তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে অথবা এই দিন তো দিন নয় আরো দিন আছে – এই কথাগুলো বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে এক্কেরে ছেঁদো হয়ে গেছে। অথবা সরকারের চোখ, কান, ঘ্রাণশক্তি বলে আর কিস্যু নাই। আবার এমনও হতে পারে, পাইছি তাই লুটছি। লুটছি আর খাচ্ছি। খাচ্ছি আর খেলছি। এই ছু ছু ছু গণতন্ত্র, ভ্যানিস---
এ সবকিছুই আমাদের বানানো, কল্পনা।
রাগে দুঃখে হতাশা লজ্জায় আমাদের মাথা বাংলাদেশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতে চাইছে। এই সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্যে ঘাটে ঘাটে আমাদের নিদারুণ অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হচ্ছে সরকার আর সরকারি দলের নেতা,কর্মী, মন্ত্রী, এমপিদের কাজ, কর্ম, কথাবার্তায়। তারপরেও সমর্থন কেন দিয়েছি ? স্বাধীনতা স্বপক্ষ শক্তি সে জন্যে। দিয়েছি বাংলাদেশের ক্ষমতার তখত্ তাউসে যেনো কোনো ধর্মাশ্রয়ী দল আসতে না পারে সে জন্যে। দিয়েছি লুপ্ত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে আর বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্যে।
কিন্তু এই সরকারই বা ধর্মাশ্রয়ী দলের চাইতে এখন কম কিসে? সে প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে চেষ্টা করা যাক, এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হওয়ার।
প্রশাসনের প্রশ্রয়ে কি ঘরবাড়ি লুটতরাজ, ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে না সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ? ধর্ষণ, হত্যা, গুমখুন আর তাতে সাধারণ অপরাধীদের সাথে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আওয়ামী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীরা সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে না ? পাহাড়ে কি শান্তি আছে ? সেখানেও কি সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় দখল, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ চলছে না?
শিক্ষাব্যবস্থা ধরাশায়ী। গরিবদের কেজি প্রতি চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ টাকা চাল কিনে খেতে হচ্ছে। মধ্যবিত্ত খাচ্ছে কেজি প্রতি পঞ্চাশ থেকে পঁয়ষট্টি টাকার চাল। আর বাদবাকি তেল, নুন, মাছ মাংস, সবজির মত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীন।
অথচ মাদক যত্রতত্র ধনী গরীবের হাতের মুঠোয়।
মন্ত্রীরা আছে। তারা তো কাঁচের ঘরে রঙিন চশমা পরে গরমে শীত খায় আর শীতে গরম পোহায়। মন্ত্রীদের আছে এমপি। তারা আগেকার দিনের জমিদারদের নায়েবের মত কাজ করে চলে। থাকল পড়ে চুতিয়া জনগণ। তাগোর সাথে আবার এগোর কী সম্পক্কো ও ভাইডি !
খালি নির্বাচন আসুক, দেখবানে কী সম্পক্কো। আয় ভাই আয়, আমরা সবাই এক। নির্বাচন ফুরোলেই বুঝবানে, গুড বাই ! তাই তাই, যাই যাই ! শ্লা কয় কি! কিয়ের ভাই ! গেটটা লাগা অই লাথখোর দারোয়ান।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল, বিগত বিএনপি সরকারের বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডসমূহের বিচার করা। অর্থাৎ তারা বিচারব্যবস্থাতে আস্থাশীল। অথচ এই দলটিই অস্ত্র হাতে রক্তের হোলি খেলতে উন্মত্ত বেশে নেমে পড়েছে। তাও এমন একটি সময় যখন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে বাকি মাত্র কয়েক মাস ! নাকি আগামী নির্বাচনের জয়ের স্ক্রিপ্ট আগেই রচিত হয়ে আছে ? আরো পাঁচ বছর। সাকুল্যে দুই হাজার তেইশ !
কী উচাটন আত্মবিশ্বাস। কী উদ্বাহু ক্ষমতার দাপট !
দেশে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল না থাকার মানেই হচ্ছে সুশাসনের ভারসাম্যহীনতা। রাষ্ট্র বিজ্ঞান নামক একটি শাস্ত্রে পণ্ডিতগণ বলেছেন, বিরোধীদল হচ্ছে, shadow government বা ছায়া সরকার। বিরোধীদলের দ্বারা ক্ষমতাসীন সরকারের দোষ ত্রুটি কঠিন এবং সুতীক্ষ্ণভাবে সমালোচনা করার অর্থই হচ্ছে, সরকারকে পথ নির্দেশ করা। সরকারকে আরো একবার ভেবে দেখার প্রণোদনা দেওয়া।
আল্লার কী কুদরত। আঃ লীগের ভেতরেই বিএনপি,জামাত, বাম, ভাম মিলেমিশে শরবত!
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে কথা বলে উঠে দাঁড়ানোর মত কোনো বিরোধীদল আর অবশিষ্ট নাই এই বাংলাদেশে। সবার লেঙ্গুর তেলচর্বিতে জবজবে ভারি আর টাকাখোর হয়ে গেছে। কী চমৎকার দেশ। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের সবাই কেমন ভাই বিরাদারে আওয়ামী আওয়ামী। তুমিও আওয়ামী, আমিও আওয়ামী। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু। জয় শেখ হাসিনার জয়।
তবে কেন এই প্রশ্ন আসে মনে ? কেন উত্তাল হয়ে উঠল আজ বাংলাদেশ ?
টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ একরামুল হককে কেনো সাজানো ক্রস ফায়ার দেওয়া হল ? কোন সে বদের খায়েস পূরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই “ক্রসফায়ার ক্রসফায়ার” খেলাটা খেলে নিল ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি আগেপরের কিছুই জানতেন না ? একরামুল যদি অপরাধীই হয়ে থাকে তবে কেনো আইন অনুসারে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন না মহামান্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ? আর যদি তিনি কিছুই জানতেন না তবে কোন্ ক্ষমতা বলে এখনো ক্ষমতায় আসীন থাকেন এমন স্বল্পজানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ?
ডিকশনারি, গুগল, চেনা অচেনা শিক্ষিত জ্ঞানীজন এমনকি পুলিশ, সেনাবাহিনীর বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলাম, ক্রশফায়ার কী ? প্রত্যেকেই জানালো দুটি বা একাধিক পক্ষের ভেতরকার পাল্টাপাল্টি গুলিগোলা হওয়াকেই ক্রসফায়ার বলে।
আচ্ছা, কাউন্সিলর মোঃ একরামুল কি গুলি ছুঁড়েছিল ? দেশের আটটি পত্রিকায় কাউন্সিলর যে মাদক ব্যবসায়ী, তা নিয়ে সংবাদ হয়েছে। সেই ব্যক্তি র্যাবের গাড়িতে অস্ত্রসহ চড়ে গিয়ে র্যাবের সাথেই গুলিগোলা চালিয়ে নিহত হল !
আর মাদক গড ফাদার, যার নাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে থাকা লিস্টে রয়েছে সেই কক্সবাজারের এমপি বদি ৩১ মে দেশ ছেড়ে হজ্জ্ব পালনে চলে গেলো ! সবাই আগে বলুন, আলহামদুলিল্লাহ্। এখন ভাবুন, তালিকাভুক্ত একজন অপরাধী কীকরে চলে গেল ? কার কার তরলতায় ? তবে কি একরামুলের ক্ষেত্রে তৈল কিছুটা কম পড়িয়াছিল ?
অতএব মানতেই হচ্ছে, বাংলাদেশে বিচার বিভাগ নাই । সেখানে বিচারকগণ নাই । আইন নাই । গ্রেফতার আইন বা পরোয়ানা বলে কিচ্ছু নাই। নাগরিক অধিকার শূন্যের কোঠায়। র্যাব মানেই মৃত্যু। কথিত রক্তখেলা, ক্রসফায়ার, ক্রসফায়ার। অন্ধকার রাত। উপর্যুপরি বাঁশির শব্দ। জীপের সাথে লাশটানা এম্বুলেন্স। কেমন একাত্তর একাত্তর গন্ধ।
তবে এই ঘটনায়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্ম হিসেবে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেলো আমাদের কাছে। বালক বেলায় শোনা কাহিনি তবে তো মিথ্যে নয়! হাজার হাজার জাসদ নেতা কর্মীদের বিনা বিচারে মেরে ফেলেছিলো আওয়ামী সরকার। আজ স্বীকার করে নিলাম, সর্বৈব সত্য। সিরাজ সিকদারসহ অন্যান্য বাম নেতা কর্মীদের কথিত ক্রশফায়ারে মেরে ফেলা হয়েছিল ! এটিও দিনের সূর্য রাতের তারাদের মত, সর্বৈব সত্য। তবে তো আওয়ামী লীগের হাত নিরপরাধ হত্যা আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বাঁধানো স্বৈরাচারের রক্তচোষা হাত।
এবার যাবো কই ?
জ্জয় বঙ্গবন্ধুর জ্জয়। আমি যদি হুকুম দিবার না পারি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।
জনাব সরকার, দুর্গ কিন্তু গড়ে উঠছে। ঘৃণার দুর্গ, অবিশ্বাসের দুর্গ। অনাস্থা আর উপেক্ষার দুর্গ। আপনাদের নামে বর্জ্য ফেলার দুর্গ।
আর কান খুলে শুনুন , আপনার এই ক্রসফায়ারের কসম, শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল যদি থাকত আর ইলেকশন যদি ফেয়ার হত, আপনারা গর্তে ঢুকে যেতেন। আপনার পোষ্য ভাঁড়রা যাই হোক বলুক না কেনো আপনাদের দম্ভ, ঔদ্ধত্য, অপরিমিত আত্মবিশ্বাস আপনাদের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। নির্বাচনে হয়ত আপনি জিতবেন। সে কেবল ফাঁকা মাঠের বদৌলতে। ক্লাশে মোট একজন ছাত্রের মধ্যে ফার্স্ট হওয়ার মত।
জনগণ কিন্তু পথ খুঁজছে ।
অনেক হল। এবার একটু ভাবুন মাননীয়া। কিছু প্রশ্ন নিজেকেই করুন। আপনি হয়ত যাকে বা যাদের বিশ্বাস করছেন, তারা খেলছে বা খেলবে না তো ?