
রামজনমভূমি-বাবরি মসজিদ নিয়ে শীর্ষ আদালতের ৫ সদস্যের বেঞ্চের রায়ে যা বলা হয়েছে, এই কথাটাই তো ৩০ বছর আগে বলেছিলেন এল কে আদবানি। তখনও মসজিদ ভাঙা হয়নি, ১৯৮৯ সালে তাঁর সমাধানসূত্র ছিল মসজিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে (রিলোকেট) নতুন জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হোক, আর সেই জায়গায় মন্দির তৈরি হোক। মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর, আদবানি একদিকে বলেছিলেন, সেদিনটা (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২) নাকি ছিল (মাই কান্ট্রি মাই লাইফ) তাঁর জীবনের সব থেকে দুঃখের দিন। আর বলেছিলেন, ভারতে এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যে দল প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারে যে তারা ক্ষমতায় এলে নতুন করে ওই খানেই বাবরি মসজিদ তৈরি করে দেবে। শনিবার, ৯ নভেম্বর, শীর্ষ আদালতের রায় শোনার পর এই কথাগুলোই মনে পড়ে গেল।
১৯৯২ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত আটটা নাগাদ আমরা দু’তিন জন সাংবাদিক হেঁটে হেঁটে ফৈজাবাদ থেকে বড় রাস্তা ধরে অযোধ্যার দিকে যাচ্ছিলাম। বড় রাস্তার ধারেই পড়ে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির এক উকিলের বাড়ি। এখন আর নাম নেই। কাজ করতে গিয়েই ভদ্রলোকের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। তাঁর দোতলা বাড়ির একতলার দরজার কড়া নেড়েই চলেছি। সাড়া-শব্দ নেই। মিনিট পাঁচেক পরে দোতলার জানলা খুলল। এক বৃদ্ধার মুখ। পরিচয় দিলাম চিৎকার করে, যাতে উপর থেকে শুনতে পান। তার পর তাঁর ছেলে, সেই উকিল নেমে এলেন। একটু কথার পর দেখি পেছনে সেই বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে। আমাদের বললেন, ‘দয়া করে আপনাদের ঈশ্বরের কাছে আমাদের জন্য একটু প্রার্থনা করবেন’। আমরা অভয় দিয়ে বললাম, না না দেখবেন কিছুই হবে না। পরের দিন ৬ ডিসেম্বর চোখের সামনে ধ্বংস হল এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য। তা দেখে দিল্লির এক মহিলা সাংবাদিক কেঁদে ফেলেছিলেন। তাতে তিনি মুসলিম, এই ভেবে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কয়েক জন। অনেক সাংবাদিক আক্রান্ত হলেন। অনেকের ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হল। গাড়ি খুঁজে না পেয়ে রাতে যখন হেঁটে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ, ফৈজাবাদ ফিরছি, দেখলাম রাস্তার মোড়ে মোড়ে জল, মিষ্টি বিতরণ চলছে। তার পরের দিন ৭ তারিখে আমরা অনেকেই ওই এলাকায় ঢুকতে পারিনি। ৮ তারিখে সকালে যখন ফের অযোধ্যা যাচ্ছি তখন চোখে পড়ল এখানে ওখানে বাড়ি জ্বলছে। কোথাও কোনও লোক-জন নেই। নেই ফায়ার ব্রিগেডও। জ্বলছে সেই উকিলের বাড়িও। ১৯৮৪-র মাত্র দু’টি আসন থেকে ১৯৯৬ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়ে উঠতে বিজেপি সব থেকে বেশি নির্ভর করেছে এই রাম মন্দির আন্দোলনের উপর। বহু রক্তপাত, বহু মৃত্যু হয়েছে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিহত হয়েছে সংখ্যালঘু মানুষেরা। গুজরাট দাঙ্গার সঙ্গেও এই আন্দোলের যোগ ছিল। শনিবারের শীর্ষ আদালতের রায় কি আমাদের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেবে? যদি দেয় ভাল!
বিজেপির তিনটে প্রধান দাবি ছিল। বা বলা ভালো অ্যাজেন্ডা ছিল। তার আড়াই খানা পূর্ণ হল। ৩৭০ হয়ে গিয়েছে। তাৎক্ষণিক তিন তালাকের মধ্যে দিয়ে ইউনিফর্ম সিভিল কোডের অর্ধেকটা হয়ে রয়েছে। ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’ স্লোগানও শীর্ষ আদালতের সিলমোহর পেয়ে গেল ৯ নভেম্বর, শনিবারের রায়ে।
যে তিনটি বিষয় বিজেপির বিরুদ্ধে গেল, তা নিয়ে বিজেপির আপাতত কোনও মাথা ব্যথা না থাকলেও, ইতিহাসে থেকে যাবে সেই তথ্যও। সেগুলি হল-
আদালত বলেছে, মন্দির ভেঙে যে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল, তার প্রমাণ মেলেনি।
১৯৪৯ সালে ফৈজাবাদের জেলাশাসক কে ডি নায়ার মসজিদে রামের মূর্তি ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের নির্বাচনে তিনি উত্তরপ্রদেশ থেকে জনসঙ্ঘের প্রার্থী হন। সেই কাজ বেআইনি হয়েছিল, শীর্ষ আদালত বলেছে।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ যারা ভেঙেছিল, তারা বেআইনি কাজ করেছিল, অপরাধমূলক কাজ ছিল সেটা। প্রসঙ্গত আদবানি, মুরলিমনোহর যোশী, উমাভারতী সহ এক দল বিজেপি নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে সেই মামলা এখনও চলছে।
এই তিনটে বিষয় বাদ দিলে, এই মামলার রায়ে বিজেপি জয়ই দেখবে। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়, শেষের তিনটে কাজ যদি বেআইনি হয়, তাহলে সেখানে ফের মন্দির কেন? তথ্য-প্রমাণের থেকেও কি এই ক্ষত্রে ‘হিন্দুও কা ভাওনা’ বেশি গুরুত্ব পেল?
এখনও পর্যন্ত যা ছবি, তাতে এই রায় নিয়ে তেমন উন্মাদনা চোখে পড়ছে না। সামনেই ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ভোট। একদা রাম মন্দির নামের এই গরুটি দুইয়ে যত সোনা উদ্ধার হয়েছে, এখনও তাই হবে কি না, এই ভোটের ফল বেরোলে তার আন্দাজ পাওয়া যাবে। কারণ ৩৭০-র প্রভাব মহারাষ্ট্র-হরিয়ানা ভোটে কোনও প্রভাব না ফেলায় হিন্দুত্ববাদী নেতারা বেশ চিন্তায়ই রয়েছেন।
এলেবেলে | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৬78700
Du | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৮78682
PT | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩০78683
রিভু | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৪78701
Amit | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৬78684
আচ্ছা | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৮78685
dc | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯78686
PT | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২78687
b | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৫78688
TP | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৯78689
sm | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৩78690
cpm | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৬78691
dc | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৯78692
PT | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:১৫78693
cm | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৩78694
sm | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:২৭78695
r2h | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৭:০৩78696
:) | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৭:১০78702
PT | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৭:১৯78697
PT | unkwn.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৫০78679