সেদিন সন্ধাবেলা কাজ সেরে ফিরছি, দেখি একটি মেয়ে চাঁদের উপর পা তুলে বসে আছে। দেখে রাগ হলো। চাঁদের উপর পা তুলে ভর সন্ধাবেলা একটি মেয়ে বসে থাকবে এটা কোনো রাগের কারণ হতে পারে না। মেয়েরা আজকাল পাইলট হচ্ছে, পাহাড়ে চড়ছে, যুদ্ধে যাচ্ছে, এমনকি মহাকাশেও, তো চাঁদের উপর পা তুলে একটা মেয়ে বসতেই পারে। আসলে রাগ হলো তাকে আয়েস করে, আরাম করে বসে থাকতে দেখে। এমন করে বসে আছে, যেন ও শুধু চাঁদের মালকিন না, গোটা পৃথিবীরই মালকিন। এইটা দেখে একটা রাগ হলো। এই অবধি পড়েই জানি ফেমিনিস্ট ধরনের মেয়েরা আমায় গোঁত্তা দিতে আসবে, যে - হে পুরুষ, কেন একটা মেয়ে কি একটু চাঁদের উপর পা তুলে বসতে পারেনা? ওর কি অধিকার নেই? ইকুয়ালিটি, রাইট, মানবাধিকার- এসব বলবে জানি। বাট ব্যাপারটা সেটা না। আসলে কাউকে আয়েস করতে, আরাম করতে দেখলেই আমার কেমন জানি রাগ হয়। কেউ কোনো কাজ না করে চুপচাপ রিল্যাক্স করছে, টাইমটা এনজয় করছে- এসব চোখে পড়লেই জ্বলি আমি। ছোটোবেলায় মনে আছে, স্কুলে পড়ি, তখন ক্লাস থ্রী কি ফোর। টিফিনে সব ছেলেরা এ ওর টিফিন কাড়াকাড়ি করছে, কেউ এর ওর ব্যাগ থেকে জিনিষ চুরি করতে ব্যস্ত। আমি ভাবছি কার টিফিন বক্স ঝাড়বো, দেখি একটা ছেলে (নাম মনে নেই), এইসবের মধ্যে না গিয়ে বিন্দাস হাসতে হাসতে স্কুলের বারান্দা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। যেন তার কোথাও যাবার নেই, পৌঁছাবার নেই। এরম ব্যতিব্যস্ত একটা সময় আমারই সমকক্ষ একজন এরকম ফোকটে নির্বাণ লাভ করে ফেলেছে ভেবে, ওটা দেখেই আমার এমন রাগ হলো, গিয়ে এক ধাক্কা মেরে ওকে ফেলে দিলাম।
- তুই আমায় ফেললি কেন রে!
- তুই হাসছিলি কেন?
- আমি হাসছি তো তোর কী!
- আরে হাসবি কেন!
মারামারি, কিল, ঘুষি, লাথি। ক্লাস টিচার এসে দুজনকেই অফিস রুমে নিয়ে গেলো কান ধরে। পরে অবশ্য আমার গার্জেন কল করে আমারই পোঙা মারা হয়েছিলো। সেটা বড় কথা না। ওই ছেলেটার শান্তি তো বিগড়ে দিয়েছিলাম, এটা ভেবেই তখন একটা আদিম আনন্দ হয়েছিলো সেই ছোটোবেলাতেই।
এত কথা বললাম এই কারণেই, যে ব্যাপারটা ছেলে বা মেয়ের না। ছোটো থেকেই আমার স্বভাবই ছিলো কাউকে একটু শান্তিতে আয়েস করতে দেখলেই মনের ভিতর একটা অস্বস্তি হওয়া। অবশ্য বড় হবার পর আস্তে আস্তে আমি এই স্বভাবটা কন্ট্রোল করতে শিখেছি। মানে ইচ্ছা না থাকলেও শিখতে হয়েছে। অফিসে বোর্ড মীটিং হচ্ছে, সব স্টাফ নখ কামড়াচ্ছে, ঠোঁট কামড়াচ্ছে, যে যার প্রেসেন্টেশন নিয়ে টেনশনে। শুধু ম্যানেজারেরই কোনো টেনশন নেই। ওর প্রোমোশানের ভাবনা নেই, প্রেসেন্টেশনও নেই, ম্যানেজার আরাম করে সবচেয়ে দামি চেয়ারে মাথা এলিয়ে বসে মজা নিচ্ছে। ইচ্ছা হয়েছে কতবার যাই উঠে গিয়ে ধাক্কা মেরে ম্যানেজারকে ফেলে দিই। সম্ভব না। কন্ট্রোল। বাসে জানলার ধারে কোনো ইয়ং ছেলে হেলান দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে আরাম করে গান শুনছে, চোখ বুজে আবার হাসছে - শান্তির ছেলে! ইচ্ছা করেছে কান থেকে হেডফোনটা টেনে জানলা দিয়ে ফেলে দিই। ইচ্ছা করলেও সম্ভব না।
যাগগে, আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে আমার বায়োগ্রাফিতে চলে যাচ্ছি। সরি। যে কথা বলছিলাম, অনেকদিন পর আবার সন্ধেবেলা কাজ থেকে ফেরবার সময় পথের ধারে একটি মেয়েকে চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে অনেকদিন পর আবার মাথা গরম হয়ে গেলো। কিন্তু কাজ, আর বাড়িতে কিছু সমস্যা নিয়ে মাথাটা এতই টেনশনে ছিলো, সেদিন আর বেশিক্ষণ ওখানে দাঁড়ালাম না। বাড়ি চলে এলাম। শুধু মেয়েটির চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকার দৃশ্যটা মনের ভিতর বাকি রাতটা, পরের সারাটা দিন একটা অস্বস্তি দিয়ে গেলো। দ্বিতীয় দিন ফিরছি। এক দৃশ্য। আজও অস্বস্তি। রাগ কম, অস্বস্তিই বেশি। চেষ্টা করলাম বিষয়টা না ভাবার। এরকম ভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো।
তার কয়েকদিন পর আবার একই রাস্তা ধরে ফিরছি। সন্ধেবেলা। আবার এক দৃশ্য। মেয়েটি ওখানে চাঁদের ওপর অবিকল আগের দিনগুলির মতো পা তুলে বসে। আজ সে শুধু পা তুলেই বসে নেই, হাতে কী একটা বই নিয়ে পড়ছে। চতুর্দশীর চাঁদ। পরের দিনই পূর্নিমা। চাঁদের আলোয় মেয়েটির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আজ একটু ভালো করে দাঁড়িয়ে গেলাম মেয়েটিকে দেখবো বলে। হুম। মেয়েটির বয়স বেশি হবে না। আমার থেকে একটু বেশি একটু কম। মেয়েটি পড়ে আছে একটি হলুদ সবুজ রঙের কাজ করা চুড়িদার আর একটি কমলা রঙের পালাজো। চুড়িদারের সাথে পালাজোর রঙ মোটেই মানাচ্ছে না। মেয়েটির চুলগুলি খোলা, হাতে কেমন একটা শান্তিনিকেতনি টাইপ বালা। বোলপুর গেলে মেয়েদের হাতে এসব ডিজাইন করা বালা চুড়ি থাকে। মেয়েটিকে দেখতে সুন্দরীই বলা চলে। বলা চলে কি আবার! ভেবে দেখলাম মেয়েটি যথেষ্ট সুন্দর। অল্প বয়স থেকেই আমার স্বভাব যে সমস্ত মেয়েরা একটু বেশিই সুন্দর, মানে যারা আমায় কোনোদিনই পাত্তা দেবেনা, ওদের রূপকে মনে মনে স্বীকৃতি না দেওয়া। কোনো বন্ধু ধরা যাক বললো- দেখ মেয়েটি যাচ্ছে কী সুন্দর, আমি দেখলাম মেয়েটি এতই সুন্দর যে বলে বসলাম- ধুস, কই সুন্দর, ওরম মেয়ে কত আছে! এরকম আর কি। তা এই মেয়েটা কী? সুন্দর? মাঝারি সুন্দর নাকি বেশি সুন্দর? সেটা বোঝা যাবে মেয়েটি আমায় পাত্তা দেবে কি দেবে না তার ওপর। তাই মেয়েটির সৌন্দর্যের ব্যাপারে ডিশিসন নেওয়া একটু ঝুলিয়ে রাখা যেতেই পারে।
আমি যে মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, মেয়েটি কি বুঝতে পারছে না? নাকি বুঝেও ভান করছে, ভাও নিচ্ছে? হতে পারে মেয়েটা বই পড়ায় একটু বেশিই ডুবে গেছে, আবার অনেক সময় নিজেকে কুল লাগানোর জন্য অনেকে বই পড়ার পোজ দিয়ে বসে থাকে। আমি নিজেই বাসে, ট্রামে এরকম অনেক করেছি। যাই হোক, কেন জানিনা মনে হলো মেয়েটি যদি আমাকে একটু লক্ষ্য করতো বেশ হতো। কেন বেশ হতো, কীই বা হতো, এসবের কোনো যুক্তি নেই। তাও মনে হলো। মনে হতে আমি এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম, যাতে মেয়েটি আমায় সরাসরি দেখতে পায়, আবার অস্বস্তিও না বোধ করে যে একটা অচেনা লোক সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেছে- এইসব ভেবে। মেয়েটা এবার বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো। তার পা এখনো চাঁদের ওপরই তোলা। মেয়েটির সাথে আমার চোখাচুখি। মেয়েটা কি বুঝে গেছে, আমি ওর নজরে পড়বো বলেই ওর সামনে এসে দাঁড়ালাম? কে জানে! মেয়েদের সিক্সথ সেনস্ হেবি স্ট্রংগ হয়ে, এসব শুনেছি। হলে হবে। আমি তো আর ওকে দেখে ইভটিজিং করিনি, বাজে ভাবেও তাকাইনি। আর সত্যি বলতে এখন আর মেয়েটিকে দেখে আমার আগের দিনের মতো রাগও হচ্ছে না। বিশেষ করে ওর সাথে চোখাচুখি হবার পর তো আমার বুকের ভিতর একটা ক্যাঁক করে আওয়াজ হলো। কীরম আওয়াজ? আমার বন্ধু শানু খুব ঘাটিয়া বাইক চালায়। ওর সাথে দু একবার বাইকে করে গেছি এখান ওখান। ও যদি ৬০/৭০ কিলোমিটার স্পীডে বাইক চালিয়ে হুট করে ব্রেক মারে, ওর বাইকে একটা বিকট আওয়াজ হয়- ক্যাঁওক ক্যাচ! অনেকটা ওরকম আওয়াজ হলো মেয়েটি যখন তাকালো আমার দিকে। ও কি আওয়াজটা শুনে ফেললো? কে জানে।
আপনার কাছে একটা পেন হবে? একটু দেবেন?
মেয়েটা আমাকেই বললো তো। হ্যা। আর কাকে বলবে, আশে পাশে কেউ তো নেই। আমার সাথে একটা ব্যাগ আছে। ওটা দেখে ওর মনে হতে পারে আমার কাছে হয়তো পেন থাকলেও থাকতে পারে। বললাম- আছে একটা ব্ল্যাক পেন।
-ব্ল্যাক? তাই দেখি।
পিঠ থেকে ব্যাগটা সামনে টেনে এনে, একদম সামনের ছোটো চেইনটা খুলে একটা কালো কালির পেন ছিলো, বের করে মেয়েটির হাতে দিলাম। মেয়েটি ওর চেয়ার থেকে না উঠে, চাঁদ থেকে পা না নামিয়েই, একটু ঝুঁকে বা হাতটা বাড়িয়ে আমার থেকে পেনটা নিলো।
বাঁ হাতে নিলাম, কিছু মনে করেন না যেন। বইটায় একটু আন্ডারলাইন করতে হবে, কয়েকটা জায়গা। না করলেই নয় বুঝলেন। একটু দাঁড়ায়ে যান। আমি আন্ডারলাইন করেই দিয়ে দিচ্ছি। বলে মেয়েটি আবার বইটা পড়তে ব্যস্ত হয়ে গেলো। তাঁর পা তখনো চাঁদের ওপর তোলা। চতুর্দশীর চাঁদ, প্রায় পূর্ণিমার কাছাকাছিই। চাঁদের আলোয়, মেয়েটা চাঁদের ওপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বই পড়তে পড়তে আমার পেন টা দিয়ে আন্ডারলাইন করতে থাকলো। আমি ওখানেই ওভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এভাবে কতখন কাটলো আমার খেয়াল নেই, মেয়েটি যে আমার পেনটা নিয়ে আছে, এটা কি ও ভুলে গেছে? ও পাতার পর পাতা পড়ে যাচ্ছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছে, মাঝে মাঝে কী একটা ভাবছে, তারপর পেন দিয়ে দাগ কাটছে, আবার পাতা ওল্টাচ্ছে, আবার পড়ছে। আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মেয়েটির বই পড়া দেখে যাচ্ছি। আগে কখনো আমি কোনো মেয়েকে এভাবে বই পড়তে দেখিনি। মেয়েরা যখন মন দিয়ে বই পড়ে, তখন কি তাদের দেখতে সুন্দর হয়ে যায়? নইলে আমার কেন ওকে বিরক্ত করতে ইচ্ছা করছে না, যে ওকে বলি- এই যে পেনটা এবার ফেরৎ দেবেন? আমার বাড়ি যেতে হবে তো। এসব বলছি না আমি। মেয়েটারও কোনো নামগন্ধ নেই বইটা ছাড়ার। মাঝখানে দু একবার পড়তে পড়তে হাফিয়ে গিয়েই বোধহয়, মেয়েটা বই থেকে মুখটা তোলে, একবার আমার দিকে তাকায়, একটু হাসে, আমার বুকের ভিতর ‘ক্যাওক ক্যাঁচ’, আমিও পাল্টা হাসি। মেয়েটি বই এর ভিতর ডুবে যায়। চাঁদের ওপর পা তুলে আয়েস করে বসে থাকা একটি মেয়ে এইভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বই পড়েই যেতে থাকে, পড়েই যেতে থাকে, আন্ডারলাইন করেই যেতে থাকে, করেই যেতে থাকে। আর আমি এভাবেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে জানিনা কতখন হয়ে যায়, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময়টা কাটিয়ে দিই। এই প্রথম আমি খেয়াল করি, আরাম করে কাউকে নির্লিপ্ত ভাবে কোনো কাজ করতে দেখে আমার কোনো রাগ হয় না। আমার মনে হয়, আমিও বোধহয়, খুব আয়েস করেই দাঁড়িয়ে থাকি, মেয়েটিকে দেখেই যেতে থাকি, দেখেই যেতে থাকি। এতটাই আয়েস করে আমি দাঁড়িয়ে থাকি, মনে হয়, আর কয়েক বছর আগের আমির সাথে যদি এখনের আমি-টার দেখা হয়, তাহলে পুরোনো আমি এসে এই বুঝি আমাকে এক ধাক্কা দেবে!
এই তুই আমায় ধাক্বা মারলি কেন?
তুই ওরম বিন্দাস আরাম করে দাঁড়িয়েই বা আছিস কেন?
আরে আমি দাঁড়িয়ে আছি তো তোর কী বে!
কেন দাঁড়াবি?
চুপ, চুপ একদম, দেখছিস না সামনে একজন মন দিয়ে পড়ছে? আর যদি শব্দ করেছিস তো পিছনে এমন লাথি মারবো যে...
আমার সঙ্গে আমির কাল্পনিক কথোপকথন আমার মাথার ভিতর চলতে থাকে। একসময় থেমেও যায়। মেয়েটি একটি সময়ের পর বইটা পড়া শেষ করে। বইটা বন্ধ করে মুখ তুলে তাকায়। এই প্রথম সে চাঁদ থেকে পা টা নামায়। চাঁদ থেকে পা নামাবার পর চাঁদের আলো যেন আরেকটু বেশি জোরালো হয়ে ওঠে। চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে ইত্যাদি গান এইসময় বাজলেও বাজতে পারে। মেয়েটি পেনটি আমার দিকে এগিয়ে দেয়, এবার ডান হাতে। আমি ডান হাত বাড়িয়ে মেয়েটির হাত থেকে পেনটা নিই।
আপনি কি এবার বাড়ি চলে যাবেন? মেয়েটি আমাকেই প্রশ্নটা করে।
হ্যাঁ মানে, ওই আর কি, যেতে হবে।
আপনার বাড়ি থেকে চাঁদ দেখা যায়?
আগে যেতো জানলা দিয়ে ভালো করে, এখন একটা বড় ফ্ল্যাট হয়ে গেছে গত বছর থেকে, সেরকম ভালো দেখা যায় না।
- আপনার বাড়ি ছাদ আছে?
না নেই। টালির বাড়ি।
মেয়েটা চোখ বুজে কি যেন একটা নিজের মনে মনে ভাবে, তারপর বলে- অন্যায় এটা। কোনটা যে অন্যায় বুঝতে পারলাম না আমি। আমার বাড়ি দিয়ে চাঁদ না দেখতে পাওয়া? ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়া? নাকি আমার বাড়ি ছাদ নেই বলে।
মেয়েটি বলে চলে- কাল পূর্ণিমা।
আমি বললাম- হু।
-এক কাজ করেন, কাল সন্ধেবেলা একবার আসেন। আপনাকে একটা জিনিষ দেবো, আপনি ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখবেন।
-কী
-সেরম কিছু না। চাঁদের একটা টুকরো
-কী? মানে?
মেয়েটি আমার কথার জবাব না দিয়েই উঠে পড়ে। এক হাতে বইটা বগলদাবা করে আরেক হাতে চেয়ারটা তুলে নেয়।
আমায় এখন ঘরে যেতে হবে, আমায় একটা লেখা শেষ করতে হবে, এক কাজ করেন, আপনার পেনটা দিন তো, আমার ঘরে ব্ল্যাক পেন নেই। কাল যখন আসবেন নিয়ে যাবেন।
আমিও বাধ্য ছেলের মতো ব্যাগ থেকে বের করে পেনটা ওকে আবার দিলাম। মেয়েটা পেনটাকে বইয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে, চেয়ারটা হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে অল্প করে হেসে- তালে কাল দেখা হচ্ছে, আর ব্যাগটা আনতে ভুলবেন না যেন, কেমন? আসি। - বলে সামনের চাঁদের আলো ভরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়িগুলোর ভীড়ের মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।
...
পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মধ্যে সাতার কাটার মতো আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি। আমার পিঠে ব্যাগ। আমাকে যেতে হবে ঠিক ঠিক গন্তব্যে যেখানে ঠিক একদিন আগে চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকা একটি মেয়ের সাথে আমার আলাপ হয়েছিলো। যতটুকু কথা হয়েছে- একে কি আলাপ বলা যায়? কে জানে। আমি হেঁটে চলেছি। আর একটু পরেই দেখা হবে চাঁদের উপর পা তুলে বসে থাক একটি মেয়ে যে আমায় একটি চাঁদের টুকরো দেবে বলে কথা দিয়েছে। কথা দিয়েছে কি? বলেছে আসতে, এটা কি নিমন্ত্রণের মতো? হতেও তো পারে আজ গিয়ে দেখবো জায়গাটাতে কেউ নেই, মেয়েটি নেই, সে এলোই না হয়তো। এসব ভাবতে যাবো, এমন সময় আমার কানের কাছে আমারই মতো গলা করে কে যেন এসে বললো- চাঁদের উপর পা তুলে বসে থাকা মেয়েরা কোনোদিন মিথ্যে কথা বলতে পারে না। কখনো না।
চুড়িদার ও পরেছে আবার পালাজোও পরেছে!!! চুড়িদারটা যেহেতু চাপা আর পালাজোটা ঢিলে কাজেই চুড়িদার পরে তার উপরে পালাজো গলিয়ে নেয়া খুবই সম্ভব বটে। কিন্তু... চুড়িদারের উপরে পালাজোপরাটাই যেহেতু অ্যাবসার্ড কাজেই রঙ না মেলাটা খুবই সম্ভব।
কিন্তু এরম গাধাটে লেখা আর বেশী এগোতে পারলাম না, ওই চুড়িদারের ওপরে পালাজোতেই ক্ষান্তি দিলাম। কিরম একটা 'ও মেয়েদের জামাকাপড় ওর আবার অত ডিটেল কে জানছে' টাইপ মেসেজ আসছে।
এইটা আবার ইস্পেশালে প্রকাশিত!!!
"মেয়েটি পড়ে আছে একটি হলুদ সবুজ রঙের কাজ করা চুড়িদার আর একটি কমলা রঙের পালাজো। চুড়িদারের সাথে পালাজোর রঙ মোটেই মানাচ্ছে না।"
খুব ভালো লাগলো।
চূড়িদার পালাজোর ডিটেলিংয়ে ভুল থাকলে মেরামতযোগ্য। কিন্তু গল্পটি যে নতুন স্বাদের তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
যাঁরা মতামত দিলেন সকলকে ধন্যবাদ। অবশ্যই পোশাকের বিবরণ ভজঘট আছে। ইচ্ছা করে অ্যাবসার্ড করার জন্যই এইটা করা। আগামী দিনে নিশ্চই আবার নতুন করে ভাববো। :)
আমার ভালোই লাগলো। প্রথমদিকটায় স্পনটিনিটির একটু অভাব মনে হচ্ছিলো। মেয়েটি চাঁদের ওপর পা তুলে বসে আছে একথা অনেকবার করে বলা হচ্ছে মনে হচ্ছিলো। তবে গল্পের কনটেন্ট, স্টাইল সব মিলিয়ে শেষ অব্দি ভালোই লাগলো।
হমমমমম