোথায় আটকাচ্ছে—স্বরবর্ণে না ব্যঞ্জনবর্ণে। সেই অনুযায়ী উপরের অনুভাগ তিন বা চারে চলে যান। শব্দটি তৎসম/অতৎসম হলে বিশেষ স্বর/ব্যঞ্জন ধ্বনির জন্য সেই সূত্রগুলি পড়ে দেখুন। একটা নির্দেশিকা পেয়ে যাবেন।
৫-২] উদাহরণ-১: ধরুন, আপনি কয়েক জায়গায় “করব” “ধরব” “পারব” ইত্যাদি লিখে এসে এক জায়গায় “চলত” না লিখে “চলতো” লিখে ফেলেছেন। সন্দেহ হয়েছে। ঠিক আছে। কেসটা অন্ত্য স্বরবর্ণ “ও” ব্যবহারের সমস্যা। তার মানে, আপনাকে যেতে হচ্ছে ৩-১৫ নিয়মের কাছে। যদি সেই নিয়ম পছন্দ হয়ে যায়, নিশ্চিন্তে “চলত” লিখুন। যদি অপছন্দ হয়, আগের জায়গাগুলিতে গিয়ে “করবো” “ধরবো” “পারবো” ইত্যাদি লিখে ফেলুন। কিন্তু দয়া করে দুরকম লিখবেন না।
৫-৩] উদাহরণ-২: ধরুন, আপনি কয়েক জায়গায় “সূর্য” “কর্ম” “পার্বতী” ইত্যাদি লিখে এসে এক জায়গায় “গৃহকর্ত্রী” লিখতে গিয়ে ধন্দে পড়েছেন। রেফ দেখে সন্দেহ হয়েছে। র-ফলা দেবেন কিনা বুঝতে পারছেন না। ঠিক আছে। কেসটা রেফ-এর পর সমধ্বনি দ্বি-ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহারের সমস্যার সাথে গুলিয়ে গেছে। এবার আপনাকে যেতে হবে ৪-১৫ এবং ৪-১৬ নিয়মদ্বয়ের কাছে। দেখবেন, বিষয়টা শুধুমাত্র রেফ আর যে কোনো দ্বি-ব্যঞ্জন ধ্বনির সমস্যা নিয়ে নয়, নিয়মটাতে আছে রেফ-এর পর সম বা সমোচ্চারিত দ্বি-ব্যঞ্জন ধ্বনির সমস্যা।
ইত্যাদি . . .।
আশা করি, এইভাবে কাজের সামান্য হলেও কিছু সুবিধা হবে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
এছাড়া, সাহিত্য সংসদ, পশ্চিম বাংলা আকাদেমি, দেব সাহিত্য কুটির, ইত্যাদি প্রকাশিত বাংলা বানান সংক্রান্ত অভিধান সমূহ।