নব্য ভারতবর্ষ অধুনা প্রকৃত-শব্দ-বিলাসী। এর মধ্যে উজ্বলতম হচ্ছে প্রকৃত দেশপ্রেম, প্রকৃত দেশনেতা,প্রকৃত হিন্দুত্ব, প্রকৃত শরণার্থী, প্রকৃত অনুপ্রবেশকারী, প্রকৃত এনার্সি, প্রকৃত ক্যাব ইত্যাদি। এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে যে একটি বিশাল অংশের প্রকৃত ভারতীয়র নাম বাদ গেছে এনার্সির চূড়ান্ত সংযোজন বিয়োজন তালিকা থেকে। অপর দিকে বিপুল সংখ্যক প্রকৃত বিদেশির নামও নাকি অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অতএব এই তালিকা ত্রুটিপূর্ণ।
প্রায় তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত উনিশ লক্ষ ছয় হাজার জনের নাম তালিকাচ্যুত হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় নয় লক্ষ বাদ দিয়ে (পুনর্বিবেচনার আবেদন জানায়নি প্রায় চার লক্ষের বেশি, দু লক্ষের বেশি ডি-ভোটার ও তাদের পরিবার, এক লক্ষের কিছু বেশি ঘোষিত বিদেশি, আরও লক্ষাধিক সন্দেহভাজন যাদের কেস পেন্ডিং) অর্থাৎ দশ লক্ষ মানুষ এই এনার্সি প্রক্রিয়ায় তালিকাচ্যুত হলেন। কিন্তু তাদের সুযোগ থাকছে ট্রাইব্যুনালে নিজেদের প্রকৃত ভারতীয় প্রমাণ করার। এটাই হলো সমস্যার গোড়ার কথা। প্রথম থেকে এই তালিকা বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। বর্তমানে এনার্সি শুধু আসাম নয়, ভারত নয়, এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রক্ষাপটেও একটি উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়। প্রতিটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তাদের গণসংগঠন, প্রতিটি ভাষিক গোষ্ঠী, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দল উপদল, প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যাদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভূগোল-ইতিহাস, তারা নিজের সুবিধামতো, নিজের রাজনৈতিক লাভ, সামাজিক লাভ ক্ষতি বিবেচনায়, একটি করে আনুমানিক সংখ্যা ঠিক করেছেন, এবং প্রত্যাশা করেছেন সেই সংখ্যাই প্রতিফলিত হবে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকায়। অসমীয়া চেয়েছেন বাঙালির নামকর্তন হোক প্রভূত পরিমানে, বাঙালিরা উল্টোটা চেয়েছেন। হিন্দুরা চেয়েছেন মুসলমান বিতাড়িত হোক এই ভূখণ্ড থেকে, মুসলমানরা চেয়েছেন মুসলমানের সংখ্যা কম হোক, হিন্দুরা চিহ্নিত হোক বেশি পরিমাণে। এবং এই ভাবেই সম্পূর্ণ নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে নাম বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকা। সে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশিত হবে সাতই সেপ্টেম্বর, ২০১৯।
সেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের আগেই সমাজে, মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে উল্লাস অথবা হাহাকারের ইমোজি। মাত্র উনিশ লক্ষ ছয় হাজার ছশো সাতান্ন সংখ্যাটি বিয়োজন প্রত্যাশা বা আশংকার কাছেও পৌঁছালো না। ফলে খুশি করতে পারেনি কোনো পক্ষকেই। অসমীয়া খুশি হয়নি বিপুল পরিমাণ হিন্দু বাঙালি এবং মুসলিম বাঙালির নাম বিয়োজিত হয়নি বলে (প্রত্যাশার অংকটি ছিল ত্রিশ থেকে আশী লক্ষ)। হিন্দুরা খুশি হয়নি মুসলিম নাম কর্তন যা প্রত্যাশিত ছিল তার ধারে কাছে পৌঁছায় নি বলে। বাঙালিরা খুশি হয়নি তার কারণ এই নামকর্তনের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে অসমীয়া হিন্দু-মুসলিম এবং অন্যান্য প্রদেশের বেশ কিছু লোকজন ঢুকে পড়ায়। শুধু বাঙালিরা বঞ্চিত, শুধু মুসলমানেরা নির্যাতিত, এটা প্রমাণিত না হওয়ায় প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলি কিছু পরিমাণে হলেও বেকুব বনে গেছে। আবার অনেক অসমীয়া ভূমিপুত্রের নাম, মহিলাদের নাম, এমনকি বিভিন্ন উপজাতি-জনজাতির নামও মা-ত-রো উনিশ লক্ষের তালিকায় ঢুকে পড়ায় ক্ষিপ্ত। মজার বিষয় হচ্ছে এনার্সিতে ধর্মীয় বা ভাষিক পরিচিতির কোনও কলাম ছিল না। ফলে ডেটা-স্ট্যাটিসটিক্স নির্মিত হচ্ছে সুবিধে অনুয়ায়ী। তালিকা প্রকাশের চার ঘণ্টার মধ্যে বলে দেওয়া যাচ্ছে উনিশ লক্ষের মধ্যে সতেরো লক্ষ বাঙালী তার মধ্যে বারো লক্ষ হিন্দু, পাঁচ লক্ষ মুসলমান। যাঁরা আসামবাসী তাঁরা জানেন এই আনুমানিক হিসেবও এত দ্রুত করে ফেলা সম্ভব নয়, কেননা একই সারনেমেও অসমীয়া ও বাঙালী আলাদা হয়ে যায়।
অবশ্যই রাজনীতিকেরা দ্রুত অন্য ইস্যু খুঁজে নেবেন। সোশ্যাল মিডিয়াও। আশাহত সামাজিক সংগঠন, মিডিয়া আর এক সপ্তাহের মধ্যে বিস্মরণের অতলে তলিয়ে দেবে আজকের এই ইউফোরিয়া। কিন্তু এই উনিশ লক্ষকে ছুটে বেড়াতে হবে ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে। পাশে দাঁড়িয়ে লড়ার লোক কমে যাবে, মা-ত্র তো উনিশ লাখ। এই উনিশ লাখের মধ্যে একটা বড় অংশ রয়েছে, যারা শুধুমাত্র ডকুমেন্ট সুরক্ষিত রাখেননি বলে প্রকৃত বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে হয়েছেন। একটা বড় অংশ রয়েছে যারা দীর্ঘ দীর্ঘকাল বংশপরম্পরায় ভারতবর্ষের বাসিন্দা ভারতীয় কিন্তু আসামের ঘনঘন বন্যা, দাঙ্গা, জীবিকার সন্ধানে ছুটে বেড়ানো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তাদের প্রমাণপত্রগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, হারিয়ে গিয়েছে। একটা বড় অংশের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা প্রকৃত ভারতীয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বিচারের পড়েছিল এমন লোকের উপর, যিনি সম্প্রদায়গত ভাবে তাঁর সম্প্রদায়ের বিরোধী। সময় এবং সুযোগ এবং অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে পারলে এই উনিশ লাখের একটি বৃহৎ অংশ অবশ্যই ভারতীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। তার পরেও বাকি থেকে যাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ, যাদের কেউ বাঙালি কেউ অবাঙালি, কেউ হিন্দু কেউ মুসলিম, কেউ ভূমিপুত্র কেউ বহিরাগত। যাঁরা কোনভাবেই প্রমাণ করতে পারবেন না যে তাঁরা এদেশের মানুষ। হয়তো তাঁরা প্রকৃত বিদেশি হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবেন, যা নির্ভর করবে ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সততা দক্ষতা এবং মানবিকতার উপর। অসংখ্য ট্রাইব্যুনাল গঠিত হচ্ছে যেগুলি আপত্তিকর ভাবে এ্যাডভোকেটদের বিচারপতি নিয়োগ করে। তাঁদের উপরই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নির্ধারণ। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে এনার্সি এমন একটি দানবিক প্রক্রিয়া যা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মানুষকে পরস্পর বিরোধী, সন্দেহপ্রবণ, এবং অনভিজ্ঞ বিচারকদের অমিত শক্তিধর করে গড়ে তোলে। এই প্রক্রিয়ায় যারা বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হবে তাদের নিয়ে কি করা হবে তা আজ পর্যন্ত স্থির করা হলো না। একটি স্থিতাবস্থা কে এলোমেলো করে দিয়ে তারপর ভাবতে বসা হবে যে কি করে সমাধান করা যায়। এ এক অদ্ভুত সময়, এক অদ্ভুত রাজনীতি।
দেশহীন নাগরিকত্বহীন না-মানুষ কাকে বলে? আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুসারে দেশহীন নাগরিকত্বহীন না-মানুষ হলো সেই মানুষ, কোনও রাষ্ট্র নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না। সোজা কথায় দেশহীন না-মানুষের কোনও দেশের নাগরিকত্ব নেই। কেউ কেউ জন্মেই দেশহীন, অন্যেরা জীবৎকালে দেশহীনে পর্যবসিত হয় বিভিন্ন কারণে মানুষ দেশহীন হয়। কখনও বিশেষ জাতি অথবা ধর্মের প্রতি বৈষম্যের কারণে, অথবা লিঙ্গবৈষম্যের ফলে কিংবা নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব হওয়ায়, কিংবা দেশভাগজনিত মানুষ প্রত্যার্পনের ফলে এবং নাগরিকত্ব আইনের বিভিন্ন ফাঁক ফোঁকর সংক্রান্ত বিধিতে। এনার্সি এখানকার মাটিতে শিকড় চাড়ানো লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেশহীন নাগরিকত্বহীন না-মানুষ বানানোর প্রক্রিয়া। কিন্তু এনার্সিকে আলাদা করে দেখলে ভুল হবে। একে বিজেপি প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিলের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এনার্সি যদি বিয়োজন প্রক্রিয়া হয় তবে সিএবি (ক্যাব) সংযোজন প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা তো নয়। হিন্দুদের পৃথক করে বাংলাদেশের মুসলিম বিতাড়ণের এও এক বিয়োজন প্রক্রিয়াই।
কোন সর্বভারতীয় বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল, যারা আসামেও কাজ করে, তারা এনার্সির বিরোধিতা করে নি। আসামের বাঙালী হিন্দুরা, বাংলাদেশের বাঙালী হিন্দুর পাশে দাঁড়ায় নি। আসামের বাঙালী মুসলমানেরা বাংলাদেশি মুসলমানদের তাড়াতে বদ্ধপরিকর। তার চেয়েও বড় কথা সুপরিকল্পিতভাবে দেশভাগের প্রসঙ্গটি এখানে গুঁজে দেওয়া হয়েছে। এনার্সি বিধিতে ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১। ১৯৪৬-৪৭ নয়। এমনকি সিএবি তেও ভিত্তিবর্ষ ২০১৪। ১৯৪৬-৪৭ নয়। এনার্সি এবং ক্যাব দুটোই জনবিরোধিতার চক্রান্ত। দুটোকেই বাতিল করার দাবিতে আন্দোলন হওয়া উচিত। কিন্তু দেশভাগ এর সেন্টিমেন্টকে সুকৌশলে এই আলোচনায় এনে ফেলা হচ্ছে। এনার্সির সঙ্গে দেশভাগের আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। কেননা ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১, ১৯৪৬-৪৭ নয়। শোনা যাচ্ছে সারা ভারতবর্ষে দুহাজার একুশের সেন্সাস ডাটা কালেকশানের সঙ্গে একসঙ্গে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনার্সির সর্বভারতীয় সংস্করণ ন্যাশন্যাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর) এর ডেটা কালেকশান শুরু হয়ে যাবে এপ্রিল ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ র মধ্যে। এনার্সি হয়ে গেছে বলে আসামকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভিত্তিবর্ষ কত ধরা হবে, দেশভাগ এর সময়টাকে ভিত্তিবর্ষ ধরা হবে কিনা এবং সেক্ষত্রে কতজনের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে প্রমাণ হিসেবে, আর যাদের নেই তাদের নিয়ে কী করা হবে, সেটা এবারও আগে থেকে ঠিক করা হবে না?
সিএবি প্রসঙ্গে কেন্দ্র থেকে এবং রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি প্রচার করে আসছে ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র না হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু এটি হিন্দুদের ন্যাচারাল কান্ট্রি, তাই ২০১৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত যারা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে আফগানিস্তান পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে এ দেশে প্রবেশ করেছে, তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হলেও তাদেরকে বিতাড়ণ করা তো হবেই না বরং সিটিজেনশিপ আইন সংশোধনের মাধ্যমে তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শরণার্থী হিন্দুদের এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে এনআরসি তে যাই হোক না কেন, সিটিজেনশিপ বিলের মাধ্যমে তাদেরকে অবিলম্বে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে যদিও অতিরিক্ত কোনো সুযোগ সুবিধা হিন্দুদের জন্য দেওয়ার ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়নি এই বিলে। সাধারণভাবে যেভাবে একজন আবেদনকারী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়ে থাকে তার থেকে আলাদা কিছু নয়। শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে জোর করে বহিষ্কার করা হবে না এটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। অমুসলিম প্রায় সব ধর্মই, যেমন বৌদ্ধ জৈন এমনকি খ্রিস্টান পর্যন্ত এই আশ্বাস থেকে বঞ্চিত হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার আসামে এনার্সি এবং ক্যাব দুটো প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে দু ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চলতে পারে না। দুটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই এই বিল শুধুমাত্র মুসলিম বিদ্বেষ এবং বিরোধিতার জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে। তা না হলে এই লিস্টে খ্রিস্টান রয়েছে কেন? ভারতবর্ষ তো খ্রিস্টানদের ন্যাচারাল কান্ট্রি নয়। দ্বিতীয়ত এই তিনটি দেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত মুসলিম সম্প্রদায়গত মানুষ যেমন শিয়া আহমেদিয়া ইত্যাদিদের ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। তৃতীয়ত আফগানিস্তান নেহেরু লিয়াকৎ চুক্তির আওতাভুক্ত নয়, এবং ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে কেউ আফগানিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছে বলে শোনা যায়না। তবু আফগানিস্তান এই হিসেবের মধ্যে ঢুকে পড়েছে তার কারণ কি এই নয় যে প্রক্রিয়াটাই আসলে মুসলিম বিরোধী? তার কারণ কি এই নয় যে বিজেপি আসলে মুসলিম বিরোধী?
আমরা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন যাবৎ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠেছি এবং আমাদের চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়া মূলত ওয়েস্টের কজ এফেক্ট রিলেশনশিপ লজিক আশ্রিত। আমরা প্রাচ্য ধারণা, প্রাচ্য চিন্তা, প্রাচ্য শিক্ষা পদ্ধতি, সবকিছুকে বর্জন করে যা অর্জন করেছি তা হলো পাশ্চাত্যে সভ্যতার কাছে আত্মসমর্পণ। আমরা যে ওয়েস্টার্ন ডিস্কোর্স এ অভ্যস্ত, তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার বিজেপিকে নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। ওয়েস্টের থটপ্রসেস কে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণ করতে গিয়ে আমরা মূলত জোর দিয়েছি এনলাইটেনমেন্ট এর উপর। তার বিপ্রতীপে বিজেপি যখন তার প্রাচীন হিন্দুত্বের তমসাচ্ছন্ন ঘোর অন্ধকারের দিকে ভারতবর্ষকে নিয়ে যেতে চাইছে, তখন শুধুমাত্র নতুনত্বের মোহে প্রজন্ম আলোড়িত হয়েছে নব্য প্রস্তাবনায়। দেশে বিজেপি যতই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে, দেশের ইংরেজি ঘরানার শিক্ষিতকুল ততই দিশেহারা হয়ে পড়ছে, খেই হারিয়ে অসংলগ্ন বলছে। প্রাচ্যভুমির অন্ধকার শক্তিকে কাবু করার প্রক্রিয়া পাশ্চাত্যের জানা নেই। তমসাব্রতের উপাচার অন্ধকার। হিংসা তার প্রিয় চারণভূমি। বিধর্মী তার প্রিয় শিকার।
এনার্সি একটি রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া। তার সময়কাল দেশভাগ উত্তর পর্ব। ক্যাব আসলে উত্তরোত্তর পর্ব। সমস্যা গুলিকে তার বৈশিষ্টে আঘাত না করলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হবেই। আপাত প্রয়োজন দেশের অন্যত্রেও এই মুহূর্তে নো-সিএবি এবং নো-এনার্সি আন্দোলন গড়ে তোলা। আসামে আমরা হেরে গেছি। উনিশ লক্ষ আপাতভাবে চিহ্নিত হয়েছেন প্রকৃত বিদেশি হিসাবে। অন্যত্রেও যে হারবো তার কোন মানে নেই। বিজেপির ইউএসপি হিন্দুত্বের সঙ্গে ধর্ম এবং ভাষা বিরোধ জাগিয়ে তোলা। সর্বত্র মানুষ বিভাজিত। সবাই সব বোঝে, কিন্তু হারের সম্ভাবনার কথা নাকি বলতে নেই। তাতে নাকি সমর্থকদের মন ভেঙ্গে যায়। আরে কার মন ভাঙ্গবে? তারা কোথায়?