মিউকর এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। মিউকর ভারতবর্ষে অনেকদিন থেকেই ছিল তবে খুবই কম। মাঝেমধ্যে চিকিৎসকরা মিউকরের মুখোমুখি হতেন।
কোভিড পরিস্থিতিতে মিউকর সংক্রমণ আবার নতুন করে ফিরে এসেছে। গত বছর আমরা নাক কান গলা বিশেষজ্ঞরা মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারত থেকে এই রোগটির কিছু খবর পাচ্ছিলাম। তবে এই বছর কোভিডের দ্বিতীয় পর্বে এই রোগটি কিছু কিছু রাজ্য যেমন রাজস্থানে মহামারি আকার ধারণ করেছে।
মিউকর সংক্রমণ চিরকালই ডায়াবেটিস কিংবা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের কম তাদের মধ্যেই দেখা যেত। এই বছরও যেসব কোভিড রোগীদের ডায়াবেটিস আছে অথবা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগ আছে অথবা মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যেই এই রোগটির সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু এটা বললেই চলবে না, তার কারণ কিছু কোভিড রোগী যাদের বয়স কম, যাদের ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ নেই, যারা স্টেরয়েড পাননি তাদের মধ্যেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে , যা খুবই বিরল। এ থেকে আমরা এই ধারণা করতে পারি যে, করোনা রোগটি মানুষের শরীরে নিশ্চয়ই এমন বিশেষ কিছু করছে যাতে এই ছত্রাক সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই প্রসঙ্গে এটাও বলে দেওয়া ভাল যে, সাধারণ মানুষের নাকে এমনিতেই যে মিউকর থাকে তা কিন্তু কোনো ক্ষতি করে না, কারণ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে তাদের এর থেকে কোনো ক্ষতিই হয় না। শুধু তাদেরই হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে সেটা কোভিড হোক বা ডায়াবেটিস হোক বা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজ রোগ হোক বা তাদের এমন ওষুধ দেওয়া হয়েছে যথা স্টেরয়েড বা অন্যান্য ওষুধ যেগুলো কিনা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আর তাদের মধ্যেই এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
যেহেতু এই ফাঙ্গাস নাকেই থাকে তাই নাক এবং সাইনাসের সংক্রমণ নিয়ে এই রোগটির সূচনা হয়। তবে সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে রোগটি চোখ এবং ব্রেনেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া ইন্টেস্টাইন বা চামড়াতেও এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যায়।
এই রোগে মূলত কোভিড থেকে সেরে উঠেছে এমন রোগীর যদি নাকের একদিক বন্ধ থাকে, নাকের একদিক থেকে ব্রাউন কিংবা কালো রঙের সর্দি পড়তে থাকে, ব্যথা হয়, চোখ কিংবা মুখের একদিক যদি ফুলে যায়, নাক দিয়ে যদি রক্ত পড়ে তবে মিউকোর সন্দেহ করতে হবে।
রোগের নির্ণয় হয় সন্দেহজনক রোগীদের নাকে এন্ডোস্কোপি এবং বায়োপসির মাধ্যমে। যতো তাড়াতাড়ি এই রোগটি নির্ণয় করা যাবে ততো তাড়াতাড়ি ওষুধ শুরু করা যাবে। ওষুধ মূলত আম্ফটেরিসিন বি নামের একটি ওষুধ। এই ওষুধটি কিন্তু এই রোগের ক্ষেত্রে ভালোই কাজ করে। তবে তার আগে সিটি বা এমআরআই স্ক্যান করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন রোগটি কতদূর ছড়িয়েছে।
করোনা চিকিৎসায় নানারকম ওষুধ সংক্রান্ত অনেক বিতর্ক আছে কিন্তু মিউকোরের চিকিৎসায় আম্ফতেরিসিন বি নিয়ে বিশেষ কোনো বিতর্ক নেই। এই ওষুধটি খুবই কম তৈরি হয় সেজন্য সরকার এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকদের এই ওষুধটি বাজারের উপলব্ধ করার ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব নিতে হবে। তবে শুধু ওষুধেই হবে না। অনেক সময় এই ছত্রাকটি যে সমস্ত মাংসপেশি এবং শরীরের অন্যান্য অংশকে সংক্রমণ করে সেগুলোকে অপারেশন করে বাদ দেওয়ার দরকার আছে নইলে ওষুধ ভালোভাবে কাজ করে না।
এই রোগে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক ভাবে বেশি। সুতরাং রোগাক্রান্ত হলে প্রথম দিন থেকেই নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যেহেতু এই ধরনের রোগের চিকিৎসা এবং সার্জারি বেশ ব্যয় সাপেক্ষ তাই সরকারের এই বিষয়ে এগিয়ে আসাটা খুবই দরকার।
শেষকথা, মিউকর কিন্তু কোভিডের মতো একজন থেকে অন্যজনে খুব সহজে সংক্রমিত হয় না। সুতরাং এই বিষয়ে ভয় পাওয়ার বিশেষ কোন কারণ নেই।
স্বচ্ছ, স্পষ্ট, প্রয়োজনীয় বার্তা!