লিখেছিলাম , দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান থাকেন বটে, কিন্তু হনুমানের পায়ের কাছে কোরানই থাকতে হবে সেটাই বাংলাদেশের উষ্মার কারণ'। অনেকে প্রশ্ন করেছেন হনুমান আর ' জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমান'-এর মধ্যে পার্থক্য কি? তাহলে ফকির লালন শাহের একটি কালাম দিয়ে শুরু করি।
'যাত্রাভঙ্গ যে নাম শুনে
বনের পশু হনুমানে
নিষ্ঠাগুণ যার রামচরণে
সাধুর খাতায় তার সুখ্যাতি
কি হবে আমারও গতি
কি হবে আমার গতি!!
হনুমান দুই প্রকার। এক সাধু বা সন্ত হনুমান। বঙ্গে তাঁর নাম সাধুর খাতায় লেখা। কারণ বনের পশু হয়েও তিনি ভক্তির চূড়ান্ত আদর্শ স্থাপন করে গিয়েছেন।
সন্ত হনুমানের সম্পূর্ণ বিপরীতে রয়েছে 'জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমান'। বড় বাংলার হিন্দু যেহেতু তার নিজের ধর্ম, ঐতিহ্য ও শক্তিশালী ভাবচর্চার ইতিহাস ভুলে গিয়েছে, নিজেকে জানে না কিম্বা নিজের সম্পর্কে অজ্ঞ -- সে এখন জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমানের পূজা করে। এই হনুমান মোদী-অমিত-শাহ-আদিত্যনাথের হনুমান -- জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমানের পূজা করার মধ্য দিয়ে আদতে সে পূজা করে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও আদিত্যনাথের। জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমানের রণধ্বনি দিয়ে নাঙা তলোয়ার হাতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি ভারতে মুসলমান নিধন ও উপমহাদেশ থেকে ইসলাম নির্মূলে্র লড়াই করছে নগ্ন ভাবে। সমস্যা রাজনীতির, রাজনৈতিক প্রতিকায়নের। জয়শ্রীরাম ধ্বনি হিন্দুত্ববাদের শ্লোগান। ভারতের জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমান পুজারি বা বজরঙ্গীরা হচ্ছে মুসলিমদের উপর সবচাইতে উগ্র জনগোষ্ঠী। এই জঙ্গীগোষ্ঠী আরএসএস এরই একটি শাখা।
এই হোল হনুমান আর ' জয়শ্রীরামওয়ালা ' হনুমানের পার্থক্য।
আবারও বলি, হনুমান দুর্গাপূজার মণ্ডপে থাকেন বটে, কিন্তু হনুমানের পায়ের কাছে কোরানই থাকতে হবে সেটাই বাংলাদেশের উষ্মার কারণ। চোখে পড়ে না কেন? বাংলাদেশের দুর্গাপূজার মণ্ডপে এই হনুমানের পায়ের ওপর কোরান শরিফ পাওয়া গেছে। তাই বলেছি জয়শ্রীরামওয়ালা হনুমানের পায়ের ওপর কোরান আদতে দিল্লির তরফে বাংলাদেশের জনগণকে পাঠানো একটি হিন্দুত্ববাদী বার্তা।
হিন্দুত্ববাদিদের বিপরীতে একই মূদ্রার অপর পিঠ হিশাবে আছে পরিচয়বাদী, সাম্প্রদায়িক ও জাতিবাদী মুসলমান। এই মুসলমান সৌদী, ইরানি, তুর্কি ইত্যাদি হতে চায়। বাঙালি মুসলমান হিশাবে সে কিভাবে বেড়ে উঠল তার ইতিহাস সে জানে না। জানতেও চায় না। তার ধারণা আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসই তার ইতিহাস।
ফলে মাথায় গোবরভর্তি অপরিণামদর্শী সাম্প্রদায়িক জাতিবাদী মুসলমান সনাতন ধর্মের পূজামণ্ডপ ও মন্দির ভাঙা শুরু করেছে। দুর্বল, অসহায়, শক্তিতে-সংখ্যায় স্বল্প সনাতন ধর্মাবলম্বী এই দেশেরই নাগরিদের, কিন্তু তাদের ওপর তারা হামলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। গুলি খেয়ে মরছে। তার ধারনা সে ইসলাম রক্ষা করছে, কোরান অবমাননার বিরুদ্ধে লড়ছে। আসলে সে জানেও না যে সে পা দিয়েছে মোদী-অমিত শাহ ও আদিত্যনাথের মুসলমান নিধন ও ইসলাম নির্মূল রাজনীতির ফাঁদে।
কি দেখছি আমরা? যারা দুর্গা মণ্ডপে হনুমানের পায়ের কাছে কোরান রেখেছে আর যারা সেটা দেখে মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙ্গতে শুরু করেছে উভয়ের নেতা একই। মোদী-অমিতশাহ-আদিত্য নাথ। একজন সজ্ঞানে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করে আরেক পক্ষ চরম বেয়াকুফ বলে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি্র ফাঁদে পা দেয়।
জয় হিন্দ!
ফরহাদ মজহারের লেখা!