যতক্ষণ কোনো প্রকল্প ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব এবং ধর্মীয় মৌলবাদের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখায় ততক্ষণই তা ভালো। ধর্মনিরপেক্ষতার সীমাবদ্ধতার বিপরীতে বিপুল ধার্মিক জনতার নৈতিক বোধকে অসাম্প্রদায়িক লক্ষ্যে চালিত করার এ এক উপায় হতে পারে। তবে এই উপমহাদেশে রাষ্ট্রশক্তির কাছে মৌলবাদ প্রশ্রয় পায়। সেখানে লোকধর্ম তার বিরুদ্ধে কতটা শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়তে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ... ...
বুদ্ধবাবুর সংস্কৃতিবোধ, সাহিত্য ও সিনেমা প্রেম নিয়ে আমি কিছু লিখব না। অনেকে লিখেছেন।আমি ওঁর রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলব। সেখানে কিছু সমালোচনা যেমন থাকবে তেমনি ওঁর বিরুদ্ধে অতি বামদের কিছু সমালোচনার জবাবও থাকবে। ... ...
বামপন্থীদের এই রাজ্যে সাফল্য পেতে গেলে আগে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের পতনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে । তার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। তাই বলে সঙ্গত কারণে রাজ্য সরকারের বিরোধিতার পরিসরটি ছাড়লে চলবে না। যদিও একটা স্ববিরোধিতা আছে সিপি আই এমের। দেখা গেছে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তার যে ঘোষিত নীতি তাতে স্পষ্ট বামপন্থী অভিমুখ থাকে। কিন্তু ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যে শাসনক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকলে সেই অভিমুখ থাকে না।সবার আগে কর্মসূচীকে শ্রেণীরাজনীতির ভিত্তিতে, প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে পুনর্নিমাণ করা দরকার। ... ...
একথা অনস্বীকার্য যে আজকের ইসলামি দুনিয়ায় সঠিক বৈজ্ঞানিক মনোভাব এবং যুক্তিবাদের চর্চায় ঘাটতি আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই শ্লথতা এবং কূপমণ্ডুকতার পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কায়েমী শক্তির মেলবন্ধন । অথচ অতীতে সমস্ত ধর্ম,সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান থেকে শেখার মনোভাব দেখিয়েছেন ইসলামি পণ্ডিতরা।সবাই পাশ্চাত্যের সংজ্ঞা অনুযায়ী সেকুলার হবেন না, সাংস্কৃতিক কারণেই তা সম্ভব নয় এটা আমাদের বুঝতে হবে। বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে, যুক্তিবাদ এবং আবেগের মধ্যে কিছুটা সমন্বয় এবং যেখানে সেই সমন্বয় সম্ভব নয় সেখানে তাদের নিজস্ব স্বাধীন ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। ... ...
বেঙ্গালুরু আর মুম্বাইতে ইণ্ডিয়া জোট গঠনের মধ্য দিয়ে তাহলে নতুন কী হোলো যাতে বেশ কিছু বামপন্থী সমর্থক দলগুলির ওপর রেগে গেলেন ? কারণ একটাই, সেখানে মমতা বন্দোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের অংশগ্রহণ।তাঁদের আবেগকে সম্মান জানিয়েও বলতে হয় এ তাঁদের রাজনৈতিক ভুল। ... ...
পাপের স্পর্শ ( A touch of Sin ) ছবিতে হিংসা, রক্তপাত, আত্মহনন ভালো পরিমাণে আছে। কিন্তু এসব আছে এমন একটা সমাজে বাঁচার প্রতিক্রিয়া হিসেবে যেখানে প্রতারণা আছে, নিষ্ঠুরতা আছে, আছে অর্থগর্বী প্রমত্ততা। দেখে কখনো মনে হবে না যে ৭৪ বছর আগে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে যাওয়া , সমাজতান্ত্রিক পথে হাঁটা কোনো দেশের ছবি দেখছি। ... ...
পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার সঙ্গে গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক অস্তিত্ব জড়িত। অথচ ক্রমেই তা হয়ে যাচ্ছে দূরতর এক মরীচিকা যাতে সাধারণ মানুষের মতদানের অধিকার সংকুচিত হয়েই চলেছে। আগের আমলে দলীয় আমলাতন্ত্র যা ক্ষতি করেছে তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে বর্তমান আমলের ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র। শুধু দুর্নীতি নয়, প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত পঞ্চায়েতের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা যা কখনোই পূর্ণতার মুখ দেখে নি। ... ...
নেহরুর ভারত ভাবনার মধ্যে আমাদের বেঁচে ওঠার সঞ্জীবনমন্ত্র নিহিত আছে যদিও আজ তা সর্বাপেক্ষা আক্রান্ত, আজাদীর এই অমৃতকালেই আরো বেশি করে যেন বা। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পণ্ডিত নেহরুকে পেয়েছিলাম। নেহেরু সংবিধানের অবজেকটিভ রেজোলিউশন উপস্থাপন করেছিলেন কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলির কাছে। হিন্দুত্ববাদীদের মিথ্যা ট্রোলগুলি, হোয়াটস অ্যাপের মিথ্যাগুলিকে একটু অনুসন্ধান করলেই মিথ্যের বেসাতিটা ধরা পড়ে। ভারত ভাবনার মূল রূপকার পণ্ডিত নেহরু এদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য। ... ...
আজ মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ শুরু হল।প্রতিবাদ আর আত্মসমালোচনার যে যুগল সাধনার পথ তিনি দেখিয়ে গেছেন তার কোনো বিকল্প আজ পর্যন্ত পাই নি আমরা। এমনকি সেই পথে সঠিকভাবে হাঁটার সাহসটুকু পর্যন্ত দেখাতে পারিনি ঠিকভাবে, যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই দুঃসময়ে। ... ...
আজ শালপ্রাংশু, অনতিমন্দ্র কণ্ঠস্বরের বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটির ১০৩ তম জন্মদিবস। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দুঃসময়ে ওঁর তিনটি ছবির কথা আজ বেশি করে মনে পড়ছে যেগুলিকে ওর নাগরিক ট্রিলজি বলেন অনেকে। এই তিনটি ছবির মধ্যে অন্তত দুটির বিষয় বিপুল কর্মহীনতা আর অন্তত দুটি ছবিতে মধ্যবিত্তের আদর্শচ্যুতি। কিন্তু সেটা নিছক ঈশপ ফেবলসের নীতিকথা নয়, এই আদর্শচ্যুতির পেছনে যে সামাজিক পটভূমিকার চাপ যা মনুষ্যত্বকে বিকিকিনির হাটে চাপিয়েছে তা সত্যজিত বড় নিষ্ঠুরভাবে উপস্থাপিত করার সাহস দেখিয়েছিলেন। ... ...