একেই বলে একা রামে রক্ষা নাই, সুগ্রীব দোসর!
প্রশাসনিক সূত্র অনুযায়ী আগের সাইক্লোন বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ টাকার পুরোটাই পাওয়া যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। তার ওপর আবার এই আমপান। কয়েক হাজার কোটি টাকা দেবার কথা ছিল, জুটেছে মাত্র ১০০০ কোটি। তাগাদা দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেলেও সে টাকার বাদ বাকী অংশের আর দেখা নেই।
বাম জমানায় একটা হাসাহাসি প্রায়ই কানে আসতো। যা কিছু ঘটুক গিন্নী বলেন কেষ্টা ব্যাটাই চোর, ঠিক এই আদলে নাকি সেসময় রাজ্য সরকার কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা বলতো সব ব্যাপারেই। সে গুলো যে আদৌ হাসাহাসির ব্যাপার ছিল না, এখন দেখি সেসময় হাস্যরতদের অনেকের এটাই নয়া প্রত্যয়।
এই আমপানের পর কেন্দ্রের যা সাড়া তাতে কিন্তু জঘন্য বঞ্চনার কাহিনীই উঠে আসছে। সাড়া মানে সাড়াহীনতা। কোনো সাড়াই নেই। প্রধানমন্ত্রীজী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীজী কেউ কোনো বিবৃতি দেওয়া তো দূরের কথা, একটা টুইট করবারও সময় পাননি সারা সকাল। ঝড় কিন্তু সব ধ্বংস করে থেমে গেছে কাল নবীন রাতেই। নবীন রাত, মানে আগ রাতের কথাটা বিশেষ ক'রে বলতে চাই, কারণ মাঝরাতে বা তার পরে থামলে ভাবতাম, আহা বুড়ো মানুষরা জেগে ছিলেন না, তাই সকালে উঠে জানতে জানতে বেলা বয়ে গেছে, প্রতিক্রিয়া দেবার সময় পাননি।
এই কমিউনিকেশন টেকনোলজির রমরমার যুগে একটি অঙ্গরাজ্যের দুর্দশার কাহিনী দিল্লীবাঁলোদের কানে পৌঁছতে কতো সময় লাগে বলে মনে হয়।
আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে যা খবর তাতে ধ্বংসলীলার পুরো কাহিনী কানে গেলে দুর্বলচিত্তরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। ডায়মন্ড হারবার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত নাকি রাস্তার দুপাশে কিছু নেই। সব মুড়িয়ে তুলে নিয়ে গেছে দানব আমপান। সাগরদ্বীপ মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। কারণ কচুবেড়িয়া জেটি জলের তলায়। হিঙ্গলগঞ্জ থেকে শুরু করে নামখানা, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা সব তছনছ হয়ে গেছে। সকালের কাগজ ১০/১২ টি মৃত্যুর কথা লিখেছে, আগামী কাল সকালে যদি ১০০ জনের কথা লেখে অবাক হব না।
তবু তো আগাম খবরে প্রচুর মানুষকে সরানো হয়েছিল। কিন্তু খেতের ফসল, মাটির বাড়ি, গবাদি পশু, এদেরকে তো আর নিরাপদ আশ্রয়ে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায় না। ফলে এসব ক্ষতি আটকাবার কোনো উপায় জানা নেই।
আয়লার সময় সুন্দরবনের একটি ছেলের কাছে শুনেছিলাম যাতে বাঁধ না ভেঙে যায় সেজন্য স্থানীয়দের মরিয়া চেষ্টার কথা। হু হু করে জল উঠে আসছে, ঢেউ আছড়াচ্ছে বাঁঁধের গায়ে। গ্রামের মানুষজন হাতে বড় বড় খড়ের আঁটি নিয়ে দৌড়ে সেগুলো বাঁধের ওপর পেতে শুয়ে পড়ছে। আগেই দেখে নিয়েছে হাওয়ার তোড় নদীর বুক থেকে তীরের দিকে। তাই সাহস করে শুয়ে পড়া। কিন্তু তাতে কী রক্ষা আছে ! হাওয়ার তোড় তাদের উড়িয়ে পাশের জমিতে ফেলে দিচ্ছে, সেখান থেকে উঠে মানুষগুলো আবার দৌড়ে আসছে বাঁধের ওপর শোবে বলে। নিজের দেহভার দিয়ে বাঁধ বাঁচাবার মরীয়া চেষ্টা!
প্রকৃতির সঙ্গে এই অসম লড়াইয়ের সুযোগ এবার মানুষগুলি পায়নি বলেই মনে হচ্ছে। কারণ আয়লার গতি ছিল ১২০/১৩০ কিমি প্রতি ঘন্টায়, আমপানের সেখানে ১৮৫/১৯৫ কিমি।
এ যদি জাতীয় বিপর্যয় না হয় তাহলে আর কী সেই পদবাচ্য হবে ? কিন্তু মোদীমিডিয়ার ভূমিকা সরকারের মতোই। হেডলাইনে সারা সকাল সেই করোনার কেরামতি। কিন্তু রাস্তায় হাঁটতে থাকা শ্রমিক এই ঝড় সামলালো কী করে সে সম্বন্ধে হিরণ্ময় নীরবতা। তাহলে যে আবার নতুন ক'রে লাশ গুণতে হবে !
একমাত্র এনডিটিভি ছাড়া আর সবাই নমো নমো ক'রে পশ্চিমবঙ্গের কথা বলছে। এগিয়ে রাখছে অবশ্যই ওড়িশাকে।
সে রাখুক, জগন্নাথ মন্দিরের ধ্বজা উড়ে গিয়ে সব ধার্মিকরা এখন মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘাড় ব্যথা করছে। চোখ নামালে তবে না চারপাশের ধ্বংসলীলা দেখা যাবে।
কিন্তু আই টি সেল যা করে যাচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য। একে তো বাবা মহাদেব কা গুসসা বলে ধর্মীয় রঙ চড়াচ্ছে। সঙ্গে আছে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল সব মিম। কোনটায় আমপানের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাচ্ছে এইরকম দেখানো হচ্ছে, কোনটায় মুখ্যমন্ত্রী ও আমপানকে মিলিয়ে হরেক মজাক। হাসি মশকরা করবার এই কি সময় ! যে বাঙালিরা এতে খুশি হচ্ছে, হাসছে, তারা জানে না পুড়ে মরবার আগে লেলিহান অগ্নিশিখাকে পতঙ্গের বড়ই লোভনীয় মনে হয়।
ওদিকে রাজ্যপাল আর ১৮ জন সাংসদ দুপুর গড়িয়ে গেলেও চুপ। মুখে কোনো রা নেই। তবে কি এটাই এ দেশের রাজনীতির প্যাটার্ণ হয়ে গেল যে বিরোধী পক্ষ চূড়ান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চূড়ান্ত বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে যাবে ? সংসদে দাঁড়িয়ে বলবে, এই রাজ্য সরকারকে কোনো ত্রাণ দেবার দরকার নেই ?
মনে পড়ছে কেরালার কথা ? বিধ্বংসী বন্যার পর কেন্দ্রীয় সরকার কি ব্যবহার করেছিল ? কিন্তু এই মাপের বিপর্যয়, যা ফিরে আসবার জন্য দুশো বছরের বেশি সময় লাগে, তার মোকাবিলা করা যাবে কেন্দ্রীয় কোষাগারের সাহায্য ছাড়া, এটা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার।
সময়ের এই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সমস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসীর একটাই দাবী হওয়া উচিত, এই ধ্বংসলীলাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে হবে এবং এর মোকাবিলায় জাতীয় কোষাগারকে উন্মুক্ত করতে হবে।
~~~~
পুনশ্চ - হ্যাঁ হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীজী অনেকক্ষণ বাদে হলেও টুইট করবার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু সমবেদনায় তো চিঁড়ে ভেজে না। ত্রাণ সাহায্যের আশ্বাস কিছুই নেই সেখানে।মনে হচ্ছে আমরা যেন ভারতের বাইরে ! প্রধানমন্ত্রী টুইটে যে effort এর কথা বলেছেন সেটাও ভাববাচ্যে, এতেও আত্মনির্ভর হতে বলবেন কিনা জানা নেই... এমন একটা লেখা এ সময় দরকার ছিল !
সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং দাবি।
সবাই মিলে একটাই কথা বলা দরকার। জাতীয় বিপর্যয় ঘোষনা করতে হবে। ফান্ড রিলিজ করতে হবে।
টেলিভিশন দেখি নি: তাই উড়িষ্যার ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ জানি না । উড়িষ্যার দু এক জন বন্ধু অবশ্য জানিয়েছেন সেখানে তত বিপর্যয় হয় নি। তবু একজনের ক্ষতি হলেও সেটা ক্ষতি। তাই নিয়ে তুলনা করতে ভালো লাগে না। এ কোন রাজনীতি যে আমাদের মানুষের কষ্টের মধ্যে তুলনা করতে শেখায় ?
বাঙালি আর বাংলা, হিন্দিভাষী শাসকের চক্ষুশূল
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। বাঙলা চিরকাল ঈর্ষার পাত্র হয়েই রইল হীনমন্যদের চোখে।
বেশ হাসি পাচ্ছে -- এদের নির্লজ্জতা দেখে হাসা ছাড়া কিছু উপায় নেই। কোপিং মেকানিজম। আমাদের দাসত্বের শুরু হলো। কাঁদলেও যাবার জায়গা থাকলো না
বাংলাতে এখনো কিছু স্বাধীন চিন্তা করতে পারেন এমন মানুষ আছেন --তাই বাংলা শেষ হলে তো অনেকের পোয়াবারো !
"আমফান জাতীয় বিপর্যয় " ঘোষণার দাবী তীব্র হোক ।
এভাবে আর চলতে পারেনা, রাজনীতি র বলি আর কতজন হবেন?
নিপুণ পর্যবেক্ষণ। এবং সঙ্গত দাবী। পূর্ণ সমর্থন।
Pratibha di, thik kothai likehchen. Kintu amar mone hoi na kendre r kaacheo aar taka poisa aache.
একদিকে বিগত সাত দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রের বঞ্চনার ইতিহাস, অন্যদিকে আত্মঘাতী বাঙালীর সংকীর্ণ রাজনীতি, দুইই সমান তালে চলছে। তবে এবারের সাইক্লোন পরবর্তীকালে বামপন্থীদের ভূমিকা ব্যতিক্রমী। তারাও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার। কিন্ত বাস্তবে দিল্লির জমিদাররা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীকে তাদের প্রজার স্বীকৃতিটুকুও দিতে চান না। তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন এরা বাংলাদেশী, এই বঙ্গভূমে যতই পদ্ম ফুটুক না কেন। যাক আজ সকালে জমিদারবাবু আকাশপথে পাখির চোখে বিপর্যয়ের ক্ষয় ক্ষতিয়ানে আসছেন। দেখা যাক বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে কিনা।
সকাল বেলা বেরিয়ে একটা আনন্দবাজার কিনলা।। প্রথম পাতার ছবিটা আমি আজ পোস্ট ও করেছি। স্তব্ধ হয়ে গেছি বিপন্নতায় ভুগেছি এবং জনৈক গরুবাদীর সাথে ত্রান তহবিল, নরেন্দ্র মোদী, মমত ব্যানার্জীর চুরি ইত্যাদি নিয়ে খানিক তর্ক করলাম। আশ্চর্যের এই যে চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। মূর্খ না শোনে জ্ঞানীর বানী। আপনার মতই আমিও ভাবছি এই চরম দুর্দিনেও রাজনীতি করা যায়? মোদীজি আসছে।। মস্ত বড় প্যাকেজ নিয়েই হয়ত আসবেন। তবে বিশ্বাস করিনা। গরুবাদী চ্যানেল গুলির ভূমিকা আপনি ঠিক ই ধরেছে।। এরা মোদীর পা চেটেই খা।। ndtv আর mirror সারা দেশের নিরিখে ভদ্র সভ্য। অন্তত এক পেশে নয়।
এখন দেখার বিষয় মোদী কি খেল দেখান। জাতীয় বিপর্যয়ের অর্থ বা সাহায্য বাংলা পাবেনা এটা চোখ বন্ধ করেই বলা যা।। উড়িষ্যা কিন্তু পা।। কারন মোদীর সমর্থন। এর পির দেখার বসংলার গরুবাদী রা ক বলেন?
প্রতিভা দি,
মনে হয়না মোদিজী রাজনীতিকে অতিক্রম করে হঠাৎ সদয় হয়ে উঠবেন। দু-একটি টুইট, বিবৃতি, হেলিকপ্টারে দুর্গত এলাকা ঘুরে, সামান্য আহা-উহু করে, করোনা বিধি মেনে হাত ধুয়ে ফেলবেন তিনি, এটিই যেন স্বাভাবিক।
বরং সীমিত সাধ্য নিয়েই বাংলাকে ঘুরে দাঁড়াতে আপন শক্তিতে। এছাড়া উপায় কী?
করোনার ক্রান্তিতে এপারে আম্ফান ২৬ জেলায় ২১ জনের প্রাণহানি, বাড়িঘর, গবাদিপশু, গাছপালা, ফসল ও মাছের ঘেরসহ অন্যান্য যে ক্ষতি করেছে, তাতেই কৃষিজীবী মানুষ দিশেহারা। উপকূলের মানুষের ঘরে ঘরে খাবার জন্য হাহাকার। কোথাও রোজার ঈদের আনন্দ নাই
দু চারটে বানান ভুল হয়ে গেছে যথারীতি। প্লিজ ক্ষমা করে দেবেন। কারেকশান করতেও পারলাম না।