সারাদেশ উত্তাল তখন নাগরিকত্ব আইন এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলনে। দিল্লীতে শাহিনবাগে তখন আন্দোলনের নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ শাহিনবাগে অবস্থান শুরু হয় জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে ছাত্রদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে। শাহিনবাগ ছিল দিল্লীতে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখ্য কেন্দ্র। শুধুমাত্র বেআইনি ও অসাংবিধানিক উপায়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ নয় শাহিনবাগের অবস্থান বিক্ষোভ ক্রমশ সামাজিক আন্দোলনের স্রোত হয়ে উঠেছিল। যে স্রোত ছিল বেকারি, দারিদ্র, জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সামাজিক সাম্যের লক্ষ্যে।
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খবর আসছিল প্রতিবাদের। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর জাফরাবাদ, চাঁদবাগ, খাজুরি খাস, পুরোনো মুস্তাফাবাদ, সেলামপুর, তুর্কমান গেট, করডমপুরি, সুন্দর নগরী, লালবাগ, উত্তর-পশ্চিম দিল্লীর ইন্দরলোক, দক্ষিণ দিল্লীর নিজামুদ্দিন, হৌজরানী, উত্তর দিল্লীর সদর বাজার। সারা দেশ দেখছিল জামা মসজিদ চত্বর, ইন্ডিয়া গেট- শ্লোগানে, গানে উত্তাল! উত্তাল সারাদেশ! তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। কলকাতাতেও পার্ক-সার্কাস, রাজাবাজারে আমরা দেখেছি শাহিনবাগের মতোই সংখ্যালঘু নারীসমাজের নেতৃত্বে নানাবিধ প্রতিকূলতাকে জয় করে দীর্ঘমেয়াদি অসামান্য প্রতিবাদী জমায়েত।
এদিকে জল মাপছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ভেবেছিল কয়েকদিনেই থেমে যাবে। সাধারণ মানুষ, ছাত্র, যুব, নাগরিক সমাজ কতদিন টানবে এই আন্দোলন! চেষ্টা করছিল আন্দোলনের ভিতর থেকে সাবোতাজ করতে। ভয় দেখাতে। 'দেশদ্রোহী', 'পাকিস্তানের চর', ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ নানাবিধ বিশেষণে দেগে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, ফল হচ্ছিল উল্টো। দেশ আরও একাত্ম হচ্ছিল নাগরিকত্ব আইনের বিপক্ষে। হাতে জাতীয় পতাকা, মুখে ‘জনগণমন’! দেশ যেন স্বাধীনতার দ্বিতীয় লড়াইয়ে শামিল! আমরা এমনই এক জমায়েত দেখেছি, উত্তর-সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে। বুক নাড়িয়ে দেওয়া সেই স্লোগানগুলো ছিল এমনই---
ফল হচ্ছিল না অপপ্রচারে। ফল না হওয়াতে বড়সড় কিছু হতে পারে এরকম আশঙ্কা ছিল। বাতাসে ছিল বারুদের গন্ধ। ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রযন্ত্র। উত্তর-পূর্ব দিল্লীতে প্রতিবাদ অবস্থানের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা চিন্তায় ফেলেছিল বিজেপিকে। প্রকাশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছিল যাতে ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষ এবং উত্তেজক হুমকি।
৩০ জানুয়ারি ২০২০। মহাত্মা গান্ধী এইদিনই শহীদ হয়েছিলেন ফ্যাসিস্ত হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্রে। এইদিন দিল্লীর সিএএ-বিরোধী মিছিলের মধ্যে মিশে থাকা জনৈক গোপাল (যে প্রথমে নিজের পরিচয় 'শরজিল খান' নামে দেয়, পরে জানা যায় ওর নাম গোপাল, ফেসবুক-এ ওর পরিচয় 'রামভক্ত গোপাল') হঠাৎই প্রথমে মিছিল থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যায় পুলিশের দিকে, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে রিভলবার বের করে সামনে উঁচিয়ে মিছিলের দিকে তাক করে হুমকি দিতে শুরু করে, চিৎকার করতে থাকে, 'কীসে চাহিয়ে আজাদি? সামনে আ, দেতা হুঁ আজাদি'! এই সময় মিছিলের সামনের সারিতে থাকা জামিয়ার ছাত্র, কাশ্মীরী যুবক নিরস্ত্র শাদাব ফারুক দু'হাত বাড়িয়ে তাকে আহ্বান জানায়, 'বন্দুক নামাও, এসো বন্ধু, আমরা কথা বলি!' এর উত্তরে সেই ৩০শে জানুয়ারী আবার নাথুরাম গডসের উত্তরসূরী 'রামভক্ত' গোপালের রিভলবার গর্জে উঠেছিল! রক্তাক্ত হয়েছিল শাদাব ফারুকের হাত।
এভাবেই গান্ধী এবং তাঁর সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ প্রতি দিন, প্রতি রাতে রক্তাক্ত হতে থাকে এদেশে।
২০২০-র জানুয়ারিতে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে শাসকদলের উদ্যোগে কিছু জমায়েত আর মিছিল শুরু হল। এর সঙ্গে চললো একের পর এক বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের প্রকাশ্যে উত্তেজক হুমকি। ২৩ ফেব্রুয়ারি, বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র জাফারাবাদে মহিলাদের নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদের বিরুদ্ধে টুইটারে লেখেন, ‘আর একটা শাহিনবাগ আটকান’। সন্ধ্যায় তিনি জাফারাবাদ থেকে এক কিলোমিটার দূরে মৌজপুর চকে এক মিছিলে যোগ দেন। মিছিলে কপিল মিশ্র হুমকি দেন, তিনদিনের মধ্যে দিল্লী পুলিশ যেন জাফারাবাদের প্রতিবাদ অবস্থান উঠিয়ে দেয়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ডিসিপি স্যার এখানে দাঁড়িয়ে আছেন, আমি তাঁকে বলছি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে থাকা পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ থাকবো, তারপর আমরা আপনার কথাও শুনবো না যদি রাস্তা থেকে অবস্থান না ওঠে। আমরা অনুরোধ করছি ট্রাম্প যাওয়ার আগে জাফারাবাদ ও চাঁদবাগ থেকে সি এ এ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন হটিয়ে দিতে। অন্যথায় আমরা রাস্তায় নামবো। উল্লেখ করা দরকার ২০১৯ এর ডিসেম্বর জুড়ে কপিল মিশ্র একাধিক মিছিল ও জমায়েত করেন, হুঙ্কার ও ঘৃণা ভাষণ দেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি কপিল মিশ্রের ভাষণের কয়েক ঘণ্টা বাদেই দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হিংসা শুরু হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যা দিল্লীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে। (সূত্র- Amnesty International, Investigative Briefing, Page-5, 28 August, 2020)
দিল্লী পুলিশ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। গুজরাত গণহত্যার প্রধান দুই ষড়যন্ত্রী যথাক্রমে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গুজরাত গণহত্যার সময় পুলিশের ভূমিকা কী ছিল তা রাণা আয়ুবের তথ্যানুসন্ধান-ভিত্তিক লেখা বই ‘গুজরাত ফাইলস’-এর ছত্রে ছত্রে রয়েছে। রয়েছে গুজরাত গণহত্যার প্রতিবাদে প্রশাসনিক সেবা থেকে স্বেচ্ছা-নিবৃত্তি বেছে নেওয়া হর্ষ মান্দারের লেখা ‘কাঁদো, প্রিয় স্বদেশ আমার’ নিবন্ধের মধ্যে। আগ্রহী পাঠক দেখে নিতে পারেন নন্দিতা দাস পরিচালিত ‘ফিরাক’ সিনেমাটি। যা সেই সময়ের গুজরাতের পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করবে! পুলিশের সেই সাম্প্রদায়িক, অমানবিক, অত্যাচারী চেহারাই দিল্লীর বস্তিতে বস্তিতে দেখা গেল ২০২০-তে! মোহল্লার মানুষের সংখ্যালঘু ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নেমে এলো অবহেলা, নির্যাতন, অত্যাচার, জেল-হাজতের নিদান! সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে শাসকের মদতে দাঙ্গাবাজরা আগুন ধরালে পুলিশ নির্বিকার থাকলো!
২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লী হাইকোর্ট হর্ষ মান্দার বনাম দিল্লী সরকার (ডাবলু পি ৫৬৫/২০২০) মামলায় দিল্লী পুলিশকে নির্দেশ দেয়, এক দিনের মধ্যে কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর এবং অভাভ ভার্মার বিরুদ্ধে এফ আই আর নথিবদ্ধ করতে ‘একটি সচেতন সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কোন এফ আই আর ফাইল করা হয়নি।
বহু ঘর পুড়েছে দিল্লীর এই পরিকল্পিত হিংসায়! আহত হয়েছেন কয়েক সহস্র মানুষ, ঘর ছাড়া হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ! দিল্লীর এই দাঙ্গায় এখনও পর্যন্ত মুসলিম, হিন্দু, শিখ মিলিয়ে ৫৫ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। ২২ টি মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার, কবরস্তান আক্রান্ত হয়েছে।
(সূত্র- মাইনরিটি কমিশন রিপোর্ট, https://archive.org/details/dmc-delhi-riot-fact-report-2020 , “Delhi Riots Death Toll at 53, Here Are the Names of 51 of the Victims”, The Wire, March 06, 2020)
এই সাম্প্রদায়িক হিংসা বহু মানুষকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গেই কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের আপনজন, রুজি-রুটি, নিরাপত্তা, শান্তি আর স্বস্তিতে থাকার নিশ্চয়তা। রেখে গেছে শারীরিক নানা ক্ষতর সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং নারীদের মনে দীর্ঘকালীন মনের ক্ষত আর চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতা সঙ্গে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস!
গুলিবিদ্ধ কৈশোর
মগরিবের আজান তখন সবে শুরু, সবে সন্ধ্যে। একটু দ্রুততার সঙ্গে পা চালিয়ে চলছিল সমীর। মোহম্মদ সমীর। বছর ১৫-র কিশোর, নবম শ্রেণি। ইজতেমা ছিল দিল্লির কশাব কলোনিতে। সেখান থেকে ফিরছিল।
'চারদিকে উত্তেজনা ছিল। কিন্তু, এইদিকটা সেরকম কিছু হবে ভাবতে পারিনি! হঠাৎ গুলির শব্দ! নহরের কাছে।'
'তারপর?'
'অজ্ঞান হয়ে যাই আমি। পরে জেনেছি, দু'তিনজন মিলে আমাকে বাড়ির নিচে আনে। আমার বাবা-মা আমার এই অবস্থা দেখে ছুটে নেমে আসে দোতলা থেকে নিচে। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। তারপর যখন জ্ঞান ফেরে তখন হাসপাতালে। দুটো গুলি কোমরে, দুটো পিছনের শিরদাঁড়ায়। অপারেশন হয়। অপারেশনের পরে আমাকে ভেন্টিলেটরে রেখেছিল তিন-চার দিন। এম আর আই রিপোর্ট থেকে জানতে পারি আমার মেরুদণ্ডের শিরা গুলিতে কেটে গেছে আর চান্স নেই!'
'কী চান্স নেই?'
'আমি আর হাঁটতে পারবো না।'
এর পর আর কথা এগোয় না। বলা যায়, কথা তার পথ হারিয়ে ফেলে। নিস্তব্ধতা! দোতলার ছোট্ট কুঠরিতে ঠিক সেই সময় যেন সূর্য গ্রহণের অন্ধকার। খাটে দুটি অসার পা ছড়িয়ে এক সদ্য যুবক। পাশের ঘরে বছর আটের হাফিজা, সমীরের বোন। দুলে দুলে কেতাব পড়ছিল। মেঝেতে বসে সমীরের বাবা ও মা তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘাঁটছিলেন।
দিল্লির বড় হাসপাতালে চেন্নাই থেকে আসা বিখ্যাত ডাক্তার জবাব দিয়েছেন। হাঁটতে পারবে না ছেলে। আশা নেই জানা! তবু কোলকাতা বড় জায়গা, শুনেছি বাঙালি ডাকটার বাবুরা বড়িয়া ট্রিটমেন্ট করেন। যদি...।।
মুহম্মদ জাকির সামান্য রোজগার করেন। 'উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে দিল্লিতে আসা সে কি আজকের কথা! কোনদিন এখানে দাঙ্গা হয়নি জানেন।'
'কেন হল এসব? আপনার কী মনে হয়?'
'রাজনীতি। ওরা মুসলমানদের দুশমন ভাবে।'
'ওরা মানে কি হিন্দুরা?'
'না না। হিন্দুরা সবাই কেন ওরকম হবে? আমি ভাজপা’র কথা বলছি।'
'এখন অবস্থা কী রকম? আবার কি গোলমাল হতে পারে?'
'এখন পিশফুল আছে। কিন্তু, কখন যে কী অজুহাতে হিংসার আগ লাগতে পারে কে জানে!'
'উত্তরপ্রদেশ যান, মানে গ্রামে?'
'না। আমাদের জ্ঞাতি সবাই দিল্লির আশপাশ। আর সেখানেই তো যোগীর সরকার।'
'দেশ কি খুব তাড়াতাড়ি বদলে গেলো?'
'বিলকুল। ঠিক বলেছেন। এই দেশ আমরা দেখিনি।'
অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল সমীর। আমার হাতে তখন তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজের কপিগুলি। কথা আবার হতে থাকলো।
'তখন যেন কোন ক্লাসে পড়তে তুমি?'
'ক্লাস নাইন-এ পড়তাম যখন গুলি লাগে।'
'স্কুলের নাম কী?'
'গভর্নমেন্ট বয়েজ এস আর স্কুল।'
'ম্যাট্রিক দিয়েছ?'
'জি দিয়েছি।'
'অনলাইনে দিয়েছ?'
'জি।এখনও রেজাল্ট আউট হয়নি। খুব শিগগির হবে।'
'তারপর পড়াশোনা কীভাবে করবে? ভেবেছ?'
'অনলাইনে করার কথা ভেবেছি। ওপেন থেকে।'
এর কিছুদিন পরে যখন আমরা আবার যাই সমীরের বাড়ি, তখন কথা প্রসঙ্গে সমীর বলেছিল, 'আমাদের এখানে এর মধ্যে নতুন কিছু হয়নি, তবে লোকজন একটু ভয়ের মধ্যে থাকে। জানেন, আমাদের এই এলাকার হিন্দু ছেলেমেয়েরাও এখন খুব একটা বেরোয় না বাইরে। ভয় পায় ওরাও! আমার খুব খারাপ লাগে! এমন তো ছিল না আমাদের এই বস্তি!'
ফিরে আসার সময় সমীরকে তার মনের ভাবনাগুলো লিখতে বলে এলাম আমরা! গুলিবিদ্ধ এই তরুণের এই ভাবনার মূল্য যে কতখানি, তা যদি আমরা সবাই বুঝতাম, ঘৃণা আর বিদ্বেষের ভাইরাস থেকে মুক্তি হতো আমাদের!
যাহারা তোমার নিভায়েছে আলো
শিববিহারে আমরা যখন তাঁর মুখোমুখি তখন দুপুর বারোটা প্রায়। মুদির দোকান চালাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ওপরের কুঠরিতে নির্বাক, স্থাণু হয়ে বসেছিলেন তিনি। ঠিক যেন এক মূর্তি!
মোহম্মদ ওয়কিল। বাহান্ন বছরের এক প্রৌঢ়। ২০২০-র দাঙ্গা কেড়ে নিয়েছে তাঁর দুটি চোখ। ডান দিকের চোখ দিয়ে ক্রমাগত তখন জল পড়ছিল।
মোহম্মদ ওয়কিলের বয়ান:
'লাইট কেটে দিয়েছিল। অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। ছোট এই বাড়িটা, বাড়িটা বেশ পুরনো। ভাবলাম, ছাদে চলে যাই! আমরা ছাদে চলে এসেছিলাম। মনে হচ্ছিল, এখানে থাকলে জান বাঁচাতে পারবো না! এখান থেকে পালিয়ে যাই কোথাও! যেই ব্যালকনি থেকে রোডের দিকে ঝুঁকেছি আমি, তখনই বোতল ছুঁড়ে মারল! ভেবেছিলাম, বোধহয় ইট পাথর মেরে থাকবে! বসে পড়েছি ছাদের ওপর, কিছু নজরে আসছিল না! এরপর রক্ত বেরোতে লাগলো। মুন্নির মা (ওঁর স্ত্রী)দেখেছিল যে রক্ত বেরোচ্ছে। তখন আন্দাজ হয়নি যে তেজাব (অ্যাসিড) ছুড়েছে না অন্য কিছু। যখন সারা শরীর জ্বলতে লাগলো, আমার জ্ঞানই ছিল না। ওই অবস্থায় আমরা কোনও রকমে এখান থেকে বের হই। মসজিদে আশ্রয় নিই। তখন রাত পৌনে ন'টা। দাঙ্গা শুরু হতেই বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আশ্রয় নিয়েছিল মসজিদে। এখানে ভাঙচুর চলতে থাকে। লুঠ হয়। মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয় হিন্দু-মুসলমানের। কিছু মানুষ নিজেদের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল। মাড়োয়ারিরাও ছাদে ছিল।
তারপর যখন কিছুটা শান্ত হয়, রাত্রি প্রায় পৌনে তিনটের সময় আমরা বের হই, চারদিকে তখন বীভৎস অবস্থা। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, আগুন লাগিয়ে, কী যে অবস্থা কী বলবো! মসজিদেও আক্রমণ চালিয়েছিল। অবস্থা কিছুটা শান্ত হলে আমরা বের হই। আমার অবস্থা তখন খুব খারাপ। নালি ধরে ধরে, স্কুলের পাশ দিয়ে, আঠারো নম্বর গলি দিয়ে চমনপার্ক পৌঁছে গেলাম নিজের নিজের পরিবার নিয়ে। চমনপার্ক-এ গিয়ে আমরা আলাদা আলাদা হয়ে গেছিলাম। ওখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হয়। ততক্ষণে আমার বুকে জ্বলন শুরু হয়েছে। বাড়ির লোক ভাবছে কোথায় নিয়ে যাবে? জিটিভি না আর্বান হাসপাতালে? শেষ পর্যন্ত আর্বান হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয়, তখন প্রায় সকাল সাড়ে ছটা। সাতটায় আমার চিকিৎসা চালু হয়ে গেছে। একমাস আমি আর্বান হাসপাতালেই ভর্তি ছিলাম। তারপর যখন ছুটি হল তখন লকডাউন চালু হয়ে গেলো। কোনরকমে ডাক্তার দেখাচ্ছিলাম, ডাক্তার কখনও আগে, কখনও পরে ডেকে নিচ্ছিলেন। এই ‘হাদসা’ এমনই ভয়ানক চেহারা নিয়ে এলো আমার জীবনে।
এইভাবেই চলছিল। কিছুই এগোচ্ছিল না। একবছর ধরে আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলাম। শুধু তারিখ আর তারিখ দিয়ে যাচ্ছিল।আমাদের অবস্থা সংক্রান্ত কাগজ চেন্নাই পৌঁছে গেছিল। ওখান থেকে ফোন এলো। ২৯শে সেপ্টেম্বর রওয়ানা হলাম। এরপর চেন্নাইয়ে আমার চিকিৎসা চালু হল। এই চোখে(ডান চোখের দিকে দেখিয়ে)অল্প রোশনি এসেছে। আপনি বসে আছেন, বুঝতে পারছি, কিন্তু চেহারা বুঝতে পারছি না।'
'কোনো সংস্থা কি এই পরিষেবা আপনাকে দিচ্ছে?'
'হ্যাঁ। ওঁরাই দিচ্ছেন। কাদের ভাই আছেন। আসা-যাওয়ার খরচ, থাকার, চিকিৎসার। হসপিটালের খরচ নাসির ভাই দিচ্ছেন।'
(পরে জানা যায় একটি মুসলিম সেবামুলক সংস্থা এই খরচ বহন করে)
'এখানে ‘আম আদমি পার্টি’-র সরকার, ওদের কাছ থেকে কোন সাপোর্ট পাওয়া গেছে?'
'একবার বিশ হাজার টাকা আর একবার এক লাখ আশি হাজার টাকা দিয়েছিল। এছাড়া আর কী দিয়েছিল না দিয়েছিল আমার মেয়ে জানে। আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, এখনও সব কথা জানিনা।'
'কী কাজ করতেন আপনি?'
'আমার ছোট একটি দোকান ছিল। নিচে যে দোকানটা আপনারা দেখলেন। দোকানটা ভালোই চলতো, জিনিসপত্র বিক্রিও হত। এখন তো কিছুই নেই। যখন কোন গার্জেন বসবার মত নেই (নিজের অপারগতাকে ইঙ্গিত করে), দোকান সামলাবার মত নেই, ওই বাচ্চারা যা করার করছে (সন্তানদের প্রতি ইঙ্গিত করে)। কোনরকমে চলছে। একআধটা গ্রাহক কখনও আসছে। দুই বছর ধরে এইরকমই চলছে।
আমার সবকিছু শেষ করে দিল ২৫ ফেব্রুয়ারি।'
'কাউকে কি দেখতে পেয়েছিলেন সেই রাত্রে?' 'এটাতো ঠিক যে এটা মুসলিম বাড়ি না জানলে বেছে বেছে আক্রমণ হয় না?’
'না কাউকে চিনতে পারিনি। এটা ঠিক ওরা জানতো কোনটা মুসলিম বাড়ি, কোনটা হিন্দুর। কিন্তু বাপ, কাউকে চিনতে পারিনি আমরা (গলায় আতঙ্ক)। তবে এটুকু বলতে পারি, পুলিশ চাইলে এই দাঙ্গা বাড়তে দিত না।'
'কেন এমন মনে হল?'
এতদিন আমরা একসাথে আছি। কোনদিন এমন হয়নি। প্রশাসন চাইলে কবে রুখে দিত।'
প্রসঙ্গ পুলিশ
এই প্রসঙ্গে দুটি প্রকাশিত বক্তব্যের প্রতি নজর দেওয়া যাক। দু'জনই দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত। দু'জনেই মহিলা। শবনম তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন এই দাঙ্গায়।
শবনম বলেন, 'আমার স্বামী পুলিশকে ফোন করে, আমার বাবা বারংবার ফোন করে। তাঁরা বলে, বল কোথায় তোমরা আছো, তোমাদের ঠিকানা বল। আমরা তাঁদের ঠিকানা বলি, কিন্তু কেউ আসেনা। রাত্রে ১ টার সময় যখন আমাদের বাড়ি জ্বলছে তখনও পুলিশকে ফোন করি। পুলিশের জবাব, কত জ্বালাবে তোমরা আমাদের? আমরা পুলিশ ভ্যান পাঠাচ্ছি। সব শেষ হবার পর ভ্যান আসে।'
কমলেশ উপ্পল, তাঁর আতঙ্কের কথা জানান। 'বিকেলে ওরা আমাদের তালা খোলে আর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। গত ২২ বছর ধরে আমরা এখানে আছি। কোনদিন এমন হয়নি। আমার এখনও ভাবতে আশ্চর্য লাগছে! ওরা কোন জিনিস বাদ দেয়নি। আমরা পুলিশকে ফোন করি সাহায্য চেয়ে। ওদের আসতে তিনদিন পার হল। ভাবতে পারেন!'
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু হোক বা মুসলমান বয়ান প্রায় একই। দাঙ্গা করতে দেওয়া হল। তাহলে তো স্পষ্ট যে নাগরিকত্ব বিরোধী গণআন্দোলনকে থামাতে দাঙ্গা সংঘটিত হল সংগঠিত ভাবে। ১৯৮৪–র শিখ গণহত্যা হোক বা ২০২০-র দাঙ্গা, দিল্লী পুলিশের ভূমিকা বরাবর প্রশ্ন চিহ্নের সামনে। এত বড় অভিযোগ সত্ত্বেও তারা নিশাস্তির সুযোগ পাচ্ছে। পুলিশকে যদি কৈফিয়ত দিতে হয় তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও দিতে হয়। রাজনৈতিক নেতারা যারা তাঁদের ঘৃণা ভাষণে হিংসার পক্ষে সওয়াল করেছে তাঁদের কৈফিয়ত কে চাইবে?
শিববিহার
এখানেই নালার ওপারে রয়েছে পর পর অনেকগুলো বেকারি-বিস্কুট, পাউরুটি তৈরির কারখানা। এই অঞ্চলের বহু মানুষ নানাভাবে জড়িয়ে আছেন এই বেকারি শিল্প ও ব্যবসার সঙ্গে। মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হলেও বেশ কিছু হিন্দু পরিবারও রয়েছে এখানে। এখানে হামলা হয় ২০২০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি। শিববিহার থেকে মিনিট কুড়ি পায়ে হাঁটা দূরত্বে লালবাগ অঞ্চল। এই অঞ্চলে হিন্দু গুজ্জরদের বসবাস। একসময় যেমন ইতিহাসের পাতায় আমরা গুজ্জরদের যোদ্ধা হিসাবে, শাসক হিসাবে দেখেছি। বর্তমানে সেই গুজ্জরদের বৃহত্তর অংশকে অশিক্ষা এবং চূড়ান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবে থাকতে দেখা যায়! গুজরাত, পঞ্জাবসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যেই তারা এখন 'অনগ্রসর জাতি' হিসাবে চিহ্নিত। শিববিহারের স্থানীয় মানুষের বয়ানে আমরা জানতে পারি, ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২০, শিববিহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর এবং তাঁদের ঘরবাড়ির ওপর যে হামলা হয়, সেই হামলায় মুখ্য ভূমিকা নেয় লালবাগ অঞ্চল থেকে আসা গুজ্জররাই! সাম্প্রদায়িক হিংসার ক্ষেত্রে এই চিত্র সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে, আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে!
শিববিহারেই সন্ধ্যা শুরুর লগ্নে বাড়ি ফেরার পথে আচমকা হামলায় মোহম্মদ সমীরের শিরদাঁড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে হাঁটার ক্ষমতা চিরতরে চলে যায়! এই শিববিহারেই যখন একের পর এক মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট করে আগুন ধরানো হচ্ছে তখন যে রমণী রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন হামলাবাজদের বিরুদ্ধে, তাঁর নাম সুধা। অত্যন্ত সাধারণ গৃহবধূ এই হিন্দু রমণীর প্রতিরোধে বেঁচে যান বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু প্রতিবেশী। বর্তমানে তিনি ওই অঞ্চলে সমাজকর্মী হর্ষ মান্দারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা 'কারওয়াঁ-এ-মোহাব্বত'-এর দ্বারা পরিচালিত 'অমন বিরাদরি ট্রাস্ট'-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শিববিহারেই 'অমন বিরাদরি ট্রাস্ট'-এর দপ্তরে কথা হচ্ছিল সংস্থার কর্মী তরন্নুমের সঙ্গে। এই দপ্তরে ওই অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক হিংসায় আক্রান্ত নারীরা জড়ো হন নিয়মিত ভাবে। তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা অনেকেই এই সাম্প্রদায়িক হামলা এবং দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন-এর ফলে আক্ষরিক ভাবেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন, সব হারিয়েছেন! হতাহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারের কেউ না কেউ, ঘর লুঠ হয়েছে, আগুনে পুড়েছে, হারিয়েছেন কাজ-রুজি-রুটির নিশ্চয়তা! সেই মেয়েদের সঙ্গে দেখা হল, যাঁদের বেশিরভাগের বয়সই তিরিশের মধ্যে। পনেরো জনের মধ্যে দু'জন ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের, বাকিরা মুসলমান। অবশ্য এখানে সেই সাহসিনী সুধার সঙ্গেও দেখা হল! আমরা তাঁর কাছে শুনলাম সেই হামলার দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বললেন, 'আমরা এতকাল একসঙ্গে বসবাস করছি। কখনও তো আমাদের মুসলমান প্রতিবেশীদের শত্রু মনে হয়নি! বিপদে-আপদে এঁরাই পাশে দাঁড়ান! আজ এঁদের ওপর হামলা হলে আমি আমার সাধ্যমতো যদি বাধা না দিই, যদি এঁদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কেমন মানুষ আমরা!'
কথা হল শগুফ্তা, খুশনাজ, মেহনাজ, রুবি, নাজিশ, অঞ্জুম, মুমতাজদের সঙ্গে। এঁরা প্রায় সবাই চরম দারিদ্র্য, রুজি-রুটির লড়াই, বাড়িতে মরদদের সঙ্গে নানা অশান্তির সঙ্গে সঙ্গে বাইরের এই সাম্প্রদায়িক হিংসার ভয় মনের মধ্যে নিয়ে বসবাস করছেন! করোনার প্রকোপ যখন বেশি ছিল, তখন কাপড়ের তিন পরতের মাস্ক তৈরি করে ওঁরা বিক্রি করতেন। এখন তো মাস্ক আর বিক্রিই হচ্ছে না! ওঁরা চিন্তার মধ্যে আছেন, কী করে সংসার চলবে! অনেকের পরিবারেই পুরুষরা আগের কাজ হারিয়েছেন! সাম্প্রদায়িক হিংসার ক্ষত শরীরে কমে এলেও মনের মধ্যে ক্ষত তীব্র ভাবে রয়ে গেছে অনেকেরই! ঘুমের মধ্যে শুধু নয়, এখনও সেদিনের কথা মনে পড়লে জেগে থাকা অবস্থাতেও কেঁপে ওঠে শরীর-মন! এঁদের অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের প্রকাশ স্পষ্ট বোঝা যায়! কয়েকজনের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ চোখে পড়ার মতো! দুঃখ আর হতাশার কথা বলতে বলতে দু'চোখ সজল হয়ে ওঠে! আতঙ্কের সেই দিনগুলো, রাতগুলো তাড়া করে বেড়ায় এখনও বেশ কয়েকজনের মনে! প্রোলংড পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস-এর জ্বলন্ত নিদর্শন তাঁদের মধ্যে!
ঘরবাড়ি ছেড়ে তাঁরা অনেকেই চলে গিয়েছিলেন চমনপার্ক-এ আশ্রয়ে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছিলেন কাছের মসজিদে। সদ্যোজাত কোলের শিশুকে নিয়েও পড়িমরি দৌড় লাগিয়ে ছিলেন অনেকে! লুঠপাট হয়ে গিয়েছিল তাঁদের ঘরবাড়ি সব, আগুনে পুড়েছে অনেকের ঘর! সেই সব ঘর একটু একটু করে অনেক কষ্টে তাঁরা তিলে তিলে গড়ে তুলছেন, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সামিল তাঁরা সেই 'অনগ্রসর', পিছিয়ে পড়া গুজ্জরদের মতোই! অথচ এঁদের উভয়ের যে শত্রু সেই দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্যকে টিকিয়ে রাখার যে ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এঁদের দু'পক্ষের জোটই তো হতে পারতো স্বাভাবিক পরিণতি!
২০২০-র আগুন নেভেনি। এই আগুন শাসক বিজেপি জ্বলন্ত রাখতে চায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত! রামন্দির এজেন্ডা আর ময়দানে নেই, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারাও অবলুপ্ত, এখন আগুন জালিয়ে রাখার জন্য কখনও কাশ্মীর ফাইলস্, কখনও সিএএ, কখনও হিজাব, কখনও ইউনিফর্ম সিভিল কোড, আর তার সঙ্গে ফি বছরের রামনবমীর সশস্ত্র জলুসই ভরসা! এবারেও দিল্লীর জাহাঙ্গীরপুরীতে রামনবমীর সশস্ত্র জলুস নিয়ে মসজিদের সামনে ক্রমাগত উত্তেজনা ছড়িয়ে, পায়ে পা দিয়ে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হল! অন্য পক্ষ তাতে তেমন সাড়া না-দেওয়া সত্ত্বেও তাদের অপরাধী ঘোষণা করে পুরপ্রশাসন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ির ওপর বুলডোজার চালানোর সিদ্ধান্ত নিলো! আদালতের রায় এবং বামপন্থী কর্মীদের তৎপরতায় তা আপাতত আটকানো গেলেও ঘৃণা আর বিদ্বেষের ভাইরাস ছড়িয়ে নানা অজুহাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হানার ষড়যন্ত্রের কোনো বিরতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না!
সম্মিলিত, সচেতন প্রতিরোধই হয়তো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পথ!
[কৃতজ্ঞতা: ইনসাফ, কারওয়াঁ-এ-মোহাব্বত/অমন বিরাদরি ট্রাস্ট এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার সেই সব মানুষ, যাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বললেন আমাদের সঙ্গে।]