আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে, যার মানে আমি তোমাকে বলেইছিলাম মাথাটা খুব পরিষ্কার নয়, কার্ল বলল, ‘‘তুমি ইংরিজি শুনে বুঝতে পারো না?’’
কতকটা বিব্রত হয়ে অপ্রতিভ অবস্থায়, মেয়েটা ঝটপট বোঝাল যে শুনে প্রথমে মনে হচ্ছে জার্মান, বা হয়তো বেলজিয়ান।
বিরক্ত হয়ে নাক দিয়ে একটা ফোঁৎ শব্দ করে কার্ল বলল, ‘‘এখানে কেউ বেলজিয়ান নয়।’’ তারপর আমাকে বলল : ‘‘বুদ্ধিসুদ্ধি কিছু নেই। কিন্তু মাই দুটো দ্যাখো! চোদ্দ বছরের হিসেবে একদম ঠিক আছে, কী? আমাকে আবার কসম খেয়ে বলেছে ওর নাকি সতেরো, আমি বিশ্বাস করি না।’’
কোলেৎ ওখানে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছিল এই অবাক করা ভাষা, তাও সে এই প্রকৃত সত্যিটা ধরতে পারছে না যে কার্ল আর যে ভাষাই বলুক না কেন ফ্রেঞ্চ সে জানে না। শেষমেশ সে একেবারে জোর করেই জানতে চাইল যে কার্ল সত্যি সত্যিই ফরাসি কিনা।
মনে হচ্ছিল এটা তার কাছে খুব জরুরি একটা ব্যাপার।
‘‘হ্যাঁ, আমি ফরাসিই তো,’’ কার্ল একেবারে উল্লাসে জানাল। ‘‘তুমি কি আমার কথার সাথে কথা বলতে পারছ না? আমি কি জার্মানদের১৬ মতো করে বলছি?
পাসপোর্ট দেখবে আমার?’’
‘‘ওটা ওকে না দেখানোই ভালো,’’ কার্ল যে চেকশ্লোভাকিয়ার পাসপোর্ট নিয়ে ঘোরে সেটা মনে করে আমি বললাম।
‘‘তুমি কি ভেতরে আসবে একবার, বিছানার চাদরগুলো দেখবে?’’ কোলেতের কোমরে একটা হাত রেখে কার্ল বলল। ‘‘মনে হয় ওগুলো আমাদের ফেলেই দিতে হবে। লন্ড্রিতে আমি নিতে পারব না ওসব; ওরা ভাববে আমি কোনও ক্রাইম করেছি।’’
আমি মজা করে বললাম, ‘‘ওকে ধুতে দাও ওগুলো।’’
‘‘যদি ও আমাদের সাথে থাকতে চায় তাহলে ও করতে পারে এমন অনেক কাজ এখানে আছে।’’
‘‘মানে তুমি ওকে এখানে রাখতে চাইছ? তুমি জানো এটা বেআইনি, জানো না? জেলে যেতে পারি আমরা এজন্য।’’
‘‘ভালো হয় যদি ওকে একজোড়া পায়জামা বা নাইটগাউন দিতে পারো।’’
আমি বললাম, ‘‘কারণ তোমার এই উদ্ভট পোশাকে ও যদি রাতে এখানে ঘোরাঘুরি করে আমি হয়ত নিজেকে ঠিক রাখতে পারব না, রেপ করে দিতে পারি।’’
কার্ল কোলেতের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেলল একেবারে।
‘‘কী হচ্ছে?’’ কোলেৎ চেঁচিয়ে উঠল জোরসে। ‘‘তোমরা কি মজা করছ নাকি আমাকে নিয়ে? আর তোমার বন্ধু কেন ফ্রেঞ্চে কথা বলছে না?’’
‘‘একদম ঠিক,’’ আমি বললাম। ‘‘এখন থেকে আমরা ফ্রেঞ্চেই কথা বলব আর ফ্রেঞ্চ ছাড়া কিচ্ছু নয়।
ওকে?’’
একটা শিশুসুলভ হাসি ছড়িয়ে পড়ল ওর মুখে। ও ঝুঁকে এসে আমার দু গালে চুমু দিল। তখনই ওর স্তন দুটো বেরিয়ে পড়ল আর আমার মুখের ওপর বুলিয়ে গেল আলতো করে।
কোনওমতে জড়ানো ওর আলুথালু কাপড়টা খসে নীচ অবধি সব মেলে ধরল, উন্মুক্ত করে দিল অপূর্ব এক পূর্ণ যুবতি শরীর।
‘‘যিশাস!’’ আমি বললাম, ‘‘আরে নিয়ে যাও ওকে, বন্ধ করে রাখো তোমার ঘরে। তুমি যখন থাকবে না তখন এরকম পোশাকে ও যদি ঘোরাঘুরি করে, কিছু ঘটলে আমি কিন্তু দায়ী থাকব না তার জন্য।’’
কার্ল ওকে ঝটপট তুলে নিজের ঘরে নিয়ে গেল, ফিরে এসে আবার বসল বিছানার কোণের দিকে। ‘‘আমরা হাতে একটা বড় সমস্যা নিয়ে ফেলেছি, জো,’’ কার্ল শুরু করল, ‘‘আর তোমার উচিত এতে আমাকে সাহায্য করা। আমার পেছনে তুমি ওর সাথে কী করছ তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তুমি জানো, আমি ঈর্ষাপরায়ণ নই। কিন্তু তুমি কখনওই ওকে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে দেবে না। পুলিশ ধরলে ওকে আর এখানে রাখবে না, পাঠিয়ে দেবে — এমনকী হয়তো আমাদেরকেও। এখন ব্যাপার হল, বাড়িঅলাকে কী বলা যায়?
কুকুরের মতো আমি ওকে আটকে রাখতে পারব না। এটা বলা যেতে পারে, আমার কোনও তুতো বোন, বেড়াতে এসেছে।
রাতে, আমি কাজে বেরিয়ে গেলে, তুমি ওকে নিয়ে সিনেমায় যাও। একটু হেঁটে এসো ওকে নিয়ে। ও খুব মজা করতে পারে। ওকে আশপাশের ভূগোল বা কিছু একটা শেখাও — একেবারেই কিছু জানে না। তোমার জন্য এটা ভালোই হবে। তোমার ফ্রেঞ্চটাও আগের চেয়ে আরও ভালো হবে। আর হ্যাঁ, পেটে বাচ্চা এনে দিও না, এই সাহায্যটা যদি করতে পারো। এখন অ্যাবরশনের জন্য টাকার কথা আমি ভাবতেই পারছি না। তাছাড়া, আমার সেই হাঙ্গেরিয়ান ডাক্তার যে এখন কোথায় থাকে তাও জানি না।’’
আমি চুপ করে শুনছিলাম ওর কথা। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে জড়িয়ে পড়তে কার্ল বরাবরের ওস্তাদ। মুশকিল হল, বা হয়তো এটাই ওর ধর্ম যে ও কখনও ‘না’ বলতে পারে না। বেশিরভাগ লোকই তাদের সহজাত প্রবৃত্তিতে চট করে না বলে দেয়।
কার্ল সবসময় বলবে, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, অবশ্যই। কোনও মুহূর্তের তাড়নায় ও জীবনের সাথে নিজেকে নিয়ে আপসও করতে পারে, খুব গভীর থেকে ওকে জানার ফলে, আমার মনে হয়, এই একই সহজাত প্রবৃত্তি যা অন্যদের দিয়ে ‘না’ বলায়, এটাই ওর গুরুতর সঙ্কটের সময়ে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। ওর এই সমস্ত উষ্ণ, মহতী প্রেরণা, প্রবৃত্তিগত সহৃদয়তা আর সস্নেহ কোমলতাগুলোর সাথেই ও আমার চিরকালের জানা অন্যতম প্রবঞ্চক বন্ধু। কেউ, পৃথিবীর কোনও শক্তি ওকে থামাতে পারবে না যদি ও নিজেকে ছাড়িয়ে নেবে বলে একবার মনস্থির করে ফেলে। পাঁকাল মাছের মতোই পেছল, ধড়িবাজ, অকপট, একদম বেপরোয়া। বিপদ হাতে নিয়ে ও ছেনালি করতে পারে, অবশ্যই সাহসের ব্যাপার, কিন্তু কারণ হল এটা নাকি ওকে বুদ্ধিতে শান দিতে, জুজুৎসু প্র্যাক্টিস করতে সাহায্য করে। মদ্যপ অবস্থায় ও একেবারে অবিবেচক, উদ্ধত। বুক টান করে হয়তো ঢুকে যাবে পুলিশ স্টেশনে, গলা ফাটিয়ে খিস্তি করবে। ধরা পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চাইবে, বলবে হঠাৎ করে ওর মাথার ঠিক ছিল না। এবং দেখা যাবে এটা করে ও দিব্যি বেরিয়েও আসতে পেরেছে! আর ছোট্ট ছোট্ট এই ধোঁকাবাজিগুলো ও সাধারণত অত্যন্ত দ্রুততার সাথে করে, বিস্মিত শান্তি রক্ষকরা তাদের সজ্ঞানে ফেরার আগেই দেখা যাবে ও হয়তো ইতিমধ্যে একটা বা দুটো ব্লক পেরিয়ে গেছে, ভেড়ার বাচ্চার মতো নিষ্পাপ সরল মুখে কোনও একটা চাতালে বসে চুক চুক করে বীয়ার খাচ্ছে।
টাকা পয়সার চাপে পড়লে কার্ল সবসময় ওর টাইপরাইটার বন্ধক রেখেছে।
শুরুর দিকে তাতে বড়জোর টেনেটুনে চারশ ফ্রাঙ্ক ও পেত, সাকুল্যে যা ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। ঘন ঘন বন্ধকে রাখতে বাধ্য হত বলে অত্যন্ত যত্ন করত মেশিনটাকে। যতবার ও লিখতে বসত প্রত্যেকবার ধুলো ঝাড়ত, মেশিনে তেল দিত আর লেখা শেষ হলে খুব যত্নে তার ওপর ঢাকনা দিয়ে দিত, ওর এই উজ্জ্বল ছবিটা ধরা থাকত আমার মনে। আমি এও লক্ষ করেছি যে যখন ও মেশিনটা বন্ধকে রাখত তখন গোপনে কী এক যন্ত্রণা থেকে যেন মুক্তি পেত — মানে এসময় ও একটা ছুটি ঘোষণা করে দিতে পারে এবং তাতে কোনও অপরাধবোধ ওর থাকবে না। কিন্তু টাকা যখন সব খরচ করে ফেলত, যখন সময় ছাড়া ওর হাতে আর কিছুই থাকত না, একেবারে খিটখিটে হয়ে যেত; দিব্যি দিয়ে বলত, এরকম সময়েই নাকি ওর মাথায় সবথেকে দারুণ আইডিয়াগুলো আসে। যদি এই আইডিয়াগুলো সত্যিই সেরকম জ্বালাপোড়া ধরানো আর মাথায় লেগে থাকার মতো হত, ও তখন একটা নোটবুক কিনে কোথাও একটা চলে যেত, আর আমার দেখা চিরকালের সবচেয়ে সুদর্শন পার্কার পেনটা দিয়ে টানা লিখতে বসে যেত ওর আইডিয়াগুলো। দীর্ঘকাল অবধি ও আমার কাছে কখনও স্বীকারই করেনি যে ও আসলে ওর বদ ফন্দিগুলোই লিখছে। না, বরং বিরক্ত মুখে আর খাপ্পা মেজাজে ঘরে আসত, এসে বলত সারাটাদিন ধরে ওকে নাকি বাধ্য হয়ে মদ গিলতে হয়েছে।
যদি আমি ওকে বলতাম ওর খবরের কাগজের অফিসে যেতে, যেখানে ও রাতে কাজ করে, গিয়ে ওদের কোনও একটা মেশিন ব্যবহার করতে, তাহলে এরকম একটা কাজ কেন অসম্ভব তা প্রমাণ করতে ও নিশ্চয়ই একটা ভালো যুক্তি উদ্ভাবন করে ফেলত।
এই মেশিনের ব্যবসা আর ওর দরকারের সময়ে সেটার কখনওই না থাকার কারণটাকে, ওর নিজের কাছে কোনও কাজকে দুঃসাধ্য করে তোলার অন্যতম একটা উপায় বলেই আমি উল্লেখ করি। প্রতিকূলতার সমস্ত সাক্ষ্য সত্ত্বেও, এ ছিল ওর এক চমৎকার শিল্পীসুলভ কৌশল যা সবসময় ওর জন্য অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। কিছুদিন বাদে বাদেই ও যদি মেশিন থেকে বঞ্চিত না হয় তাহলে স্রেফ হতাশাতেই শুকিয়ে মরে যাবে, স্বাভাবিকতার থেকে বহু বহুদূরে পড়ে থাকবে নিষ্ফলা ফালতু হয়ে। ওর এই জলের তলায় ডুবে থাকার ক্ষমতা, এককথায় বলতে গেলে, অনন্যসাধারণ। বেশিরভাগ মানুষই, ওকে এরকম একটা ডুবন্ত অবস্থায় দেখে থাকে, এবং সচরাচর ওকে বাতিল বলেই ধরে নেয়। প্রকৃতপক্ষে ভালো কিছুর জন্য এরকম করতে গিয়ে ও কিন্তু সত্যিই কখনও বিপদের মুখে পড়েনি; কিন্তু এরকম একটা বিভ্রম যদি ও ছড়িয়ে দেয়, তার কারণ একটাই, সহানুভূতি আর মনোযোগের প্রতি ওর একটা অস্বাভাবিক চাহিদা রয়েছে। বেরিয়ে আসার পর ও ঘটা করে অভিজ্ঞতাগুলো বলতে শুরু করে, যেন চমকপ্রদ কোনও কিছু এবারে প্রকাশিত হচ্ছে।
এতে একটা জিনিসই প্রমাণ হয় যে, পুরো সময়টাই ও ভীষণ মাত্রায় সজাগ ছিল। শুধু সজাগ নয়, বরং প্রচণ্ড হুঁশিয়ারও ছিল। যেন একটা গামলায় ও মাছের মতো সাঁতরে গেছে; যেন একটা আতসকাচ দিয়ে দেখে গেছে সবকিছু।
একাধিক দিক থেকে অদ্ভুত এক পাখি ছিল কার্ল। যে নিজের অনুভূতিকে সরিয়ে রাখতে পারত তো বটেই, অধিকন্তু, যেন একটা স্যুইস ঘড়ির মতো সেভাবেই সেগুলো ধারণ করত এবং পরীক্ষা করত তা নিয়ে।
একজন শিল্পীর কাছে খারাপ সময়গুলো ভালো সময়ের মতোই একইরকম উর্বর, এমনকী কখনও বেশিই। ওর কাছে সমস্ত অভিজ্ঞতাই ফলবতী এবং নিজের সুখ্যাতি ও কৃতিত্বে বদলে নিতে সক্ষম। কার্ল সেই গোত্রের শিল্পী যে তার সুখ্যাতি হারাবার ভয় পায়। নিজের অভিজ্ঞতার সাম্রাজ্য প্রসারিত করার বদলে নিজের সুনামকে রক্ষা করতেই ও বেশি পছন্দ করে। আর এটা ও করে নিজের স্বাভাবিক স্রোতকে একটা ক্ষীণকায়া ধারায় নামিয়ে।
জীবন আমাদেরকে অনবরত নতুন পুঁজি, নিত্যনতুন সম্পদ দিয়ে যায়, এমনকী যখন আমরা গতিহীন হয়ে বসে থাকি, তখনও। জীবনের লেজার খাতায় বাতিল সম্পত্তি বলে কিছু নেই।
আমি যেটা বোঝাতে চাইছি, হয়তো সূক্ষ্ম সমালোচনাতেই, সেটা এই যে, কার্ল নিজেকে জানে না, ও নিজেকে ঠকাচ্ছে। সামনে এগোনোর বদলে সবসময় ও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে পেছনে টেনে ধরতে। ফলে, কি জীবনে কি লেখার সাথে যখন ও লড়াইটা করে তখন ওর কর্মকান্ডগুলো অলীক একটা মরীচিকার মতো হয়ে যায়। ঠিক যে জিনিসটা মোকাবিলা করতে বা প্রকাশ করতে ও ভয় পায়, সেটা হল, যখন বেসময়ে বা বলা উচিত, প্রায় অপ্রস্তুত অবস্থায় ও কিছুর সাথে যুঝতে বাধ্য হচ্ছে।
ওর ঔদ্ধত্য, পরিণামে, জন্ম দিত হতাশার।
কখনও ও প্রচণ্ড ভয় পাওয়া এক ইঁদুরের মতো আচরণ করে, এমনকী নিজের কাজের জায়গাতেও। অব্যর্থ কিছু করার বা বলার জন্য ও কোত্থেকে যে সাহস কিংবা উদ্ভাবনীশক্তি পায়, লোকজন অবাক হয়ে যায় দেখে। তারা ভুলে যায়, ও এমন অবস্থায় চলে গেছিল যেখানে সাধারণ মানুষ থাকলে আত্মহত্যা করে ফেলত। কার্লের মতে আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়। যদি ও মরে যেত আর ওর মৃত্যু নিয়ে লিখতে পারত, তাহলে ঠিক ছিল। মাঝে মাঝেই ও বলত যে, ও নাকি কখনও নিজের মৃত্যু কল্পনা করতে পারে না; হ্যাঁ, কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া। এটা যে ও অতিমানবীয় ক্ষমতাশীল কোনও মানুষের মতো বলত তা নয়, বলত এমন এক মানুষের মতো, যে তার জীবনীশক্তির অপচয় করতে রাজি নয়, যে তার ঘড়িকে থামবার অনুমতি দেয়নি।
যখন এই দিনগুলির কথা ভাবি, যখন আমরা ক্লিশিতে একসাথে থাকতাম, মনে হয় যেন, স্বর্গোদ্যানের মতো প্রসারিত। সত্যিকারের সমস্যা সেখানে ছিল একটাই। খাবার। বাকি সব অসুখ ছিল কল্পনাপ্রসূত।
কার্ল যখন নিজের গোলামি নিয়ে গজগজ করত, তখন অনেকবার এ কথা আমি ওকে বলেছি। ও বলত, আমি নাকি দুরারোগ্য আশাবাদী। কিন্তু এটা কোনও আশাবাদ নয়, এটা ছিল সেই গভীর উপলব্ধি যে, যদিও এ জগৎ নিজের কবর খুঁড়তেই ব্যস্ত, তবু, জীবনটাকে উপভোগ করতে, হুল্লোড়বাজ হতে, কাজ করার জন্য বা কিছুই না করার জন্য দায়মুক্ত হতে, এখনও সেখানে অবকাশ রয়েছে।
বেশ ভালোই একটা বছর ফুরোলো, এই সময়টায়, পুরো এই সময়টা জুড়েই আমি ব্ল্যাক স্প্রিং উপন্যাসটা লিখছিলাম, দেদার বাইক চালিয়েছি স্যেন নদীর ওপর নীচ বরাবর, বেড়াতে গেছি মিডি১৭, শ্যাটো১৮, আর শেষে, কার্লের সাথে লুক্সেমবুর্গে এক উন্মত্ত পিকনিক।
এ ছিল সেই সময়, যখন বাতাসে ভেসে বেড়াত যোনি। ইংরেজ মেয়েগুলো থাকত ক্যাসিনো দে প্যারিসে; ব্লাঁশের১৯ কাছে একটা একদর রেস্তোয়াঁয় ওরা খেত। পুরো দলটারই বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা, শেষমেশ জমকালো এক স্কটিশ সুন্দরী আর ওরই একজন ইউরেশীয় সিংহলি বান্ধবীর সাথে জুটি বাঁধলাম। শেষে, এই স্কটিশ মেয়েটিই কার্লকে চমৎকার এক গনোরিয়া উপহার দিয়েছিল, যেটা আবার সে পেয়েছিল মেলোডি বারে তার নিগ্রো প্রেমিকের থেকে। যাই হোক, সে গল্প আমার কাহিনিকে ছাড়িয়ে যাবে। র্যু ফঁতের একটা নাচঘরের মেয়েও ছিল এখানে, কার্লের নাইট শিফট না থাকলে আমরা মাঝেসাঝে এই জায়গাটায় যেতাম। এই মেয়েটি ছিল কামাতুর, বড়োই ঝলমলে, নিজের দাবি দাওয়ার ব্যাপারে খুবই নম্র। একদল মেয়ের সঙ্গে ও আমাদের আলাপ করিয়ে দিয়েছিল যারা ওখানে ঘুরঘুর করত; আমাদের চেয়ে মন্দের ভালো আর কিছু না পেলে সন্ধের শেষে ওরা আমাদেরকে গানে ভিড়িয়ে নিত। ওদের মধ্যে একজন আমাদের দুজনকেই ওর বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য সবসময় পীড়াপীড়ি করত — এটা নাকি ওকে উত্তেজনা দেয়। আর আরেকটা মুদীখানার মেয়ে ছিল, যাকে তার আমেরিকান বর ছেড়ে গেছে; ও চাইত প্রথমে সিনেমায় নিয়ে যেতে তারপর সেখান থেকে সোজা বিছানায়, যেখানে সে সারারাত শুয়ে শুয়ে ভাঙা ইংরিজিতে কথা বলে যাবে। আমাদের দুজনের মধ্যে কার সাথে ও শোবে এ নিয়ে ওর কোনও মাথাব্যথা ছিল না, কেননা আমরা দুজনেই ইংরিজি বলিয়ে। আর, সবশেষে ছিল জেনি। আমার বন্ধু ফিলমোরের কাছে যে লেঙ্গি খেয়েছে। দিনে, রাতে উদ্ভট সময়ে বোতল ভর্তি হোয়াইট ওয়াইন নিয়ে যখন তখন জেনি চলে আসত, নিজেকে সান্ত্বনা দিতে ও একেবারে মাছের মতো মদ খেত। আমাদের সঙ্গে শোবার জন্য ও সব করতে পারে। জেনি ছিল হিস্টিরিয়াগ্রস্ত, চূড়ান্ত হুল্লোড় থেকে একেবারে মনমরা অবস্থা, এই দুয়ের মধ্যেই ও ঘুরত। যত মদ পেটে পড়ত ততোই ও কামুক আর প্রচণ্ড হুল্লোড়বাজ হয়ে যেত। তুমি ওর জামাকাপড় খুলতে পারো, ফুটোতে হাত বোলাতে পারো, মাই টিপতে পারো, এমনকী যদি চাও তো চুষেও দিতে পারো, কিন্তু যে মুহূর্তে তুমি তোমার চাবিটা ওর ফুটোর কাছে নিয়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে ও মেজাজ হারিয়ে ফেলবে। প্রথমে তো একমিনিট তোমাকে বেশ আবেগের সাথে আদরে আঁচড়ে কামড়াবে, আর ওর শক্ত চাষাড়ে হাতে তোমার বাঁড়া ধরে চুষবে, তারপরেই শুরু করবে চিল্লিয়ে কান্না, লাথি মেরে তোমাকে সরাবে নয়তো অন্ধের মতো এলোপাথাড়ি ঘুষি চালাবে। যখন ও চলে যাবে, স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটা ততক্ষণে একটা বিধ্বস্ত চেহারা নিয়েছে। কখনও, দুম করে প্রচণ্ড রেগেমেগে আধ ন্যাংটো অবস্থায় ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যাবে, আর ফিরেও আসবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, এসে, বেড়ালছানার মতো ব্রীড়াবনত হয়ে প্রচুর ক্ষমাটমা চাইবে। এই সময়ে, যদি কেউ চায় তো ওকে ভালো করে লাগাতেই পারে; তবে আমরা কখনও করিনি। ‘‘তুমি নিয়ে যাও ওকে,’’ আমি শুনতে পাই কার্ল বলছে, ‘‘এ মাগীকে আমার ঢের জানা আছে, পাগল একটা।’’ আমার নিজেরও তা-ই মনে হয়।
কোনও বন্ধুতা ছাড়াই এবং নিতান্তই আমার ডান্ডার অনিচ্ছায় একপ্রকার শুখা সঙ্গম ওর সাথে একবার আমি করেছি, তারপর ভালো করে কনিয়্যাক খাইয়ে ভাগিয়ে দিয়েছি। এই সামান্য মনোযোগ ও বিবেচনাটুকুর জন্য তখন ওকে দেখে মনে হচ্ছিল সবিশেষ কৃতজ্ঞ। ঠিক একটা শিশুর মতো।
এ ছাড়াও আরও একজন ছিল, যার সাথে আমাদের মোলাকাত হয়েছিল জেনির মাধ্যমে। সরল সাদাসিধে নিরীহ দেখতে, কিন্তু বিষধর সাপের মতো ভয়ঙ্কর। কিম্ভূত ফ্যাশানের সব পোশাক পরত, হাস্যকর। এ ছিল প্যারিসেরই মেয়ে এবং বিখ্যাত এক সুররিয়াল কবির গৃহিণী, এই খবরটা সেই সময়ে আমাদের অজানা ছিল।
ওর সাথে প্রথম আলাপের অল্প ক’দিন বাদেই এক রাতে ফোর্টের দিকে ওকে হেঁটে যেতে দেখলাম আমরা। রাতের এরকম সময়ে এমন একটা ব্যাপার, বিচিত্রই বটে এবং যথেষ্ট সন্দেহের। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে আমাদের অভিবাদনের প্রত্যুত্তর করল। দেখে মনে হচ্ছে আমাদের মুখ মনে করতে পেরেছে কিন্তু স্পষ্টতই ভুলে গেছে কোথায় অথবা কবে আমাদের দেখা হয়েছিল। স্মৃতি ঝালাই করতে তার কোনও আগ্রহ আছে বলেও মনে হল না। আমাদের সঙ্গ সে গ্রহণ করল যেন এ পথে যেকোনও কারুর সঙ্গই সে গ্রহণ করত। বাক্যালাপ চালাতে সে কোনও চেষ্টাই করল না; ওর কথাবার্তা ছিল অনেকটা জনান্তিক ভাষণের মতো, যার মাঝেমাঝেই আমরা বাগড়া দিচ্ছিলাম। কার্ল, এসব ব্যাপারে খুবই দক্ষ, নিজের স্বভাবসুলভ স্কিজোফ্রেনিক পদ্ধতিতে সমানে প্রম্পট করে গেল ওকে। ধীরে ধীরে ওকে আমাদের বাড়ির দিকে এবং শেষে আমাদের ঘরে নিয়ে এলাম — যেন ও ঘুমের মধ্যে হাঁটছিল। আমরা কোথায় যাচ্ছি, কী করি এরকম কোনও প্রশ্নই তার কাছ থেকে এল না। দিব্য হেঁটে গিয়ে ডিভানের ওপর বসল যেন নিজেরই ঘরে রয়েছে। তারপর চা আর স্যান্ডউইচ দিতে বলল, ঠিক সেই গলায় যেভাবে ও হয়তো কাফেতে ওয়েটারকে খাবার দিতে বলে। এবং ওই একই স্বরেই জানতে চাইল আমাদের সঙ্গে শোবার জন্য আমরা ওকে কত দেব। এও বলল, ভাড়া মেটাবার জন্য দুশো ফ্রাঙ্ক ওর দরকার, পরের দিন যেটা ওকে দিতে হবে। দুশো ফ্রাঙ্ক মনে হয় রফা হিসেবে ভালোই, ও বলল, কিন্তু এটুকুই ওর লাগবে। এমনভাবে ও কথা বলছিল যেন কেউ ভাঁড়ার ঘরের মিটসেফের দিকে তাকিয়ে বলছে : ‘‘উম্ম্ম্... দাঁড়াও দেখি, তোমার লাগবে হল ডিম, মাখন, একটু পাউরুটি আর অল্প জ্যাম হলে ভালো হয়।’’ একদম এইভাবে। ‘‘যদি আমাকে চুষে দিতে বলো, কিংবা পেছন থেকে করতে চাও, যেটা তোমাদের ইচ্ছে, আমার কাছে একই ব্যাপার,’’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, যেন ডিউকের স্ত্রী চ্যারিটি বাজারে বসে চা খাচ্ছেন। ‘‘আমার বুক কিন্তু এখনও টাইট এবং যথেষ্ট লোভনীয়,’’ ব্লাউজ খুলে এক হাতে যতটা ধরা যায় ততোটুকু টেনে বলল। ‘‘এমন লোক আমি জানি যারা আমার সাথে শোবার জন্য হাজার ফ্রাঙ্কও দিতে চাইবে, কিন্তু এখন তাদের খোঁজার ঝামেলা আমি নিতে পারব না। দুশো ফ্রাঙ্ক আমার ভীষণ দরকার। বেশি নয়, কম নয়।’’
টেবিলের ওপর ওর কনুইয়ের কাছে রাখা বইটাতে এক পলক চোখ বুলিয়ে নিতে একটু থামল, তারপর আগের মতোই ভাবলেশহীন স্বরে বলতে লাগল : ‘‘আমারও কয়েকটা কবিতা আছে, পরে দেখাব তোমাদের,’’ একটু আগে ওর এক পলক চোখ বুলিয়ে নেওয়া বইটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘‘সেটা হয়তো এইগুলোর থেকে ভালো হবে।’’
এদিকে যখন এরকম অবস্থা, তখন কার্ল, দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ইশারায় আমাকে বোঝাতে লাগল এ পুরো পাগল, বোবা-কালা হয়ে থাকো।
মেয়েটি তখন নিজের ব্যাগ আঁতিপাতি করে কবিতা খুঁজছে, হঠাৎ মুখ তুলে তাকাতেই কার্লের মুখের অপ্রস্তুত ভাব দেখে, স্থির ও শান্তভাবে বলল, ও মনে হয় অন্যমনস্ক হয়ে আছে। তারপর, ‘‘বাথরুমে কি বেসিন আছে,’’ একই নিঃশ্বাসে জানতে চাইল। ‘‘আমার একটা কবিতা আছে, পড়ে শোনাব তোমাদের; কবিতাটা একটা রাতের স্বপ্ন নিয়ে।’’ বলে, উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ব্লাউজ আর স্কার্ট খুলে ফেলল। ‘‘তোমার বন্ধুকে বলো রেডি হয়ে নিতে,’’ চুল খুলতে খুলতে বলল, ‘‘আমি ওর সাথেই আগে শোব।’’
এই সময়, কার্ল আসরে নামল। মেয়েটাকে নিয়ে ও ক্রমশই আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল এবং একইসাথে চেপে রাখা হাসির চোটে দমকে দমকে কাঁপছিল।
‘‘এক মিনিট দাঁড়াও,’’ কার্ল বলল, ‘‘বাথরুমে যাবার আগে একটু ওয়াইন হয়ে যাক। ভাল্লাগবে তোমার।’’ চট করে বোতল এনে ওকে একটা গ্লাস বানিয়ে দিল কার্ল। একগ্লাস জলে তেষ্টার জ্বালা নেবানোর মতো পুরো ওয়াইনটা ও বড় এক চুমুকে শেষ করে ফেলল। ‘‘জুতো-মোজাটা খুলে দাও,’’ বলে, পেছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে গ্লাসটা হাতে ধরে রইল আরেক গ্লাস ওয়াইনের জন্য। ‘‘ওয়াইনটা একেবারেই বাজে,’’ ওর সেই একঘেয়ে স্বরে বলতে থাকল, ‘‘তবে আমার অভ্যেস আছে। তোমাদের কাছে দুশো ফ্রাঙ্ক আছে আশা করি? আমার একদম ওটাই দরকার। একশ পঁচাত্তর নয় কিংবা একশ আশিও নয়। তোমার হাতটা দাও...’’ কার্লের হাতটা ধরে, যে হাতটা তখন ওর মোজার ফিতে খুলতে নাজেহাল হচ্ছিল, নিয়ে রাখল ওর ভগাঙ্কুরে। ‘‘এমন অনেক বোকা আছে যারা এটা ধরার জন্য পাঁচ হাজার দিতে চায়।
ব্যাটাছেলেগুলো সব গাধা। আমি তোমাকে এটা এমনিই ধরতে দিলাম।
এখানে, আমাকে আরেক গ্লাস দাও। বেশি করে খেলে এর স্বাদটা কম খারাপ লাগে। কটা বাজল এখন?’’
ও বাথরুমে ঢুকে যেতেই কার্ল একেবারে ফেটে পড়ল। উন্মাদের মতো হাসছিল কার্ল।
আসলে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে ও। ‘‘আমি বাবা ওকে লাগাতে যাচ্ছি না,’’ কার্ল বলল। ‘‘কোথায় না কোথায় কামড়ে দেবে কে জানে। যত তাড়াতাড়ি হয় ওকে বিদেয় করো এখান থেকে। আমি না হয় ওকে পঞ্চাশ ফ্রাঙ্ক দিয়ে ট্যাক্সি ধরিয়ে দেব।’’
‘‘আমার মনে হয় না ও তোমাকে সেটা করতে দেবে,’’ কার্লের অপ্রস্তুত অবস্থার মজা নিয়ে বললাম। ‘‘আর যাই হোক ও ব্যবসাটা বোঝে।
তবে, সত্যিই যদি একেবারে নির্বোধ হয় তাহলে টাকার কথা হয়তো ভুলেই যাবে।’’
‘‘ওহ্, এটা দারুণ আইডিয়া, জো,’’ কার্ল একেবারে সোৎসাহে চেঁচিয়ে উঠল।
‘‘আমি কখনওই ওটা ভাবিনি। তোমার হচ্ছে ক্রিমিনালের মন। কিন্তু শোনো, আমাকে ওর সাথে এখানে একা ছাড়বে না, ঠিকাছে? তুমি আমাদের দেখতেই পারো — ও কোনও পাত্তাই দেবে না। আমরা চাইলে ও কুকুরের সাথেও করবে। পুরো তো ঘুমের মধ্যে চলাফেরা করে।’’
আমি পায়জামা গলিয়ে, বিছানায় চাদর টেনে ঢুকে গেলাম। এদিকে সে বাথরুমে গেছে তো গেছেই।
এবার আমাদের চিন্তা হতে থাকল।
‘‘গিয়ে দেখা ভালো, কী ব্যাপার,’’ আমি বললাম।
‘‘তুমি যাও বাবা,’’ কার্ল বলল। ‘‘আমার যথেষ্ট ভয় আছে।’’
আমি উঠে বাথরুমের দরজায় গিয়ে টোকা দিলাম।
‘‘এসো,’’ সেই একই ম্যাদামারা ভাবলেশহীন গলা।
দরজা খুলে দেখি পুরো উদোম ন্যাংটো, আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে। লিপস্টিক দিয়ে দেয়ালে কবিতা লিখছে।
কার্লকে ডাকবার জন্য আমি ফিরে এলাম। ‘‘এ তো কোনও অন্য জগতে আছে,’’ আমি বললাম। ‘‘পুরো দেয়াল লেপে দিচ্ছে কবিতা লিখে লিখে।’’
কার্ল যখন জোরে জোরে ওর পদ্য পড়ছে আমার মাথায় সত্যিই দারুণ একটা চালাকি এল। ওর দুশো ফ্রাঙ্ক চাই। বেশ। খুব ভালো। আমার কাছে কোনও টাকা নেই, কিন্তু আমার ধারণা কার্লের কাছে আছে — ও শুধু এর আগের দিনই টাকা দিয়েছিল। আমি জানি, যদি ওর ঘরে ফাউস্টের বইটাতে খুঁজি তাহলে দু পাতার মাঝখানে চ্যাপ্টা হয়ে থাকা দুশো কি তিনশো ফ্রাঙ্ক ঠিকই পাব। আমি যে ওর গুপ্ত তহবিলখানা আবিষ্কার করে ফেলেছি সেই খবরটা কার্ল জানে না। ডিকশনারি খুঁজতে গিয়ে একদিন হঠাৎ করেই এটা দেখে ফেলেছি।
১৬. মিলার এখানে ‘বশ্’ (Boche) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। যা একসময় ফরাসি সৈন্যরা ব্যবহার করত স্ল্যাং হিসেবে, ‘rascal’ অর্থে। পরে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ‘একজন জার্মান সৈনিক’ বা ‘জার্মান’ বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
১৭. মিডি (Midi) : কথ্য ভাষায় le midi নামে পরিচিত, ফ্রান্সের দক্ষিণে অবস্থিত একটি বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চল।
১৮. শ্যাটো (Châteaux) : ল্যোয়া-র নদীর পাশে অবস্থিত আঁবোয়া, ব্লোআ, তুর প্রভৃতি শহরগুলির ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তির একটি অংশ শ্যাটো অফ দ্য ল্যোয়া-র ভ্যালি।
১৯. ব্লাঁশে : ক্লিশির কাছাকাছি একটি প্লাজা।